ওয়েবসাইট কি? কিভাবে কাজ করে ও অনলাইন ব্যবসায় যে ভূমিকা রাখে

ওয়েবসাইট কি? কিভাবে কাজ করে ও অনলাইন ব্যবসায় যে ভূমিকা রাখে
শেয়ার করুন

ওয়েবসাইট কাকে বলে, তা বোঝার জন্য আগে “ওয়েবসাইট” শব্দটির বাংলা অর্থ জানা জরুরি। ওয়েবসাইটের বাংলা অর্থ হলো – “ওয়েবে প্রকাশিত পৃষ্ঠাসমূহের একটি সংগ্রহ।” সহজ ভাষায় বললে, একটি ওয়েবসাইট হলো ইন্টারনেটে থাকা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে নানা ধরনের লেখা, ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য তথ্য একত্রে উপস্থাপিত হয়।

প্রত্যেকটি ওয়েবসাইট একটি নির্দিষ্ট ঠিকানা (যেমন: www.example.com) দ্বারা চিহ্নিত থাকে এবং ব্যবহারকারীরা এই ঠিকানা ব্যবহার করে সহজেই তথ্য বা পরিষেবাগুলোতে প্রবেশ করতে পারে। তাই সংক্ষেপে বলা যায়, ওয়েবসাইট হলো ইন্টারনেটের একটি তথ্যভান্ডার, যেখানে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিষয়বস্তু সংরক্ষিত ও প্রকাশিত থাকে।

ওয়েবসাইটের একক ঠিকানা বলতে কি বুঝায়?

ওয়েবসাইটের একক ঠিকানা বা ডোমেইন নাম হলো একটি নির্দিষ্ট ওভারঅল এড্রেস যা ইন্টারনেটে কোনো ওয়েবসাইটকে চিহ্নিত করে। এটি সাধারণত একটি ইউনিক নাম যা ওয়েবসাইটের হোস্টিং সার্ভারের সাথে কানেক্ট থাকে এবং ব্যবহারকারীরা ব্রাউজারে সেই ঠিকানা প্রবেশ করিয়ে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারেন।

ডোমেইন কি, তা আরো বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে বলা যায় যে, এটি একটি ওয়েবসাইটের সুনির্দিষ্ট অবস্থান বা ঠিকানার প্রতিনিধিত্ব করে। উদাহরণস্বরূপ, www.example.com যেখানে মোট তিনটি অংশ রয়েছে। 

ওয়েবসাইটের একক ঠিকানা বলতে কি বুঝায়?

ইউনিক ডোমেইন নেম একটি ওয়েবসাইটকে সহজে চিহ্নিত ও স্মরণযোগ্য করে তোলে। বিশেষত ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ওয়েবসাইট তৈরি করলে, এটি একটি পেশাদার ও বিশ্বস্ত ইমেজ তৈরি করতে সাহায্য করে। এধরণের একক ঠিকানা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা সহজ করে এবং ইন্টারনেটে আপনার উপস্থিতিকে গ্রহনযোগ্য করে তোলে। 

এছাড়াও, ডোমেইন নামটি যেকোনো ওয়েবসাইটের জন্য মূলভূত এবং একমাত্র পরিচিতি হিসেবে কাজ করে, তাই ডোমেইন নাম নির্বাচনে একটি সহজ, আকর্ষণীয় এবং সংক্ষেপ নাম বাছাই করা উচিত।

ওয়েবসাইট এর ইতিহাস

ইতিহাসে প্রথমবারের মত ১৯৮৯ সালে টিম বার্নার্স-লি (Tim Berners-Lee) ওয়েবসাইট তৈরি করেন। তিনি ইউরোপের সিইআরএন (CERN) গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (World Wide Web) তৈরি করেন। এই প্রথম ওয়েবসাইটটি ছিল মূলত একটি সাধারণ পৃষ্ঠার মতো, যেখানে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে কীভাবে কাজ করে তা ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে CERN ঘোষণা করেছে যে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব যেকোনও ব্যক্তির জন্য বিনামূল্যে ব্যবহার করা যাবে।

ওয়েবসাইটের এই সূচনা পর্যায়টিকে ইন্টারনেট ইতিহাসের একটি বড় মাইলফলক বলা হয়। প্রথম ওয়েবসাইটের এড্রেসটি ছিল – http://info.cern.ch/ যা এখনও সচল রয়েছে। ওয়েবসাইট উদ্ভবের মাধ্যমে বর্তমানে তথ্য আদান-প্রদান এবং যোগাযোগ পদ্ধতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে।

ওয়েবসাইট এর কাজ কি?

বর্তমান যুগে ওয়েবসাইটের কাজ ব্যাপক। এটি শুধু একটি তথ্য প্রদর্শনের মাধ্যম নয়, বরং যোগাযোগ, ব্যবসায়, শিক্ষা, বিনোদন, ইত্যাদির অন্যতম প্রধান প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। বর্তমানের ডিজিটাল দুনিয়ায় টিকে থাকার জন্য ওয়েবসাইটের গুরুত্ব অপরিসীম। একটি ওয়েবসাইট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার পরিচয় বহন করে। তথ্য প্রদান, সেবার প্রচার এবং আপনার অডিয়েন্সের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ওয়েবসাইট অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। 

ওয়েবসাইট এর কাজ কি?

তাছাড়া ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট এখন একটি অপরিহার্য অংশ। অনলাইন উপস্থিতি ছাড়া আজকের বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবার পরিচিতি বৃদ্ধি করার মাধমে গ্রাহক আস্থা অর্জন করা যায়। ই-কমার্স, অনলাইন বুকিং, কাস্টমার সাপোর্টসহ আরো নানান কার্যক্রম এখন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহজে পরিচালিত হচ্ছে।

একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ব্যবহারকারীরা তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এর মাধ্যমে ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি পায় এবং প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং শক্তিশালী করে। ব্যক্তিগত বা পেশাগত যে কোনো উদ্দেশ্যে নিজের একটি ওয়েবসাইট থাকা এখন সময়ের দাবি।

এর পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে ওয়েবসাইটের ব্যবহার আমাদের জীবনের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে গেছে। খবর পড়া, শিক্ষা গ্রহণ, পণ্য কেনাকাটা, ব্যাঙ্কিং, বিনোদন, স্বাস্থ্যসেবা- প্রতিটি ক্ষেত্রেই ওয়েবসাইট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। 

ওয়েবসাইট তৈরির পুরো প্রক্রিয়া

ওয়েবসাইট তৈরির প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো- 

  • প্রথমে ওয়েবসাইটের জন্য একটি উপযুক্ত ও ইউনিক ডোমেইন নাম এমনঃ www.example.com নির্বাচন করতে হবে। 
  • এরপর নির্বাচিত নামটি ব্যবহারের জন্য ওয়েবে রেজিস্ট্রারের জন্য এভেইএবেল আছে কিনা তা যাচাই করে রেজিস্টার করতে হবে। 
  • এরপর ওয়েবসাইটের ফাইলগুলো সংরক্ষণের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য হোস্টিং প্ল্যাটফর্ম সাবস্কাইব করতে হবে। 
  • ওয়েবসাইট তৈরির জন্য প্ল্যাটফর্ম বেছে নিতে হয়। যেমন: WordPress, Wix, Shopify বা কাস্টম কোডিং।
  • ওয়েবসাইটের কাঠামো এবং ডিজাইন তৈরি করে প্রয়োজন অনুযায়ী ফিচার এবং কনটেন্ট যোগ করে ডেভেলপমেন্ট সম্পন্ন করতে হবে।
  • লাইভ করার আগে ওয়েবসাইটের প্রতিটি ফিচার, লিংক, পেজ লোডিং স্পিড, মোবাইল রেসপন্সিভনেস ইত্যাদি ভালোভাবে টেস্ট করতে হবে।
  • এরপর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ওয়েবসাইট পাবলিশড করে ইউজারদেরদের জন্য লাইভ করা হয়।
  • ওয়েবসাইট চালু হওয়ার পর নিয়মিত আপডেট, ব্যাকআপ, এবং সিকিউরিটি চেক করে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।

ওয়েবসাইট এর প্রকারভেদ

ওয়েবসাইট সাধারণত ২ প্রকার- 

১. স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট
২. ডাইন্যামিক ওয়েবসাইট

এই প্রকারভেদ মূলত ওয়েবসাইটের স্ট্রাকচার  এবং কনটেন্ট ভিজুয়ালাইজেশন এর উপর ভিত্তি করে নির্ধারন করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, স্ট্যাটিক ও ডাইন্যামিক এই দুই ধরনের ওয়েবসাইটের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও পৃথক ব্যবহারের ক্ষেত্র রয়েছে। 

স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটের প্রতিটি পৃষ্ঠা একটি নির্দিষ্ট ফাইল হিসেবে সংরক্ষিত থাকে এবং প্রত্যেক ইন্টার‍্যাকশনে একই কনটেন্ট প্রদান করে। অপরদিকে, ডাইনামিক ওয়েবসাইট সার্ভার-সাইড প্রযুক্তি ব্যবহার করে পেজ তৈরি করে এবং সাধারণত ডেটাবেস থেকে কনটেন্ট গ্রহণ করে।

এই দুই প্রকার ওয়েবসাইটের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও ব্যবহারিক পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে নিচে আলোচনা করা হল।

স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট

অনেকেই জানেন না স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট কি। এটি মূলত এমন একটি ওয়েবসাইট, যেখানে প্রতিটি পেজ নির্দিষ্টভাবে তৈরি করা হয় এবং ইউজারদের জন্য একই ধরনের কনটেন্ট প্রদর্শিত হয়। এ ধরনের ওয়েবসাইটের কনটেন্ট পরিবর্তন হয় না।

ওভারঅল ওয়েবসাইটের সাপেক্ষে স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট সাধারণত কম ফিচার সমৃদ্ধ, তবে এটি দ্রুত লোডিং এবং নির্দিষ্ট তথ্য উপস্থাপনের জন্য সেরা। যখন কোন ওয়েবসাইটের ইউজার ইন্টারঅ্যাকশনের প্রয়োজন কম এবং পদর্শিত তথ্য প্রায় অপরিবর্তনীয় থাকে, তখন স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়।

স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট মূলত একটি পরিচিতিমূলক সাইট। এটি Portfolio, Personal Website, কোম্পানির নির্দিষ্ট তথ্য প্রদর্শন, ল্যান্ডিং পেজ, ইভেন্ট বা ক্যাম্পেইন পেজের জন্য ব্যবহৃত হয়। এতে সাধারণত HTML, CSS, এবং কিছু ক্ষেত্রে সামান্য JavaScript ব্যবহার করে ডিজাইন করা হয়। 

স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটের উপকারিতা

  • তৈরি করা দ্রুত ও খরচ সাশ্রয়ী
  • লোডিং স্পিড অত্যন্ত ফাস্ট
  • হোস্টিং খরচ কম
  • সিকিউরিটির ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম

ডাইনামিক ওয়েবসাইট

ডাইনামিক ওয়েবসাইট হলো এমন ধরনের ওয়েবসাইট যেখানে কনটেন্ট বা ডেটা, ইউজারদের ইন্টারঅ্যাকশনের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ, একেকজন ইউজার নানান ধরনের ধরনের তথ্য দেখতে পারে এবং ওয়েবসাইটের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে।

সার্বিকভাব ওয়েবসাইটের সাপেক্ষে, ডাইনামিক ওয়েবসাইট বর্তমানে ইন্টারনেটের একটি বড় অংশ দখল করে আছে। তথ্য প্রদর্শন, ব্যবহারকারীর সাথে ইন্টারঅ্যাকশন, ডাটাবেস সংযোগ, অটোমেশন এবং ব্যাকএন্ড প্রসেসিংয়ের জন্য ডাইনামিক সিস্টেম অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ই-কমার্স, সোশ্যাল মিডিয়া, নিউজ পোর্টালসহ প্রায় সব বড় ধরনের ওয়েবসাইট ডাইনামিক পদ্ধতিতে তৈরি হয়।

ডাইনামিক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ, ইউজার প্রোফাইল ম্যানেজমেন্ট, পণ্য কেনাকাটা, পোস্ট বা কমেন্ট ইত্যাদি কাজ করা যায়। এ ধরণের ওয়েবসাইট ডাটাবেসের সাথে কানেক্ট করে কনটেন্ট রিয়েল-টাইমে আপডেট করা হয়। PHP, Node.js, Python (Django), এবং বিভিন্ন CMS (যেমন WordPress) দিয়ে একটি ডাইনামিক ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়।

ডাইনামিক ওয়েবসাইটের উপকারিতা

  • বড় এবং জটিল সাইট পরিচালনায় কার্যকর
  • ইউজারদের ইন্টারঅ্যাকশনের সুবিধা
  • কনটেন্ট দ্রুত আপডেট ও পরিবর্তনযোগ্য
  • বিভিন্ন ফিচার ও ফাংশনালিটি সহজে যোগ করা যায়

একটি ওয়েবসাইটের কয়টি অংশ থাকে?

একটি বেসিক ওয়েবসাইট সাধারণত ৬টি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত হয়। 

১. হেডার
২. পেইজ হেডার
৩. হিরো সেকশন
৪. কনটেন্ট সেকশন
৫. সাইডবার সেকশন
৬. ফুটার সেকশন

নিচে প্রতিটি সেকশন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ 

১. হেডার

হেডার

হেডার হলো ওয়েবসাইটের উপরের অংশ যেখানে সাধারণত লোগো, মেনু, কনট্যাক্ট ইনফরমেশন, সার্চ বার, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক থাকে। এটি ওয়েবসাইটের জন্য ইম্প্রেশন তৈরি করে এবং ব্যবহারকারীকে ওয়েবসাইটের মূল অংশের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। 

হেডার ওয়েবসাইটের কাঠামোতে অত্যন্ত কার্যকর, কারণ এটি ইউজারদের জন্য সহজে নেভিগেট করতে সাহায্য করে এবং ওয়েবসাইটের উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা প্রদান করে। মূলত এর কাজ হল ইউজারের জন্য ওয়েবসাইটের নেভিগেশনকে আরও সোজা করা। 

উদাহরণস্বরূপ, একটি ই-কমার্স সাইটের হেডারে পণ্য ক্যাটেগরি, লোগো এবং চেকআউট বাটন থাকতে পারে যা ব্যবহারকারীর জন্য সহজে কেনাকাটার অপশন দিবে।

২. পেইজ হেডার

পেইজ হেডার হল প্রতিটি ওয়েব পেজের শুরুর অংশ, যেখানে সাধারণত সেই পেজের টাইটেল এবং সংক্ষিপ্ত বিবরণ থাকে। এটি ব্যবহারকারীদের জন্য পেজের মূল উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে এবং তাদের কনটেন্টের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করায়। 

পেইজ হেডার ওয়েবসাইটের কাঠামোতে খুবই কার্যকর, কারণ এটি প্রতিটি পেজের জন্য একটি আলাদা পরিচিতি তৈরি করে। এটি পেজের বিষয়বস্তু সম্পর্কে দ্রুত ধারণা প্রদান করে ব্যবহারকারীকে নির্দিষ্ট তথ্যের নির্দেশনা দেয়। 

উদাহরণস্বরূপ, একটি ব্লগ পোস্টের পেইজ হেডারে পোস্টের শিরোনাম এবং তার সারাংশ থাকতে পারে।

৩. হিরো সেকশন

হিরো সেকশন হলো ওয়েবসাইটের সবচেয়ে বড় ভিজ্যুয়াল সেকশন। ওয়েবসাইটের মূল বার্তা তুলে ধরতে যেখানে সাধারণত বড় একটি ব্যানার, ছবি, বা ভিডিও থাকে। । হিরো সেকশন একটি ওয়েবসাইট কাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ এটি প্রথম দর্শনেই ব্যবহারকারীর নজর আকর্ষণ করে এবং তাদের ওয়েবসাইটের মূল উদ্দেশ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। 

হিরো সেকশনের কাজ হল ওয়েবসাইটের মূল বার্তা, অফার বা ক্যাম্পেইন সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা। এটি ব্যবহারকারীদের দ্রুত একটি ধারণা দেয় এবং তাদের ওয়েবসাইটে আরও গভীরে প্রবেশ করার উৎসাহ প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ট্রাভেল সাইটের হিরো সেকশনে একটি সুন্দর ট্রিপের ছবি এবং “Book Your Dream Vacation” টেক্সট থাকতে পারে।

৪. কনটেন্ট সেকশন

কনটেন্ট সেকশন হলো ওয়েবসাইটের প্রধান অংশ যেখানে তথ্য, ব্লগ পোস্ট, আর্টিকেল বা অন্যান্য মিডিয়া উপাদান থাকে। এটি ব্যবহারকারীদের জন্য মূল তথ্য সরবরাহ করে। এই সেকশনের কাজ হল ওয়েবসাইটের মূল উদ্দেশ্য বা সেবার তথ্য বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা।

কনটেন্ট সেকশন

কনটেন্ট সেকশন একজন ইউজারকে কাঙ্খিত তথ্য সরবারহ করে। 

উদাহরণস্বরূপ, একটি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সাইটে কনটেন্ট সেকশনে স্বাস্থ্য টিপস এবং প্রোগ্রাম বিশদভাবে আলোচনা করা যেতে পারে।

৫. সাইডবার সেকশন

সাইডবার সেকশন ওয়েবসাইটের মূল কনটেন্টের পাশে থাকে এবং এখানে অতিরিক্ত তথ্য, জনপ্রিয় পোস্ট, বিজ্ঞাপন, বা সাবস্ক্রিপশন ফর্ম দেওয়া হয়। এটি ব্যবহারকারীদের আরও তথ্যের দিকে ধাবিত করে। 

উপযোগী লিঙ্ক বা ফিচার দ্রুত অ্যাক্সেস করতে সাইডবার সেকশন ব্যবহার করা হয়। এটি ওয়েবসাইটের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স উন্নত করে এবং অন্যান্য তথ্যকে দ্রুত একসেস করতে সাহায্য করে। 

উদাহরণস্বরূপ, একটি নিউজ সাইটের সাইডবারে সর্বশেষ নিউজ আর্কাইভ এবং ট্রেন্ডিং স্টোরি দেখতে পাওয়া যেতে পারে।

৬. ফুটার সেকশন

ফুটার সেকশন হলো ওয়েবসাইটের নিচের অংশ, যেখানে সাধারণত কপিরাইট তথ্য, সোশ্যাল মিডিয়া লিঙ্ক, লোকেশন, কনট্যাক্ট ইনফরমেশনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক থাকে। ফুটার সেকশনের কাজ হলো ব্যবহারকারীদের প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত সরবারহ করা। 

ফুটার সেকশনের বড় উপকারিতা হল এটি ওয়েবসাইটের তথ্যকে আরো সহজলভ্য করে এবং যেকোনো প্রয়োজনীয় লিঙ্ক সহজেই এক্সেসযোগ্য করে তোলে। 

উদাহরণস্বরূপ, একটি অনলাইন শপিং সাইটের ফুটারে সাধারণত পেমেন্ট অপশন, শিপিং তথ্য এবং কাস্টমার সাপোর্টের লিঙ্ক থাকে।

ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে ওয়েবসাইটের প্রকারভেদ

ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে ওয়েবসাইটকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। এখানে আমরা আলোচনা করব প্রধান কিছু প্রকারের ওয়েবসাইটের কাঠামো নিয়ে। 

১. ই-কমার্স ওয়েবসাইট

ই-কমার্স ওয়েবসাইট হলো এমন একটি ওয়েবসাইট যেখানে পণ্য বা সেবা অনলাইনে কেনা এবং বিক্রির সুযোগ থাকে। এধরণের ওয়েবসাইটের কাঠামো সাধারণত পণ্যের ক্যাটালগ, কার্ট সিস্টেম, চেকআউট পেজ, পেমেন্ট গেটওয়ে ইত্যাদি নিয়ে গঠিত থাকে।

ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মূল কাজ হলো পণ্য বা সেবা বিক্রি করা। এর মাধ্যমে ক্রেতারা বিভিন্ন পণ্য দেখেন, চয়েস করেন এবং সহজে অনলাইনে অর্ডার করতে পারেন। এই সাইটগুলির মাধ্যমে ব্যবসায়িরা ২৪/৭ ক্রেতাকে সেবা দিতে পারে।  ই-কমার্স ওয়েবসাইটের উদাহরণ হলো, Amazon, Daraz, ইত্যাদি।

২. ব্লগ ওয়েবসাইট

ব্লগ ওয়েবসাইট হলো এমন একটি ওয়েবসাইট যেখানে ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নিয়মিত পোস্ট বা আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়। ব্লগ ওয়েবসাইট সাধারণত হোমপেজ, আর্টিকেল পেজ, ক্যাটেগরি সেকশন, এবং কমেন্ট সেকশন নিয়ে গঠিত থাকে।

ব্লগ ওয়েবসাইটের কাজ হলো তথ্য প্রদান, শিক্ষা, এবং সৃষ্টিশীল বিষয়বস্তু শেয়ার করা। এটি ব্যক্তিগত বা পেশাগত উদ্দেশ্যে ডিজাইন করা হয়, এবং ইউজারদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং কমেন্টের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, WordPress ব্লগ, Medium।

৩. কর্পোরেট ওয়েবসাইট

কর্পোরেট ওয়েবসাইট হলো একটি ব্যবসায়ের বা প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, যেখানে কোম্পানির তথ্য, সেবা বা পণ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডেটা থাকে। কর্পোরেট ওয়েবসাইটের কাজ হলো কোম্পানির ব্র্যান্ড পরিচিতি তৈরি করা এবং গ্রাহকদের কাছে পরিষেবা বা পণ্য সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করা। 

এটি সাধারণত গ্রাহক সেবা, বিপণন বা ব্যান্ডিং ইমেজ ডেভেলপ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের ওয়েবসাইট কোম্পানির সার্ভিস বা পণ্যকে বিশ্বের কাছে সহজে পরিচিত করে এবং গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, Microsoft, Apple- এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট। 

৪. পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট

পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট হলো একটি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট যেখানে একজন ব্যক্তি তার কাজ, প্রজেক্ট এবং দক্ষতা প্রদর্শন করে। পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটের কাজ হলো একজন ব্যক্তির কর্মজীবনের কাজ বা সৃজনশীল দক্ষতা প্রদর্শন করা। 

এটি ফ্রিল্যান্সার, ডিজাইনার, ফটোগ্রাফার বা রাইটারদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এটি তাদের পেশাগত পরিচিতি তৈরি করতে সাহায্য করে এবং ক্লায়েন্ট বা নিয়োগকর্তার কাছে তাদের দক্ষতা তুলে ধরে। 

৫. লার্নিং ওয়েবসাইট

লার্নিং ওয়েবসাইট হলো এমন একটি ওয়েবসাইট যেখানে শিক্ষামূলক কনটেন্ট ও কোর্স থাকে। এটি বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ বা প্রশিক্ষণ সামগ্রী সরবরাহ করে। এধরণের ওয়েবসাইটে সাধারণত কোর্স পেজ, প্রগ্রেস ট্র্যাকিং, পাঠ্যক্রম, সার্টিফিকেশন শিক্ষকের প্রোফাইল এবং ছাত্রদের জন্য রিভিউ সিস্টেম নিয়ে গঠিত থাকে। 

লার্নিং ওয়েবসাইটের মূল কাজ হলো শিক্ষার্থীদের জন্য জ্ঞান এবং দক্ষতা প্রদান করা। এই সাইটগুলি শিক্ষার্থীদের ঘরে বসেই পড়াশোনা করার সুযোগ দেয় এবং তাদের জন্য লাইভ কোর্সের আয়োজন করে। উদাহরণস্বরূপ, Coursera, Khan Academy।

ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি ওয়েবসাইটের ভূমিকা

ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি ওয়েবসাইটের প্রধান ভূমিকা হলো:

  1. অনলাইন উপস্থিতি নিশ্চিত করা – ২৪/৭ গ্রাহকের জন্য ব্যবসা দৃশ্যমান থাকে।
  2. বিশ্বব্যাপী বাজারে প্রবেশ – স্থানীয় সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রেতা আকৃষ্ট করা যায়।
  3. ব্র্যান্ড পরিচিতি বৃদ্ধি – পণ্যের বা সেবার সম্পর্কে বিস্তারিত উপস্থাপন সম্ভব।
  4. বিশ্বাস ও পেশাদারিত্ব গঠন – পেশাদার ও তথ্যবহুল ওয়েবসাইট গ্রাহকের আস্থা বাড়ায়।
  5. বিপণন ও বিজ্ঞাপন – এসইও (SEO), কনটেন্ট মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া সংযোগের মাধ্যমে কাস্টমার টার্গেটিং সহজ হয়।
  6. গ্রাহক সেবা ও যোগাযোগ – চ্যাটবট, কনট্যাক্ট ফর্মের মাধ্যমে দ্রুত সাপোর্ট দেয়া যায়।
  7. বিক্রয় বৃদ্ধি – ই-কমার্স ফিচারের মাধ্যমে সরাসরি পণ্য/সেবা বিক্রি করা যায়।
  8. ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ – ইউজার বিহেভিয়ার ও মার্কেট ট্রেন্ড পর্যবেক্ষণ করে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।

নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ
শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

আপনার মূল্যবান মতামত দিন

মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। আবশ্যক ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত *

আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন

সবার আগে মন্তব্য করুন