কিভাবে ফেসবুক পেজের অর্গানিক রিচ বৃদ্ধি করবেন

কিভাবে ফেসবুক পেজের অর্গানিক রিচ বৃদ্ধি করবেন
শেয়ার করুন

ফেসবুক পেজের অর্গানিক রিচ বৃদ্ধি করতে কি করবো? এই প্রশ্নটি প্রায় সকল ফেসবুক বিজনেস উদ্যোক্তারা করে থাকেন।

ফেসবুক প্রতিনিয়ত তাদের অ্যালগরিদমে পরিবর্তন করে চলেছে এবং এই পরিবর্তনের সাথে সাথে অর্গানিক ভাবে পোষ্টের রিচ বৃদ্ধি করা ক্রমাগত চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ছে।

কিন্তু ফেসবুক ই-কমার্স বিজনেসের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটিং প্লাটফর্ম। তাই মার্কেটিং এর জন্য এই প্ল্যাটফরমের সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে পরিবর্তনগুলোর সাথে মানিয়ে নিয়ে কার্যকর ভাবে অর্গানিক রিচ ধরে রাখার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে। 

তা না হলে আপনি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বেন।

মেরি স্মিথ একজন স্বনামধন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এক্সপার্ট। তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করতে চেষ্টা করা হয়েছে, ফেসবুকের অর্গানিক রিচ বৃদ্ধি করতে হলে কি করবেন এবং কি করবেন না। 

সমসাময়িক সময়ে ফেসবুক পেজের অর্গানিক রিচ ১ থেকে ৬ শতাংশ মাত্র।

ফেসবুক মার্কেটিং এক্সপার্ট মেরি স্মিথ দাবি করেন তার ফেসবুক পেজের রিচ সর্বোচ্চ ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। বিষয়টি সত্যি অবাক করার মতো। 

কীভাবে তিনি সেটি করতে সক্ষম হলেন? 

তিনি দুটি বিষয়ের উপরে প্রাধান্য দিয়েছেন। প্রথমত, পেজের অর্গানিক রিচ ধরে রাখতে হলে কি করতে হবে সে প্রসঙ্গে। দ্বিতীয়ত, কোন বিষয়গুলো পেজের অর্গানিক রিচকে কমিয়ে দেয়। 

মূল বিষয়ে যাবার পূর্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় দৃষ্টিপাত করা প্রয়োজন

প্রথমে আপনাকে খুঁজতে হবে ফেসবুকের অ্যালগরিদম কোন কনটেন্টগুলো কে অর্গানিক ভাবে সবথেকে বেশি রিচ দেয়।

মেরি স্মিথ, চার ধরনের কনটেন্ট টাইপ খুঁজে বের করেছেন যা তাকে সর্বোচ্চ অর্গানিক রিচ এনে দিয়েছে। সেগুলো হচ্ছে,

১) ভিডিও পোস্টঃ 

ফেসবুক ভবিষ্যতের ডিজিটাল ভিডিও স্ট্রিমিং টেলিভিশন চ্যানেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে যার কারণে সব থেকে বেশি প্রাধান্য ভিডিও কনটেন্টগুলো পাচ্ছে।  

ভিডিও কনটেন্ট পোস্ট করার ক্ষেত্রে মেরি স্মিথ রিকমেন্ডেড করেন, ৭০% ভিডিও কনটেন্ট, ২০% ছবি এবং ১০% লিংক শেয়ার করতে। 

লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, লিংক ফেসবুক পোস্টের রিচ কমিয়ে দেয় তবে সুসংবাদ হলো ভিডিও অথবা ছবির সাথে আপনি লিংক শেয়ার করতে পারেন। সেটি আপনার পোষ্টের রিচে কোন প্রকার প্রভাব ফেলে না।

২) ফেসবুক লাইভঃ 

দেখা গেছে ফেসবুক লাইভ সাধারণ আপলোড করা ভিডিও-র থেকে ছয় গুণ বেশি এঙ্গেজমেন্ট নিয়ে আসতে সক্ষম। তাই সপ্তাহে অন্তত একটি ফেসবুক লাইভ ভালো ফলাফল এনে দেয়। 

৩) ফেসবুক ওয়াচ পার্টিঃ

ফেসবুকের যে কোন পাবলিক ভিডিও নিজের ওয়াচ পার্টিতে অডিয়েন্স সাথে শেয়ার করতে পারেন। ফেসবুক মতে, অডিয়েন্স ওয়াচ পার্টির ভিডিওগুলোতে কমেন্ট করার প্রবণতা প্রায় ১০০ গুণ পর্যন্ত বেশি। 

মনে রাখবেন, অর্গানিক রিচের মূলমন্ত্র হচ্ছে এনগেজমেন্ট। আপনি যত বেশি এনগেজমেন্ট তৈরি করতে পারবেন, তত বেশি অর্গানিক রিচ বেড়ে যাবে।

৪) প্রশ্ন ছুড়ে দিনঃ 

কোন ভিডিও না, কোন ছবি না অথবা কোন লিংক না শুধুমাত্র একটি ছোট্ট সিম্পল প্রশ্ন আপনার অডিয়েন্সদের দিকে ছুড়ে দিন।

এখানে কৌশলটি হচ্ছে রেলেভেন্সি। আপনার অডিয়েন্সদের জন্য যখন একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ছুড়ে দিবেন তার বিপরীতে তাদের উত্তর দেবার প্রবণতা দেখা যাবে। আর উত্তর দেওয়া মানেই এনগেজমেন্ট। যেটি আগেও বলেছি, অর্গানিক রিচের মূলমন্ত্র এঙ্গেজমেন্ট তৈরি করা। 

ফেসবুকের অর্গানিক রিচ বৃদ্ধি করতে করনীয়

কম পরিমান পোস্ট করুন

অনেকের ধারণা, বেশি পোস্ট করলে বেশি এঙ্গেজমেন্ট আসে যা সবক্ষেত্রে সত্য নয়। ফেসবুক শুধুমাত্র হাই কোয়ালিটি পোস্টগুলোকে বেশি প্রাধান্য দেয়। তাই বেশি বেশি পোস্ট করার চেয়ে বেশি কোয়ালিটি সম্পন্ন পোস্ট তৈরি এবং শেয়ার করার দিকে গুরুত্ব দেয়া জরুরি ।

একটি পোস্ট যখন ফেসবুকে ট্রাকশন পায় ঠিক সে সময়ে আপনি যখন আরেকটি পোস্ট করেন তাহলে, এনগেজমেন্ট বিভক্ত হয়ে যাবে।আপনি যদি সপ্তাহে তিনটি পোস্ট করে থাকেন তবে সেটি কমিয়ে সপ্তাহে একটি করুন। 

বিভিন্ন সোর্স বা মিডিয়া থেকে আপনার পোস্টে ট্রাফিক নিয়ে আসুন

প্রতিটি ফেসবুক পোস্টের একটি ইউনিক লিংক থাকে সেই লিংকটি কপি করুন এবং আপনার অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমগুলো যেমন টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইমেল, ব্লগ ইত্যাদি তে শেয়ার করুন। 

আপনার অডিয়েন্সদের জানতে সাহায্য করুন, আপনি ফেসবুক একটি নতুন পোস্ট করেছেন।

এতে তারা সেই লিংকটি ভিজিট করবেন এবং আপনার স্পেসিফিক পোস্টে আরো বেশি ট্রাফিক আসবে। বেশি ট্রাফিক আসা মানে এঙ্গেজমেন্ট বেড়ে যাওয়া।  আর যে পোস্টে এনগেজমেন্ট বাড়তে থাকে সে পোস্টের অর্গানিক রিচ অটোমেটিক ভাবে ফেসবুক বাড়িয়ে দেয়। 

চ্যাটবট যুক্ত করুন

যখন পেজে চ্যাটবট যুক্ত করবেন এবং মানুষ যখন আপনার চ্যাটবট মেসেঞ্জারে সাবস্ক্রাইব করবে তখন সে অটোমেটিকভাবে তার ফেসবুক মেসেজ ইনবক্সে আপনার বিভিন্ন ইভেন্ট বা প্রমোশনাল মেসেজগুলো পাবে।

এটি একদিকে যেমন প্রমোশনাল চ্যানেল হিসেবে কাজ করে অপরদিকে রিমাইন্ডার হিসেবেও দারুণ কার্যকর। অর্গানিক রিচ বাড়িয়ে তুলতে এটির ভূমিকা অনেক।

অ্যাড বাজেট

প্রশ্ন আসতে পারে, এখানে অর্গানিক রিচের কথা বলা হয়েছে তাহলে কেন ফেসবুক অ্যাডের জন্য বাজেট রাখতে হবে।

উত্তরটা খুবই সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। একটি পোস্ট কম বাজেটের মধ্যে প্রমোট করে ট্রাকশন নিয়ে আসুন। এটি যখন আপনার টার্গেট অডিয়েন্সদের কাছে পৌঁছাবে এবং তারা সেটি পছন্দ করবে তখন অটোমেটিকভাবে পোস্টের অর্গানিক রিচ বাড়তে থাকবে।

মনে করুন, আপনি তিন দিনের জন্য খুবই কম বাজেটে একটি পোস্ট বুষ্ট করেছেন। খেয়াল করলে দেখবেন আপনার বুষ্টের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও পোস্টটি অর্গানিক ভাবে ভাল পারফর্ম করছে।

 

 

তিনটি টিপস যা আপনার ফেসবুক পেজের অর্গানিক রিচ কমিয়ে দেয়

ফেসবুক পোস্টের সাথে কখনো ইউটিউব লিংক যুক্ত করবেন না।

ভিডিও কনটেন্টের ক্ষেত্রে ফেসবুকের সবথেকে বড় প্রতিযোগী হচ্ছে ইউটিউব। যখন একটি ফেসবুক পোস্টের সাথে ইউটিউব লিংক যুক্ত করছেন অথবা ফেসবুক পোস্টে  ইউটিউব লিংক শেয়ার করবেন  সেই পোষ্টের অর্গানিক রিচ পাবেন না। 

ফেসবুক AI ইউটিউব লিংকগুলো শনাক্ত করে সেটির রিচ কমিয়ে দিতে পারদর্শী। 

এঙ্গেজমেন্ট বাইট

বেশিরভাগ সময়ে লক্ষ্য করা যায় ফেসবুকে পোস্ট করার পরে সেটিতে কমেন্ট, শেয়ার বা লাইক করার জন্য অনুরোধ করা হয়ে থাকে। যাকে ফেসবুক এঙ্গেজমেন্ট বাইট বলে উল্লেখ করে।

ফেসবুক ফেয়ার কনটেন্ট ডিস্ট্রিবিউশন পলিসিতে বিশ্বাস করে। তারা মনে করে, মানুষ সেই কনটেন্টগুলো পছন্দ করবে যা সে স্বেচ্ছায় দেখতে চায়। আপনি কখনোই অডিয়েন্সদের আপনার কনটেন্ট দেখতে জোর করতে পারেন না। 

তাই এই ধরনের শব্দগুলো ফেসবুক ডিটেক্ট করে এবং সেই পোস্টের অর্গানিক রিচ কমিয়ে দেয়। ফেসবুকের ল্যাংগুয়েজ ডাইরেক্টরিতে এখন বাংলা ভাষা যুক্ত হয়েছে। তাই এঙ্গেজমেন্ট বাইট থেকে এখুনি সতর্ক হোন।  

এঙ্গেজমেন্ট বাইটের বিপরিতে, একটি পোস্ট করার পরে অডিয়েন্সরা সে সম্পর্কে কি চিন্তা করছে?  আপনার পোষ্ট সম্পর্কে তাদের মতামত কি? এই সকল বিষয়গুলো জানতে চান বা শেয়ার করার জন্য অডিয়েন্সদের উদ্বুদ্ধ করতে পারেন।

যেমন, “ আপনার অভিজ্ঞতা কি?  আপনি কি এটা সঠিক মনে করেন?  এ বিষয়ে আপনি কি ভাবছিলেন? “ এই ধরনের বাক্য ও শব্দ চয়ন করুন। 

ই-রেলেভেন্ট এবং অফটপিক পরিহার করুন

আপনার ব্র্যান্ড ভয়েসের সাথে যে টপিকগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ না সেগুলো পোস্ট করবেন না। 

একজন গাড়ি বিক্রেতার কাছে অডিয়েন্সরা কখনোই কসমেটিক আইটেম নিয়ে কথা শুনতে চাইবে না এটিই স্বাভাবিক।

আরো পড়ুনঃ

ফেসবুক প্রোমোশনঃ বেশি রিচ হবার পরেও কেন কাস্টমার এঙ্গেজ হয় না

পরিশেষে

ফেসবুক সব সময় হাই কোয়ালিটি কনটেন্ট গুলোকে প্রাধান্য দেয়। হাই কোয়ালিটি কনটেন্ট মূলত সেগুলো যা একজন অডিয়েন্সের জন্য রেলেভেন্ট এবং অথেন্টিক তথ্য যুক্ত।

আপনি এমন কোন বিষয় কি ফেসবুক মার্কেটিং এর সময় খুঁজে পেয়েছেন যা আপনার পেজের এঙ্গেজমেন্টকে বাড়িয়ে দিয়েছিলো অথবা কমিয়ে ফেলেছিলো।  শেয়ার করুন আপনার অভিজ্ঞতা। 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

সবার আগে মন্তব্য করুন

আপনার মূল্যবান মতামত দিন