প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং ব্যয়বহুল। বর্তমান সময়ে প্রতিটি ক্ষুদ্র এবং মাঝারি উদ্যোক্তাদের হাতে স্মার্টফোন রয়েছে। ফলে আপনি চাইলেই খুব সহজে আপনার বিজনেসের জন্য প্রফেশনাল মানের ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করতে পারবেন।
ফেসবুক বা ইউটিউব, ভিডিও মার্কেটিং প্রতিটি জায়গায় সমান জনপ্রিয়। The State of Video Marketing in 2019 HubSpot দ্বারা পরিচালিত একটি জরিপে বলা হয়েছে, ৮৭% কাস্টমার বলছে তারা একটি ব্র্যান্ডের কাছ থেকে ভিডিও কনটেন্ট দেখতে চায়।
আজ ৮টি ইউজার ফ্রেন্ডলি ভিডিও এডিটিং মোবাইল অ্যাপস নিয়ে কথা বলবো এবং জানাবো তাদের ফ্রি এবং পেইড ভার্সন গুলোর ফিচার সম্পর্কে।
আপনি যদি বিজনেস এর ভিডিও কনটেন্ট নিয়ে পরিকল্পনা করেন আর ভিডিও কনটেন্ট যদি মোবাইলেই এডিট করতে চান তবে এই ৮ টি মোবাইল এ্যাপ বা সফটওয়্যার এর লিস্ট আপনার জন্য দারুন উপকারী হতে চলেছে।
মোবাইলে ভিডিও এডিটিং করার ৮ টি সেরা সফটওয়্যারগুলো হলো-
- GoPro
- Adobe Premiere Clip
- InShot
- kinemaster
- wevideo
- PicPlayPost
- Magisto
- Filmorago
নিচে মোবাইলে ভিডিও এডিট করার প্রতিটি সফটওয়্যার (মোবাইল এ্যাপ) সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
১. GoPro
যেকোনো সময় যেকোনো অবস্থায় ভিডিও এডিট করার জন্য দারুন একটি অ্যাপ GoPro
খুব সাধারণভাবে ধারণকৃত একটি ভিডিও খুব দ্রুত এডিট করে পোস্ট করা সম্ভব হয় এ ভিডিও এডিটর এর মাধ্যমে। একটি ভিডিও ফুটেজের সব থেকে ভালো মুহূর্তটি খুঁজে বের করে সেটি অটোমেটিক ভাবে এডিট ও ট্রানজিশন অ্যাড করার মাধ্যমে এটিকে প্রফেশনাল আকার দেয়। এটির রয়েছে ম্যানুয়াল এডিট ফাংশন সুবিধা।
Feature
- ছবি যোগ করতে পারবেন।
- টাইম ল্যাপস সিকোয়েন্স করা যায়।
- শতাধিক ফ্রি গান অ্যাক্সেস করা যায়।
- অটোমেটিক ভাবে ভিডিও থেকে গান সিঙ্ক হয়ে যায়।
- আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দ্বারা এডিটিং অ্যাসিস্ট্যান্স গাইড করা হয়।
- বিভিন্ন ধরনের টেক্সট ফ্রন্ট এবং ইমোজি রয়েছে।
এটি iOS and Android এ এভেলেবেল।
এটির ফ্রি বেসিক প্ল্যান রয়েছে। ব্যবহারকারী চাইলে এটাকে আপগ্রেড করার মাধ্যমে এর সুবিশাল মিউজিক লাইব্রেরি এবং প্রিমিয়াম সাপোর্ট পেতে পারেন। সেজন্য আপনাকে প্রতি মাস ৪.৯৯ ডলার খরচ করা লাগবে।
আপনি যদি চান অটোমেটিকভাবে খুব দ্রুত একটি ভিডিও এডিটিং টুলস তবে এটি আপনার জন্য।
২. Adobe Premiere Clip
এই ভিডিও এডিটিং অ্যাপটি আপনি দুটি মুডে পাবেন। এর সম্পূর্ণ অটোমেটিক ভিডিও ক্লিপকে ট্রিম করার পরে সেটিকে অটোমেটিকলি ট্রানসফর্ম করে স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট এর মাধ্যমে পোস্ট করার উপযোগী করে তোলে।
আর ফুললি কাস্টমাইজড মুডে আপনি ইচ্ছে মত ডিজাইন ও মিউজিক ব্যবহার করতে পারবেন।
সাউন্ড ট্র্যাক তৈরি করার জন্য Adobe Premiere Clip এ রয়েছে একটি বিল্ট-ইন মিউজিক লাইব্রেরি।
Feature
- ছবি এবং ক্লিপ drag-and-drop করতে পারবেন।
- এক্সপোজার লাইট এবং সাউন্ড লেভেল অ্যাডজাস্ট করতে পারবেন।
- অটো মিউজিক মিক্স সুবিধা পাবেন।
- টাইটেল ট্রানজিশন স্লো মোশন ইফেক্ট যোগ করতে পারবেন।
- এটি ক্লাউড সাপোর্টেড।
- যেকোনো অ্যাডোব প্রোডাক্টের সাথে সিঙ্ক করা যায়।
এটিও আপনি android এবং ios ভার্সনে এভেলেবেল পাবেন।
যারা খুবই সহজ মোবাইল ভিডিও এডিটিং অ্যাপ খুঁজছেন তাদের জন্য এটি উপযুক্ত।
৩. InShot
আপনি যদি ইনস্টাগ্রাম ভিডিও এডিটিং এর জন্য একটি সিম্পল ভিডিও এডিটর খুঁজে থাকেন তবে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ টুলস।
এটি দ্বারা খুব সহজে ভিডিও ক্লিপ ট্রিম করা যায়।, ভিডিও ফুটেজ এর স্পিড চেঞ্জ করা যায় এবং ফিল্টার যোগ করা যায়।
এটি দিয়ে আপনি আপনার ফুটেজটি রোটেট করতে পারবেন যেটি সব এডিটিং অ্যাপ দেয় না। গুগল প্লে স্টোরে এই অ্যাপটি হাই রেটেড এবং পপুলার চয়েসের তালিকায় রয়েছে।
Features
- মিউজিক ইফেক্ট এবং ভয়েসওভার দিতে পারবেন।
- টেক্সট এবং ইমোজি ব্যবহার করতে পারবেন।
- ভিডিও ইফেক্ট যোগ করা যায়।
- খুব সহজে ভিডিও শেয়ার করা যায়।
- ব্যাকগ্রাউন্ড Blur করা যায়।
এটি আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন অ্যাভেলেবল।
এটির বেসিক ফ্রি প্ল্যান রয়েছে। অ্যাপটি চাইলে কিনতে পারবেন ।
ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং বা পার্সোনাল ইনস্টাগ্রাম পোস্টকারীদের জন্য এটি খুবই উপযোগী।
৪. kinemaster
আপনি যদি প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং অ্যাপ চান তবে কাইনমাস্টার হতে পারে সবথেকে শক্তিশালী মোবাইলে ভিডিও এডিটিং টুলস। এটি আপনাকে ফ্রেম বাই ফ্রেম ভিডিও এডিট করার সুবিধা দিবে।
কালার এডজাস্ট, ব্রাইটনেস এবং ভিডিও স্পিড প্রতিটি ফিচার আলাদা আলাদা ভাবে টিউন করার সুযোগ রয়েছে।
ভিডিওতে এই এডিটর দ্বারা আপনি অ্যানিমেশন এবং হ্যান্ড রাইটিং সহ সর্বোচ্চ ১০ টি লেয়ার যোগ করতে পারবেন
ভিডিও এডিটিং এর জন্য এই অ্যাপ আপনাকে সর্বোচ্চ সুবিধা প্রদান করে এবং এর ইউজার ইন্টারফেস সহজবোধ্য।
Features
- অন্যান্য ভিডিও এডিটিং অ্যাপসের থেকে এটি ফ্লেক্সিবল।
- স্পেশাল ইফেক্ট এবং মিউজিক এখানে পাবেন।
- টেক্সট গ্রাফিক ইমেজ রেকর্ডেড অডিও এবং হ্যান্ডরাইটিং এর লেয়ার যোগ করতে পারবেন।
- এটি গ্রীন স্ক্রীন সাপোর্ট করে।
- এখানে ইনস্ট্যান্ট প্রিভিউ অপশন পাবেন।
এটি android এবং ios ভার্সনে এভেলেবেল।
এর বেসিক ফ্রি প্ল্যান রয়েছে, তবে আপনি চাইলে এটিকে প্রো এডিশন এ আপগ্রেড করতে পারবেন যার জন্য আপনাকে প্রতি মাসে ৪.৯৯ ডলার খরচ করা লাগবে।
এডভান্স লেভেলের ভিডিও ক্রিয়েটর এর জন্য এটি আদর্শ।
৫. wevideo
যেসব ভিডিও এডিটর এডিটিং এর জন্য অনেক বেশি ফাংশন চান তাদের জন্য এই ভিডিও অফার করছে বেসিক এডিটিং ফিচারের সাথে আরও অনেক বেশি ফিচার সুবিধা।
ক্লিপ ট্রিম করা, ফিল্টার যোগ করা, মিউজিক যোগ করার টেক্সট ট্রানজিশন এবং ভিডিও ইফেক্ট সবগুলো সুবিধা এখানে পাবেন।
এই অ্যাপের প্রিমিয়াম প্ল্যানে আপনি অ্যাডভান্স ফিচারের সাথে সাথে পাবেন একটি বিশাল কমার্শিয়াল লাইসেন্স যুক্ত মিউজিক লাইব্রেরি এবং ভিডিওগুলো 4k রেজুলেশনের।
Features
- সহজ এবং বোধগম্য ইউজার ইন্টারফেস।
- ফ্রী প্লানে পাবেন ১ জিবি পর্যন্ত ক্লাউড স্টোরেজ।
- রয়েছে এডিটিং মুড পছন্দ করার সুবিধা।
এটি ios এবং android ভার্সনে এভেলেবেল পাবেন।
এর বেসিক ফ্রি প্ল্যান রয়েছে। ব্যবহারকারী চাইলে এটি আপডেট করে নিতে পারবেন প্রিমিয়াম ভার্সনে যার জন্য খরচ হবে প্রতি মাসে ৪.৯৯ ডলার
এক্সপেরিয়েন্স ইউজার যারা তাদের ভিডিওকে নেক্সট লেভেল নিয়ে যেতে চান তাদের জন্য এই অ্যাপসটি বেস্ট।
৬. PicPlayPost
ছবি থেকে ভিডিও অ্যানিমেটেড স্লাইড শো এবং কোলাজ তৈরি করার জন্য একটি অসাধারণ।সর্বোচ্চ ৩৬৫ ছবি ভিডিও গিফ , ভয়েস ওভার, সবকিছুকে একত্রিত করা যায়।
আপনি এখানে কাস্টম ওয়াটারমার্ক এর জায়গায় আপনার ব্র্যান্ডের লোগো ব্যবহার করতে পারবেন। পারবেন ব্যাকগ্রাউন্ড চেঞ্জ করতে।
Features
- Mp4 অডিও সুবিধা রয়েছে
- কাস্টমাইজেবল ভিডিও আউটপুট সুবিধা পাবেন
- ভিডিও স্পিড এডজাস্ট করা যায়
- স্পিল্ট স্ক্রিন ট্রানজেকশন সুবিধা রয়েছে
android এবং ios ভার্সনে এই অ্যাপটি এভেইলেবল।
এটির বেসিক ফ্রি প্ল্যান রয়েছে চাইলে আপনি এই অ্যাপটি কিনতে পারেন।
যারা ছবিগুলোকে ভিডিও ফরমেটে শেয়ার করতে চান তাদের জন্য এই অ্যাপটি বেস্ট।
৭. Magisto
আপনি যদি খুব সহজ একটি ভিডিও এডিটিং অ্যাপ খুঁজে থাকেন তবে এটির আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তিনটি সিম্পল স্টেপের মাধ্যমে মিনিটের মধ্যে একটি দারুণ কন্টেন্ট তৈরি করার সুবিধা আপনাকে দিবে।
আপনি শুধু এডিটিং স্টাইল, ফুটেজ এবং মিউজিক পছন্দ করবেন। এই টুলস অটোমেটিক ভাবে আপনার ভিডিও তৈরি করে দিবে। এই অ্যাপ থিম এর সাথে মিল রেখে মিউজিক সাজেস্ট করে। চাইলে আপনি আপনার মিউজিক লাইব্রেরি থেকেও মিউজিক ব্যবহার করতে পারেন।
এই অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে পপুলার চয়েস রয়েছে এবং এই অ্যাপটি ইউজার সংখ্যা ৯০ মিলিয়ন।
Features
- ফেসিয়াল রিকগনিশন ফিল্টার ইফেক্ট এবং অটো ক্রপিং সুবিধা পাবেন।
- প্রফেশনাল ভিডিও তৈরি করতে পারবেন।
- এর অটো এডিটিং এবিলিটি অসাধারণ।
- এখান থেকে বিভিন্ন মার্কেটিং চ্যানেলে আপনি ভিডিওটি ডিস্ট্রিবিউট করতে পারবেন।
- আই স্টক ইন্টিগ্রেশন রয়েছে যার দ্বারা আপনি হাই কোয়ালিটির ডেস্কটপে ছবি এবং ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করতে পারবেন।
এটির ios এবং android ভার্সন রয়েছে।
এ রয়েছে বেসিক ফ্রী প্লান। আপনি চাইলে এর প্রিমিয়াম ভার্শন ব্যবহার করতে পারবেন সেজন্য আপনাকে প্রতিমাসে ৪.৫৫ ডলার খরচ করা লাগবে।
খুবই দ্রুত প্রফেশনাল মানের ভিডিও তৈরি করার জন্য এই অ্যাপটি বেস্ট।
৮. Filmorago
আপনি যদি ইনস্টাগ্রাম স্টোরির জন্য ভিডিও এডিট করতে চান তবে এই অ্যাপটি আপনার জন্য অসাধারণ।
এর মিউজিক লাইব্রেরি থেকে আপনি ফ্রি মিউজিক যোগ করতে পারবেন। এই অ্যাপ আপনাকে থিম, টেক্স্ টাইটেল এবং অন্যান্য এলিমেন্ট একসাথে যুক্ত করার সুবিধা দিবে।
Features
- খুব সহজেই ভিডিও ট্রিম এবং স্পিড অ্যাডজাস্ট করতে পারবেন।
- স্ক্রিনরেশিও এর সাথে ভিডিওটি অ্যাডজাস্ট এবং রোটেট করতে পারবেন।
- এর ভিডিও স্পিড অ্যাডজাস্ট করতে পারবেন, স্লো মোশন, টাইম ল্যাপস সুবিধা পাবেন।
- ভয়েস অভার এবং audio-track যোগ করতে পারবেন।
- এটির ওয়াটারমার্ক লোগো নেই।
এটিও আপনি android এবং ios এর সাথে এভেলেবেল পাবেন।
এই অ্যাপটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়।
টেক্সট থিম এবং অন্যান্য এলিমেন্ট যুক্ত করার মাধ্যমে একটি সম্পূর্ণ কাস্টমাইজ ভিডিও তৈরি করার জন্য একটি বেস্ট।
পরিশেষে
ভিডিও কনটেন্ট অডিয়েন্স এঙ্গেজ করার জন্য সবসময় সব থেকে শক্তিশালী। কিন্তু একটি প্রফেশনাল মানের ভিডিও এডিট করতে গেলে আপনাকে অনেক টাকা খরচ করতে হবে।
স্মার্টফোনের এই যুগে আপনি চাইলেই একেবারে বিনামূল্যে কিংবা খুবই স্বল্প খরচে একটি প্রফেশনাল মানের ভিডিও এডিটিং করতে পারেন।
এটি একটি ক্ষুদ্র এবং মাঝারী উদ্যোক্তার ভিডিও মার্কেটিং খরচ অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
তাই আর দেরি কেন আপনার ফোনটি হাতে নিন, লিস্ট থেকে পছন্দমতো অ্যাপ ডাউনলোড করুন। আপনার ভিডিও রেকর্ড করুন, এডিট করুন, এবং শেয়ার করুন সোশ্যাল মিডিয়াতে এই অ্যাপ দিয়ে তৈরি আপনার বিজনেস এর বিজ্ঞাপন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন
আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন