সহজ ভাষায় বলতে হলে, সার্ভার হলো এমন একধরনের কম্পিউটার বা সিস্টেম, যা অন্য ডিভাইস বা ক্লায়েন্টের অনুরোধ গ্রহণ করে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে। এটি ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীদের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
উদাহরন হিসেবে ধরুন আপনি রেস্টুরেন্টে গিয়েছেন, সেখানে গিয়ে ওয়েটারকে খাবার অর্ডার দিলেন আর তিনি কিচেন থেকে আপনার অর্ডারকৃত খাবারটি নিয়ে আসেন। সার্ভারও এখানে সেই ওয়েটারের মতোই কাজ করে। আপনি যখন ইন্টারনেটে কোনো ব্রাউজারে ঢুকে কোনো কিছু সার্চ করেন তখন মূলত আপনি সার্ভারকে রিকোয়েস্ট পাঠান, এরপর সার্ভারই আপনার তথ্যগুলোকে বের করে ফলাফল দেখায়।
এই ব্লগে আমরা সার্ভার কী, কীভাবে কাজ করে ও এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করবো।
সার্ভার কি?
সার্ভার হল এমন একটি কম্পিউটার বা সফটওয়্যার সিস্টেম, যা অন্য কম্পিউটার বা ব্যবহারকারীর (যাদের ক্লায়েন্ট বলা হয়) অনুরোধ গ্রহণ করে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য বা পরিষেবা সরবরাহ করে।
মনে করুন, আপনি মোবাইলে গুগল ওপেন করে সেখানে “বাংলাদেশের আবহাওয়া” সার্চ করলেন। এই সার্চের মাধ্যমে গুগলের সার্ভারে আপনি একটি অনুরোধ পাঠালেন, এবার গুগল সার্ভার সেই অনুরোধ বুঝে আপনার জন্য প্রাসঙ্গিক আবহাওয়ার তথ্য ফলাফলে দেখালো। এখানে আপনি হচ্ছেন ক্লায়েন্ট, আর গুগল হলো সার্ভার।
ঠিক একইভাবে, যখন আপনি ফেসবুক ব্যবহার করেন, ইউটিউবে ভিডিও দেখেন, বা কোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করেন, তখন আপনি প্রতিবারই কোনো না কোনো সার্ভারে রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছেন, আর সেই সার্ভার আপনার ডিভাইসে প্রয়োজনীয় তথ্য ফিরিয়ে দিচ্ছে।
সার্ভারের বিবর্তন ও আধুনিক রূপ
প্রথম দিকে সার্ভার ছিলো দামি ও বড় আকারের মেইন ফ্রেম কম্পিউটার। একাধিক ব্যবহারকারী তখন একটি সার্ভার শেয়ার করে কাজ করতো। সময়ের সাথে সাথে এখন সার্ভার হয়ে উঠেছে আরো শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য ও ছোট।
১৯৯০ এর দশকে ওয়েব সার্ভার জনপ্রিয়তা পায়, ২০০০ এর দশকে ক্লাউড সার্ভার, ভার্চুয়াল সার্ভার আসে এবং এখন সার্ভার ক্লাউড প্রযুক্তির মাধ্যমে স্কেলেবল, সাশ্রয়ী এবং অটোমেটেড হয়েছে। AWS, Google Cloud, Azure এখন হাজার হাজার ওয়েবসাইট, অ্যাপ এবং ডেটা হোস্ট করছে।
ওয়েব সার্ভার কী?
ওয়েব সার্ভার হলো এমন এক সার্ভার যা ওয়েবসাইটের তথ্য (Html, CSS, ছবি, ভিডিও) সংরক্ষন করে এবং ইউজারের অনুরোধে তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে শো করে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন গুগলে “দেশিকমার্স” লিখে সার্চ করেন তখন আপনার ব্রাউজার ওয়েব সার্ভারে একটি অনুরোধ পাঠায়, এবং সেই সার্ভার থেকে দেশিকমার্সের হোমপেজ আপনার স্ক্রিনে ভেসে উঠে।
জনপ্রিয় কিছু ওয়েব সার্ভার সফটওয়্যার হলো:
- Apache HTTP Server
- Nginx
- LiteSpeed
- Microsoft IIS
সার্ভার শব্দের বাংলা অর্থ হলো পরিষেবাদাতা, সহজ ভাবে বললে সেবা প্রদানকারী কম্পিউটার। এটি এমন একটি কম্পিউটার বা সফটওয়্যার সিস্টেম যা অন্য কম্পিউটার বা ব্যবহারকারীর (ক্লায়েন্ট) অনুরোধ গ্রহণ করে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য, ফাইল বা সেবা সরবরাহ করে।
কে ওয়েব সার্ভার উদ্ভাবন করে?
সার্ভার প্রযুক্তির সূচনা হয় মূলত ১৯৬০–৭০ এর দশকে, যখন ইন্টারনেটের প্রাথমিক ধারণা (ARPANET) তৈরি হচ্ছিল। তবে ওয়েব সার্ভারের ধারণা আসে ১৯৯০ সালে যখন টিম বার্নার্স লী প্রথম HTTP প্রোটোকল ব্যবহার করে বিশ্বের প্রথম ওয়েব সার্ভার নির্মাণ করেন। এটি ছিল NeXT Computer নামের একটি মেশিন যা CERN-এ (সুইজারল্যান্ড) স্থাপিত ছিল।
সার্ভার এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব
বর্তমানে ডিজিটাল যুগে আমরা অসংখ্য অনলাইন সার্ভিস ব্যবহার করছি – সোশ্যাল মিডিয়া, ওয়েবসাইট, ইমেইল, ক্লাউড স্টোরেজ, অনলাইন গেম, ভিডিও স্ট্রিমিং ইত্যাদি। প্রতিটি সার্ভিসের পেছনে কাজ করে , এক বা একাধিক সার্ভার।
আপনি যখন কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেন, কোনো ইমেইল চেক করেন কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া ইউজ করেন এই সবকিছুতেই মূলত আপনি পেছনে থাকা সার্ভারের সাথে যোগাযোগ করছেন। নিচে সার্ভারের কিছু প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হলো-
- ইন্টার্নাল ও এক্সটার্নাল কমিউনিকেশনে ভূমিকা পালন করে
- ডাটা সংরক্ষন, সংগ্রহ ও পুনরুদ্ধারে সহায়তা করা
- বিভিন্ন ইউজারকে একইসাথে একাধিক পরিষেবা নিতে দেয় (মাল্টি-ইউজার সাপোর্ট
- ওয়েবসাইট, অ্যাপ, ইমেইল, ই-কমার্স ইত্যাদির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে
- অটোমেশন ও সফটওয়্যার হোস্টিংয়ে ব্যবহার হয় (যেমন, গিট সার্ভার, API সার্ভার)
- ক্লাউডে ব্যক্তিগত ডেটা সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করতে ভূমিকা পালন করে
- ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়াতে যুক্ত থাকতে সার্ভার কাজ করে
কম্পিউটার বিজ্ঞানে সার্ভারের ভূমিকা
কম্পিউটার বিজ্ঞানে সার্ভার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। এটি ডিস্ট্রিবিউটেড সিস্টেম, ক্লায়েন্ট-সার্ভার আর্কিটেকচার, নেটওয়ার্কিং, সিকিউরিটি, ক্লাউড কম্পিউটিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে-
- ডেটাবেইস সার্ভার ব্যবহৃত হয় বিশাল ডেটা পরিচালনায়।
- ফাইল সার্ভার ডেটা ভাগাভাগিতে সাহায্য করে।
- অ্যাপ সার্ভার ক্লায়েন্টের সঙ্গে ব্যাকএন্ড যোগাযোগ করে।
- সিকিউরিটি সার্ভার ইউজার অথেনটিকেশন ও তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করে।
এই প্রযুক্তি ছাড়া আধুনিক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ও আইটি সিস্টেম কল্পনাই করা যায় না।
ওয়েব সার্ভার কিভাবে কাজ করে?
আগে বলেছিলাম, সার্ভার হচ্ছে এমন একটি কম্পিউটার বা সফটওয়্যার সিস্টেম, যা অন্য কম্পিউটার বা ক্লায়েন্টকে নির্দিষ্ট তথ্য বা পরিষেবা সরবরাহ করে।
এবার ধরুন, আপনি যখন কোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করেন, তখন যে সার্ভার আপনার ব্রাউজারে সেই ওয়েবসাইটের পেজ পাঠায়, সেটিই হচ্ছে ওয়েব সার্ভার।
ওয়েব সার্ভারের কাজ ও কার্যপ্রণালী
১. Client Request গ্রহণ: আপনি যখন ব্রাউজারে www.deshicommerce.com টাইপ করেন, তখন আপনার কম্পিউটার একটি HTTP অনুরোধ পাঠায় সার্ভারের দিকে।
২. ডোমেইন রেজোল্ভ করে IP-তে পরিণত হয়: ডোমেইনটি DNS এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট IP address- এ রূপান্তরিত যেটা মূলত সেই ওয়েবসাইটের সার্ভারের ঠিকানা।
৩. সার্ভার অনুরোধ গ্রহণ করে: সার্ভারটি এবার আপনার রিকুয়েস্ট দেখে আপনি আসলে কী চাচ্ছেন – হোমপেজ, ছবি, কনটেন্ট?
৪. ডেটাবেজ/ফাইল থেকে ডেটা নেয়: যদি আপনার রিকুয়েস্ট পাঠানো ডেটা ডাটাবেজে থাকে, তাহলে সার্ভার ডাটাবেজ থেকে ডেটা নেয়। যদি শুধু HTML ফাইল হয়, তবে তা সরাসরি পাঠিয়ে দেয়।
৫. Response পাঠায়: সবশেষে, সার্ভার সেই তথ্য বা পেইজটি ব্রাউজারে পাঠিয়ে দেয়, আর আপনি দেশিকমার্সের ওয়েবসাইটটি দেখতে পান।
উদাহরণ দিয়ে বোঝা যাক (গুগল সার্চের মাধ্যমে)
আপনাদের আরো সহজভাবে যদি বোঝাতে চাই, তাহলে আমরা ওয়েব সার্ভারের কাজকে কয়েকটা ধাপে ভাগ করতে পারি –
১। আপনি প্রথমে গুগলে সার্চ করলেন “দেশিকমার্স ব্লগ” লিখে
২। এবার আপনার অনুরোধ যায় গুগলের ওয়েব সার্ভারে
৩। গুগলের সার্ভার এই শব্দগুলো বিশ্লেষণ করে
৪। রিলেভেন্ট ডেটা ডাটাবেজ সার্ভার থেকে বের করে
৫। তারপর সাজিয়ে আপনার সামনে রেজাল্ট দেখায়
এই পুরো প্রক্রিয়ায় একাধিক সার্ভার কাজ করে—
যেমন:
- ওয়েব সার্ভার (অনুরোধ গ্রহণ ও উত্তর দেয়)
- অ্যাপ্লিকেশন সার্ভার (প্রসেস করে)
- ডাটাবেজ সার্ভার (তথ্য সংগ্রহ করে)
একটি ডেটা সেন্টারে সার্ভারগুলো কিভাবে থাকে?
- সার্ভারগুলো থাকে র্যাক (rack) নামক ধাতব কাঠামোর মধ্যে, একের পর এক সাজানো অবস্থায়।
- প্রতিটি র্যাকে অনেকগুলো ব্লেড সার্ভার থাকতে পারে, যেগুলো দেখতে ছোট এবং পাতলা।
- রুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, যেন সার্ভার গরম না হয়ে পড়ে।
- সাধারণত আলাদা আলাদা সার্ভার থাকে – ওয়েব সার্ভার, ফাইল সার্ভার, ডাটাবেজ সার্ভার ইত্যাদি।
সার্ভারের ধরণ অনুযায়ী মূলত সার্ভারের কাজে ভিন্নতা দেখা যায়, যেমন ওয়েব ব্রাউজারের কাজ হলো ওয়েবসাইটের পেইজ ব্রাউজারে পাঠানো, ডাটাবেজ সার্ভারের কাজ হলো ডেটা সংরক্ষণ ও ডেটা রিট্রিভ করা, ফাইল সার্ভারের কাজ হলো ফাইল শেয়ার, ডাউনলোড ও সংরক্ষণ করা। এরকম প্রতিটা সার্ভারের আলাদা আলাদা কাজ রয়েছে।
সার্ভার কত প্রকার ও কী কী?
সার্ভারের কার্যকারিতা ভেদে সার্ভারের অনেক প্রকার রয়েছে, এখন আমরা সেই প্রকারগুলো সম্পর্কেই জানবো –
- ওয়েব সার্ভার (Web Server) – ওয়েবসাইটের HTML, CSS, JS ফাইল সার্ভ করে। উদাহরণ: Apache, Nginx
- ডাটাবেজ সার্ভার (Database Server) – ডেটা সংরক্ষন, সরবরাহ করে। উদাহরণ: MySQL, PostgreSQL, MongoDB
- ফাইল সার্ভার (File Server) – ছবি, ভিডিও, ফাইল ইত্যাদি শেয়ার ও ম্যানেজ করে। উদাহরণ: Windows File Server, Samba
- মেইল সার্ভার (Mail Server) – ইমেইল পাঠানো, গ্রহণ ও সংরক্ষণ করে। উদাহরণ: Microsoft Exchange, Postfix
- অ্যাপ্লিকেশন সার্ভার (Application Server) – এপ্লিকেশন লজিক বা ব্যাকেন্ড প্রসেস পরচালনা করে। উদাহরণ: Node.js, Tomcat, Django
- DNS সার্ভার (Domain Name Server) – ডোমেইনকে আইপি ঠিকানায় রূপান্তর করে। উদাহরণ: BIND, Google DNS (8.8.8.8)
- প্রক্সি সার্ভার (Proxy Server) – ক্লায়েন্টের ও মূল সার্ভারের মাঝে মাঝখানের স্তর যা নিরাপত্তা ও লোড ব্যালেন্সিংয়ের জন্য ব্যবহৃত।
- ভিপিএন সার্ভার (VPN Server) – নিরাপদে ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সুবিধা দেয়। লোকেশন বা আইপি হাইড করে।
- DHCP সার্ভার (Dynamic Host Configuration Protocol Server) – নেটওয়ার্কে স্বয়ংক্রিয়ভাবে IP এড্রেস সরবরাহ করে। উদাহরণ: Windows DHCP Server, ISC DHCP
- ভয়েচ সার্ভার (VoIP Server) – ভয়েস কল ট্রান্সমিশনে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: Asterisk, FreeSWITCH
- গেম সার্ভার (Game Server) – মাল্টিপ্লেয়ার গেইম হোস্টিং ও রিয়েল টাইম কমিউনিকেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: Minecraft Server, Steam Dedicated Server
- প্রিন্ট সার্ভার (Print Server) – একাধিক ব্যবহারকারীকে একটি বা একাধিক প্রিন্টার ব্যবহারে সাহায্য করে।
- ক্লাউড সার্ভার (Cloud Server) – ভার্চুয়ালাইজড, ইন্টারনেট-ভিত্তিক সার্ভার — AWS, Azure, GCP-এ পাওয়া যায়। উদাহরণ: Amazon EC2, Google Compute Engine
নিচে প্রতিটি সার্ভার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
১. ওয়েব সার্ভার (Web Server)
ওয়েব সার্ভার হলো এমন একটি সার্ভার যা ইন্টারনেট বা লোকাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট ইউজারদের ব্রাউজারে শো করে। এটি মূলত ক্লায়েন্ট (যেমন: ব্রাউজার) থেকে আসা অনুরোধ (HTTP/HTTPS) গ্রহণ করে এবং সংশ্লিষ্ট ওয়েব পেজ, ছবি, ভিডিও বা অন্যান্য ফাইল পাঠিয়ে দেয়।
ওয়েব সার্ভারের প্রকারভেদ
সার্ভারের মতো ওয়েব সার্ভারকেও কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। নীচে ওয়েব সার্ভারের কয়েকটি প্রধান প্রকার তুলে ধরা হলো –
- Apache HTTP Server
- Nginx Web Server
- Microsoft Internet Information Services (IIS)
- LiteSpeed Web Server
- Google Web Server (GWS)
- Node.js HTTP Server
- Tomcat Server
জনপ্রিয় ওয়েব সার্ভারগুলোর মধ্যে রয়েছে: Apache, Nginx, LiteSpeed, এবং Microsoft IIS।
২. ডাটাবেজ সার্ভার (Database server)
ডাটাবেজ সার্ভার (Database Server) হলো একটি বিশেষ ধরনের সার্ভার যা ডেটা সংরক্ষণ, পরিচালনা, এবং রক্ষা করার কাজ করে। ওয়েবসাইট সফটওয়্যার, মোবাইল অ্যাপ – সবকিছুর ডেটা ম্যানেজমেন্টে এই সার্ভার ভূমিকা রাখে। জনপ্রিয় কিছু ডাটাবেজ সার্ভার হলো – MySQL, PostgreSQL, Microsoft SQL Server, MongoDB, Oracle Database
৩. মেইল সার্ভার (Mail Server)
ইমেইল সার্ভার হলো এমন একটি সার্ভার যা ইমেইল পাঠানো, সংরক্ষন, গ্রহণ সহ ইমেইলের যাবতীয় কাজের জন্য ব্যাকএন্ডে কাজ করে। ইমেইল সার্ভারের কারণে ব্যবহারকারীগণ দ্রুত ও নিরাপদে ইমেইল আদান প্রদান করতে পারে। যখন আপনি একটি মেইল পাঠান, এটি প্রথমে আপনার আউটগোয়িং মেইল সার্ভারে যায় এবং সেখান থেকে রিসিভারের ইনকামিং সার্ভারে পৌঁছে। এরপর ইউজার তার ইনবক্সে মেইলটি দেখতে পায়।
জনপ্রিয় কিছু ইমেইল সার্ভিস হলো –
- Gmail (Google)
- Yahoo Mail
- Outlook (Microsoft)
- ProtonMail
- Zoho Mail
৪. এফটিপি (FTP Server)
FTP Server (File Transfer Protocol Server) হলো এমন একটি সার্ভার যা ইন্টারনেট বা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ফাইল আপলোড বা ডাউনলোড এর সুবিধা দেয়। এটি ক্লায়েন্ট ও সার্ভারের মধ্যে ফাইল বিনিময়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রোটোকল (FTP) অনুসরণ করে। আপনি যদি একটি ওয়েবসাইটের ফাইল হোস্টিং সার্ভারে আপলোড করতে চান, তাহলে FTP সার্ভার ব্যবহার করে সহজেই তা করতে পারবেন।
FTP server ছাড়া ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বা সার্ভার মেইনটেনেন্স অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
আপনি যদি এসব সার্ভারের বিভিন্ন ঝামেলা ছাড়া আপনার ই-কমার্স বিজনেসের জন্য ওয়েবসাইট বানাতে চান তবে মাত্র ১০ মিনিটে কোনো কোডিং ছাড়াই দেশিকমার্সের মাধ্যমে বানিয়ে ফেলতে পারেন আপনার ওয়েবসাইটটি! বিস্তারিত পাবেন এখানে
FTP Server-এর কাজ কী?
- ফাইল আপলোড করা
- ফাইল ডাউনলোড করা
- ফাইল মুছে ফেলা বা রিনেম করা
- ডিরেক্টরি তৈরি/মোছা
FTP Server সাধারণত ডেভেলপার, হোস্টিং কোম্পানি বা নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনদের কাজে লাগে যখন বড় আকারের ফাইল বা একাধিক ফাইল ম্যানেজ করতে হয়।
BDIX FTP সার্ভার কী?
BDIX FTP সার্ভার হচ্ছে এমন এক ধরনের FTP (File Transfer Protocol) সার্ভার, যা BDIX (Bangladesh Internet Exchange)-এ সংযুক্ত। এটি বাংলাদেশের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (ISP) মধ্যে একটি লোকাল নেটওয়ার্ক তৈরি করে, যার মাধ্যমে দেশের ভেতরে ডেটা দ্রুত, সহজ ও কম খরচে ট্রান্সফার করা যায়।
যখন আপনি BDIX FTP সার্ভার থেকে কোনো ফাইল ডাউনলোড করেন, তখন তা দেশের ভেতরের সার্ভার থেকে আসে, এতে করে – স্পিড অনেক বেশি হয়, ডেটা খরচ কম হয়, আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হয় না।
৫. অ্যাপ্লিকেশন সার্ভার (Application Server)
অ্যাপ্লিকেশন সার্ভার এমন একটি সার্ভার যা ব্যবহারকারীর অনুরোধ অনুযায়ী সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন পরিচালনা করে এবং ডেটাবেজ ও ইউজার ইন্টারফেসের মাঝে মধ্যস্থতা করে। এটি মূলত ওয়েব এপ, মোবাইল এপ ইত্যাদি পরিচালনায় কাজে লাগে। উদাহরণ: Java Application Server, Apache Tomcat, GlassFish ইত্যাদি।
৬. DNS সার্ভার (Domain Name Server)
DNS সার্ভার ডোমেইন নামকে আইপি এড্রেসে রূপান্তর করে এবং এটি ওয়েবসাইট ব্রাউজিং আরো সহজ ও দ্রুত করে তুলতে কাজ করে। উদাহরণ: Google DNS (8.8.8.8), Cloudflare DNS (1.1.1.1)
৭. প্রক্সি সার্ভার (Proxy Server)
প্রক্সি সার্ভার ক্লায়েন্ট মূলত ও মূল সার্ভারের মাঝখান থেকে অনুরোধ ও পাঠিয়ে দেয়। এটি ইউজারের পরিচয় গোপন রাখতে ও সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: Squid Proxy, Apache Traffic Server
৮. ভিপিএন সার্ভার (VPN Server)
ভিপিএন সার্ভার মূলত আপনার আইপি এড্রেস কে লুকিয়ে নিরাপদ ভার্চুয়াল টানেল তৈরী করে। এতে করে আপনি এক লোকেশনে থেকে অন্য লোকেশনের আইপি দিয়ে ইন্টারনেটে ব্রাউজ করতে পারেন। উদাহরণ: OpenVPN, NordVPN
৯. DHCP সার্ভার (Dynamic Host Configuration Protocol Server)
DHCP সার্ভার প্রতিটি ডিভাইসকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে IP ঠিকানা এবং নেটওয়ার্ক সেটিংস দিয়ে থাকে। এতে ম্যানুয়ালি কনফিগার করতে হয় না। উদাহরণ: Windows DHCP Server, ISC DHCP
১০. গেম সার্ভার (Game Server)
গেম সার্ভার মাল্টিপ্লেয়ার গেইম খেলায় ব্যবহারকারীদের রিয়েল টাইম তথ্য একে অপরের সাথে শেয়ার করতে ও কমিউনিকেট করতে কাজ করে। এটি ল্যাগ ফ্রি ও সিংকড গেমিং এর অভিজ্ঞতা দেয়। উদাহরণ: Minecraft Server, Steam Dedicated Server
১১. ক্লাউড সার্ভার (Cloud Server)
ক্লাউড সার্ভার ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভার্চুয়াল সার্ভার রিসোর্স সরবরাহ করে। এতে ফাইল স্টোরেজ, অ্যাপ হোস্টিং, বা AI প্রসেসিং চালানো যায়। উদাহরণ: Amazon EC2, Google Compute Engine, Microsoft Azure
সার্ভারের ম্যালফাংশন বা যান্ত্রিক ত্রুটি
সার্ভারে যান্ত্রিক ত্রুটি মানে সার্ভার ডাউন হওয়াকেই সাধারণত বোঝানো হয়। র্ভার ডাউন হওয়া মানে হলো—সার্ভারটি তার স্বাভাবিক কার্যক্রম (যেমন ওয়েবসাইট হোস্টিং, ডেটাবেজ এক্সেস, ইমেইল পাঠানো/গ্রহণ) বন্ধ করে দিয়েছে বা ব্যবহারকারীদের রেজাল্ট শো করছে না। সার্ভার ডাউন দীর্ঘমেয়াদি বা স্বল্পমেয়াদি একটি সমস্যা।
সার্ভার ডাউন হলে কী অসুবিধা হয়?
- ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করা যায় না
- ডেটাবেজে সংযোগ ব্যর্থ হয়
- ইমেইল ও ফাইল সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়
- ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ক্ষতি হয়
- গ্রাহকের আস্থা কমে যায়
- অনেক সময় এক ওয়েবসাইট দ্রুত রেসপন্স না করলে ইউজার অন্য সাইটে চলে যায়।
এরকম ওয়েবসাইট ডাউনের সমস্যা এড়াতে চাই আর আপনার ই-কমার্স ব্যবসাকে আরো অডিয়েন্সের কাছে পোঁছে দিতে দেশিকমার্সের মাধ্যমে কোনো ঝামেলা ছাড়াই তৈরী করতে পারেন ই-কমার্স ওয়েবসাইট তাও আবার কোনো কোডিং এর ঝামেলা ছাড়াই।
সার্ভার ডাউন হওয়ার প্রধান কারণসমূহ
সার্ভার বিভিন্ন কারণে ডাউন হতে পারে তবে কিছু মেজর কারণে সার্ভার সাধারণত ডাউন হয়ে থাকে –
১। হার্ডওয়্যার ত্রুটি (Hardware Failure) – সার্ভারের অংশবিশেষ যেমন হার্ডডিস্ক, র্যাম, পাওয়ার সাপ্লাই বিকল হয়ে গেলে সার্ভার ডাউন হওয়াকে বলে হার্ডওয়্যার ত্রুটি বলে। রিডান্ড্যান্সি (RAID, Backup Server), নিয়মিত হার্ডওয়্যার চেকআপ, UPS ও কুলিং ব্যবস্থা ইত্যাদির মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
২। সফটওয়্যার ত্রুটি (Software Bug/Crash) – অপারেটিং সিস্টেম বা সার্ভার সফটওয়্যারে বাগ, কনফিগারেশন সমস্যা বা কোড ত্রুটির কারণে সার্ভার ক্র্যাশ করতে পারে। এক্ষেত্রে সমাধান হলো -নিয়মিত আপডেট, নিরাপদ কনফিগারেশন, লোড টেস্টিং, লগ মনিটরিং।
৩। মানবসৃষ্ট ত্রুটি (Human Error) – ভুল কনফিগারেশন, ডেটা মুছে ফেলা, বা ভুল সার্ভার রিস্টার্ট ইত্যাদি থেকে সমস্যা হতে পারে। এ সমস্যা এড়াতে প্রতিরোধ হিসেবে Automation, Training, Role-based Access Control (RBAC) এবং Audit Logging করা যেতে পারে।
৪। নেটওয়ার্ক সমস্যা (Network Issues) – DNS ভুল, ব্যান্ডউইথ ওভারলোড, সুইচ/রাউটার ফেইল হওয়া ইত্যাদিকে নেটওয়ার্ক সমস্যা জনিত সার্ভার ডাউন বলা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সমাধান হলো Bandwidth Monitoring, Network Redundancy, CDN ব্যবহার।
৫। সাইবার অ্যাটাক (Cyber Attack) – হ্যাকাররা DDoS, র্যানসমওয়্যার, বা ইনজেকশন অ্যাটাকের মাধ্যমে সার্ভার অকার্যকর করে দিতে পারে। Firewall, IDS/IPS, রেগুলার প্যাচিং, 2FA, Cloudflare/CDN প্রটেকশন নেওয়া হলো মূল সমাধান।
কোন সার্ভারটি আপনার বাছাই করা উচিত?
সার্ভার নির্বাচনের ক্ষেত্রে আগে ঠিক করতে হবে আপনি কোন কারণে সার্ভারটি চাচ্ছেন। এরপর আপনার বাজেট, ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ও নিরাপত্তা কেমন চাচ্ছেন সব কিছুই মাথায় রাখা প্রয়োজন। যদি আপনি একটি সাধারণত ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরী করতে চান তবে শেয়ার্ড হোস্টিং বা ক্লাউড সার্ভার ব্যবহার করুন। বড় ব্যবসা বা ই-কমার্স সাইট বা হাই ট্রাফিক হলে ডেডিকেটেড সার্ভার ভালো অপশন।
এখন আপনি যদি ব্যবস্থাপনার ঝামেলা এড়াতে চান কিংবা নিরাপত্তা ঝুঁকি কমাতে চান আবার বাজেট ও থাকে কম তবে শুরুতে স্বল্প খরচে দেশিকমার্সে ওয়েবসাইট তৈরী করে ফেলতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার লাভ কী?
- এটি ম্যানেজড হোস্টিং সলিউশন দেয়, যেখানে আপনি শুধু ব্যবসা করবেন, সার্ভার ব্যাবস্থাপনা তারা সামলাবে।
- সয়ংক্রিয় সিকিউরিটি আপডেট, ডেটা ব্যাকআপ ও সার্ভার মনিটরিং দেয়।
মনে রাখা দরকার, নিজে সার্ভার পরিচালনা করে কাস্টমাইজেশনের সুবিধা যেমন পাবেন তেমনই সেগুলো ম্যানেজমেন্টেও বেশ ঝামেলা পোহাতে হবে। তাই আপনার সমস্যা ও প্রয়োজন বুঝে সার্ভার নির্বাচন করা জরুরী।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন
আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন