ই-কমার্সের জন্য ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম পেজের নাম তৈরির টিপস

ই-কমার্সের জন্য ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম পেজের নাম তৈরির টিপস

ই-কমার্স ব্যবসায় সাফল্য পাওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে, অর্থাৎ অন্তত ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে একটি শক্তিশালী উপস্থিতি থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া পেজটির নাম কী হবে তা নিয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন শুরুতেই, কেননা এই নামটিই আপনার সম্ভাব্য ক্রেতাদের প্রথম চোখে পড়ে। 

শুধু ব্র্যান্ড পরিচিতি তৈরির জন্য নয়, বরং ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম পেজের নাম আপনার প্রতিষ্ঠানকে কাস্টোমারদের কাছে মনে রাখার মতো করে তুলতে, SEO অপটিমাইজেশনে সুবিধা পেতে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আলাদা একটি অবস্থান তৈরী করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এখানে আমরা ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম পেজ নাম তৈরির জন্য কিছু কার্যকরী টিপস নিয়ে আলোচনা করবো।

১. সহজ ও মনে রাখার মতো পেজের নাম ব্যবহার

আপনার পেজের নাম এমন হতে হবে যা সহজে মনে রাখা যায়, উচ্চারণ করা যায় এবং বানান করা যায়। জটিল শব্দ, অতিরিক্ত চিহ্ন বা সংখ্যা এক্ষেত্রে পরিহার করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, “StyleHaven” একটি সহজ নাম, যেখানে “St!yle_H4v3n” দেখতে বেশ অগোছালো। 

২. SEO-এর জন্য কীওয়ার্ড ব্যবহার

পেজের নামের মধ্যে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড যোগ করলে এটি সার্চ ইঞ্জিন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার ব্যবসা ফ্যাশন আইটেম বা স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট নিয়ে হয়, তাহলে নামের মধ্যে “Fashion” বা “Glow” এর মতো শব্দ যোগ করুন। যেমন, “GlowSkin Essentials” জাতীয় নামগুলো একটি স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ডের জন্য আদর্শ হতে পারে।

৩. ব্র্যান্ড পরিচয়ের প্রতিফলন 

আপনার পেজ-এর নাম দিয়ে আপনার ব্র্যান্ডের মূল্যবোধ, ব্যবসায়িক দর্শন এবং পরিচয় তুলে ধরতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, “EcoHaven Store” নামটি শুনলে বোঝা যায় প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশবান্ধব পণ্য নিয়ে কাজ করছে, যেখানে “TechTrendy Hub” নামটি প্রকাশ করে এটি আধুনিক প্রযুক্তিপণ্য নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠান। 

৪. আপনার নিশ (Niche) বা লোকেশনের উল্লেখ

আপনার ব্যবসা যদি নির্দিষ্ট একটি নিশ বা লোকেশনের জন্য হয়, তাহলে সেই উপাদানগুলো নামের মধ্যে যোগ করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, “Dhaka Gift Shop” বা “Crafted Luxe BD” থেকে বোঝা যায় ব্যবসাটি কোথায় এবং কী নিয়ে কাজ করে।

৫. পেজের নাম এর ইউনিকনেস বজায় রাখুন

ম্যাড শেফ লোগোএকটি ইউনিক নাম আপনার ব্র্যান্ডকে প্রতিযোগীদের থেকে আলাদা করে তুলবে। একই নাম বা নামের মিলের কারণে ঘটা বিভ্রান্তি এড়াতে মার্কেট রিসার্চ করে নেয়াটা জরুরী। যেমন, আপনি যদি আপনার ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠানের জন্য নাম খুঁজতে থাকেন, “PixelPal Creations” হবে আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি ইউনিক এবং মনে রাখার মতো নাম। একই প্রতিষ্ঠানের নাম যদি আপনি “Photo Shop BD” রাখতে চান, তা যেমন ইউনিক হবে না, তেমনি মানুষও এই নামটি নিয়ে দুইবার মাথা ঘামাবে না।

৬. ভবিষ্যতের কথা মাথায় রাখে পেজের নাম নির্বাচন করুন

আপনার ব্যবসা বড় হওয়ার সাথে সাথে যে নামটি মানিয়ে যাবে, এমন একটি নাম আপনার বেছে নিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, “Urban Decor” নামের একটি পেজ ভবিষ্যতে গৃহসজ্জার বিভিন্ন পণ্য তাদের ব্যবসায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে, যেখানে “Vintage Candles” পেজটিকে শুধু মোমবাতি নিয়ে কাজ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। 

৭. সব প্ল্যাটফর্মে নামটির অ্যাভেইলেবিলিটি পর্যালোচনা করা 

নাম চূড়ান্ত করার আগে নিশ্চিত করুন যে আপনার পছন্দ করা নামটি ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এবং একটি ডোমেইন নাম হিসেবে অ্যাভেইলেবল আছে কি না। সমস্ত প্ল্যাটফর্মে আপনার ব্র্যান্ডের একই নাম ব্যবহার করলে ভোক্তাদের কাছে ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরী হবে সহজেই।

৮. অ্যাকশন ওরিয়েন্টেড শব্দের ব্যবহার

নামের মধ্যে অ্যাকশন ওরিয়েন্টেড শব্দ যোগ করলে নামটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। যেমন, “Shop Luxe Trends” বা “Explore Natural Beauty” নামগুলো ক্রেতাকে কার্যকরভাবে আকর্ষণ করতে পারে।

৯. টার্গেট অডিয়েন্সকে জানা 

ই-কমার্স বা যেকোনো ব্যবসারই সাফল্য অনেকাংশেই নির্ভর করে ব্যবসার টার্গেট অডিয়েন্স কারা, সেটি নিশ্চিত করার উপরে। সেজন্য আপনাকে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স নিয়ে ভাবতে হবে, এবং জানতে হবে তারা কী পছন্দ করে। পেজ এর নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এই তথ্যটি জানা জরুরী। উদাহরণস্বরূপ, “Urban Trend” নামটি তরুণ প্রজন্মের জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে, যেখানে “Retro Essentials” বা “Vintage Vibe” এর লক্ষ্য থাকবে পরিণত বয়সীদের দিকে। 

১০. নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ ভুল

  • সাধারণ নাম: “Online Shop BD”-এর মতো নামগুলো মনে রাখার মতো নয়, এবং এ ধরণের নাম ক্রেতাদের আকৃষ্টও করতে পারে না। 
  • অতিরিক্ত দীর্ঘ বা জটিল নাম: “Best Quality Stationery Supplies” এর মতো নামকে একটি ব্র্যান্ড নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা প্রায় অসম্ভবই বলা যায়। 
  • অত্যধিক ট্রেন্ডি শব্দ: এই সময়ের জনপ্রিয় শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন থাকতে হবে, কেননা সময়ের সাথে সাথে এই নামগুলো পুরোনো হয়ে যেতে পারে।

ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম পেজের নাম নির্বাচনের স্টেপ-বাই-স্টেপ গাইড

১. আইডিয়া সংগ্রহ: আপনার ব্যবসা, নিশ বা ব্যবসায়িক মূল্যবোধকে প্রকাশ করে, এমন শব্দগুলো নোট করুন।
২. কয়েকটি শব্দের মিশ্রণ: নোট করা শব্দগুলো বিভিন্নভাবে কম্বিনেশন করে নতুন শব্দ তৈরী করা যায় কি না, সেই চেষ্টা করুন।
৩. পরিচিতদের মতামত: আপনার পছন্দ করা নামগুলো বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং তাদের মতামত নিন।
৪. মার্কেট রিসার্চ: আপনার পছন্দ করা নামটি ইউনিক কি না এবং এই নামে বা এর কাছাকাছি নামে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান আছে কি না, সেটি নিশ্চিত করুন।
৫. নাম চূড়ান্ত করুন: ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এবং ডোমেইনে নামটি অ্যাভেইলেবল কিনা জানুন। থাকলে আপনার পেজ নামটি চূড়ান্ত করুন। 

কিছু কার্যকরী পেজ নামের উদাহরণ

  • ফ্যাশনের জন্য: “TrendyThreads,” “StyleSphere”, “GlamRack”, “সুঁই-সুতো”, “বুনন”, “বসন বিলাস” 
  • টেক প্রোডাক্টের জন্য: “GadgetHub BD,” “TechTrove”, “NextGen Gadgets”, “টেক ভাণ্ডার”, “গ্যাজেট কারখানা”, “ইলেকট্রো বাজার”
  • ইকো-ফ্রেন্ডলি প্রোডাক্টের জন্য: “PurePlanet Co.”, “GreenLife BD,” “EcoNest Essentials”, “অভয়ারণ্য”, “ধরিত্রী”, “পারিজাত”
  • হোম ডেকরের জন্য: “Urban Living Co.,” “HomeHaven BD”, “HomeAura Essentials”, “গৃহসজ্জা”, “ঘরোয়া”, “গৃহস্থালী” 

পরিশেষ 

ই-কমার্স ব্যবসায় ব্র্যান্ডিং স্ট্র্যাটেজিতে ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম পেজ নাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সহজ, প্রাসঙ্গিক এবং ব্র্যান্ড পরিচয় সমৃদ্ধ নাম নির্বাচন করার মাধ্যমে আপনি আপনার টার্গেট অডিয়েন্সকে আকৃষ্ট করতে পারবেন, যেটি আপনার অনলাইন প্রেজেন্সকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। এ কারণেই, আপনার ভবিষ্যৎ ব্যবসায় সফলতা পেতে নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে সময় নেয়া এবং মার্কেট রিসার্চ করা অত্যন্ত জরুরী। 

নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কী? ই-কমার্স বিক্রি বাড়িয়ে টাকা আয় করার পদ্ধতি

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কী? ই-কমার্স বিক্রি বাড়িয়ে টাকা আয় করার পদ্ধতি

পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধি এবং নিজ প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি জানান দেয়ার মোক্ষম পন্থা খুঁজে বের করা- বর্তমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাজারে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর এই দু’টোই মূল লক্ষ্য। এই দুই লক্ষ্য অর্জনে ই-কমার্সের একেবারে শুরুর দিনগুলো থেকেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর প্রভাব বেশ উল্লেখযোগ্য। এই আর্টিকেলে এর কার্যকর কিছু দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যার সফল প্রয়োগ সম্ভবপর হলে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিজেদের নিয়ে যেতে পারে অনন্য উচ্চতায়।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কী?

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে এক বিশেষ ধরণের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি, যেখানে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন অ্যাফিলিয়েটদের (ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান) নিযুক্ত করে নিজেদের পণ্য বা সেবার অনলাইন মার্কেটিং-এর জন্য। প্রতিটি পণ্য বিক্রয়ের সাপেক্ষে উক্ত অ্যাফিলিয়েট ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে একটি কমিশন পান। কমিশন মেলে ই-কমার্স ওয়েবসাইট গুলোর জন্য লিড বা ক্লিক জেনারেট করে দিলেও।

পণ্য বিক্রয়ের উপর কমিশন প্রদান করার এই আইডিয়া প্রথম উদ্ভাবন করেন উইলিয়াম জে টবিন নামক এক আমেরিকান উদ্যেক্তা, ১৯৮৯ সালে। এর কয়েক বছরের মাথায় অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এর ধারণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের মিলিয়নের উপর পণ্যের প্রচারণার জন্য নিযুক্ত করে অ্যাফিলিয়েটদের, এবং সেই শুরু। এখন পর্যন্ত ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি এবং অনলাইন মার্কেটিং-এ গ্রহণযোগ্যতার মানদণ্ডে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর অবস্থান প্রথম সারিতে।

কীভাবে কাজ করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং?

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং আবর্তিত হয় মূলত মার্চেন্ট, অ্যাফিলিয়েট এবং কাস্টোমার- এই তিন শ্রেণীকে নিয়ে। এখানে-

১. মার্চেন্টঃ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, যারা নিজেদের পণ্য বা সেবার প্রচারণা চাচ্ছেন।

২. অ্যাফিলিয়েটঃ যারা বিভিন্ন মার্চেন্টের প্রোডাক্ট প্রমোশন করছেন।

৩. কাস্টোমারঃ যারা অ্যাফিলিয়েটদের শেয়ার করা রেফারেল লিঙ্কের মাধ্যমে পণ্য ক্রয় করছেন।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রক্রিয়া

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এর ধরণ

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মানে নেহায়েত কোনো ই-কমার্স পণ্যের প্রচারণা চালানোই নয়, বরং এর ধারণাটি আরো বিস্তৃত। একটি প্রতিষ্ঠান ব্যবসার বিভিন্ন পর্যায়ে অনলাইন মার্কেটিং-এর জন্য বিভিন্ন ধরণের অ্যাফিলিয়েটদের শরনাপন্ন হতে পারে। 

ধরা যাক, কোনো একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ফিটনেস প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছে। প্রাথমিক পর্যায়ে বিক্রয় বৃদ্ধি করতে তারা গুগল অ্যাডে পারদর্শী এবং পেইড অ্যাডভার্টাইজিং-এর মাধ্যমে ট্রাফিক আনতে সক্ষম এমন একজন অ্যাফিলিয়েটের সাথে কাজ করতে পারে। 

পরবর্তীতে, ব্যবসার প্রসারের সাথে সাথে উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হবে এমন একজন অ্যাফিলিয়েটের, যিনি ফিটনেস বিষয়ে একজন এক্সপার্ট, কিন্তু নিজে সরাসরি এই প্রতিষ্ঠানের ভোক্তা নন। 

এবং সর্বশেষ, উক্ত প্রতিষ্ঠানের কাজ করতে হবে এমন একজন অ্যাফিলিয়েটের সাথে যিনি সরাসরি তাদের পণ্য ব্যবহার করেন, যেমন কোনো ফিটনেস ট্রেইনার। সর্বশেষ এই ধাপটি বিশ্বস্ততা অর্জন এবং ক্রেতাদের সাথে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক বিনির্মানে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করে।

এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী অনলাইন মার্কেটিং-এ বিভিন্ন ধরণের অ্যাফিলিয়েটরা নিয়োগ পেয়ে থাকেন। গুগল অ্যাডস বা এসইও ব্যবহার করে যারা ট্রাফিক আনতে সক্ষম, তারা পে-পার-ক্লিক মার্কেটিং নিয়ে কাজ করেন। আবার পণ্যের বিক্রয় বাড়াতে এক্সপার্ট এবং প্রতিটি পণ্যের বিক্রয়ে ১০% পর্যন্ত কমিশন নিয়ে থাকেন এমন যারা আছেন, তারা কাজ করেন পে-পার-সেলস মার্কেটিং নিয়ে। লিড জেনারেশন নিয়েও কাজ করে থাকেন অনেক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার। 

এছাড়াও অ্যাফিলিয়েটরা কাজ করেন রেফারেল মার্কেটিং, কুপন মার্কেটিং বা ইমেইল মার্কেটিং নিয়ে। তবে আমরা সবচেয়ে বেশি যে ধরণের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং দেখতে পাই, তা হলো ইনফ্লুয়েন্সার এবং কনটেন্ট মার্কেটিং।  

মোবাইল এবং ল্যাপটপে ই-কমার্স দোকানে প্রোডাক্ট দেখা হচ্ছে

ই-কমার্স বিক্রয় বৃদ্ধিতে এর কার্যকর প্রয়োগ

১. নিশ (niche) অ্যাফিলিয়েটদের সাথে পার্টনারশিপঃ একজন অ্যাফিলিয়েট সব ধরণের niche নিয়ে কাজ করেন না, ভিন্ন ভিন্ন অ্যাফিলিয়েটরা ভিন্ন ভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির সাথে যুক্ত। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে খুজে বের করতে হয় তাদের প্রদানকৃত পণ্য বা সেবার বিষয়ে অভিজ্ঞ এমন অ্যাফিলিয়েটদের।

২. যথাযথ কমিশন প্রদানঃ সেই নব্বই দশকের শেষ দিকে সদ্য ব্লগিং শুরু করা ব্লগারেরাও মাসে হাজার দশেক ডলার উপার্জন করতে শুরু করেন শুধু বই, গ্যাজেট আর সফটওয়্যার প্রোমোট করেই। অ্যামাজনের বিপুল সাফল্যই প্রমাণ করে, কেন মার্কেটারদের ন্যায্য কমিশন প্রদান করা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিতে অত্যন্ত জরুরী। পুরো গ্লোবাল মার্কেটে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এ প্রতি ১ ডলার খরচ করার সাপেক্ষে আয় করছে ৬.৫০ ডলার করে। এমন সাফল্য পেলে কেন একটি প্রতিষ্ঠান অ্যাফিলিয়েটদের পেছনে বিনিয়োগ করবে না!

৩. মার্কেটিং ম্যাটারিয়েলঃ প্রতিষ্ঠানের ব্যানার, প্রোডাক্টের ছবি, প্রোডাক্ট প্রমোশনের জন্য প্রমোশনাল কপি- অ্যাফিলিয়েটদের মাধ্যমে ব্র্যান্ডিং বাড়াতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর এ সমস্ত বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরী। শপিফাই এর সফল ব্র্যান্ডিং-এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল তাদের তৈরী করা কনটেন্ট কিট।

৪. পারফরম্যান্স ট্র্যাকিংঃ গুগল অ্যানালিটিকস, হাবস্পট বা সিজে অ্যাফিলিয়েটের মতো টুলগুলো পণ্যের বিক্রয় এবং কনভার্সন ট্র্যাক করার জন্য বেশ কার্যকর। প্রতিষ্ঠানের টপ পারফর্মিং অ্যাফিলিয়েটদের চিহ্নিত করার জন্যও এই টুলগুলোর সহায়তা নেয়া যায়।

৫. কনটেন্ট মার্কেটিংঃ পণ্য বা সেবার প্রতি গ্রাহকের আগ্রহ ধরে রাখবে, এমন টিউটোরিয়াল, রিভিউ বা আনবক্সিং ভিডিও তৈরী করতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো অ্যাফিলিয়েটদের উৎসাহিত করতে পারে। ইনস্টাগ্রামে নামী-দামী ইনফ্লুয়েন্সারেরা এ ধরণের প্রোডাক্ট ক্যাম্পেইন থেকে ২০,০০০ ডলার পর্যন্ত আয় করে থাকেন।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এর সুবিধা কী কী?

সাশ্রয়ীঃ সেলস, ক্লিক বা লিড- প্রতিষ্ঠানের চাহিদা যা-ই হোক না কেন, অ্যাফিলিয়েট তা আদায় করে না দেয়া পর্যন্ত যেহেতু কমিশন গুনতে হচ্ছে না, সেহেতু প্রতিষ্ঠানের জন্য এ ধরণের বিনিয়োগে ঝুঁকি অত্যন্ত কম।

গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিঃ অ্যাফিলিয়েটরা তাদের নিজস্ব অডিয়েন্সের কাছে একটি পণ্য বা সেবার প্রচারণা চালান। এর সহায়তায় উক্ত অডিয়েন্সের কাছে সরাসরি পৌঁছানো যায়, এবং ই-কমার্সের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।

গ্রাহকের বিশ্বস্ততা অর্জনঃ ফোর্বসের প্রদান করা তথ্য অনুযায়ী, সমগ্র বিশ্বে ৫৩% নারী এবং ২৬% পুরুষ ক্রেতারা ই-কমার্স পণ্য ক্রয় করার ক্ষেত্রে নির্ভর করে থাকে ইনফ্লুয়েন্সারদের করা প্রোডাক্ট রিভিউ-এর উপর।

ব্যবসায়িক অগ্রগতিঃ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নেটওয়ার্ক বৃদ্ধিতে একটি প্রতিষ্ঠান যত বেশি মনোযোগী হবে, ভবিষ্যৎ ক্রেতা শ্রেণীর কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সফলতাও ততো বাড়তে থাকবে- প্রতিষ্ঠানের লাভের পরিমাণের মতোই।

কীভাবে শুরু করবো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কী এবং কীভাবে এটি কাজ করে তা বোঝা সহজ হলেও, শুরু করার জন্য প্রয়োজন একটি যথাযথ কর্মপরিকল্পনার। এক্ষেত্রে, সবার প্রথম কাজটি কী হতে পারে?

শুরুতেই, একজন মার্কেটারকে তার নিশ (niche) ঠিক করে নিতে হয়। সাধারণত ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে আগ্রহী বা অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন, এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার ক্ষেত্রে মার্কেটার তার অভিজ্ঞতা বা অভ্যস্ততা থেকেই একটি নিশ বেছে নিতে পারেন। 

বিশ্বব্যাপী এই মুহূর্তে জনপ্রিয়তার নিরিখে এগিয়ে আছে ফিটনেস, টেকনোলজি, ট্যুর-ট্র্যাভেলস এবং ফ্যাশনের মতো নিশ-গুলো। এর বাইরে ক্রেডিট কার্ড, হোম এপ্লায়েন্স, বেবি প্রোডাক্ট, গেমিং-এর মতো নিশগুলোও বেশ জনপ্রিয়। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করা যেতে পারে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে বিক্রয় হয় এমন যেকোনো পণ্য দিয়েই, তবে উক্ত পণ্যের জন্য পর্যাপ্ত অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম আছে কি না এবং মার্কেটে এই পণ্যের চাহিদা কেমন- এই বিষয়গুলো শুরুতেই বিবেচ্য।

অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম ড্যাশবোর্ড

কোন কোন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম ভালো

জনপ্রিয়তাঃ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অ্যামাজন এসোসিয়েটস জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মের বিস্তৃত প্রোডাক্ট মার্কেট, জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা এটিকে সমস্ত অ্যাফিলিয়েটদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে বছরের পর বছর। যদিও অ্যামাজনের কমিশন রেট অন্যান্য অনেক ই-কমার্সের থেকেই এখন বহুলাংশে কম, কিন্তু শুরু করার জন্য এটি সবথেকে ভালো প্ল্যাটফর্মগুলোর একটি। 

ব্র্যান্ড মার্কেটিংঃ শেয়ার আ সেল, সিজে অ্যাফিলিয়েট এবং রাকুটেন অ্যাডভার্টাইজিং এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বের নামকরা সব ব্র্যান্ডের সাথে মার্কেটারদের অ্যাফিলিয়েট করার সুযোগ দিচ্ছে। এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গ্লোবাল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এ শেয়ার আ সেল এই মুহূর্তে সর্ববৃহৎ (৫৫.৭%) শেয়ার ধরে রেখেছে। 

কমিশনঃ  ব্লুহোস্ট, শপিফাই বা হাবস্পট এর অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামগুলো দিচ্ছে বেশ ভালো পরিমাণ কমিশন। তবে একেবারে নতুনদের জন্য ক্লিকব্যাংক, ফাইভার, ক্যানভা, ইউডেমি বা ই-বে’র অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামগুলো দিয়ে শুরু করাই আদর্শ, কেননা এই প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করা সহজ, এবং কমিশনও বেশ আকর্ষনীয়।

সারা বিশ্বে প্রতিদিন ই-কমার্সে যে পরিমাণ বিক্রয় হয়, তার ১৬%-ই আসে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে। বর্তমানে ১৭ বিলিয়ন অর্থমূল্যের এই গ্লোবাল মার্কেট ২০২৭ সাল থেকে প্রতি বছর ১০% হারে প্রবৃদ্ধি পেতে শুরু করবে বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত। ২০২৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী একজন অনলাইন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার গড়ে বার্ষিক ৫৬,৯৭৫ ডলার উপার্জন করেন। 

ই-কমার্স ব্যবসার প্রসার, গ্রহণযোগ্যতা এবং বিক্রয় বৃদ্ধি করতে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর প্রভাব বেশ সুদূরপ্রসারী, এবং ঠিক এ কারণেই বিশ্বের ৮০% ব্র্যান্ডেরই এই মুহূর্তে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম চলমান আছে। সঠিক অ্যাফিলিয়েট নির্বাচন এবং মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি প্রয়োগ করার মাধ্যমে মাধ্যমে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিনিয়োগের সর্বোচ্চ রিটার্ন তুলে আনতে পারে। যে কারণে সদ্য শুরু করা ই-কমার্স স্টার্টআপ হোক বা অনলাইন মার্কেটে সিদ্ধহস্ত কোনো প্রতিষ্ঠান – এই মার্কেটিং সমানভাবে জনপ্রিয় ও কার্যকর থাকবে সামনের দিনগুলোতেও, এই ধারণা করাই যায়।

নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ

লাইক-ফলো দিয়ে সাথে থাকুন

ক্যাটাগরি

জনপ্রিয় পোস্ট