আধুনিক ই-কমার্স বিজনেস উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন, অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও কৌশল নির্ভর। অ্যামাজন ১৯৯৫ সালে প্রথম ই কমার্স ওয়েবসাইট দিয়ে বেচাকেনা শুরু করেন এবং প্রথম ৭ বছর তারা কোন প্রকার প্রফিট করেননি। ২০০৩ সালে অ্যামাজন ই কমার্স বিজনেসে প্রথম প্রফিট করে। এর পরে শুধুই এগিয়ে চলা।
সকল সেলার দ্বারা বিক্রিত পণ্যের পরিমান ও ডলার মূল্যের ভিক্তিতে (Gross merchandise volume) ২০১৭ সালে ইউনাইটেড স্টেটে অ্যামাজনের অনলাইন রিটেল মার্কেট শেয়ার ছিল ৩৭ শতাংশ যা ২০২১ সালে ৫০ শতাংশে পৌঁছাবে বলে তারা ধারণা করছেন।
বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন শপ akhoni.com যার বর্তমান নাম bagdoom.com। ২০১১ সালে শুরু হওয়া এই কম্পানি ২০১৬ সালে ৩ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। ২০১৭ সালে যেটি ৭ কোটিতে পরিনিত হয়।
দৈনিক ডেইলি স্টারে প্রকাশিত TECH TRAILBLAZERS HONOURED শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে বাগডুমের অর্ডার সংখ্যা ছিল ১৯,০০০ এবং ২০১৭ সাল জুড়ে অর্ডারের পরিমান ছিল ২৭,০০০ পরের বছর ২০১৮ সালের প্রথম নয় মাসে ৫৭,০০০ অর্ডার পেয়েছিল, অর্থাৎ ২০১৮ সালে তারা আগের বছরের তুলনায় ৩০,০০০ অর্ডার বেশি পায়।
এটি প্রমান করে বাংলাদেশের কাস্টমারদের অনলাইন কেনাকাটায় আস্থার জায়গা ধীরে ধীরে বাড়ছে, বাড়ছে কেনাকাটার পরিমান সাথে সাথে ই কমার্স বিজনেসের বাজার বাড়ছে। সৈয়দা কামরুন আহমেদ bagdoom.com এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, তাদের ধারণামতে বাংলাদেশের ই কমার্স বাজারের পরিমান এখন ৩০০ কোটি। তার মতে ই কমার্স বিজনেসে বর্তমানে প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সঠিক সময়ের মধ্যে কোয়ালিটি সার্ভিস প্রদান এরপরে তিনি ক্যাশ অন ডেলিভারিকে স্থান দেন। এর কারণ মার্কেটে বর্তমানে অনেক প্রতিযোগী তার বাজারে টিকে থাকতে হলে সার্ভিসের মান নিশ্চিত জরুরী।
দ্বিতীয় কারণ ক্যাশ অন ডেলিভারি সম্পর্কে তার মত, অনেকে তার প্রোডাক্টের মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে খুচরা টাকার সমস্যায় পড়েন। আবার, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা লেনদেনে ছিনতাই হবার সম্ভবনা থাকে তাই ই কমার্স বিজনেসে অনলাইন পেমেন্ট নিশ্চিত করাটা খুব জরুরী।
একটি জরিপ মতে বাংলাদেশে এখনো ই কমার্স ওয়েবসাইটে ৭৫% কেনাকাটা ক্যাশ অন ডেলিভারিতে হচ্ছে।
ই কমার্স বিজনেসে এগিয়ে যেতে সামনের দিনগুলোতে তাদের লক্ষ্য সময়মতো সার্ভিস কোয়ালিটি নিশ্চিতকরন ও অনলাইনে পেমেন্ট করতে কাস্টমারদের অনুপ্রানিত করা। Chaldal বাংলাদেশের অনলাইন গ্রোসারি শোপের সম্ভবনার দুয়ার খুলে দেয়। ২০১৩ সালে ওয়াসিম আলিম, জিয়া আশরাফ এবং তেজাস বিশ্বনাথ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি ছিল বাংলাদেশের ইকমার্সের ইতিহাসে প্রথম দিন যখন ঢাকার মানুষ অনলাইনে মুদি দোকানের জিনিস কিনতে শুরু করে। এটি অসাধারণ একটি মুহূর্ত।
বাংলাদেশের বাজারকে শিক্ষিত করতে চালডালের কিছুটা সময় লেগেছে। ২০১৩ সালের বিজনেস শুরুর প্রথমদিকে তারা দিনে মাত্র ৫ টি অর্ডার সরবরাহ করছিল। আজ সেটি বেড়ে প্রতিদিন ২০০০ টিরও বেশি অর্ডার সরবরাহ করে।
২০১৩ সালে পাঁচ জনের একটি ক্ষুদ্র দল থেকে এটি পরিনিত হয়েছে ৬০০ জনেরও বেশি সদস্যের একটি প্রতিষ্ঠানে। আজকের সময়ে চালডালের বার্ষিক আয় ১০০ কোটি টাকার উপরে অনুমান করা হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ অর্থায়নে পরিচালিত একটি স্টার্টআপ যেখানে বিনিয়োগকারী হিসেবে আছে Y Combinator, IFC, এবং IDLC মতো নামকরা প্রতিষ্ঠান।
ইকমার্স ওয়েবসাইট থাকার সুবিধা কি?
- তার ব্র্যান্ডটিকে বড় করে তুলতে
- বেশি বেশি বেচাকেনা করতে
- ক্রমবর্ধমান সামাজিক মাধ্যমগুলো ও সার্চ ইঞ্জিনগুলোর মাধ্যমে মার্কেটিং করতে,3ah
- যদি চায় সুযোগ ও সুবিধা মতো অন্য কাজের পাশাপাশি বিজনেস পরিচালনা করতে,
- বিজনেস পরিচালনার খরচ কম করতে,
- অনলাইনে কাস্টমারদের প্রভাবিত করতে,
তবে তার বিজনেসে একটি আধুনিক ই-কমার্স ওয়েবসাইট থাকতেই হবে।
ই কমার্স ওয়েবসাইটের মুল দুটি অংশ
অনেকের ধারনা কাস্টমার অনলাইনে প্রোডাক্ট অর্ডার করতে সক্ষম হলেই সেটি ই কমার্স ওয়েবসাইট। আংশিকভাবে এটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের অংশ হলেও কিন্তু একটি ই কমার্স ওয়েবসাইট আরও বেশি কিছু।
Front-end features
Front-end features বা কাস্টমার অংশ। এই অংশে যা যা থাকে,
Product listing page: এখানে সকল প্রোডাক্টের ক্যাটাগরি লিস্ট ও ফিল্টারিং অপশন থাকে।
Individual product page: এখানে একটি প্রোডাক্টের বিস্তারিত সকল তথ্য থাকে ও কাস্টমারদের কেনাকাটার সুবিধা প্রদান করে।
Shopping cart o checklist process: এই অংশে কাস্টমার কেনাকাটার জন্য পছন্দ করা সকল প্রোডাক্ট দেখার ও চূড়ান্ত ভাবে কেনাকাটা সম্পন্ন করার সুযোগ পায়।
User account: কাস্টমারদের দেয়া তথ্য জমা থাকে।
Product recommendation: কাস্টমারদের রিলেটেড আরও প্রোডাক্ট এখানো হয়।
Recommendation based on history: অতীত কেনাকাটার তথ্যের উপর নির্ভর করে কাস্টমারদের প্রোডাক্ট দেখানো যা ই কমার্স ওয়েবসাইট স্বয়ংক্রিয় করে।
Back-end features
Back-end features বা পরিচালনা অংশ। এই অংশ বিজনেস পরিচালনাকারী ছাড়া কেউ দেখতে পায় না।
আমারা সকলে Front-end features বা কাস্টমার অংশকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি, কারণ আমাদের ধারনা এটি কাস্টমার দেখে কিন্তু আমাদের প্রয়োজন Back-end features বা পরিচালনা অংশের দিকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করা। কারণ এই অংশ দ্বারা আপনি নির্ধারণ করে দিতে সক্ষম হন যে কাস্টমার কি দেখবে ও কিভাবে দেখবে।
এই অংশে কি থাকে,
Product information and option: প্রোডাক্টের সকল তথ্য এই অংশে থাকে। আপনি কোন প্রোডাক্টগুলো প্রদর্শন করবেন ও কি ধরনের তথ্য প্রদান করবেন এই ফিচার দ্বারা সেটি সম্পন্ন করা হয়।
Product database: ই-কমার্স ওয়েবসাইটের সকল প্রোডাক্টের তথ্য থাকে।
Payment processing: কাস্টমারদের পেমেন্ট সুবিধা প্রদান করে।
Inventory management: ষ্টকে কোন কোন প্রোডাক্ট কি পরিমানে আছে সেটির ব্যবস্থাপনা।
Privacy policy: বিজনেস পরিচালনা কাস্টমার তথ্য সংরক্ষন ও বিজনেসে কেনাকাটা ও লেনদেন সংক্রান্ত নিয়মাবলী প্রদান করার সুবিধা।
Promotion or coupon code: মার্কেটিং অফার, ডিসকাউন্ট বা কুপন ব্যবস্থাপনা।
আপনার বিজনেসের জন্য কি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের কি সত্যি প্রয়োজন?
প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে মানুষতার দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে নির্ভর করছে প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর। যখন দেখবেন বাজারে আপনার প্রতিযোগীর অথবা আপনার টার্গেট কাস্টমার গ্রুপ অন্যদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সরাসরি কেনাকাটা কেনাকাটা করতে সক্ষম। এর অর্থ আপনার ইন্ডাস্ট্রির কাস্টমার ধীরে ধীরে প্রযুক্তিকে গ্রহন করছে ও স্মার্ট কাস্টমারে পরিনিত হতে যাচ্ছে।
এই সময় আপনার বিজনেসে ই কমার্স ওয়েবসাইট যুক্ত করার আদর্শ সময়।
- যখন কাস্টমার নিজে থেকে আপনার সেল করা প্রোডাক্টগুলো সম্পর্কে তথ্য জানতে চায়, তারা বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে আপনাকে খুঁজে পায় এবং প্রোডাক্টের দরদাম পছন্দ না করে তার জন্য উপযুক্ত মূল্য পেতে চায় । তখন বুজবেন আপনার বিজনেসে ই কমার্স ওয়েবসাইট প্রয়োজন।
- কাস্টমার যখন রেডি প্রোডাক্ট কোনো প্রকার কাস্টমাইজেসন ছাড়া যেমনটি আপনি অফার করছেন তেমনি ভাবে কিনছে। তখন বুঝবেন আপনার বিজনেস ই কমার্স নিজনেসের জন্য তৈরি।
- যদি আপনার বিক্রিত প্রোডাক্টগুলোর রঙ, দাম, সাইজ , ফিচারের বৈচিত্র্য অনেক তখন ই কমার্স ওয়েবসাইট আপনার বিজনেসের জন্য দারুন কার্যকরী। কারণ এই সকল তথ্য সুসজ্জিত উপায়ে উপস্থাপন করার সুযোগ থাকে ।
- মানুষ যখন ক্যাশ টাকার পাশাপাশি ব্যাংক কার্ড ব্যবহার শুরু করছে তখন বুজবেন আপনার কাস্টমার ই কমার্স বিজনেসের জন্য রেডি।
- যদি আপনার কাস্টমার বেশির ভাগ সময়ে সন্ধার পড়ে বা অধিক রাতে কেনাকাটা করতে আপনার সাথে যোগাযোগ মাধ্যমগুলো দিয়ে যোগাযোগ করতে চায় তখন আপনার বিজনেসে ই-কমার্স ওয়েবসাইটের প্রয়োজন।
- যখন আপনার কাস্টমার দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তখন আপনার ই কমার্স ওয়েবসাইট প্রয়োজন।
আপনার কাস্টমার যখন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে ও আপনার ফেসবুক পেজ লাইক করে তখন বুঝবেন তারা ই কমার্স ওয়েবসাইট ব্যবহার করতেও সক্ষম। আপনি তাদের সুযোগ করে দিন।
কখন বুঝবেন আপনার বিজনেসে ই কমার্স ওয়েবসাইট এখন প্রয়োজন নেই?
- যদি বিক্রিত প্রোডাক্টের মূল্য ফিক্সড না হয়। অথবা একই প্রোডাক্টের পরিবর্তনশীল মূল্যে থাকে।
- যদি কিছু বিক্রয় করার আগে অত্যাবশ্যকীয় ভাবে ক্রেতার সাথে কথা বলা জরুরী থাকে। তবে ই কমার্স ওয়েবসাইট থাকলেও আপনি এর পুরনাঙ্গ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন না।
আপনার বিজনেসের ধরন অনুযায়ী কেমন হওয়া চায় ই-কমার্স ওয়েবসাইটের ডিজাইন ও ফিচার নিয়ে জানতে যোগাযোগ করুন +88 01766 681 318 অথবা +88 01729 241 499 নম্বরে ইমেল করুন [email protected] এই এড্রেসে।
সবার আগে মন্তব্য করুন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন
মন্তব্য করতে হলে আপনাকে লগ ইন করতে হবে।