আপনি কি জানেন? আমাদের কগনিটিভ বায়াস বা চিন্তার পদ্ধতিগত ত্রুটির কারনে একজন মানুষকে দলগতভাবে যতটা আকর্ষণীয় দেখায়, এককভাবে তাকে ততটা আকর্ষণীয় মনে হয়না।
আমরা জানি মানুষ লজিক্যালি চিন্তা করে এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। কিন্তু মানুষের চিন্তার সীমাবদ্ধতা রয়েছে, মানব মস্তিষ্ক সবসময়ই জটিল চিন্তাভাবনাকে সরলীকরণ করতে চায়।
আর তাই যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় অল্টারনেটিভ আরো সহজ কোন পদ্ধতি আমাদের সামনে আসে, তখন মস্তিস্কের সেটি গ্রহণ করার প্রবণতা বেশি থাকে।
একটি বিজনেসে যা কিছু ঘটে চলেছে তার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে মানুষ, আর আপনি যখন মানুষের এই কগনিটিভ বায়াসের ত্রুটিগুলো নির্দিষ্ট করতে পারবেন। তখন সে অনুযায়ী মার্কেটিং প্ল্যান অপটিমাইজ করে আপনার বিজনেসকে প্রফিটেবল করে তুলতে সক্ষম হবেন।
কিভাবে সেটি করবেন? সেই প্রসঙ্গেই আজকের আলোচনা।
কগনিটিভ বায়াস কি ?
কগনিটিভ বায়াস হচ্ছে মানুষের সিস্টেমেটিক থিঙ্কিং বা পদ্ধতিগত চিন্তাভাবনার সীমাবদ্ধতা, যেখানে একজন মানুষ লজিকের বাইরে তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা এবং পছন্দকে গুরুত্ব দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
কগনিটিভ বায়াস কেন মার্কেটিং দুনিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ?
মার্কেটিং মহারথীরা সবসময়ই মানুষের কগনিটিভ বায়াসগুলোকে ট্রিগার করে সাকসেসফুল ক্যাম্পেইন রান করেছেন যা তাদেরকে এনে দিয়েছে কাঙ্খিত অর্জন।
যেহেতু মার্কেটিং মানুষের সাথে সম্পৃক্ত আর আপনি যখন মানুষের চিন্তার সীমাবদ্ধতার জায়গাগুলো খুঁজে বের করতে পারবেন, তখন মার্কেটিং এর এমন সব অভিনব উপায় বের করতে সক্ষম হবেন যা আপনার মার্কেটিং ক্যাম্পেইনকে সেলস মেশিনে পরিবর্তিত করে দিতে পারে।
১) এভেইলেবিলিটি হিউরিস্টিক
যখন রিসেন্ট কোন একটি ঘটনা আমাদের সামনে আসে, তখন সেটির সাথে আমরা নিজেকে খুব দ্রুত রিলেট করে ফেলি। যা আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রসেসকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাবিত করে।
যেমন ধরুন, আপনি টেলিভিশনে একটি লাকি নাম্বার (মনে করুন সেটি 27) লটারি জেতা কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেখলেন। সেখানে দেখানো হলো লটারি জেতার পর কিভাবে সে লাক্সারি লাইফ লিভ করছে।
এবং এটি দেখার সাথে সাথে আপনার মনেও এই ধারণার জন্ম হবে যে, যদি আপনি লটারি কেনেন তবে আপনার জেতার সম্ভাবনা ও অনেক বেশি।
যে বিষয়ে আপনি একেবারেই আগ্রহী ছিলেন না কিন্তু রিসেন্ট একটি নিউজ আপনার সে আগ্রহকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রেডি করে ফেলেছে।
ঠিক এই মুহুর্তে আপনি পুরোপুরি ভাবে ভুলে যাবেন অতীতে শিখে আসা সম্ভাব্যতার সূত্র এবং লাকি নম্বর (27) যুক্ত লটারি কেনার জন্য আপনি সব রকমের লজিক তুচ্ছ করে সেটি কিনবেন।
একেই এভেইলেবিলিটি হিউরিস্টিক বায়াস বলে।
কিভাবে ই- কমার্স বিজনেস এটি এপ্লাই করবেন?
ইভেন্ট ভিক্তিক সেলস স্ট্র্যাটিজি বা বিভিন্ন দিবসের সময় সেই দিবসের সাথে রেলেভান্ট প্রোডাক্টগুলোকে রিকল করিয়ে মার্কেটিং স্ট্র্যাটিজি তৈরি করা যেতে পারে। ।
ধরুন, আপনি শিশুখাদ্য বিক্রয় করেন, এক্ষেত্রে বিশ্ব শিশু দিবসে যখন শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন রকম প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। যেমন, তাদের পরিচর্চা, খাদ্যাভাস নিয়ে আলোচনা ইত্যাদি ঠিক সে সময় আপনি আপনার প্রোডাক্ট ব্যবহারে কোন একজন শিশুর বেড়ে ওঠা বিষয়ে তার মায়ের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন।
২) ব্যাক ফায়ার ইফেক্ট বা কনফার্মেশন বায়াস
একটি পক্ষপাতমূলক তথ্য কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তার বিপরীতে তথ্য অনুসন্ধান করা, যা সেই পক্ষপাতমূলক তথ্যকে প্রতিষ্ঠা করবে।
আমরা জানি জার্মানির গাড়ি নিরাপত্তার জন্য সেরা, সুইস ঘড়ি এর ক্রাফটসমানশিপের জন্য বিখ্যাত, মানুষ বিশ্বাস করে বিশ্বের সেরা ওয়াইন তৈরি হয় ফ্রান্সে। যেমন বাংলাদেশের মানুষের একটি বিশ্বাস কাশ্মীরের আপেল সবচেয়ে সেরা।
এগুলো হচ্ছে মানুষের পূর্বনির্ধারিত বিশ্বাস যা সে প্রতিষ্ঠিত বলে স্বীকার করে নিয়েছে। আপনি যখনই এর বিপরীতে তথ্য দিয়ে বিশ্বাস করাতে যাবেন সে বিশ্বাস করবে না।
আর এই কারণে খেয়াল করবেন, আমরা যখন গুগলের সার্চ করি তখন আমাদের বিশ্বাসের পক্ষের তথ্যটিকে পজিটিভ ধরে নিয়ে সার্চ করি।
যেমন, কেউ যদি বাইক কিনতে চায় এবং আর যদি সে হোন্ডা ব্র্যান্ডের ফ্যান হয়ে থাকে তবে সে সার্চ করবে,
কেন হোন্ডা ব্র্যান্ডের বাইক বাজাজ বাইকের থেকে ভালো।
অথচ সেটি না করে সে এভাবেও সার্চ করতে পারত যে, কেন বাজাজ ব্র্যান্ডের বাইক হোন্ডা ব্র্যান্ডের বাইকের থেকে ভালো।
আর এটি হচ্ছে কনফার্মেশন বায়োসের আদর্শ ধারণ।
কিভাবে এটিকে ই-কমার্স মার্কেটিং-এ ব্যবহার করবেন?
আপনাকে সেরাদের সাথে আপনার প্রোডাক্ট সার্ভিসের সমন্বয় ঘটাতে হবে।
ধরুন, আমরা যখন বিশ্বাস করি জার্মানির কার নিরাপত্তার জন্য সেরা, তখন আপনি যদি জার্মানির তৈরি অ্যাকেসরিজগুলো সেল করেন, তবে জার্মানদের কারিগরি শ্রেষ্ঠত্বকে কাজে লাগিয়ে আপনার প্রোডাক্টের মার্কেটিং করবেন।
৩) বার্নাম ইফেক্ট
এটি একটি এমন মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা যার ফলে কোন মানুষের সম্পর্কে দেয়া প্রেডিকশন বা সম্ভাব্য তথ্যগুলোকে সেই মানুষ সত্য মনে করে বা সর্বাধিক রেটিং দিয়ে থাকে।
এই কগনেটিভ বায়াসটি সঠিকভাবে বোঝার জন্য সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে হরোস্কোপ সম্পর্কিত ব্যাখ্যা বোঝা।
প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় আমরা নিজের সম্পর্কে হরোস্কপ সম্পর্কিত আপডেট জানতে পারি। হরোস্কপে আমাদের জন্মসালের উপর ভিত্তি করে সবাইকে ভিন্ন ভিন্ন সেগমেন্টে ভাগ করা হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সেগমেন্টের জন্যে এমন কিছু তথ্য উপস্থাপন করা হয় যেগুলোকে ওই জন্মসালের সাথে সম্পর্কিত মানুষ সত্য বলেই মনে করে।
সে মনে করে তার সাথে এই তথ্যের মিল আছে। আর এটি বার্নাম ইফেক্ট।
কিভাবে বার্নাম ইফেক্ট আপনার ই-কমার্স বিজনেস এর ব্যবহার করবেন?
মার্কেটিং কন্টেন্ট তৈরি করার সময় কমিউনিকেশনগুলো এমনভাবে ডিজাইন করবেন যেন আপনার টার্গেট অডিয়েন্স মনে করে আপনি প্রত্যেকের সাথে ব্যক্তিগতভাবে বা one-to-one কথা বলছেন।
এবং আপনার প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসটি তার প্রব্লেম সলভ করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা। এতে করে সে খুব সহজেই আপনার প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসটি কেনার সিদ্ধান্ত নিবে।
৪) বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্ট
বিজনেসের জন্য এটি একটি মারাত্মক রকম কার্যকরী কগনিটিভ বায়াস। কারণ, মানব মস্তিষ্ক মনে করে যে তাকে একবার সাহায্য করেছে, সে তাকে বারবার সাহায্য করবে এমন সম্ভাবনাই বেশি। তাই সাহায্যকারী মানুষের প্রতি লয়াল থাকার পক্ষে সে একটি যুক্তি তৈরি করে।
বিজনেসে এই বায়াসের ব্যবহার
আপনি যখন কারো কাছে বেচাকেনা করছেন তখন তাকে অতি অল্প মূল্যের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের জন্য বেশি পরিমাণে সুবিধা প্রদান করবেন বা ছাড় দিবেন। এতে করে উক্ত ব্যক্তি ধারণা হবে পরবর্তী সময়েও কেনাকাটায় আপনি তাকে একই ভাবে ছাড় দিবেন।
পরেরবার যখন সেই কাস্টমার আপনার থেকে কেনাকাটা করবে তখন তাকে উচ্চমূল্যের প্রোডাক্ট কেনাকাটায় উৎসাহিত করবেন এবং এক্ষেত্রে বিজনেসের জন্য লং টার্ম প্রফিটেবিলিটি চিন্তা করে ডিসকাউন্ট প্রদান করবেন।
যেই মুহুর্তে কাস্টমারের মস্তিষ্কে আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক চিন্তার জন্ম হয়ে যাবে, তখন সে আপনার লায়াল কাস্টমার হবে।পরবর্তী কেনাকাটায় আপনাকে বেছে নিবে।
কিন্তু আপনি প্রতিবার কেনাকাটায় তাকে কি একই রকম সুবিধা প্রদান করা বা মূল্য ছাড় দিতে সক্ষম? সেটি কখনোই নয়। পরবর্তী সময়ে তাকে মূল্য ছাড় না দিলেও সে আপনার থেকে কিনবে।
৫) ডেকাই ইফেক্ট
আমরা প্রতিনিয়ত এই বায়াসের ফাঁদে পড়ি। মানুষের সামনে যখন দুটি অপশন থাকে এবং তার মধ্যে থেকে একটিকে বেছে নিতে হয় এবং ঠিক সেসময় যখন তৃতীয় আকর্ষণীয় অপশনটি উপস্থিত করা হয়, তখন সে পরের দুটি অপশনের মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
কিভাবে মার্কেটিং এ এই পদ্ধতি ব্যবহার করবেন?
আপনাকে একই ধরনের প্রোডাক্ট একই সারিতে দাঁড় করাতে হবে এবং সেখানে তাদের তিনটি ভিন্ন মূল্য নির্ধারণ করবেন। আপনি যে প্রোডাক্টটি বেশি পরিমাণে বিক্রি করতে চান সেই প্রোডাক্টের আগের প্রোডাক্টটির মূল্য এমনভাবে নির্ধারণ করবেন, যেন কাস্টমার তৃতীয় অপশনটিকেই বেছে নেয়াকে লাভজনক মনে করে।
উপরের চিত্রে খেয়াল করে দেখুন, তিনটি বাকেটের প্রতিটি মূল্য ভিন্ন। কিন্তু মূল্য এবং পরিমাণের অনুপাতে মধ্যের এবং শেষের অপশন দুটি বেশি লাভজনক। এবং কাস্টমার শেষের দুটি অপশন থেকে যে কোন একটিকে নিতে চাইবে। অর্থাৎ আরো ৫০ সেন্ট বেশি দিয়ে সবচেয়ে বড় বাটিটি সে নিতে চাইবে।
এখানে মধ্যের বাকেটের জন্য যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি ডেকোই বা ফাঁদ।
৬) ফ্রেম ইফেক্ট
এই বায়াস মস্তিষ্কের সেই ভুলগুলোকে অ্যামপ্লিফাই করে, যেখানে কোন একটি তথ্যের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উপস্থাপনার কারণে তার সিদ্ধান্ত নেবার প্রসেস প্রভাবিত হয়।
উপরের চিত্রটি খেয়াল করে দেখুন একটিতে বলা হয়েছে ২০% ফ্যাট রয়েছে এবং অন্যটিতে বলা হয়েছে ৮০% ফ্যাট ফ্রি, স্বাস্থ্য সচেতন হিসেবে আপনি অবশ্যই অধিক পরিমাণে ফ্যাট ফ্রি প্রোডাক্টটি বেছে নিবেন। এখানে শুধুমাত্র তথ্যের ভিন্ন উপস্থাপনা ছাড়া আর কিছুই আলাদা নেই।
কারণ দুটি জিনিসে একই পরিমাণে ফ্যাট ক্যারি করছে।
ই-কমার্সে এর ব্যবহার
আপনি যখনই একটি প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রাইসিং করছেন এবং সেটার জন্য প্রমোশনাল অফার অথবা ডিসিশন মেকিং এ সাহায্য করে এমন কোন তথ্য শেয়ার করতে চান তবে ভাবুন,
কিভাবে সেটি উপস্থাপন করবেন। যেমনটি নিচের চিত্রে দেখতে পাচ্ছেন।
৭) হাইপারবোলিক ডিসকাউন্টিং
মানুষের মধ্যে দ্রুততম সময়ে কোন কিছু পাবার ইচ্ছা প্রবল, আর তাই নিকটতম সময়ের মধ্যে সে যে জিনিসটি পেতে পারে তার প্রতি মানুষের আগ্রহ সব সময় প্রকট থাকে।
যদি কোন মানুষ কে বলা হয় আপনি ১০,০০০ টাকা ব্যাংকে জমা রাখলে ১০ বছর পরে ২০ হাজার টাকা পাবেন এবং একই ব্যক্তিকে যদি বলা হয় আপনি ১০,০০০ টাকা ব্যাংকে জমা রাখলে এক মাসে ৫০০ টাকা পাবেন, সেক্ষেত্রে মানুষ স্বল্প সময়ের অফারটিকে বেছে নিতে চাইবে।
এটিকে বলা হচ্ছে হাইপারবোলিক ডিসকাউন্টিং।
ই-কমার্সে এর ব্যবহার
Limited time offer এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী। এমন অফার তৈরি করবেন যার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে এবং কাস্টমার কেনাকাটা সম্পন্ন করার সাথে সাথে সেই ডিসকাউন্ট একাউন্টটি ফেরত পান।
৮) চয়েস সাপোর্টিভ বায়াস
মানুষ বেশিরভাগ সময়ই তার পছন্দের প্রতি সমর্থন ইতিবাচক সমর্থন চায় অর্থাৎ সে যা পছন্দ করেছে সেটি সঠিক বলে প্রতীয়মান করার পক্ষে যুক্তি খুঁজে।
ধরুন, আপনি আইফোন ও স্যামসাং এর মধ্যে আইফোনকে বেছে নিয়েছেন। একই সময়ে খেয়াল করবেন স্যামসাং না নেওয়ার পক্ষে আপনার কিছু যুক্তি তৈরি হয়ে গেছে।
এবং আপনার সিদ্ধান্তই সঠিক সে বিষয়ে আপনি যুক্তি প্রমান উপস্থাপন করতে চাইবেন।
একইভাবে কেউ যদি স্যামসাং পছন্দ করেন তবে সে অ্যাপেল এর বিপক্ষে যুক্তি খুজবে এবং তার নেয়া সিদ্ধান্ত সঠিক সেটি সে প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে।
কিভাবে ই কমার্স বিজনেসে এটি ব্যবহার করবেন
মানুষের এই কমন বায়াসটি ট্রিগার করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পারচেস কনফার্মেশন মেসেজ সেন্ড করা অর্থাৎ কেউ যখন কেনাকাটা সম্পন্ন করে তখন তাকে একটি কনফারমেশন মেসেজ দিবেন। সেখানে তাকে এই ভরসা প্রদান করবেন যে, সে যে সিদ্ধান্তটি নিয়েছে সেটি সঠিক।
৯) হেলো ইফেক্ট
এটি একটি চমকপ্রদ কগনিটিভ বায়াস। মানুষ সাধারণত কোন একটি সিদ্ধান্ত নেবার সময় আউটলুককে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, একটি সুন্দর আউটলুকের কোন একটি বস্তু সব সময় অসাধারণ হবে বা সেরা হবে।
খেয়াল করে দেখবেন অ্যাপেল তার প্রতিটি প্রোডাক্ট যেমন টেকনিক্যালি অ্যাডভান্স করে তৈরি করে, একই সাথে তার প্রোডাক্টগুলো দেখতেও যথেষ্ট সুন্দর।
আপনি যখন একটি প্রিমিয়াম প্রোডাক্ট হিসেবে কোন কিছুকে গ্রহণ করবেন তখন তার টেকনিক্যালি অ্যাডভান্টেজ দেখার পাশাপাশি তার আউটলুককেও প্রাধান্য দিবেন, আর এটিকেই বলা হচ্ছে হ্যালো ইফেক্ট।
Video: Explains halo effect and how most people are blind to it.
ই-কমার্স এর ব্যবহার
কোন একটি প্রোডাক্ট বা সার্ভিস প্রমোট করার সময় সৌন্দর্য বর্ণনার ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব সাবধানী এবং স্পেসিফিক হবেন। আপনি মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন, কিভাবে এই প্রোডাক্টটি নান্দনিক হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে।
১০) ইনগ্রুপ বায়াস
মানুষ তার পছন্দের ক্ষেত্রে সব সময় গ্রুপে থাকতে ভালবাসে। বিশেষ করে যখন জাতিগত, আদর্শগত অথবা ডেমোগ্রাফিক গ্রুপ সামনে আসে, তখন মানুষ তার গ্রুপের মধ্যে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
ধরুন, একটি স্টেডিয়ামে দুটি দলের খেলা হচ্ছে এবং এই দুইটি দল যদি একই বিভাগের হয়ে থাকে তাহলে অডিয়েন্স খুঁজবে কোন দলটি তার এলাকার নিকটবর্তী এবং সেই দলটিকে সে পছন্দ করবে।
ই-কমার্স বিজনেস এর ব্যবহার
প্রোডাক্ট ও সার্ভিস ডিজাইন করার ক্ষেত্রে অথবা প্রমোশনাল অ্যাক্টিভিটিজ ডেভলপ করার ক্ষেত্রে ডেমোগ্রাফিক গ্রুপগুলোকে টার্গেট করে মার্কেটিং মেসেজ ডেভলপমেন্ট করতে হবে।
যাতে করে আপনি একটি শ্রেণীর, গোত্র বা একটি নির্দিষ্ট বয়সের অডিয়েন্স গ্রুপকে আকর্ষণ করতে পারেন।
১১) হাই এন্ড পিক
মানুষ তার অভিজ্ঞতাকে সবচেয়ে বেশি মনে রাখে। এই অভিজ্ঞতা হতে পারে পজেটিভ অথবা নেগেটিভ।
কোন একটি সিচুয়েশনের দুইটি অবস্থান থাকে একটি হচ্ছে শুরুর অবস্থান এবং অন্যটি হচ্ছে শেষের অবস্থান।
কোন একজন মানুষ যখন এই দুই অবস্থায় পজিটিভলি ট্রাভেল করে তখন তার ধারনা পজিটিভ থাকে কিন্তু যখন কোন একটি অবস্থান নেতিবাচক হয়, সেক্ষেত্রে কাস্টমার ডিসেটিস্ফাইড হবে কিনা তা নির্ভর করবে ঠিক কোন পয়েন্টে কাস্টমার সবচেয়ে বেশী সেনসিটিভ।
ধরুন, আপনার একটি মোবাইল সিম কার্ড হারিয়ে গেছে এবং আপনি চাচ্ছেন এটি যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করতে।
কাস্টমার কেয়ারে ফোন দেওয়ার পর যদি সেই কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি আপনার ফোনটি রিসিভ করতে অনেক লম্বা সময় নেই কিন্তু খুব দ্রুত সিম কার্ডটি বন্ধ করে দেয়, তাহলে আপনি তাকে বেশি প্রাধান্য দেবেন।
কিন্তু অপরদিকে যদি একটি কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি আপনার ফোনটা দ্রুত রিসিভ করে কিন্তু সিম কার্ড বন্ধ করার জন্য অনেক লম্বা সময় নেই বা অন্য কাউকে রেফার করে তাহলে সেই অভিজ্ঞতা আপনার জন্য নেতিবাচক।
ই-কমার্সেএর ব্যবহার
কাস্টমারদের চাওয়ার দিকে খেয়াল করুন, ই-কমার্স বিজনেসের ক্ষেত্রে কাস্টমার যখন চেক আউট প্রসেস পর্যন্ত যায় এবং সেখান কোন একটি সেনসেটিভ ইনফর্মেশন চাওয়া হয়, যেমন, গেস্ট পারচেস অপশন না থাকা অথবা ডিজিটাল পেমেন্ট এর জন্য কার্ড নাম্বার যুক্ত করতে হবে ইত্যাদি শর্ত থাকে, তখন কাস্টমার অনেক ক্ষেত্রে কেনাকাটা সম্পন্ন না করে বের হয়ে যায়।
আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে কাস্টমার যাতে আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার পাশাপাশি চেক-আউট প্রসেস নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে পারে সেটি নিশ্চিত করা। এমন কোনো শর্ত না দেওয়া যাতে তার পারচেস অভিজ্ঞতা নেতিবাচক হয়।
পরিশেষে
কাস্টমার একটি প্রোডাক্ট কিনবে নাকি কিনবে না সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল। এটিকে সবসময় সাদা বা কালো দিয়ে পার্থক্য করা যায় না, যখন প্রশ্ন আসে মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ের তখন কাস্টমারদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা আপনার থাকতে হবে।
আপনি যখন কাস্টমারের কগনেটিভ বায়াসগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকবেন এবং সে অনুযায়ী আপনার প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসকে একটি ভালো পজিশনে রাখতে পারবেন তখন কাস্টমারের সাথে আরও বেটার কম্মুনিকেট করা সম্ভব।
যখন আপনার প্রতিযোগিরা লজিক এবং রিজনের বেড়াজালে আবদ্ধ রয়েছে ঠিক তখন আপনি কাস্টমার সাইকোলজি আরো ভালভাবে বোঝার মাধ্যম দিয়ে মার্কেট প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবেন।
আপনার সাথে যদি এমন কোন ঘটনা ঘটে থাকে, যেখানে আপনার মনে হয়েছে কাস্টমার কেনাকাটার ক্ষেত্রে যুক্তির বাইরে গিয়ে আচরণ করে? তবে সেই ঘটনাটি কি ছিলো জানিয়ে কমেন্টে করুন।
সবার আগে মন্তব্য করুন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন
মন্তব্য করতে হলে আপনাকে লগ ইন করতে হবে।