প্রোডাক্ট প্রাইসিং নিয়ে দারুন কিছু কৌশল জানার পূর্বে চলুন “চয়েস” নিয়ে একটি রিসার্চ সম্পর্কে জানবো। বলা হচ্ছে, কাস্টমারদের অনেক বেশি চয়েস দেয়া হলে, তাদের কেনার সম্ভাবনা ১০ গুণ কমে যায়।
কলম্বিয়ার অধ্যাপক, Sheena Iyengar “চয়েস” নিয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে পড়াশোনা করছেন। তিনি তার গবেষণাপত্র “When Choice is Demotivating বা “ চয়েস যখন নিরুৎসাহিত করে” এর জন্য একটি চমৎকার পরীক্ষা চালান ।
একটি গ্রোসারি স্টোরে তারা একটি ফ্রি টেস্টিং বুথ স্থাপন করেন, সেখানে তারা ছয়টি ভিন্ন ধরনের জ্যাম রাখেন। দেখা যায়, ৪০% কাস্টমার সেই বুথে আসে ও জ্যাম টেস্ট করে। তাদের মধ্যে ৩০% কাস্টমার জ্যাম কিনে।
এক সপ্তাহ পরে, আবার তারা ঐ একই স্টোরে ফ্রি টেস্ট বুথ স্থাপন করে, কিন্তু এবার তারা ২৪ টি ভিন্ন ধরনের জ্যাম রাখেন। দেখা যায়, এবারে প্রায় ৬০% কাস্টমার সেই বুথে এসে জ্যাম টেস্ট করেন, কিন্তু মাত্র ৩% কাস্টমার সেখান থেকে জ্যাম কেনেন।
তাহলে কাস্টমার বেশি থেকেও কেন ২৪ টি ভিন্ন ধরনের জ্যাম পূর্ণ বুথে কম সেল হলো?
এই গবেষণা আমাদের যে সিদ্ধান্তে পৌছাতে সাহায্য করে তা হলো,
১. বেশি চয়েস করার অপশন দিলে তা কাস্টমারদের আকর্ষণ করে। যে কারনে ২৪ টি ভিন্ন ধরনের জ্যাম বুথে মানুষের ভিড় বেশি ছিলো।
২. কম চয়েস করা অপশন দিলে কাস্টমার বেশি কিনে। ফলে ৬ ভিন্ন ধরনের জ্যাম বুথে কাস্টমার কম থাকলেও সেল বেশি ছিলো।
প্রোডাক্ট প্রাইসিং স্ট্রাটেজি ইচ্ছেমাফিক হবার চেয়ে সাইন্টিফিক হওয়া বেশি জরুরি। বিজনেসের প্রোডাক্ট ও সার্ভিসের প্রাইস নির্ধারণে কিছু রিসার্চ বেজড প্রাইসিং স্ট্রাটেজি নিয়ে বলবো। যা প্রোডাক্ট প্রাইসিং এর মানদণ্ডে আপনাকে প্রতিযোগীদের থেকে এগিয়ে রাখবে।
৯ টি রিসার্চ বেজড প্রোডাক্ট প্রাইসিং কৌশল
কঞ্জুমার বিহেভিওরের উপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে প্রোডাক্ট প্রাইসিং এর এই ৯ টি স্ট্রাটেজি। কিভাবে প্রোডাক্টের ইফেক্টিভ প্রাইস নির্ধারণ করা যায় সে সম্পর্কে এই রিসার্চ বেজড স্ট্রাটেজিগুলো আপনাকে ক্লিয়ার ইন্সাইট দিবে।
১) একই রকম সেলস প্রাইস
একই প্রোডাক্টের অনেকগুলো বিকল্প প্রাইস কাস্টমারদের কেনাকাটায় ডিমোটিভেট করে। তাই অনেকে হয়তো ভেবে নিবেন, একই ধরনের প্রোডাক্টের জন্য অভিন্ন প্রাইস নির্ধারণ কৌশল আদর্শ সমাধান, না সকল ক্ষেত্রে এটি ঠিক না।
Yale University এর একটি রিসার্চ পেপারে উঠে এসেছে, যদি দুটি কাছাকাছি ধরনের প্রোডাক্টের প্রাইস একই হয় তাহলে, ক্রেতাদের সেটি কেনার প্রবনতা ভিন্ন প্রাইসের একই ধরনের অন্য দুটি প্রোডাক্টগুলোর চেয়ে কম।
একটি পরীক্ষায় দেখা যায়,
যখন ৬২ সেন্ট মূল্যের দুটি গামের প্যাকেটের মধ্যে থেকে কাস্টমারদের একটি পছন্দ করতে দেয়া হয়, তখন মাত্র ৪৬% কাস্টমার সেটি কিনেছে। বিপরীতে, গামের প্যাকেটগুলোর প্রাইস যখন আলাদা ছিল, যেমন, একটি ৬২ সেন্ট ও অন্যটি ৬৪ সেন্ট তখন ৭৭% কাস্টমার সেটি কিনেছে।
অর্থাৎ প্রাইসের ভিন্নতায় সেল বাড়ে।
২) প্রাইস অ্যাংকরিং
কল্পনা করুন, আপনার শহরের কোন বাড়িটি সবচেয়ে ছোট। খেয়াল করবেন এটি কল্পনা করার সময়ে আপনি সেই ছোট বাড়িটিকে কোন একটি বড় বাড়ির সাপেক্ষে তুলনা করছেন। এটি হচ্ছে প্রাইস অ্যাংকরিং এর খেলা।
যদি ২০০০ টাকা মূল্যের ঘড়ি সেল করতে চান তবে সেটি ১০,০০০ টাকা মূল্যের ঘড়ির পাশে রাখুন। তাহলে, আপনার ২০০০ টাকা মূল্যের ঘড়ি সেল বেড়ে যাবে।
মানুষ যখন সিদ্ধান্ত নেবার জন্য চিন্তা করে তখন একটি তথ্যকে রেফারেন্স হিসেবে ধরে নিয়ে বাকি তথ্যের পর্যালোচনা করে। আর রেফারেন্স হিসেবে সে সবচেয়ে প্রথমে প্রাপ্ত তথ্যকে স্মরণ রাখে। আর এই তথ্য তার সিদ্ধান্ত গ্রহনের প্রক্রিয়ায় সিরিয়াস প্রভাব ফেলে।
উপরের চিত্র লক্ষ্য করুন, প্রোডাক্টের মূল্য যখন প্লেইন থাকে তখন এটি আমাদের চিন্তায় তেমন কোন ইফেক্ট করে না। এবারে পাশের চিত্রটি দেখুন, একই প্রোডাক্টের মূল্য ৫০০ ডলার উল্লেখ করে যখন সেটি ডিস্কাউন্ট দেয়া হয়েছে, সেটি আমাদের বেশি প্রভাবিত করতে সক্ষম। কারন, আমরা ডিস্কাউন্ট প্রাইসকে অরিজিনাল প্রাইসের সাপেক্ষে তুলনা করছি।
অবচেতনমনে সেই প্রোডাক্টের আসল মূল্য যে ৫০০ ডলার সেটা আমরা মেনে নিয়েছি।
প্রাইস অ্যাংকরিং এর এখানেই মূল গেম। এটি আমাদের সিদ্ধান্ত নেবার জন্য প্রাপ্ত তথ্যকে ম্যানুপুলেট করে, বিকল্প তথ্যের মাঝে একটিকে মেনে নেবার জন্য যুক্তি তৈরি করে।
যারা ভেবে নিয়েছেন ই-কমার্স বিজনেস তেমন কোন কঠিন বিষয় না,তাদের জন্য বার্তা, শুরু থেকেই প্রতিটি বিষয়ে নলেজ রাখা জরুরি না হলে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে আপনার উদ্যোগ। ই কমার্স একই সাথে আর্ট ও সাইন্স এই কথা বিশ্বাস করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
৩) ওয়েবার ল
এই সূত্রটি অনেক ইন্টারেস্টিং, একটি প্রোডাক্টের মূল্য কতখানি বাড়ালে সেটি কাস্টমারদের আলোড়িত করে বা করে না। এক্ষেত্রে, আপনি আনুমানিক একটি সংখ্যা বলে দিতেই পারেন তবে সেটি যুক্তি নির্ভর না।
আপনার প্রোডাক্টের মূল্য কত বাড়াবেন বা কমাবেন সেটি আপনার বিষয়, তবে কাস্টমার কিভাবে সেটিকে গ্রহন করবে তা আপনার বিষয় না। তাহলে এরপর যখন প্রোডাক্টের নতুন মূল্য নির্ধারণ করবেন কতটুকু পরিমান মূল্য বৃদ্ধি বা কম করতে হবে কিভাবে নির্ধারণ করবেন?
ওয়েবার ল বলে, একটি স্টিমুলাসের পরিবর্তন যে মাত্রায় লক্ষণীয় হয় তা মূল স্টিমুলাসের একটি ধ্রুবক অনুপাত।
উদাহরণ দিয়ে বুঝি,
ধরুন, চোখ বাধা অবস্থায় আপনি ডান হাতে একটি ২ কেজি ওজনের বস্তু তুলে ধরলেন, আপনাকে বলা হলো আপনি ২ কেজি ওজন নিয়ে আছেন। এবারে সেটি নামিয়ে অন্য একটি ওজন দেয়া হলো যেটি আগের চেয়ে .০৫ কেজি বেশি অর্থাৎ ২.০৫ কেজি।তাহলে সেই ব্যক্তি পরিবর্তিত ওজন অনুভব করবে না। তবে ১.২ কেজি দিলে বুঝতে পারবে।
একই ভাবে তাকে যদি এবারে ৫ কেজি ওজন দেয়া হয়। কিছুক্ষন পরে সেই ৫ কেজি সরিয়ে ৫.০৫ কেজি ওজন দিলে সে পার্থক্য বুঝতে পারবে না। কিন্তু যদি ৫.২ কেজি ওজন দেয়া হয় তবে পার্থক্য বুঝবে।
এই “ল” প্রোডাক্টের মূল্য পরিবর্তনের পার্থক্য কাস্টমারদের কাছে লক্ষণীয় করতে ব্যবহার করা হয়। একটি প্রোডাক্টের মূল্য ৩১০০ টাকা সেটি মূল্য ছাড় দিয়ে যদি ৩০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়, এটি কাস্টমারের নজরে আসবে না বা আসলেও সেটি আমলে নিবে না।
যদি ৩০০০ টাকার প্রোডাক্ট মূল্য ছাড় দিয়ে ২৯৯৯ টাকা করা হয়, তবে এটি লক্ষণীয়। প্রোডাক্টের অরিজিনাল মূল্যে বেশি হলে, এই পরিবর্তন বা ছাড়ের পরিমান একই অনুপাতে বাড়বে অর্থাৎ লক্ষণীয় পরিবর্তন সংখ্যা হবে কন্সটান্ট।
নিচের চিত্রটি খেয়াল করলে বিষয়টি আরো পরিস্কার বোঝা যায়। দেখুন, দুটি ক্ষেত্রেই মূল্যে ছাড়ের পার্থক্য ১ ডলার কিন্তু প্রথমটির বেজ মূল্য কম এবং পরেরটির বেজ মূল্য বেশি।
অর্থাৎ পরিবর্তন হতে হবে লক্ষণীয়।
৪) পেইন পয়েন্ট কমানো
কার্নেগি মেলন, স্ট্যানফোর্ড এবং এমআইটি -র গবেষকদের মতে, মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত না ব্যথা অনুভব করে, ততক্ষণ অর্থ ব্যয় করে। বিষয়টি বেশ ইন্টারেস্টিং।
গবেষণাটি “নিউরন” জার্নালে প্রকাশিত হয় এবং এটি নিউরো ইকোনোমিক্সের উদীয়মান ফিল্ডে সবচেয়ে সাম্প্রতিক বিষয়, যেখানে মানুষের এমন মানসিক প্রক্রিয়াগুলি পর্যবেক্ষণ করা হয় যা অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকে পরিচালনা করে।
গবেষকরা মনে করেন, তাদের এই গবেষণা দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় যে, মানুষ কেন নগদ অর্থের চেয়ে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বেশি ব্যয় করে। আপনি যদি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তবে খুব সম্ভবত আরো পরিস্কার ভাবে এই বিষয়টি অনুভব করবেন।
‘জর্জ লোয়েনস্টাইন” যিনি কার্নেগি মেলনে সোশ্যাল অ্যান্ড ডিসিশন সাইন্স (এসডিএস) বিভাগের প্রফেসর ও এই গবেষণা পেপারের সহ-লেখক “। তিনি বলছেন,“ক্রেডিট কার্ড মানুষের অর্থ প্রদানের যন্ত্রণাকে চেতনানাশক করে তোলে,”।
আপনি যখন কার্ডে পেমেন্ট করেন তখন এই অনুভুতি হয় না যে আপনি সেটি কেনার জন্য টাকা খরচ করছেন। কিন্তু নগদ অর্থ বা ফিজিক্যাল কারেন্সি প্রদানের ক্ষেত্রে এই অনুভুতি বিপরীত।
এই গবেষণায় ২৬ জন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিকে ২০ ডলার করে দেয়া হয় ও বলা হয়, তাদের কিছু প্রোডাক্ট দেখানো হবে তারা চাইলে সেটি কিনতে পারবে। আর কিনতে না চাইলে ডলার নিজের কাছেই রেখে দিতে পারবে।
তাদেরকে “ফাংশানাল ম্যাগনেটিক রিজনান্স ইমেজিং স্ক্যানার” এর মধ্যে শুইয়ে রেখে প্রোডাক্টগুলো দেখানো হয়। জানার চেষ্টা করা হচ্ছিলো, তারা যখন প্রোডাক্টগুলি দেখে সেটি কেনা বা না কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন তখন মস্তিস্কের কোন অংশগুলি সক্রিয় হয়ে উঠে। বিশেষ করে মস্তিষ্কের পেইন সেন্টারগুলো সক্রিয় হয় কিনা, সেটি জানাটাই মূল লক্ষ্য।
লোয়েনস্টাইন বলেন, “যখন আমরা প্রথম স্ক্যানের ফলাফল পেয়েছিলাম তখন আমরা খুব উত্তেজিত ছিলাম এবং দেখেছিলাম সেই ব্যক্তি যখন প্রোডাক্টের প্রাইস দেখেছে তখন তার “ইনসুলা” যা ব্যথা প্রক্রিয়াকরণের সাথে যুক্ত মস্তিষ্কের একটি অংশ সেটি সক্রিয় হয়েছে। এটি জানা আমাদের জন্য একটি অসাধারণ মুহূর্ত ছিল।
গবেষণা অনুযায়ী, আপনার প্রোডাক্ট প্রাইসিং করতে হবে এমনভাবে যাতে গ্রাহক পেইন অনুভব না করে। কিন্তু কিভাবে সেটি করেন?
প্রোডাক্টের মূল্যকে ভিন্ন উপায়ে সাজিয়েঃ
ধরুন, একটি সফটওয়্যারের সাবস্ক্রিপ্সন ফি বছরে ১২,০০০ টাকা । আপনি যদি এটিকে মাসিক কিস্তিতে ভাগ করে দেন, যেমনঃ মাসিক ফি ১০০০ টাকা তাহলে এটি দেখে আপনার কাস্টমার পেইন অনুভব করবে না। যদিও বছরের হিসেবে এটি পূর্বের মূল্যের সমান।
প্যাকেজ আকারে
ধরুন, একটি গাড়ি কেনার পরে সেটিতে সাউন্ড সিস্টেম লাগানো, সিট কাভার লাগানো বা অন্যান্য ডেকোরেশন সামগ্রী লাগানোর খরচ ক্রেতার উপর আলাদাভাবে না দিয়ে এগুলা আগে থেকেই যুক্ত করে একসাথে মূল্য নির্ধারণ করলে কাস্টমার পেইন ফিল করবে না। অর্থাৎ প্রোডাক্ট প্যাকেজ একচুয়াল খরচের পেইন কমায়।
এপিল টু ইউটিলিটি
ভাষার ব্যবহারে পরিবর্তন এনে কাস্টমারদের খরচের জন্য তৈরি পেইন কমানো যায়। যেমন ধরুন, আপনি ব্যাক মেসেঞ্জার সেল করেন। প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশনে লিখেছেন, “ব্যাক মেসেঞ্জার আপনার ব্যাক পেইন দূর করে” এর পরিবর্তে যদি লিখেন, “ব্যাক মেসেঞ্জার আপনাকে প্রশান্তি এনে দেয়” তবে এটি কাস্টমার তার সমস্যার সমাধানে মস্তিস্কে প্রশান্তি অনুভব করে। যা তার খরচের জন্য মস্তিস্কে তৈরি পেইন দূর করবে। কারন, এই বাক্য কাস্টমারের কাছে প্রোডাক্টের প্রাইসের চেয়ে তার উপযোগিতাকে বেশি ফোকাস করে।
ফ্রি শব্দের ব্যবহারে
আপনি প্রোডাক্ট ফ্রি দিতে পারবেন না কিন্তু সেটি ডেলিভারি ফ্রি করে দিতে পারবেন। আর এই “ফ্রি” দারুন রকম শক্তিশালী শব্দ। এটি কাস্টমারের মনে জেতার অনুভুতি তৈরি করে।
৫) নাম্বার ৯
প্রাইসের শেষ সংখ্যা ৯ নির্ধারণ সেলসের একটি প্রাচীনতম পদ্ধতি, কিন্তু এটি কি আসলে কাজ করে?
কোয়ান্টিটেটিভ মার্কেটিং এবং ইকোনোমিক্স জার্নালের গবেষণা অনুসারে উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ। মূল্যের শেষ সংখ্যা ৯ দিয়ে নির্ধারিত প্রোডাক্টের সেল বেশি হবার প্রমান পাওয়া গেছে, এমনকি যদি সেই প্রোডাক্টের মূল্য তার চেয়ে কম হয় তারপরেও ৯ দ্বারা শেষ মূল্য বেশি সুবিধা করেছে।
বিক্রয়মূল্য – “৬০ ডলার, কিন্তু এখন মাত্র ৪৫ ডলার!” এমন মূল্য নির্ধারণ সংখ্যার পারফর্মেন্স ভালো দেখা গেছে। কিন্তু যখন ৪৫ এর পরিবর্তে সেই মূল্য ৪৯ করা হয়েছে তখন দেখা গেছে কাস্টমার সেটি আরো বেশি গ্রহন করেছে।
এই মডেল পুরনো, কিন্তু ইফেক্টিভ। যদি বলেন কেন এমন হয়েছে, আসলে সবকিছুর ব্যাখ্যা পরীক্ষা দ্বারা করা সম্ভব না।
৬) সময়ের মূল্য
সান ফ্রান্সিসকোতে কোন এক শনিবার বিকেলে, মোগিলনার এবং তার কো রাইটারের কিছু ছেলেরা একটি পার্কে পথের ধারে লেবু পান বিক্রি করতে বেরিয়েছিল।
মোগিলনার ছেলেদের বলে, তারা লেবু পানি সেল করার সময় তিনটি শ্লোগান ১০ মিনিট পর পর পর্যায় ক্রমে বলতে থাকবে আর লেবু পানি সেল করবে।
শ্লোগান তিনটি হচ্ছে,
- একটু সময় ব্যয় করুন এবং সি অ্যান্ড ডি’র লেবু পানি পান করুন
- একটু টাকা খরচ করুন, এবং সি অ্যান্ড ডি’র লেবু পানি পান করুন
- সি অ্যান্ড ডি’র লেবু পান করুন
লেবু পানি পান করার জন্য কাস্টমার ১ থেকে ৩ ডলার মূল্যের মধ্যে যে কোন এমাউন্ট পরিশোধ করতে পারবে।
দিনশেষে সেই পথ ধরে ৩৯১ জন হেঁটে যায় যার মধ্যে ৪০ জন লেবু পানি পান করে। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, “একটু সময় ব্যয় করুন এবং সি অ্যান্ড ডি’র লেবু পানি পান করুন” এই মেসেজে সবচেয়ে বেশি মানুষ সাড়া দিয়ে লেবু পানি পান করে, তারা বেশি টাকা দেয় ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।
এই গবেষণা আমাদের সামনে একটি দারুন বিষয় নিয়ে আসে, আপনি যদি প্রোডাক্ট ও সার্ভিসকে সময়ের সাথে রিলেট করে মূল্য নির্ধারণে সক্ষম হন, তবে কাস্টমার সেটি কেনে, তার জন্য বেশি টাকা খরচ করে ও সন্তুষ্টি অর্জন করে।
আর এই কারনের বিশ্বখ্যাত রোলেক্স ঘড়ির বিজ্ঞাপনগুলো টাইম রিলেটেড থিম ব্যবহার করে নির্মিত। এবং আরো একটি বিষয় হচ্ছে “পারফেকশন ডিম্যান্ড প্রাইস” আর এই কারনে লাক্সারি প্রোডাক্ট কেনার জন্য মানুষ দামাদামি করে না।
যেমনঃ ম্যাকবুক, রোলস রয়েলস সবসময় সেরা প্রোডাক্ট তৈরি করে, আর কাস্টমার সেটির জন্য উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ করতে ইচ্ছুক।
৭) প্রাইস কম্পেয়ার না করা
আপনি যখন ওষুধের দোকানে যান তখন যদি আপনাকে দোকানদার কম মূল্যে ওষুধ অফার করে এবং বলে এটি মার্কেটে সবচেয়ে সস্তা। তখন নিশ্চয় আপনি সস্তা ওষুধ কেনার ঝুঁকি নিবেন না।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় এসেছে, কখনো কখনো কাস্টমারকে অন্য সেলারের সাথে আপনার প্রোডাক্টের মূল্য তুলনা করতে বলা ঝুঁকিপূর্ণ। কারন এতে করে আপনি কাস্টমার হারাবেন। প্রোডাক্টের মূল্য তুলনা করতে বললে কাস্টমারের মনে আপনার প্রোডাক্টের কোয়ালিটি বা আপনার সততা নিয়ে প্রশ্ন জাগতে পারে।
৮) দৃষ্টিভঙ্গি
অর্থনীতিবিদ রিচার্ড থ্যালার কয়েক বছর আগে এটি পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, কাস্টমার বুডউইজারের জন্য ( এটি একটি আমেরিকান একটি বেস্ট সেলিং বিয়ার) উচ্চ মূল্য দিতে ইচ্ছুক, যদি তারা জানেন এটি ফাইভ স্টার হোটেল থেকে নিয়ে আনা হয়েছে, এটি সাধারন মুদি দোকান থেকে নিয়ে আসা নয়।
থ্যালার দাবি করেন যে এখানে সরল ব্যাখ্যা: ফাইভ স্টার হোটেলের অনুভূতি এটির জন্য চড়া মূল্য পরিশোধ করার প্রভাবক, যা আপনার ব্রেনকে মূল্য নিয়ে চিন্তা করতে দেয় না। আর এই একই কারনে আমরা বেভারেজের দোকানে সেল করা ২০ টাকার একই কোক একটি দামি রেস্টুরেন্টে খাবার সময় তার জন্য ৫০ টাকা খরচ করি।
এখানে সম্মানের সাথে সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গির বিষয় জড়িত ।
৯) প্রাইসের লিখিত ফরম্যাট সহজ রাখা
জার্নাল অফ কনজিউমার সাইকোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন যে, যে শব্দগুলোতে বেশি অক্ষর রয়েছে সেগুলো কাস্টমারদের কাছে অনেক বেশি মনে হয়েছে। বিষয়টি অদ্ভুত, তাই না?
যে ধরনের ফরম্যাটগুলো তারা পরীক্ষা করেছেন সেগুলো হচ্ছে,
- $১,৪৯৯.০০
- $১,৪৯৯
- $১৪৯৯
উপরের প্রথম দুটি প্রাইস কাস্টমারদের কাছে তিন নম্বরটির থেকে বেশি মনে হয়েছে, কারন সেগুলোর লিখিত ফরম্যাট তিন নম্বরের চেয়ে তুলনামুলক দীর্ঘ একই সাথে উচ্চারণে বেশি শব্দ ব্যবহার করতে হয়।
এটি শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও সত্য , প্রাইস লেখার সময় কমা বা পয়সার হিসাব পরিহার করলে সেটি ভালো পারফর্ম করে।
পরিশেষে,
একটি সেরা প্রোডাক্ট ও সার্ভিসের মূল্য নির্ধারণের পেছনে কারন থাকতে হয়। শুধু প্রোডাক্টের ভ্যালু ও প্রাইসকে এলাইন করলেই আপনার চলবে না, জানতে হবে কাস্টমারদের বিহেভিয়ার।
ঠিক কি কারনে, কি ধরনের মূল্য তারা পছন্দ করছে এবং কেন তারা বিনা শর্তে বেশি মূল্য পরিশোধ করে বা কেন কম মূল্য দেবার জন্য বারগেইন করতে চায়। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজুন।
আপনার কাস্টমারদের আচরণ বিশ্লেষণের দ্বারা ঠিক কি ধরনের প্রাইসিং স্ট্রাটেজি আপনি গ্রহন করবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করুন। মনে রাখবেন, বিশ্বসেরা ব্র্যান্ড হতে গেলে যেখানে প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ে সচেতন থাকতে হয়, সেখানে প্রোডাক্ট প্রাইসিং একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটিকে ইগনোর করার কোন অবকাশ আপনার নেই।
“The moment you make a mistake in pricing, you’re eating into your reputation or your profits.” – Katharine Paine
আরো পড়ুনঃ
ফেসবুক অ্যাড স্ট্রাটেজিঃ অডিয়েন্সের ধরন অনুযায়ী সাজান অ্যাড ক্যাম্পেইন স্ট্রাকচার
সবার আগে মন্তব্য করুন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন
মন্তব্য করতে হলে আপনাকে লগ ইন করতে হবে।