ফেসবুক প্রোমোশনঃ বেশি রিচ হবার পরেও কেন কাস্টমার এঙ্গেজ হয় না

ফেসবুক প্রোমোশনঃ বেশি রিচ হবার পরেও কেন কাস্টমার এঙ্গেজ হয় না
শেয়ার করুন

ফেসবুক প্রোমোশন অনলাইন সেলারদের বিজনেসের প্রধান মার্কেটিং কৌশল । কিন্তু অ্যাড ফেসবুকে বেশি রিচ হবার পরেও কেন কাস্টমার এঙ্গেজ হয় না।

সমসাময়িক সময়ে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে প্রোডাক্ট সেলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।কিছু সেলার এর সুফলও পেলেও অনেকেই সেল না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন। 

আবার কিছু অনলাইন সেলার শুধু প্রোডাক্টের ছবি তুলে সেটি পোস্ট করেই প্রোডাক্ট সেল করার চেষ্টা করছেন। 

এধরনের সেলারদের কাস্টমার পাবার অন্যতম উপায় ফেসবুক প্রোমোশন। দেখা যায় বিজনেসের শুরুতে  ফেসবুক প্রোমোশন এর মাধ্যমে ভালো সাড়া পেলেও কিছুদিন পরে এর পরিমাণ দিন দিন কমতে থাকে। একটা সময় পরে আর কোন রেজাল্ট আসে না। 

এমন সময়, সেলারদের কিছু কমন প্রশ্ন থাকে,

  1. ফেসবুক বুস্টিং সার্ভিস প্রদানকারী কি তাহলে ভালো ভাবে কাজ করতে পারছে না? 
  2. ভালো রেজাল্ট পেতে পেজ প্রমোট করবো না পোস্ট প্রমোট করবো?
  3. বাজেট কত হলে  ফেসবুক বুস্টিং থেকে কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট পাবো ?
  4. কতদিন ধরে অ্যাড দিতে হবে কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট পেতে চাইলে ?

ধরুন, উল্লিখিত সবকিছুই সঠিক করছেন তবুও রেজাল্ট পাচ্ছেন না। তাহলে এমন হবার পেছনে কারণ কি ? যদি আপনার মনেও কখনো এমন প্রশ্নের উদয় হয়ে থাকে তবে লিখাটি সম্পূর্ণ পড়ুন।

প্রশ্নগুলোর সম্ভব্য উত্তর,  

  1. যদি ফেসবুক বুস্টিং সার্ভিস প্রদানকারী সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বিষয়ে দক্ষতা না থাকে বা প্রফেশনাল না হয়ে থাকেন তবে ফেসবুক বুস্টিং দ্বারা রেজাল্ট না আসার এটি একটি কারণ হতে পারে। হতে পারে তিনি সঠিক কাস্টমার টার্গেটিং বা ক্যাম্পেইন অপটিমাইজ করতে সক্ষম হচ্ছেন না। 
  2. ফেসবুকের অ্যাড দেবার যে সকল অবজেক্টিভ রয়েছে সেগুলো তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে।Awareness, Consideration, Conversion। আপনি অ্যাড থেকে কি চাচ্ছেন সেটির উপর নির্ভর করে কি প্রমোট করা প্রয়োজন।   
  3. এক কথায় যদি বলি, তবে প্রতিদিনের বাজেট যত বেশি করবেন তত ভালো। 
  4. যতবেশি সময় অ্যাড চলবে তত বেশি মানুষ সেটি দেখবে। 

ফেসবুক প্রোমোশন নিয়ে বিস্তারিত জানতে পরুনঃ ফেসবুক মার্কেটিং রহস্য – কী করবেন আর কী করবেন না

ধরুন, সব কিছুই ঠিক মতো করেছেন,  তাহলে ফেসবুকে বুস্ট করে ভালো রিচ পাবার পরেও কেন কাস্টমার এঙ্গেজ হচ্ছে না। 

প্রশ্নটির উত্তর দিতে আমি একটি রুপক উদাহরণের সহায়তা নিচ্ছি , 

ফেসবুকের জায়গায় আপনি টেলিভিশন কল্পনা করুন।

এই দুটির মধ্যে মূল পার্থক্য হলো একটি স্যাটেলাইট ব্রডকাস্টিং আর একটি ওয়েব মিডিয়া। একটি ওপেন মিডিয়া, আর একটি প্রাইভেট মিডিয়া। 

কিন্তু সবার কাস্টমার সেই একই। এখন যদি টেলিভিশনে শুধু অ্যাড ছাড়া কিছুই না দেখায় তবে আপনি কতদিন সেই অ্যাড দেখার জন্য টেলিভিশন দেখবেন একবার ভাবুন।

তাহলে, আমরা কি করি

নাটক দেখি, মুভি দেখি, খবর দেখি আর তাঁর মাঝে আমরা বিজ্ঞাপন দেখি।

যদি টেলিভিশনে বিনোদন মূলক অনুষ্ঠান না দেখানো হতো তবে আপনি নিশ্চয় শুধু অ্যাড দেখার জন্য টেলিভিশন চ্যানেলে চোখ রাখতেন না। 

যে অ্যাড গুলো অনেক বেশি সময় ধরে বেশি সংখ্যক চ্যানেলে দেখানো হয় সেগুলি আমরা মনে রাখি।

পরবর্তী সময়ে যখন কেনাকাটা করতে যায় আমারা সেই প্রোডাক্টগুলি বেশি কিনি। যে প্রোডাক্ট সম্পর্কে আমরা খুব বেশি জানি না সেটি আমরা কিনতে চাই না। 

অ্যাড গুলোর প্রচারের সময় ও তাঁর দৈর্ঘ্যের উপর অ্যাডের খরচ নির্ভর করে।

লম্বা সময় ধরে চলা অ্যাড ও বিশেষ সময়ে দেখানো অ্যাড গুলোর জন্য খরচ বেশি করতে হয়। কিন্তু ফলাফলে আপনি অনেক মানুষের কাছে আপনার প্রোডাক্টের তথ্য পৌঁছে দিতে পারেন। 

Best Brand Award 2019 বাংলাদেশে এ যে সকল ব্র্যান্ড শীর্ষ ১৫ তে স্থান করে নিয়েছে তাদের একটি তালিকা দেয়া হলো।

এবার, যখন টেলিভিশনে তাদের অ্যাড দেখবেন খেয়াল করার চেষ্টা করবেন, তালিকায় স্থান পাওয়া ব্র্যান্ডগুলো কিভাবে অ্যাড দিচ্ছে, কোন অনুষ্ঠানগুলো চলাকালীন সময়ে তাদের অ্যাড  দেখছেন। 

লক্ষ্য করবেন, জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলোর চলাকালীন সময়ে তাদের অ্যাড বেশি দেখানো হয়। আপনি হয়ত সবগুলো অ্যাড পুরো কখনোই দেখেননি কিন্তু তাদের নাম আপনার মনে গেঁথে আছে। 

তাঁরা কিভাবে আপনার মনে জায়গা করতে সক্ষম হলেন  

এবার, অ্যাড গুলোর দিকে নজর দিন। খেয়াল করুন অ্যাড গুলোতে কেউ বলছে না আপনি তাঁর প্রোডাক্ট কিনুন, বলছে কিভাবে তাদের প্রোডাক্ট আপনার সমস্যার সমাধান করবে। 

আবার, গান, ফান বা শিক্ষামুলক তথ্য দিয়ে আপনার কাছে তাদের প্রোডাক্ট পৌঁছে দিচ্ছে।

আর এভাবেই একটি ব্র্যান্ড তাঁর অ্যাডগুলোর মাধ্যমে কাস্টমারদের তাদের সাথে ধরে রাখে। 

ফেসবুকের জন্য একই নিয়মে কাস্টমারদের ধরে রাখতে হয়।

আপনার পেজটিকে কাস্টমারদের জন্য একটি উপকারি মাধ্যমে রূপান্তরিত করুন। যেখানে কাস্টমার আপনার বিজনেস রিলেটেড প্রোডাক্ট নিয়ে দৈনন্দিন জীবনের তাদের ব্যবহার ও সুবিধা নিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পাবে। 

আপনি যদি আপনার বিজনেস সেক্টরে কর্তৃত্ব তৈরি করতে পারেন তবেই কাস্টমার সেই প্রোডাক্ট কেনার জন্য আপনার উপর আস্থা রাখবে।আপনার পেজের সাথে এঙ্গেজ হবে।  

এখন, তাদের তাদের টার্গেট করে ফেসবুক প্রোমোশন করুন, দেখবেন তারা এঙ্গেজ হবে আগের থেকে অনেক বেশি।  

দেশের পপুলার ব্র্যান্ডগুলোর কিছু জনপ্রিয় অ্যাড দেখে নেয়া যাক, 

Wolton,

https://www.youtube.com/watch?v=PW-TK0KqOkE

https://www.youtube.com/watch?v=_6lB3t2JpSI

https://www.youtube.com/watch?v=UysHEWBVYII

https://www.youtube.com/watch?v=NKIuaHZT9Ag

RFL

https://www.youtube.com/watch?v=fIdWKZBxYj0

Grameen Phone

https://www.youtube.com/watch?v=ciBnbRssHno

https://www.youtube.com/watch?v=to7m2wR1EyY

https://www.youtube.com/watch?v=9ju9O4Ddlww

Jui Coconut Hair Oil

https://www.youtube.com/watch?v=HPiQk4MZxMI 

Some Nostalgic Bangladeshi TVC

https://www.youtube.com/watch?v=iTotRcNUWKk

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কোন বিছিন্ন ব্যাপার নয়, এটি একটি পরিকল্পিত কাঠামোর অধীনে পরিচালিত করতে হয় যদি আপনি সুফল পেতে চান। 

 

 

ইটালিয়ান SME ফ্যাশান ব্র্যান্ডের একটি বিজনেস কেস স্টাডি থেকে কিছু তথ্য আপনাদের জানাবো।

তাঁরা কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং পরিকল্পনা করেছিল একটি স্বনামধন্য ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পেতে ও বেচাকেনার পরিমাণ বাড়াতে। 

এই বিজনেস কেস স্টাডির জন্য ফ্যাশান ব্র্যান্ড X মডেল হিসেবে বেঁছে নেয়া হয়েছিলো। ফ্যাশান ব্র্যান্ড X সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে আসি,

ব্র্যান্ড X এ ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে মাঝারি আকারের  চামড়ার ব্যাগ এবং আনুষাঙ্গিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।এর প্রায় শতাধিক কর্মচারী রয়েছে এবং ২০১৪ সালে এই প্রতিষ্ঠান € 28 মিলিয়ন ডলার উপার্জন করে।

ফ্লোরেন্স তুষ্কানী অঞ্চলের একটি শহর, যার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এখানে থেকে ছোট কারিগরি দোকান থেকে শুরু অনেক বিখ্যাত ফ্যাশান ব্র্যান্ড তাদের যাত্রা শুরু করেছিলো। টাসকানির স্থানীয় ফ্যাশন হাউসগুলির রয়েছে  উদ্যোক্তা মনোভাব, সৃজনশীলতা এবং কারুশিল্পের সংমিশ্রণের সক্ষমতা। 

ব্র্যান্ড X তাঁর বিজনেসে যখন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং-এর প্রয়োজনীয়তা বোধ করলে তাঁরা একটি সমন্বিত সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং পরিকল্পনা করেন। 

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং নিয়ে তাদের কি পরিকল্পনা ছিলো?

ব্র্যান্ড X সামাজিক প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, পিন্টারেস্ট এবং লিংকডিন ব্যবহার করেছিলো।

কাস্টমারদের এঙ্গেজ করতে তাঁরা ফেসবুককে ব্যবহার করে।

রিয়েল টাইম ইভেন্টগুলি কাস্টমারদের জানাতে টুইটার ব্যবহার করেছিলো।  ব্র্যান্ড X  পিন্টারেস্ট এবং ইউটিউবকে বেঁছে নিয়েছিলো  “গল্প” বলার মধ্যমে কাস্টমারদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে।

 

আসুন, এক নজরে দেখে আসি তাদের সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কার্যক্রমের কাঠামো।

এটি আপনার অনলাইন বিজনেসের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর পরিকল্পনা তৈরিতে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে বিজনেসর গ্রোথ নিশ্চিত করবে বলে আশা করি।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কার্যক্রমের কাঠামোটি ১০ ক্যাটাগরির কার্যক্রম নিয়ে তৈরি করা হয়েছিলো,

  1. Public relations (PR).
  2. Promotion process.
  3. Engaging online opinion leaders, key influencers, and personalities as a means to influence customers.  
  4. Personalizing customer experience and customization of products. 
  5. Engaging the customer as a creator of product reviews,  advertising concepts, and as a co-producer or as a source of innovation.
  6. Engaging customers to participate in a call to action for participatory promotion.  
  7. Customer support.  
  8. Engaging with competitors in social media.
  9. Social media mix: the selection of social media platforms’ features.
  10. Market intelligence.

কাঠামোটি বিশদ ভাবে বুঝতে দেখুন নিচের টেবিলটি,


ব্র্যান্ড এক্সের মার্চ ২০১৪ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত এক বছরের ফেসবুক ব্র্যান্ড পেজের ক্রিয়াকলাপ সংগ্রহ করে সেটির  মোট ১৩৬ টি পোস্ট বিশ্লেষণ করা হয় । 

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং স্ট্রাটেজি টেবিল অনুসারে এই বিশ্লেষণ হতে ১৫২ ধরনের কাস্টমার অ্যাকশন খুঁজে বের করা হয়। 

বেশিরভাগ কাস্টমার অ্যাকশন ছিল প্রচার এবং বিক্রয় কেন্দ্রিক (মোট কাস্টমার অ্যাকশনের 54%)। 

অন্যান্য কাস্টমার অ্যাকশনগুলো যেমন, জনসম্পর্ক সম্পর্কিত, অনলাইনে মতামত, মূল প্রভাবক, ব্যক্তিত্ব, সেলিব্রিটি বা পাবলিক ফিগার এবং কাস্টমার সাপোর্ট সম্পর্কিত ছিল।

বিশ্লেষণটি পাই চার্ট আকারে দেখুন, 

এভাবেই ব্র্যান্ড X সমন্বিত মার্কেটিং কার্যক্রমের দ্বারা কাস্টমার এঙ্গেজমেন্ট, ব্র্যান্ড আওয়ারনেস, ব্র্যান্ড রেপুটেশন বাড়িয়ে তোলে যার ফলে সেল বেড়ে যায় এবং তাঁরা বিক্রয় লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়। 

পরিশেষে,

আপনার টার্গেট অডিয়েন্স সম্পর্কে জানুন, অর্থবহ কনটেন্ট তৈরি করুন, পোস্টের পারফর্মেন্স পরিমাপ করুন, ফেসবুক প্রোমোশন করুন এবং ফেসবুকের মাধ্যমে বেশি বেশি সেল করুন। 

মনে রাখবেন, শুধু বুস্টিং মানেফেসবুক প্রোমোশন নয়। ফেসবুক প্রোমোশন একটি সমন্বিত বিজ্ঞাপন পরিকল্পনা। 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

সবার আগে মন্তব্য করুন

আপনার মূল্যবান মতামত দিন