ফেসবুক অ্যাড: ৬ টি অতি সাধারণ ভুল যা আপনার অ্যাডের ROI কমিয়ে দেয়

ফেসবুক অ্যাড: ৬ টি অতি সাধারণ ভুল যা আপনার অ্যাডের ROI কমিয়ে দেয়
শেয়ার করুন

যদি ফেসবুক অ্যাডের ROI নিশ্চিত করতে চাই তবে জানতে হবে সেই সাধারন ভুলগুলো সম্পর্কে যা একটি অ্যাডের ROI কমিয়ে দেয়।

ফেসবুক বিজনেসের প্রচারে সবচেয়ে বড় অ্যাড প্ল্যাটফরম সুবিধা প্রদান করে। কিন্তু একজন নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে আমরা সকলেই ফেসবুকে অ্যাড দেবার সময় কিছু সাধারন ভুল করি।

এই ভুলগুলো বিজনেসের ROI (Return on investment) এ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আসুন জেনে নেয়া যাক সে সকল সাধারন ভুলগুলো সম্পর্কে যা আমরা সকলেই করি।

 

অডিয়েন্স রিসার্চে বিনিয়োগ না করা

ভুল মানুষের সামনে একটা ভাল মানের বিজ্ঞাপন দেখানো অথবা সঠিক মানুষের সামনে একটি মধ্যম মানের বিজ্ঞাপন দেখানো?

আপনি কোনটিকে সঠিক বলে মনে করেন? অবশ্যই সঠিক মানুষদের সামনে বিজ্ঞাপন দেখানো।

এজন্য প্রথমে আমাদের প্রয়োজন সঠিক অডিয়েন্সদের খুঁজে পেতে অর্থ খরচ করা।

ফেসবুকে বিচিত্র ধরনের দর্শক রয়েছে। আপনি কি বিক্রি করছেন তার উপর নির্ভর করে অডিয়েন্স নির্ধারণ করতে হয়। এক্ষেত্রে অডিয়েন্সের আকার বড় বা ছোট হতে পারে।

বিজ্ঞাপনের দেবার শুরুর দিকে এই অডিয়েন্স গ্রুপ খুঁজে পেতে রিসার্চ করতে হবে।তবে এর অর্থ এই নয় যে আপনি অনুমান নির্ভর তথ্যের ভিক্তিতে এটি করবেন।

অডিয়েন্স রিসার্চের সময় নিজেকে কাস্টমারের স্থানে বসিয়ে প্রশ্ন করবেন, আপনি কি চান? তবে আপনি অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সহজ হয়ে যায়।

ধরুন আপনি কফি সেল করেন।

আপনি ভাবতে পারেন যে সকল ব্যক্তিরা ফেসবুকে “স্টারবাকস” পছন্দ করেন তারা আপনার এই বিশেষ কফি কিনতে আগ্রহী হতে পারেন। তবে আপনি ফেসবুকে এমন অনেক অডিয়েন্স পাবেন যারা স্টারবাকস পছন্দ করে এবং পান করে আবার অনেকে এই কফি পছন্দ করে কিন্তু কখনো পান করেন নি।

এরা সবাই মুলত আপনার টার্গেট অডিয়েন্স। কারণ কফির প্রতি এদের সবার আগ্রহ রয়েছে।

লক্ষ্য করুন, আপনি যদি সঠিক টার্গেট অডিয়েন্স খুঁজে পেতে চান তবে কোন প্রশ্নগুলো নিজেকে করবেন?

  • কাস্টমার গুগলে কি সার্চ করে?
  • ফেসবুকে কোন পেজগুলো তারা লাইক করে?
  • টার্গেট অডিয়েন্স কোন প্রভাবশালী বা সেলিব্রিটিদের অনলাইনে অনুসরণ করে?
  • কি ধরনের অ্যাপ্লিকেশনগুলো তারা ব্যবহার করে?
  • অনলাইনে কোন ধরনের নিউজ বা ব্লগ পড়ে?
  • ইতিমধ্যে কোন প্রতিযোগীদের কাছ থেকে প্রোডাক্ট কিনছেন?

প্রশ্নগুলির উত্তর পেলে আপনি সম্ভব্য টার্গেট অডিয়েন্সদের কাছে অনেকটা এগিয়ে গেছেন।

অডিয়েন্স রিসার্চের জন্য ফেসবুকের Audience Insights tool ব্যবহার করতে পারেন। অডিয়েন্সদের আচরণ, পছন্দের ধরন, তারা কোথায় বেশি সময় কাটাচ্ছে সে সকল তথ্য থেকে আপনি আপনার সম্ভব্য টার্গেট কাস্টমার সম্পর্কে ধারনা পাবেন।

অনেক বড় টার্গেট অডিয়েন্স সেট করা

আমাদের আরেকটি বড় ভুল হলো প্রোডাক্টের অ্যাড দেখানোর জন্য অনেক বড় আকারের টার্গেট অডিয়েন্স গ্রুপ বেছে নেওয়া। এতে অ্যাডের ROI কমে যায়।

ফেসবুক অ্যাড দেখালেই অর্থ পাবে তাই আপনাকে সজাগ থাকতে হবে অ্যাডে আপনি যে অর্থ প্রদান করছেন তা উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত যেন হয়। ভুল লোকের কাছে অ্যাড দেখিয়ে অর্থের অপচয় কেন করবেন?

আপনার টার্গেট অডিয়েন্স যদি খুব বড় হয় তবে কাস্টমারদের ইন্টারেস্টের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ মিল রেখে টার্গেট গ্রুপ ছোট করে নিয়ে আসুন । যত বেশি সঠিক কাস্টমার গ্রুপের কাছে আপনার অ্যাড পৌঁছে দিতে পারবেন ততবেশি প্রোডাক্ট সেল হবার সম্ভবনা বেড়ে যায়।

অধৈর্য হওয়া

ফেসবুক অ্যাড দেবার সাথে সাথে কেন ফলাফল পাচ্ছি না এমন অভিযোগ অনেকে করেন।

অ্যাডে খরচ করা টাকার বিপরীতে সুফল না পেয়ে অনেকে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন।

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরও ভাল পারফরম্যান্স পেতে চলমান অ্যাড বার বার অপটিমাইজড করতে থাকেন। এ

টি করবেন না। এটি অ্যাডের ROI কমিয়ে দিতে পারে।

শুরুতে আপনাকে কাস্টমার ডেটা সংগ্রহ করার দিকে মনযোগী হতে হবে।

একজন গ্রাহক পেতে কতটা ব্যয় আপনি করতে চান তা সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরী।

ধরুন, আপনার পণ্যগুলির দাম ১০০ টাকা এবং আপনি পণ্যটি ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।

তবে প্রথমদিকে কাস্টমার পেতে অতিরিক্ত এই ৫০ টাকা ব্যয় করার পরিকল্পনা রাখতে হবে।

ফেসবুক একটি অ্যাড রান করার পর কিছু সময় লারনিং স্টেজে রাখে। এসময় ফেবসুক আপনার টার্গেট কাস্টমারদের কাছে পৌছাতে নিজে নিজে শিখে।

এই লারনিং স্টেজ ১০০০ রিচ পর্যন্ত চলে এবং এরপরে অ্যাড সম্পূর্ণভাবে রান হয়। তাই অ্যাড রান করার পরে কিছুটা সময় দিন।

ফেসবুক পিক্সেলটি ইনস্টল না করে থাকেন তবে সেটি ইন্সটল করে নিন।

ফেসবুকের বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্ম প্রাপ্ত ডেটার উপর ভিক্তি করে অ্যাড পারফরম্যান্স উন্নত করতে পিক্সেল ব্যবহার করে।

তাই অ্যাড চালনা করার পরে অধৈর্য হলে চলবে না।

টার্গেটিং-এ ভিন্নতা না নিয়ে আসা

মার্কেটিং এর গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে ইনসাইট। অ্যাড চালনার সময় টার্গেটিং এ পার্থক্য নিয়ে আসুন। দেখুন কোন বিষয়গুলোর উপস্থিতি অথবা অনুপস্থিতি অ্যাডের পারফর্মেন্সে পার্থক্য তৈরি করছে।

পরের বার অ্যাড চালনা করার সময় অ্যাডের পজিটিভ আউটকামের সাথে যুক্ত ফ্যাক্টরগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে আসুন।

 

 

অ্যাডের প্রাপ্ত সকল ফলাফলকে মূল্যায়ন না করা

যদিও অ্যাডের প্রাথমিক লক্ষ্য বিক্রয় করা তবে এর বাইরেও অনেক অর্জন থাকে সেগুলোর দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।

  • ই কমার্স ওয়েবসাইটে আসা দর্শকদের কাছ থেকে ইমেল সংগ্রহ করতে পারেন।
  • অ্যাড দেখে যারা কমেন্ট করছে তাদের সহায়তা করতে তাদের সাথে সরাসরি কভারসেশনে জড়িত হন।
  • আপনার সাইটে দর্শকদের ভবিষ্যতে রিটার্গেট করে অ্যাড দিতে পারেন।
  • পোস্ট লাইক করা লোকগুলিকে আপনার ফেসবুক পেজটি লাইক করতে ম্যানুয়াল ইনভাইটেসন জানাতে পারেন।

ওয়েবসাইটে গুগল অ্যানালিটিকস সেট আপ করুন সেটি ধারনা দিবে ট্র্যাফিকগুলো আপনার ওয়েবসাইটটিতে কি ধরনের আচরণ করছে। যা পরবর্তী অ্যাড চালনা করার সময় টার্গেট অডিয়েন্স অপটিমাইজ করতে সহায়ক হবে।

আকর্ষনীয় ও ক্লিকের জন্য উপযোগী করে অ্যাড তৈরি না করা

অডিয়েন্সদের আকর্ষণ করে এমন একটি ভাল ক্রিয়েটিভ অ্যাড আপনার ফলাফল পাবার সম্ভবনা আরও বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

একটি ভাল অ্যাডে তৈরি করতে কি করবেন?

  • অ্যাডের ছবি হতে হবে দৃষ্টিনন্দন।
  • আবেগের সঠিক মেসেজ দিতে ইমোজিগুলি ব্যবহার করতে পারেন।
  • অ্যাডে সোশ্যাল প্রুফ (লাইক, কমেন্ট, শেয়ার) এর সংখ্যা প্রকাশ করুন যা কাস্টমারদের কাছে আপনার অ্যাডটিকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।
  • ডেসক্রিপশনে লিংক জুড়ে দিতে পারেন, শপ বা বায় নাও বাটন যুক্ত করে ক্লিকের পরিমান বাড়িয়ে তুলতে পারেন।
  • ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাট ব্যবহার করে অ্যাড চালাতে পারেন।

পরিশেষে

ফেসবুক প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে অ্যাড দিলে সেখান হতে সুফল পেতে কিছু সময় যদিও লাগে কিন্তু এটি বিজনেসের প্রচার প্রচারণায় কার্যকর মাধ্যম।সঠিক ভাবে অ্যাড পরিচালনার পন্থাগুলো সম্পর্কে সচেতন হলে এই প্ল্যাটফরমে অ্যাড দেবার জন্য খরচ করা টাকার উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিতকরণ সম্ভব।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

সবার আগে মন্তব্য করুন

আপনার মূল্যবান মতামত দিন