ই-কমার্স কি?
খুব সংক্ষেপে যদি ই-কমার্স কি প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, একটি ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে , মূলত ইন্টারনেট বা অন্য কোন কম্পিউটার নেটওইয়ার্ক এর মাধ্যমে পণ্য ও সেবার ক্রয়-বিক্রয়, অথবা তহবিল বা ডেটা প্রেরণ ইত্যাদি করাকেই ই-কমার্স বলে। ই কমার্স এর পূর্ণরূপ হল, ইলেকট্রনিক কমার্স, অনেকে একে ই-বাণিজ্যও বলে।
সাধারণত এই সেবাগুলি ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অনলাইনে দেয়া হয়। এছাড়াও ইলেকট্রনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পন্ন করা যেকোনো লেনদেনও ই-কমার্সের অন্তর্ভুক্ত, যেমন অনলাইনে টাকার লেনদেন। এটি একটি আধুনিক ব্যবসা পদ্ধতি।
তাই বলা যায়, ই-কমার্সের আদর্শ সংজ্ঞা হল ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে সম্পন্ন যে কোনো প্রকার বাণিজ্যিক লেনদেন। ই-কমার্স এবং ই-বিজনেস শব্দ দুটি অনেক সময়ে একই অর্থে ব্যবহার করা হলেও দুটি এক নয়।ই-বিজনেস বা ই- ব্যবসার একটি অংশ ই-কমার্স।
ই-কমার্স ব্যবসা কি মডেলে কাজ করে?
লেনদেনের সাথে জড়িত পক্ষগুলি বিবেচনা করে ইলেকট্রনিক কমার্সকে চারটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। চারটি মৌলিক ইলেকট্রনিক কমার্স মডেলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপ:
১। ব্যবসা থেকে ব্যবসা ই-কমার্স (B2B e-Commerce)
B2B বা ব্যবসা-থেকে-ব্যবসা ই-কমার্সের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পণ্য, সেবা বা তথ্য লেনদেন করা হয় ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে। চূড়ান্ত ভোক্তা এর সাথে জড়িত থাকে না। শুধুমাত্র প্রস্তুতকারকগণ, পাইকারী বিক্রেতা, খুচরা বিক্রেতারা B2B অনলাইন লেনদেনে জড়িত থাকে ।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় অনলাইন ডিরেক্টরি এবং পণ্য ও সরবরাহ বিনিময় ওয়েবসাইট যেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসুমূহ পণ্য, সেবা এবং তথ্য অনুসন্ধান করে এবং ই-প্রকিউরমেন্ট ইন্টারফেসের মাধ্যমে লেনদেন করে। Salesforce একটি শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসা-থেকে-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। Salesforce হল একটি সমন্বিত CRM প্ল্যাটফর্ম যাতে প্রতিটি গ্রাহকদের বিপণন, বিক্রয়, বাণিজ্য, ও সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকে।
ব্যবসা-থেকে-ভোক্তা ই-কমার্স (B2C e-Commerce)
B2C বা ব্যবসা-থেকে-ভোক্তা হল ই-কমার্সের খুচরা ব্যবসার অংশ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পণ্য, সেবা বা তথ্য বিক্রি করে থাকে B2C ই-কমার্সের মাধ্যমে।ভোক্তা তাদের ই-কমার্স ওয়েবসাইট ব্রাউজ করতে এবং পণ্য, ছবি দেখতে, পর্যালোচনা পড়তে পারেন। তারপর ভোক্তারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী অর্ডার দেয় এবং কোম্পানি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমূহ সরাসরি চূড়ান্ত ভোক্তার কাছে পণ্য পাঠায়।
১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে B2C শব্দটি জনপ্রিয়তা পায়। বর্তমানে, ইন্টারনেটে অসংখ্য ভার্চুয়াল স্টোর এবং মল রয়েছে যা সকল ধরণের ভোগ্যপণ্য বিক্রি করে। এই সাইটগুলির মধ্যে আমাজন সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এটি B2C বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে রয়েছে । বাংলাদেশে দারাজ, চালডাল এবং আজকের ডিল শীর্ষ স্থানীয় B2C ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান। ই-ব্যাংকিং ও B2C ব্যাবস্থার অন্তর্ভুক্ত।
৩।ভোক্তা থেকে ভোক্তা ই-কমার্স (C2C e-Commerce)
C2C বা ভোক্তা থেকে ভোক্তা এক ধরনের ই-কমার্স যেখানে ভোক্তারা অনলাইনে একে অপরের সাথে পণ্য, সেবা এবং তথ্য লেনদেন করে। এই লেনদেনগুলি সাধারণত তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।যেখানে তারা ভোক্তাদের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও মার্কেটপ্লেস প্রদান করে। সেখানে ভোক্তারা একে ওপরের সাথে লেনদেন করে। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সংযোগ ঘটে এবং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়। ভোক্তারা সাধারণত কোনো জিনিসের ভাল দাম খুঁজে পেতে এবং অবাঞ্ছিত আইটেম থেকে অর্থ উপার্জন করতে C2C বাজার ব্যবহার করে। সাধারণত মার্কেটপ্লেস সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানগুলি বিক্রেতাদের কাছ থেকে একটি লেনদেন ফি আদায় করে অর্থ উপার্জন করে। দুটি জনপ্রিয় C2C মার্কেটপ্লেস প্লাটফর্ম হল eBay এবং Craigslist। C2C মার্কেটপ্লেসের অন্যান্য উদাহরণের মধ্যে রয়েছে Airbnb, Fiverr এবং Etsy। বাংলাদেশে C2C মার্কেটপ্লেস প্লাটফর্ম এর মধ্যে bikroy.com এবং clickbd.com অন্যতম।
৪। ভোক্তা থেকে ব্যবসা ই-কমার্স (C2B e-Commerce)
C2B হল এক ধরনের ই-কমার্স যেখানে কোম্পানিগুলি অনলাইনে নিলামের মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছ থেকে তাদের পণ্য এবং সেবাসমূহ ক্রয় করে। এটি B2C এর ঐতিহ্যবাহী কমার্স এর বিপরীত।
C2B প্ল্যাটফর্মের একটি জনপ্রিয় উদাহরণ হল iStock। এটি এমন একটি বাজার ব্যবস্থা যেখানে রয়্যালটি-মুক্ত ফটোগ্রাফ, ছবি, মিডিয়া এবং ডিজাইন উপাদান বিক্রয় করা হয়। আরেকটি উদাহরণ হল চাকরি বোর্ড এবং আইটি ফ্রিল্যান্সার।
এই ৪ প্রকারের ই-বাণিজ্য ছাড়াও আরও বেশ কিছু ব্যবসার মডেল প্রচলিত আছে। সেগুলো সম্পর্কে নিচে সংক্ষিপ্ত ধারনা দেয়া হল।
ব্যবসা থেকে প্রশাসন ই-বাণিজ্য (B2A)
কোম্পানি এবং জনপ্রশাসন বা সরকারী সংস্থার মধ্যে অনলাইনে পরিচালিত লেনদেন বোঝায়। সরকারের অনেক শাখাই বিভিন্ন ধরনের ই-সেবা বা পণ্যের উপর নির্ভরশীল। এই পণ্য এবং সেবা গুলো প্রায়ই আইনি নথি, রেজিস্টার, সামাজিক নিরাপত্তা, আর্থিক তথ্য এবং কর্মসংস্থানের সাথে সম্পর্কিত। ব্যবসা ইলেকট্রনিকভাবে এই সেবাসমূহ সরবরাহ করতে পারে। সরকারের ই-গভর্নমেন্ট সক্ষমতায় বিনিয়োগের কারণে বাংলাদেশে B2A সেবাগুলি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভোক্তা থেকে প্রশাসন ই-বাণিজ্য (C2A)
ভোক্তা এবং জনপ্রশাসন বা সরকারী সংস্থার মধ্যে অনলাইনে পরিচালিত লেনদেন বোঝায়। সরকার খুব কমই ব্যক্তিদের কাছ থেকে পণ্য বা সেবা ক্রয় করে, তবে ব্যক্তিরা প্রায়শই নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক উপায় ব্যবহার করে:
- সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য বিতরণ এবং অর্থ প্রদান করা।
- করের ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করা এবং অর্থ প্রদান করা।
- স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা,পরীক্ষার ফলাফল এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে তথ্য প্রদান এবং স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা।
মোবাইল ই-কমার্স (M-Commerce )
মোবাইল ডিভাইস, যেমন স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট ব্যবহার করে অনলাইন বিক্রয় লেনদেন বোঝায়। এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল কেনাকাটা, ব্যাংকিং এবং পেমেন্ট। ভোক্তারা ভয়েস বা টেক্সট কথোপকথনের মাধ্যমে লেনদেন করে থাকে।
ই-কমার্স ব্যবসায় প্রডাক্ট বিক্রির জনপ্রিয় ৫ টি পদ্ধতি
আপনার ব্যবসার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ই কমার্স মডেল নির্ধারণ এরপর আপনাকে প্রডাক্ট বিক্রির পদ্ধতি ঠিক করতে হবে। এর জন্য আপনার পুঁজি, প্রডাক্ট সাপ্লাইয়ার, নিজস্ব দোকান, প্রডাক্ট রাখার উপযুক্ত গুদাম, কর্মচারী সংখ্যা, এবং ডিজিটাল টেকনোলোজি ব্যবহারের দক্ষতা বিবেচনায় আনতে হবে। সহজ কথায় আপনার কেপাসিটি আপনাকে বুঝতে হবে। যে ভাবে ই-কমার্স বিজনেস করলে আপনি সহজে অধিক লাভ করতে পারবেন সেভাবেই করুন।
১। খুচরা ই কমার্স ব্যবসা
খুচরা ই-কমার্স প্রক্রিয়ায় ব্যবসা করা কার্যক্রম শুরু হয় বিক্রির জন্য নিজে পণ্য বানানো, অথবা পাইকারি দরে প্রোডাক্ট কেনার মাধ্যেম। অথবা কোন প্রোডাক্ট সরবরাহ কারির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে। বাংলাদেশে ইউনিলিভার, রেকিট, এর মত ছোট-বড় ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গুলো খুচরা ই কমার্স ব্যবসায়ীদের কাছে পন্য সরবারাহ করে থাকে। তাদের বিক্রয় প্রতিনিধি অথবা এস আর দের সাথে যোগাযোগ করলে আপনাকেও তারা পণ্য সরবরাহ করবে। সরবরাহকৃত পণ্য আপনাকে কিনে নিজের গুদামে স্টক করে রাখতে হবে।
খুচরা ই-কমার্স শপ বাজারের সাধারণ অন্যান্য দোকানের মতো একই নীতিতে কাজ করে। গ্রাহকরা আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটে এসে, পণ্য ব্রাউজ করে পছন্দ এবং অর্ডার করে। তারপর আপনাকে নিজ দায়িত্বে অর্ডার করা পণ্য কাস্টমারের কাছে ডেলিভারি দিতে এবং টাকা আদায় করতে হবে।
বাজারের দোকানের সাথে ই-কমার্সের বড় পার্থক্য হল, এর সম্ভাব্য গ্রাহকরা একটি নির্দিষ্ট এলাকা বা অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আপনি এবং কাস্টমার ঘরে বসে বা পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে।
২। ড্রপ শিপিং
ড্রপ শিপিং ব্যবসার পণ্য স্টক, প্যাকেজ এবং ডেলিভারি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে হয়। অর্থাৎ আপনাকে প্রাডাক্ট ক্রয় করে স্টক করতে হবে না। আপনি শুধু ওয়েবসাইটে অর্ডার নিবেন এবং মুল সরবরাহকারী পণ্য স্টক, ডেলিভারি, টাকা সংগ্রহসহ বাকি সব কিছু করবে। আপনি তাকে কাস্টমার এনে দেবার বদলে কমিশন পাবেন। এই প্রক্রিয়ায় ই-কমার্স ব্যবসা করাকে ড্রপ শিপিং বলা হয়। পুঁজি এবং নিজে অর্ডার ডেলিভারি পূরণের সক্ষমতা কম হলে এই পদ্ধতিতে যাওয়া ভাল। আপনার মূল দায়িত্ব হবে মার্কেটিং করা।
ড্রপ শিপিং ই কমার্স ব্যবসার সবচেয়ে দুর্বলতা হল যে, প্রোডাক্ট সাপ্লাই চেইনের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। যদি তৃতীয় পক্ষ কাস্টমারের কাছে ভুল, খারাপ, কম অথবা দেরীতে প্রোডাক্ট ডেলিভারি হয়, তাহলে আপনার ব্যবসার সুনাম নষ্ট হবে।
৩। সাবস্ক্রিপশন মডেল
ই কমার্স সাবস্ক্রিপশন মডেলে আপনি নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রডাক্ট অথবা সেবা প্রদানের জন্য কাস্টমারে সাথে চুক্তিবদ্ধ হবেন। অনেক ধরণের সাবস্ক্রিপশন ইকমার্স ব্যবসা রয়েছে, যেমন ইন্টারনেট সেবা, আকাশ ডিশ, নেটফ্লিক্স সার্ভিস অথবা দৈনিক-সাপ্তাহিক দুধ, চাল ডাল সরবারহ ইত্যাদি। ইন্টারনেট এর মাধ্যমে সাবস্ক্রিপশন চুক্তি এবং টাকা আদায় করা হয়। উন্নত বিশ্বে ই কমার্স সাবস্ক্রিপশন মডেলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৪। ডিজিটাল পাইকারি ব্যবসা
ডিজিটাল পাইকারি ব্যবসায় আপনাকে সরাসরি পণ্য উৎপাদক বা সরবরাহকারী থেকে ক্রয় করে করে গুদামজাতকরণ, এবং শিপিং করতে হবে। আপনি উৎপাদন বাদে সমস্ত অংশ পরিচালনা করবেন। মূল পার্থক্য হবে আপনার কাস্টমার তারা শেষ ভোক্তা না হয়ে হবে খুচরা ব্যবসায়ীগণ। অর্থাৎ অনলাইনে আপনার থেকে পণ্য কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা ভোক্তার কাছে বিক্রি করবে। ডিজিটাল পাইকারি ব্যবসা সাধারণত B2B ই-কমার্স মডেল অনুসরন করে।
৫। সাদা বা হোয়াইট লেবেল
হোয়াইট লেবেলিং ব্যবস্থায়, একটি ব্যবসা তার নিজের ব্র্যান্ড নাম এবং ব্র্যান্ড লোগোর অধীনে পণ্য বিক্রি করে, তবে পণ্য আসলে তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে উৎপাদন অথবা কেনা হয়। আপনি শুধু মাত্র রেডি প্রোডাক্টের উপর আপনার নিজের ব্র্যান্ড লাগিয়ে বিক্রি করবেন।
ছোট বড় পোশাক, ইলেক্ট্রনিকস, মোবাইল, কস্মেটিক্স ইত্যাদি কোম্পানিগুলো হোয়াইট লেবেলিং করে অনলাইনে বিক্রি করে। বাংলাদেশে অনেকেই চীন থেকে কেনা পন্য নিজের ব্র্যান্ড নাম লাগিয়ে বিক্রি করে।
হোয়াইট লেবেলিং এর মাধ্যমে তুলানামুলক কম খরচে আপনার ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারবেন। যেহেতু নিজের কারখানা লাগবে না তাই ব্যবসার ঝুঁকি কম।
ই-কমার্স প্রক্রিয়া
ই-কমার্স হল ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য এবং সেবা বিক্রি করার প্রক্রিয়া। গ্রাহকরা ওয়েবসাইট বা অনলাইন মার্কেটপ্লেসে আসেন এবং ইলেকট্রনিক পেমেন্ট ব্যবহার করে পণ্য ক্রয় করেন। টাকা পাওয়ার পর, বিক্রেতা পণ্য পাঠান বা সেবা প্রদান করেন।
একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট পরিচালনা করার সময় গ্রাহক বা ক্রেতা একই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান। প্রক্রিয়াটি সংক্ষিপ্ত রূপ নিম্নরূপ:
- অর্ডার গ্রহণ: প্রথমে ক্রেতা তার পছন্দ অনুযায়ী বিক্রেতার ওয়েবসাইট বা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে একটি অর্ডার দেয়। অর্ডারের নোটিশটি বিক্রেতাকে জানানো হয়।
- অর্ডার প্রক্রিয়াকরণ: এর পরে, ক্রেতা বিক্রয়মূল্য বা অর্থপ্রদান করেন। তখন বিক্রয়টি লিপিবদ্ধ করা হয় এবং অর্ডারটি সম্পূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। লেনদেন সাধারণত পেমেন্ট গেটওয়ে এর মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়।
- অর্ডার পাঠান: ই-কমার্স প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ হল অর্ডারকৃত পণ্য বা সেবা ক্রেতা বা গ্রাহককে সরবরাহ করা।
ই-কমার্স লেনদেনগুলি মূলত খুচরা লেনদেনের মতোই যেখানে গ্রাহকরা দোকানে এসে, পণ্যের কেনাকাটা করে এবং নগদে মূল্য পরিশোধ করে। পার্থক্য হল এটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে করা হয় এবং বিক্রেতাদের গ্রাহকদের কাছে পণ্যগুলি পাঠাতে হয়।
ই-কমার্স ব্যবসার ইতিহাস
ই-কমার্স ব্যবসা এখন মুলত ইন্টারনেট ভিত্তিক হলে এর শুরু হয়েছিল ইন্টারনেট এর বহু আগেই। ১৯৬০ সালের দিকে EDI ইলেক্ট্রনিক ডাটা ইন্টারচেন্জ সিস্টেম চালু হয়। এর ফলে প্রথমবারের মত ব্যবসার তথ্য একটি স্ট্যান্ডার্ড ইলেকট্রনিক ফরম্যাটে রাখা এবং শেয়ার করার সুযোগ হয়। অর্থাৎ ই-কমার্স ব্যবসার কাঠামোগত ভিত্তি সৃষ্টি হয়। তখন ফোন কলের মাধ্যমে পণ্যের অর্ডার নেয়া এবং ডাক যোগে ডেলিভারি দেয়া শুরু হয়।
আজকে আমরা ই কমার্স বলতে যেটা বুঝি সেটা মুলত ১৯৯০ সালের ডট কম বাবলের যুগে amazon.com আর ebay.com মাধ্যমে শুরু হয়।
প্রথম ই-কমার্স বই অর্ডারঃFLUID CONCEPTS AND CREATIVE ANALOGIES
একটি বই এর অর্ডার নেয়ার মাধ্যমে amazon.com এর যাত্রা হয়। ডগ্লাস হফস্টেডার Fluid Concepts and Creative Analogies নামে বই অর্ডার করেন। তিনি ছিলেন আমাযন এর প্রথম উন্মুক্ত বেটা টেস্টার।
বাংলাদেশে ডিজিটাল কমার্স ব্যবসার নীতিমালা ও আইন
বাংলাদেশে ই-কমার্স একটি নতুন খাত। এই খাতকে সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রনালয় জাতীয় ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১ প্রনয়ন করেছে। ক্রেতা-বিক্রেতার সুরক্ষা প্রদানের জন্যই এই গাইডলাইন। বাংলাদেশের সকল ই-কমার্স ব্যবসাকে এই নিতিমালা অনুসরণ করে ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়। তাই ব্যবসা শুরু করার আগে ই-কমার্স ব্যবসার নীতিমালাটির বিশ্লেষণ ভালো বুঝে নেয়া উত্তম। তাহলে অযাচিত ঝুট ঝামেলার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
পরিশেষ
ব্যাবসার দিক বিবেচনায়, ই-কমার্স ব্যবসায় সাধারণত অর্থ সাশ্রয় হয়, অধিক সংখ্যক গ্রাহকদের কাছে পৌছানো যায় এবং সহজেই বিক্রয় হিসাব ও বিশ্লেষণ করা গেলেও এতে ঝুঁকিও রয়েছে অনেক। অর্থপ্রদান এবং ডেটা জালিয়াতি, তীব্র প্রতিযোগিতা, এবং ডিসকাউন্ট-সন্ধানী ভোক্তারা ই-কমার্স ব্যবসার চলমান বাঁধা।
ইলেকট্রনিক কমার্স এর মাধ্যমে ব্যাবসায়ী ও গ্রাহকরা সহজে ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেন করতে পারে, তাই সাড়া বিশ্বের মতো বাংলাদেশও ই-কমার্স প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরীতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের ই-কমার্স বাজারের আকার ছিল প্রায় ৫৬৮.৭০ বিলিয়ন টাকা এবং ২০২৬ সালের মধ্যে এর আকার দাঁড়াবে প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন টাকা। (তথ্যসূত্র :দি ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ডিসেম্বর ১৫,২০২২)
আপনার মূল্যবান মতামত দিন
আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন