ফেসবুক অ্যাড তৈরির টার্গেটিং কৌশল নিয়ে অনলাইন সেলারদের পরীক্ষা নিরীক্ষার শেষ নেই। কীভাবে ফেসবুক অ্যাডের জন্য অডিয়েন্স টার্গেটিং করতে হয় যা কিনা ভালো ফলাফল এনে দিবে? এই জিজ্ঞাসা প্রায় সবার।
সন্ধ্যা কালেকশান একটি অনলাইন ফ্যাশান ব্র্যান্ড। মেয়েদের প্লাস সাইজ ড্রেস সেল করার জন্য তারা সুপরিচিত। প্রোডাক্ট সেল করতে তারা ফেসবুক লাইভ ফিচারটি ব্যবহার করে আসছে। কিছু ক্ষেত্রে তারা সেলিং পোস্ট ও মেসেজ অ্যাড পরিচালনা করে।
সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকের নতুন আপডেটের ফলে তাদের ফেসবুক বিজনেসে কিছুটা মন্দা ভাব দেখা দেয়। কারন, অরগানিক রিচ কমে প্রায় শুন্য। কাস্টমার তাঁর প্রোডাক্ট নিয়ে করা লাইভ না দেখতে পেলে কিভাবে কিনবে।
তাই ফেসবুক পেইড অ্যাড ছাড়া তাদের কাছে আর কোন রাস্তা নেই। এদিকে পেইড অ্যাড দিয়েও তারা তেমন সুবিধা করতে পারছে না। যাদের টার্গেট করছে তারা প্লাস সাইজ ড্রেসের প্রতি আগ্রহী হলেও এই মুহূর্তে সকলের প্লাস সাইজ ড্রেসের প্রয়োজন নেই।
যাদের প্লাস সাইজ ড্রেস প্রয়োজন তাদের কাছে ব্র্যান্ডটি যেতে পারছে না। এতে করে ফেসবুক বুস্টিং এর খরচের বিপরীতে তাদের সেল অনেক কম। কখনো আবার সেল একেবারেই নেই। কিন্তু ফেসবুক পেইড অ্যাড বিজনেসের প্রোমোশনে অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি।
এই অবস্থায় তারা ফেসবুক অ্যাড তৈরির টার্গেটিং কৌশল নিয়ে এমন একটি সমাধান খুঁজে পাবার চেষ্টা করছিলো, যেখানে ফেসবুক পেইড অ্যাডের মাধ্যমে পটেনশিয়াল কাস্টমারদের কাছে পৌছাতে পারবে।
পেইড অ্যাড বা ফেসবুক বুস্টিং থেকে তাদের চাওয়া,
যারা প্লাস সাইজ ড্রেস কেনার জন্য পটেনশিয়াল অডিয়েন্স, কেবল তারাই লাইভ সেলিং পোস্ট দেখবে ।
অ্যাডে খরচ করা টাকার বিপরীতে সর্বোচ্চ রেজাল্ট নিশ্চিত করা ।
এক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জঃ সঠিক টাগেটিং কৌশল নির্ধারণ ও প্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট তৈরি
আরও পড়ুনঃ
কীভাবে আপনার ফেসবুক অ্যাড এর পারফর্মেন্স বাড়াবেন?
সন্ধ্যা কালেকশনের মার্কেটিং বাজেটের সীমাবদ্ধতা
পেইড অ্যাড দ্বারা কাঙ্খিত সেল নিশ্চিত করা সম্ভব তবে সেক্ষেত্রে উপযুক্ত বাজেট ও সময় প্রয়োজন, কিন্তু তাদের বাজেট সীমিত। অন্যদিকে দ্রুত পেজের রিচ ও এঙ্গেজমেন্টের পরিবর্তন প্রয়োজন। চাওয়া সেলিং লাইভগুলো যেন সঠিক কাস্টমারেরা দেখতে পান।
পদক্ষেপঃ
আমরা তাদের জন্য পেইড অ্যাডে খরচ করা প্রতিটি টাকার বিপরীতে উপযুক্ত কাস্টমার রিচ ও এঙ্গেজ করার পরিকল্পনা করি।
প্রথমে খুঁজে বের করি কারা পটেনশিয়াল অডিয়েন্স হতে পারে এবং তাদের পারসোনা তৈরি করি।
দ্বিতীয়ত, বায়ার পারসোনা এনালাইসিস সাপেক্ষে কিছু প্রিমিয়াম ইন্টারেস্ট টার্গেটিং টুলস ব্যবহার করে বায়ারের সাথে রিলেভেন্ট ইন্টারেস্ট গুলোর লিস্ট তৈরি করি।
তৃতীয়ত, বায়ার পারসোনা ও রিলেভেন্ট ইন্টারেস্ট গুলোর মাথায় রেখে প্রাসঙ্গিক কনটেন্ট ডেভেলপ করি।
ফলাফল,
মিনিমাম বাজেটে অ্যাড পরিচালনা করে পটেনশিয়াল অডিয়েন্স রিচ ও এঙ্গেজ করতে সক্ষম হয়। এবং কিছু ইনস্ট্যান্ট সেলও তারা পায়।
পরীক্ষামূলক ভাবে তাদের জন্য মাত্র ২৮ ডলারের দুটি অ্যাড চালানো হয়,
পেজ লাইক ক্যাম্পেইন
টোটাল ডলার স্পেন্টঃ ৮.৭৯
ডিউরেশনঃ ৩ দিন
পেজলাইকঃ ১,৬৬৮
রিচঃ ৩২,৬১৭
প্রতি রেজাল্ট খরছঃ ০.০১
কোয়ালিটি রাঙ্কিংঃ Above average
এঙ্গেজমেন্ট রাঙ্কিংঃ Above average
কনভার্সন রাঙ্কিংঃ Above average
ভিডিও ভিউ ক্যাম্পেইন
টোটাল ডলার স্পেন্টঃ ১৯.৯৫
ডিউরেশনঃ ৭ দিন
পেজলাইকঃ ২,৪০৯
রিচঃ ১১,৫৮৮
প্রতি রেজাল্ট খরছঃ ০.০০৪
কোয়ালিটি রাঙ্কিংঃ average
এঙ্গেজমেন্ট রাঙ্কিংঃ Above average
কনভার্সন রাঙ্কিংঃ average
দেশি কমার্স যে কৌশল অবলম্বন করেছিলো
লক্ষ্য করলে দেখা যায় বেশিরভাগ বিজ্ঞাপনদাতারা শুধুমাত্র অ্যাডের রিচ, বাজেট ও রেজাল্ট এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
অনেকেই যে বিষয়টি এড়িয়ে যান সেটি হচ্ছে, কোয়ালিটি রাঙ্কিং, এঙ্গেজমেন্ট রাঙ্কিং এবং কনভার্শন রাঙ্কিং
একটি অ্যাড কতটুকু ভালো পারফরম্যান্স করেছে, সেটি টার্গেট অডিয়েন্সদের জন্য কতটুকু রেলেভেন্ট সেটি চিহ্নিত করার জন্যই মূলত ফেসবুকের এই তিনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ রাঙ্কিং প্যারামিটার দেয়া হয়েছে।
যেটিকে অ্যাড রিলেভেন্স ডায়াগনস্টিক বলা হয়। ফেইসবুক পাঁচ ভাগে একটি অ্যাড রিলেভেন্স রাঙ্কিং আইডেন্টিফাই করে।
একটি অ্যাড কোয়ালিটি রাঙ্কিংয়ে যদি এভারেজ অথবা এবোভ এভারেজ স্কোর করে তবেই সেটির জন্য সবচেয়ে কম খরচ হয় এবং ম্যাক্সিমাম রেজাল্ট পাওয়া যায়।
এটি নিশ্চিত করে যে, আপনার অ্যাড ক্রিয়েটিভটি টার্গেট অডিয়েন্স জন্য প্রাসঙ্গিক। কারন, ফেসবুক কেবল মাত্র অডিয়েন্সদের জন্য প্রাসঙ্গিক কনটেন্ট গুলো দেখায়।
সন্ধ্যা কালেকশনের অ্যাডের এই রাঙ্কিং প্যারামিটার ছিলো,
তাই এই অ্যাড মিনিমাম খরচের ম্যাক্সিমাম রেজাল্ট আনতে সক্ষম হয়েছে।
ইন্টারেস্ট টার্গেটিং এর পেছনের রহস্য
সন্ধ্যা কালেকশন যখন তাদের ফেসবুক অ্যাড সংক্রান্ত এর সমস্যা নিয়ে আমাদের সাথে কথা বলে তখন জানতে চাওয়া হয়েছিলো, তারা কিভাবে অ্যাডের ইন্টারেস্ট টার্গেটিং নির্ধারণ করে।
তারা বলেছিল এজ, লোকেশন ও কিছু কমন ইন্টারেস্ট যেমন, প্লাস সাইজ ফ্যাশন, উইমেন ফ্যাশন ব্র্যান্ড, উইমেন ক্লদিং ষ্টোর ইত্যাদি।
এবারে তাদের এ কথার সূত্র ধরে আমারা অডিয়েন্স রিসার্চ এবং প্রোডাক্ট এনালাইসিস করি।
দেখা যায় তাদের অ্যাডগুলো ভালো পারফরম্যান্স না করার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে, তারা যে টার্গেট অডিয়েন্স গ্রুপ সিলেক্ট করেছে এবং তাদের জন্য যে ইন্টারেস্ট প্যারামিটারগুলো আদর্শ তাঁর সাথে অ্যাড কন্টেন্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
আমরা এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করি। আলাদা আলাদা অডিয়েন্স গ্রুপের জন্য টার্গেট ইন্টারেস্ট খুঁজে বের করি ও তাদের ফেসবুক অ্যাড তৈরির টার্গেটিং কৌশল নির্ধারণ করি।
যেহেতু তাদের ড্রেসগুলো প্লাস সাইজ এবং এই সাইজের ড্রেসের একটি পটেনশিয়াল কাস্টমার গ্রুপ যাদের মাতৃকালীন সময় ওজন বৃদ্ধি পায়।
আমরা এই গ্রুপকে টার্গেট করি এবং তাদের জন্য রিলেভেন্ট কনটেন্ট তৈরি করি।
যেখানে বলা হয় মাতৃকালীন সময় একজন মায়ের কি ধরনের পোশাক পরিধান করা প্রয়োজন এবং সন্ধ্যা কালেকশনের পোশাকগুলো কিভাবে তাদের জন্য উপযুক্ত।
এ টার্গেট অডিয়েন্স গ্রুপের জন্য আমরা যে ইন্টারেস্ট টার্গেটিং গুলোকে লক্ষ্য করেছিলাম সেগুলো এমন,
- যারা বেবি ফুড আইটেমের প্রতি আগ্রহ রাখে
- যারা বেবি টয় শপের প্রতি আগ্রহী
- যারা প্রেগনেন্সি নিয়ে আগ্রহী
- যারা হেলদি ফুড আইটেমের প্রতি আগ্রহ রাখে
এমন আরো কিছু টার্গেট ইন্টারেস্ট নিয়ে আমরা অ্যাড সেট তৈরি করি।
এবার তাদের জন্য তৈরি করা কন্টেন্ট দিয়ে অ্যাড পাবলিশ করে দেয়া হয়।
প্রেগনেন্সি পিরিয়ডে মেয়েরা সাধারণত একটু ঢিলেঢালা ড্রেস খোঁজে এবং এ সময় তারা হেলদি ফুড, বেবি ফুড আইটেমের প্রতি আগ্রহবোধ করে।
আর অ্যাড কনটেন্টটি তৈরি করা হয়েছিল প্রেগনেন্সি পিরিয়ডের সময়ে মায়েদের টার্গেট করে। ফলে এটি সহজে তাদের এটেনশন গ্রাব করে। কারন অ্যাডের কনটেন্ট তাদের জন্য প্রাসঙ্গিক বিধায় তারা অ্যাডের সাথে নিজেকে রিলেট করতে পেরেছে ফলে সেখানে এঙ্গেজ হয়েছে।
টার্গেট অডিয়েন্স গ্রুপ+ তাদের জন্য প্রাসঙ্গিক ইন্টারেস্ট টার্গেটিং + অডিয়েন্স গ্রুপ ও ইন্টারেস্ট টার্গেটিং এর জন্য প্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট = টপ অ্যাড রেলেভেন্স স্কোর
অ্যাডের তৈরির প্রতিটি ধাপে পর্যায়ক্রমিক প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখার ফলে এটি অ্যাড রিলেভেন্স ডায়াগনস্টিক স্কোরিং এ সফলভাবে উত্তীর্ণ হয় যার ফলাফল আমরা শুরুতেই বলেছি।
এটি সন্ধ্যা কালেকশনের পূর্ববর্তী যেকোনো পেইড অ্যাডের চেয়ে বেশি পারফর্ম করেছে।
(দৃষ্টি আকর্ষণঃ এই কেস স্টাডি শুধুমাত্র সন্ধ্যা কালেকশন তথা একটি ফ্যাশান ব্র্যান্ডের জন্য ফেসবুক অ্যাডের অডিয়েন্স গ্রুপ ও ইন্টারেস্ট টার্গেটিং কৌশল নির্ধারণ বিষয়ে লেখা যা তাদের কাঙ্খিত সেল নিশ্চিত করার সাথে সম্পর্ক যুক্ত নয়। একটি বিজনেসের কাঙ্খিত সেল নিশ্চিত হবে কি না সেটি নির্ভর করে বিজনেসের কাস্টমার সার্ভিস, প্রোডাক্ট কোয়ালিটি, অ্যাড বাজেট, কৌশল ও সময়কাল ও আরও অনেক বিষয়ের উপর।)
সবার আগে মন্তব্য করুন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন
মন্তব্য করতে হলে আপনাকে লগ ইন করতে হবে।