দেশীকমার্স স্টোরে ই-কমার্স এনালিটিক্স সেটআপ গাইড

দেশীকমার্স স্টোরে ই-কমার্স এনালিটিক্স সেটআপ গাইড

এই Google Tag Manager কনটেইনার সেটআপ নির্দেশনাগুলো DeshiCommerce মার্চেন্ট স্টোরের সাথে কাজ করে। আপনি সব ধাপ সম্পন্ন করার পর, আপনার Google Analytics 4 অ্যাকাউন্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-কমার্স ইভেন্ট যেমন ক্রয় (purchase), কার্টে যোগ করা (add to cart) ইত্যাদি গ্রহণ করবে।

ধাপ ১: Google Analytics-এ সাইন ইন/সাইন আপ করুন
যদি আপনার Google Analytics অ্যাকাউন্ট বা প্রপার্টি না থাকে, তাহলে Admin-এ যান এবং Create বোতামে ক্লিক করে নতুন একটি অ্যাকাউন্ট বা প্রপার্টি তৈরি করুন।

যদি আপনার ইতোমধ্যে একটি Google Analytics অ্যাকাউন্ট বা প্রপার্টি থাকে, তাহলে Admin > Data Collection and Modification > Data Streams-এ যান এবং ডেটা স্ট্রিম নামের উপর ক্লিক করুন।

Measurement ID কপি করে একটি নোটে সংরক্ষণ করুন। এটি পরবর্তী ধাপে প্রয়োজন হবে।

ধাপ ২: প্রি-কনফিগার করা Google Tag Manager কনটেইনার ফাইল ডাউনলোড করুন
DeshiCommerce মার্চেন্ট স্টোরের জন্য প্রি-কনফিগার করা Google Tag Manager কনটেইনার ফাইলটি ডাউনলোড করে আনজিপ করুন।

ধাপ ৩: Google Tag Manager-এ সাইন ইন/সাইন আপ করুন
সাইন ইন করুন অথবা যদি অ্যাকাউন্ট না থাকে তাহলে একটি নতুন Google Tag Manager অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। এরপর কনটেইনার ID কপি করুন।

ধাপ ৪: DeshiCommerce মার্চেন্ট প্যানেলে কনটেইনার ID যুক্ত করুন
DeshiCommerce মার্চেন্ট প্যানেলে লগইন করুন এবং Online Store > Preferences-এ যান।
Edit-এ ক্লিক করে Google Tag Manager এর ঘরে কনটেইনার ID পেস্ট করুন এবং Save করুন।

ধাপ ৫: Google Tag Manager এর Admin ট্যাবে ফিরে যান এবং Import Container-এ ক্লিক করুন

ধাপ ৬: কনটেইনার ইম্পোর্ট করুন
সাধারণভাবে, ‘Merge’ এবং ‘overwrite conflicting tags, triggers and variables’ অপশনগুলো বেছে নেওয়া সুপারিশ করা হয়।

যদি সন্দেহ থাকে, তাহলে একটি ডেমো GTM কনটেইনার তৈরি করে পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করুন যাতে ভুল করে কিছু পরিবর্তন না হয়।

ইম্পোর্ট করার পর “Add to workspace” বোতামে ক্লিক করুন।

ধাপ ৭: ‘Google Analytics Measurement ID’ নামক ভেরিয়েবলটি সম্পাদনা করুন
Workspace Tab থেকে Variables মেনুতে যান।


এই ভেরিয়েবলের ‘Value’ হচ্ছে আগের ধাপে সংরক্ষণ করা Google Analytics 4 প্রপার্টির Measurement ID।
Measurement ID কপি করে এখানে পেস্ট করুন।

Save বোতামে ক্লিক করে ভেরিয়েবলটি সংরক্ষণ করুন।
সংরক্ষণ করার পর আমরা পরিবর্তনগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা টেস্ট করার পরামর্শ দিই।

ধাপ ৮: কনটেইনারটি প্রিভিউ করে পরীক্ষা করুন
ভেরিয়েবল সংরক্ষণ করার পর কনফিগারেশনটি ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা প্রিভিউ মুডে টেস্ট করুন।

ধাপ ৯: কনটেইনারটি পাবলিশ করুন
উপরের ডান পাশে “Submit” বোতামে ক্লিক করে কনটেইনারটি পাবলিশ করুন এবং একটি নতুন ভার্সন তৈরি করুন।

সফলভাবে ইম্পোর্ট ও পাবলিশ করার পর, Google Analytics-এ ই-কমার্স ইভেন্ট দেখতে ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন।


নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ

দেশীকমার্স বনাম ওয়ার্ডপ্রেস

দেশীকমার্স বনাম ওয়ার্ডপ্রেস

অনলাইন ব্যবসা পরিচালনার জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করা এখন অপরিহার্য। বাংলাদেশে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তাদের পণ্য ও সেবা অনলাইনে বিক্রির জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান। এক্ষেত্রে দেশীকমার্স এবং ওয়ার্ডপ্রেস দুটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম। নিচে এই দুটি প্ল্যাটফর্মের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো তুলে ধরা হলো:

দেশীকমার্স (DeshiCommerce)

দেশীকমার্স একটি সম্পূর্ণ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, যা বিশেষভাবে বাংলাদেশের বাজারের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি ব্যবহারকারীদের সহজেই অনলাইন দোকান তৈরি এবং পরিচালনা করতে সাহায্য করে।

সুবিধা

  • সহজ ব্যবহার: দেশীকমার্সের ইন্টারফেস খুবই সহজ এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব। যাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান কম, তারাও সহজে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
  • ফাস্ট ওয়েবসাইট লোডিংঃ উন্নত সার্ভার এবং অপটিমাইজেশন এর কারনে দেশীকমার্স দিয়ে তৈরি ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড ওয়ার্ডপ্রেস থেকে অনেক বেশী। যেটা ওয়েবসাইট ভিজিট এবং শপিং করে তোলে বাটার স্মুথ।
  • স্থানীয় সেবা সংযোজন: দেশীকমার্সে বাংলাদেশের পেমেন্ট গেটওয়ে (যেমন বিকাশ), কুরিয়ার সার্ভিস (যেমন পাঠাও, স্টিড ফাস্ট) এবং বাংলা ভাষায় কাস্টমার সাপোর্ট রয়েছে, যা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধাজনক।
  • নিজস্ব থিম এবং প্লাগইন: দেশীকমার্সে সকল থিম এবং প্লাগইন নিজেদের ডেভেলপারদের মাধ্যমে তৈরি করা, তাই এগুলো অধিক নিরাপদ এবং আস্থাযোগ্য।
  • উন্নত গ্রাহক সেবা: দেশীকমার্সের গ্রাহক সহায়তা অত্যন্ত করিতকর্মা এবং ব্যবহারকারীদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে তৎপর সেবা প্রদান করে।
  • হোস্টিং এবং সিকিউরিটি: দেশীকমার্স নিজস্ব হোস্টিং এবং সিকিউরিটি প্রদান করে, তাই ব্যবহারকারীদের এই বিষয়ে চিন্তা করতে হয় না।
  • মূল্য: তুলনামূলকভাবে কম মূল্যে ভালো সেবা পাওয়া যায়।

অসুবিধা

  • কাস্টমাইজেশনের সীমাবদ্ধতা: ওয়ার্ডপ্রেসের তুলনায় দেশীকমার্সে কাস্টমাইজেশনের সুযোগ কিছুটা সীমিত।
  • প্লাগইনের সীমাবদ্ধতা: ওয়ার্ডপ্রেসের মতো দেশীকমার্সে প্লাগইনের বিশাল সংগ্রহ নেই।

ওয়ার্ডপ্রেস (WordPress) (WooCommerce প্লাগইন সহ)

ওয়ার্ডপ্রেস একটি জনপ্রিয় কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CMS), যা WooCommerce প্লাগইন ব্যবহার করে ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

সুবিধা

  • অত্যন্ত কাস্টমাইজযোগ্য: ওয়ার্ডপ্রেস অত্যন্ত কাস্টমাইজযোগ্য এবং ব্যবহারকারীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন।
  • বিশাল প্লাগইন এবং থিম সংগ্রহ: ওয়ার্ডপ্রেসে হাজার হাজার প্লাগইন এবং থিম রয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন ফিচার যোগ করতে এবং ওয়েবসাইটকে আকর্ষণীয় করতে সাহায্য করে।
  • সম্প্রদায় সমর্থন: ওয়ার্ডপ্রেসের একটি বিশাল সম্প্রদায় রয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।
  • বৃহৎ স্কেলের জন্য উপযুক্ত: বড় ব্যবসার জন্য ওয়ার্ডপ্রেস অনেক বেশি উপযুক্ত।

অসুবিধা

  • কারিগরি জ্ঞান প্রয়োজন: ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করতে কিছুটা কারিগরি জ্ঞান প্রয়োজন। নতুন ব্যবহারকারী এবং যারা কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহারে সিদ্ধহস্ত নয় তাদের জন্য ওয়ার্ডপ্রেস শেখা ও ব্যাবহার করা বেশ সময় সাপেক্ষ। বিশেষ করে কাস্টমাইজেশনের জন্য আপনাকে অবশ্যই কোডিং বিষয়ে দক্ষ হতে হবে।
  • হোস্টিং এবং সিকিউরিটি: ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারকারীদের নিজেদের আলাদা করে হোস্টিং এবং সিকিউরিটির ব্যবস্থা করতে হয়।
  • প্লাগইন এবং থিম রক্ষণাবেক্ষণ: থার্ড পার্টি প্লাগিনে কখনই শতভাগ নিরাপত্তা বিধান করা সম্ভব হয়না। তাই নিরাপত্তার জন্য প্লাগইন এবং থিমগুলো নিয়মিত আপডেট করতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ আবার অনেক সময় হিতে-বিপরীতও হয়।
  • খরচ: ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং, থিম, প্লাগইন এবং ডেভেলপারের সব কিছুর খরচ আলাদা আলাদা করে দিতে হয়। তাই সব মিলিয়ে ওয়ার্ডপ্রেসে ওয়েবসাইট তৈরির খরচ সাধারনত বেশি হয়। 

আপনার জন্য কোন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ভালো হবে?

  • যদি আপনি একটি সহজ এবং দ্রুত অনলাইন দোকান তৈরি করতে চান, এবং আপনার প্রযুক্তিগত জ্ঞান কম থাকে, তবে দেশীকমার্স আপনার জন্য অত্যন্ত সহজ এবং কার্যকর সমাধান।
  • যদি আপনার কাস্টমাইজেশনের প্রয়োজন হয় এবং আপনার প্রযুক্তিগত জ্ঞান থাকে তবে ওয়ার্ডপ্রেস আপনার জন্য সুবিধাজনক হতে পারে ।
  • ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরির বাজেট সীমিত হলে, দেশীকমার্সে আপনার জন্য পকেট সাশ্রয়ী হবে। 

উপসংহার:

আপনার ব্যবসার প্রয়োজন এবং বাজেটের উপর নির্ভর করে আপনি দেশীকমার্স বা ওয়ার্ডপ্রেস বেছে নিতে পারেন। উভয় প্ল্যাটফর্মেরই নিজস্ব সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। তাই, আপনার জন্য কোনটি উপযুক্ত, তা নির্ধারণ করার আগে ভালোভাবে গবেষণা এবং সরাসরি +৮৮০১৭১৩ ৬৮১০৭৩ নম্বরে ফোন দিয়ে দেশীকমার্স প্রতিনিধির পরামর্শ নিতে পারেন।

নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ

অংশীদারি ব্যবসায় কি? এর সুবিধা-অসুবিধা ও কিভাবে শুরু করবেন? (চুক্তিপত্রসহ)

অংশীদারি ব্যবসায় কি? এর সুবিধা-অসুবিধা ও কিভাবে শুরু করবেন? (চুক্তিপত্রসহ)

নিজের ব্যবসা শুরু করতে চান, কিন্তু একা ঝুঁকি নিতে ভয় পাচ্ছেন? তাহলে অংশীদারি ব্যবসা (Partnership Business) হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ সমাধান! এটি এমন এক ব্যবসায়িক মডেল যেখানে একাধিক ব্যক্তি মিলে বিনিয়োগ, দক্ষতা ও দায়িত্ব ভাগ করে নেয়, ফলে ব্যবসার সফলতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

কিন্তু এই মডেল কি আসলেই সবার জন্য উপযুক্ত? অংশীদারি ব্যবসার যেমন কিছু সুবিধা রয়েছে, তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জও আছে, যা না জানলে ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে পারেন। 

তাই এই ব্লগ পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো অংশীদারি ব্যবসার সংজ্ঞা, এর সুবিধা-অসুবিধা এবং কিভাবে একটি সফল অংশীদারি ব্যবসা শুরু করা যায় তা নিয়ে। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক! 

অংশীদারিত্ব কি?

অংশীদারিত্ব হলো দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি চুক্তিভিত্তিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক, যেখানে সবাই মুনাফা ও ক্ষতির নির্দিষ্ট অংশ ভাগ করে নেয়। এটি সাধারণত পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং ব্যবসার দায়বদ্ধতা, মূলধন বিনিয়োগ ও পরিচালনার দায়িত্ব অংশীদারদের মধ্যে বিভক্ত থাকে।

অংশীদারি ব্যবসায় কাকে বলে?

অংশীদারি ব্যবসায় কাকে বলে?

অংশীদারি ব্যবসায় হলো এমন একটি ব্যবসায়িক কাঠামো যেখানে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং লাভ-ক্ষতি ভাগ করে নেন। একক মালিকানার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে বড় পরিসরের ব্যবসা পরিচালনার জন্য এই ধরনের ব্যবসায়িক সংগঠন গড়ে ওঠে। 

১৯৩২ সালের ভারতীয় অংশীদারি আইন অনুযায়ী—

“সকল ব্যক্তির দ্বারা বা সকলের পক্ষে একজন দ্বারা পরিচালিত ব্যবসায়ের মুনাফা নিজেদের মধ্যে বণ্টনের নিমিত্তে কতিপয় ব্যক্তিবর্গের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কই হলো অংশীদারি ব্যবসায়।”

বাংলাদেশেও এই আইন অনুসারেই অংশীদারি ব্যবসা পরিচালিত হয়। এই ধরনের ব্যবসায়িক কাঠামোতে প্রত্যেক অংশীদার নির্দিষ্ট শর্ত অনুযায়ী ব্যবসার পরিচালনা, মূলধন বিনিয়োগ এবং দায়বদ্ধতার দায় গ্রহণ করে। শুরুতে একক মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসা পরিচালিত হলেও সময়ের সাথে সাথে বড় পরিসরের বিনিয়োগ ও ব্যবসার সম্প্রসারণের জন্য একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে অংশীদারি ব্যবসার ধারণা বিকশিত হয়। 

অংশীদারি ব্যবসায়ের প্রকারভেদ

ব্যবসার কাঠামো, উদ্দেশ্য, দায়িত্ব ও আইনি সীমাবদ্ধতার ওপর নির্ভর করে, অংশীদারি ব্যবসা বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। সাধারণত অংশীদারি ব্যবসাকে নিম্নলিখিত প্রধান চারটি প্রকারভেদে ভাগ করা হয়ঃ 

১. সাধারণ অংশীদারি (General Partnership): এই ধরনের অংশীদারি ব্যবসায়, সকল অংশীদার ব্যবসার লাভ-ক্ষতি এবং দায়বদ্ধতা সমানভাবে ভাগ করে নেন। প্রতিটি অংশীদার ব্যবসার পরিচালনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এই কাঠামোতে ব্যবসার দায় মেটানোর জন্য অংশীদারদের ব্যক্তিগত সম্পত্তিও ব্যবহার করা যেতে পারে।

২. সীমিত অংশীদারি (Limited Partnership): এতে দু’ধরনের অংশীদার থাকে- সাধারণ অংশীদার (General Partner) এবং সীমিত অংশীদার (Limited Partner)। সাধারণ অংশীদাররা ব্যবসার দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং সম্পূর্ণ দায়বদ্ধ থাকেন, অন্যদিকে সীমিত অংশীদার কেবল বিনিয়োগ করেন এবং তাদের দায়বদ্ধতা বিনিয়োগের পরিমাণের মধ্যে সীমিত থাকে।

৩. লিমিটেড লায়াবিলিটি পার্টনারশিপ (LLP): এটি একটি আধুনিক অংশীদারি ব্যবসার কাঠামো, যেখানে সকল অংশীদারের দায়বদ্ধতা সীমিত থাকে। এটি সাধারণত পেশাদার পরিষেবা যেমন আইনজীবী, ডাক্তার ও অ্যাকাউন্ট্যান্টদের ব্যবসার জন্য জনপ্রিয়।

৪.যৌথ উদ্যোগ (Joint Venture): এই ধরনের অংশীদারি ব্যবসায় কাঠামোতে দুটি বা তার বেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য একত্রে কাজ করে। এটি মূলত একটি অস্থায়ী অংশীদারি ব্যবসার রূপ, যা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বা নির্দিষ্ট প্রকল্প সম্পন্ন করার জন্য গঠিত হয়।

অংশীদারি বা পার্টনারশিপ ব্যবসায়ের গঠন প্রণালী ও বৈশিষ্ট্য

অংশীদারি বা পার্টনারশিপ ব্যবসা গঠনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু ধারাবাহিকতা অনুসরণ করতে হয়, যা ব্যবসার কার্যক্রম ও দায়বদ্ধতাকে সুসংহত করে।

অংশীদারি ব্যবসায়ের গঠন প্রণালী

  • সঠিক অংশীদার নির্বাচন: ব্যবসার উদ্দেশ্য ও পরিচালনার জন্য উপযুক্ত এবং বিশ্বস্ত অংশীদার নির্বাচন করে একত্রিত হতে হবে। 
  • পার্টনারশিপ চুক্তি প্রস্তুত: এটি মৌখিক বা লিখিত হতে পারে, তবে লিখিত চুক্তি বেশি নিরাপদ।
  • ব্যবসার নিবন্ধন: যদি আইনগত স্বীকৃতি প্রয়োজন হয়, তাহলে সরকার অনুমোদিত কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধন করতে হবে।
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা: ব্যবসার আর্থিক লেনদেন পরিচালনার জন্য একটি পৃথক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করা উচিত। 
  •  লাইসেন্স ও ট্যাক্স নিবন্ধন: ব্যবসার ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট ও ট্যাক্স সংক্রান্ত অনুমোদন নিতে হবে। 

অংশীদারি ব্যবসার বৈশিষ্ট্য

অংশীদারি ব্যবসায় একাধিক ব্যক্তি চুক্তির মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং লাভ-লোকসান ভাগ করে নেন। এটি একক মালিকানার তুলনায় অধিক সংগঠিত এবং যৌথ দায়িত্বশীল একটি ব্যবসায়িক কাঠামো। 

নিচে অংশীদারি ব্যবসার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো-

অংশীদারের সংখ্যাঃ 

  • এই ব্যবসায় কমপক্ষে ২ জন এবং সর্বোচ্চ ২০ জন অংশীদার থাকতে পারেন।
  • ব্যাংকিং ব্যবসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ জন অংশীদার থাকতে পারেন।

চুক্তি: অংশীদারি ব্যবসা পরিচালনার জন্য অংশীদারদের মধ্যে একটি লিখিত বা মৌখিক চুক্তি থাকা আবশ্যক। 

সহজ গঠন প্রণালি: এই ব্যবসায়িক কাঠামো গঠনের জন্য কোম্পানির মতো জটিল প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয় না। সাধারণ চুক্তির মাধ্যমেই এটি শুরু করা সম্ভব।

দায়িত্ব, লাভ-লোকসান বণ্টন: প্রতিটি অংশীদার পারস্পারিক সিন্ধান্ত অনুযায়ী দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং লাভ-লোকসানও নির্দিষ্ট চুক্তির ভিত্তিতে বণ্টিত হয়। কোনো নির্দিষ্ট শর্ত না থাকলে সকল অংশীদার সমান অংশে লাভ ও ক্ষতির অংশীদার হন।

পরস্পরের প্রতি পরস্পরের আস্থা ও বিশ্বাস: যেহেতু অংশীদারি ব্যবসায় প্রত্যেক অংশীদার পারস্পরিক নির্ভরতার ওপর কাজ করেন, তাই ব্যবসার সফলতার জন্য আস্থা ও বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

নিবন্ধন: অংশীদারি ব্যবসার নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়, তবে আইনি স্বীকৃতি ও নিরাপত্তার জন্য এটি নিবন্ধন করা উত্তম। 

সত্তা: অংশীদারি ব্যবসা কোনো পৃথক আইনি সত্তা নয়। অর্থাৎ ব্যবসার দায় ও দায়িত্ব অংশীদারদের ব্যক্তিগত সম্পদের ওপরেও প্রভাব ফেলতে পারে।

অংশীদারদের যোগ্যতা: অংশীদার হতে হলে ব্যক্তিকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে এবং আইনত ব্যবসা পরিচালনার যোগ্য হতে হবে। মানসিকভাবে অক্ষম বা দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তি সাধারণত অংশীদার হতে পারেন না।

অংশীদারি ব্যবসায়ের হিসাব

অংশীদারি ব্যবসায় সঠিকভাবে হিসাব পরিচালনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে একাধিক অংশীদার জড়িত থাকেন এবং প্রত্যেকের মূলধন, লাভ-ক্ষতি ও দায়বদ্ধতার হিসাব রাখতে হয়। 

অংশীদারি ব্যবসায়ের লাভ-ক্ষতি বণ্টন হিসাব

সাধারণত, চুক্তি অনুযায়ী অংশীদারদের মূলধন বিনিয়োগ, কার্যকর দায়িত্ব বা অন্যান্য নির্ধারিত অনুপাতে লাভ-ক্ষতি বণ্টন করা হয়। যদি চুক্তিতে কোনো বিশেষ শর্ত না থাকে, তবে সকল অংশীদার সমান হারে লাভ-ক্ষতি ভাগ করে নেন। অংশীদারি ব্যবসায়তে  লাভ-ক্ষতি বণ্টন করার হিসাব পদ্ধতি হলোঃ  

১. অংশীদারদের মূলধন অনুযায়ী লাভ/ ক্ষতি বন্টনঃ 

যদি অংশীদারদের মূলধন বিনিয়োগের অনুপাতে লাভ-ক্ষতি ভাগ করা হয়, তাহলে-

  • প্রত্যেক অংশীদারের লাভ/ ক্ষতি =  (প্রত্যেকের মূলধন ÷ মোট মুলধন) × মোট নিট লাভ বা ক্ষতি

২. অংশীদারি ব্যবসায়ের লাভ-ক্ষতি আনুপাতিক হারে বণ্টনঃ

যদি কোনো নির্ধারিত অনুপাতে লাভ-ক্ষতি ভাগ করা হয়, তাহলে-

  • অংশীদারের লাভ/ক্ষতি = (প্রত্যেকের অনুপাত ÷ মোট অনুপাত) × মোট নিট লাভ বা ক্ষতি

৩. বিকল্প পদ্ধতি (সমান হারে বণ্টন): 

যদি সকল অংশীদার সমান হারে লাভ/ক্ষতি ভাগ করেন, তাহলে-

  • প্রত্যেকের লাভ/ ক্ষতি = মোট নিট লাভ​ বা ক্ষতি ÷ অংশীদারদের সংখ্যা

অংশীদারি মূলধন হিসাব

অংশীদারি ব্যবসায় প্রতিটি অংশীদার ব্যবসায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ করেন, যা ব্যবসার পরিচালনা ও সম্প্রসারণে ব্যবহৃত হয়। মূলধন হিসাবের মাধ্যমে অংশীদারদের বিনিয়োগ, অতিরিক্ত মূলধন প্রদান, উত্তোলন (ড্রয়িংস) এবং লাভ-ক্ষতি বণ্টনের সঠিক হিসাব রাখা হয়। অংশীদারি ব্যবসায় মূলধন হিসাব সাধারণত দুইভাবে হিসাবভুক্ত হয়ঃ 

১. নির্দিষ্ট মূলধন পদ্ধতি (Fixed Capital Method):

এই পদ্ধতিতে মূলধন অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন হয় না এবং সাধারণ লেনদেনগুলোর জন্য আলাদা ড্রয়িংস অ্যাকাউন্ট ও লাভ-ক্ষতি অ্যাকাউন্ট ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রেঃ 

  • মোট মূলধন = (প্রাথমিক মূলধন + অতিরিক্ত মূলধন)

২. পরিবর্তনশীল মূলধন পদ্ধতি (Fluctuating Capital Method):

এই পদ্ধতিতে লাভ, ক্ষতি, ড্রয়িংস এবং অন্যান্য লেনদেন সরাসরি মূলধন হিসাবের সাথে যুক্ত হয়, ফলে এই হিসাবে মূলধন অ্যাকাউন্ট পরিবর্তিত হয়। এক্ষেত্রেঃ 

  • মোট মূলধন = (প্রাথমিক মূলধন + অতিরিক্ত মূলধন + লাভ – ক্ষতি – উত্তোলন বা ড্রয়িংস)

অংশীদারি ব্যবসায়ের সুবিধা ও অসুবিধা

অংশীদারি ব্যবসায়ের সুবিধা ও অসুবিধা

অংশীদারি ব্যবসার অনেক সুবিধা থাকলেও কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। নিচের টেবিলে এর মূল সুবিধা ও অসুবিধাগুলো তুলে ধরা হলো- 

সুবিধা অসুবিধা
অংশীদারি ব্যবসায় গঠনে কম জটিলতা থাকে। অংশীদারি ব্যবসায় অংশীদাররা ব্যক্তিগত সম্পদ দিয়েও দেনা পরিশোধে বাধ্য হতে পারেন।
একাধিক অংশীদারের বিনিয়োগ ব্যবসার মূলধন বৃদ্ধি করতে সহায়ক। অংশীদারদের মধ্যে মতবিরোধ অথবা সিদ্ধান্ত গ্রহণে মতের অমিল ব্যবসার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ব্যবসার বিভিন্ন কার্যক্রম একাধিক অংশীদার পরিচালনা করায় চাপ কম থাকে। ব্যবসার লাভ সকল অংশীদারের মধ্যে ভাগ হয়।
বিভিন্ন অংশীদারের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ব্যবসার প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক। একজন অংশীদার ব্যবসা ছাড়লে বা মারা গেলে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হতে পারে।
কোম্পানির তুলনায় অংশীদারি ব্যবসায় করের হার কম হয়ে থাকে। অংশীদারি ব্যবসায় সাধারণত বাইরের বিনিয়োগকারীরা সহজে বিনিয়োগ করতে পারেন না।

অংশীদারি ব্যবসার সুবিধাগুলো বিবেচনা করে যদি সঠিক পরিকল্পনা ও চুক্তি করা হয়, তবে এটি আপনার জন্য একটি লাভজনক ও সফল ব্যবসায়িক মডেল হতে পারে।

অংশীদারি ব্যবসায়ের আইন

অংশীদারি ব্যবসা বাংলাদেশে একটি প্রচলিত ব্যবসায়িক কাঠামো, যা মূলত অংশীদারি আইন, ১৯৩২ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই আইন অংশীদারিত্বের সংজ্ঞা, অংশীদারদের অধিকার, দায়িত্ব এবং ব্যবসার কার্যক্রম সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নির্ধারণ করে। অংশীদারি ব্যবসায় আইন, ১৯৩২ এর মূল বিষয়বস্তু নিচে উল্লেখ করা হলোঃ 

১. অংশীদারি ব্যবসার সংজ্ঞা (ধারা ৪)

এই আইনের অধীনে অংশীদারি ব্যবসাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যে এটি দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে একটি চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক, যার মাধ্যমে তারা যৌথভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং লাভ-ক্ষতি ভাগ করে নেন​।

অংশীদারি ব্যবসায়ের আইন

২. অংশীদারদের পারস্পরিক সম্পর্ক (ধারা ৯-১০)

এই আইনে অংশীদারদের পারস্পরিক দায়বদ্ধতা ও অধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। অংশীদারদের একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা, ব্যবসার স্বার্থ সংরক্ষণ করা এবং চুক্তি অনুযায়ী কাজ করা বাধ্যতামূলক​।

৩. তৃতীয় পক্ষের সাথে অংশীদারদের সম্পর্ক (ধারা ২৫-৩০)

অংশীদারি চুক্তিতে ভিন্ন কোনো শর্ত উল্লেখ না থাকলে, কোনো অংশীদার ব্যবসার নামে তৃতীয় পক্ষের সাথে চুক্তি করলে, সেই চুক্তির জন্য সকল অংশীদার দায়বদ্ধ থাকবেন।

৪. অংশীদারি ব্যবসার বিলোপসাধন (ধারা ৩৯-৪৪)

এই ধারাতে ব্যবসার বিলোপসাধনের কারণ ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে। অংশীদারদের পারস্পরিক সম্মতি, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া, অংশীদারের মৃত্যু বা দেউলিয়াত্ব ইত্যাদি কারণ বিলোপসাধনের জন্য যথেষ্ট বলে ধরা হয়​।

৫. অংশীদারদের দায়বদ্ধতা (ধারা ১১-১৮)

সাধারণত, প্রতিটি অংশীদার ব্যবসার দেনা ও আইনি দায়বদ্ধতার জন্য সমানভাবে দায়ী থাকেন। তবে সীমিত অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে এই দায়বদ্ধতা বিনিয়োগের সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে​।

৬. অংশীদারি ব্যবসার নিবন্ধন (ধারা ৫৬-৫৮)

যদিও অংশীদারি ব্যবসার নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়, তবে নিবন্ধিত ব্যবসায় আইনগত সুরক্ষা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বেশি থাকে। এছাড়াও এই ধারায়, অংশীদারি ব্যবসার নিবন্ধন পদ্ধতি ও এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে​।

পার্টনারশিপ ব্যবসার নিয়ম

পার্টনারশিপ ব্যবসা পরিচালনার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও শর্ত মেনে চলতে হয়। এগুলো মূলত  অংশীদারি আইন, ১৯৩২ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সঠিকভাবে গঠিত ও পরিচালিত অংশীদারি ব্যবসা দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক ও সুরক্ষিত। নিচে পার্টনারশিপ ব্যবসার মূল নিয়মগুলো তুলে ধরা হলোঃ 

  • পার্টনারশিপ ব্যবসা শুরু করতে হলে অংশীদারদের মধ্যে একটি লিখিত বা মৌখিক চুক্তি থাকতে হবে।
  • সাধারণ ব্যবসায় ন্যূনতম ২ জন ও সর্বাধিক ২০ জন থাকতে পারে, তবে ব্যাংকিং ব্যবসার ক্ষেত্রে সর্বাধিক ১০ জন অনুমোদিত।
  • সাধারণ অংশীদারদের ব্যবসার সব দেনা ও আইনি দায় এককভাবে বহন করতে হয়, তবে সীমিত অংশীদারি (Limited Partnership) থাকলে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে দায়বদ্ধতা নির্ধারিত থাকে।
  • প্রতিটি অংশীদার ব্যবসার ব্যবস্থাপনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করতে পারেন, যদি না চুক্তিতে ভিন্ন কিছু উল্লেখ থাকে।
  • পার্টনারশিপ চুক্তিতে নির্দিষ্ট শর্ত না থাকলে, অংশীদাররা সমান হারে লাভ ও ক্ষতি ভাগ করে নেন।
  • কোনো অংশীদার ব্যবসা থেকে সরে যেতে চাইলে বা নতুন অংশীদার যুক্ত হলে অন্যান্য অংশীদারদের সম্মতি প্রয়োজন।
  • অংশীদারদের সম্মতিতে, নির্দিষ্ট সময়সীমা শেষ হলে, অংশীদারের মৃত্যু হলে, বা দেউলিয়াত্বের কারণে ব্যবসা বন্ধ হতে পারে।
  • আইনি স্বীকৃতি ও সুবিধা পাওয়ার জন্য Joint Stock Companies and Firms (RJSC) কর্তৃপক্ষে নিবন্ধন করা উত্তম।

অংশীদারি ব্যবসায় নিবন্ধন করবেন কিভাবে?

বাংলাদেশে অংশীদারি ব্যবসায় নিবন্ধন করতে হলে Registrar of Joint Stock Companies and Firms (RJSC)-এর নির্দিষ্ট কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়। অংশীদারি আইন, ১৯৩২ অনুযায়ী নিবন্ধন বাধ্যতামূলক না হলেও, এটি আইনি সুরক্ষা, কর সুবিধা এবং ব্যবসার বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। অংশীদারি ব্যবসায় নিবন্ধনের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া নিচে দেওয়া হলোঃ 

১. ব্যবসার নাম নির্বাচন

প্রথম ধাপে অংশীদারি ব্যবসার জন্য একটি অনন্য নাম নির্বাচন করতে হবে। নামটি RJSC থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়, যাতে এটি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে না মিলে।

২. পার্টনারশিপ চুক্তি প্রস্তুত

অংশীদারদের মধ্যে একটি পার্টনারশিপ চুক্তি (Partnership Deed) তৈরি করতে হবে। চুক্তিটি স্ট্যাম্প পেপারে লিখে নোটারি পাবলিক দ্বারা সত্যায়িত করিয়ে নিতে হবে।

৩. RJSC-তে আবেদন জমা

নিবন্ধনের জন্য যে এলেকায় ব্যবসায়ের কার্যক্রম রয়েছে সেখানের আঞ্চলিক RJSC অফিস-এ আবেদন করতে হয়। আবেদনপত্রের সাথে নিম্নলিখিত কাগজপত্র জমা দিতে হবে- 

  • অনুমোদিত ব্যবসার নাম
  • ব্যবসার প্রধান অফিস বা শাখা অফিসের ঠিকানা
  • ব্যবসায় পরিচালনার স্থান
  • ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য
  • ব্যবসায়ের শুরুর কার্যকাল
  • অংশীদারি চুক্তির সত্যায়িত কপি
  • অংশীদারদের, নাম, স্থায়ী ঠিকানা ও পেশা
  • অংশীদারদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট কপি
  • অংশীদার হিসেবে ব্যবসায় যোগদানের তারিখ
  • ব্যবসায়ের মেয়াদ (যদি থাকে)
  • প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স

৪. নিবন্ধন ফি প্রদান

RJSC-তে আবেদনপত্র জমার পর নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি পরিশোধ করতে হয়। ফি-এর পরিমানঃ 

  • নিবন্ধন ফিঃ ৫০০০ টাকা।
  • নিবন্ধন ফাইলিং ফিঃ ৫০০ টাকা।
  • ডিজিটাল সার্টিফিকেট সরবরাহ ফিঃ শূন্য।

৫. RJSC কর্তৃক যাচাই ও অনুমোদন

RJSC কর্তৃপক্ষ জমাকৃত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে এবং যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তবে ব্যবসাকে নিবন্ধিত ঘোষণা করা হয়।

৬. নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ

নিবন্ধন অনুমোদিত হলে RJSC থেকে একটি নিবন্ধন সনদ (Registration Certificate) ইস্যু করা হয়। এটি ব্যবসার আইনি স্বীকৃতি প্রদান করে।

অংশীদারি ব্যবসায় চুক্তি

অংশীদারি ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি লিখিত চুক্তি থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ব্যবসার কাঠামো, অংশীদারদের অধিকার ও দায়িত্ব এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার নিয়ম নির্ধারণ করে। সঠিকভাবে প্রস্তুতকৃত চুক্তি ভবিষ্যতে কোনো বিরোধ এড়াতে অত্যন্ত সহায়ক। 

একটি অংশীদারি ব্যবসায় চুক্তিপত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো থাকা প্রয়োজনঃ 

  • ব্যবসার নাম ও প্রকৃতি
  • অংশীদারগনের মূলধনের পরিমান 
  • লাভ ও ক্ষতির বণ্টন পদ্ধতি
  • ব্যবস্থাপনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতি
  • অংশীদারের অধিকার ও দায়িত্ব
  • অংশীদারের বিদায় বা নতুন অংশীদার অন্তর্ভুক্তকরণের পদ্ধতি
  • অংশীদারিত্বের মেয়াদ ও অবসানকাল
  • বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতি

একটি সুস্পষ্ট চুক্তি অংশীদারিত্ব ব্যবসার সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি। ব্যবসা শুরুর আগে আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে এই চুক্তি প্রস্তুত করা সর্বদা ভালো।

অংশীদারিত্ব/যৌথ/পার্টনারশিপ ব্যবসার চুক্তিপত্র নমুনা

নিচে একটি অংশীদারি ব্যবসায় চুক্তি পত্রের নমুনা প্রদান করা হলো। এটি কাস্টমাইজ করে নির্দিষ্ট ব্যবসায়িক চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তন করা যেতে পারে।

অংশীদারিত্ব চুক্তিপত্র

[ব্যবসার নাম]
[ব্যবসার ঠিকানা]

এই চুক্তি [তারিখ] তারিখে [স্থান] এ স্বাক্ষরিত হলো, যেখানে নিম্নোক্ত পক্ষরা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবসা পরিচালনার জন্য একমত হয়েছেন।

১. অংশীদারদের বিবরণ

এই ব্যবসার অংশীদারগণ হলেনঃ 

  • [প্রথম অংশীদারের নাম], পিতা: [পিতার নাম], ঠিকানা: [সম্পূর্ণ ঠিকানা]
  • [দ্বিতীয় অংশীদারের নাম], পিতা: [পিতার নাম], ঠিকানা: [সম্পূর্ণ ঠিকানা]

 (প্রয়োজন অনুযায়ী আরও অংশীদার যুক্ত করা যেতে পারে)

২. ব্যবসার নাম ও প্রকৃতি

এই চুক্তির অধীনে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসার নাম হবে [ব্যবসার নাম], এবং এটি [ব্যবসার ধরণ, যেমন ট্রেডিং, ম্যানুফ্যাকচারিং, সার্ভিস ইত্যাদি] সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

৩. ব্যবসার মূলধন ও বিনিয়োগ

প্রত্যেক অংশীদার নিম্নোক্ত পরিমাণ মূলধন ব্যবসায় বিনিয়োগ করবেনঃ 

  • [প্রথম অংশীদারের নাম][পরিমাণ] টাকা
  • [দ্বিতীয় অংশীদারের নাম][পরিমাণ] টাকা

(প্রয়োজন অনুযায়ী মূলধন বিনিয়োগের বিবরণ যোগ করা যেতে পারে)

৪. লাভ ও ক্ষতির বণ্টন

ব্যবসার যে কোনো লাভ ও ক্ষতি অংশীদারদের মধ্যে নিম্নলিখিত অনুপাতে ভাগ করা হবেঃ 

  • [প্রথম অংশীদার][লাভ/ক্ষতির শতকরা হার]
  • [দ্বিতীয় অংশীদার][লাভ/ক্ষতির শতকরা হার]

৫. ব্যবস্থাপনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ

ব্যবসার দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সমস্ত অংশীদার সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অংশীদারদের সর্বসম্মতি থাকতে হবে।

৬. অংশীদার পরিবর্তন ও নতুন অংশীদার সংযোজন

কোনো অংশীদার যদি ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়াতে চান, তবে তাকে কমপক্ষে [সময়সীমা, যেমন ৩০ দিন] আগে লিখিত নোটিশ প্রদান করতে হবে। নতুন অংশীদার অন্তর্ভুক্তির জন্য সকল বিদ্যমান অংশীদারের সম্মতি প্রয়োজন।

৭. ব্যবসার মেয়াদ ও অবসান

এই অংশীদারিত্ব ব্যবসার মেয়াদ [মেয়াদের তথ্য, যেমন অনির্দিষ্টকালের জন্য] নির্ধারণ করা হলো। যদি কোনো কারণে ব্যবসা বন্ধ করতে হয়, তাহলে সকল অংশীদারের সম্মতির ভিত্তিতে অবসান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

৮. বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতি

অংশীদারদের মধ্যে যদি কোনো মতবিরোধ সৃষ্টি হয়, তবে সেটি প্রথমে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। যদি সমাধান না হয়, তবে সালিশি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি করা হবে।

৯. আইনগত বাধ্যবাধকতা

এই চুক্তি বাংলাদেশের অংশীদারি আইন, ১৯৩২ অনুসারে পরিচালিত হবে এবং আইনগতভাবে কার্যকর থাকবে।

১০. স্বাক্ষর

এই চুক্তির সকল শর্ত ও বিধি-বিধান মেনে নিচের অংশীদারগণ স্বাক্ষর করলেনঃ 

অংশীদারের নাম স্বাক্ষর তারিখ
[প্রথম অংশীদার] __________ __________
[দ্বিতীয় অংশীদার] __________ __________
(প্রয়োজনে আরও অংশীদারদের নাম ও স্বাক্ষর যোগ করা যেতে পারে)

এই কাঠামোটি অংশীদারি চুক্তি পত্রের নমুনা মাত্র। নির্দিষ্ট ব্যবসার চাহিদা অনুযায়ী এটি আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে পরিবর্তন করে নিতে হবে।

যৌথ মূলধনী কোম্পানির বৈশিষ্ট্য

যৌথ মূলধনী কোম্পানি একটি স্বতন্ত্র আইনগত সত্তা, যেখানে একাধিক ব্যক্তি বা সংস্থা মালিকানা ভাগ করে নেয়। নিচে যৌথ মূলধনী কোম্পানির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলোঃ 

স্বতন্ত্র আইনগত সত্তাঃ যৌথ মূলধনী কোম্পানি একটি স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে কাজ করে, যা এর মালিকদের থেকে আলাদা। এটি নিজস্ব নামে সম্পদ অর্জন, চুক্তি স্বাক্ষর এবং মামলা দায়ের করতে পারে।

সীমিত দায়বদ্ধতাঃ কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা শুধুমাত্র তাদের বিনিয়োগকৃত মূলধনের পরিমাণ পর্যন্ত দায়বদ্ধ থাকেন। কোম্পানির ঋণ পরিশোধের জন্য ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয় না।

শেয়ার দ্বারা মালিকানা বণ্টনঃ যৌথ মূলধনী কোম্পানির মালিকানা শেয়ারের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির মুনাফার অংশীদার হন এবং তাদের শেয়ারের অনুপাতে লভ্যাংশ পান।

নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রমঃ একটি যৌথ মূলধনী কোম্পানির অস্তিত্ব মালিক বা শেয়ারহোল্ডারদের জীবনকালের ওপর নির্ভর করে না। মালিক পরিবর্তন হলেও কোম্পানি তার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।

পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে পরিচালনাঃ কোম্পানির মালিকানা শেয়ারহোল্ডারদের হাতে থাকলেও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা তার পরিচালনা পর্ষদ (Board of Directors) দ্বারা পরিচালিত হয়। পর্ষদ কোম্পানির নীতিনির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব পালন করে।

আইনগত বাধ্যবাধকতা ও নিবন্ধনঃ যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠনের জন্য নিবন্ধন বাধ্যতামূলক এবং এটি সরকার অনুমোদিত সংস্থা Registrar of Joint Stock Companies and Firms (RJSC) এর মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। কোম্পানির কার্যক্রম কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ অনুযায়ী পরিচালিত হয়।

পুঁজি সংগ্রহের সুবিধাঃ যৌথ মূলধনী কোম্পানি সাধারণত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা শেয়ারবাজারের মাধ্যমে সহজেই বড় পরিমাণে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে।

লাভ ও ক্ষতির বণ্টনঃ কোম্পানির আয় থেকে পরিচালন ব্যয় বাদ দিয়ে মুনাফা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করা হয়। যদি কোম্পানির ক্ষতি হয়, তাহলে শেয়ারহোল্ডাররা কেবল তাদের বিনিয়োগের সীমার মধ্যেই ক্ষতির সম্মুখীন হন।

কঠোর নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থাঃ যৌথ মূলধনী কোম্পানিগুলোর জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম ও বিধিনিষেধ রয়েছে। এগুলো কর পরিশোধ, বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিল এবং নিরীক্ষার আওতায় থাকে।

দ্বৈত কর ব্যবস্থাঃ যৌথ মূলধনী কোম্পানির আয় করযোগ্য এবং এরপর শেয়ারহোল্ডারদের প্রদত্ত লভ্যাংশের ওপর পুনরায় কর আরোপ করা হয়, যা দ্বৈত করের (Double Taxation) সৃষ্টি করে।

বারবার বার জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি

অংশীদারি কারবার কি?

দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা সংস্থা একত্রে ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি আইনি চুক্তির মাধ্যমে অংশীদারিত্ব গঠন করলে তাকে অংশীদারি কারবার বলা হয়।

অংশীদারি ব্যবসায়ের হিসাব প্রারম্ভিক মূলধন নির্ণয় করবেন কিভাবে?

প্রত্যেক অংশীদারের বিনিয়োগকৃত অর্থ, সম্পদ ও অন্যান্য অবদান যোগ করে প্রারম্ভিক মূলধন নির্ধারণ করা হয়।

অংশীদারি চুক্তিপত্র কি?

অংশীদারি চুক্তিপত্র হলো একটি লিখিত দলিল যেখানে ব্যবসার কাঠামো, লাভ-ক্ষতি বণ্টন, দায়বদ্ধতা ও অন্যান্য নিয়মাবলি উল্লেখ থাকে।

অংশীদারি ব্যবসায় চুক্তি কত প্রকার?

অংশীদারি ব্যবসায় চুক্তি মূলত দুই প্রকার, লিখিত ও মৌখিক চুক্তি। তবে আইনি নিরাপত্তার জন্য লিখিত চুক্তি করা ভালো।

চুক্তিই কি অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি?

হ্যাঁ, চুক্তিই অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি। এটি অংশীদারদের অধিকার, দায়িত্ব ও শর্তাবলি নির্ধারণ করে।

নামমাত্র অংশীদার কাকে বলে?

নামমাত্র অংশীদার হলেন সেই অংশীদার, যিনি শুধুমাত্র নামের জন্য অংশীদারিত্বে অন্তর্ভুক্ত থাকেন কিন্তু ব্যবসার মূলধনে কোনো বিনিয়োগ করেন না এবং ব্যবসার পরিচালনায় কোনো সক্রিয় ভূমিকা রাখেন না।

মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসায় কত প্রকার?

মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসায় মূলত তিন প্রকার, একক মালিকানা, অংশীদারি ব্যবসা ও যৌথ মূলধনী কোম্পানি।

নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ

ব্যবসা কি? উদ্দেশ্য, সংজ্ঞা, মৌলিক ধারনা ও উদাহরন

ব্যবসা কি? উদ্দেশ্য, সংজ্ঞা, মৌলিক ধারনা ও উদাহরন

ব্যবসা আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সকালের পত্রিকা থেকে শুরু করে রাতের খাবার পর্যন্ত, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যবসার প্রভাব বিদ্যমান। কিন্তু ব্যবসা বলতে আসলে কী বোঝায়? ব্যবসা কত প্রকার ও কী কী?  ক্ষুদ্র ব্যবসা গুলো কীভাবে কাজ করে? হালাল ব্যবসার ধারণা কী? সফল ব্যবসা করার জন্য কী কী টিপস অনুসরণ করা উচিত? ব্যবসা কি একটি পেশা, নাকি অন্য কিছু? এই প্রশ্নগুলো আমাদের মনে প্রায়ই উঁকি দেয়।

এই আর্টিকেলে, আমরা ব্যবসার এই মৌলিক ধারণাগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। আমরা ব্যবসার সংজ্ঞা, উদ্দেশ্য, প্রকারভেদ, ক্ষুদ্র ব্যবসার ধারণা, হালাল ব্যবসার নীতি, সফল ব্যবসা করার টিপস এবং ব্যবসায় উদ্যোগের জনক সম্পর্কে জানব। 

ব্যবসা কাকে বলে? ব্যবসায়ের সংজ্ঞা দাও

সহজ ভাষায়, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্য বা সেবা উৎপাদন, বিতরণ ও বিক্রয়ের মাধ্যমে মানুষের অভাব পূরণের লক্ষ্যে পরিচালিত যে কোন বৈধ ও ধারাবাহিক কার্যক্রমকে ব্যবসা বলে।

অন্যভাবে বলা যায়, ব্যবসা হল একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাভ অর্জনের জন্য পণ্য বা সেবা তৈরি, বিপণন বা বিক্রি করে।

ব্যবসা শুরু হওয়ার প্রাচীন ইতিহাস

ব্যবসার ইতিহাস সত্যিই অনেক পুরনো। প্রাচীনকালে যখন মানুষ যাযাবর জীবনযাপন করত, তখন তাদের বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্রয়োজন হতো। এক গোষ্ঠীর কাছে হয়তো শিকার করা মাংস বেশি থাকত, কিন্তু ফলের অভাব থাকত। আবার অন্য গোষ্ঠীর কাছে হয়তো ফল বেশি থাকত, কিন্তু মাংসের অভাব থাকত। তখন তারা নিজেদের মধ্যে জিনিসপত্র বিনিময় করত। এই বিনিময় প্রথাই ধীরে ধীরে ব্যবসার রূপ নেয়।

ব্যবসা কত প্রকার ও কি কি?

ব্যবসা মূলত তিন প্রকার:

  1. উৎপাদনকারী ব্যবসা: এই ধরনের ব্যবসায় পণ্য উৎপাদন করা হয়, যেমন – পোশাক তৈরি, খাদ্য উৎপাদন ইত্যাদি।
  2. বাণিজ্যিক ব্যবসা: এই ধরনের ব্যবসায় উৎপাদিত পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করা হয়, যেমন – পাইকারি ব্যবসা, খুচরা ব্যবসা ইত্যাদি।
  3. সেবামূলক ব্যবসা: এই ধরনের ব্যবসায় সেবা প্রদান করা হয়, যেমন – শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন ইত্যাদি।

ব্যবসায়ের মৌলিক উপাদান গুলো কি কি?

একটি ব্যবসার মৌলিক উপাদানগুলো হল: উদ্যোক্তা, মূলধন, পণ্য বা সেবা, ক্রেতা, যোগাযোগ ।

১. উদ্যোক্তা: 

উদ্যোক্তা

উদ্যোক্তা হলেন সেই ব্যক্তি যিনি ব্যবসা শুরু করার উদ্যোগ নেন। তিনি ব্যবসার পরিকল্পনা করেন, ঝুঁকি নেন এবং ব্যবসা পরিচালনা করেন। উদ্যোক্তার প্রধান কাজ হলো নতুন ধারণা তৈরি করা এবং সেগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়া।

২. মূলধন: ব্যবসা শুরু করার জন্য অর্থের প্রয়োজন। এই অর্থকেই মূলধন বলা হয়। মূলধন বিভিন্ন উৎস থেকে আসতে পারে, যেমন নিজের সঞ্চয়, ঋণ, বিনিয়োগ ইত্যাদি। মূলধন ছাড়া কোনো ব্যবসা শুরু করা সম্ভব নয়।

৩. পণ্য বা সেবা: প্রতিটি ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য থাকে পণ্য বা সেবা বিক্রি করা। পণ্য হলো বস্তুগত জিনিস, যেমন: খাবার, পোশাক, গাড়ি ইত্যাদি। সেবা হলো অবস্তুগত জিনিস, যেমন: শিক্ষা, চিকিৎসা, পরিবহন ইত্যাদি। পণ্য বা সেবা ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব নয়।

৪. ক্রেতা: ক্রেতা হলেন সেই ব্যক্তি যিনি পণ্য বা সেবা কেনেন। ক্রেতার চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য বা সেবা তৈরি করা হয়। ক্রেতার সন্তুষ্টি ব্যবসার সাফল্যের অন্যতম প্রধান শর্ত।

৫. যোগাযোগ: ব্যবসার জন্য ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যোগাযোগের মাধ্যমে ক্রেতাদের চাহিদা জানা যায়, তাদের কাছে পণ্য বা সেবার তথ্য পৌঁছানো যায় এবং তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা যায়। যোগাযোগের মাধ্যম হতে পারে ইমেইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ওয়েবসাইট ইত্যাদি।

ব্যবসা কি একটি পেশা?

হ্যাঁ, ব্যবসা একটি পেশা। একজন ব্যবসায়ী তার জ্ঞান, দক্ষতা, ধৈর্য্য ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করেন।

ব্যবসা হলো উপার্জনের একটি স্বাধীন পন্থা, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ব্যবসা হলো এমন একটি কাজ, যেখানে ব্যক্তি মুনাফা অর্জনের জন্য কিছু পণ্য তৈরি করে বা অন্য কোথাও থেকে কিনে আনে, অথবা কোনো সেবা দেয়। এই পণ্য বা সেবাগুলো মানুষের প্রয়োজন মেটায়।

ব্যবসায় সংগঠন কত প্রকার ও কি কি?

ব্যবসায় সংগঠন বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, যেমন:

  • এক মালিকানা ব্যবসা: একজন ব্যক্তির মালিকানাধীন ব্যবসা।
  • অংশীদারী ব্যবসা: একাধিক ব্যক্তির মালিকানাধীন ব্যবসা।
  • সমবায় সমিতি: সদস্যদের যৌথ উদ্যোগে গঠিত ব্যবসা।

ব্যবসায়ের প্রধান উদ্দেশ্য কি?

ব্যবসায়ের প্রধান উদ্দেশ্য হল মুনাফা অর্জন করা। মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পণ্য বা সেবা উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয় বা আদান-প্রদান করার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ব্যবসা বলে।

ব্যবসায়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য কি কি?

ব্যবসায়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল:

  1. মুনাফা অর্জন: ব্যবসার মূল লক্ষ্য।
  2. ঝুঁকি গ্রহণ: ব্যবসায় ঝুঁকি থাকবেই।
  3. আইনগত বৈধতা: ব্যবসা আইনগতভাবে বৈধ হতে হবে।
  4. ক্রেতা সন্তুষ্টি: ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করা ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
  5. সামাজিক দায়বদ্ধতা: সমাজের প্রতি ব্যবসার দায়িত্ব রয়েছে।

ব্যবসা কি হালাল?

ইসলামে ব্যবসা হালাল। তবে, কিছু ব্যবসা রয়েছে যা ইসলামে হারাম। নিচে একটি টেবিল দেওয়া হল:

ব্যবসার ধরন হালাল নাকি হারাম?
ই-কমার্স বা অনলাইন বিক্রি হালাল (যদি প্রতারণা বা হারাম পণ্য না থাকে)
শেয়ার ব্যবসা নির্ভর করে (যদি সুদ ও হারাম কোম্পানির সাথে যুক্ত না হয়, তবে হালাল)
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসা সন্দেহজনক (অনেক আলেম হারাম বলেন, কারণ এটি অনিশ্চিত ও জুয়ার মতো)
হালাল খাবার ব্যবসা হালাল (যদি হারাম উপাদান না থাকে)
ইসলামিক পোশাক ব্যবসা হালাল
সুদ ভিত্তিক ব্যাংক ব্যবসা হারাম (কারণ সুদ স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ)
জুয়া বা ক্যাসিনো ব্যবসা হারাম 
রিয়েল এস্টেট ব্যবসা হালাল (যদি প্রতারণা না থাকে)

ব্যবসা করার টিপস

ব্যবসায় সফলতা চাইলে নিজের আগ্রহ, দক্ষতা ও বাজার চাহিদা মিলিয়ে একটি ভালো ব্যবসা শুরু করে, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করুন এবং গ্রাহকদের সন্তুষ্ট রাখুন। ব্যবসা শুরু করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ টিপস নিচে দেওয়া হলো:

  1. নিজের দক্ষতা ও আগ্রহ: আপনি যা ভালো পারেন, সেই কাজ দিয়েই শুরু করুন। যে কাজে আপনার আগ্রহ আছে, সেটা ব্যবসা হিসেবে বেছে নিন।
  2. বাজার যাচাই: আপনার পণ্য বা সেবার চাহিদা আছে কি না, দেখুন। বাজার গবেষণা করে দেখুন কোন ধরনের ব্যবসার চাহিদা বেশি।
  3. পরিকল্পনা: কীভাবে ব্যবসা করবেন, তার একটা ধারণা তৈরি করুন। কত টাকা লাগবে, কীভাবে আয় হবে, তা ঠিক করুন।
  4. টাকা জোগাড়: নিজের জমানো টাকা ব্যবহার করতে পারেন। ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন। প্রথমে ছোট করে শুরু করুন, ধীরে ধীরে বাড়ান।
  5. প্রচার: মানুষকে আপনার ব্যবসা সম্পর্কে জানান। অনলাইন বা অফলাইনে বিজ্ঞাপন দিন। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাবহার করুন।
  6. আইনকানুন: ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করুন।লাইসেন্স ও পারমিট নিন।
  7. ধৈর্য: ব্যবসা শুরু করা কঠিন হতে পারে, তাই ধৈর্য রাখুন। নতুন কিছু শিখতে থাকুন।

ব্যবসা করার আইডিয়া

ব্যবসার আইডিয়া খুঁজে বের করার সহজ কিছু উপায়:

  1. আপনার দক্ষতা ও আগ্রহ: আপনি কোন কাজে দক্ষ? কোন কাজ করতে আপনার ভালো লাগে? এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে ব্যবসার আইডিয়া বের করুন।
  2. বাজার পর্যবেক্ষণ  : মানুষের এখন কী প্রয়োজন? বাজারে কোন জিনিসের চাহিদা বেশি? কোন জিনিসের অভাব আছে? এগুলো জেনে ব্যবসার আইডিয়া বের করুন।
  3. সমস্যা চিহ্নিতকরণ: আপনার চারপাশে কী সমস্যা আছে? মানুষ কোন সমস্যায় ভুগছে? সমস্যার সমাধান করতে পারলে ব্যবসার আইডিয়া পাওয়া যাবে।
  4. অন্যান্য আইডিয়া: সফল ব্যবসাগুলো কীভাবে চলছে দেখুন। তাদের থেকে ধারণা নিন। তাদের মতো করে বা নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন।
  5. নতুন প্রযুক্তি: নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানুন। নতুন উদ্ভাবন গুলো দেখুন। এগুলো কাজে লাগিয়ে কী করা যায় ভাবুন।
  6. অনলাইন ও মানুষের সাহায্য: অনলাইনে বিভিন্ন ব্যবসায়িক আইডিয়া সম্পর্কিত ওয়েবসাইট ও ব্লগ দেখুন। বন্ধুবান্ধব, পরিবার ও পরিচিতদের সাথে কথা বলুন।

ব্যবসায়ের মূলনীতি

ব্যবসায়ের মূলনীতি হলো গ্রাহক সন্তুষ্টি, নৈতিকতা, আইন মেনে চলা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার সমন্বয়ে একটি সুষ্ঠু ও সফল ব্যবসা পরিচালনা করা। যেমন:

  1. সততা: ব্যবসায় সৎ থাকতে হবে।
  2. নিয়ম: ব্যবসায় নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে।
  3. শৃঙ্খলা: ব্যবসায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।
  4. সময়ানুবর্তিতা: সময়মতো কাজ করতে হবে।
  5. পরিশ্রম: ব্যবসায় সফল হতে হলে পরিশ্রম করতে হবে।

ব্যবসা ও সুদের পার্থক্য কি?

ব্যবসা ও সুদের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল, ব্যবসায় লাভ ও লোকসান উভয়ই হতে পারে, কিন্তু সুদে নির্দিষ্ট হারে লাভ পাওয়া যায়।

ব্যবসা করতে কি কি প্রয়োজন?

ব্যবসা করতে কি কি প্রয়োজন

একটি সফল ব্যবসা গড়ে তুলতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রয়োজন হয়। নিচে ব্যবসা শুরু করার জন্য মূল উপাদান গুলো তুলে ধরা হলো—

১. মূলধন

প্রাথমিক বিনিয়োগ ছাড়া ব্যবসা শুরু করা কঠিন। এটি হতে পারে নিজের সঞ্চয়, পারিবারিক সহায়তা, ব্যাংক ঋণ বা বিনিয়োগকারীর অর্থায়ন। ব্যবসার আকার অনুযায়ী মূলধনের পরিমাণ নির্ধারণ করা দরকার।

২. ব্যবসার আইনি অনুমোদন ও কাগজপত্র

সঠিকভাবে ব্যবসা চালাতে কিছু অনুমতি ও কাগজপত্র দরকার, যেমন— ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট ,ট্যাক্স নিবন্ধন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

৩. ব্যবসার স্থান বা অফিস

ব্যবসার ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে হবে। এটি হতে পারে— একটি ভাড়া করা দোকান বা অফিস ,অনলাইন ব্যবসার জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, নিজস্ব বাড়িতে ছোট পরিসরে ব্যবসার সেটআপ

৪. পণ্য বা সেবা

যে পণ্য বা সেবা বিক্রি করা হবে, সেটি হতে হবে চাহিদা সম্পন্ন ও প্রতিযোগিতামূলক। ব্যবসার সাফল্যের জন্য পণ্যের মান, মূল্য নির্ধারণ ও সঠিক বিপণন কৌশল গুরুত্বপূর্ণ।

৫. কর্মী ও দক্ষ জনবল

যদি ব্যবসাটি বড় পরিসরের হয়, তাহলে দক্ষ কর্মী নিয়োগ করা দরকার। কর্মীদের কাজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ব্যবসার পরিচালনাকে সহজ করে তোলে।

৬. বিপণন ও প্রচার-প্রচারণা

একটি ব্যবসা সফল করতে সঠিক মার্কেটিং কৌশল প্রয়োজন। যেমন—

  • ডিজিটাল মার্কেটিং (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, গুগল অ্যাডস)
  • লিফলেট বা ব্যানার
  • পরিচিতদের মাধ্যমে প্রচার

৭. পরিকল্পনা ও ব্যবসায়িক কৌশল

একটি সুসংগঠিত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ছাড়া ব্যবসা দীর্ঘমেয়াদে সফল হওয়া কঠিন। এটি অন্তর্ভুক্ত করে— লক্ষ্য নির্ধারণ, প্রতিযোগী বিশ্লেষণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, ভবিষ্যতের সম্প্রসারণ পরিকল্পনা।

৮. গ্রাহক ও বাজার বিশ্লেষণ

সফল ব্যবসার জন্য গ্রাহকের চাহিদা বুঝতে হবে এবং বাজার বিশ্লেষণ করতে হবে। প্রতিযোগীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে নিজস্ব কৌশল নির্ধারণ করা দরকার।

৯. তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার

বর্তমান যুগে ব্যবসাকে আরও সহজ ও দক্ষ করতে অনলাইন পেমেন্ট, ই-কমার্স, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।

১০. সেবা ও বিক্রয়োত্তর সহায়তা

বিক্রির পরেও গ্রাহকের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা দরকার। এতে তারা বারবার আপনার কাছ থেকে কিনতে চাইবে।

সঠিক পরিকল্পনা ও উপযুক্ত উপকরণ থাকলে ব্যবসায় সফল হওয়া সম্ভব।

শেষ কথাঃ ব্যবসা কি?

ব্যবসা হল একটি লাভজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়া। সঠিক পরিকল্পনা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে যে কেউ সফল ব্যবসায়ী হতে পারে।

এই আর্টিকেলে, আমরা ব্যবসা কি, এর উদ্দেশ্য, সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, মৌলিক উপাদান, বৈশিষ্ট্য, আইডিয়া, মূলনীতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য সহায়ক হবে।

নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ

সেরা ৫ টি ডোমেইন চেকার টুল দিয়ে সঠিক নাম বেছে নিন

সেরা ৫ টি ডোমেইন চেকার টুল দিয়ে সঠিক নাম বেছে নিন

একটি ওয়েবসাইটের জন্য সঠিক ডোমেইন নাম বাছাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার ব্র্যান্ডের পরিচয় এবং গ্রাহকদের মনে আপনার ওয়েবসাইটের প্রথম ছাপ গঠনে সাহায্য করে। ভালো একটি ডোমেইন নাম মনে রাখা সহজ এবং আপনার ওয়েবসাইটের জন্য ট্রাফিক আকর্ষণ করতে সাহায্য করে।

৫ টি সেরা ডোমেইন নাম চেকার টুল

ডোমেইন চেকার টুল আপনাকে আপনার পছন্দের ডোমেইন নামটি কেনা যাবে কিনা তা খুঁজে বের করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি আপনাকে অনুরূপ ডোমেইন নামের সুপারিশ করতে পারে।

আসুন জেনে নিই সেরা ৫ টি ডোমেইন চেকার টুল সম্পর্কে:

১. GoDaddy ডোমেইন নেম চেকার টুল

GoDaddy হল একটি জনপ্রিয় ডোমেইন রেজিস্ট্রার এবং ওয়েব হোস্টিং প্রদানকারী। এটি একটি সহজ এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেসের মাধ্যমে ডোমেইন সার্চ করার সুবিধা দেয়।

গোড্যাডি ডোমেইন নেম চেকার

২. Namecheap

Namecheap আরেকটি জনপ্রিয় ডোমেইন রেজিস্ট্রার যা প্রতিযোগিতামূলক দামে ডোমেইন নাম অফার করে। এটি অনেক ধরনের ডোমেইন সার্চ টুল অফার করে। আপনি অবিক্রিত সাধারন ডোমেইন ছাড়াও প্রিমিয়াম ডোমেইন নামের উপর বিডিং করতে পারবেন। সেই সাথে বিস্ট মোডে যেয়ে আপনার প্রয়োজন অনুসারে ডোমেইন নাম সার্চ করে নিতে পারবেন। নেমচিপ অনেক ধরনের টিএলডি (Top-level domain) সাপোর্ট করে।

নেমচিপ ডোমেইন চেকার

৩. Hostinger:

হোস্টিংগার ডট কম এমন একটি পরিষেবা যা ডোমেইন নাম রেজিস্ট্রেশন এবং ম্যানেজমেন্ট সরবরাহ করে। এটির সুলভ মুল্য, সহজ এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেসের পাশাপাশি হোস্টিং এর মত পরিষেবাগুলির জন্য নতুন ফ্রিলান্সারদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

হোস্টিংগার ডোমেইন নেম চেকার

৪. Hover:

Hover একটি স্বাধীন ডোমেইন রেজিস্ট্রার যা সহজ এবং পরিষ্কার ইন্টারফেসের জন্য পরিচিত। এটি একটি ব্যাপক ধরনের টিএলডি সাপোর্ট করে এবং প্রতিযোগিতামূলক দামে ডোমেইন নাম অফার করে।

হোভার ডোমেইন নেম চেকার

৫. Domainr:

Domainr একটি বিনামূল্যের ডোমেইন সার্চ ইঞ্জিন যা আপনাকে অনেকগুলি ভিন্ন ধরনের ডোমেইন নাম সুপারিশ করতে পারে। এর সাথে সাথে এটি আপনাকে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্তর বিস্তারিত তথ্য দেখাবে। এটি আপনার পছন্দের শব্দ বা ফ্রেজ ব্যবহার করে অনেকগুলি ভিন্ন ধরনের ডোমেইন নাম তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে।

ডোমেইনার নেম চেকার

ডোমেইন নাম বাছাইয়ের সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

সংক্ষিপ্ত এবং সহজ: ডোমেইন নাম যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত এবং সহজ হওয়া উচিত যাতে লোকেরা এটি সহজে মনে রাখতে পারে।

প্রাসঙ্গিক: ডোমেইন নাম আপনার ব্যবসা বা ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তুর সাথে প্রাসঙ্গিক হওয়া উচিত।

টপ লেভেল ডোমেইন (টিএলডি): আপনার ডোমেইন নামের জন্য সঠিক টিএলডি (Top-level domain) বাছাই করুন। উদাহরণস্বরূপ, .com, .net, .org ইত্যাদি। আপনার টারগেট অ্যাডিয়েন্স যদি নির্দিষ্ট দেশের হয়ে থাকে তাহলে ঐ দেশের টিএলডি ডোমেইন যেমন co.uk, .us, .bd, .pk, .in বেছে নিতে পারেন।

ডোমেনই এর পুর্ব ইতিহাস

ডোমেইন নাম কেনার আগে অবশ্যই এটি পূর্বে ব্যবহার হয়েছে কিনা সেটা যেনে নেয়া উচিৎ। কোন অসৎ উদ্দেশ্যে ডোমেনই নাম আগে ব্যবহৃত হয়ে থাকলে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য তা ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে। আগের ইতিহাস যাচাই করার জন্য আপনি নিচের দুটি টুল খুবই কার্যকর।

Whois

Whois দিয়ে আপনি ডোমেইন নামের পূর্ব এবং বর্তমান ব্যবহারকারী দের তথ্য পাবেন। যা আপনাকে এই ডোমেনেইর পূর্ব ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দিতে পারবে। অনেক সময় স্পাম অথবা অবৈধ কার্যকলাপের জন্য গুগল বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ডোমেইন নামকে ব্লক লিস্টেড করে রাখে। না বুঝে এমন ডোমেইন নেম কিনে ফেলা আপনার ব্যবসার জন্য মারাত্নক অসুবিধার কারন হতে পারে।

Whois ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন চেকার

ওয়েবেক মেশিন

মনে করুন আপনি sugarshop.com এর ২০২০ সালে কেমন ইন্টারফেস বা কনটেন্ট ছিল তা দেখতে চান। কিন্তু এখন তো ওয়েবসাইটটি অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে। তাহলে কিভাবে দেখবে?

এর জন্য রয়েছে ওয়েবেক মেশিন। শুধু ২০২০ সাল নয়, নির্দিস্ট সময় পর পর প্রায় সকল ওয়েবসাইট ইন্টারনেট আর্কাইভ সংরক্ষণ করে রাখে। আর সেই সংরক্ষণ করা ডাটাবেস থেকে আপনি যেকোনো ওয়েবসাইটের পূর্বের অবস্থা ওয়েবেক মেশিন টুলের সাহায্যে দেখতে পারবেন।

ওয়েবেক মেশিনে ওয়েবসাইট হিস্টোরি

উপসংহার

এই ৫ টি ডোমেইন চেকার টুল আপনাকে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য সঠিক ডোমেইন নাম বাছাই করতে সাহায্য করতে পারে। আপনার ব্যবসার প্রয়োজন এবং বাজেটের উপর ভিত্তি করে আপনার জন্য সেরা টুলটি বাছাই করুন।

আপনি কি ব্যবসার জন্য কোন নির্দিষ্ট ধরনের ডোমেইন নাম খুঁজছেন? আজই যোগাযোগ করুন আমাদের বিক্রয় প্রতিনিধির কাছে। আমরা আপনাকে সর্বতোভাবে সহায়তা করব। 

নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ

শপিফাই বনাম দেশীকমার্স: আপনার জন্য কোন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটি সঠিক?

শপিফাই বনাম দেশীকমার্স: আপনার জন্য কোন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটি সঠিক?

অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনা করতে ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করা প্রথম কাজ। ওয়েবসাইট ছাড়া আপনি কখনোই আপনার ইকমার্স ব্যবসাকে বড় করতে পারবেন না। তাই ডিজিটাল ব্যবসা পরিচালনায় একটি সঠিক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম বেছে নেয়া অপরিহার্য।

মূলত এই ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ওয়েবসাইট তৈরি এবং ব্যবসা পরিচালনার মূল মাধ্যম হয়ে দাড়ায়। ব্যবহারকারির সংখ্যা বিবেচনায় বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম শপিফাই আর বাংলাদেশের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরির একটি নির্ভরযোগ্য নাম দেশীকমার্স।

এই নিবন্ধে, আমরা এই দুটি প্ল্যাটফর্মের মূল বৈশিষ্ট্য, সুবিধা-অসুবিধা এবং দাম ইত্যাদি বিষয়ের একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো।

শপিফাই  (Shopify)

শপিফাই একটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, যা ছোট এবং বড় ব্যবসার জন্য উপযুক্ত। এটি সহজ ব্যবহারযোগ্য ইন্টারফেস, বিভিন্ন থিম এবং অ্যাপের সমন্বয় করে যে কোন ব্যবসাকে অনলাইনে আনার সুযোগ করে দেয়।

Shopify logo

 

শপিফাই এর প্রধান বৈশিষ্ট্য:

  1. থিম এবং কাস্টমাইজেশন: শপিফাইতে বিভিন্ন প্রিমিয়াম এবং ফ্রি থিম রয়েছে, যা ব্যবহার করে ই-কমার্স ওয়েবসাইট ডিজাইন করা যায়।
  2. পেমেন্ট প্রসেসিং: শপিফাই তার নিজস্ব পেমেন্ট ছাড়াও অন্যান্য অনেক পেমেন্ট গেটওয়ে সাপোর্ট করে, যা বিভিন্ন দেশের ব্যবসার জন্য কার্যকর।
  3. শিপিং ও ফুলফিলমেন্ট: বিভিন্ন দেশের শিপিং ইন্টিগ্রেশন অপশন থাকায় এটি দ্রুত এবং সহজ শিপিং প্রসেস নিশ্চিত করতে পারে।
  4. মার্কেটিং টুলস: বিভিন্ন মার্কেটিং টুলস ইন্টিগ্রেট করে শপিফাই দিয়ে সহজে মার্কেটিং করার ব্যবস্থা আছে।
  5. অ্যাপ ইকোসিস্টেম: শপিফাই অ্যাপ স্টোরে বিভিন্ন ফিচারের অ্যাপ আছে, যা দিয়ে একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার জন্য তৈরি করা যায়।

শপিফাই এর মূল্য:

শপিফাইতে বিভিন্ন প্রাইসিং প্ল্যান রয়েছে: (বর্তমান মুল্য পরিবর্তন হলে কমেন্ট করে নতুন মুল্য জানিয়ে দিন)

  1. Basic ($৩৯ / মাস)  
  2. Shopify ($১০৫/ মাস), 
  3. Advanced ($৩৯৯/ মাস)।

 প্যাকেজ প্রাইস এর বাইরে, শপিফাই এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ট্রানজাকশনে ২%-৪% ফি প্রযোজ্য।

দেশীকমার্স 

দেশীকমার্স বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, যা বাংলাদেশের ই-কমার্স ব্যবসার জন্য বিশেষভাবে তৈরি। এটি দেশের বাজারের ধরন এবং বিভিন্ন প্রয়োজনের সমাধান হিসেবে অনেক ধরেনর সুবিধা প্রদান করে।

দেশীকমার্স লোগো

দেশীকমার্স এর প্রধান বৈশিষ্ট্য

  1. স্থানীয় বৈশিষ্ট্য: বাংলা ভাষায় সাপোর্ট, স্থানীয় মুদ্রা টাকা (BDT) বেচা-কেনা, বাংলাদেশের লোকাল ব্যাংক এবং লোকাল মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেমের সাথে ইন্টিগ্রেশন।
  2. পেমেন্ট গেটওয়ে: বাংলাদেশে ব্যবহৃত বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদি পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে সহজ পেমেন্ট প্রক্রিয়া।
  3. বাংলাদেশের কুরিয়ার সার্ভিসের সাথে ইন্টিগ্রেশন: বাংলাদেশের বিভিন্ন ডেলিভারি কোম্পানির সাথে সরাসরি ইন্টিগ্রেশন থাকায় শিপিং সহজ এবং দ্রুত করা যায়।
  4. মার্কেটিং টুলস: স্থানীয় বাজারের জন্য নির্দিষ্ট মার্কেটিং সলিউশনস, যেমন SMS মার্কেটিং এবং এর সাথে সোশ্যাল মিডিয়া এবং সার্চ ইঞ্জিন ইন্টিগ্রেশন ।
  5. সাপোর্ট এবং কাস্টমার সার্ভিস: দেশের মধ্যে থেকেই সরাসরি সাপোর্ট প্রদান করে যা দ্রুত সমস্যার সমাধান নিশ্চিত করে।

দেশীকমার্স এর মূল্য

দেশীকমার্স বিভিন্ন দামের প্ল্যান অফার করে, এর বর্তমান মূল্য নিচে দেয়া হল। (বর্তমান মুল্য পরিবর্তন হলে কমেন্ট করে নতুন মুল্য জানিয়ে দিন)

  1. Starter (৳৫০০ /মাস)
  2. Standard (৳২০০০/মাস), 
  3. Advanced (৳৪০০০/মাস)

*এর সাথে নির্দিষ্ট পরিমান ফ্রী SMS ব্যবহারের পর অতিরিক্ত খরচ হতে পারে।

শপিফাই এবং দেশীকমার্সের তুলনামূলক বিশ্লেষণ

বৈশিষ্ট্য শপিফাই দেশীকমার্স
ব্যবহারের সহজলভ্যতা অত্যন্ত সহজ এবং ব্যবহারকারী বান্ধব অত্যন্ত সহজ এবং স্থানীয় ফিচার
মূল্য $৩৯ থেকে শুরু (৳৪৬৮৪) ৳ ৫০০ থেকে শুরু ($4.5)
ট্রানজাকশন ফি ২%-৪% ০%
থিম কালেকশন ফ্রি এবং প্রিমিয়াম থিমের বিশাল কালেকশন সীমিত পরিমান ফ্রি থিম
কাস্টমাইজেশন অপশন উন্নত থিম এবং অ্যাপ ইন্টিগ্রেশন সহজ ড্রাগ এন্ড ড্রপ থিম কাস্টমাইজেশন
পেমেন্ট গেটওয়ে বিশ্বব্যাপী পেমেন্ট সাপোর্ট বাংলাদেশের পেমেন্ট গেটওয়ে
পেমেন্ট কালেকশন কাস্টমার শপিফাই কে পেমেন্ট করে এবং শপিফাই মার্চেন্টকে পেমেন্ট করে কাস্টমার সরাসরি মার্চেন্ট কে পেমেন্ট করে
শিপিং ও ফুলফিলমেন্ট বিশ্বব্যাপী শিপিং অপশন বাংলাদেশের শিপিং ইন্টিগ্রেশন
মার্কেটিং টুলস উন্নত মার্কেটিং টুলস স্থানীয় এবং উন্নত মার্কেটিং টুলস
অ্যাপ ইকোসিস্টেম বৃহৎ অ্যাপ স্টোর নেই
কাস্টমার সাপোর্ট ইংরেজিতে সীমিত সাপোর্ট বাংলা ভাষায় সার্বক্ষণিক সাপোর্ট

উপসংহার

শপিফাই এবং দেশীকমার্স উভয় প্ল্যাটফর্মই তাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপটে শক্তিশালী। শপিফাই বড় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসার জন্য উপযুক্ত, যেখানে উন্নত কাস্টমাইজেশন প্রয়োজন। 

অন্যদিকে, দেশীকমার্স বিশেষভাবে বাংলাদেশী ব্যবসাগুলির জন্য উন্নত সুবিধা প্রদান করে, যা স্থানীয় ব্যবসার জন্য বিশেষ সহায়ক। আপনার ব্যবসার আকার, বাজেট এবং টার্গেট মার্কেটের উপর ভিত্তি করে যে প্ল্যাটফর্মটি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযোগী হবে তা বেছে নিতে পারেন।

নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ

ডিজিটাল মার্কেটিং কি? বিগিনারদের জন্য a to Z গাইড

ডিজিটাল মার্কেটিং কি? বিগিনারদের জন্য a to Z গাইড

আজকের যুগে ইন্টারনেট আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন যে, আমরা যেসব পণ্য বা সেবা সম্পর্কে জানতে পারি, সেগুলো সম্পর্কে কীভাবে জানতে পারি? কখনো কোনো বিজ্ঞাপন দেখে, কখনো কোনো বন্ধু বা পরিচিতজনের পরামর্শে, আবার কখনো অনলাইনে সার্চ করে। এই সমস্ত পদ্ধতি আসলে একটি বড় মার্কেটিং পরিকল্পনার অংশ, যা ডিজিটাল মার্কেটিং নামে পরিচিত।

ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং কাকে বলে?

সহজভাবে বলতে গেলে, ডিজিটাল মার্কেটিং হল ইন্টারনেট ও অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা প্রচার করার একটি প্রক্রিয়া। এটি অনেক ধরনের চ্যানেলের মাধ্যমে কাজ করে, যেমন:

  1. সোশ্যাল মিডিয়া (Facebook, Instagram, TikTok)
  2. সার্চ ইঞ্জিন (Google, Bing)
  3. ইমেইল (নিয়মিত গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগের জন্য)
  4. ব্লগ ও কন্টেন্ট (যেখানে ব্যবসার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়)
  5. অনলাইন বিজ্ঞাপন (Facebook Ads, Google Ads ইত্যাদি)

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হল সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে পণ্য বা সেবা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং তাদের ক্রয় প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা। ডিজিটাল মার্কেটিং প্রচারনার মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যবসার ব্র্যান্ডকে উন্নত করতে এবং লাভ বাড়াতে পারেন।

কেন ডিজিটাল মার্কেটিং এত গুরুত্বপূর্ণ ও এর কাজ কি?

আজকের দুনিয়ায়, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা লক্ষ লক্ষের বেশি। ফলে ইন্টারনেটে আপনার পণ্য বা সেবা প্রচার করার মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। ডিজিটাল মার্কেটিং আপনাকে নিম্নলিখিত সুবিধা দিচ্ছে:

  1. গ্লোবাল মার্কেটপ্লেস: ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনি কেবলমাত্র স্থানীয় নয়, বরং বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে পারেন।
  2. কম খরচে প্রচার: প্রচলিত মার্কেটিংয়ের তুলনায় ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক কম খরচে সম্পন্ন করা যায় এবং তাতে আরও সুনির্দিষ্ট ফলাফল পাওয়া যায়।
  3. গ্রাহকের আচরণ বিশ্লেষণ: আপনি আপনার গ্রাহকদের আচরণ ও পছন্দ সম্পর্কে জানতে পারেন, যার মাধ্যমে আপনি আপনার মার্কেটিং পরিকল্পনা সহজেই পরিবর্তন করতে পারেন।
  4. ট্র্যাকিং এবং রিপোর্টিং: ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রচারণার ফলাফল সহজেই পরিমাপ করতে পারেন। কতজন গ্রাহক আপনার বিজ্ঞাপন দেখেছেন, কতজন ক্লিক করেছেন, এবং কতজন ক্রয় করেছেন, তার সঠিক রিপোর্ট পাওয়া যায়।

ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার কি কি

ডিজিটাল মার্কেটিং বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যা ব্যবসার প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে। এখানে কয়েকটি প্রধান ধরন আলোচনা করা হল:

মোবাইলে গুগল সার্চ রেজাল্ট পেজ

  1. সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO): সার্চ ইঞ্জিনে (যেমন Google) আপনার ওয়েবসাইটকে শীর্ষে আনার প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে অর্গানিক (বিনামূল্যের) ট্রাফিক আনতে পারেন। SEO মূলত কীওয়ার্ড রিসার্চ, কন্টেন্ট অপ্টিমাইজেশন এবং লিংক বিল্ডিং নিয়ে কাজ করে।উদাহরন-Freshworks: তারা SEO ব্যবহার করে 600% ট্রাফিক বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা কীওয়ার্ড রিসার্চ এবং কন্টেন্ট অপ্টিমাইজেশন করে তাদের ওয়েবসাইটের ভিজিটর সংখ্যা বাড়িয়েছে।
    Zapier: 2022 সালে তাদের অর্গানিক ট্রাফিক 190% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ক্লিক-থ্রু রেট 18.6% ছিল।
  2. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (SMM): Facebook, Instagram, Twitter, TikTok এর মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আপনার পণ্য বা সেবা প্রচার করা। এটি ব্র্যান্ড সচেতনতা বাড়ানোর একটি কার্যকর উপায়, এবং আপনি এখানে সরাসরি গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

    Nike: তাদের সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনগুলির মাধ্যমে ব্র্যান্ড সচেতনতা বাড়াতে সক্ষম হয়েছে, যার ফলে তাদের বিক্রয় 15% বৃদ্ধি পেয়েছে।
    Coca-Cola: সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের “Share a Coke” ক্যাম্পেইন 500,000 নতুন ফেসবুক ফলোয়ার অর্জন করেছে।
    মেগাফোন থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন্য রিআকশন আইকন বের হচ্ছে
  3. পেইড সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (PPC): Google Ads বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে দ্রুত ট্রাফিক আনার প্রক্রিয়া। আপনি শুধুমাত্র যখন কেউ আপনার বিজ্ঞাপনে ক্লিক করবে তখনই পেমেন্ট করবেন।উদাহরন-WordStream: PPC ব্যবহার করে তাদের ক্লায়েন্টদের জন্য 300% ROI অর্জন করেছে।
    Amazon: PPC ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে প্রতি ডলার খরচে $2.50 আয় করে।
  4. ইমেইল মার্কেটিং: গ্রাহকদের ইমেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন অফার, নতুন পণ্য বা সার্ভিসের আপডেট এবং কন্টেন্ট পাঠানো। এটি গ্রাহকদের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করে।
    উদাহরণ:
    BuzzFeed: তাদের ইমেইল মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে 20% বেশি ট্রাফিক অর্জন করেছে।
    Airbnb: ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে তাদের গ্রাহক পুনঃপ্রাপ্তির হার 30% বৃদ্ধি পেয়েছে।
  5. কন্টেন্ট মার্কেটিং: ব্লগ পোস্ট, ভিডিও, ইনফোগ্রাফিক্স, ই-বুক ইত্যাদির মাধ্যমে মূল্যবান কন্টেন্ট তৈরি করে আপনার টার্গেট গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা। এর মূল উদ্দেশ্য হল গ্রাহকদের সমস্যার সমাধান দেয়া এবং তাদের মধ্যে ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করা।

    উদাহরণ:

    HubSpot: কন্টেন্ট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে তাদের লিড সংখ্যা 200% বৃদ্ধি পেয়েছে।
    Buffer: তাদের ব্লগের মাধ্যমে অর্গানিক ট্রাফিক 180% বৃদ্ধি করেছে।
  6. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং: তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আপনার পণ্য বা সেবা প্রচার করা এবং তাদের বিক্রয়ের একটি অংশ পেমেন্ট করা। এটি মূলত কমিশন ভিত্তিক মার্কেটিং।

    উদাহরণ:

    Amazon Associates: অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে বছরে $10 বিলিয়ন আয় করে।
    Shopify: তাদের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামের মাধ্যমে নতুন গ্রাহক আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে, যার ফলে বিক্রয় 25% বৃদ্ধি পেয়েছে।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধাপসমূহ

নিচে সংক্ষেপে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধাপসমূহ ধারাবাহিকভাবে বর্ননা করা হলো-

  • গবেষণা ও পরিকল্পনা – লক্ষ্য নির্ধারণ, টার্গেট অডিয়েন্স চিহ্নিতকরণ, প্রতিযোগিতা বিশ্লেষণ।
  • ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট প্রস্তুতি – SEO অপ্টিমাইজড ওয়েবসাইট, ব্লগ, ভিডিও, কনটেন্ট ক্যালেন্ডার।
  • SEO (সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন) – অন-পেজ, অফ-পেজ, কারিগরি ও লোকাল SEO।
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মার্কেটিং (SMM) – ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন, ইউটিউব মার্কেটিং।
  • সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM) – গুগল অ্যাডস, PPC ক্যাম্পেইন, রিমার্কেটিং।
  • ইমেইল মার্কেটিং – লিড সংগ্রহ, নিউজলেটার, প্রোমোশনাল ইমেইল।
  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং – পার্টনারশিপ, কমিশন বেইজড সেলস।
  • কনটেন্ট মার্কেটিং – ব্লগ, ভিডিও, ইনফোগ্রাফিক, পডকাস্ট।
  • কনভার্সন অপ্টিমাইজেশন (CRO) – ল্যান্ডিং পেজ, CTA উন্নয়ন।
  • এনালাইটিকস ও রিপোর্টিং – ডাটা বিশ্লেষণ, ROI ট্র্যাকিং।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য টিপস

বাংলাদেশের মতো একটি দেশে, যেখানে প্রযুক্তি দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে, সেখানে ডিজিটাল মার্কেটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কয়েকটি টিপস তুলে ধরা হল:

  1. বাংলা ভাষায় কন্টেন্ট তৈরি করুন: বাংলাদেশি গ্রাহকদের জন্য বাংলা ভাষায় কন্টেন্ট তৈরি করলে তারা সহজেই সেটি বুঝতে পারবে। এতে তাদের সাথে আপনার ব্র্যান্ডের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে।
  2. স্থানীয় পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করুন: বিকাশ, নগদ ইত্যাদি পেমেন্ট সিস্টেমগুলোর সাথে ইন্টিগ্রেশন করলে গ্রাহকদের জন্য পেমেন্ট প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে। এতে তাদের ক্রয় প্রক্রিয়ায় আর কোনো বাধা থাকবে না।
  3. ফেসবুক মার্কেটিংকে গুরুত্ব দিন: বাংলাদেশে ফেসবুক খুবই জনপ্রিয়, তাই ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়া খুবই কার্যকর হতে পারে। আপনি ফেসবুক গ্রুপেও অংশগ্রহণ করে আপনার পণ্য বা সেবা প্রচার করতে পারেন।
  4. ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করুন: ভিডিও কন্টেন্ট বাংলাদেশি দর্শকদের খুবই আকর্ষণ করে। আপনি প্রোডাক্ট ডেমো, গ্রাহকের রিভিউ, বা প্রমোশনাল ভিডিও তৈরি করে ইউটিউব বা ফেসবুকে শেয়ার করতে পারেন।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ব্যবসা বৃদ্ধি

ডিজিটাল মার্কেটিং আপনাকে নতুন গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে এবং আপনার ব্যবসা বাড়াতে সাহায্য করবে। আপনি যখন গ্রাহকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন এবং তাদের সমস্যার সমাধান দিতে পারবেন, তখনই আপনার ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে।

এছাড়া, ডিজিটাল মার্কেটিং আপনাকে একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে সাহায্য করবে। আজকের দিনে, প্রতিটি বড় ব্র্যান্ড তাদের ডিজিটাল উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করছে। আপনি যদি পিছিয়ে পড়েন, তবে আপনার ব্র্যান্ড প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না।

নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ

ডিজিটাল মার্কেটিং শিক্ষার গুরুত্ব

যারা নতুন উদ্যোক্তা, তাদের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে আপনি কম খরচে আপনার ব্যবসা দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারবেন। এছাড়া, আপনি যদি নিজে থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে চান, তাহলে বিভিন্ন অনলাইন কোর্স ও টিউটোরিয়াল আপনাকে সাহায্য করবে। একইসাথে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে নিজের ব্যবসায়ের পাশাপাশি অন্যের ব্যবসার অনলাইন মার্কেটিং এ অবদান রাখতে পারবেন। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে উপার্জন করা যায় ও এই সেক্টরে একটা আকর্স্নীয় ক্যারিয়ার গড়ে তোলা যায়।

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন ডিজিটাল মার্কেটিং করে কত টাকা ইনকাম করা যায়? উত্তর হলো, এটা নির্ভর করে আপনার দক্ষতার উপর। শুরুর দিকে একজন ডিজিটাল মার্কেটার ২০-৪০ হাজার টাকা আয় করতে পারে, মিড লেভেলে সেই ইনকাম ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকা হতে পারে আর দক্ষ ও সিনিয়র লেভেলে গেলে সেই ইনকাম ৮০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা বা তার বেশি হতে পারে। একইসাথে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে ব্যবসা শুরু করতে পারলে এই ইনকাম আরও বহুগুনে বৃদ্ধি পায়।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধা ও অসুবিধা

ডিজিটাল মার্কেটিং বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ই-কমার্স, স্টার্টআপ, এবং ছোট-মাঝারি ব্যবসাগুলোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। তবে এর কিছু সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা নিচে তুলে ধরা হলো।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধা

১. কম খরচে অধিক প্রচার

বাংলাদেশে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক ও গুগল অ্যাডসের মাধ্যমে কম খরচে বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। প্রিন্ট ও টিভি বিজ্ঞাপনের তুলনায় ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক সাশ্রয়ী। একইপরিমান অডিয়েন্সের নিকট পৌঁছাতে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এ যেখানে অনেক বেশি খরচ হবে।

২. বিশাল সংখ্যক অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ

বাংলাদেশে বর্তমানে ১৩ কোটির বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে, যা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য বিশাল বাজার তৈরি করেছে। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, যা আরও বেশি গ্রাহক টার্গেট করার সুযোগ দিচ্ছে। এই বাস্তবতা ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর চেয়ে ডিজিটাল মার্কেটিংকে আর বেশি স্কেইল্যাবিলিটি দেয়।

৩.  সুনির্দিষ্ট টার্গেটিং (Targeted Marketing)

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নির্দিষ্ট বয়স, লিঙ্গ, লোকেশন, আগ্রহ, এমনকি গ্রাহকের ক্রয়ের অভ্যাস অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দেখানো যায় যা প্রথাগত মার্কেটিং অনেকটাই লিমিটেড হয়ে যায়।

উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার কাস্টমারদের জন্য আলাদা ক্যাম্পেইন এবং চট্টগ্রামের জন্য ভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করা সম্ভব।

৪. ২৪/৭ কার্যকর এবং স্বয়ংক্রিয় প্রচারণা

দিনরাত ২৪ ঘণ্টা বিজ্ঞাপন চালানো সম্ভব, যার ফলে ক্রেতারা যেকোনো সময় পণ্য বা পরিষেবা সম্পর্কে জানতে পারে।

চ্যাটবট বা অটো-রেসপন্সারের মাধ্যমে গ্রাহকদের দ্রুত উত্তর দেওয়া যায়।

৫. অ্যানালিটিক্স ও ট্র্যাকিং সুবিধা

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে Facebook Ads Manager, Google Analytics, Hotjar ইত্যাদি টুল ব্যবহার করে ক্যাম্পেইনের কার্যকারিতা নিরীক্ষণ করা যায়। কোন বিজ্ঞাপন বেশি সাড়া ফেলছে এবং কোনটি কম পারফর্ম করছে তা সহজেই বোঝা যায়।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর অসুবিধা

১. প্রতিযোগিতা অনেক বেশি

বাংলাদেশে এখন প্রচুর ব্র্যান্ড এবং ব্যবসা ডিজিটাল মার্কেটিং করছে, যার ফলে অরগানিক রিচ কমে যাচ্ছে এবং বিজ্ঞাপনের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। একই ধরনের পণ্যের জন্য বহু বিক্রেতা প্রতিযোগিতায় নামছে, ফলে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে ব্র্যান্ড গড়ে তোলা।

২. বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব (Lack of Trust)

অনলাইনে প্রতারণার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় গ্রাহকরা নতুন ব্র্যান্ডের ওপর সহজে বিশ্বাস রাখতে চায় না। অনেক ফেক পেজ বা স্ক্যামার ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের ঠকাচ্ছে, যা বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

৩. প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব

অনেক ব্যবসায়ী এখনো ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের টুলস ও কৌশল সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন না। Facebook, Google Ads, SEO ইত্যাদি ভালোভাবে বুঝতে না পারলে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা কঠিন হয়ে যায়।

৪. ইন্টারনেট নির্ভরতা ও কানেক্টিভিটি সমস্যা

দেশের কিছু জায়গায় ইন্টারনেটের গতি কম থাকায় গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়। এছাড়া, ফেসবুক বা টিকটক মাঝে মাঝে বাংলাদেশে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ হলে অনেক ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

৫. নিয়মিত কনটেন্ট তৈরি ও মেইনটেনেন্সের প্রয়োজন

ডিজিটাল মার্কেটিং সফল করতে নিয়মিত পোস্ট, ভিডিও, ব্লগ, গ্রাফিক্স তৈরি করতে হয়, যা অনেক সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল হতে পারে। ভালো কনটেন্ট না থাকলে অডিয়েন্স আকৃষ্ট হয় না।

৬. ভুয়া এনগেজমেন্ট ও ক্লিকবেইট সমস্যা

কিছু এজেন্সি বা মার্কেটার ফেক লাইক, কমেন্ট, ক্লিক ইত্যাদি কিনে নিচ্ছে, যা কোনো বাস্তব বিক্রয়ে পরিণত হয় না। এর ফলে বিজ্ঞাপনের আসল কার্যকারিতা কমে যায় এবং বাজেট নষ্ট হয়।

বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ

বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ

০১. এসইও (SEO) ও কন্টেন্ট মার্কেটিংয়ের গুরুত্ব বাড়বে

দিন দিন পেইড মার্কেটিং এর খরচ বাড়বে। ব্রান্ডগুলো চাইবে আরও কম খরচে কিভাবে সম্ভাব্য কাস্টমার পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অর্গানিক ট্রাফিক বাড়ানোর জন্য SEO ও ব্লগ কন্টেন্টের গুরুত্ব বাড়বে। একইসাথে কন্টেন্ট মার্কেটিং এর জন্য ভিডিও কন্টেন্ট ও পডকাস্ট জনপ্রিয়তা পাবে।

০২. ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং আরও বড় হবে

ফেসবুক,টিকটক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম-এ লোকাল ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে ব্র্যান্ড প্রোমোশন আরও জনপ্রিয় হবে। ছোট ব্যবসাগুলোও মাইক্রো-ইনফ্লুয়েন্সারদের (কম অনুসারী কিন্তু সুনির্দিষ্ট নিশের) ব্যবহার করবে।

০৩. ভিডিও মার্কেটিংয়ের দাপট বাড়বে

টিকটক, ইউটিউব শর্টস, ফেসবুক রিলস এর মাধ্যমে মার্কেটিং আরও জনপ্রিয় হবে। মানুষের এটেনশন স্প্যান আরও কমবে ফলে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ভিডিও কনটেন্টের জনপ্রিয়তা বাড়বে। আর ভিডিও কন্টেন্টের এঙ্গেজমেন্ট বেশি হওয়ায় কোম্পানিগুলো এই ফরম্যাটে বেশি বিনিয়োগ করবে।

০৫. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও স্বয়ংক্রিয় বিপণন (Automation) বৃদ্ধি পাবে

AI-চালিত চ্যাটবট ও কাস্টমার সাপোর্ট আরও কার্যকর হবে। বিজ্ঞাপনের Automation Tools (Facebook Ads Manager, Google Smart Campaigns, AI Copywriting Tools) ব্যবহার বাড়বে।

০৬. লোকাল মার্কেটিং ও লোকাল ই-কমার্স বৃদ্ধি পাবে

ছোট ব্যবসাগুলো Google My Business, লোকাল এসইও (Local SEO) ব্যবহার করে লোকাল কাস্টমারদের টার্গেট করবে। ক্যাশ অন ডেলিভারি (COD) ও ফাস্ট ডেলিভারি সার্ভিস আরও উন্নত হবে।

০৭. ডিজিটাল পেমেন্ট ও ফিনটেকের প্রবৃদ্ধি

বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায় এর মতো ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের ব্যবহার আরও বাড়বে। কিস্তি ভিত্তিক ডিজিটাল পেমেন্ট ও ক্রেডিট সুবিধা জনপ্রিয় হবে।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও করনীয়

বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হলেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:

  • বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে ব্র্যান্ড ট্রাস্ট তৈরি করা প্রয়োজন।
  • অনলাইন প্রতারণা ও ভুয়া বিজ্ঞাপন বন্ধে কড়া নীতিমালা প্রয়োজন।
  • বিজ্ঞাপনের ক্রমবর্ধমান খরচ সামলানোর জন্য স্মার্ট মার্কেটিং কৌশল প্রয়োগ করতে হবে।
  • নতুন টুল ও টেকনোলজি শিখে দক্ষতা বাড়ানো জরুরি।

প্রফেশনাল ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে শেষ কথা

অবশেষে, ডিজিটাল মার্কেটিং হল একটি শক্তিশালী এবং অপরিহার্য কৌশল যা আধুনিক ব্যবসায়িক পরিবেশে সাফল্য অর্জনের জন্য অপরিহার্য। এটি ব্যবসাগুলিকে তাদের লক্ষ্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে, ব্র্যান্ড সচেতনতা বাড়াতে এবং বিক্রয় বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বাংলাদেশে, যেখানে প্রযুক্তির অগ্রগতি দ্রুত ঘটছে, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সুযোগগুলোকে কাজে লাগানো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। উদ্যোক্তাদের উচিত এই কৌশলগুলিকে গ্রহণ করা এবং তাদের ব্যবসার উন্নতির জন্য ব্যবহার করা।

DeshiCommerce-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলি এই যাত্রায় সহায়ক হতে পারে, যা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে সাহায্য করবে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, এবং যারা এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে, তারা নিশ্চিতভাবেই সফলতার পথে এগিয়ে যাবে।

ডোমেইন নেম কি? সংজ্ঞা, ব্যবহার এবং উদাহরণ

ডোমেইন নেম কি? সংজ্ঞা, ব্যবহার এবং উদাহরণ

অনলাইনে ব্যবসা করতে হলে ( যে ধরণের বিজনেসই হোক) সবার প্রথমে আপনার যে জিনিসটি দরকার হবে সেটা হলো ‘ডোমেইন’ বা ডোমেইনের নাম। অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে জানতে গিয়ে নিশ্চয় আপনার মনে  – ডোমেইন নেম কি? ডোমেইন নাম কেন প্রয়োজন অথবা এর দাম কত? – এই ধরনের প্রশ্নের উদয় হয়েছে। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনার এই সব প্রশ্নের সহজবোধ্য উত্তর দিতে চেষ্টা করবো।

ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেম কি?

মনে করুন, ঢাকা শহরের একেক টা দোকান হল একেক টা ওয়েবসাইট। ঢাকায় প্রতিটি এলাকার পোস্টাল কোড, রাস্তার নাম্বার এবং দোকানের হোল্ডিং নাম্বার দিয়ে দোকানগুলো কে চিহ্নিত করা আছে। এভাবে প্রতিটা দোকানের (ওয়েবসাইট) একটা ঠিকানা আছে, কিন্তু সেগুলো কতগুলো সংখ্যার সমষ্টি (যেমন ১৯২.০.০.১) দিয়ে তৈরি। 

এখন প্রত্যেকবার দোকানে (ওয়েবসাইট) যেতে হলে আপনাকে সংখ্যার গুলো মনে করে সঠিকভাবে রিকশাওয়ালা (ব্রাউজার) কে বলতে হবে। তবেই আপনি সেই দোকানে (ওয়েবসাইট) যেতে পারবেন।

আপনার কাছের এবং আশেপাশের একটি দুটি দোকানের সংখ্যার ঠিকানা আপনার হয়ত মনে থাকবে। কিন্তু প্রতি দিন বা মার্কেটে গেলে আপানি অসংখ্য দোকানে যেতে চান। এতগুলো দোকানের সংখ্যা দিয়ে তৈরি ঠিকানা কি মনে রাখা সম্ভব!

এই সমস্যার সমাধানেই ডোমেইন নামের জন্ম। ডোমেইন নাম হলো সহজে মনে রাখা যায় এমন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ (যেমন google.com) । যখন আপনি কোন ওয়েবসাইটে ঢুকতে চান, তখন ব্রাউজারের ঠিকানা বারে এই ডোমেইন নামটাই লিখে কিবোর্ডের এন্টার চাপলে আপনি ওয়েবসাইটে পৌঁছে যান।

পর্দার আড়ালে একটা জিনিস (DNS) কাজ করে। এটি আপনার লিখা ডোমেইন নামকে (যেমন deshicommerce.com) সেই কঠিন সংখ্যার ঠিকানায় (যেমন ১৯২.০.০.১) বদলে দিয়ে এবং আপনাকে ঠিক ওয়েবসাইটে পৌঁছে দেয়। সুতরাং, ডোমেইন নাম মনে রাখলেই আপনি যেকোনো ওয়েবসাইটে ঢুঁকতে পারবেন!

ডোমেইন নেমের ইতিহাস

ডোমেইন নেম (Domain Name) এর ইতিহাস শুরু হয় ১৯৮০ সালে। ইন্টারনেটের প্রথম পর্যায়ে, কম্পিউটারগুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত হতে আইপি ঠিকানা ((IP Address) ব্যবহার করত। তবে, IP ঠিকানা মনে রাখা কঠিন ছিল, তাই ১৯৮৩ সালে পল মকিন্স এবং স্টিভ কফম্যান ডোমেইন নেম সিস্টেম (DNS) প্রবর্তন করেন, যা আলফানিউমেরিক নামের মাধ্যমে ইন্টারনেট ঠিকানাগুলোকে সহজে চিনতে সহায়ক হয়।

DNS ব্যবহার শুরু হলে, সাইটগুলো তাদের IP ঠিকানার পরিবর্তে একটি সহজ নাম গ্রহণ করতে পারে, যেমন www.example.com। প্রথম ডোমেইন নামটি ছিল symbolics.com, যা ১৯৮৫ সালে নিবন্ধিত হয়। এরপর, ডোমেইন নামের বাজার বেড়ে গিয়ে, ইন্টারনেটের বাণিজ্যিক ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। ১৯৯০ এর দশকে ডোমেইন নাম বিক্রি এবং নিবন্ধনের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হয়, এবং .com, .org, .net এর মতো সাধারণ টপ-লেভেল ডোমেইন (TLD) জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

ডোমেইন নেম দেখতে কেমন?

একটি ডোমেইন সাধারণত দুটি বা তিনটি শব্দ নিয়ে গঠিত যা ডট দ্বারা পৃথক থাকে। যেমন: আমদের ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেম হল www.deshicommerce.com

ডোমেইন হলো আপনার ওয়েবসাইট বা ব্র্যান্ড এর নাম। ইন্টারনেটে আপনার ওয়েবসাইট খুজে প্রবেশ করতে এটির প্রয়োজন হয় । ইন্টারনেট ব্রাউজারের এড্রেস বার এ ডোমেইন নাম লিখে আমরা একটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারি।

ব্রাইজার এড্রেস বারে ডোমেইন নেম লেখা

ব্রাউজারের এড্রেস বারে ওয়েবসাইটের ডোমেইন নাম লেখা www.thisisyourdomain.com

ধরুন: একটি ওয়েবসাইট www.thisisyourdomainname.com। এই ওয়েবসাইটের নামের ৩টি অংশ আছে। যথাঃ

  1. www – সাব ডোমেইন (ওয়েবসাইট সার্ভার বুঝাতে এটা ব্যবহার করা হয়) 
  2. thisisyourdomain – ব্র্যান্ড নেম বা আপনার ওয়েবসাইটের নাম
  3. .com – টপ লেভেল ডোমেইন (Top level Domain)

নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ

ডোমেইন নামের কিছু উদাহরণ

ডোমেইন নামের একটি উদাহরণ হলো facebook.com। এটি একটি সেকেন্ড-লেভেল ডোমেইন (“facebook”) এবং একটি টপ-লেভেল ডোমেইন (“.com”) নিয়ে গঠিত। আরও কিছু জনপ্রিয় ডোমেইন নামের উদাহরণ হলো: 

এই রকম কোটি কোটি ডোমেইন নাম আছে।

ডোমেইন নাম কী কাজে ব্যবহৃত হয়?

ডোমেইনগুলি আপনার ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া সহজ করার জন্য ব্যবহার করা হয়, তবে এটির কাজ এতটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। নিচে ডোমেইন ব্যবহারের আরও কিছু কারণ তুলে ধরা হলো।

অনলাইন শপিং স্টোর

১. নিজের ব্যবসার নামের মালিকানা অর্জন

ডোমেইন নিবন্ধন করা মানে ইন্টারনেটের আপনার ব্যবসার নাম ডিজিটাল ট্রেডমার্ক করা। একবার নাম নিবন্ধন করলে, অন্য কেউ এই ডোমেইন নামের মালিকানা দাবি করতে পারবে না, যতক্ষণ না আপনি এই ডোমেইনের নিবন্ধিত নাম নিজে বাতিল করেন।

২. আপনার ব্র্যান্ডকে নামকে আরও পরিচিত এবং প্রতিষ্ঠিত করা

একটি ডোমেইন নাম অনলাইনে ব্র্যান্ডের পরিচয়কে প্রতিষ্ঠা করে। উদাহরণস্বরূপ – একজন ভিজিটর আমাদের দেশীকমার্স ওয়েবসাইটের হোমপেজ থেকে ব্লগ বা টিউটোরিয়ালে গেলে তিনি দেখবেন যে মূল ডোমেইন নামটি একই থাকছে। এটির রঙের স্কিম, লোগো এবং অন্যান্য ব্র্যান্ড উপাদান ভিজিটরের মনে ব্যবসাকে স্মরণীয় করে তোলে। 

৩. দেশীকমার্সের সাথে কাস্টম ডোমেইন সংযোগ 

আপনার ব্র্যান্ডের কাস্টম ডোমেইনকে বিনামূল্যে আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটের সাথে সংযুক্ত করে গ্রাহকের আস্থা এবং ব্র্যান্ডের পরিচিতি বাড়াতে পারবেন।

  • কাস্টম ডোমেইন সংযোগ করুন বিনামূল্যে।  
  • আপনার ব্র্যান্ডকে সব সোশ্যাল মিডিয়াসহ সব চ্যানেলে এক সুত্রে গেথে রাখুন। 
  • গ্রাহকদের অনলাইনে আপনাকে খুঁজে পাওয়ার সুযোগ দিন।  
  • আরও অনেক কিছু!

অনলাইন শপ তৈরি করুন

৪. বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন এবং সহজে স্মরণীয় করে তোলা

আপনার কোম্পানির নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ডোমেইন নাম আপনার ওয়েবসাইটকে ব্যবহারকারীদের কাছে আরও বৈধ এবং পেশাদার করে তোলে। এটি ভিজিটরদের মধ্যে আস্থা তৈরি করে যাতে তারা ওয়েব পেজে সার্ভে বা ফর্ম জমা দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

প্রো টিপ: আপনি দেশীকমার্স ব্যবহার করে কোনো কোডিং দক্ষতা ছাড়াই একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। এর সাথে কোনো অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই কাস্টম ডোমেইন সংযোগও করতে পারবেন। একবার ভাবুন তো – নিজের ব্র্যান্ড নামে একদম নিজের ই-কমার্স ওয়েবসাইট! 

৫. প্রতিষ্ঠানের নাম সহজে মনে রাখা

আপনার ডোমেইনকে স্মরণীয় করে তুলুন যাতে ভিজিটররা সহজেই এটি সার্চ বারে টাইপ করতে পারে ফলে সরাসরি ট্রাফিক বৃদ্ধি পায়।

উদাহরণস্বরূপ, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন্স লিমিটেড -এর একটি সংক্ষিপ্ত ও সুন্দর ডোমেইন নাম রয়েছে: banglalink.net । এই ডোমেইন নামটি সহজেই মনে রাখা যায় যা banglalinkdigitalcommunicationsltd.com -এর মতো একটি বিকল্পের চেয়ে অনেক সহজ।

৬. প্রতিযোগীদের মধ্যে আলাদা করে তোলা

একটি সহজ এবং আকর্ষণীয় ডোমেইন নাম আপনার ওয়েবসাইটকে প্রতিযোগী সাইট থেকে আলাদা করে। নিজের ডোমেইন দিয়ে ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করলে আপনার প্রতিযোগী ফেসবুক পেজ ব্যবসায়ীদের থেকে আপনি হবেন সম্পুর্ন আলাদা। যা আপনাকে অধিক বিক্রিতে সহায়তা করবে।

মোবাইলে গুগল সার্চ ইঙ্গিন ফলাফল পেজ

৭. সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং এবং অর্গানিক ওয়েব ট্রাফিক

সাধারণত একটি ডোমেইন যত পুরোনো হয়, তার গুরুত্ব তত বেশি হয়, যা সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফল পৃষ্ঠায় (SERP) ভালো র‍্যাংকিং ও অর্গানিক সার্চ ট্রাফিক পেতে সাহায্য করে। এর কারণ হলো এটি গুণগত কন্টেন্ট, ইন্টারনাল লিঙ্ক এবং ব্যাকলিঙ্ক পেতে সময় পায়। তাই ডোমেইন নাম আগে নিবন্ধন করার আরও একটি কারণ হলো এর গুরুত্ব বৃদ্ধির সুযোগ।

ডোমেইন এবং সাবডোমেইন এর মধ্যে পার্থক্য কি?

সাবডোমেইন হলো আপনার মূল ডোমেইনের একটি অংশ, যা নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু বা পরিষেবা আলাদা করতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, shop.example.com হলো অন্য একটি সাবডোমেইন যা মূল ডোমেইন example.com এর নামের সাথে যুক্ত কিন্তু একটি সম্পূর্ন আলাদা ঠিকানা। গুগল বা অন্য সার্চ ইঞ্জিন সাবডোমেইনকে আলাদা ওয়েবসাইট হিসেবে তাদে ইন্ডেক্সে যুক্ত করে।

ডোমেইন রেজিস্ট্রার কি? কে এই ডোমেইন নেম সিস্টেম নিয়ন্ত্রন করে?

সহজ ভাষায়, ডোমেইন রেজিস্ট্রার হলো এমন একটি কোম্পানি যারা আপনাকে ডোমেইন নাম কিনতে এবং নিবন্ধন করতে সাহায্য করে। জনপ্রিয় রেজিস্ট্রার: Namecheap, GoDaddy, Google Domains কিছু জনপ্রিয় ডোমেইন রেজিস্ট্রারের উদাহরণ।

কে ডোমেইন নেম সিস্টেম (DNS) নিয়ন্ত্রণ করে?

ইন্টারনেট কর্পোরেশন ফর অ্যাসাইন্ড নেমস অ্যান্ড নাম্বারস (ICANN)  হলো  একটি অলাভজনক সংস্থা যা  DNS  নিয়ন্ত্রণ করে।

কিভাবে একটি ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রার ও রিন্যু করতে হয়?

ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রেশনের ধাপসমূহ-

১. ডোমেইন নেম নির্বাচন: প্রথমে আপনার পছন্দের ডোমেইন নেমটি নির্বাচন করুন। * .com, .net, .org এর মতো জনপ্রিয় extension গুলো সাধারণত বেশি ব্যবহৃত হয়। 

* আপনার ব্যবসা বা ওয়েবসাইটের উদ্দেশ্য অনুসারে extension নির্বাচন করুন।

২. ডোমেইন নেম সার্চ: আপনার পছন্দের ডোমেইন নেমটি এভেইলেবল কিনা তা যাচাই করার জন্য কোন ডোমেইন রেজিস্ট্রারের ওয়েবসাইটে সার্চ করুন (যেমন: GoDaddy, Namecheap)। 

দেশী কমার্স থেকেও নিতে পারেন। এখানে ক্লিক করে আমাদের প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করুন

৩. রেজিস্ট্রার নির্বাচন: আপনার পছন্দের রেজিস্ট্রার নির্বাচন করুন। রেজিস্ট্রার নির্বাচনের সময় মূল্য, সেবা, এবং সমর্থন বিবেচনা করুন।

৪. রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন: রেজিস্ট্রারের ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন। এর জন্য আপনাকে কিছু ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে হবে এবং রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদান করতে হবে।

কিভাবে ডোমেইন নেম রিন্যু করবেন?

১. রিনিউয়াল নোটিশ:  আপনার ডোমেইন নেমের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে রেজিস্ট্রার আপনাকে রিনিউয়াল নোটিশ  পাঠাবে।

২. রিনিউয়াল প্রক্রিয়া: নোটিশে উল্লেখিত নির্দেশাবলী অনুসরণ করে আপনার ডোমেইন নেম রিনিউ করুন। এর জন্য  আপনাকে রিনিউয়াল ফি প্রদান করতে হবে।

ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রেশন বা কিনতে কত টাকা লাগে?

ডোমেইন নামের দাম কত এটা নিয়ে অনেকই সংশয়ে থাকেন। খুশির সংবাদ হল – আপনি খুব কম বাৎসরিক খরচেই একটি ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রেশন বা কিনতে পারবেন। আগে রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি এমন একটি সাধারন ডোমেইনের নামের মূল্য ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা হয়। তবে ডলারের চলতি দাম এবং ডোমেইন নেম বিক্রেতার উপর এই দামের কিছুটা হেরফেরও হতে পারে। পাশাপাশি আপনি কী ধরণের TLD (.com বা .net বা .biz বা .xyz ইত্যাদি)  ব্যবহার করতে চান তার উপরও মূল্য নির্ভর করে। 

আপনি ডোমেইন নেম কিনতে চাইলে দেশীকমার্সের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা আপনার ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড থাকলে godaddy.com, namecheap.com এর মত প্রতিষ্ঠান থেকেও সহজেই কিনতে পারবেন।

নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ

ডোমেইন নেমের নিরাপত্তা: আপনার ডোমেইন সুরক্ষিত রাখবেন যেভাবে

আপনার অনলাইন পরিচয়ের জন্য ডোমেইন নেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার ওয়েবসাইটের ঠিকানা এবং আপনার ব্র্যান্ডের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই ডোমেইন নেমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

আপনার ডোমেইন সুরক্ষিত রাখার জন্য কিছু নিম্নে প্রদত্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বিবেচনা করতে পারেন-

১. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার:

  • আপনার ডোমেইন রেজিস্ট্রার অ্যাকাউন্টের জন্য একটি শক্তিশালী এবং অনন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
  • পাসওয়ার্ডে বড় হাতের এবং ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্ন ব্যবহার করুন।
  • নিয়মিত আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।

২. টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন সক্রিয় করুন:

  • আপনার ডোমেইন রেজিস্ট্রার অ্যাকাউন্টে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) সক্রিয় করুন।
  • 2FA একটি অতিরিক্ত নিরাপত্তা স্তর প্রদান করে যা আপনার অ্যাকাউন্টে অননুমোদিত অ্যাক্সেস প্রতিরোধ করে।

৩. ডোমেইন লক সক্রিয় করুন:

  • আপনার ডোমেইন রেজিস্ট্রার “ডোমেইন লক” বৈশিষ্ট্যটি সক্রিয় করুন।
  • এটি আপনার ডোমেইন নেম অননুমোদিত ভাবে স্থানান্তর বা মুছে ফেলা থেকে প্রতিরোধ করবে।

৪. WHOIS প্রাইভেসি সুরক্ষা ব্যবহার করুন:

  • WHOIS প্রাইভেসি সুরক্ষা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য (নাম, ঠিকানা, ইমেইল ইত্যাদি) WHOIS ডেটাবেসে প্রকাশ থেকে প্রতিরোধ করে।
  • এটি আপনাকে স্প্যাম, ফিশিং এবং পরিচয় চুরির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।

৫. নির্ভরযোগ্য রেজিস্ট্রার ব্যবহার করুন:

  • সুনামধন্য এবং নিরাপত্তা সচেতন ডোমেইন রেজিস্ট্রার থেকে আপনার ডোমেইন নেম রেজিস্টার করুন।
  • তারা আপনার ডোমেইন নেমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

৬. নিয়মিত আপনার ডোমেইন নেমের রেকর্ড পরীক্ষা করুন:

  • নিয়মিত আপনার ডোমেইন নেমের রেকর্ড (DNS রেকর্ড, WHOIS তথ্য ইত্যাদি) পরীক্ষা করুন যাতে কোন অস্বাভাবিক পরিবর্তন হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে পারেন।

৭. আপনার ইমেইল এবং ওয়েবসাইট সুরক্ষিত রাখুন:

  • আপনার ডোমেইন নেমের সাথে সংযুক্ত ইমেইল এবং ওয়েবসাইট সুরক্ষিত রাখুন।
  • শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করুন এবং নিরাপত্তা প্রোটোকল (SSL/TLS) ব্যবহার করুন।

৮. সতর্কতা অবলম্বন করুন:

  • ফিশিং ইমেইল বা ওয়েবসাইট থেকে সাবধান থাকুন যা আপনার ডোমেইন নেমের তথ্য চুরি করার চেষ্টা করতে পারে।
  • সন্দেহজনক লিঙ্ক বা সংযুক্তিতে ক্লিক করবেন না।

এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করে আপনি আপনার ডোমেইন নেমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অনলাইন হুমকি থেকে আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডকে রক্ষা করতে পারবেন।

 

সমাপ্তিঃ ডোমেইন কি?

বর্তমান যুগে অনলাইনে নিজের ব্র্যান্ডকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে ডোমেইন নেম এর কোন বিকল্প নেই। এটি আপনাকে গতানুগতিক ব্যবসা থেকে আলাদা করে তোলে এবং ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এর উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমায়। 

যেহেতু এটি আপনি নিজের টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন তাই ডোমেইন নেম একমাত্র আপনি ছাড়া অন্য কেউ বন্ধ বা রেস্ট্রিক্ট করতে পারবে না। আবার আপনার ব্যবসার নাম কপি করে আরেকজন ডোমেইন নেম কিনে ব্যবসা করতে পারবে না। অর্থাৎ আপনার ব্যবসার নামের উপর ইন্টারনেটে আপনার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয় ।

বারবার জিজ্ঞাসিত প্রশ্নসমূহ

  • আপনার কাছে একটি ডোমেইনের মালিকানা কতদিন থাকে?

একটি ডোমেইনের মালিকানা সাধারণত ১ থেকে ১০ বছরের জন্য থাকে। তবে, মালিকানা মেয়াদ শেষে নবায়ন করা যায়। তাই বলা যায় আপনি যতদিন নবায়ন করবেন ততদিন ডোমেইনের মালিক থাকতে পারবেন।

  • ডোমেইন নেম নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম কি?

ডোমেইন নেম নিয়ন্ত্রণকারী প্রধান প্রতিষ্ঠানটি হল ICANN (Internet Corporation for Assigned Names and Numbers)। এটি বিশ্বব্যাপী ডোমেইন নাম সিস্টেম (DNS) এবং আইপি ঠিকানার বরাদ্দের দায়িত্ব পালন করে।

  • টপ লেভেল ডোমেইন কাকে বলে?

টপ-লেভেল ডোমেইন (TLD) হল ডোমেইনের শেষে থাকা অংশ, যেমন .com, .org, .net, .gov ইত্যাদি।

  • ডোমেইন নেম এ www থাকে কেন?

www (World Wide Web) হলো ওয়েবসাইটের সাবডোমেইন, যা ঐতিহ্যগতভাবে ওয়েবসাইটের শুরুতে ব্যবহৃত হয়, যদিও এখন অনেক ওয়েবসাইট সরাসরি ডোমেইন নাম দিয়ে এক্সেস করা যায়।

ডিজিটাল প্রযুক্তি কি? এর ব্যবহার, সুবিধা ও অসুবিধা

ডিজিটাল প্রযুক্তি কি? এর ব্যবহার, সুবিধা ও অসুবিধা

বর্তমান যুগে ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ ও কার্যকর করেছে। তাই এই প্রযুক্তি সম্পর্কে যথাযথ ধারনা থাকা প্রয়োজন। সেই সাথে এর সঠিক ব্যবহার জানতে হবে। প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক, ডিজিটাল প্রযুক্তি কি? ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল তথ্য প্রক্রিয়াকরন, সংরক্ষণ ও স্থানান্তর করা হয়। 

ডিজিটাল প্রযুক্তিতে সব তথ্যকে 0 ও ১ নম্বরে রূপান্তর করা হয়। এরপর তথ্যকে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার এবং বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যতিত আমাদের দৈনন্দিন কাজ করা অসম্ভব। যোগাযোগ, ব্যবসা- বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং বিনোদন সব কিছুই ডিজিটাল প্রযুক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়। 

আমাদের বাক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে ডিজিটাল প্রযুক্তি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। বাক্তিগত জীবনে আপনজনের সাথে যোগাযোগ করা থেকে শুরু করে অফিসের জটিলতর কাজ, সকল কিছুর জন্যই ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার স্পষ্ট। ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তারা ডিজিটাল মার্কেটিং, ই-কমার্স ও অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম উন্নত করেছে। যার ফলে তারা দেশের সীমানা অতিক্রম করে অন্যান্য বিভিন্ন দেশে তাদের ব্যবসা পরিচালন করছে। এছাড়াও আমরা প্রতিদিন মোবাইল ব্যাংকিং, চিকিৎসা, বিনোদন ও অন্যান্য কাজে ইন্টারনেট ও বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করি।

ডিজিটাল প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রসমূহ 

ডিজিটাল প্রযুক্তিগুলো সম্পর্কে আমাদের যথাযথ ধারনা থাকা একান্ত প্রয়োজন। এর ফলে আমরা আমাদের সকল কাজকে সহজে ও স্বল্প সময়ে শেষ করতে পারব। চলুন এবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। 

ইন্টারনেট

ইন্টারনেট এর মাধ্যমে কম্পিউটারকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত থেকে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়। এই নেটওয়ার্ক সিস্টেম সারা বিশ্বের মানুষকে সংযুক্ত করে। ডিজিটাল প্রযুক্তির অন্যান্য ক্ষেত্রসমূহ ব্যবহার করতেও বেশিরভাগ সময়ে ইন্টারনেট এর সাথে সংযুক্ত থাকতে হয়। ইন্টারনেট ব্যবহার আমাদের জীবনে বিপ্লব এনেছে। এর মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে আমরা জ্ঞান অর্জন করতে পারি। ইন্টারনেট এর মাধ্যমে আমরা সহজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করতে পারি, ই-মেইল পাঠাতে পারি, ঘরে বসেই অনলাইনে শপিং ও ব্যাংকিং লেনদেনগুলো করতে পারি।বিশেষ করে ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য ইন্টারনেট এর বিকল্প নেই।

কম্পিউটার

কম্পিউটার আমাদের পেশাগত ও শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কম্পিউটারে বিভিন্ন সফটওয়্যার ও টুল ব্যবহার করে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাজ করে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগ কাজ কম্পিউটারের উপর নির্ভরশীল। এছাড়াও ডিজাইন ও প্রোগ্রামিং সহ নানা সৃজনশীল কাজ করতে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।

মোবাইল ফোন

মোবাইল ফোনকে আমরা ব্যক্তিগত সহকারী বলতে পারি। শুরুতে মোবাইল ফোন দিয়ে শুধুমাত্র ফোন কল ও টেক্সট করা যেতো। স্মার্ট ফোনের আবির্ভাবের পর থেকে এটি দিয়ে কম্পিউটারের মতো সকল কাজ করা যায়। মোবাইল ফোনের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশানের মাধ্যমে এই ডিজিটাল যুগের ব্যবসায়িরা সার্ভিস প্রদান করে। ই-কমার্স, স্বাস্থ্যসেবা, এবং শিক্ষা গ্রহণের মত গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিসগুলো মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে পেতে পারি। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ও অনন্যা সামাজিক যোগাযোগগুলোর মাধ্যমে আমরা এক মুহূর্তে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থাকা মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারি এবং নিজেদের মতামত আদান-প্রদান করতে পারি। বর্তমানে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অনলাইন ব্যবসায় উদ্যোক্তাদের জন্য একটি অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরদের পণ্য ও সেবার বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য এই মাধ্যমগুলো বেছে নেয়। 

ফেসবুক মোবাইল ইন্টারফেস

ক্লাউড কম্পিউটিং

ক্লাউড কম্পিউটিং- এ ইন্টারনেট এর মাধ্যমে রিমোট সার্ভার ব্যবহার করে ডেটা সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ করা হয়। এটির  ব্যবহারকারীরা যেকোনো স্থান থেকে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে তাদের ফাইল এবং অ্যাপ্লিকেশনে অ্যাক্সেস করতে পারেন। এই তথ্যের ভাণ্ডার ব্যবসায়ের খরচ কমিয়ে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।  এটি তথ্যের নিরাপত্তা, ব্যাকআপ এবং স্কেলিংয়ের সুবিধাও প্রদান করে। 

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে মেশিন বা কম্পিউটার সিস্টেমকে মানুষের মত চিন্তা ও কাজ করার সক্ষম করা হয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মেশিন ও কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য বিশ্লেষণের কাজ করে। রোবটিক্স, চ্যাটবট, ফেইস রিকগনাইজেশন ইত্যাদি হলো কিছু এআই এর উদাহরণ। এআই চিকিৎসা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। এর মাধ্যমে এসকল ক্ষেত্রে দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় যার ফলে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 

ইনফর্মেশন টেকনোলজি

ইনফর্মেশন টেকনোলজির মাধ্যমে ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে যোগাযোগ ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সহজ হয়। এটি বিশ্বব্যাপী তথ্যের দ্রুত প্রবাহ নিশ্চিত করে। হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্কিং, এবং ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের সমন্বয়ে আইটি কাজ করে। 

ব্যবসায় ডিজিটাল প্রযুক্তি

ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সফটওয়্যার, ই-কমার্স, ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ব্যবহার করা হয়। এই বিজনেস টেকনোলজি এর মাধ্যমে ব্যবসার কাজগুলো উন্নতভাবে করে ভালো সেবা দেওয়া হয়। ইনফর্মেশন টেকনোলজি।  ইআরপি (এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং) সফটওয়্যার, সিআরএম (কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট) সিস্টেম, এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এগুলো বিজনেস টেকনোলজি এর উদাহরণ।

নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ

একটি মেয়ে ফেসবুক লাইভ দিয়ে পণ্য বিক্রি করছে

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা 

বর্তমানে বাংলাদেশে ই-কমার্স ও ফ্রীলান্সিং ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কলকারখানায়  অটোমেশন, অফিসে ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমসহ এসকল প্রযুক্তি আমাদের দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের অর্থনীতিকে ক্রমান্বয়ে সমৃদ্ধ করছে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো দূরত্ব অনেক কমিয়ে এনেছে। মুহূর্তের মধ্যেই আমরা ফেইসবুক ও  ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে সকলের আপডেট জানতে পারি। আমরা বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে অডিও, ভিডিওসহ অন্যান্য মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারি। 

ইন্টারনেট এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা সহজেই তাদের পণ্য এবং সেবা বাজারজাত করতে পারছেন।  ই-কমার্স ওয়েবসাইট যেমন দেশীকমার্স, দারাজ, চালডাল ইত্যাদির মাধ্যমে অনলাইনে পণ্য বিক্রি হচ্ছে । এছাড়া, ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম যেমন বিকাশ, রকেট ইত্যাদি ব্যবহার করে লেনদেন করা সহজ হয়েছে।

আমরা করোনাভাইরাস মহামারির সময় শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার স্পষ্টভাবে দেখেছি। অনলাইন ক্লাস ও ডিজিটাল লাইব্রেরি এখন শিক্ষা গ্রহণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম। এমনকি ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা বিশ্বের অন্যান্য ছাত্র শিক্ষকের সাথেও সংযোগ হতে পারি। 

সরকারি অনেক সেবা এখন অনলাইনে গ্রহণ করা যায়। ই-পাসপোর্টঅনলাইন ট্যাক্স প্রদান এর মতো সেবাগুলো জনগণ স্বল্প সময়ে করতে পারি। 

বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের জীবন এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে সহজ ও গতিশীল করেছে। আমরা মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে সহজেই টাকা লেনদেন করতে পারি। অনলাইনে স্বাস্থ্য পরামর্শের মাধ্যমে ঘরে বসেই স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারছি। সোশ্যাল মিদিয়াগুলো ব্যবহার করে সবার  সাথে সহজে যোগাযোগ করছি।

ডিজিটাল প্রযুক্তিতে দক্ষতা বৃদ্ধি 

ডিজিটালাইজেশনের যুগে ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ডিজিটাল প্রযুক্তির অবদানে অনেক নতুন ব্যবসায় এর আবির্ভাব হয়েছে। ডিজিটাল দক্ষতার প্রসার হলে দেশের বেকারত্ব দূর করা সম্ভব হবে। আমাদের দেশে ফ্রিলান্সের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এর অন্যতম উদাহরণ। এখন সহজেই অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ করা যায়।   ডিজিটাল মার্কেটিং এর দক্ষতা থাকলে ব্যবসায়িরা পণ্য ও সেবার প্রচার  সহজে করতে পারেন। সরকারি ও বেসরকারি সেবাগুলো গ্রহণ করতে ডিজিটাল দক্ষতা দরকার। 

ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধি করতে ডিজিটাল টুলগুলোর ব্যবহার শিখতে হয়। মাইক্রোসফট অফিস, গুগল ডকস, এবং গুগল অ্যানালিটিকস এর মতো টুলগুলো ব্যবসায়ের কাজে ব্যবহৃত হয়। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সেলস ও মার্কেটিং করার দক্ষতা থাকলে ব্যবসায়ের প্রচার সহজ হয়।   

ডিজিটাল টুল এবং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে দক্ষতা অর্জনের জন্য কার্যকর টিপস 

  •  নতুন ডিজিটাল টুল শিখার জন্য ধৈর্যের সাথে নিয়মিত অনুশীলন করা।  
  • অনলাইনের প্ল্যাটফর্ম থেকে কোর্স ও টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে টুলগুলো শিখা। Coursera, Udemy, এবং DataCamp এর মতো ওয়েবসাইটে ডিজিটাল  টুল এর বিস্তারিত টিউটোরিয়াল আছে।  
  • সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখা।
  • Stack Overflow ও  Reddit এর মতো ফোরামে যোগ দিয়ে যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য সহায়তা নেওয়া।
  • নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাথে সংযুক্ত হওয়া। এর  ফলে তাদের থেকে পরামর্শ নিয়ে ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায়। 
  • প্রযুক্তিগুলোর নতুন আপডেট সম্পর্কে জানা। নতুন ফিচারগুলো শিখলে নিজকে সময়ের সাথে দক্ষ করা সম্ভব। 

ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে জড়িত চ্যালেঞ্জ এবং সেগুলোর সমাধান

ডিজিটাল বিভাজন ও বৈষম্য

বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি এখনো সহজলভ্য নয়। বয়স্ক জনগোষ্ঠী এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের মধ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারনা কম। এগুলো ডিজিটাল বিভাজন সৃষ্টির কারণ। ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ ও ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, বিনামূল্যে বা কম খরচে প্রযুক্তি শিক্ষা প্রদান করতে হবে। 

বিপদজনক হ্যাক হওয়া সাইটে ব্রাউজ করছে একজন

সাইবার নিরাপত্তা 

বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশনের অগ্রগতির সাথে সাথে সাইবার অপরাধ বাড়ছে। তথ্য চুরি ও অনলাইন জালিয়াতির মতো সমস্যা আমরা প্রায় দেখতে পাচ্ছি।  এই সমস্যা  সমাধানে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এনক্রিপশন, মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন, এবং নিয়মিত সিস্টেম আপডেট অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি সরকারকে সাইবার অপরাধ দমন এবং আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে কঠোর হতে হবে।ডিজিটাল প্রযুক্তি অপব্যবহার

সোশ্যাল মিডিয়ায় অসত্য তথ্য ছড়ানো, অনলাইন হয়রানি এবং সাইবার বুলিং-এর মতো সমস্যা ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহারের উদাহরণ।  ডিজিটাল প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্যবহারকারীদেরকে প্রযুক্তির সুফল এবং কুফল সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শেখা এবং সাইবার বুলিং-এর মতো অপব্যবহার থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সকলকে সচেতন হতে হবে।

পরিশেষ

বাংলাদেশে ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে ডিজিটাল দক্ষটা বৃদ্ধির প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির যথাযথ প্রশিক্ষণ নিতে হবে। নতুন উদ্যোগ ও স্টার্টআপকে সমর্থন দিয়ে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন উৎসাহিত করা জরুরি। সেই সাথে সাইবার নিরাপত্তা ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

ই-কমার্স সফটওয়্যার কী? কত প্রকার এবং ব্যবহার

ই-কমার্স সফটওয়্যার কী? কত প্রকার এবং ব্যবহার

ই-কমার্স সফটওয়্যার সলিউশন মূলত অনেকগুলো সফটওয়্যার অ্যাপের সেট যা আপনাকে অনলাইনে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বেচাকেনায় সাহায্য করে। ওয়েবসাইট তৈরি থেকে কাস্টমারদের কেনাকাটার প্রক্রিয়া প্রতিটি স্টেপ এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে  খুব সহজে ম্যানেজ করা যায়। 

ই-কমার্স সফটওয়্যারের প্রকারভেদ

বিজনেসের ধরন এবং বাজেটের উপর নির্ভর করে মার্কেটে তিন ধরনের ই-কমার্স সলিউশন আমরা দেখতে পাই।যেমন, 

  1. Software-as-a-Service (SaaS)  (সফটওয়্যার-এজ-এ-সার্ভিস)
  2. Platform-as-a-Service (PaaS) (প্ল্যাটফর্ম-এজ-এ-সার্ভিস)
  3. On-premise platform (অন-প্রিমাইস প্ল্যাটফর্ম)

একটি ই-কমার্স সফটওয়্যারের মূল্য অনেকগুলি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন, বিজনেসের ধরন, কি ধরনের সফটওয়্যার আপনি পছন্দ করছেন, কত ট্রাফিক আপনার ওয়েবসাইটে আসতে পারে এবং কি কি ফিচার আপনি চান। 

যত বেশি ফিচার আপনি চাইবেন তার জন্য অতিরিক্ত পয়সা আপনাকে গুনতে হবে। কিন্তু আপনি চাইলে আপনার ই-কমার্স ব্যবসার জন্য শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ফিচারগুলো বেছে নিতে করতে পারেন তাতে আপনার খরচ অনেকটাই কমে আসবে।

সার্ভিস হিসেবে ই-কমার্স সফটওয়্যারঃ Software-as-a-Service (SaaS)

SaaS হলো এমন একটি মডেল যেখানে সফটওয়্যার ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় এবং ব্যবহারকারীকে এটি ইনস্টল বা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয় না। এটি সাধারণত সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক হয়। উদাহরণস্বরূপ shopify, Microsoft 365 বা Google Workspace SaaS এর উদাহরণ। এখানে ব্যবহারকারীরা সফটওয়্যারটিকে সরাসরি ব্রাউজার থেকে অ্যাক্সেস করে এবং কাজ সম্পন্ন করে।

দেশীকমার্সও একটি SaaS  যেখানে আপনাকে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে ই-কমার্স ব্যবসা সফটওয়্যারটি দিয়ে করাতে পারবেন।  

যারা দ্রুততম সময়ে প্রফেশনাল গ্রেডের ই-কমার্স সফটওয়্যার ব্যবহার করতে চান, তাদের জন্য Software-as-a-Service (SaaS)  সলিউশন সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি।  কারণ এখানে ই-কমার্স বিজনেসের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ফিচার এবং সুবিধা নিয়ে রেডিমেড একটা সিস্টেম থাকে।

ই-কমার্স সফটওয়্যার

প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ই-কমার্স সফটওয়্যারঃ Platform-as-a-Service (PaaS)

PaaS হলো এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে ডেভেলপাররা তাদের অ্যাপ্লিকেশন তৈরি এবং পরিচালনা করতে পারেন, কিন্তু তাদের হার্ডওয়্যার, অপারেটিং সিস্টেম, বা অবকাঠামো পরিচালনার দরকার হয় না।

উদাহরণস্বরূপ, Heroku বা Google Cloud App Engine PaaS এর উদাহরণ। ডেভেলপাররা এখানে কোড লিখে সরাসরি ডেপ্লয় করতে পারেন, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সার্ভার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় রিসোর্সগুলি পরিচালনা করে।

যদি আপনার কোড লিখার সক্ষমতা এবং এই  টেকনোলজি বোঝার দক্ষতা থাকে তাহলে চাইলে এই  অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে  প্রয়োজনীয় ই-কমার্স সফটওয়্যার কাস্টমাইজেশন করতে পারেন। Amazon Web Services (AWS এই টেকনোলজির উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

এই টেকনোলজির আপনাকে কোড কাস্টমাইজেশনের স্বাধীনতা প্রদান করে কিন্তু ইনফ্রাস্ট্রেকচরের জন্য থার্ড পার্টি ডিপেন্ডেন্সি রেখে।

নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে ই-কমার্স সফটওয়্যারঃ On-premise platforms

On-premise প্ল্যাটফর্ম হলো এমন একটি সিস্টেম যা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সার্ভার এবং অবকাঠামোর উপর পরিচালিত হয়। এখানে সমস্ত সফটওয়্যার এবং ডেটা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্থানে বা ডেটা সেন্টারে হোস্ট করা হয়। 

উদাহরণস্বরূপ, অনেক বড় কোম্পানি নিজেদের ERP (Enterprise Resource Planning) সিস্টেম যেমন SAP বা Oracle এর মতো সিস্টেমগুলোকে অন-প্রিমাইস প্ল্যাটফর্মে পরিচালনা করে। এই সফটওয়্যার সিস্টেম অত্যন্ত ব্যবহুল শুধুমাত্র বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এগুলো ব্যবহার করে থাকে।

ই-কমার্স সফটওয়্যার কেন প্রয়োজন?

ই-কমার্স সফটওয়্যার মুলত অনলাইন ব্যবসায় সময়, শ্রম এবং টাকা বাচায়। এরই সাথে এটি ক্রেতাদের কেনাকাটার প্রক্রিয়া আরও সহজ ও সমৃদ্ধ করে ব্যবসায় বিক্রয় এবং লাভ বাড়াতে সহায়তা করে।

একজন উদ্যোগতা ই-কমার্স সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা করছেন

ইজি অনলাইন বিজনেস

একটি রেডি ইকমার্স সল্যুশন  ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে আপনি একটি প্রফেশনাল ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করে বিজনেস শুরু করে পারেন। অথবা নিজস্ব টেকনিক্যাল এক্সপার্টিজ থাকলে নিজের চাহিদামাফিক কাস্টম সল্যুশন তৈরি করে নিতে পারেন যা আপনাকে নিয়ন্ত্রিত অনলাইন বিজনেস পরিচালনায় সহায়তা করে।

ব্যবসা পরিচালনার দক্ষতা বৃদ্ধি করে

এটি উদ্যোক্তার ব্যবসার মজুদ, বিক্রি এবং ডেলিভারি ট্র্যাকিং গুলোকে সহজ করে। যা তার ব্যবসায়িক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জন

গ্রাহকরা তাদের অর্ডার সাথে-সাথে সবসময় ট্র্যাক করতে পারে, বিভিন্ন পেমেন্ট মেথড ব্যবহার করে পেমেন্ট করার সুবিধা পায়, যা তাদের ক্রয় অভিজ্ঞতাকে  উন্নত করে।

বড় মার্কেট টার্গেট করার সুবিধা

এটি আপনাকে দেশী-বিদেশি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে, মার্কেট সাইজ বড় হয়, ফলে ব্যবসার বিক্রি বাড়ে।

ব্যবসা পরিচালনার খরচ সাশ্রয়

ইকমার্স বিজনেসে লোকবল কম দরকার হয়, এছাড়াও ফিজিক্যাল স্টোরে অনেকগুলো ফিক্সড এক্সপেন্স থাকে কিন্তু  ইকমার্স সফটওয়্যার পরিচালনায় শুধু ইন্টারনেট ও সফটওয়্যার সাবস্ক্রিপশন (SAAS এর ক্ষেত্রে) এবং মেইনটেনেন্স চার্জ (কাস্টম সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে) ব্যতিত অন্য কোনো খরচ নেই।

বহুমুখী মার্কেটিং সুবিধা

ইকমার্স সফটওয়্যার আপনাকে  ইমেইল মার্কেটিং, এসএমএস মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া, এসইও এবং অন্যান্য টুল ব্যবহার করার সুবিধা দেয়। এতে বিজনেসের প্রচার বাড়ে। কথায় আছে, প্রচারেই প্রসার।

নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ

স্কুটিতে চড়ে প্রোডাক্ট ডেলিভারি দিতে যাচ্ছে একজন ডেলিভারিম্যান

একনজরে ই-কমার্স সফটওয়্যারের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি

মার্কেটিং টুল: ইকমার্স ওয়েবসাইট ডিজাইন করা হয় এমন ভাবে যা আপনাকে এর ওয়েবসাইট বিল্ডার, ফর্ম, ল্যান্ডিং পেজ, এ/বি টেস্টিং, এবং ডাইনামিক কন্টেন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে আরও বেশি গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো সাহায্য করে একইসাথে কাস্টমারের ক্রয় অভিজ্ঞতাকে  উন্নত করে।

সেন্ট্রাল  ডাটাবেজ: আপনার ওয়েবসাইটের সকল ডেটার সহজ অ্যাক্সেস প্রদান করে ডেটাগুলোকে সহজবোধ্য উপায়ে উপস্থাপনা করে। এতে বিজনেসের বর্তমান পরিস্থিত অনুযায়ী পরবর্তী সিধান্তগুলো সঠিক ভাবে নেয়া সম্ভবহয়। যেমন: কত ভিজিটর সাইটে আছে, কোন প্রোডাক্টগুলি বেশি সেল হচ্ছে, কতগুলো কাস্টমার রয়েছে, তারা কী পরিমাণ অর্থের কেনাকাট করেছেন ইত্যাদি।

ড্র্যাগ এন্ড ড্রপ ওয়েবসাইট বিল্ডার: SaaS সল্যুশনগুলো আপনাকে নিজের মতো করে ওয়েবসাইটের ফ্রন্টএন্ড ডিজাইন করার সুবিধা প্রদান করে এরজন্য কোন টেকনিক্যাল নলেজের দরকার নেই। এছাড়াও কিছু ওয়েবসাইট বিল্ডিং প্লাটফর্ম রেডি টেমপ্লেট ব্যবহার করে আপনার পছন্দমত  অনলাইন স্টোর তৈরি এবং কাস্টমাইজ করতে দেয়। যেমন: deshicommerce.com একটি ড্র্যাগ এন্ড ড্রপ ওয়েবসাইট বিল্ডার।

অটোমেটিক চেকআউট: গ্রাহকদের জন্য ক্রয় প্রক্রিয়াগুলো সিমপ্লিফাইড হয় আর সেলারদের জন্য কাস্টমারদের অর্ডার ও শিপিং প্রসেসগুলো আরও বেশি ম্যানেজেবল হয়।

ডেটা অ্যানালিটিক্স: কাস্টমার বিহেভিয়ার বুঝতে এবং আপনার অফারগুলি তাদের জন্য  ইফেক্টিভলি অপ্টিমাইজ করতে সহায়তা করে।

একটি মানসম্মত ই-কমার্স সফটওয়্যার ব্যবহারের খরচ

একটি  মানসম্মত ই-কমার্স সফটওয়্যার তৈরির অথবা ব্যবহারের খরচ নির্ভর করে এর ফিচার রিকোয়ারমেন্ট, টেকনোলজি এবং আপনার সাইটের জন্য কী পরিমাণ স্টোরেজ ও ব্যান্ডউইথের প্রয়োজন সেগুলির উপর।

উদাহরণস্বরূপ, নতুন ই-কমার্স ব্যবসার জন্য দেশীকমার্সের মাসিক মাত্র ৫০০ টাকা হতে ৪০০০ টাকার প্যাকেজের ই-কমার্স সফটওয়্যার রয়েছে। আপনার ব্যবসা চাহিদামাফিক প্ল্যান নিতে এবং পরে পরিবর্তনও করতে পারবেন।

ট্যাবে অনলাইন শপ ভিজিট করছে

আপনার বিজনেসের জন্য  সঠিক ই-কমার্স সফটওয়্যার নির্বাচনে করণীয়

কী ধরনের ই-কমার্স সল্যুশন আপনার ব্যবসার জন্য আদর্শ সেটি নির্ভর করে অনেকগুলি বিষয়ের উপরে, তার মধ্যে অন্যতম আপনার বিজনেসের ধরন ও আকার।

যেমন, দেশীকমার্স ই-কমার্স সফটওয়্যারটি সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং ব্যবসা পরিচালনার দক্ষতা বৃদ্ধির করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি ব্যবহার করে আপনি ১ মিনিটের মধ্যে একটি কমপ্লিট অনলাইন স্টোর সেট আপ করে ফেলতে পারবেন।

এটি এমনভাবে ডিজাইন করা যাতে আপনি ব্যবসার চালচিত্র সহজে বুঝতে পারেন ও কোন টেকনিক্যাল চ্যালেঞ্জ নিয়ে চিন্তা না করে প্রোডাক্ট সোর্সিং, মার্কেটিং এবং বিক্রির উপর আরও বেশি মনোনিবেশ করতে পারেন।

আপনি নতুন ব্যবসা শুরু করছেন অথবা আপনার ব্যবসা গ্রোথ স্টেজে রয়েছে? আপনি একটি প্রফেশনাল ইকমার্স সল্যুশন খুঁজছেন? দেশীকমার্স আপনাকে ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি থেকে শুরু করে পণ্য ডেলিভারির ব্যবস্থা করা পর্যন্ত সহায়তা করে।

নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ

লাইক-ফলো দিয়ে সাথে থাকুন

ক্যাটাগরি

জনপ্রিয় পোস্ট