ফেসবুক অ্যাড রিটার্গেটিংবা Retargeting এর উদ্দেশ্য কী এবং কিভাবে করে

ফেসবুক অ্যাড রিটার্গেটিংবা Retargeting এর উদ্দেশ্য কী এবং কিভাবে করে
শেয়ার করুন

রিটার্গেটিং অ্যাড কী?

আগের ক্রেতাকে বা ভিজিটরদের আবার টার্গেট করাই রিটার্গেটিং। retargeting এর উদ্দেশ্য হল আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে যারা সচেতন, তাদের টার্গেট করে বিক্রি বাড়ানো। রিটার্গেটিং ডিজিটাল চ্যানেল গুলো ব্যবহার করে কুকি বেজ টেকনোলজির মাধ্যমে করা হয়।

রিটার্গেটিং অ্যাড কৌশল ব্যবহার করে কীভাবে ফেসবুক মার্কেটিং কম খরচে বেশি সেল করবেন?  আমরা আপনাকে সেই সম্পর্কে জানাতে চলেছি।

রিটার্গেটিং বা retargeting এর উদ্দেশ্য কী?

একটি সমীক্ষা অনুসারে, ওয়ার্ম বা সচেতন পুরনো অডিয়েন্স, কোল্ড বা নতুন অডিয়েন্সদের তুলনায় ৭০% বেশি কনভার্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইকমার্স বিজনেসে বেশি পরিমানে ROI পাওয়াই রিটার্গেটিং বা retargeting এর উদ্দেশ্য।

ফেসবুক রিটার্গেটিং অ্যাড আপনার বিজনেসের সেই সকল অডিয়েন্সদের জন্য যারা আপনার ব্র্যান্ডের সাথে এঙ্গেজড আছেন। তবে এখনও তারা কেনাকাটা সম্পন্ন করেন নি।  এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে ফেসবুক রিটার্গেটিং অ্যাড আপনার বিজনেসের সাথে ইতিমধ্যে এঙ্গেজ থাকা সঠিক অডিয়েন্সদের (ওয়ার্ম অডিয়েন্স) কাছে রিচ করার জন্য অন্যতম শক্তিশালী অ্যাড কৌশল। 

ফেসবুক রিটার্গেটিং বা retargeting কীভাবে কাজ করে?

ফেসবুক রিটার্গেটিং আপনাকে অতীতে ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজের অডিয়েন্সদের কাছে পুনরায় রিচ করতে সহায়তা করে। 

উদাহরণস্বরূপ, একজন কাস্টমার অনলাইনে গিফট আইটেম খোঁজ করছে। সে গুগল বা অন্য সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে আপনার ই কমার্স ওয়েবসাইটে ল্যান্ড করলো। কিন্তু কিছুই না কিনে ওয়েবসাইট ছেড়ে চলে গেল। এখন, আপনি ঠিক করলেন যে সকল কাস্টমার কেনাকাটা সম্পন্ন না করে চলে গেছে তাদের পুনরায় টার্গেট করে অ্যাড দিবেন।

এ জন্য আপনি একটি কাস্টম অডিয়েন্স তৈরি করে রিটার্গেটিং অ্যাড রান করতে হবে। তাহলে, সেই কাস্টমার যখন ফেসবুকে একটিভ থাকবে তখন সে আপানর ই কমার্স ব্র্যান্ড এর অ্যাড দেখতে পাবে। 

কেন ফেসবুক রিটার্গেটিং অ্যাড করবো, এর গুরুত্ব কী?

বিজনেসে সেল নিয়ে আসতে নতুন নতুন অডিয়েন্সদের কাছে পৌঁছনোর পাশাপাশি, পুরনো অডিয়েন্সদের কাছে আপনার সেলস ম্যাসেজ পৌঁছে দেয়া বেশি জরুরি। কারন পরিক্ষিত ভাবে তাদের ROI অনেক বেশি। 

আপনি যদি তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসতে মার্কেটিং কৌশলে বিনিয়োগ করেন, তবে দিগুন বা তার বেশি সেল করতে পারবেন।

চলুন কিছু পরিসংখ্যান দেখি, 

  • রিটার্গেটিং অ্যাড শপিং কার্ট ত্যাগ করার পরিমান ৬.৫% কমিয়ে আনে
  • ৬৮% মার্কেটিং এজেন্সিগুলো তাদের মার্কেটিং প্ল্যানে রিটার্গেটিং অ্যাড এর জন্য বাজেট রাখেন
  • এই অ্যাড কৌশল অন্য সকল অ্যাড কৌশলের চেয়ে ১০৪৬% কার্যকরী বলে প্রমানিত

রিটার্গেটিং অডিয়েন্স বিল্ড-আপ

দুই ধরনের সোর্স ব্যবহার করে এই রিটার্গেটিং অডিয়েন্স বিল্ড-আপ করা যায়। 

এক, নিজস্ব সোর্স। যেমনঃ ওয়েবসাইট, অ্যাপ এক্টিভিটি, কাস্টমার লিস্ট এবং অফলাইন এক্টিভিটি

দুই, ফেসবুক সোর্স যেমনঃ ভিডিও, ইনস্টাগ্রাম বিজনেস প্রোফাইল, লিড ফরম, ইভেন্ট, ইনস্ট্যান্ট এক্সপিরিয়েন্স, ফেসবুক পেজ।

নিজস্ব সোর্স

অ্যাপ এক্টিভিটিঃ এটি অনেকটাই ওয়েবসাইট ইভেন্টগুলোর মত। যেখানে কাস্টমারদের নির্দিষ্ট এক্টিভিটিগুলোর উপর নির্ভর করে রিটার্গেটিং করতে পারবেন। 

কাস্টমার লিস্টঃ আপনার কাছে থাকা কাস্টমারদের ডেটা, যেমন ইমেল বা ফোন নম্বর ব্যবহার করে অডিয়েন্সদের রিটার্গেটিং করতে পারবেন। 

অফলাইন এক্টিভিটিঃ অনলাইনের বাইরে যে সকল কাস্টমার আপনার বিজনেসের সাথে ফোনকল বা ফিজিক্যাল স্টোরে এসে কেনাকাটা করেছে তাদের নিয়ে কাস্টোম অডিয়েন্স তৈরি করতে পারবেন। 

ফেসবুক সোর্স গুলো হচ্ছে, 

ভিডিওঃ নির্দিষ্ট কোন ভিডিওতে এঙ্গেজ অডিয়েন্সদের ভিউের শতকরা অনুপাতে বা সময়ের উপর নির্ভর করে   রিটার্গেটিং অ্যাড পরিচালনা করতে পারবেন। 

ইনস্টাগ্রাম বিজনেস প্রোফাইলঃ ইনস্টাগ্রাম বিজনেস প্রোফাইলের সাথে এঙ্গেজ কাস্টমারদের আচরণের উপর নির্ভর করে তাদের রিটার্গেট করতে পারবেন।

লিড ফরমঃ কেউ যদি লিড ফরম পূরণ করে সাবমিট না করেন অথবা কেউ যদি পূরণ করে সাবমিট করে থাকেন তাদের সবাইকে রিটার্গেট করা যায়।

ইভেন্টঃআপনার ফেসবুক ইভেন্টগুলোর সাথে যে সকল কাস্টমার এঙ্গেজ হয়েছিলো তাদের প্রতিক্রিয়াগুলোর উপর নির্ভর করা রিটার্গেটিং অ্যাড দিতে পারবেন। 

ফেসবুক পেজঃ ফেসবুক পেজের সাথে এঙ্গেজ কাস্টমারদের এক্টিভিটি গুলোর উপর নির্ভর করে তাদের রিটার্গেটিং করতে পারবেন। 

এই সোর্সগুলো থেকে আপনি প্রয়োজন অনুসারে কাস্টম অডিয়েন্স তৈরি করে নিবেন।

retargeting এর উদ্দেশ্যে কাস্টম অডিয়েন্স সেট করার নিয়ম

  1. আপনার এড ম্যানেজারের অডিয়েন্স অপশনে যাবেন। 
  2. সেখান থেকে ক্রিয়েট অডিয়েন্সের ক্লিক করবেন এবং কাস্টম অডিয়েন্স সিলেক্ট করবেন।
  3. এবার আপনাকে সোর্স সিলেক্ট করতে বলা হবে।
  4. এবারে আপনি একটি সোর্স সিলেক্ট করে দিলে রুলস সেকশন আসবে, সেখানে আপনি কি ধরনের ট্রাফিক ফিল্টার করতে চান সে রুলস সেট করে দিবেন। 
  5. ধরুন, আপনি চাচ্ছেন বিগত ৩০ দিনের সকল ওয়েবসাইট ভিজিটর তাহলে আপনি সেই রুলস সেট করবেন।
  6. এরপর আপনাকে বলা হবে এই অডিয়েন্স গ্রুপটি ইনক্লুড করবেন নাকি এক্সক্লুড করবেন। আপনি অডিয়েন্সদের জন্য  ভিন্ন পাঁচটি রুল সেট করতে পারবেন। 
  7. এখন আপনার অডিয়েন্স নাম সিলেক্ট করতে হবে।

 

  • এরপরে ক্রিয়েট অডিয়েন্স ক্লিক করতে হবে।

    রিটার্গেটিং কারার উদ্দেশ্যে ফেসবুক কাস্টম অডিএন্স তৈরি করার প্যনেল
    রিটার্গেটিং উদ্দেশ্যে ফেসবুক কাস্টম অডিএন্স

আপনি যখন অডিয়েন্স ক্রিয়েট করা শেষ করবেন তখন আপনাকে এড তৈরি করতে বলা হবে।

এখন আপনার একটি অডিয়েন্স ক্রিয়েট হয়ে গেছে। এখন সেই অডিয়েন্স গ্রুপ কীভাবে ব্যবহার করবেন? 

ধরুন আপনি চাচ্ছেন আপনি একটি কাস্টম অডিয়েন্স গ্রুপ তৈরি করতে যারা ব্লগিং এর প্রতি ইন্টারেস্ট রাখে। আপনি ইতিমধ্যে আলোচনা থেকে জেনেছেন, কীভাবে অডিয়েন্স কন্টেন্টের সাথে এঙ্গেজ হয়। 

এবার রুল সেট করুন ঠিক কতদিন পর্যন্ত অডিয়েন্স আপনি রিটেন করতে চান। তাহলে ফেসবুক ঠিক সেই সময়ের কাস্টমারদের এঙ্গেজমেন্ট বিহেভিয়ার অনুযায়ী অ্যাড শো করবে।

 

 

কাস্টম অডিয়েন্স সেগমেন্ট তৈরি করতে কন্টেন্টের ব্যবহার

আপনি দুটি ভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করুন এবং কনটেন্টগুলো প্রমোট করুন। এরপর খেয়াল করুন সবগুলো ট্রাফিক সোর্স থেকে আগত ট্রাফিক গুলো কোন কনটেন্টের সাথে কীভাবে এঙ্গেজ হচ্ছে।

রিটার্গেটিং করতে ফেসবুক কাস্টম সেগমেন্ট তৈরি করার প্যানেল
রিটার্গেটিং করতে ফেসবুক কাস্টম সেগমেন্ট

কন্টেন্টের সাথে ট্রাফিকের এঙ্গেজ হওয়ার ধরনের উপর ভাগ করে তাদেরকে ভিন্ন সেগমেন্টে আলাদা করে ফেলুন।

পরবর্তী সময় যখন অ্যাড রান করবেন তখন যে অডিয়েন্স গ্রুপ যে কনটেন্টটি পছন্দ করেছিল সেই ধরনের রিলেটেড কন্টেন্ট তাদের দেখান।

এতে আপনার বুঝতে সুবিধা হবে ঠিক কোন অডিয়েন্স গ্রুপ কোন ধরনের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের জন্য উপযুক্ত।

ধরুন আপনি দুটি অ্যাড ক্রিয়েটিভ তৈরি করেছেন, একটি কপি শাড়ি নিয়ে অপরটি সালোয়ার স্যুট। এখন এই কপি প্রোমট করুন। এবার দেখবেন অডিয়েন্স কোন অ্যাড কপিটির সাথে এঙ্গেজ হচ্ছে। এরপর তারা যে অ্যাড কপি পছন্দ করছে সেই অ্যাডের জন্য একটি কাস্টম অডিয়েন্স তৈরি করুন। অর্থাৎ যারা শাড়ির অ্যাড পছন্দ করছে তাদের নিয়ে আলাদা একটি কাস্টম অডিয়েন্স তৈরি করবেন।      

একটি রিটার্গেটিং অ্যাডের উদাহরণ  

Abc ব্র্যান্ড ঈদকে লক্ষ্য করে কিছু সময় হাতে নিয়ে নতুন ড্রেস কালেকশন নিয়ে হাজির হলো। তারা বেশ কিছু ইন্টারেস্ট টার্গেট করে অডিয়েন্স গ্রুপে করে অ্যাড দেখানো শুরু করলো।

কিছুদিন যেতে তারা খেয়াল করলো তার সেই ড্রেসগুলো মানুষ দেখছে, লাইক করছে, দাম জিজ্ঞাসা করছে। এই সময় Abc ব্র্যান্ড এর খুব কম পরিমানে সেল হচ্ছিলো।

ঈদ প্রায় নিকটে তারা মোটামুটি সেল করেছে কিন্তু এখনো তাদের প্রফিট আসে নি। তারা পরিকল্পনা করলো একটি আকর্ষণীয় ডিস্কাউন্ট অফার করে বেশ বড় সেল নিয়ে আসবে।   

তারা একটি রিটার্গেটিং অ্যাড ক্যাম্পেইন পরিকল্পনা করলো যেখানে কেবলমাত্র বিগত ৩০ দিনের সকল ফেসবুক ভিজিটরকে টার্গেট করা হলো।

অন্য একটি অ্যাড সেটে তারা বিগত ৩০ দিনের ওয়েবসাইটে যারা শপিং কার্ট ত্যাগ করেছে তাদের টার্গেট করে অ্যাড রান করা হলো। 

এবার অডিয়েন্স দেখল তাদের পছন্দের ড্রেসে ডিস্কাউন্ট দেয়া হচ্ছে তারা সেই অফার মিস করতে চাইলোনা। এবং Abc ব্র্যান্ড সেই ক্যাম্পেইন থেকে প্রচুর সেল পেলো। 

( খেয়াল করবেনঃ পূর্বে একই অডিয়েন্স ড্রেসগুলো দেখেছে কিন্তু পারচেস করেনি।কিন্তু পরের বার যখন তারা ডিস্কাউন্ট পেলো তখন কেনাকাটা সম্পন্ন করলো। এখন যদি Abc ব্র্যান্ড সেই এঙ্গেজ কাস্টমারদের টার্গেট না করতো তবে একেবারে নতুন একজন কাস্টমার আপনার অফার পেলেই কিনতো না। কারন তারা আপনার ব্র্যান্ডকে জানে না।)  

এভাবেই ফেসবুক রিটার্গেটিং বা retargeting এর উদ্দেশ্য সফল হলে, একটি ব্যবসার বিক্রি বৃদ্ধি পায়। 

রিটার্গেটিং করে ফেসবুক অ্যাড হতে সর্বোত্তম ফলাফল আনতে হলে আপানার ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপে ফেসবুক পিক্সেল সেটআপ করা জরুরি।

ফেসবুক পিক্সেল সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানেঃ ফেসবুক পিক্সেল এর কাজ কী এবং কিভাবে সেটআপ করে?

পরিশেষে

এখন আপনি জেনে গেছেন কিভাবে ফেসবুক রিটার্গেটিং অ্যাড রান করতে হয় এবং retargeting এর উদ্দেশ্য কি। আমরা আপনাকে কার্যকর ই-কমার্স কিভাবে করতে হয় তার পরামর্শ দিই। আপনি যদি ই-কমার্স এক্সপার্ট হতে চান, তবে আমাদের সামাজিক মাধ্যম গুলতে লাইক ফলো কমেন্ট করে সাথে থাকুন। ফেসবুক ইন্টারফেস খুব ঘন-ঘন পরিবর্তন হয়, আপনার যদি কোন পরিবর্তন দেখতে পান অথবা retargeting এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন থকে তাহলে কমেন্ট করুন। 

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

সবার আগে মন্তব্য করুন

আপনার মূল্যবান মতামত দিন