কি উপায়ে মাত্র ৬ সপ্তাহে মার্কেটিং রিটার্ন ২০০০ গুন করা হল?- ই-কমার্স মার্কেটিং কেস স্টাডি

সঠিকভাবে মার্কেটিং কৌশলগুলো প্রয়োগ করলে ই-কমার্সের ব্যবসায়ও আপনি বিক্রি বহুগুন বাড়তে পারবেন। তাই এই বিজনেস কেস টি আপানাদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।

মাল্টা ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং(ride sharing)কোম্পানি ইক্যাবস (eCabs), মার্কেটিং এজেন্সি স্যুইচের(Switch) দ্বারস্থ হয়েছিল। এই ক্লায়েন্ট গুগল ও ফেসবুকে নিজে নিজেই বিজ্ঞাপন দিচ্ছিলো কিন্তু তেমন কোনো ভালো ফলাফল পাচ্ছিলোনা। তাদের ROI ছিল বিজ্ঞাপন ব্যায়ের মাত্র ১.২ গুণ।

স্যুইচ(Switch) একাধিক কৌশল পন্থা (multi-approach strategies), স্প্লিট টেস্টিং(split testing) এবং বিজ্ঞাপন অপ্টিমাইজেশান(ad optimization) প্রয়োগ করে।

মাত্র কয়েক মাসে গুগল বিজ্ঞাপনের জন্য তাদের ROI ১.২ গুণ থেকে ১৯ গুণ পর্যন্ত এবং ফেসবুক বিজ্ঞাপনে ১.০৭ গুণ থেকে ৩৫ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে । তাই, ব্যয় বৃদ্ধি না করেই বিক্রয় বহুগুণ বেড়েছে। আর এ সবই সম্ভব হয়েছে ই-কমার্স এর সঠিক কৌশল নির্বাচন এবং যথাযথভাবে তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে।

ই-কমার্স মার্কেটিং

 ইক্যাবস (eCabs) এর সমস্যাসমূহ 

এই কেস জুড়ে ক্লায়েন্টের নিম্নে তালিকাভুক্ত সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে 

  1. অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক বাজার; আলাদা করার মতো কোনো বিষয় নেই।
  2. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ROI ১.০৭ গুণ এর নিচে।
  3. সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং ROI ১.২ গুণ এর নিচে।
  4. ব্যাপক দর্শকদের জন্য একক SE প্রচারণা।
  5. ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশল সম্পর্কে কম ধারণা।

 

ই-কমার্স মার্কেটিং এর সমাধান

মার্কেটিং এজেন্সি নিচের কৌশল গুলো ব্যবহার করে ক্লায়েন্টের সমস্যার সমাধান করে।

প্ল্যাটফর্ম কৌশল

তারা শুধুমাত্র Google ও Facebook এ বিজ্ঞাপন দিচ্ছিলো। তারা ‘কি’ মার্কেটিং করছিল- এটা সমস্যা ছিল না, সমস্যা ছিল তারা ‘কিভাবে’ মার্কেটিং করছিল।

সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং কৌশল

মাল্টি সেগমেন্টেড ক্যাম্পেইন(Multi Segmented Campaign)

স্যুইচ(Switch) এর করা প্রথম দিকের জিনিসগুলির মধ্যে একটি হল মাল্টি সেগমেন্টেড ক্যাম্পেইন করা। এর মানে তারা গ্রাহকদের ব্যক্তিত্ব, অনুসন্ধান ইচ্ছা এবং LTV ভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন ক্যাম্পেইন চালিয়ে ছিলো। যেমন, তারা ক্রেতার আচরণের উপর ভিত্তি তাদেরকে ভাগ করেছে। তাদের ক্রেতাদের লক্ষ্য করে দুইভাবে ক্যাম্পেইন চালিয়ে ছিল।

  1. শুধুমাত্র একবার কেনার সম্ভাবনা এমন ক্রেতা – ফলে তাদেরকে ক্রয়ের পরে আর বিজ্ঞাপন চালানো হবে না।
  2. বারবার কেনার সম্ভাবনা এমন ক্রেতা – ক্রয়ের পরেও বিজ্ঞাপন চলতে থাকবে।

ই-কমার্স ব্যবসার জন্য রিপিট পারচেসার ও সিঙ্গেল পারচেসার আলাদা করা খুবিই জরুরী। নাহলে যাদের আর কেনার কোন আগ্রহ নেই তাদের পেছনে বিজ্ঞাপন দিয়ে অযথা টাকা নষ্ট হয়। এটি আপনি করতে পারবেন প্রিডিক্টিভ সেগমেন্টেশন ফিচার ব্যবহার করে।

ক্রমাগত কীওয়ার্ড অপ্টিমাইজেশান(Continuous Keyword Optimization)

একাধিক ক্যাম্পেইন চালানোর ফলে তারা প্রতিটি প্রচারণার কাজের উপর বিস্তারিত তথ্য ও কিওয়ার্ড পাচ্ছিলো। স্বাভাবিকভাবেই ক্রমাগত কিওয়ার্ড যোগ ও অপসারণের ফলে তাদের খরচ/কনভার্শন ব্যয় কমে ছিল।

এ/বি টেস্টিং(A/B Testing)

কোন প্রচারাভিযান, বিজ্ঞাপন, বিজ্ঞাপন অনুলিপি ভেরিয়েন্ট, এবং বাজেট বরাদ্দ সবচেয়ে ভাল কাজ ছিল তা নির্ধারণ করতে নিয়মিত A/B পরীক্ষা করা হয়েছিল। বিজ্ঞাপন-প্রতি-ক্লিক খরচ কমাতে  হার ও কনভার্শন মান অপ্টিমাইজ করার সময় ফাইন-টিউনিং করা হয়েছে।

গুণমানের স্কোর (Quality Score)

বিজ্ঞাপনগুলি ভালো মানের হয় শুধুমাত্র ল্যান্ডিং পৃষ্ঠার উপাদানগুলির গুণমান এবং অনুসন্ধান শব্দের মিল হলেই৷ তারা Quality Score ১০/১০ বজায় রেখেছে। অন্যরা সাধারণত ৭/১০ মানের বিজ্ঞাপন হলেই দিয়ে দেয়। এটি তাদের সবচেয়ে কম রেটে বিজ্ঞাপন চালাতে দিয়েছে।

VQVC KPIs

তারা শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ KPI তে ফোকাস করেছেন। এর মানে তারা কঠোরভাবে ব্যর্থ   কেপিআইগুলিকে (KPIs) বন্ধ করে দিয়েছে যা কোনো কাজে আসে না। তাদের কেপিআইগুলি চারটি দিক বিবেচনা করে গঠন করা হয়েছিল।

ভলিউম (Volume) : যে পরিমাণ করতে চাই তার কতটুকু পাচ্ছি?

গুণমান (Quality): বিজ্ঞাপনে খরচ করে উৎপন্ন ট্রাফিক কি কনভার্শনে পরিণত হচ্ছে?

মূল্য (Value): মার্কেটিং কি আয় বয়ে আনছে?

খরচ কার্যকারিতা(Cost effective) : বিজ্ঞাপন খরচের উপর রিটার্ন কি লাভজনক?

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কৌশল

সুইচের (Switch) সোশ্যাল মিডিয়া কৌশল সার্চ ইঞ্জিন কৌশলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। তারা দৃঢ় KPIs কে লক্ষ্য করে মাল্টি সেগমেন্টেড ক্যাম্পেইন, A/B পরীক্ষা এবং ক্রমাগত অপ্টিমাইজেশান নীতিগুলি প্রয়োগ করেছে।

কিন্তু সামাজিক মিডিয়া একটি ভিন্ন বিষয় এবং ফেসবুকে এর প্ল্যাটফর্ম ভিত্তিক সুনির্দিষ্ট কৌশল প্রয়োজন ছিল।

এআই(AI) ভিত্তিক অডিয়েন্স বিল্ডিং

স্যুইচ (Switch) সম্ভাব্য গ্রাহক শনাক্ত এবং দর্শক নির্মাণ (audience build) করতে ফেসবুকের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ভিত্তিক টুলের সুবিধা নিয়েছে।

লক্ষ্য অনুযায়ী KPIs

ব্র্যান্ড সচেতনতা এবং কনভার্শনের মতো লক্ষ্যগুলির উপর ভিত্তি করে KPI-এর পৃথক পৃথক সেট করা হয়েছে।

ফলাফল

স্যুইচ (Switch) এর ই -কমার্স ভিত্তিক সমন্বিত মার্কেটিং প্রত্যাশাতীত সাফল্য এনেছে।

ROI

Google-এ ROI প্রথম মাসে ১.২ গুণ থেকে বেড়ে ৯ গুণ এবং দ্বিতীয় মাসে ১৮ গুণ হয়েছে।  ত্রৈমাসিকে মোট ১৬ গুণ হয়েছে।

Facebook ROI প্রথম মাসে ১.০৭ গুণ থেকে বেড়ে ২৭ গুণ এবং দ্বিতীয় মাসে ৩২ গুণ বেড়েছে। ঋতুগত প্রভাবের কারণে ত্রৈমাসিকে মোট ২৬ গুণ বেড়েছে।

কনভার্শন প্রতি খরচ (Cost per conversion)

তারা চার মাসের মধ্যে খরচ অর্ধেক করেও একই বিক্রয় ধরে রাখে। তারা গুগলে বিজ্ঞাপনে   একই খরচ করে বিক্রয় দ্বিগুণ করে।

Facebook এ কনভার্শন প্রতি খরচও আমূল কমেছে। ফলে ইক্যাবস (eCabs) উৎসাহিত হয়ে  সামাজিক মিডিয়া মার্কেটিং এর মোট বাজেট বৃদ্ধি করেছে।

পরিশেষে

eCabs অর্থহীনভাবে বুস্টিং এ খরচ করার পরিবর্তে ই -কমার্স এ কৌশলগত অনুসন্ধান এবং ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের লাভ দেখেছে।

ই -কমার্স এর মাধ্যম কৌশলগতভাবে বিষয়টির কাছে যাওয়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অপ্টিমাইজ করার দক্ষতা এবং পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা ক্লায়েন্টকে তার চাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি দিয়েছে। এটি তাদের বিজ্ঞাপনের বিনিয়োগ এবং বিক্রির মধ্যে একটি বিশাল গুণক প্রভাব হিসেবে কাজ করেছে, এবং বোনাস হিসাবে ব্র্যান্ড সচেতনতাও বিশাল হয়েছে।

ইকমার্স বিজনেসঃ ভালো বিক্রির জন্য আকর্ষণীয় প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন কতটুকু জরুরি?

ইকমার্স বিজনেসঃ ভালো বিক্রির জন্য আকর্ষণীয় প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন কতটুকু জরুরি?

আমাদের দেশে অধিকাংশ ইকমার্স বিজনেস উদ্যোক্তা পণ্য বিক্রি করার ব্যাপারে যতটা উৎসাহী থাকেন, প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন (বর্ণনা) লেখার ব্যাপারে ততটা নন।

অথচ অনলাইনে পণ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে পণ্যের যথাযথ বর্ণনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশনের মাধ্যমে কাস্টমার প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারে। 

গবেষণায় উঠে এসেছে – একটি ই কমার্স বিজনেস যথাযথ প্রোডাক্ট ইনফরমেশনের অভাবে ২০% সেল হারায়।  উপরন্তু, ৫০% ক্রেতা প্রোডাক্ট রিটার্ন করে যদি ডেসক্রিপশন এর সাথে তাদের কেনা প্রোডাক্ট ম্যাচ না করে ।

বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে একটি উদাহরণ দেই:

ধরুন, আপনি একটি স্মার্ট ফোন কিনতে চান। আপনার বাজেট ৩০ হাজার টাকা। আপনি ফোনে কিছু অ্যাপ ব্যবহার করতে চান যেটি অফিস ও ব্যক্তিগত কাজের জন্য খুব প্রয়োজন।

পাশাপাশি, আপনাকে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে নিয়মিত এদিক ওদিক ঘুরতে হয়। তাই ম্যাপ ব্যবহার করবেন – ফোনে ভালো মানের GPS থাকা জরুরি। আবার ছবি তোলাও আপনার শখ – ক্যামেরা ভালো হতে হবে । 

এবার আপনি ফোন কিনতে মার্কেটে গেলেন। একটি শপে প্রবেশ করলেন। তাদের বললেন, ফোন কিনবেন। তাঁরা আপনাকে অনেকগুলো মোবাইল ফোন বের করে দেখাতে লাগলো। আপনি ঠিক কোনটা নেবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।

শপের সেলস পারসন আপনাকে অনেক লভনীয় অফার দিচ্ছে কিন্তু আপনি চিন্তা করছেন আপনার কাজ গুলা এই ফোন দিয়ে করা যাবে তো? 

আপনি সেখান থেকে বের হয়ে অন্য একটি মোবাইল শপে গেলেন। দোকানের প্রবেশ করে সেলস পারসনকে বললেন আপনি ফোন কিনবেন। সেলস পারসন নিচের তথ্যগুলো আপনার কাছে জানতে চাইলো –

  • আপনার পছন্দের ব্র্যান্ড কোনটি?
  • আপনার বাজেট কত?
  • আপনি ফোন দিয়ে কি কি কাজ করতে চান? 
  • কি ধরনের অ্যাপ আপনি ব্যবহার করবেন?

আপনি তাকে সব তথ্য দিলেন। এবার সে আপনাকে চাহিদা মতো ফোন বের করে দিলো। আপনি আপনার পছন্দের ফোনটি বেছে নিলেন। 

পার্থক্য কোথায় লক্ষ্য করেছেন কি? আপনার অনুমান সঠিক – পার্থক্য হলো বিস্তারিত তথ্য প্রদানে। 

তাহলে কীভাবে লিখবেন প্রোডাক্টের ডেসক্রিপশন? এই পোস্টটিতে প্রোডাক্টের ডেসক্রিপশন লেখার এমন কিছু কৌশল বর্ণনা করা হয়েছে যা আপনার সোশ্যাল মিডিয়া বা ইকমার্স ওয়েবসাইটের কনভার্সন (সেল) রেট বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। 

জানতে হবে আপনার কাস্টমারদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য 

Buyer Persona হলো আপনার আদর্শ কাস্টমার সম্পর্কে সংগৃহিত তথ্যসমূহ। সম্ভাব্য কাস্টমারদের সম্পর্কে যত বিস্তারিত তথ্য আপনি সংগ্রহ করতে পারবেন তত সহজে আপনি তাদেরকে আপনার কাস্টমার বানাতে পারবেন। 

কাস্টমারদের সম্পর্কে যে সকল তথ্য আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে –

  • বয়স, লিঙ্গ
  • আয় ব্যয়
  • শিক্ষা ও সংস্কৃতি
  • তাদের শখ ও পছন্দ
  • মনস্তাত্ত্বিক আচরণ
  • ভৌগলিক অবস্থান
  • আগ্রহের বিষয়সমূহ  
  • অনুপ্রেরণার উৎস
  • সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি

আপনি যখন একটি প্রোডাক্টের ডেসক্রিপশন লিখছেন তখন মনে করবেন আপনি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষদের উদ্দেশ্যে তথ্য দিচ্ছেন। তাদের পছন্দ ও অপছন্দ বা চাহিদা সম্পর্কে জানতে হলে তাদের সম্পর্কে জানতে হবে। 

ধরুন – আপনার আদর্শ কাস্টমারের বয়স ৩৫-৪৫, তিনি মহিলা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছেন, তিনি খুব ভালো ছবি আঁকেন, অভিজাত এলাকায় তাঁর বাসা, ভালো পজিশনে চাকরি করেন। কেনাকাটার জন্য তাঁর হাতে সময় কম। 

আপনার ফ্যাশান ব্র্যান্ডের বিজনেস। আপনি এমন কাস্টমারদের উদ্দেশ্য করে যেভাবে ডেসক্রিপশন লিখবেন,

“কর্মজীবী মেয়েদের কর্মস্থলে প্রতিদিনের ব্যবহার উপযোগী আরামদায়ক ডিজাইন পোশাক।

কোয়ালিটি মেটেরিয়ালস দীর্ঘ সময় অফিসে বসে কাজ করার জন্য উপযোগী। প্রফেশনাল পরিবেশের সাথে মানানসই, এবং আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়।  

সৃষ্টিশীল মনের অভিজাত মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে “ABC” ব্র্যান্ডের ড্রেস বাসা অথবা অফিসে বসেই অর্ডার করে প্রোডাক্ট রিসিভ করুন,প্রতিটি অর্ডারে ডেলিভারি ফ্রী।”    

এই ডেসক্রিপশন বিশেষ শ্রেণীর কাস্টমারের সীমাবদ্ধতা ও সমাধানকে এড্রেস করেছে।   

কাস্টমার প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চায়। তাই কাস্টমারের পছন্দ সম্পর্কে জেনে প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশনকে তার পছন্দের সাথে ম্যাচ করাতে পারলে আপনার সেল সুনিশ্চিত ভাবে বাড়বে ।

প্রোডাক্টের বেনিফিট নিয়ে কথা বলুন

প্রোডাক্ট নিয়ে কথা না বলে এর বেনিফিট নিয়ে কথা বললে কাস্টমার বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে। প্রোডাক্টের ফিচার নিয়ে কথা বললে কাস্টমার শুধু প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানবে কিন্তু বেনিফিট নিয়ে কথা বললে জানবে প্রোডাক্ট হতে কী উপযোগিতা পাওয়া যাবে।

একটি মোটরবাইক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কাস্টমারদের বলতে পারে, তাদের তৈরি বাইক তেল সাশ্রয়ী। কিন্তু এর পরিবর্তে তারা যদি বলে, তাদের তৈরি বাইক লিটারে ৮০ কিঃমিঃ চলে তাবে তা কাস্টমারদের আরো বেশি আকৃষ্ট করবে। কারণ এই বক্তব্য থেকে কাস্টমার খুব সহজেই বুঝতে পারছে, বাইকথেকে তার ‘বেনিফিট’ কী হবে। 

আরো উদাহরণ দেয়া যায়। Unilever যখন ইন্ডিয়ার মার্কেটে তাদের নতুন পার্সোনাল কেয়ার ব্র্যান্ড ‘Ayush’ বাজারজাত শুরু করে,  তাঁরা প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশনে বেনিফিটের উপর জোর দেয়। জানলে অবাক হবেন, আয়ুস এর প্রোডাক্ট বাজারে আসার পরে ২০১১ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ৫০ টি বেসিক বিষয়ের উপরে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির প্রায় ৪.৫% মার্কেট শেয়ার কমে যায়।       

product description
product description example

  উপরের বিজ্ঞাপনটি খেয়াল করলে দেখবেন, প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন লেখার সময় প্রোডাক্ট বেনিফিটকে বেশি ফোকাস করা হয়েছে।  

একটি প্রোডাক্টের ডেসক্রিপশনে বেনিফিট ফোকাস করতে নিচের বিষয়গুলো অনুসরন করতে পারেন-

Product description
Product description benefits

গল্প বলুন, ইমোশনালি কানেক্ট করুন 

কাস্টমার গল্প শুনতে ভালোবাসে। বেনিফিটের সাথে ইমোশনকে মিশিয়ে প্রোডাক্ট নিয়ে গল্প বলুন। 

এটি এখন ‘Human Psychology’ এর একটি প্রসিদ্ধ তত্ত্ব যে,  মানুষ প্রথমে আবেগের ভিত্তিতে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় এবং তারপরে মস্তিষ্কের যুক্তিযুক্ত অংশগুলির মাধ্যমে সিদ্ধান্তটি ন্যায়সঙ্গত প্রমাণ করার চেষ্টা করে।

তাই আপনি যখন ইমোশন ও যুক্তির সমন্নয়ে কাস্টমারকে প্রভাবিত করতে পারবেন, আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা  নিশ্চিতভাবে বেড়ে যাবে।

নিউরোসাইন্টিস্ট Antonio Damasio প্রমান পেয়েছেন, যে সকল মানুষ আবেগ অনুভব করে না তাদের পক্ষে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন। 

কাস্টমাররা যদি ইমোশনালি প্রভাবিত না হয় তবে তাদের আপনার থেকে প্রোডাক্ট কেনার সম্ভাবনা কম। 

বড় বড় ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনগুলো একটু খেয়াল করুন – তারা কী ‘মেসেজ’ দেয়ার চেষ্টা করছে। যেমন – Dove’s “Real Beauty” campaign মেয়েদের সৌন্দর্য নিয়ে সমাজের প্রচলিত ধারণাকে বড় একটা ধাক্কা দিয়েছিলো। এই বিজ্ঞাপনের ফলে ব্র্যান্ড ভ্যালু বৃদ্ধির পাশাপাশি সব শ্রেণী ও বয়সের মেয়েদের মধ্যে Dove এর একটা লয়াল কাস্টমার গ্রুপ তৈরি হয় । 

আরেকটি বিজ্ঞাপনের কথা বলা যেতে পারে – Nike’s “Just Do It” এই বিজ্ঞাপনে Nike মানুষ হিসাবে আমাদের সীমাবদ্ধতাকে চ্যালেঞ্জ করে তা ভাঙার আহ্বান জানিয়েছিল । 

দু’টি অ্যাডেই ছিল আবেগের যথার্থ ব্যবহার। এর ফলে ব্র্যান্ড দুটি আজ অবধি সেরাদের কাতারে রয়েছে। 

যে কোনো মার্কেটিং মেসেজের মূল লক্ষ্যই হলো কাস্টমারদের হৃদয়কে স্পর্শ করার মাধ্যমে ব্র্যান্ডটির প্রতি এক ধরণের Emotional Biasness তৈরী করা । 

যেমন  Unilever তার  আয়ুস ব্র্যান্ড নিয়ে বলছে, তাঁরা ৫০০০ বছরের পুরনো আয়ুর্বেদিক জ্ঞানকে মডার্ন লাইফস্টাইলের সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করছে। 

লিপটন চা এর নাম নিশ্চয় শুনে থাকবেন। ইন্ডিয়ার একটি অন্যতম সেরা চায়ের ব্র্যান্ড। তাদের একটি বিজ্ঞাপন দেখুন –

Lipton Tea Advertisement

“Matcha Green Tea”

Legend has it that Buddhist monks used Matcha to enhance their focus for long hours of meditation, and to be alert and present in the moment. Today’s Matcha leaf comes from shade grown green tea whose chlorophyll-rich leaves are finely ground into a brilliant green powder, prized for its abilities.” 

বিজ্ঞাপনে তাঁরা বলছে, বুদ্ধ সন্ন্যাসীরা ধ্যান করার সময় MATCHA  নামে এক ধরনের চা ব্যবহার খেতেন যা তাদের মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করতো। সেই MATCHA চায়ের উপাদানে লিপটন  MATCHA Green Tea তৈরি করে।

গুলো একটু গভীর ভাবে ভেবে দেখুন। বুঝতে পারবেন কেন কাস্টমারকে আপনার প্রোডাক্টএর সাথে ইমোশনালি কানেক্ট করা দরকার। 

একটি সফল স্টোরি বেইজেড প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন লিখতে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনার জানতে হবে –

  • কে এই পণ্য তৈরি করেছে?
  • কিভাবে তাঁরা এই পণ্য তৈরি করতে অনুপ্রাণিত হয়েছে?
  • পণ্যটি তৈরির যাত্রা কী ছিল?
  • পণ্যটি ক্রেতার প্রতিদিনের জীবনে, অভ্যাসে, সৌন্দর্যে কী পরিবর্তন আনবে?

এই চারটি প্রশ্নের উত্তর জেনে নিন, আর লিখে ফেলুন আপনার প্রোডাক্টের গল্প। বিক্রি বাড়বে এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরী হবেই।  

প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশনে থাকতে হবে Power Words 

যথাযথ শব্দ চয়ন ‘বক্তব্যে’ পার্থক্য তৈরি করে। কিছু এমন শব্দ আছে যা মানুষকে আপনার প্রোডাক্ট কিনতে প্রভাবিত করতে পারে। আমরা অনেক সময় বলি  “Nice বা High Quality” এই শব্দগুলো ব্যবহার করি যা গড়পড়তা কিন্তু এর পরিবর্তে যদি আপনি ব্যবহার করেন, “stunning” or “sensational”.এই শব্দগুলি আকর্ষণ সৃষ্টি করে। জেনে নিন এমন আরও কিছু Power words  – 

এই শব্দগুলির যথাযথ ব্যবহার করে কাস্টমারদের প্রোডাক্টের প্রতি আকৃষ্ট করে এবং ভাবতে সাহায্য করে যে প্রোডাক্টটি কিনতে তিনি যে টাকা খরচ করছেন তা যথার্থ।  

Power Word এর অসাধারণ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় কাস্টমারদের ‘pain point‘ নিয়ে কাজ করার সময়। প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলো এটির চর্চা নিয়মিতভাবে করে।

কিছু শব্দ যা জরুরী প্রয়োজনকে হাইলাইট করে

  • Now
  • Hurry
  • Quick
  • Limited
  • Running Out
  • Fast
  • New
  • Deadline
  • Last Chance
  • Final
  • Never again
  • Expires

সবাই বিশেষ কিছু পেতে ভালবাসেন – নিচের শব্দগুলি কাস্টমারদের মনে বিশেষ কিছু পাবার ইচ্ছেকে বাড়িয়ে দেয়, 

  • Members Only
  • Ask for an Invitation
  • Be one of the few
  • Become an insider
  • Be the first to hear about…
  • Only available to subscribers/existing customers
  • Limited
  • Class full
  • Login required

ভরসা পাবার আকাঙ্ক্ষা সব কাস্টমারেরই থাকে – সে রকম কিছু শব্দ যা ভরসাকে ‘হাইলাইট’ করে। 

  • Lifetime
  • Guarantee
  • Authentic
  • Certified
  • No obligation
  • Dependable
  • No risk
  • Proven
  • Secure
  • Verify
  • Safety
  • Backed
  • Endorsed
  • Protected
  • Unconditional
  • Money back
  • Genuine

গোপন বিষয়ের উপর মানুষের আকর্ষণ প্রবল ভাবে কাজ করে – নিচের শব্দগুলোর সেই আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দেয় –

  • Secret
  • Confidential
  • Private
  • Forbidden
  • Controversial
  • Confession
  • Backdoor
  • Insider

প্রোডাক্টের ডেসক্রিপশন লিখার সময় উপরের লিস্টগুলো থেকে আপনার প্রয়োজন মাফিক Power Word বেছে নিন। 

প্রোডাক্টের ডেসক্রিপশনে নিয়ে আসুন ভিন্নতা

প্রোডাক্টের ডেসক্রিপশনে নিয়ে আসুন ভিন্নতা যাতে সহজেই কাস্টমার আপনার প্রোডাক্টের কথা মনে করতে পারে।  রিসার্চে বলা হচ্ছে, একটি পেজে যা লেখা থাকে মানুষ তাঁর মাত্র ১৬% পড়তে মনোযোগ দিতে পারে।  মানুষের মেমরি ক্ষণস্থায়ী তাই ডেসক্রিপশন এমন ভাবে লেখা উচিত যেন মূল বিষয়গুলো তাঁর মনোযোগ আকর্ষণ করে।

দেখুন https://www.backpacks.com/  তাদের প্রোডাক্টের ডেসক্রিপশনকে কীভাবে  একটি নতুন মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে – 

 

 

Description Example
Product Description Example

 

তাঁরা বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করার পাশাপাশি চিত্র সহ দেখিয়েছে তাদের তৈরি ব্যাগে কী কী বহন করতে পারবেন। ওয়েবসাইটে আসার পর এই রকম একটি ডেসক্রিপশন পড়লে কাস্টমারের স্মৃতিতে তথ্যগুলো গেঁথে যায়। এভাবেই একটি প্রোডাক্টের ডেসক্রিপশন কাস্টমারের উপর প্রভাব বিস্তার করে আর তার প্রোডাক্ট কেনার সিদ্ধান্ত নেয়াকে সহজ করে দেয়। 

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন    

কীওয়ার্ড যুক্ত প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন অন পেজ অপটিমাইজেশনের কাজ করে। গুগল সার্চে উপরে নিয়ে আসে আপনার ওয়েবসাইটটিকে। 

এক্সপার্টদের মতে SEO এর জন্য কী ওয়ার্ড প্লেস করার বেস্ট প্র্যাকটিস হলো , 

    • Page titles
    • Meta descriptions
    • Image tags (called ALT tags)
    • Product descriptions

অর্থাৎ একটি পরিকল্পিত প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন আপনার ওয়েবসাইটটি অর্গানিক সার্চের জন্য অপটিমাইজ করে। 

Product SEO

 

ইনফোগ্রাফিক প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন

ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্টের জন্য এই টাইপের ডেসক্রিপশন খুব চমৎকার কাজ করে । ছবি এখানে কথা বলে আর লেখা সেটির ব্যাখ্যা করে। দেখুন Oppo কীভাবে তার একটি ফোন মডেলের ডেসক্রিপশন দিয়েছে ।

রিসার্চ বলছে  একটি প্রোডাক্ট নিজ হাতে নিয়ে দেখলে সেটি কেনার ইচ্ছে তৈরি হয় আর ই কমার্স বিজনেসে প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি কাস্টমারের মনে সেই অনুভূতি তৈরি করে । 

এখন আপনার প্রোডাক্টের ডেসক্রিপশন লেখার জন্য টেমপ্লেট বা ফরম্যাট তৈরি করে ফেলুন। কিছু প্রশ্ন দেয়া হল যা এই কাজে আপনাকে সাহায্য করবে। 

  • আপনার পণ্যটি কী সমস্যার সমাধান করছে?
  • আপনি কোন পাওয়ার ওয়ার্ড ব্যবহার করবেন? 
  • আপনার ব্র্যান্ডের কোন গল্পটি কাস্টমারদের বলবেন?
  • প্রোডাক্টের ছবি কি মূল বৈশিষ্ট্যগুলি এবং সুবিধাগুলি স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করতে সক্ষম হচ্ছে? 

এই প্রশ্নগুলি সংগ্রহে রাখুন আর প্রতিবার একটি আকর্ষণীয় প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন লিখতে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজুন। 

পরিশেষ   

প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশনের মূল লক্ষ্য হলো কাস্টমারকে প্রোডাক্ট কিনতে উদ্বুদ্ধ করা। 

অনলাইনে কোন প্রোডাক্ট কেনার আগে সব কাস্টমারেরই প্রোডাক্ট সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন থাকে। প্রোডাক্টের বর্ণনা যদি আকর্ষণীয় না হয়, প্রোডাক্ট সম্পর্কিত সকল তথ্য যদি কাস্টমারের সামনে তুলে ধরা না হয়, কাস্টমারের সম্ভাব্য সকল প্রশ্নের উত্তর যদি প্রোডাক্টের ডেসক্রিপশনে না থাকে, তাহলে কাস্টমার পণ্যটি কিনতে আগ্রহ বোধ করে না।  

তাই আপনার প্রোডাক্টের ডেসক্রিপশন লিখতে উপযুক্ত সময় ব্যয় করুন এবং উপরের পরামর্শ গুলো অনুসরণ করুন। আকর্ষণীয় প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন লিখুন এবং বেশি বেশি প্রোডাক্ট সেল করুন !  

ফেসবুক মার্কেটিং রহস্য- সফলতা পেতে কী করবেন আর কী করবেন না

ফেসবুক মার্কেটিং রহস্য- সফলতা পেতে কী করবেন আর কী করবেন না
ফেসবুক মার্কেটিং নিয়ে গুগলে সার্চ দিলেই ভুরি ভুরি পরামর্শ পাবেন। ফেসবুক দিয়ে কিভাবে সেল বাড়াবেন? কিভাবে কাস্টমার টার্গেট সেট করবেন ? কিভাবে বাজেট নির্ধারণ করবেন ইত্যাদি।

আবার এমনও অনেকে আছেন, যাদের ধারণা – লোকেশন, বয়স আর জেন্ডার সেট করে মাস্টার কার্ড দিয়ে ডলার পে করে দিলেই ‘ফেসবুক মার্কেটিং’ হয়ে গেল!!

ব্যাপারটা কিন্তু এতো সহজ না।

আপনাকে যদি প্রশ্ন করি, ফেসবুকে আপনার মতো লাখো সেলার অ্যাড দিচ্ছেন, সবার অ্যাড কি কাস্টমার দেখছে?

সবাই টার্গেট সেট করে অ্যাড দিচ্ছে কিন্তু অডিয়েন্স এঙ্গেজ হচ্ছে না। আপনি কি জানেন কেন অডিয়েন্স আপনার পেজে বা পোস্টে এঙ্গেজ হচ্ছে না?

ফেসবুকে প্রতিদিন ৪.৭৫ বিলিয়ন কনটেন্ট শেয়ার হয়। এই বিশাল সংখ্যার ভিড়ে আপনার বিজনেস পোস্ট বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাতে ফেসবুক কিভাবে কাজ করে জানেন কি?

বেশির ভাগ ইকমার্স বা অনলাইন উদ্যোক্তার এই প্রশ্নগুলোর উত্তর অজানা।

এই ব্লগটি আপনাকে ফেসবুক মার্কেটিং এ সফলতার রহস্য সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে। পরবর্তী ফেসবুক মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালানোর সময় এই বিষয়গুলো আপনার ক্যাম্পেইনকে আরো অর্থবহ ও সফল করবে।

EdgeRank এর যুগে

ফেসবুকে একটি বিজনেসের অনেকগুলো প্রোমোশন চালানোর পরে দেখা যায় – অল্প কিছু পোস্ট ভালো পারফর্ম করে। বাকি পোস্টগুলো ভালো সাড়া পায় না।

এতে করে আপনার ফেসবুক মার্কেটিং-এর খরচ বাড়ে। প্রমোশনাল ক্যাম্পেইন থেকে সুফল আসে না।

কেন এমন হয়? আমাদের কি করনীয়?

প্রথমে আমাদের জানতে হবে ফেসবুক কীভাবে কাজ করে।

ফেসবুক একটি সফটওয়্যার,এর একটি গঠন প্রণালী আছে। এর কর্মপ্রানালী কিছু সুপরিকল্পিত নিয়মকানুন ও গানিতিক হিসাবনিকেশের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কম্পিউটারের ভাষায় এই নিয়মকে এলগরিদম বলে ।

ফেসবুক ২০১১ সাল পর্যন্ত EdgeRank এলগরিদম ব্যবহার করত। মুলত তিনটা বিষয়ের উপর এই EdgeRank এলগরিদম কাজ করতো।

Affinity, Weight এবং Time decay

Affinity – আপনার পোস্টের এংগেইজমেন্ট বিহেভিয়ার নির্ণয় করে এটি। পোস্টে এংগেইজমেন্টের পরিমান , কারা এংগেইজড, যারা এংগেইজড হয় তারা লাইক, শেয়ার, কমেন্ট করছে কি? এই ডাটা গুলোর উপর ভিত্তি করেই আপনার পোস্ট কতজনের নিউজফিডে শো হবে ফেসবুক তা নির্ধারণ করতো।

Weight – এটি পোস্টের ধরন নির্ণয় করে। কি ধরনের কন্টেন্ট আপনি পোস্ট অথবা শেয়ার করছেন? টেক্সট, ছবি, ভিডিও প্রতিটি আলাদা ধরনের পোস্টকে ফেসবুক ভিন্নভাবে ট্রিট করে। ফলে আপনার পোস্টের সাথে মিল রেখে নিউজফিডে কন্তেন্ট আসে এবং আপনি অন্যদের কাছে পৌঁছান।

Time Decay – আপনার পোস্টটি কতটুকু পুরানো তার নির্দেশক। ফেসবুক রিসেন্ট পোস্টগুলো নিউজ ফিডে বেশি দেখায়। আপনার পোস্ট যত পুরানো হতে থাকবে, আপনার রিচ তত কমতে থাকবে। তবে নিয়মিত ভাবে এংগেইজমেন্ট পেলে রিচ বাড়তে থাকে।

২০১৩ সালে এসে ফেসবুক EdgeRank এলগরিদম ব্যবহার বন্ধ করে মেশিন লার্নিং এলগরিদম ব্যবহার শুরু করে।

মেশিন লার্নিং এলগরিদম কী?

সহজ ভাষায়, কোন সফটওয়্যার যখন অপারেটরের ব্যবহারের ধরণ থেকে নিজে নিজে শেখে এবং সম্ভব্য পরবর্তী করণীয় (Set of Tasks) সম্পর্কে অপারেটরকে গাইড বা সাজেস্ট করে সেটিই মূলত মেশিন লার্নিং। আপনি যত বেশি একটি সফটওয়্যার পরিচালনা করবেন, সফটওয়্যার এর নিজে নিজে শেখার প্রবনতা তত বেশি ত্বরান্বিত হবে।

এই মেশিন লার্নিং এলগরিদম থেকে কার্যকারী ফল পেতে আপনাকে হতে হবে একটিভ ইউজার।

এই পদ্ধতিতে ফেসবুক ৪ টি বিষয়ের উপর প্রতিটি পোস্টের রাঙ্কিং করে – সেটির উপর ভিত্তি করে নিউজ ফিডে কনটেন্ট দেখায়। এগুলো হলো,

Inventory

আপনার নিউজ ফিডে দেখাবার মত কতগুলো পোস্ট জমা আছে তার উপর।

Signals

যেটি নির্দেশ করে কি ধরনের পোস্ট, কে পোস্ট করছে, পোস্টটির বয়স, উদ্দেশ্য ইত্যাদি ।

Predictions

পোস্টটিতে কি ধরনের রিঅ্যাকশন হতে পারে, কত মানুষ এটির সাথে যুক্ত হচ্ছে। কতজন পজেটিভ রিঅ্যাক্ট করছে।

Score

অডিয়েন্সের সকল সম্ভাব্য রিঅ্যাকশনের উপর ভিক্তি করে ফেসবুক প্রতিটি পোস্টের একটি স্কোর নির্ধারণ করে। সময়ের সাথে এই স্কোর পরিবর্তন হয় ।

ফেসবুকের এই মডেলের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মার্ক জুকারবার্গ যেটি বুঝিয়েছেন তা হলো, Meaningful Interactions Are Heavily Weighted অর্থাৎ অর্থবহ প্রতিক্রিয়াগুলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

এখানে অর্থবহ মানে হলো, আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কোন পোস্টগুলো পছন্দ করছে। আর সেটি বোঝা যায় যখন কেউ লাইক, শেয়ার ও কমেন্ট করে।

এই মডেলের একটি খুব চমৎকার উদাহরণ হলো বিয়ে বা চাকরি সংক্রান্ত পোস্টগুলা। খেয়াল করলে দেখবেন, আপনি আপনার ফ্রেন্ডলিস্টের মানুষদের বিয়ে বা চাকরি সংক্রান্ত পোস্ট গুলা সাধারণত মিস করেন না। কারণ বিয়ে বা চাকরি সংক্রান্ত পোস্টগুলোতে সবাই লাইক দেয় বা ”শুভ কামনা’ জানায়।

ফলে ফেসবুক এই টাইপের পোস্টগুলোকে ‘high ranking’ করে এবং পোস্টদাতার ফ্রেন্ডলিস্টের সবার ফীডে পাঠাতে শুরু করে । ফলে আরো বেশি মানুষ পোস্ট টা দেখে, আরো বেশি মানুষ লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার করে এবং এটা আরো বেশি মানুষের ফীডে যেতে থাকে!

এখানে যে চারটি বিষয়ের কথা বলা হলো তার মধ্যে বিজ্ঞাপনদানকারী শুধুমাত্র যে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তা হলো “Signals”

এই Signals কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয় : Active Signals এবং Passive Signals

Passive Signals হলো পোস্টিং টাইম, পোস্টের ধরণ, পোস্টের ভিউ (Post View) ইত্যাদি ।

Active Signals হলো লাইক, কমেন্ট, শেয়ার বা অন্যান্য active events যা পোস্টের পজিটিভ/নেগেটিভ এনগেজমেন্ট নির্দেশ করে।

ফেসবুকে করা একটি পোস্ট এই প্রসেসগুলো পার হয়ে যখন র‌্যাঙ্কিং এ উপরে উঠে আসে তখনই এটি অর্থবহ বলে ফেসবুক মনে করে।

যদি কেউ অর্গানিক পারফর্মেন্সে ভালো পোস্টগুলো খুঁজে বের করে ডলার খরচ করে সেটি বুস্টিং করে তবে তা সর্বোচ্চ আউটপুট নিয়ে আসবে।

যারা এই প্রক্রিয়া না জেনে যেকোনো একটি পোস্ট বুস্ট করে পজিটিভ রেজাল্ট আসবে এমন আশা করেন – তাঁরা কষ্টার্জিত টাকা পানিতে ফেলছেন। এখান থেকে আপনি কিছুই আশা করতে পারেন না।

আপনাকে প্রথমে এমন একটি কনটেন্ট তৈরি করতে হবে যার অর্গানিক পারফর্মেন্স ভালো। তবেই আপনি বুস্টিং এর জন্য টাকা খরচ করলে উপযুক্ত রিটার্ন পাবেন। যেন তেন একটা পোস্ট দিয়ে সেটা বুস্ট করলেই আপনার সেল আসবে – এটা ভাবা সম্পূর্ন ভুল এবং এমনটা ঘটেও না!

এখন আপনি মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন ফেসবুক কীভাবে কাজ করে। তাহলে কীভাবে অর্থবহ প্রতিক্রিয়া (Meaningful Engagement) পাবার মত কনটেন্ট তৈরি করবেন সেটি জেনে নেয়া যাক।

পাঁচটি খুব সাধারণ কিন্তু দারুণ কার্যকারী কনটেন্ট তৈরির কৌশল সম্পর্কে জানাবো, যা আপনার কনটেন্টের র‍্যাঙ্কিং স্কোর বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে। ফেসবুক মার্কেটিং এ সফল হতে এর কোন বিকল্প নেই।

কথোপকথন শুরু করুন

শুধু মাত্র প্রোডাক্ট বেচাকেনার কথা না বলে ফেসবুক পোস্টের কনটেন্ট এমন ভাবে করুন যেখানে অডিয়েন্স লাইক শেয়ার বা কমেন্ট করতে উৎসাহিত হবে, কিন্তু শর্ত হচ্ছে সেটি লিখে বলা যাবে না। এর ভালো উপায় হলো অডিয়েন্সকে প্রশ্ন করতে হবে। অডিয়েন্স প্রশ্ন করলে তারা উত্তর দিতে চাইবে।

ফেসবুকে উত্তর দেবার জন্য কমেন্ট অপশন আছে। যদি লিখে উত্তর না দেয় তবে লাইক দিয়ে সেটির পক্ষে অবস্থান নেবার সুবিধা আছে।

পজিটিভ এঙ্গেজমেন্ট আপনার পোস্টের র‍্যাঙ্কিং বাড়ায় আর নেগেটিভ এঙ্গেজমেন্ট র‍্যাঙ্কিং কমায়। আপনার লক্ষ্য পজিটিভ এঙ্গেজমেন্ট।

টার্গেট অডিয়েন্সের দিকে নজর দিন

আপনি পোস্টটি কার জন্য করছেন সেটি সম্পর্কে পরিষ্কার জানতে হবে। পোস্টের লেখা ও ছবি টার্গেট অডিয়েন্সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কারা কেনে, তারা কী ধরণের লেখা বা ছবি দেখতে চায়। প্রয়োজনে আপনার রেগুলার কাস্টমারদের সাথেও কথা বলতে পারেন যে আপনার ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তারা কী ধরণের আপডেট আশা করে ।

পোস্টের অর্গানিক পারফমেন্সকে প্রাধান্য দিন

যদি এমন কোন পোস্ট আপনি বুস্ট করতে চান যেটির অর্গানিক পারফমেন্স ভালো না তবে সেটি হতে রেজাল্ট পেতে আপনার বুস্টিং বাজেট বেশি করতে হবে। কিন্তু যদি অর্গানিক পারফমেন্স ভালো এমন পোস্টের জন্য ডলার খরচ করে বুস্ট করেন তবে আপনি সেখান থেকে বেস্ট রেজাল্ট পাবেন। এটিকে আমরা CPC দিয়ে পরিমাপ করি।

বিষয়টি অনেকটা এমন, একটি দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে গতিতে উঠানোর মতো। কিন্তু যদি একটি চলমান গাড়িকে ধাক্কা দেন সেটি আরও গতি পাবে।

আপনার পেজের কোন পোস্টগুলোর Organic Performance ভালো, ফেসবুক নিয়মিত তার নোটিফিকেশন দেয় । আপনি সেই পোস্টগুলো বুস্ট করতে পারেন ।

ক্লিক (click bait) করতে বলা থেকে বিরত থাকুন

অনেকেই তার পোস্টের শেষে লাইক শেয়ার বা কমেন্ট করার জন্য অডিয়েন্সের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এটিকে বলা হয় “click bait” এটি পোস্টে কোনো ভালু অ্যাড করে না। আপনাকে কনটেন্ট তৈরি করতে হবে এমনভাবে যেখানে আপনি না বললেও অডিয়েন্সের নিজ ইচ্ছাতেই লাইক কমেন্ট বা ক্লিক করবে।

পোষ্টের পারফর্মেন্স সম্পর্কে জানুন

সবশেষে আপনাকে দেখতে হবে আপনার কোন কোন পোস্টগুলির অর্গানিক পারফমেন্স ভালো। অডিয়েন্সের রিঅ্যাকশন কী ছিল, তাঁরা কীভাবে এঙ্গেজ হয়েছে সেই পোস্টটিতে। পরবর্তী পোস্ট তৈরির সময় সেগুলো মাথায় রেখে পোস্ট অপ্টিমাইজড করুন।

আপনার বিজনেসের জন্য গুরুত্ব রাখে এমন সকল অডিয়েন্স এর বিহেভিওর সম্পর্কে জানতে ফেসবুকের ফ্রি টুলস Facebook Audience Insights ব্যবহার করুন।

ফেসবুকে প্রতিদিন ৪.৭৫ বিলিয়ন শেয়ার হওয়া কনটেন্টগুলোর ভিড়ের মাঝে আপনার পোস্ট সবার নজরে নিয়ে আসতে অডিয়েন্সদের ভালো ভাবে বোঝার চেষ্টা করুন আর তৈরি করুন অর্থবহ কনটেন্ট।

একটি উদাহরণ দিয়ে শেষ করবো যা এতক্ষণ ব্যাখ্যা করা বিষয়টার চিত্র আপনার সামনে তুলে ধরবে,

ধরুন, আপনি একটি রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে ঢুকলেন। পছন্দমতো একটি জায়গা বেছে নিয়ে বসলেন। সামনে থাকা মেন্যু থেকে আপনার পছন্দের খাবার অর্ডার দিলেন। ধরুন, মেন্যুটির নম্বর ৪। ওয়েটার অর্ডার পেয়ে খাবার অর্ডার পরিবেশন করলো। কিন্তু খাবারে ঝাল বেশি দেয়ায় আপনি তাকে সেটি জানালেন।

ওয়েটার সেটি পরিবর্তন করে আপনার নির্দেশনা মেনে আবার খাবার পরিবেশন করলো। আপনি তৃপ্তি নিয়ে খেলেন। বিল দিয়ে চলে গেলেন।

পরের দিন আবার সেই রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে আসা মাত্রই ওয়েটার আপনাকে আগের দিনে বসা সেই টেবিলে বসতে দিলো। আপনি সেইম মেন্যু নম্বর ৪ অর্ডার করলেন, এবার ঝাল কিছু ঠিকমতো ছিল।

দেখা গেল আপনার মতো আরও অনেকই সেই ৪ নম্বর মেন্যু বেশি অর্ডার করেছে। তাই এবার রেস্টুরেন্টে ওনার সেই মেন্যুটি লিস্টে সবার প্রথমে রাখলেন। এবার যেই কাস্টমার সেই রেস্টুরেন্টে যাবে মেন্যু খুলেই সেই ৪ নম্বর মেন্যু সবার প্রথমে দেখতে পাবে।

এখানে রেস্টুরেন্টে হলো ফেসবুক, খাবার হলো কনটেন্ট, ওয়েটার ও রেস্টুরেন্টে ওনার হলো মেশিন লার্নিং এলগরিদম। রেস্টুরেন্টের সকল খাবার আইটেম হলো ইনভেন্টরি, আপনার খাবার পছন্দের ধরণ হলো সিগন্যাল, সবার দেয়া মতামত হলো প্রেডিকশন আর বেশি পছন্দ করা অর্থ হলো স্কোর।

পরিশেষে,

আপনার টার্গেট অডিয়েন্স সম্পর্কে জানুন, অর্থবহ কনটেন্ট তৈরি করুন, পোস্টের পারফর্মেন্স পরিমাপ করুন, বুস্ট করুন। ফেসবুকের মাধ্যমে বেশি বেশি সেল করুন।

ইকমার্স প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি – সফল হতে যে বিষয়গুলো জানা জরুরী

ইকমার্স বিজনেসে কাস্টমারদের নিকট প্রোডাক্ট সেল করার উদ্দেশ্যে আকর্ষণীয় উপায়ে প্রোডাক্টের ছবি তোলাই হলো ইকমার্স প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি। 

সাধারণ তোলা ছবি আর ইকমার্স বিজনেসের জন্য তোলা প্রোডাক্টের ছবির মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল এটির উপস্থাপনা শৈলী। আমাদের মস্তিষ্কে তথ্য প্রবাহের ৯০% দৃষ্টিলব্ধ বিষয়। তাই ইকমার্স বিজনেসে মনোযোগ আকর্ষক দৃশ্যমান কনটেন্ট হিসেবে ফটোগ্রাফির স্থান সবার প্রথমে। 

প্রোডাক্টের মানসম্মত ছবি কাস্টমারদের কাছে একটি ব্র্যান্ডের গ্রহন যোগ্যতা বাড়িয়ে তোলে। জরিপে দেখা গেছে ৯৩% কাস্টমার ই কমার্স কেনাকাটায় প্রোডাক্টের ছবিকে প্রাধান্য দেয়। 

প্রোডাক্টভেদে বিভিন্ন রকম ই কমার্স ফটোগ্রাফি

ই কমার্স বিজনেসে ৫ ধরনের প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফির প্রচলন আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি।  

Product only

এই ক্যাটাগরিতে প্রোডাক্টের খুবই সাবলীল উপস্থাপনা করা হয়। ছবির ৭৫% বাকগ্রাউন্ড সাদা থাকে। এর কারণ হলো প্রোডাক্টের সর্বোচ্চ দৃশ্যমানতা নিশ্চিত করা। কাস্টমার আর প্রোডাক্টের ফটোর মাঝে সকল মনোযোগ ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী অবজেক্ট সরিয়ে ফেলা হয়।  

অ্যামাজন প্রোডাক্ট বিক্রি করতে এই টাইপের ফটোগ্রাফি বাধ্যতামূলক। অ্যামাজন এর Product only ফটোগ্রাফিগুলো দেখতে এই লিংকটিতে ক্লিক করুন । 

যে কোন প্রকার প্রোডাক্ট নিয়ে ইকমার্স বিজনেস করছেন এমন সকলের জন্য এই ফটোগ্রাফি পদ্ধতি উপযুক্ত। ডিজাইন নির্ভর প্রোডাক্ট সেলের জন্য এই ফটোগ্রাফি আদর্শ। 

Lifestyle

এই ফটোগ্রাফি একটি প্রোডাক্টের ব্যবহারিক চিত্র তুলে ধরে। কাস্টমার ছবিটির ব্যবহারকারীর স্থানে নিজেকে  কল্পনা করতে শুরু করে। এই ধরনের ফটোগ্রাফির মাধ্যমে প্রোডাক্টের বিশেষ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয় যা কাস্টমারদের উৎসাহী করে সেই প্রোডাক্ট কিনতে। ছবির সাথে কাস্টমারের একটি অদৃশ্য যোগাযোগ তৈরি হয়। 

লিংকে ক্লিক করে দেখে নিন কীভাবে আমাদের দেশীয় ব্র্যান্ড YELLOW তাদের ফেসবুক পেজে প্রোডাক্ট প্রমোট করতে Lifestyle ফটোগ্রাফি ব্যবহার করে। 

কাদের জন্য এই ফটোগ্রাফি আদর্শ:

  • পোশাক, গহনা, কসমেটিকস এবং এই ধরণের পণ্য যারা বিক্রি করেন  
  • ইউনিক কনসেপ্ট প্রোডাক্ট
  • আলংকারিক পণ্য বা শিল্প রুচিসম্মত পণ্য
  • প্রোডাক্টের জন্য এর ব্যবহারবিধি জানা গুরুত্বপূর্ণ এমন সব প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে 

Hero 

এই পদ্ধতিতে প্রোডাক্টকে অত্যন্ত জোরালো ভাবে উপস্থাপন করা হয়। এর আকার লাইফ স্টাইল প্রোডাক্টের ছবির থেকে সাধারণত  বড় হয়। ছবির সাথে লেখা যোগ করা হয়ে থাকে। 

কাদের জন্য ও কেন এই ফটোগ্রাফি আদর্শ –

  • বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট সরবরাহকারী ব্যবসায়ী
  • যারা তাদের ওয়েবসাইটে ভিজিটর নিয়ে আসতে চায়।  
  • সেলস ও মার্কেটিং- এর ইভেন্টের কাজে
  • সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যানার হিসেবে

360-Degree 

এই পদ্ধতিতে কাস্টমার প্রোডাক্টের একটি ছবিতেই বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে সেই প্রোডাক্ট দেখতে পায়। ছবিটি বিভিন্ন এঙ্গেলে অটোমেটিক রোটেট হতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এটি ম্যানুয়ালি রোটেট করার সুবিধাও থাকে। 

এই ধরনের ছবির কনভার্সন রেট অনেক বেশি। কীভাবে করবেন সেজন্য ৩৬০ ডিগ্রি  লিংকটি ভিজিট করতে পারেন। 

কাদের জন্য ও কেন এই ফটোগ্রাফি আদর্শ:

  • যে সকল প্রোডাক্টের প্রতিটি এঙ্গেল কেনার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে – যেমন মোবাইল ফোন। 
  • যে সব প্রোডাক্টের কেনার ক্ষেত্রে ডিজাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়। যেমন – জুতা ।
  • বড় পণ্য যেমন আসবাব বা সরঞ্জাম ।

GIF or Video 

এনিমেটেড প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি ছবির থেকে একটু বেশি কিছু যা প্রোডাক্টের ভিন্নতা সম্পর্কে তাৎক্ষণিক ধারণা দিতে পারে। চাইলে এটি আপনি নিজেই তৈরী করে নিতে পারেন। অনলাইনে বিভিন্ন ফ্রি টুল আছে যেগুলোর সাহায্যে আপনি এনিমেটেড প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি তৈরী করতে পারেন। এমন একটি টুল হলো: https://giphy.com  

কখন এই পদ্ধতি ব্যবহার করবেন:

  • প্রোডাক্টের ভিন্নতা (রং, সাইজ ইত্যাদি) তুলে ধরতে 
  • সরঞ্জামসমূহের মার্কেটিং-এ
  • এমন প্রোডাক্ট যা কোন নির্দিষ্ট কাজের জন্য প্রস্তুতকৃত, কিন্তু কাস্টমার সেটি সম্পর্কে অবগত না।  

প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফির খরচ

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেকের মধ্যে মোবাইল বা ঘরে থাকা ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে ফটোগ্রাফি সেরে ফেলার প্রবনতা থাকে। মনে হতে পারে ছবি তো ছবিই । এমনটা ভাবলে আপনি এই ওয়েবসাইটে ঘুরে আসতে পারেন। 

http://bdphotographers.com/  তাদের ফটোগ্রাফির মূল্য শুরু ৫ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার পর্যন্ত। 

প্রফেশনালদের ফটোগ্রাফির ধরণ এমন যেখানে একজন কাস্টমার ছবি দেখেই পছন্দের তালিকায় সেই পণ্যটিকে স্থান দিয়ে ফেলেন। 

তবে আপনি মধ্যমানের ফটোগ্রাফি ৫০০ থেকে ১০০০ এর মধ্যে পেয়ে যাবেন। 

দেশি কমার্স তাদের কাস্টমারদের জন্য প্রথম ৩০ টি প্রোডাক্টের ফ্রি ফটোগ্রাফি করে দেয়। আর প্রোডাক্টের ধরণভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে আপনি প্রফেশনাল প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি পাবেন। (** এই সুবিধা শুধুমাত্র দেশি কমার্সের সেবা গ্রহনকারীদের জন্য।)

 

ঘর বসে মোবাইলে প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি

প্রফেশনালদের দিয়ে প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি করাই ভালো । কিন্তু আপনার বাজেট যদি সীমিত হয়, তবে চাইলে আপনি ঘরে বসে নিজ মোবাইল দ্বারা প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি করে ফেলতে পারেন। কিভাবে করবেন সে বিষয়ে কিছু টিপস শেয়ার করছি,  

[ps2id id=’our_id’ target=”/]

টিপস ১: আপনার মোবাইল ফোনটির ক্যামেরা রেজুলেসন ভালো হতে হবে, ৮ মেগা পিক্সেলের নিচে কোনোভাবেই নামা যাবে না। ছবি তোলার সময় ফোকাস লক করে নিবেন।  

টিপস ২: ট্রাইপোড ব্যবহার করবেন, এতে হাতের কাঁপুনি হলেও বা হরাইজেনটাল ও ভারটিকাল লাইন সমান থাকবে।

টিপস ৩: ন্যাচারাল লাইট অথবা আর্টিফিশিয়াল লাইট যে কোনো একটি ব্যবহার করবেন। একসাথে দুটি কখনোই নয়। 

টিপস ৪: প্রোডাক্টের ছায়া যেন না পড়ে সেজন্য ন্যাচারাল লাইটের ছায়া দূর করতে  Standalone Bounce Card ও আর্টিফিশিয়াল লাইটের ছায়া যেন না পড়ে তার জন্য Flashbulb Bounce Card ব্যবহার করতে পারেন। 

টিপস ৫: ড্রপবক্স বা প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফির জন্য বিশেষ একটি বক্সের মধ্যে ছবি তোলার সময় ব্যাকগ্রাউন্ডের ফ্লোর ও ওয়ালের জয়েন্টে একটি লাইন দেখা যায়। এটি কোন প্রকার এডিটিং ছাড়ায় দূর করতে বাঁকানো ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার করতে পারেন। 

টিপস ৬: কাস্টমার অনেক সময় প্রোডাক্টের খুব সরল উপস্থাপনা চায়। এক্ষেত্রে ঘরোয়া ফটোগ্রাফি অসাধারন। সাধারণ একটি সলিড সারফেসে প্রোডাক্ট রেখে জাস্ট ক্লিক করলেই হলো। কালার কারেকশন করতে পারেন তবে অতিরঞ্জিত ভাবে নয়। ভালো হয় যদি ছবিটি কোন ডিভাইস ব্যবহার করে তুলেছেন সেটি উল্লেখ করে দেন।  

 

প্রোডাক্টের ফটোএডিটিং কাজে ব্যবহৃত কিছু ফ্রি অনলাইন অ্যাপ

অনেক সময় প্রোডাক্টের ছবি এডিটিং করার প্রয়োজন পড়ে, সেজন্য নিচের অ্যাপগুলো ব্যবহার করতে পারেন।  

GIMP 

ডেক্সটপ অ্যাপ

ইমেজ  ম্যানুপুলেশন, ফটো রিটাচ, কালার কম্বিনেশন ফরমেট কনভার্ট সকল কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।  

Photoshop Express

মোবাইল অ্যাপ- iOS, Android, and Windows devices

দারুণ ফিল্টার ও সহজ ফিচার নিয়ে এই ফটো এডিটর আপনার পছন্দের তালিকায় এডোবি ফটোশপের পরেই থাকবে। 

VSCO Cam

মোবাইল অ্যাপ-iOS and Android devices

আর্টিস্টিক ছবির ফিল্টার দিয়ে চমৎকার ছবি তুলতে পারবেন। 

Pixlr

মোবাইল ও ওয়েব

এটি খুবই পপুলার একটি এডিটর অ্যাপ। ব্যবহার করে দেখুন, দারুণ কাজে দিবে ।

Adobe Photoshop Fix

মোবাইল ও ওয়েব- OS and Android devices

ইমেজ রিটাচ বা রিস্টোরেশন এর জন্য এটি এক কথায় অসাধারণ। 

Fotor

মোবাইল ও ওয়েব- OS and Android devices

সহজ ও পরিচ্ছন্ন একটি এডিটর চাইলে এটি আপনার পছন্দ হবে। 

 

আপনার বিজনেসে কাজে লাগানোর মত কিছু ফটোগ্রাফি আইডিয়া

এগুলোর মত করে আপনার প্রোডাক্টগুলোর ফটোগ্রাফি করতে চেষ্টা করুন। কিছুদিন পরে দেখবেন আপনি নামিদামি ই কমার্স সাইটগুলোর মত প্রোডাক্টের উপস্থাপনায় পারদর্শী  হয়ে গেছেন। একটি অনন্য সাধারণ প্রোডাক্ট প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফির জন্য টুলস বা টেকনোলজির থেকে বেশি জরুরী তৃতীয় নয়ন বা দুর্দান্ত কল্পনা শক্তি।   

Simple Studio Product Shots

White Background Photos

Using Scale to Show the Size of the Product

Product Grouping

Products and Lifestyle Action Shots

আরও কিছু ছবি

ছবি তুলতে কিভাবে পোজ দিবেন

এতো গেল ইকমার্স প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফির যত কথা, কিন্তু আমরা নিজেরাও ছবি তুলতে অনেক পছন্দ করি। ছবি তোলার জন্য পোজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি ছবি ভালো বা খারাপ হয় পোজের কারনে।

শিখে নিন, একটি চমৎকার ছবি তুলতে কিভাবে ক্যামেরার সামনে পোজ দিতে হয়।

ক্লিক করুনঃ ৫০+ পোট্রেট ফটোগ্রাফি পোজ  

দেখুন, চেষ্টা করুন, কাজে লাগান। জয় করুন কাস্টমারদের মনোযোগ। হয়ে উঠুন দেশের অন্যতম ব্যবসা সফল ইকমার্স উদ্যোক্তা। 

ইকমার্স বিজনেসে সেলস বাড়াতে ব্র্যান্ডিং কেন জরুরী?

ইকমার্স বিজনেসে সেলস বাড়াতে ব্র্যান্ডিং কেন জরুরী?

ব্যবসা ক্ষেত্রে খুব পরিচিত একটি শব্দ “ব্র্যান্ডিং” – হোক সে অফলাইন বা অনলাইন ব্যবসা। প্রতিযোগিতার দৌড়ে ব্র্যান্ডিং ই পারে আপনার প্রোডাক্টকে বাকি সবার থেকে আলাদা করে কাস্টমারদের পছন্দের শীর্ষে তুলে নিয়ে আসতে।

ধরুন, গ্রীষ্মের প্রখর খরতাপে কিছুটা স্বস্তি পেতে আপনি একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ঢুকলেন – উদ্দেশ্য পান করার জন্য একটি কোমল পানীয় কেনা। দোকানের ফ্রীজে থাকা হরেক রকমের কোমল পানীয়ের মাঝে আপনি বেছে নিলেন কোকা-কোলা। বলুন তো, কেন আপনি কোকা-কোলাকেই বেছে নিলেন? উত্তরটা সহজ – তা হল ব্র্যান্ডিং ।

ব্র্যান্ডিং নিয়ে একটি গল্প বলি । Heinz এর নাম শুনেছেন নিশ্চয়? সারা বিশ্বেই Heinz টমেটো সস আর বেকড বিনের খুব জনপ্রিয় একটি ব্র্যান্ড। 

তো, একবার ইংল্যান্ডে Heinz এর প্রতিদ্বন্দ্বী একটি কোম্পানি চিন্তা করলো ‘কেন Heinz তাদের চেয়ে জনপ্রিয়’ সেটা তারা খুঁজে বের করবে । তারা একটা ‘Blind Taste Test’ আয়োজন করলো।  আশ্চর্যজনক ভাবে, যারা এই test এ অংশ নিলো তাদের দুই তৃতীয়াংশ Heinz এর প্রোডাক্ট এর taste এর চেয়ে আয়োজকদের প্রোডাক্ট বেশি পছন্দ করলো । কিন্তু যেই তাদের সামনে Heinz আর তার কম্পিটিটরের প্রোডাক্ট রাখা হলো, তারা Heinz এর প্রোডাক্ট পছন্দ করতে শুরু করলো ! 

ব্র্যান্ড আক্ষরিক অর্থেই আমাদের পছন্দকে বদলে দিতে পারে। 

মানুষের ব্যস্ততা আর সময়স্বল্পতার কারণে ইট-পাথরের তৈরি দোকানগুলোর চেয়ে প্রযুক্তি নির্ভর অনলাইন দোকান অর্থাৎ ই-কমার্স সাইটগুলোতে মানুষের উপস্থিতি বেশী। তাই ই-কমার্স ব্যবসার জনপ্রিয়তা উত্তোরত্তর বেড়েই চলেছে। 

এই লেখাতে আমরা  “ব্র্যান্ডিং” এবং ই-কমার্স ব্যবসায় ব্র্যান্ডিং এর পরিধি ও গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করবো । 

প্রথম অংশে থাকছে – কিভাবে একটি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে হয়।

দ্বিতীয় অংশে থাকছে – নতুন উদ্যোক্তা এবং নিযুক্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডিং এর গুরুত্ব।

এবং শেষ অংশে থাকছে – ব্র্যান্ডিং এর ক্ষেত্রে আপনি কী কী  কৌশল অবলম্বন করবেন।

কিভাবে একটি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে হয়

ব্র্যান্ডিং কি? ব্র্যান্ডিং হল কাস্টমারের কাছে আপনার প্রতিশ্রুতি। হাজারো প্রোডাক্ট ও সার্ভিসের মধ্যে কাস্টমার কেন আপনার ই-কমার্স সাইট থেকে প্রোডাক্ট ক্রয় করবে তা নির্ভর করে আপনার ব্র্যান্ডিং এর উপর। প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে আপনাকে এগিয়ে রাখতে ও কাস্টমারদের নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে ব্র্যান্ডিং অপরিহার্য। 

ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার যাত্রাটা খুব একটা সহজ নয়। বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে, অনেকটা সময় বিনিয়োগ করে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে ব্র্যান্ডকে প্রতিষ্ঠা করতে হয়। 

আপনার ই কমার্স বিজনেসটিকে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে এই কৌশলগুলো অবলম্বন করুন –

১. প্রথমেই আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সুন্দর রং ও ডিজাইন সম্বলিত লোগো তৈরি করুন। অনেক সময় আমরা কোম্পানীর নাম না দেখে শুধু লোগো দেখেও বুঝে যাই যে পণ্য কোন প্রতিষ্ঠানের।  

লোগো যে খুব আহামরি কিছু হতে হবে এমন নয় । কিন্তু এমন একটি লোগো তৈরী করুন যেটা দেখে সহজেই কাস্টমার আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করতে পারে ।

২. লোগোর রং এর সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে আপনার ই-কমার্স ব্যবসার জন্য একটি পরিছন্ন, সহজে ব্যবহারযোগ্য ও মানসম্মত একটি ওয়েবসাইট তৈরী করুন। 

ই-কমার্স ওয়েবসাইটের কিছু অত্যাবশ্যকীয় বৈশিষ্ট থাকে  যেমন – কার্ট ম্যানেজমেন্ট, অর্ডার ম্যানেজমেন্ট, কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট, প্রমোশন বা অফার ম্যানেজমেন্ট । এগুলোতে নজর দিন। 

৩. আপনার ওয়েবসাইট এ প্রথমেই সব কিছু সেল করার চেষ্টা না করে সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্য সেল করুন। যেমন: রকমারি। তারা কিন্তু প্রথমে শুধু মাত্র বই বিক্রি করতো। বর্তমানে বই এর পাশা পাশি তারা অন্যান্য পণ্যও সেল করে। 

৪. সঠিক মাধ্যমে আপনার ই কমার্স ওয়েবসাইটের সঠিক প্রচারণা চালান যাতে সবাই আপনার পণ্য সম্পর্কে জানতে পারে।  এজন্য বেছে নিতে পারেন ফেসবুক মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং, এসএমএস মার্কেটিং ।

৫.  ব্র্যান্ডিং এর ক্ষেত্রে পণ্যের মোড়কের ভূমিকাও একেবারে কম নয়। সুন্দর মোড়কে, গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠে। তাই চেষ্টা করুন পণ্যের মোড়কে একটু বৈচিত্র আনতে। খুব সহজেই কাস্টমারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন। 

৬. সর্বদা পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখুন। কথায় এবং কাজে এক থাকুন। আপনার মনে হবে আপনি লাভ করতে পারছেন না বা লস হচ্ছে। দীর্ঘ মেয়াদে গুণগতমান সম্পন্ন পণ্যই আপনার ব্যবসা টিকিয়ে রাখবে।

৭. কাস্টমার সার্ভিস হল ইকমার্স বিজনেসের প্রাণ। একটি ই কমার্স বিজনেস কতদুর সফল হবে সেটি নির্ভর করে কাস্টমার সার্ভিস কোয়ালিটির উপর। তাই চেষ্টা করুন একটু এক্সট্রা সার্ভিস দিতে। 

Zappos এর নাম শুনেছেন? তারা তাদের ব্যবসায় বিশ্বজোড়া খ্যাতি লাভ করেছে শুধুমাত্র তাদের কাস্টমার সার্ভিস এর কারনে। 

নতুন উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডিং এর গুরুত্ব

খুব স্বল্প পরিসরে আপনি হয়ত ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করেছেন, ভাবছেন প্রাথমিকভাবে ব্র্যান্ডিং আপনার ব্যবসার জন্য কতটুকু সহায়ক হবে বা আদৌ এর প্রয়োজন রয়েছে কিনা। অথবা হয়তো আপনি ইতিমধ্যে ই-কমার্স ব্যবসার সাথে যুক্ত আছেন, কিন্তু সফলতার মুখ দেখা হয়ে ওঠেনি এখনো। 

ব্যবসায় অসফল হওয়ার অনেক কারণ হয়ত যাচাই করছেন, কখনো কি অবসরে ভেবে দেখেছেন যে আপনার ব্র্যান্ডিং সঠিকভাবে করা হয়েছিল কিনা। 

বাজারে বহু কোম্পানির মিনারেল ওয়াটার বোতলজাত করে বিক্রি হয়ে থাকে। সব বোতলেই রয়েছে সেই একই স্বচ্ছ ও পরিষ্কার পানি, আপনি এত প্রতিষ্ঠানের মাঝে কোন একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মিনারেল ওয়াটার কিনে থাকেন। কেন বলতে পারেন?! উত্তরটা সহজ শুধুমাত্র ব্রান্ডিং এর কারণে। 

১. ব্র্যান্ডিং কাস্টমারকে আপনার ই-কমার্স সাইটের পণ্য সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দেয়। 

২.সঠিকভাবে ও কৌশলগত উপায়ে ব্র্যান্ডিং করা হলে তা আপনার বিক্রয়ের পরিমাণকে বাড়িয়ে দেয় বহুলাংশে।

৩. ব্র্যান্ডিং এ সফলতার সাথে সাথে ব্যবসার যেমন উত্তোরত্তর উন্নতি ঘটতে থাকে, ঠিক তেমনি বিভিন্ন বিনিয়োগকারী ও স্টেকহোল্ডার এমন সফল ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠে। 

৪. ব্র্যান্ডের কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা আপনার পণ্য নকল করে বাজারজাত করলেও আপনার বিজনেস ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। বরং কাস্টমাররা আসল পণ্য কেনার জন্য আপনার উপর নির্ভর করে। ফলে বেচাকেনা বেড়ে যায়। 

৫.আপনি আপনার ব্র্যান্ডকে যেই উচ্চতায় দেখতে চান, সেই অনুযায়ী পণ্যের গুনগত মান ধরে রাখুন এবং প্রোডাক্ট ডেলিভারির প্রতি সময় সচেতন হোন। মানুষ আপনার পণ্য ও সেবার উপর ভরসা রাখতে শুরু করবে। 

৬.  মানুষ স্বভাবসুলভ কারণেই ব্র্যান্ডের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে, কারণ ব্র্যান্ড শব্দটার সাথে একটা ভরসা জড়িয়ে থাকে। আপনার পণ্যের সঠিক ব্র্যান্ডিংই পারে আপনাকে হাজারো প্রতিদ্বন্দ্বীর মাঝে একটি ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে।। 

৭. আমরা যখন কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ব্যবহার করে উপকৃত হই, তখন গল্পচ্ছলে তা অন্যের কাছে বলে থাকি বা তাকেও তা ক্রয়ে উৎসাহিত করে থাকি। এভাবে ব্র্যান্ডিং কাস্টমারকে আপনার ই-কমার্স সাইটের পণ্যের প্রতি অনুরাগী করে তোলে।

৮. যত বেশী মানুষের কাছে আপনার ব্র্যান্ডের নাম পরিচিত হবে, বাজারে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতাও তত বাড়বে। তাই প্রত্যেকটা কাস্টমারকেই সর্বোচ্চ সার্ভিস দেয়ার চেষ্টা করুন । মনে রাখবেন,

ইকমার্স ব্র্যান্ডিং

ব্র্যান্ডিং এর ক্ষেত্রে আপনি কী কী কৌশল অবলম্বন করবেন

কৌশল অবলম্বনে সম্পাদন করা কোন সাধারণ কাজও সফলতায় অনন্য হয়ে উঠে। কখনো কখনো প্রায় অসম্ভব কাজও সুপরিকল্পিত ও বুদ্ধি খাটিয়ে করলে কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জিত হয়। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রকট, সেখানে কৌশল অবলম্বনই টিকে থাকা এবং ভালো করার একমাত্র উপায় ।

ছোটবেলায় একটি তৃষ্ণার্ত কাকের কলস থেকে জলপানের গল্প আমরা কমবেশী সবাই পড়েছি। কলসের তলে পড়ে থাকা অল্প কিছু পানি কাকের পক্ষে কখনোই পান করা সম্ভব হত না, যদি না সে বুদ্ধি খাটিয়ে টুকরো টুকরো নুড়ি ফেলে সেই জলের স্তরকে উপরে তুলে না আনত।

ব্র্যান্ডিং এর ক্ষেত্রেও আপনাকে কৌশল অবলম্বন করতে হবে 

১. আপনার ই-কমার্স ব্যবসার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। একটু দীর্ঘ মেয়াদে চিন্তা করুন আগামী তিন বা পাঁচ বছরে আপনি নিজের ব্যবসা কে কোথায় দেখতে চান ।

২. টার্গেট কাস্টমার নির্ধারণ করুন,খুঁজে বের করুন কাদের কাছে আপনার প্রোডাক্ট ও সার্ভিস পৌঁছে দিতে চান।

৩. মার্কেটিং এর জন্য বাজেট নির্ধারণ করুন । মার্কেটিং হলো একটি বিজনেস এর মূল চালিকা শক্তি। মার্কেটিং ছাড়া আপনি কখনো ব্র্যান্ড হয়ে উঠতে পারবেন না । 

৪. ঠিক করুন, কোন যোগাযোগ মাধ্যমেগুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার প্রোডাক্টের প্রচারণা করতে চান।

৫. পণ্যের মান বজায় রাখুন। পরিকল্পনা করুন, কিভাবে দ্রুততম সময়ে আপনি গ্রাহকের কাছে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস পৌঁছে দিবেন।

৬. ভার্চুয়াল জগতে যথেষ্ট তথ্য না পেলে কাস্টমার কোন কিছু ক্রয় করতে দ্বিধা করে। তাই কন্টেন্ট মার্কেটিং এর উপর জোর দিন। তথ্যবহুল কিন্তু চিত্তাকর্ষক কন্টেন্ট তাদের সামনে উপস্থাপন করুন।

৭. ইমেইল মার্কেটিং এ গুরুত্ব দিন। অনেকেই এই ব্যাপারটাতে কম গুরুত্ব দেয়, কিন্তু ইমেইল মার্কেটিং এ প্রতি ১ টাকা খরচের বিপরীতে প্রায় ৩২ টাকা রিটার্ন পাওয়া যায়। (সূত্রঃ Oberlo )

৮.কাস্টমারদের অফার, ডিসকাউন্ট ও কুপন প্রদান করুন। তাদের কে আপনার প্রোডাক্টের প্রতি আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আয়োজন করুন এবং ভালো সামাজিক উদ্যোগের সাথে আপনার ব্যবসাকে জড়িত করুন। 

৯. আপনার ফেইসবুক বা গুগল পেজ এ আপনার প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস সম্পর্কে কাস্টমারদের রিভিউ নিন। এর ফলে অন্য কাস্টমাররা সহজেই আপনার প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং আপনার ব্র্যান্ড ভ্যালু বৃদ্ধি পাবে।

বর্তমান সময়ে গড়ে প্রতিদিনই একটি করে নতুন ই-কমার্স সাইট তৈরী হচ্ছে । যেহেতু ই-কমার্স বিজনেসে ইনভেস্টমেন্ট কম দরকার ও বড় কোন লসের ঝুঁকি থাকে না তাই অনেকেই এই ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে উঠছে। 

সফল রিটেইলার ব্যবসায়ীরাও ই কমার্স বিজনেসের গুরুত্ব উপলব্ধি করে রিটেইল শপের পাশাপাশি ই-কমার্স ব্যবসায় আসছেন । তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাজারে ব্র্যান্ডিং-ই পারে কেবল আপনাকে সকলের মাঝে সুপরিচিত করে তুলতে পারে। 

কিভাবে আপনার ই কমার্স বিজনেসের ব্র্যান্ডিং করবেন জানতে কথা বলতে পারেন আমাদের ই কমার্স কনসালট্যান্টদের সাথে।

আমার ব্যবসা ছোট, আমার কি কোন ই-কমার্স ওয়েবসাইট প্রয়োজন আছে?

আমার ব্যবসা ছোট, আমার কি কোন ই-কমার্স ওয়েবসাইট প্রয়োজন আছে?

একটা গল্প শেয়ার করি । একজন বিজনেস কনসালটেন্ট গল্পটা একটা ব্লগে লিখেছিলেন ।

ছোট একটা বার । দুই বন্ধু বারে ঢুকলো। তারা দুইজনই নতুন বিজনেস শুরু করেছে । উদ্দেশ্য সেটা উদযাপন করা…

পাঁচ বছর পর…

সেই একই বারে দুই বন্ধুর দেখা হলো । একজন আরেকজন জনকে বললো, “জানো, আমি এইমাত্র আমার ২৫ নম্বর কর্মীকে নিয়োগ দিয়েছি । ”

ওপর বন্ধু বিষন্ন মুখে বললো, ” আমি কেবলমাত্র আমার বিজনেস দেউলিয়া ঘোষণা করেছি!”  

এটা গল্প নয়, সত্যি! কনসালটেন্ট ভদ্রলোকের দুই পরিচিত লোকের সাথে ঘটেছিলো । 

 দুই বন্ধুর বিজনেস স্ট্রাটেজিতে কী এমন পার্থক্য ছিল যেটা একজনকে সফল আর বিফল বানালো?

শুনলে অবাক হবেন, একটিমাত্র ওয়েবসাইট!

সফল বন্ধুটি তাঁর ব্যবসার শুরুতেই একটি ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করেছিলেন। তারপর প্রতিনিয়ত সেটি আপডেট এবং সেটার অনলাইন মার্কেটিং করতে থাকেন। ফলে তার দোকানে লোকাল কাস্টমাররা ছাড়াও অন্যান্য জায়গা থেকেও অনলাইনে অর্ডার আসতে থাকে এবং সেলস বাড়তে থাকে।

অন্যদিকে, বিফল বন্ধুটি বিজনেসের কাস্টমার পাওয়ার জন্য শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং বিভিন্ন মেলা বা ইভেন্ট এর উপর নির্ভরশীল ছিল । ইকমার্স ওয়েবসাইটের গুরুত্ব সে অনুভব করেনি। ফলাফল, প্রথম দিকে তার সেলস ভালো থাকলেও একসময় তিনি নিয়মিত নতুন কাস্টমার খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন। ফলে তার বিজনেস দেউলিয়া হয়ে যায়।

এখন আপনিই সিদ্ধান্ত নিন আপনি কাকে অনুসরণ করবেন! আপনার বিজনেস যদি ছোট হয়, তবে একটি  ই-কমার্স ওয়েবসাইট আপনার জন্য আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

প্রযুক্তির এই বিশাল সম্ভবনার যুগে বিজনেসের জন্য একটি ইকমার্স ওয়েবসাইট অবশ্যই দরকার। আপনার বিজনেস শুরুর প্রথম দিনটি থেকেই এটি প্রয়োজন। 

আমরা সবাই চাই আমার অনলাইন বিজনেস লাভজনক হোক।  এই লেখা থেকে আপনি যে বিষয়গুলো জানতে পারবেন:

  • ইকমার্স ওয়েবসাইট থাকার বিশেষ কিছু সুবিধা
  • ইকমার্স ওয়েবসাইট নিয়ে প্রচলিত কিছু অহেতুক ধারনা
  • ঠিক কত খরচ হয় একটা ভালো মানের ইকমার্স ওয়েবসাইট বানাতে
  • কোন ফিচারগুলো ইকমার্স ওয়েবসাইটে থাকা জরুরি
আপনার বিজনেসের জন্য ইকমার্স ওয়েবসাইটের গুরুত্ব কতটুকু?

যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণা সংস্থা ডেলয়েট, অনলাইন বিজনেস পরিচালনার জন্য ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের বেশকিছু সুবিধা খুঁজে পেয়েছে:

  • ই-কমার্স ওয়েবসাইট ব্যবহারে বিজনেসের লাভ চার গুন পর্যন্ত এমনকি তার বেশিও বৃদ্ধি করা সম্ভব 
  • অনলাইন বিজনেসে পূর্বের বছরের তুলনায় প্রায় তিনগুন নতুন চাকরি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে
  • অনলাইন বিজনেসে গড় কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ছিল ছয় গুণ বেশি

অনলাইন বিজনেসে প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয় একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট দিয়ে। তবে শুধুমাত্র একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট লাভজনক বিজনেস পরিচালনা করতে যথেষ্ট না এর জন্য আপনাকে প্রতিনিয়ত ইকমার্স ওয়েবসাইটটি সমৃদ্ধ করে এর সর্বোচ্চ উপযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৩০% কাস্টমার ই কমার্স ওয়েবসাইট ছাড়া অনলাইন বিজনেসকে গুরুত্ব দেয় না

আমরা ডিজিটাল যুগে বাস করি আর এই সময়ে আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইট অনলাইন বিজনেসের একনম্বর সম্পদ ।

BTRC (Bangladesh Telephone Regulatory Commission) এর তথ্যানুসারে,  জুন ২০১৯ এ বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৬.১৯৯ মিলিয়ন বা প্রায় ৯ কোটি ৬০ লক্ষ।

তথ্যপ্রযুক্তির এই সময়ে, কাস্টমাররা আশা করে যে কোনো বিজনেসের একটি অনলাইন উপস্থিতি (একটি ইকমার্স ওয়েবসাইট সহ)। যাদের সেটা নাই তারা ননপ্রফেশনাল হিসাবে  বিবেচিত হয়।

গ্রাহক আপনার পণ্য অনলাইনে অনুসন্ধান করে

অনলাইন বিজনেসের জন্য একটি ই কমার্স ওয়েবসাইট থাকার সুবিধা হল যেকোনো জায়গা থেকে কাস্টমার আপনার পণ্য দেখতে ও কিনতে পারে।

৯৩% কাস্টমারদের অনলাইন কেনাকাটার অভিজ্ঞতার শুরু হয় সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারের মাধ্যমে দিয়ে।

বিশ্বাস করুন আর নাই  করুন, প্রতি দিনে Google এ ৩.৫ বিলিয়ন মানুষ বিভিন্ন বিষয় ও পণ্য অনুসন্ধান করছে এবং এই মুহুর্তে আপনার এলাকার কেউ না কেউ অনলাইনে আছেন এবং আপনার পণ্যটি সন্ধান করছেন। তারা অনলাইনে এই মুহূর্তে কাকে খুঁজে পাচ্ছে?

ঠিক ধরেছেন, যার একটি ইকমার্স ওয়েবসাইট আছে ।

৬৩% কাস্টমার আপনার পণ্য ও প্রতিষ্ঠান খুঁজে পেতে ওয়েবসাইট খোঁজ করে

এপ্রিল ২০১৭ এর  এলএসএর (স্থানীয় অনুসন্ধান সংস্থা) প্রতিবেদন অনুযায়ী,  “ডিজিটাল কনজিউমার স্টাডি”,  ৬৩% কাস্টমার প্রাথমিকভাবে অনলাইন শপ অনুসন্ধান এবং তাঁর থেকে কেনাকাটা করার  জন্য ই কমার্স ওয়েবসাইট খোঁজ করে।

যে ৯৩ শতাংশ কাস্টমারদের অনলাইন অভিজ্ঞতা একটি সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে শুরু হয় তাঁদের একটি  বড় অংশ এটি।

আপনার ব্যবসার জন্য ই কমার্স ওয়েবসাইট থাকার আরেকটি বাধ্যতামূলক কারণ হল –

ইয়েলো পেজেস এবং এলএসএর গবেষণায় দেখা গেছে যে, কাস্টমার ব্যক্তিগত ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সাধারণত তিনটি উৎস শর্টলিস্ট করে  এবং ৩০ শতাংশ কাস্টমার – যাদের ইকমার্স ওয়েবসাইট নাই – তাদের এই শর্টলিস্টের বাইরে রাখে ।

৪৮% গ্রাহক একটি অনলাইন বিজনেসকে বিশ্বাস করে হয় তাঁদের একটি ইকমার্স ওয়েবসাইট থাকে

ই-কমার্স ওয়েবসাইট না থাকাটা কাস্টমারদের কাছে আপনাকে কম বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।  ৪৮ শতাংশ মানুষ মনে করে একটি ই কমার্স ওয়েবসাইট অনলাইন বিজনেসের বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রে এক নম্বর ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করে।

মানুষ এমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবসা করতে ও কেনাকাটা করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে  যাদের একটি ই কমার্স ওয়েবসাইট আছে। কাস্টমাররা ওয়েবসাইট থেকে সহজেই ওই বিজনেসের  প্রয়োজনীয় সকল তথ্য যেমন প্রশংসাপত্র, পর্যালোচনা, পুরষ্কার কাস্টমার রিভিউ ইত্যাদি দেখে নিতে পারে ।

সোশ্যাল মিডিয়া রিচ ক্রমে কমে যাচ্ছে

আপনি মনে করতে পারেন যে আপনার কোন ওয়েবসাইটের প্রয়োজন নেই, কারণ আপনি ফেসবুকে দিয়ে ভালো বিজনেস করছেন।

প্রত্যেকটি বড় এবং সফল বিজনেসের একটি ইকমার্স ওয়েবসাইট এবং একই সাথে একটি ফেসবুক পেজও রয়েছে।

সর্বশেষ ফেসবুক অ্যালগরিদম আপডেটের পর বিজনেস পেজের অরগানিক রিচ আগের চেয়ে অনেকাংশে কমে গেছে।এখন বুস্টিং ছাড়া পোস্ট রিচ হয় না বললেই চলে ।

তথাপি, বর্তমানে মানুষ ২০১৭ সালের চেয়ে ৫০ মিলিয়ন ঘণ্টা কম সক্রিয় থাকছে ফেসবুকে।

যদিও সোশ্যাল মিডিয়া আপনার বিজনেস বাড়িয়ে তুলতে ভুমিকা রাখে তবে এটিকে একমাত্র সেলস এবং মার্কেটিং চ্যানেল হিসাবে ব্যবহার করা মোটেও বুদ্ধিমানের পরিচয় নয়। ঠিক এই ভুলটি ঐ দেওলিয়া বন্ধুটি করেছিলেন।

[ps2id id=’ভুল_ধারণা’ target=”/]

ইকমার্স ওয়েবসাইট নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা

যারা অনলাইন বিজনেস  করেন আমরা তাঁদের সাথে কাজ করি । যখন ইকমার্স ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে কথা হয়, তখন আমরা প্রায়ই ইকমার্স নিয়ে কিছু ভুল ধারনা শুনি ।

কেন এই ধারণাগুলো ভুল নিচে আমরা তা ব্যাখ্যা করেছি 

আমার বিজনেস ছোট, আমার এই মুহূর্তে ওয়েবসাইট দরকার নাই

ছোট ব্যবসায়ীরা প্রায়ই এই কথাটি বলে থাকেন । 

একটি ইকমার্স ওয়েবসাইট আপনার বিজনেসের মার্কেটিং এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এটির জন্য আপনার কাছে বাজেট নেই বলা মানে হল আপনার ব্যবসার লাইসেন্সের জন্য বাজেট নেই এমনটি বলা।

আপনি যদি প্রাথমিক এই বিনিয়োগের উপর নজর না দেন তবে পরবর্তীতে আপনি বড় সমস্যায় পড়তে যাচ্ছেন।

একটি ওয়েবসাইট খুব দামি আর আহামরি কিছু হতে হবে এমনটা না, কিন্তু সুনির্দিষ্ট কিছু ফিচারসহ এটি অবশ্যই থাকতে হবে যাতে কাস্টমাররা আপনাকে সহজেই অর্ডার করতে পারে এবং কারা আপনার পণ্য সম্পর্কে আগ্রহী সেটা আপনি জানতে পারেন। 

কোনো ছোট বিজনেসে ওয়েবসাইট না থাকার অর্থ হলো – আপনি বর্তমানে বিজনেস মার্কেটিং এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টুল টি ব্যবহার করছেন না। ফলে

– আপনার বিজনেস এর উপর কাস্টমারদের আস্থা তৈরী হচ্ছে না
– আপনি প্রতিনিয়ত নতুন কাস্টমার পাচ্ছেন না
– আপনার বর্তমান কাস্টমারদের বায়িং প্যাটার্ন এর সাথে তাল মেলাতে পারছেন না

সর্বোপরি আপনার বিজনেস বড় করার সম্ভাবনাকে আপনি নিজেই নষ্ট করছেন! এক্ষেত্রে Bill Gates এর একটি উক্তি স্মরণযোগ্য:

বেচাকেনা ভালো । ওয়েবসাইট না করলেও চলবে। 

আপনি হয়তো এই মুহূর্তে ভালো বেচাকেনা করছেন। তবুও আপনার ই কমার্স ওয়েবসাইট প্রয়োজন আছে।

জানতে চান, কেন?

কারন – আজ যারা আপনার থেকে সরাসরি প্রোডাক্ট কিনছে তাদের ‘বায়িং প্যাটার্ন’ বদলে যাচ্ছে। মানুষ এখন তার পছন্দের/প্রয়োজনীয় জিনিসটি কয়েকটি ক্লিক করেই পেতে চায়।

আপনার বর্তমান কাস্টমাররাই ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে আপনার পণ্য অর্ডার করতে বা আপনার নতুন পণ্য সম্পর্কে জানতে চাইবে।

বাংলাদেশে প্রতি মাসে ইকমার্স এর মাধ্যমে খুচরা বিক্রি বাড়ছে প্রায় ৭২% এবং ২০২১ সাল নাগাদ ইকমার্স এর মাধ্যমে লেনদেনের পরিমান হবে প্রায় ৭০০০ কোটি টাকা!

যদিও আপনার এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত গ্রাহক থাকে তবুও কেউ জানে না ভবিষ্যতে কী হতে চলেছে।

তাই এখনি উপযুক্ত সময় ডিজিটাল যুগে প্রবেশের যা ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য।

আমার পরিচিত লোক আছে যে আমাকে বিনামূল্যে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে দিতে পারবে।

যদি লোকটি প্রফেশনাল ওয়েব ডিজাইনার না হয় এবং ইকমার্স কাস্টমারদের সম্পর্কে তার ভালো ধারণা না থাকে, তাহলে এই ওয়েবসাইট আপনার কোনো কাজে আসবে না । বরং একটা নিন্মমানের ওয়েবসাইট আপনার বিজনেস সম্পর্কে ক্রেতাদের মনে খারাপ ধারণা তৈরী করবে ।

যদি আপনার কোনও বন্ধু একজন পেশাদার ওয়েব ডিজাইনার হন এবং আপনি তার মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটটি তৈরী করতে চান, তবে ভালো করে তার কাজ সম্পর্কে জেনে নিন । কারন ভালো ডিজাইনার হলেই যে ভালো ইকমার্স ওয়েবসাইট বানাতে পারবেন এমনটা নাও হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, একটি ইকমার্স ওয়েবসাইট একটি স্বাস্থ্যসেবামুলক ওয়েবসাইটের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন স্ট্রাকচারের হয়ে থাকে ।

ইকমার্স ওয়েবসাইটে কিছু দরকারি ফিচার থাকতে হয়। যেমন – শপিং কার্ট, স্টক ম্যানেজমেন্ট, অর্ডার ম্যানেজমেন্ট, অফার/ডিস্কাউন্ট/ কুপন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ও বিভিন্ন এনালিটিক্স রিপোর্ট । এই জিনিসগুলো একটি ইকমার্স বিজনেসের সাফল্য ও ব্যর্থতার মধ্যে বিশাল পার্থক্য তৈরী করে দিতে পারে। 

আরো একটি ব্যাপার গুরুত্বপূর্ণ – ইকমার্স ওয়েবসাইট ভালোভাবে পরিচালনার জন্য এটা নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষনের দরকার হয়। এটি কোন ‘one time’ ব্যাপার নয় যে আপনি একবার সেটআপ করে ফেললেই এটা চলতে থাকবে।

আপনার পরিচিত কেউ বিনামূল্যে আপনার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষন করবে কি? সম্ভবত, না! তাই এ ব্যাপারে প্রফেশনালদের সাহায্য নেয়াই ভালো ।

কাস্টমাররা কম্পিউটার ব্যবহারকারী না।

আপনার কাস্টমাররা “কম্পিউটার ব্যবহারকারী” নয়? আপনি কি জানেন, কাস্টমাররা কেবলমাত্র কম্পিউটার নয়, মোবাইল ডিভাইস দ্বারাও ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজ করে? 

BTRC এর তথ্যানুসারে, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারির সংখ্যা ছিল প্রায় ৯৬ মিলিয়ন বা ৯ কোটি ৬০ লক্ষ্য। এর মধ্যে প্রায় ৯ কোটি মানুষই মোবাইল ফোন থেকে ইন্টারনেট করে ।

তাই আপনার কাস্টমাররা কম্পিউটার ব্যবহার না করলেও তারা ইন্টারনেট এ আপনার পণ্য খুঁজতে বা কিনতে পারে । ওয়েবসাইট না থাকার কারণে আপনি নিশ্চিতভাবে এই কাস্টমারদের একটা বড় অংশকে হারাচ্ছেন!  

পরিশেষে,

আপনার বিজনেসটি লাভজনক ও সফল দেখতে চান? তাহলে যত দ্রুত সম্ভব তৈরী করে ফেলুন এমন একটি ওয়েবসাইট যেটি কাস্টমারের সামনে আপনার পণ্যকে সুন্দর ভাবে তুলে ধরবে, কাস্টমারদের ডাটা সংরক্ষণ করবে এবং আপনাকে আপনার পণ্য এবং কাস্টমারদের সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের তথ্য দিয়ে বিজনেস বাড়াতে সাহায্য করবে।

ই কমার্স বিজনেসে সফলতা পেতে আপনাকে যে কাজগুলো করতেই হবে

ই কমার্স বিজনেসে সফলতা পেতে আপনাকে যে কাজগুলো করতেই হবে

বর্তমান সময়টাই এমন যেখানে কাস্টমার কিছু কেনাকাটার চিন্তা করলেই প্রথমে অনলাইনে সার্চ করে। 

ইকমার্স কনসেপ্ট বিজনেসের প্রচার ও প্রসারে একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন। অতি দ্রততার সাথে এর ব্যাপক বিস্তার প্রমান করে এর প্রয়োজনীয়তা।

প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার বাজারে যদি আপনি অনলাইন বিজনেসে সফলতা চান তবে ই-কমার্সের সঠিক ব্যবহার জানতে হবে। 

Statista এর জরিপ মতে, ২০১৫ সালে অনলাইন রিটেল বিজনেসের পরিমান ছিল ৩৪২.৯৬ বিলিয়ন ডলার।  ২০১৯ সালে যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৬০০ বিলিয়ন ডলারে। 

ইকমার্স বিজনেসে লেনদেনের এই সংখ্যাটিকে কোন সচেতন উদ্যোক্তা পাশ কাটিয়ে যেতে পারেন না। 

ই কমার্স বিজনেসে সফল হতে আপনাকে জানতে হবে এই বিজনেসের মৌলিক কিছু বিষয় যা প্রতিটি অনলাইন উদ্যোক্তাকে মোকাবেলা করতে হয়।   

অনেকেই ই-কমার্স বিজনেস করছে কিন্তু সকল ই কমার্স উদ্যোক্তাই কি প্রফিট করতে পারছে?  

ই কমার্স বিজনেসে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে। ছোট বড় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যদি জানা থাকে কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে হয় তবে ই কমার্স বিজনেস শোরুম নির্ভর বিজনেসের চেয়ে অধিক প্রফিট করা সম্ভব।  

আসুন জানি, ইকমার্স বিজনেসে একজন উদ্যোক্তা প্রথম দিন থেকেই কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন এবং এই সমস্যা নিরসনে আপনি কী পদক্ষেপ নিতে পারেন  

মার্কেট পজিশনিং বা বিশেষত্ব তৈরী করা  

অনলাইন বিজনেস করতে গিয়ে আমরা একটা বড় ভুল করি – সেটা হলো অন্য আরেকজন যে প্রোডাক্ট বিক্রি করে সফল হয়েছে, সেই প্রোডাক্ট সেল করার চেষ্টা করা। অথবা কোনো প্ল্যান ছাড়াই সবকিছু সেল করার চেষ্টা করা।  

Rokomari.com এর কথাই ধরুন। রকমারি কি সবকিছু সেল করে? বর্তমানে রকমারি অনেক পণ্যই সেল করে, কিন্তু তাদের বিশেষত্ব হলো বই সেল করা এবং তারা একসময় শুধু মাত্র বই-ই সেল করত ।

আরো আছে। যেমন: Styline Collection । তারাও শুরু করেছিল শুধুমাত্র হিজাব এবং বোরখা দিয়ে। এখন তারা কসমেটিক এবং অন্যান্য জিনিসও বিক্রি করে।   

আপনি যে প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছেন বা করতে চান তার মার্কেট সাইজ, মার্কেট ট্রেন্ড, সম্ভাব্য ক্রেতা, ক্রেতাদের পছন্দ ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এবং নিয়মিত আপডেট থাকুন। 

শুরুতেই অনেক ধরণের প্রোডাক্ট এর পরিবর্তে যে কোনো এক ধরণের প্রোডাক্ট নিয়ে বিজনেস করুন। চেষ্টা করুন আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস এর একটি বিশেষত্ব তৈরী করতে। আপনার সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।

মাল্টিপল কমিউনিকেশন চ্যানেল ব্যবহার করা 

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার পরিমাণ ৭.৭ বিলিয়ন। আর সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ৩.৪৫ বিলিয়ন। 

৯১% রিটেইল ব্র্যান্ড ২ টির বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। ফেসবুক ও  হোয়াটসঅ্যাপে প্রতিদিন ৬০ মিলিয়ন মেসেজ আদান প্রদান হয়। বর্তমানে মানুষ এসকল কমিউনিকেশন চ্যানেলে এতোটাই নির্ভরশীল যে বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের কাস্টমার সার্ভিসও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে দিচ্ছে।  

যেমন: Eastern Bank । এই ব্যাংকের গ্রাহকরা তাদের একাউন্ট সম্পর্কিত অনেক সেবা ফেইসবুক মেসেঞ্জার এর মাধ্যমে পেয়ে থাকেন। (https://www.facebook.com/ebldia/)

সোশ্যাল চ্যানেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডের সাথে কাস্টমারদের অবিচ্ছেদ্য ভাবে যুক্ত রাখে। যোগাযোগের পাশাপাশি এই চ্যানেলগুলি মার্কেটিং এর জন্যও ব্যবহার করা যায়।  

তাই, একটু নজর দিন আপনার এই মুহূর্তে কোন কমিউনিকেশন চ্যানেলগুলো চালু আছে আর কোনগুলো ওপেন করতে হবে । 

মাল্টিপল কমিউনিকেশন চ্যানেল ব্যবহার প্রকাশ করে আপনি কাস্টমারদের চাহিদা বোঝেন, সামাজিক মাধ্যম নিয়ে সচেতন আর তাঁদের সকল সুবিধা প্রদানের চেষ্টা করেন।

 

প্রোডাক্ট রিটার্ন রেট কমানো 

অনলাইনে কেনাকাটায় অনেক সময় কাস্টমার ভুল তথ্য প্রদান করে। সঠিক ফোন নম্বর না দিয়ে বা ভুল ই-মেইল প্রদান করে কাস্টমার কেনাকাটা সম্পন্ন করে। 

পরবর্তীতে তাঁর দেয়া তথ্য প্রোডাক্ট মার্কেটিং এ ব্যবহার করা সম্ভব হয় না।পূর্ণ তথ্য ছাড়া কাস্টমারকে প্রোডাক্ট ডেলিভারি দেবার সময় ডেলিভারি ম্যানকেও হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। 

অনলাইন কেনাকাটায় সাধারণত প্রোডাক্ট রিটার্ন আসার হার ৮%, কিন্তু সতর্ক না থাকলে ফ্যাশান ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে এটি ৩০% পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। প্রোডাক্ট রিটার্নের দুটি ভাগ রয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণ যোগ্য অন্যটি অনিয়ন্ত্রণ যোগ্য। 

কোয়ালিটি, সাইজ বা সময়মত ডেলিভারি না করতে পারা এধরনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। 

কিন্তু কাস্টমারের ভুলের কারনে অর্ডার রিটার্ন আসা নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন। এধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয় ভুল ঠিকানা, ভুল মোবাইল নম্বর, ভুল ইমেইল দেবার কারনে। 

অধিকাংশ অনলাইন সেলার থার্ড পার্টি ডেলিভারি সার্ভিস ব্যবহার করেন । ফলে যদি একটি প্রোডাক্ট রিটার্ন আসে তবে সেটির জন্য এক্সট্রা টাকা গুনতে হয়। এতে করে অপারেশন কস্ট বৃদ্ধি পায় এবং প্রফিট কমে যায়। 

ফোন ও ই-মেইল সঠিক আছে কিনা অর্ডার কনফার্ম করার সময় সেটি যাচাই করা প্রয়োজন। কাস্টমারের প্রদান করা নম্বরে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করুন, নিশ্চিত করুন দেয়া তথ্য সঠিক।এই কাজটি আপনার ওয়েবসাইটে ‘ডাটা ভ্যালিডেশন’ ব্যবহার করে খুব সহজে করা যায়। কাস্টমার যদি  ভুল তথ্য দেয় তবে সিস্টেম সেটি গ্রহন করবে না। 

পূর্ণাঙ্গ তথ্য না নিয়ে প্রোডাক্ট ডেলিভারি দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি কাস্টমারকে যদি আগেই জানাতে পারেন, কবে এবং কখন প্রোডাক্ট ডেলিভারি হবে তাহলেও আপনার প্রোডাক্ট রিটার্ন রেট অনেক কমে যাবে।    

লয়াল কাস্টমার/ফলোয়ার গ্রুপ তৈরী করা

শুধু পণ্য বিক্রি করলেই হবে না, দীর্ঘ মেয়াদে বিজনেস করতে আপনাকে একটা লয়াল কাস্টমার গ্রুপ তৈরী করতে হবে ।

মানসম্মত প্রোডাক্ট ও কাস্টমার সার্ভিস নিশ্চিত হলে কাস্টমারদের মধ্যে একটি পজিটিভ মনোভাব তৈরি হয় যা তাকে সেই অনলাইন ব্র্যান্ড থেকে বারবার কিনতে উৎসাহী করে। 

কেন লয়াল কাস্টমার গ্রুপ তৈরী করা জরুরি? 

১. নতুন একজন কাস্টমার পাওয়ার জন্য যে খরচ হয় (customer acquisition cost) , তা বর্তমান একজন কাস্টমারকে ধরে রাখার খরচের (customer retention cost) চাইতে ৫ গুন বেশি। (সূত্র: Forrester Research

২. আপনি যদি আপনার বর্তমান কাস্টমারদের ৫% বেশি ধরে রাখতে পারেন তাহলে আপনার প্রফিট ২৫% থেকে ৯৫% পর্যন্ত বাড়তে পারে (সূত্র: Harvard Business School)  

৩. বিশ্বব্যাপী একজন কাস্টমার হারানোর (lost customer) গড় মূল্য হলো ২৪৩ ডলার। তার মানে, একজন কাস্টমার চলে গেলে একটা বিজনেস গড়ে প্রায় ২০,০০০ টাকা লস করে! (সূত্র: Kissmetrics)   

লয়াল কাস্টমার গ্রুপই মূলত একটি বিজনেসকে বড় হতে সাহায্য করে। পাশাপাশি তারা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকেও তাদের পছন্দের বিজনেস থেকে কিনতে উৎসাহিত করে।

অতএব, বুঝতেই পারছেন লয়াল কাস্টমার গ্রুপ থাকা আপনার বিজনেস এর জন্য কতটা জরুরি।  

আকর্ষণীয় অফার, বিশেষ পুরস্কার, বেশি কেনাকাটায় বোনাস প্রদান, লয়াল মেম্বারদের নিয়ে রাফেল ড্র অথবা তাঁদের অনলাইন শপিংএ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা প্রদান – এমন অনেক উপায়ে লয়াল কাস্টমার গ্রুপ তৈরি করা যায়।

পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণ 

অনলাইনে পণ্যের মূল্য নিয়ে কিছু পরিসংখ্যান দেখুন যা আপনাকে পণ্যের মূল্য সম্পর্কে নতুন ভাবে ভাবতে বাধ্য করবে –

  • ৯০% কাস্টমার অনলাইনে বেস্ট ডিল খুঁজতে সময় খরচ করে । 
  • ৮৬% কাস্টমার সেলারদের অফারকৃত মূল্যে তুলনামূলক পার্থক্যকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে ।
  • ৬০% কাস্টমার অনলাইন কেনাকাটায় মূল্যকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেয় ।
  • ২৬% অনলাইন সেলার প্রোডাক্টের মূল্য নির্ধারণের জন্য প্রতিযোগী সেলারদের মূল্যকে গুরুত্ব দেয় । 
  • একজন কাস্টমার অনলাইনে কেনাকাটা সম্পন্ন করার আগে কমপক্ষে ৩ টি অনলাইন শপ ভিজিট করে।

তাই অনলাইনে পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। 

পণ্যের মূল্য নির্ধারণের অনেক স্ট্রাটেজি আছে এবং এর সাথে আপনি কোন niche বা industry নিয়ে কাজ করছেন তার কাস্টমারদের সাইকোলজি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেমন: 

Charm Pricing, The rule of 100, cost based pricing, value based pricing, market based pricing, dynamic pricing, discount pricing, loss leader pricing এবং আরও অনেক ! 

Charm Pricing হলো আপনি পণ্যের প্রাইস এর শেষে ৫ অথবা ৯ রাখবেন । কোনো ইন্ডাস্ট্রি যদি খুব বেশি কম্পিটিটিভ হয় এবং কাস্টমাররা price-sensitive হয় তাহলে সাধারণত এই স্ট্রাটেজি ব্যবহার করা হয় । আমাদের দেশে মোবাইল কোম্পানি গুলো এই প্রাইসিং ব্যবহার করে।

আপনি ইন্টারনেট থেকে এই প্রাইসিং স্ট্রাটেজি গুলো জেনে নিতে পারেন ।

ফেসবুক মার্কেটিং এর বাজেট 

ইকমার্স ওয়েবসাইটে কাস্টমার আনার সব চেয়ে সহজ উপায় হলো ফেইসবুক বিজ্ঞাপন যেটাকে অনেকেই ‘বুস্টিং’ বলে থাকেন। তাই অনলাইনে বিজনেস করতে আপনাকে অবশ্যই ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। 

ফেসবুক গড়ে প্রতি ০.০১ সেন্টে ১ টি ইম্প্রেশন (CPM) দেয় (সূত্রঃ Fit Small Business)। অর্থাৎ, আপনি ১০ ডলার খরচ করে ১০০০ মানুষকে রিচ করতে পারবেন। তবে আমাদের দেশে এই সংখ্যা আরো বেশি। বাংলাদেশে আপনি ১০ ডলার খরচ করে গড়ে প্রায় ৪০০০ থেকে ১০,০০০ মানুষকে রিচ করতে পারবেন। 

ইন্ডাস্ট্রি, প্রোডাক্ট, বিজ্ঞাপনের ধরণ এবং কোয়ালিটি, টার্গেট মার্কেট ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে এই সংখ্যা পরিবর্তন হয়।    

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আপনি ৫০ ডলার বাজেট করলে রিচ করবেন নূন্যতম ২০,০০০ (বিশ হাজার) মানুষ। 

Wordstream এর তথ্য মতে, ফেসবুক অ্যাডের এভারেজ কনভার্সন রেট ৯.২১%।  আর Apparel, Retail, এবং Beauty Industry তে এভারেজ কনভার্সন রেট ৪.১১%, ৭.১০% ৩.২৬%।

এখন আপনি যদি অনলাইনে পোশাক বিক্রি করেন তাহলে ২০,০০০ কাস্টমারকে রিচ করলে আপনি ৮২২ জন পটেনশিয়াল কাস্টমার এনগেজ  করতে পারবেন। কনভার্সন হলেই সেল হবে এমনটা নয়, তবে এটি সেল হবার পজিটিভ সম্ভবনাকে নির্দেশ করে। যদি এই এনগেজমেন্ট হতে ১% ও সেল আসে তবে ৮-১০ টি প্রোডাক্ট অর্ডার হবে।   

এখন আপনাকে হিসাব করে দেখতে হবে, আপনি যে পরিমান বাজেট করেছেন এবং যে পরিমান ROI পাচ্ছেন সেটা লাভ জনক কিনা । লাভ জনক না হলে সেটা কিভাবে লাভজনক করা যায় সেটা খুঁজে বের করতে হবে । এক্ষেত্রে প্রফেশনাল ই-কমার্স বিজনেস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিতে পারেন।     

ফেসবুক পেইড মার্কেটিং বা বুস্টিং এ প্রথম দিকে দারুণ ফলাফল দেয় তাই প্রথম ৩ মাস বড় বাজেটের বুস্টিং ধারাবাহিক ভাবে চালানো ভালো। 

পরিশেষ, 

আপনার বিজনেসকে সফল করতে যেকোনো পরামর্শ বা সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ০১৭২৯ ২৪১ ৪৯৯ অথবা ০১৭৬৬ ৬৮১ ৩১৮ দিনরাত যে কোন সময়।

 

অনলাইনে বিক্রি না করার ফলে কীভাবে আপনি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন?

অনলাইনে বিক্রি না করার ফলে কীভাবে আপনি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন?
সব ব্যবসায়ীই চান তার বিক্রি বাড়াতে। কিন্তু আপনি যদি ইকমার্স এর মাধ্যমে পণ্য বিক্রি না করেন তাহলে নিজের বিক্রি বাড়ানোর সবচেয়ে বড় সুযোগটি হারিয়ে ফেলছেন।

আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না প্রতিনিয়ত কত মানুষ অনলাইনে আপনার পণ্যটি খুঁজছে আর তার জন্য তারা উপযুক্ত মূল্য দিতে প্রস্তুত I উদাহরণস্বরূপ, Google Trends (https://trends.google.com/trends/) এ চলে যান I আপনি যেসব পণ্য বিক্রি করেন সেগুলা সার্চ করে দেখুন, বুঝতে পারবেন আপনার অনলাইনে বিক্রি করা উচিত কি উচিত না I

যেমন, আপনি Google Trends এ গিয়ে বাংলাদেশ সিলেক্ট করে ‘handicraft’ লিখে সার্চ করেন, তাহলে নিচের গ্রাফটি দেখবেন

Handicraft Trend

বিগত ১২ মাসে বাংলাদেশে যত কীওয়ার্ড সার্চ হয়েছে তার মধ্যে handicraft এর অবস্থান কেমন সেটা এই গ্রাফ দেখিয়ে দিচ্ছে । এর মানে হলো, আপনি যদি handicraft এর বিজনেস করেন আর আপনার কোনো ইকমার্স ওয়েবসাইট না থাকে, তাহলে আপনি আপনার সম্ভাব্য ক্রেতাদের বড় একটা অংশের কাছে পোঁছাতে পারছেন না ।

পাশের বাসার কেউ জানে না আপনি কী পণ্য বিক্রি করেন

বর্তমানে মানুষ কিছু কেনার জন্য চিন্তা করলে প্রথমে গুগলে তা সার্চ করে। প্রথম পৃষ্ঠায় সে যাদের খুঁজে পায়  তাঁদের পণ্যটি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। যদি অনলাইন বিক্রেতা পণ্যটির বিবরণ ও গুনগত মান সাবলীল ভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়, তবে গ্রাহক সেই পণ্যটি কেনার জন্য তাঁর ওয়েবসাইটে যায় এবং পণ্যটি কিনে ফেলে ।

আপনি যদি অনলাইন ইকমার্স ওয়েবসাইট না থাকে, তাহলে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গা থেকে ক্রেতাদেরকে আপনার পণ্য কেনার সুবিধা দিতে পারছেন না। অনেকেই ফেইসবুক দিয়ে এই কাজটি করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু ফেইসবুক ইকমার্স সাইট এর বিকল্প না । কেন না, সেটা নিয়ে আমরা অন্য একটা আর্টিকেল এ আলোচনা করবো ।


দেশ ও দেশের বাইরে যে কোন প্রান্তে আপনার পণ্য বিক্রির সুযোগ হারাচ্ছেন

এখনকার যুগে আপনার বিজনেস লোকেশান কোথায় সেটা কোন বিষয় না । আপনি চাইলে দেশ ও দেশের বাইরে আপনার পণ্যটি সহজেই পৌঁছে দিতে পারবেন। এটা সম্ভব শুধুমাত্র তখন যখন আপনি আপনার বিজনেসকে ইকমার্স এর সাথে সম্পৃক্ত করবেন ।  অনলাইনে বিক্রি শুরু না করলে আপনার আত্মীয়-স্বজন বা এলাকার সীমিত গণ্ডির বাইরে আপনাকে এবং আপনার পণ্যকে কেউ চিনবে না। আপনার বেচাকেনাও হবে খুব সীমিত।

আপনি কি চান না আপনার বিক্রি দিন দিন বৃদ্ধি পাক, আপনার পণ্যের সুনাম ছড়িয়ে পড়ুক আপনার এলাকার বা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে?

পণ্যের সম্ভাব্য চাহিদা সম্পর্কে আপনি অজ্ঞাত থাকছেন  

ইকমার্স এর মাধ্যমে বিক্রি শুরু না করলে আপনি কখনোই আপনার পণ্যের প্রকৃত বাজার সম্পর্কে জানবেন না। একটি দোকানে সবার আসার সুযোগ থাকে না, কিন্তু আপনি অনলাইনে আপনার পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি শুরু করলে বাসায় বসেই আপনার পণ্যটি ক্রেতারা দেখতে পারবে এবং কেনার সুযোগ পাবে।

আপনি যদি জানতে সক্ষম হন ঠিক কোন পণ্যটি ক্রেতারা বেশি পছন্দ করছে তাহলে ঐ একটি পণ্যই আপনার বিজনেসের ৮০ শতাংশ মুনাফা নিয়ে আসতে পারে।  

আপনার পণ্য সম্পর্কে কাস্টমারদের প্রকৃত মতামত জানতে ব্যর্থ হচ্ছেন

একটি সফল বিজনেস নির্ভর করে গ্রাহক সন্তুষ্টির উপর । আপনি যখন ইকমার্স এর মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করবেন তখন কাস্টমাররা সহজেই আপনার পণ্যের গুনগত মান, কাস্টমার সার্ভিস সম্পর্কে সরাসরি তাঁদের ভাবনাগুলো প্রকাশ করতে পারবে ।

আপনার যেমন বুঝতে সুবিধা হবে ঠিক কোন জায়গায় আরও উন্নতি করা দরকার, ঠিক তেমনি গ্রাহকের সাথে আপনার সম্পর্কও মজবুত হবে তাদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করার ফলে।

নতুন কাস্টমারদের জন্য পুরোনো কাস্টমারদের এই ফিডব্যাক আপনার থেকে পণ্য কেনাকাটা করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে । যদি আপনি অনলাইনে বিজনেস না করেন, তবে কাস্টমার প্রথমবার কেনার পর কেন দ্বিতীয়বার আপনার পণ্য কেনে,  বা আপনার পণ্য সম্পর্কে কাস্টমারদের প্রকৃত মতামত কী, তা আপনি সহজে জানতে পারবেন না, যদি না আপনি নিজে তাঁদের সাথে যোগাযোগ করেন।

Bill Gates এর একটি উক্তি দিয়ে শেষ করি: “If your business isn’t on the internet, then your business will be out of business”

ফেসবুক পেজ এর মাধ্যমে আরো বেশি কাস্টমার পাওয়ার ৭ টি উপায়

ফেসবুক পেজ এর মাধ্যমে আরো বেশি কাস্টমার পাওয়ার ৭ টি উপায়
বর্তমানে অনেকেই ফেসবুক পেজ এর মাধ্যমে বিজনেস করছেন বা বিজনেস শুরু করার চিন্তা করছেন। 

আপনি কি জানেন

  • বর্তমানে বিশ্বের ৯ কোটির বেশি মানুষ তাদের পণ্যের কেনাবেচার জন্য ফেসবুক পেজ ব্যবহার করছেন?
  • শুধুমাত্র ফেসবুক বিজনেস পেজের ফিচার গুলার সঠিক ব্যবহার আপনার পণ্যের বেচাকেনা ৫০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে?
  • ইকমার্সের Social Referral Share (কোন পণ্য/সেবা ক্রয় করার আগে আত্মীয়/বন্ধুদের থেকে পরামর্শ গ্রহণ করা) এর ৮০.৪% হয় ফেসবুকের মাধ্যমে?

তাহলে কেমন হওয়া চাই আপনার ফেসবুক বিজনেস পেজটি?

Cover Photo

রাস্তার মোড়ে বিজ্ঞাপনের বিশাল বিলবোর্ড আর আপনার ফেসবুক পেজের cover photo – মূলত একই জিনিস।

নতুন পণ্য বা সেবার পরিচিতি, অফার ও ডিসকাউন্ট, অথবা কাস্টমারদের আপনার বিজনেস সংক্রান্ত কোন ইভেন্টের তথ্য দিতে প্রয়োজন মাফিক ফেসবুক পেজের  cover photo পরিবর্তন করতে পারেন।

ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে অনেকেই এখন তাদের পণ্য বিক্রয় করছেন, cover photo-তে আপনার লাইভ selling এর সময়টি উল্লেখ করতে পারেন।

এতে যারা আপনার লাইভ দেখতে চায়, তারা পেজে আসা মাত্রই লাইভের সময়টি  জানতে পারবে।

আপনি যদি DeshiCommerce এর ফেসবুক পেজে যান তবে নিচের ছবির মতো কিছু দেখবেন যেখানে ইকমার্স সম্পর্কিত কোন একটি বিষয় ‘ফোকাস’ করা হয়েছে ।

content marketing for ecommerce

DeshiCommerce বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান e-commerce web & marketing solution সেবা প্রদানকারী। তারা উদ্যোক্তাদের অনলাইনে ব্যবসা বৃদ্ধি করতে technical এবং marketing consultancy করে । তাই ছবিটিতে ইকমার্স বিজনেসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে।

 

Uber সম্পর্কে আমরা সবাই জানি, এটি একটি অনলাইন পরিবহন সার্ভিস কম্পানি।

Cover Photo তে তারা এমন একটি ছবি ব্যবহার করছে যেটা দেখে মানুষ তাদের সার্ভিস সম্পর্কে সহজেই বুঝতে পারবে ।

আপনারও উচিত, পেজের cover photo-র জন্য আপনার পণ্য বা সেবার ধরন অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক ছবি ব্যবহার করা।

অনলাইনে এমন প্রচুর Royalty Free Stock Photo পাওয়া যায় যা ব্যবহারে কোন আইনি জটিলটা নেই।

নিচের সাইট গুলা থেকে সহজেই আপনার পছন্দমত ছবি Free Download করতে পারবেন,

https://unsplash.com/

https://picjumbo.com/

Cover Photo অবশ্যই যথাযথ মাপের ও উন্নতমানের হতে হবে।cover photo-তে খুব বেশি লিখা ব্যবহার না করাই ভালো, খেয়াল রাখবেন যেন কাভার ফটো যেন হিজিবিজি না দেখা যায়।

৮১৫ পিক্সেল x  ৩১৫ পিক্সেল ফেসবুক কাভার পেজের  জন্য আদর্শ মাপ।

Profile Picture

বিজনেস পেজের প্রোফাইল পিকচারে আপনার বিজনেস Logo ব্যবহার করুন।

এতে কাস্টমার সহজে আপনার বিজনেস পেজটি শনাক্ত করতে পারবে এবং আশ্বস্ত হতে পারবে যে তারা সঠিক পেজটি খুঁজে পেয়েছে।

৪০০ পিক্সেল x  ১৫০ পিক্সেল ফেসবুক পেজের লোগোর জন্য আদর্শ মাপ।

Logo আপলোডের পরে সেটি ফেসবুক গোলাকার ভাবে কেটে ফেলে, তাই সম্পূর্ণ লোগোটি ঠিকঠাক ভাবে দেখা যাচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হন।

   

অনলাইনে এমন অনেক Free Online Logo Maker আছে যা দিয়ে নিজেই আপনার পেজটির জন্য Logo তৈরি করে ফেলতে পারবেন।

Free Logo তৈরি করতে চাইলে নিচের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন।

https://www.freelogoservices.com/step1

About

আপনার ফেসবুক পেজের  “About” বিভাগটি পূর্ণাঙ্গ তথ্য দ্বারা পুরন করুন এবং ফোন নম্বর, ইমেইল এবং ওয়েবসাইট লিঙ্ক, প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ইত্যাদি সবসময় আপডেট রাখুন।

About বিভাগে Milestones নামে একটি option আছে এটি খুবই পেজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মাইলস্টোন প্রকাশ করে আপনার ব্যবসায়িক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন, বার্ষিকী এবং পুরষ্কারগুলি । কাস্টমারদের  আপনার ব্যবসার অর্জনের গল্পটি বলুন ।

Team Member

আপনার পেজের Team Member-দের ব্যক্তিগত  Fecbook ID টি যেন ফেইক যেন না হয়। অনেকে আছেন উদ্ভট সব নাম Fecbook ID তৈরি করেন , এমন নামধারি Team Member যে পেজে আছে কাস্টমার সেই সকল পেজ এড়িয়ে চলে।

Team Member দের   ব্যক্তিগত Fecbook ID টি যত বেশি সমৃদ্ধ সেই পেজের বেচাকেনা অন্যান্য পেজ হতে ততোবেশি হয়।

কাস্টমার কেনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার আগে Team Member দের   ব্যক্তিগত Fecbook ID টি তে একবার হলেও ঘুরে আসে।

Call to Action

Call to action বাটন আপনার পণ্য ও সেবার কথা মাথায় রেখে নির্বাচন করা উচিত।

  • SHOP NOW – ফ্যাশান ব্র্যান্ডের জন্য ,
  • BOOK NOW – সেবা প্রদানকারী  হলে schedule appointment বা  event registration এর জন্য  এই বাটন ব্যবহার করুন।
  • CONTACT US –  বাটন ব্যাবহার করে কাস্টমারদের আপনার ফোন নম্বর বা ওয়েবসাইট এর লিংক দিতে পারেন।
  • SHOP NOW – যদি আপনার একটি ecommerce website  থাকে তাহলে এই বাটন ব্যাবহার করে পণ্য কেনার জন্য কাস্টমারদের ecommerce website টিতে নিয়ে যেতে পারেন।

SIGN UP – কাস্টমার নতুন পণ্য বা সেবা সম্পর্কে আপডেট রাখতে চাইলে  এই বাটনের সাথে আপনার ecommerce website টির SIGN UP FORM লিংক রাখুন , এতে  কাস্টমার তাঁর ইমেইল বা ফোন নম্বর ব্যবহার করে SIGN UP করলে পরবর্তীতে Email Marketing এর মাধ্যমে  আপনি নতুন নতুন পণ্য বা সেবার প্রচারণা করতে পারেন ।

SEND MASSEGE – আপনি যদি কাস্টমারদের জিজ্ঞাসার উত্তর সুবিধামত সময়ে দিতে চান তাহলে এই বাটন দারুণ কার্যকর। আপনার সুবিধামত সময়ে পেজের inbox ওপেন করে একে একে সবার উত্তর করতে পারবেন।   যদি পণ্য বা সেবার জন্য Pre Order নিতে eচান তাহলে

ছবিঃ আড়ং তাঁর পেজে SHOP NOW বাটন ব্যবহার করেছে। এই বাটনে ক্লিক করলে আপনাকে তাঁদের Ecommerce Website টিতে নিয়ে যাবে।

PAGE LIKE

পেজের গ্রহন যোগ্যতা বাড়ায় Page like.

শুধু লাইক বাড়ালেই কি হবে বাড়াতে হবে বিক্রয়। Pixel Method লাইক বাড়ানোর একটি পরীক্ষিত পন্থা আপনি আপনার রেগুলার কাস্টমারদের তথ্য ফেসবুকে দিলে এটি একটি বিশেষ এলগরিদম ব্যবহার করে আপনার পণ্যের সম্ভাব্য ক্রেতাদের খুঁজে বের করে।

ফলে কাস্টমারদের কাছে পেজের  গ্রহন যোগ্যতা যেমন বৃদ্ধি পায় আবার বেড়ে যায় বেচাকেনা।

উপরের এই পেজটির লাইক ১৬,৫৬৪

নিচের পেজটির লাইক মাত্র ৪,০২৭ টি

আপনি কোন পেজটি হতে পণ্য কিনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন ?

PIN POST

পিন করা পোস্ট  সাত দিনের জন্য আপনার টাইমলাইনে শীর্ষে থাকে। কাস্টমারদের সামনে দৃশ্যমান রাখতে চান এমন পোস্ট পেজে  Pin করে রাখতে পারেন।

বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখের মত। পেজ হতে কেনাকাটা করে এমন মানুষের সংখ্যা ৭৫ লক্ষ।

মহিলা ফেইসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা, মোট ব্যবহারকারীর ২০% কিন্ত তারাই সবচেয়ে বেশি পণ্য ক্রয় করে অনলাইনে। (source: e-cab)

আপনি চাইলেই ফেসবুকে অ্যাড দিতে পারেন । কিন্তু আপনার ফেসবুক পেজটি যদি আকর্ষণীয় না হয় তাহলে কাস্টমার আপনার থেকে কিনতে উৎসাহিত হবে না।

তাই এই সামাজিক মাধ্যমটি ব্যবহার করে সফলভাবে পণ্য ও সেবার তথ্য কাস্টমারদের কাছে পোঁছানোটাই আসল চ্যালেঞ্জ। 

আমাদের সাথে শেয়ার করুন, কাস্টমার আকর্ষণ করতে কীভাবে আপনি আপনার ফেসবুক পেজকে ব্যবহার করছেন

 

লাইক-ফলো দিয়ে সাথে থাকুন

ক্যাটাগরি

জনপ্রিয় পোস্ট