বেশি এঙ্গেজমেন্ট পেতে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার বেস্ট টাইম কখন ? সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার পদ্ধতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি এই প্রশ্নটি আমাদের কাছে আসে।
অনলাইন বিজনেসে সোশ্যাল মিডিয়ায় কনটেন্ট পোষ্ট করলেই এঙ্গেজমেন্ট পাবেন না, জানতে হবে কোনদিন কোন সময়ে পোষ্ট করবো। কিন্তু এর জন্য নির্দিষ্ট একটি উত্তর নেই তবে যে সময় ও দিনগুলিতে পোষ্ট করলে সর্বোচ্চ রিচ ও এঙ্গেজমেন্ট পাওয়া সম্ভব সেটি খুঁজে বের করতে হয়।
অনলাইন বিজনেসের প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত আপডেট বা খুব কম আপডেট দুটোই ক্ষতিকর। তবে মিনিংফুল পোষ্টগুলোর জন্য বেশি বেশি আপডেট সব সময়ে খারাপ না।সোশ্যাল মিডিয়ার সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি জানলে সর্বোচ্চ সুফল পাওয়া যায়। সোশ্যাল মিডিয়াতে সুফল বলতে আমরা বেশি রিচ ও এনগেজমেন্ট বুঝি।
বাংলাদেশে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়াগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৫ টি প্লাটফর্ম। চলুন জেনে আসি বিভিন্ন গবেষণায় এসব সোশ্যাল মিডিয়াগুলো ব্যবহার পদ্ধতি নিয়ে উঠে আসা তথ্য যা আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে কোন সময়গুলোতে কতবার পোষ্ট করা হলে বেশি পরিমাণ রিচ ও এনগেজমেন্ট আসে।
ফেসবুক বিজনেস পেজঃ
দিনে ১ থেকে ২ টি পোস্ট করা ভাল।
বাংলাদেশে এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। নভেম্বর ২০১৭ সালে বি.টি.আর.সি এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী অনলাইন টেকনোলজি প্লাটফর্ম Digiology একটি প্রতিবেদনে বলে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ মিলিয়ন।
যাদের মধ্যে ৭২% পুরুষ ও ২৮% মহিলা। এদের মধ্যে ১৮ থেকে ২৪ বছরের ব্যবহারকারী সবচেয়ে বেশি। ব্যবহারকারীর মোট ৮৬% মোবাইলে ফেসবুক ব্যবহার করে এর মধ্যে অ্যান্ড্রয়েড ফোন দিয়ে ফেসবুক চালায় ৯০% ব্যবহারকারী ।
HubSpot’s তাঁদের একটি গবেষণায় বলছে, ফেসবুকে পোস্ট করার ক্ষেত্রে আপনার কত ফলোয়ার আছে সেটি একটি বিবেচ্য বিষয়। তবে অধিকাংশ ব্র্যান্ডের অনলাইন কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে দিনে সর্বোচ্চ দুটোর বেশি পোস্ট করলে এনগেজমেন্ট কমে যায়। সপ্তাহের শেষের দিনে বেশি সংখ্যক মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে।
টুইটারঃ
দিনে ৫ থেকে ১০ টি পোস্ট করা ভাল।
বাংলাদেশের প্রফেশনালদের কাছে খুব সম্প্রতি এই প্ল্যাটফর্মটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে । গ্রামীনফোনের মত বড় প্রতিষ্ঠান অথবা জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব কমবেশি সবাই বর্তমানে এই মিডিয়াতে সক্রিয়। গ্রামীনফোনের ফলোয়ার প্রায় ২ লাখ আর ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব সাকিব আল হাসানের ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ১.৫ লাখের ও বেশি। এই প্ল্যাটফর্মটিতে আপনি সারাদিনে যত বেশি সম্বব পোস্ট করুন।
দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১ টার মধ্যবর্তী সময়ে বেশি সংখ্যক একটিভ ইউজার থাকে।এই সময়ের মধ্যে পোস্ট করলে ভাল এনগেজমেন্ট পাওয়া যায়।
পিন্টারেস্টঃ
ছবির মাধ্যমে প্রোডাক্ট, সার্ভিস বা আইডিয়া শেয়ার করার জন্য সুপরিচিত এই প্ল্যাটফর্মটি। Buffer’s এর একটি গবেষণা মতে, আপনার যদি খুব বেশি পরিমান কন্টেন্ট না থাকে তবে সর্বনিম্ন ৫ টি ছবি পিন করে ব্যবহার শুরু করুন। ভাল এনগেজমেন্ট পেতে দিনে সর্বোচ্চ ৩০ টি ছবিও পিন করতে পারেন। যত বেশি পিন করবেন তত এনগেজমেন্ট বেড়ে যাবে।
এক্ষেত্রে ফেসবুক থেকে এটি ভিন্ন।
লিঙ্কেডিনঃ
একমাসে ২০টি পোস্টের বেশি না করা ভাল।
অফিস চলাকালীন দিনে ১ টি করে পোস্ট যদি নিয়মিত করা হয় তবে ৬০% ফলোয়ারদের কাছে পৌঁছানো সম্বব। এই প্ল্যাটফর্মটি মূলত প্রফেশনালদের প্লাটফর্ম তাই ব্যবহারে মার্জিত হওয়া বাঞ্ছনীয়।
ইনস্টাগ্রামঃ
ছবি শেয়ারের জন্য জনপ্রিয় একটি প্লাটফর্ম। প্রোডাক্ট ও সার্ভিসের ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশানের মাধ্যমে মার্কেটিং করতে এটি ব্যবহার করুন।
Union Metrics এর একটি গবেষণায় বলা হয়েছে , যে সকল ব্র্যান্ড এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সফল হয়েছে তাঁরা সারাদিনে গড়ে ১.৫ বার ছবি শেয়ার করে।
তাই এটি খুব স্পষ্ট যে প্রতিটি প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ভাল কাস্টমার এনগেজমেন্ট পেতে সময় ও পোস্ট শেয়ারের মধ্যবর্তী ব্যবধান জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি যখন অনলাইন বিজনেসের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং প্ল্যান তৈরি করবেন তখন অবশ্যই যে বিষয়গুলির উপর নজর দিতে হবে।
- আপনি কি সত্যিকার অর্থে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলি সঠিক পরিচালনা করতে সক্ষম হচ্ছেন।
- বেশি পরিমান মিনিংলেস পোস্ট দেবার থেকে কম কিন্তু মিনিংফুল পোস্ট দেয়া।
আপনার অডিয়েন্সের রেসপন্স পর্যবেক্ষণ করুন।
সোশ্যাল মিডিয়া এনালিটিক্স ব্যবহার করে নিশ্চিত হন আপনার অডিয়েন্স কোন পোস্টগুলিতে কেমন রেসপন্স করছে এবং সেই মোতাবেক আপনার পোস্ট শেয়েরের সময় ও কৌশল নির্ধারণ করুন।
বিজনেসে সোশ্যাল মিডিয়া ধারাবাহিক ব্যবহার নিশ্চিত করুন।
সকল সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে এক সপ্তাহ নিয়মিত আপডেট দিলেন পরের একমাস সব বন্ধ এমন হলে ভালো পরিমাণ এনগেজমেন্ট আশা করা বোকামি।
ফেসবুকের এলগরিদম মেশিন লার্নিং, তাই আপনার ব্যবহারের ধরণ ও অডিয়েন্সদের এঙ্গেজ হবার পরিমাণ অনুযায়ী সে তথ্য সংগ্রহ করে পোষ্টটিকে আরও বেশি পরিমাণ সঠিক দর্শকদের কাছে কি পৌঁছে দিবে কিনা বা কীভাবে পৌঁছে দিবে সেটি প্রতিনিয়ত পরিমাপ করে। তাই ব্যবহারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা খুব প্রয়োজন।
শুধু মাত্র আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের বাইরে আপনার কাস্টমারের জন্য উপকারী অথবা আপনার বিজনেসের সাথে রিলেটেড অন্যদের পোস্টগুলি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে শেয়ার করুন।তাঁদের পোস্ট নিয়ে আপনার নিজের চিন্তা রি-পোস্ট বা কমেন্ট করুন।
আপনার কাস্টমারদের দৈনন্দিন জীবনে উপকারে আসবে এমন কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে শেয়ার করুন । যখন কেউ প্রয়োজনীয় ও উপকারী তথ্য আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে খুঁজে পাবে তখন তাঁরা আপনার সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে যুক্ত হবার জন্য আগ্রহী হবে।
যে সকল সোশ্যাল মিডিয়াতে তথ্যের প্রবাহ খুব বেশি সেখানে একই পোস্ট কয়েকবার শেয়ার করুন।
যেমন টুইটারে প্রচুর পোস্ট যায়, আপনি যদি চান আপনার পোস্ট অধিক অডিয়েন্স দেখুক তাহলে দিনের বিভিন্ন সময় কয়েকবার শেয়ার দিন।
coschedule.com এর একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, একটি পোষ্টের লিঙ্ক একাধিকবার শেয়ারের ফলে সেটিতে ক্লিক হবার রেট ১৯২% বেড়েছিল।
আপনার পোস্টটি পোস্ট করুন যখন আপনার কাস্টমার অনলাইনে থাকে।কাস্টমারের অবসর সময়গুলি খুঁজে বের করুন। আপনার টার্গেট কাস্টমার যদি চাকুরীজিবি হন তবে অফিস ছুটির পর যখন বাসায় অবসর সময় কাটায় বা দুপুরে খাবার শেষে যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে একটু অলস সময় পার করে ঠিক সে সময়গুলি আপনি বেছে নিতে পারেন আপনার পোস্ট পাবলিশ করার জন্য।
প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে কাস্টমার প্রশ্ন করলে সেটির উত্তর অত্যন্ত যত্নের সাথে দিয়ে হয়
এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কাস্টমারের বার বার প্রশ্ন করা সত্ত্বেও উত্তর না দেয়া বা ভুল তথ্য দেয়া আপনার বিজনেসের জন্য আত্মঘাতী হতে পারে।
আপনি যদি বিজনেসে ব্যস্ত সময় পার করেন আর সেজন্য সোশ্যাল অ্যাকাউন্টগুলো ম্যানেজ করা কঠিন হয়ে পড়ে তবে কিছু অনলাইন টুলস ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলি অটোমেটিক ভাবে শেয়ার করতে পারেন।
আপনি সপ্তাহে একদিন একটি ঘণ্টা সময় ব্যয় করে সেটআপ সম্পন্ন করে দিলেই কাজ শেষ।
আপনি যদি সঠিক পরিকল্পনা না করে বিজনেসে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের ব্যবহার শুরু করেন তবে এটি ম্যানেজ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়তে পারে। কেবল মাত্র একটি কার্যকরী পরিকল্পনার মাধ্যমে খুব কম পরিশ্রমে ও কম সময় ব্যয় করে সোশ্যাল মিডিয়ার সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়া সম্ভব।
এতক্ষন জানলাম সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার বেস্ট টাইম সম্পর্কে। মিলিয়ে দেখুন, আপনি ঠিক সময়ে পোস্ট করছেন কি?
সবার আগে মন্তব্য করুন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন
মন্তব্য করতে হলে আপনাকে লগ ইন করতে হবে।