কমপ্লিট ফেসবুক অ্যাড গাইড ২০২১ঃ কিভাবে ফেসবুকে অ্যাড দিতে হয়

কমপ্লিট ফেসবুক অ্যাড গাইড ২০২১ঃ কিভাবে ফেসবুকে অ্যাড দিতে হয়
শেয়ার করুন

কমপ্লিট ফেসবুক অ্যাড গাইড ২০২১ঃ ফেসবুক অ্যাড তৈরির  প্রাথমিক পর্যায় থেকে অ্যাডভান্স কৌশলের প্রতিটি ধাপ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই গাইডে। 

আপনার বিজনেসের জন্য আদর্শ অডিয়েন্সের একটি বড় অংশ সামাজিক মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক ব্যবহার করে এবং  ফেসবুক তাদের সাথে আপনার ব্র্যান্ডকে যুক্ত করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। 

সমসাময়িক সময়ে অর্গানিক ভাবে ফেসবুক অডিয়েন্সদের সাথে যুক্ত হওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং – কারণ ফেসবুকের ক্রমাগত অ্যালগোরিদমের পরিবর্তন। 

তারপরও ফেসবুকের টার্গেটিং অপশন ব্যবহার করে আপনার বিজনেসের জন্য আদর্শ কাস্টমারদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। যার দ্বারা আপনার প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসগুলো আদর্শ কাস্টমারদের সামনে তুলে ধরা সহজ হয়। 

ফেসবুক ব্যবহার করে কাস্টমারদের কাছে পৌঁছাতে হলে ফেসবুকের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। বুঝতে হবে আপনার অডিয়েন্সদের কাছে পৌঁছাতে এবং তাদের খুঁজে পেতে ফেসবুক কিভাবে কাজ করে ।

এই গাইডে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, 

 

  • ফেসবুক অ্যাড টাইপ
  • Step-by-step গাইড, কিভাবে ফেসবুকের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিবেন
  • ফেসবুকে অ্যাড স্পেস
  • ফেসবুক অ্যাড বিষয়ে স্মার্ট টিপস
  • ফেসবুক অ্যাড আইডিয়া

 

ফেসবুক অ্যাড টাইপ

ইমেজ অ্যাড

এটি ফেসবুকের খুব সাধারন অ্যাড টাইপ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর। তবে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।  প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করবেন? 

আমরা সাধারন একটি ছবি পোস্ট করার মাধ্যমেই ফেসবুক অ্যাড দিয়ে থাকি। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, সেই সাধারণ ছবিটি দর্শকদের জন্য ইন্টারেস্টিং লাগে নাকি বোরিং মনে হয়। 

সাধারণত যে ভুলটি বিজ্ঞাপনদাতারা করে থাকে, সেটি হচ্ছে সাদামাটা একটি ছবি পোস্ট করা। 

আপনি যদি প্রোডাক্টের ছবিটা একটু ইন্টারেস্টিং ভাবে উপস্থাপন করতে পারেন, তবে এটি আপনার দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। 

দেখুন হ্যাপি সকস কীভাবে তাঁর প্রোডাক্টের ইমেজ অ্যাড তৈরি করেছে। 


ভিডিও অ্যাড 

ভিডিও অ্যাডগুলো নিউজ ফিড, স্টোরি বা ইনস্ট্রিম অ্যাড হিসেবে দেখা যায়। আপনার প্রোডাক্টের রিয়েল লাইফ ব্যবহার দেখানোর জন্য এই ধরনের অ্যাডের কোন বিকল্প নেই। 

অনেকেই আছেন খুব ঘরোয়া পরিবেশে ডু ইট ইউর সেলফ টাইপ ভিডিও দেখতে চায়, আবার কেউ কেউ প্রফেশনাল মানের ভিডিও দেখতে পছন্দ করেন। অনেকেই গিফ অথবা অ্যানিমেটেড ভিডিও পছন্দ করেন।  কেউবা স্লাইডশো ভিডিও গুলো দেখতে পছন্দ করে।

ভিডিও অ্যাড নির্মাণের ক্ষেত্রে সব সময় আপনাকে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও এন্ড নির্মাণের দিকে মনোযোগী হতে হবে। একই ধরনের ভিডিও অ্যাড দিয়ে সকল কাস্টমারদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবেন না।

ভিডিও পোল অ্যাড

এটি ফেসবুকের ব্র্যান্ড নিউ অ্যাড ফরমেট গুলোর  মধ্যে একটি যা শুধুমাত্র পেইড এডভার্টাইজিং এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা সম্ভব।  

ফেসবুকের অ্যাড ক্যাম্পেইন গুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এই ভিডিও অ্যাড টাইপ ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইনের জন্য অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমানিত।

কেরোজাল অ্যাড

একসাথে দশটি ছবি বা ভিডিও কে শোকেস করার জন্য এ ধরনের ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

একটি মাত্র পোস্টের মাধ্যমে  প্রতিটি প্রোডাক্টের ভিন্ন ভিন্ন ছবি এবং তার বৈশিষ্ট্য গুলো বর্ণনা করা যায় । যেখানে, বাম থেকে ডানে আবার ডান থেকে বামে স্ক্রল করে অ্যাডের  প্রোডাক্ট গুলো  দেখা যায়।

স্লাইড শো অ্যাড 

এই অ্যাডটি ভিডিও ফরম্যাটেই তৈরি করা হয় তবে পার্থক্য হচ্ছে ভিডিওর প্রতিটি ফ্রেম স্টিল ইমেজ আকারে যায় অনেকটা ভিডিও প্রেজেন্টেশনের মত।

প্রেজেন্টেশনের মত স্লাইডগুলো তৈরি করে সেগুলো একসাথে করে একটি ভিডিও তৈরি করতে পারেন অথবা ফেসবুকের স্টক ফটোতে থাকা লক্ষাধিক ছবি থেকে পছন্দের ছবিগুলো বেছে নিয়ে একটি স্লাইড তৈরি করতে পারবেন যেটাকে অনেকে এনিমেটেড অ্যাড বলে। 

কালেকশন অ্যাড

কালেকশন অ্যাড কাস্টমারের  মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে প্রোডাক্ট ক্যাটালগ দেখার অভিজ্ঞতাকে সহজ করে। যেখানে একটি কভার ইমেজ বা ভিডিও এর সাথে আরও চারটি প্রাসঙ্গিক প্রোডাক্ট একসাথে শোকেস করার ও কেনার  সুবিধা থাকে।

ইনস্ট্যান্ট এক্সপেরিয়েন্স অ্যাড

অনেকে এটিকে ক্যানভাস অ্যাড বলে থাকেন। এটি ফুল স্ক্রিন অ্যাড ফরমেটে তৈরি যা ফেসবুক বাইরে মোবাইল ওয়েবসাইট গুলোর  থেকেও 15 গুণ বেশি ফাস্ট লোড হয়।

প্রথমে, আপনি যখন  ফেসবুক ইনস্ট্যান্ট এক্সপেরিয়েন্স অ্যাড দেখেন, তখন এটি একটি সাধারণ ভিডিও বা ছবি যুক্ত বিজ্ঞাপনের মতো মনে হয়, কিন্তু আপনি যখন এটিতে ক্লিক করবেন এটি একটি সম্পূর্ণ ইন্টারেক্টিভ পেজ আকারে খোলে যা পুরোপুরি কাস্টমাইজ করা যায়।  

ইমেজ বা ভিডিও বিজ্ঞাপনের চেয়ে আরও দৃষ্টিনন্দন উপায়ে আপনার অ্যাডটিকে  নেক্সট লেভেলে নিয়ে যাওয়ার এক দারুন উপায় এই অ্যাড ফরম্যাট। 

লিড অ্যাড

অডিয়েন্সদের ডেটা কালেকশনের জন্য এই অ্যাড ব্যবহার করা হয়ে থাকে যেখানে কেউ একজন যখন আপনার দেয়া অ্যাড পছন্দ করছে তাঁর তথ্য সংগ্রহ করার সুবিধা থাকে।

নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করার জন্য অথবা একটি প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের ডেমো এক্সেস পেতে কাস্টমারদের তথ্য পাবার জন্য এই অ্যাড ফরম্যাট। 

ডায়নামিক অ্যাড

ওয়েবসাইটে বা অ্যাপে বা ইন্টারনেটে অন্য কোথাও কাস্টমার যখন আপনার প্রোডাক্ট  নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে, এমন অডিয়েন্সদের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডায়নামিক অ্যাড আপনার প্রোডাক্ট প্রচার করে। 

ডায়নামিক অ্যাড গুলো হচ্ছে, ষ্টীল পিকচার অ্যাড বা ইমেজ অ্যাড, ক্যারোজেল অ্যাড  বা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং অডিয়েন্স নেটওয়ার্ক অ্যাড গুলোর মত দেখতে। 

প্রতিটি আইটেমের জন্য স্বতন্ত্রভাবে একটি অ্যাড তৈরি করার পরিবর্তে, আপনি এমন অ্যাড টেম্পলেট তৈরি করুন যা আপনার প্রত্যাশিত বিক্রয় আইটেমগুলোর জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ক্যাটালগ থেকে চিত্র এবং ডেসক্রিপশন ব্যবহার করে অটোমেটিক ভাবে অ্যাড তৈরি করে। 

এই অ্যাড ফরম্যাট দ্বারা ইতিপূর্বে যারা আপনার অ্যাডে যুক্ত হয়েছে তাদের রি টার্গেট করতে পারবেন। 

মেসেঞ্জার অ্যাড

মেসেঞ্জারে প্রতিমাসে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন মানুষ যুক্ত থাকে। তাদেরকে রিচ করার জন্য মেসেঞ্জারে এড অত্যন্ত কার্যকরী। এই অ্যাড আপনার মেসেঞ্জারের কনভারসেশন চ্যাট হেড গুলোর প্রদর্শিত হয়। 

আপনি কি ধরনের কল টু একশন বাটন ব্যবহার করেছেন সে অনুযায়ী অ্যাড আপনাকে নির্দিষ্ট পেজে ল্যান্ডিং করাবে।

স্টোরি অ্যাড

সাইন্টিফিক আমেরিকান তাদের গবেষণায় দেখেছেন ৭২% মিলেনিয়াম একটি ভিডিও ফুল স্ক্রিন দেখার জন্য তার মোবাইল রোটেট করে না।

এবং সেই সমস্যার সমাধানের জন্য ফেসবুক ভাটিকাল ভিডিও ফরমেট এর মাধ্যমে ম্যাক্সিমাইজ স্ক্রিন ব্যবহার করে আপনাকে অ্যাড দেখায়। যার জন্য আপনাকে মোবাইল স্ক্রিন রোটেট করা লাগে না। 

অগমেন্টেড  রিয়েলিটি স্টোরি অ্যাড 

ফেসবুক স্টোরিতে অগমেন্টেড  রিয়েলিটি ব্যবহার করে বিভিন্ন অ্যানিমেশন এবং ফিল্টারের মাধ্যমে একটু ভিন্ন রূপে অ্যাড দিতে পারবেন। 

এতে একটি প্রোডাক্টের কাল্পনিক ব্যবহার চিত্র দেখা যায়। 

প্লে-এইবল অ্যাড

আপনি খেলতে খেলতে অ্যাডের সাথে এঙ্গেজ হচ্ছেন বিষয়টা অনেক মজার না! 

আপনি একটি গেম তৈরি করে কাস্টমারদের সেখানে এঙ্গেজ করাতে পারেন। টার্গেট অডিয়েন্স গেমটি খেলবে এবং এঙ্গেজড থাকবে পরবর্তীতে তাদের টার্গেট করে অ্যাড দিবেন যা আপনার ব্র্যান্ড এওয়ারনেস তৈরির জন্য যথেষ্ট সহায়ক।

কিভাবে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন প্রচার করবেন 

আপনার যদি একটি ফেসবুক পেজ থেকে থাকে তবে এখনই আপনি অ্যাড একাউন্ট সচল করে ফেলুন।

এক্ষেত্রে আপনার অ্যাড ম্যানেজার ব্যবহার করুন এরপর নিচের স্টেপ গুলো ফলো করুনঃ

প্রথমে আপনার অ্যাড অবজেক্টিভ সিলেক্ট করুন। ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার লগইন করার পর  প্রথমে আপনাকে বলবে ক্যাম্পেইন করুন। 

ফেসবুকের ১১টি মার্কেটিং অবজেক্টিভ থেকে আপনার বিজনেসের ও বিজ্ঞাপনের সাথে প্রাসঙ্গিক অবজেক্টিভ বেছে নিন। 

অ্যাড অবজেক্টিভ সিলেকশন

  • ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস যেখানে একটি ব্র্যান্ড কে নতুন অডিয়েন্সের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।
  • রিচ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে একটা অ্যাড সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের নিউজ ফিডে পৌঁছে দেওয়া যায়। 
  • ট্রাফিক অবজেক্টিভিটি আপনার ওয়েবসাইটে অথবা অ্যাপে বা ফেসবুক মেসেঞ্জার কনভার্শনকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে
  • এনগেজমেন্ট অবজেক্টিভ ব্যবহার করা হয় আপনার পেইজ বা পোস্টে লাইক শেয়ার কমেন্ট এর পরিমাণ কে বাড়িয়ে তুলতে বা লাইক শেয়ার কমেন্ট করে তাদেরকে এঙ্গেজ রাখতে।
  • রয়েছে অ্যাপ ইনস্টলেশন ক্যাম্পেইন, যদি চান আপনার তৈরি করা আপটি  মানুষ ব্যবহার করুক তবে এই ক্যাম্পেইনটি রান করুন। 
  • ভিডিও অ্যাডঃ বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষ ফেসবুক লাইভের  মাধ্যমে বিজনেস করছেন। অনেকে ভিডিও অ্যাড দিচ্ছেন এক্ষেত্রে যদি চান আপনার ভিডিও অধিক সংখ্যক মানুষ দেখুক তবে এই অবজেক্টিভ বেছে নিন। 
  • লিড জেনারেশনের মাধ্যমে সাধারণত আপনার সম্ভব্য আদর্শ কাস্টমারদের ডাটা কালেকশন করা হয় যা সেলস ফানেল  তৈরি করতে সাহায্য করে। 
  • কনভার্শন অ্যাড অবজেকটিভ নির্ধারণ করলে আপনার অ্যাড কাস্টমারদের স্পেসিফিক অ্যাকশন নিতে বাধ্য করায়। যেমন ওয়েবসাইট সাবস্ক্রিপশন বা আপ ইনস্টলেশন ইত্যাদি। 
  • ক্যাটালগ সেলের মাধ্যমে আপনার প্রোডাক্ট ক্যাটালগ গুলো যুক্ত করে কাস্টমারদের কেনার সুবিধা করে দিতে প্রমোট করতে পারেন। 
  • স্টোর ট্রাফিক অবজেক্টিভিটি  আপনার ই-কমার্স স্টোরে কাস্টমারদের ভিজিট করার পরিমান বাড়ায়। 

তাই যখনই আপনার অ্যাড অবজেক্টিভ নির্ধারণ করছেন তখন প্রথমে যেটা চিন্তা করবেন, কী উদ্দেশ্য নিয়ে আপনি অ্যাড দিচ্ছেন? 

এটি আপনাকে সঠিক অবজেক্টিভিটি নির্ধারণ করতে সহায়তা করবে। ধরুন আপনি চান পেইজ লাইক, তবে আপনার অ্যাড অবজেক্টিভ হবে এনগেজমেন্ট এবং সেখান থেকে অ্যাড অপটিমাইজেশন হিসেবে ফেসবুক পেজ লাইক সিলেক্ট করবেন। 

 

নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ

 

ক্যাম্পেইনের নাম নির্ধারণ করুন 

এই ধাপে আপনাকে ক্যাম্পেইনের একটি নাম দিতে বলবে।ক্যাম্পেইনের নাম এই কারনে প্রয়োজন যে, যদি একের অধিক অ্যাড সেট তৈরি করে থাকেন তবে কোন অ্যাডটি  সচল রাখবেন বা কোনটি বন্ধ করবেন সেটি সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।

 

অডিয়েন্স টার্গেট করুন

আপনি কাদের কাছে আপনার অ্যাড দেখাতে চান তাদের টার্গেট করুন। 

আপনার প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস কেনার জন্য উপযুক্ত কাস্টমারদের বেছে নিতে লোকেশন, বয়স, জেন্ডার, ল্যাঙ্গুয়েজ সহ আরো অনেক ধরনের ইন্টারেস্ট টার্গেটিং অপশন থেকে প্রাসঙ্গিক টার্গেট ইন্টারেস্টগুলো বেছে নেয়ার মাধ্যমে আপনার অডিয়েন্স গ্রুপটি তৈরি করতে হবে। 

যখন অডিয়েন্স গ্রুপটি তৈরি করছেন তখন ডানদিকের ওপরে একটি আনুমানিক সংখ্যা দেখাবে এবং এই অ্যাড থেকে প্রতিদিন কি পরিমাণ রিচ এবং এনগেজমেন্ট পেতে পারেন তার একটি আনুমানিক ধারণা আপনাকে প্রদান করবে। 

তবে একটি বিষয় মাথায় রাখবেন আনুমানিক ধারণাগুলো পরিবর্তনশীল । যা বেশি বা কম হতে পারে। 

অডিয়েন্স সিলেকশনের সময় ডিটেইল টার্গেটিং করার সুবিধা এখানে রয়েছে। ডিটেল টার্গেটিং বলতে বোঝানো হয়েছে একজন অডিয়েন্সের ডেমোগ্রাফিক ইন্টারেস্ট এবং বিহেভিয়ার গত বিষয়টি মাথায় রেখে টার্গেট করা। 

এর মাধ্যমে আরও স্পেসিফিক ভাবে কাস্টমারদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। 

অডিয়েন্স সিলেকশনের আরো একটি উপায় হচ্ছে কানেকশনের উপর ডিপেন্ড করে সিলেকশন প্রক্রিয়া অর্থাৎ আপনি যদি চান যারা আপনার পেজের সাথে আগে থেকে যুক্ত আছে তাদের বাদ দিয়ে টার্গেট করবেন তবে সেটি করা সম্ভব। 

আবার যারা ইতিপূর্বে আপনার পেজের সাথে কোনো না কোনো ভাবে যুক্ত ছিল  তাদেরকে টার্গেট করেও অ্যাড চালাতে পারেন।

ফেসবুক অ্যাড প্লেসমেন্ট 

আমরা ফেসবুকে কতগুলো জায়গায় সাধারণত অ্যাড দেখি। সাধারনত অটোমেটিক প্লেসমেন্ট অপশন ব্যবহার করেই বেশিরভাগ বিজ্ঞাপনদাতা অ্যাড দিয়ে থাকেন। 

তবে চাইলে অ্যাড প্লেসমেন্ট সিলেক্ট করে দেয়া যায়। এটির সাথে ফেইসবুক বাজেট এবং অ্যাডের ক্রিয়েটিভগুলোর সাইজের যোগসূত্র রয়েছে। 

যখন ফেসবুকে একটি স্পেসিফিক জায়গাতে একটি দেখাতে চান, তখন যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয়, 

  • ডিভাইস টাইপঃ এটা কি মোবাইল, ডেক্সটপ নাকি দুটোই?
  • প্লাটফর্ম টাইপঃ আপনি কি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম অডিয়াস নেটওয়ার্ক বা মেসেঞ্জারে দেখাতে চান?
  • প্লেসমেন্টসঃ ফেসবুক নিউজফিড স্টরি, ইনস্ট্রিম ফর ভিডিও, মেসেঞ্জার, ইন আর্টিকেল, অ্যাপস, সাইটস ইত্যাদি প্লেস
  • স্পেসিফিক মোবাইল ডিভাইস এবং অপারেটিং সিস্টেম যেমনঃ আইওএস, এন্ড্রয়েড, ফিচার ফোন অথবা সকল ধরনের ডিভাইস

অ্যাড বাজেট এবং টাইম সেট করুন

আপনি কত দিনের জন্য অ্যাড দিতে চান এবং প্রতিদিন অ্যাড দেওয়ার জন্য আপনার বাজেট কি পরিমান?

এছাড়া আপনি চাইলে অপশনাল ভাবে অ্যাডের খরচ এবং বিড কন্ট্রোল করতে পারেন। এছাড়াও অ্যাডের প্রতিটি স্পেসিফিক একশনের জন্য  এমাউন্ট ক্যাপ নির্ধারণ করে দিতে পারেন।

ডেইলি বাজেট এবং টাইমের বাইরে এই ডিটেলস বাজেট অপশন আপনাকে আরো স্পেসিফিকভাবে বাজেট অপশনগুলো নির্ধারণ করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। 

অ্যাড তৈরি করা

এবার আপনার অ্যাড ফরম্যাট থেকে বেছে নিন। ফেসবুকে অনেক ধরনের এভেলেবেল অ্যাড ফরমেট রয়েছে যা ইতিপূর্বে আমরা আলোচনা করেছি। 

নিচের ছবিতে আপনি তার একটি নমুনা দেখতে পাচ্ছেন সেখান থেকে আপনার অবজেক্টিভ এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ফরমেট ব্যবহার করার নমুনা। 

ফেসবুক অ্যাড স্পেস

ফেসবুক অ্যাডের জন্য ইমেজ এবং ভিডিও তৈরি করার সময় আরো অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয়। সেগুলো হচ্ছে ফেসবুকের একটি অ্যাড কতগুলো স্পেসে দেখানো যায়।

প্রায় ১৬ টি ভিন্ন স্পেসে ফেসবুকের অ্যাড দেখানো সম্ভব। 

ফেসবুক অ্যাডের জন্য টেক্সট এবং অবজেক্টিভ স্পেস

একটি সেরা ফেসবুক অ্যাড তৈরির জন্য টেক্সট কাউন্টের ব্যাপারে নলেজ রাখা জরুরি।  কারণ এটির  লিমিট আছে।

ইমেজ অ্যাড

  • হেডলাইন লিমিট ২৫ ক্যারেক্টার 
  • লিংক ডেসক্রিপশন ৩০ ক্যারেক্টার
  • বডি টেক্সট ১২৫ ক্যারেক্টার 
  • ক্যাম্পেইন অবজেক্টিভসঃ ভিডিও ভিউ ছাড়া সকল ক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য

ভিডিও অ্যাড

  • হেডলাইন লিমিট ২৫ ক্যারেক্টার
  • লিংক ডেসক্রিপশন ৩০ ক্যারেক্টার
  • বডি টেক্সট ১২৫ ক্যারেক্টার
  • ক্যাম্পেইন অবজেক্টিভসঃ ক্যাটালগস এছাড়া সকল ক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য

ফেসবুক স্টোরি অ্যাড

  • টেক্সট কাউন্টের কোন লিমিট নেই শুধু খেয়াল রাখবেন স্টোরির উপরে এবং নিচে ২৫০ পিক্সেল এরিয়া যাতে টেক্সট ফ্রি থাকে। 
  • ক্যাপ্টেন অবজেক্টিভঃ এনগেজমেন্ট, মেসেজ, ক্যাটালগ সেল, স্টোর ট্রাফিক

ক্যারোজেল অ্যাড

  • হেডলাইন ২৫ ক্যারেক্টার
  • লিংক ডেসক্রিপশন ২০ ক্যারেক্টার
  • বডি টেক্সট ১২৫ ক্যারেক্টার
  • ক্যাম্পেইন অবজেক্টিভঃ এনগেজমেন্ট এবং ভিডিও ছাড়া সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য

স্লাইড শো অ্যাড

  • হেডলাইন লিমিট ২৫ ক্যারেক্টার
  • লিংক ডেসক্রিপশন ৩০ ক্যারেক্টার
  • বডি টেক্সট ১২৫ ক্যারেক্টার
  • ক্যাম্পেইন অবজেক্টিভঃ সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য

কালেকশন অ্যাড 

  • হেডলাইন ২৫ ক্যারেক্টার 
  • লিংক ডেসক্রিপশনঃ প্রযোজ্য নয় 
  • বডি টেক্সট ৯০ ক্যারেক্টার 
  • ক্যাম্পেইন অবজেক্টিভঃ  ট্রাফিক, কনভার্সন, ক্যাটালগ সেল 

ইনস্ট্যান্ট এক্সপেরিয়েন্স অ্যাড

  • প্রতিটি ব্লকের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০০ ওয়ার্ড টেক্সট এবং ক্যাম্পেইন অবজেক্টিভঃ লিড জেনারেশন, ক্যাটালগ সেল এবং মেসেজ বাদে সর্ব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য

মেসেঞ্জার ইনবক্স অ্যাড

  • হেডলাইনঃ প্রযোজ্য নয় 
  • লিংক ডেসক্রিপশনঃ প্রযোজ্য নয় 
  • বডি টেক্সট ১২৫ ক্যারেক্টার  
  • ক্যাম্পেইন অবজেক্টিভঃ ট্রাফিক, অ্যাপ ইনস্টল, কনভার্শন, ক্যাটালগ সেল, মেসেজ

 

ফেসবুক অ্যাড পরিচালনার জন্য পাঁচটি স্মার্ট টিপস

 (১) অডিয়েন্স টার্গেটিং নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করুন

অডিয়েন্স টার্গেটিং এর সময় ভিন্ন ভিন্ন টার্গেটিং অপশন গুলো নিয়ে অ্যাড সেট তৈরি করুন।   

ভিন্ন ভিন্ন অ্যাড সেট তৈরি করার মাধ্যমে অ্যাডের পারফরম্যান্স টেস্ট করতে থাকুন। যে টার্গেট অডিয়েন্স গ্রুপ  ভালো পারফর্ম করবে সেটিকে খুঁজে বের করুন এবং গুরুত্ব দিন। 

(২) ফেসবুক পিক্সেল  ব্যবহার করুন

ফেইসবুক পিক্সেল হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য একটি কোড যা আপনার ফেসবুক ক্যাম্পেইন তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

পিক্সেল ব্যবহার করার সুবিধা হচ্ছে এর দ্বারা আপনি লুক এলাইক অডিয়েন্স তৈরি করতে পারবেন।  অডিয়েন্স ট্র্যাক করতে পারবেন এবং ওয়েবসাইট ভিজিট করার সংখ্যা পরিমাপ করতে পারবেন যা পরবর্তীতে অ্যাড চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অপটিমাইজেশন করতে আপনাকে সহায়তা করবে। 

(৩) হাই কোয়ালিটি ছবি এবং ভিডিও ব্যবহার  করুন

ফেসবুক অ্যাড তৈরি করতে আপনি যে ছবি এবং ভিডিও গুলো ব্যবহার করছেন সেগুলো অবশ্যই উন্নত মানের এবং ইন্টারেস্টিং হতে হবে যেন সহজে তা কাস্টমারদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে।

 

অনলাইনে এখন প্রচুর ওয়েবসাইট রয়েছে যারা ফ্রী হাই কোয়ালিটি ইমেজ ব্যবহার করার সুযোগ দেয়।  সেজন্য গুগলে  ফ্রী স্টক ফটো ওয়েবসাইট লিখে সার্চ দিলে আপনি এমন প্রচুর ওয়েবসাইট পেয়ে যাবেন। 

(৪)সবকিছু পরীক্ষা করুন

ফেসবুকে একটি অ্যাড শীর্ষ স্থানীয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে পরীক্ষার কোন বিকল্প নেই। আপনাকে প্রতিটি ক্ষেত্রে পরীক্ষা করতে হবে যেমন, অডিয়েন্স টার্গেটিং, বাজেট, প্লেসমেন্ট , অ্যাড রানিং টাইম ইত্যাদি।।

আপনি যত বেশি পরীক্ষা চালিয়ে যাবেন তত বেশি সঠিক পদ্ধতি আবিষ্কারের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে যা আপনার বিজনেসের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য উপযুক্ত।

(৫)ট্র্যাক এবং অপটিমাইজ করুন

ফেসবুক অ্যাড চলাকালীন সময়ে এবং পরবর্তী সময়ে ঠিক কী ধরনের এক্টিভিটিস হচ্ছে অ্যাড কেমন পারফর্ম করছে এগুলোকে মনিটর করতে হয়।

ছোট  বাজেট এবং অডিয়েন্স গ্রুপের মধ্যে আপনি কিছু অ্যাড চালিয়ে পরীক্ষা করুন এবং প্রয়োজনীয় অপটিমাইজ করে বেস্ট পারফরম্যান্স নিশ্চিত করুন। 

একবার কোন একটি অ্যাড যদি কোয়ালিটি ভালো স্কোর করে তবে সেই ক্যাম্পেইনটিতে পরবর্তী সময়ে বিগ ইনভেস্ট করার জন্য প্রস্তুতি নিন।

ফেসবুক অ্যাড আইডিয়া

সাধারণ অ্যাড কপিকে ভিডিও অ্যাড-এ পরিনত করুন

প্রতিটি ব্র্যান্ডের এমন কিছু অ্যাড কপি থাকে যেগুলো সেই মাসের সর্বোচ্চ ট্রাফিক নিয়ে এসেছিল।

এমন অ্যাড কপি গুলো দ্বারা ভিডিও অ্যাড তৈরি করুন। এক্ষেত্রে সেই অ্যাডের মূল বিষয়বস্তুগুলো টেক্সট এবং ইমেজ আকারে ভিডিওতে উপস্থাপন করতে পারেন।

সরাসরি সেল পোস্ট করুন

যদি আপনার ব্র্যান্ডের এমন কিছু প্রোডাক্ট থাকে যেগুলোর মূল্য কম, সাধারণত সেগুলোর জন্য ডাইরেক্ট সেল পোস্ট করা অযৌক্তিক কিছু নয়।

অনলাইনে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যমানের প্রোডাক্ট কেনার জন্য মানুষ খুব বেশি চিন্তা করে না।  এর একটি অন্যতম কারণ হতে পারে কম মূল্যমানের কারণে লস হবার ঝুঁকি কম থাকা।  

এই ধরনের প্রোডাক্ট এর ক্ষেত্রে আপনি সরাসরি সেলিং অ্যাড দিতে পারেন। 

ওয়েবসাইটের বাইরে সেল করুন

ফেসবুক মার্কেটিং শুধুমাত্র অনলাইনে সেল করার জন্যই নয় বরং অফলাইন সেল বাড়াতেও সাহায্য করে।

আপনার যদি একটি শোরুম থাকে এবং শোরুমের জন্য বিভিন্ন ইভেন্ট প্লান এবং প্রচার করতে চান, তবে সেজন্য ফেসবুক অ্যাডকে বেছে নিতে পারেন। 

লোকাল কাস্টমারদের আপনার শোরুমে নিয়ে আসতে চাইলে স্টোর ম্যাপ ন্যাভিগেশন অ্যাড  আশেপাশে কাস্টমারদের আপনার দোকান পর্যন্ত আসার রাস্তা সম্পর্কে ধারণা দেয়।

লুকালাইক অডিয়েন্স

আপনার কাছে কাস্টমারদের ইমেইল এবং ফোন নাম্বার রয়েছে সেই তথ্যগুলো দিয়ে ফেসবুকে লুকা লাইক অডিয়েন্স তৈরি করতে পারেন।

এটির সুবিধা হচ্ছে এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে ফেসবুক একই ধরনের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন নতুন কাস্টমারদের কাছে আপনার প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসটি পৌঁছে দিবে। 

আরো পড়ুনঃ

ফেসবুক অ্যাড ফরম্যাট 101 : কত ভাবে ফেসবুকে একটি অ্যাড দেয়া যায়

পরিশেষে

ফেসবুকে সবাই একই ধরনের কনটেন্ট দেখে না কিন্তু হতে পারে তারা সবাই আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের জন্য আদর্শ কাস্টমার। 

তাই পরবর্তী সময়ে ফেসবুকে অ্যাড দেবার সময় সকল ধরণের অ্যাড টাইপ অনুযায়ী  অ্যাড তৈরি করবেন। তবেই খুঁজে পাবেন আপনার বিজনেস কাস্টমার আর সেল হবে বেশি বেশি।  

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

আপনার মূল্যবান মতামত দিন

মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। আবশ্যক ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত *

আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন

সবার আগে মন্তব্য করুন