আমাদের দেশে প্রায় ৭৫০০ প্রতিষ্ঠান ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া ফেসবুক পেজের মাধ্যমে এই ব্যবসায় যুক্ত প্রায় ২০ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। (সূত্র: কালের কণ্ঠ)
এই বিপুল সংখ্যক ইকমার্স উদ্যোক্তাদের একটা বড় অংশ তাদের পণ্যের প্রচারের জন্য ফেসবুক অ্যাড ব্যবহার করেন।
ফেসবুকে অ্যাড দিতে যে পরিমান টাকা খরচ করছেন তার উপযুক্ত রিটার্ন (ROAS) পেতে ভালো অ্যাড পারফরম্যান্সের বিকল্প নেই।
যদি দেখেন, আপনার ফেসবুক অ্যাড এর সঠিক ROAS (Return on Ad Spend) নিশ্চিত করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে? তাহলে নিজেকে নিচের ১০ টি প্রশ্ন করতে পারেন ।
আপনি কি সঠিক অবজেক্টিভ নির্ধারণ করেছেন?
আপনি যখন একটি ফেসবুক অ্যাড চালাবেন তখন প্রথম যে প্রশ্নটি নিজেকে করবেন, সেটি হচ্ছে আপনার অ্যাড অবজেক্টিভ ঠিক আছে কিনা? অ্যাড অবজেক্টিভ নিয়ে আপনাকে সচেতন হতে হবে। এই স্টেজে আপনি প্রথমেই ভুল করে দিলে সঠিক মানুষদের কাছে পৌঁছাতে পারবেন না।
কাস্টমার টার্গেটিং কি সঠিক করছি?
আপনার টার্গেটিং সঠিক এবং ছোট আকারের না হলে অডিয়েন্স গ্রুপ অনেক বেশি বড় হয়ে যাবে। এতে করে আপনি অ্যাড থেকে ভাল ফলাফল নিয়ে আসতে পারবেন না।
আপনার অডিয়েন্সকে খুব ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করুন। ফেসবুকের অডিয়েন্স টার্গেটিং অপশনটি ব্যবহার করে কাস্টমার গ্রুপকে ছোট ও আদর্শ করে নিয়ে আসুন। আপনি কয়েক ভাবে আপনার কাস্টমার গ্রুপ কে ছোট করে আনতে পারেন?
কাস্টম অডিয়েন্স,
এর মাধ্যমে আপনি বিজনেসের জন্য পছন্দমত অডিয়েন্সদের বেছে নিতে পারেন।
লুকালাইক অডিয়েন্স,
আপনার বর্তমান কাস্টমার গ্রুপের সাথে মিল রেখে ফেসবুক আপনাকে সঠিক কাস্টমার বেছে নিতে সাহায্য করবে।
ইন্টারেস্ট বেজড টার্গেটিং,
কাস্টমারদের পছন্দের ধরণ বা ভালো লাগা ও খারাপ লাগা অনুযায়ী আপনি অডিয়েন্স গ্রুপকে ছোট করতে পারেন।
ডেমোগ্রাফিক বেজড অডিয়েন্স,
এর মাধ্যমে আপনি আপনার কাস্টমার কাস্টমারদের বয়স,স্থান, এবং লিঙ্গ ভেদে টার্গেট করতে পারেন।
ফেসবুক অ্যাড বাজেট সেট ভুল হচ্ছে না তো?
অ্যাডের সঠিক বাজেট নির্ধারণ একটি অ্যাড এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাড চলাকালীন সময়ে আপনি আপনার বাজেট বারবার পরিবর্তন করলে এর ফলাফল খারাপ আসতে পারে।
এক্ষেত্রে, প্রথমে আপনি সবথেকে কম বাজেট সেট করবেন। সেটা হতে পারে প্রতিদিন ২ ডলার।
এরপর, আপনি দেখবেন আপনার একটি কেমন পারফরম্যান্স করছে। পরবর্তীতে, আপনি প্রয়োজনমতো বাজেট বাড়িয়ে নেবেন।
এতে করে, ফেইসবুক আপনার দেওয়া বাজেটের সাথে মিল রেখে সঠিক ভাবে বিড করতে সক্ষম হবেএবং অ্যাড সফল ভাবে চলবে।
পরবর্তীতে, আপনি আরো বেশি সংখ্যক কাস্টমারদের কাছে পৌঁছাতে চাইলে এড এর বাজেট বাড়িয়ে নেবেন।
এতে করে, আপনার দেয়া নতুন বাজেটের সাথে আপনার অ্যাড পরিচিত হয়ে উঠবে এবং সঠিকভাবে রান করবে।
আপনি এই কৌশল ব্যবহার করে বুঝতে পারবেন, বাজেটের পার্থক্য কেমন হলে অ্যাড কীভাবে পারফরমেন্স করে।
আপনি জানেন কি? ন্যাশনাল কাস্টমারদের থেকে লোকাল কাস্টমারদের কাছে খুব অল্প খরচে অ্যাড দেওয়া যায় এবং দেখা গেছে রবিবার এবং সোমবারে অ্যাডের খরচ সবচেয়ে কম হয়।
অ্যাডের প্লেসমেন্ট কি ঠিকঠাক হচ্ছে?
ফেসবুকের অ্যাড প্লেসমেন্টের জন্য কয়েকটি অপশন রয়েছে। যেমন নিউজ ফিড, Right-hand কলাম, ফেইসবুক স্টোরি।
সঠিক প্লেসমেন্ট অ্যাডে বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি করে। যদিও ফেইসবুক স্টোরি এবং রাইট-হ্যান্ড কলাম দ্বারা একই ধরণের কাস্টমারের কাছে পৌছাতে পারবেন তারপরেও নিউজ ফিডের অ্যাড প্লেসমেন্ট দ্বারা সর্বোচ্চ সংখ্যক কাস্টমারদের কাছে পৌঁছানো যায় এবং এর খরচ বাকি প্লেসমেন্ট থেকে বেশি।
এরপর থেকে যখন আপনি একটি অ্যাড পরিচালনা করবেন তখন প্রিভিউ দেখে নেবেন যে সেটি আপনার নিউজ ফিডে কীভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে।
আপনার তৈরি অ্যাডটি কি আকর্ষণীয়?
যেকোনো অ্যাড এর মূল জিনিসটি হচ্ছে কন্টেন। কন্টেন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন, গ্রাফিক্যাল বা ভিডিও।
কাস্টমার একুইজিশন মতে, যে ছবির ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশ দৃশ্যমান থাকে সেটির পারফরম্যান্স অনেক ভালো আসে। যদি আপনার দেয়া ছবিটি আকর্ষণীয় না হয় তবে মানুষ সেটিতে ক্লিক করতে উৎসাহী হবে না।
এরপরে, আপনি যখন একটি ফেসবুক অ্যাড পরিচালনা করবেন তখন অবশ্যই যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন,
- আপনি কি ভালো রেজুলেশনের অরিজিনাল ছবি ব্যবহার করছেন নাকি স্টক ছবি ব্যবহার করছেন?
- অ্যাডের জন্য তৈরিকৃত ছবিটি কি ব্র্যান্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ?
- আপনার তৈরি অ্যাড কি কাস্টমারদের ইতিবাচক ধারণা দেয়?
- তৈরিকৃত অ্যাডটি কি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মনোযোগ আকর্ষণের সক্ষম হবে?
উদাহরণ হিসেবে নিচে দেয়া AirBnB এর ফেসবুক অ্যাডটি দেখুন,
ফেসবুকের নির্দেশনা মতে, একটি ইমেজে ২০ শতাংশের বেশি টেক্সট বা লিখা থাকা বাঞ্ছনীয় নয়।
আপনার অ্যাড টার্গেট অডিয়েন্সদের পছন্দের সাথে কি সামঞ্জস্যপূর্ণ ?
অডিয়েন্সদের পছন্দের মাত্রা তুলে ধরতে ফেইসবুক একটি অ্যাডকে এক থেকে দশের মধ্যে স্কোরিং করে। আপনার অ্যাডের স্কোর যত কম হবে তার খরচ তত বেশি হবে।
তাই অবশ্যই, একটি অ্যাড ডিজাইন করার সময় আপনার কপিটি টার্গেট অডিয়েন্সদের পছন্দের সাথে মিল রেখে তৈরি করবেন এবং আপনার অ্যাডের টার্গেটিং এমনভাবে টিউন করবেন যেন তা উপযুক্ত অডিয়েন্সদের কাছেই কেবল প্রদর্শিত হয়।
অ্যাড কপিটি কি সঠিক ভাবে লেখা হয়েছে?
আপনি লেখনীরে মাধ্যমে টার্গেট কাস্টমারদের যে মেসেজটি দিবেন, আপনার ব্র্যান্ড ঠিক সেভাবেই মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। ঠিক এই জায়গাতে অনেকেই ভুল করে বসেন। একটি অ্যাড কপি লেখার জন্য কয়েকটি বিষয় আপনাকে মনে রাখতে হবে।
- অ্যাডের টাইটেল কি দর্শকদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছে?
- আপনার দেয়া অফার কি কাস্টমারদের কাছে গ্রহণযোগ্য?
- আপনার দেয়া তথ্যের ওপর কি আস্থা করা যায়?
- শব্দ চয়ন এবং বানানে ভুল হচ্ছে না তো?
- খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে তথ্য হয়ে যাচ্ছে না তো?
- আপনি কি কাস্টমারদের প্রোডাক্টের বেনিফিট সম্পর্কে বলছেন?
উদাহরণ হিসেবে টেস্ট কার্ডের অ্যাডটি দেখুন,
কল টু অ্যাকশন (CTA)
আপনার দেয়া অ্যাডটি পছন্দ হলে এবার কাস্টমার কী করবে?
এইখানেই কল টু অ্যাকশন (CTA) তার দায়িত্ব পালন করে। এটি বলে দেয় এর পরে অডিয়েন্সদের কী করতে হবে? আপনি যদি চান আপনার কাস্টমার প্রোডাক্টটি কিনবে তাহলে আপনি তাদেরকে ওয়েবসাইটে নিয়ে যাবেন।
যদি চান, আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানবে তবে তাকে বিস্তারিত তথ্য দিতে ব্লগে নিয়ে যাবেন।অ্যাড এক্সপ্রেসোর একটি গবেষণায় দেখা গেছে সব থেকে বেশি এবং সফল ব্যবহৃত কল টু অ্যাকশন গুলো হচ্ছে,
Sign Up যা কনভার্সন এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যটি হচ্ছে Learn More যার মাধ্যমে বেশি সংখ্যক লিঙ্ক ক্লিক পাওয়া যায়।
ল্যান্ডিং পেজটি কি ঠিক আছে?
কাস্টমার আপনার দেয়া লিংকে ক্লিক করার পরে ল্যান্ডিং পেজে এসে বিস্তারিত তথ্য পায়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় ল্যান্ডিং পেজটি ঠিকঠাক ভাবে কাজ করছে না। অথবা ল্যান্ডিং পেজে প্রয়োজনীয় তথ্য তারা পাচ্ছেন না।
ধরুন, আপনি আপনার ব্র্যান্ডের অ্যাওয়ারনেস জন্য কাস্টমারদের ল্যান্ডিং পেজে নিয়ে আসছেন কিন্তু আপনি ল্যান্ডিং পেজ ডিজাইন করেছেন কেনাকাটার জন্য।
অথবা আপনার ল্যান্ডিং পেজ টি ডিজাইন করা কেনাকাটর জন্য কিন্তু আপনি কল টু অ্যাকশন’ এর মাধ্যমে আপনি কাস্টমারদের বলেছেন সেখানে তারা বিস্তারিত জানতে পারবেন।
মনে রাখবেন, কাস্টমার ভুল তথ্য পেলে হতাশ হয় এবং কোন রকম কেনাকাটা করা ছাড়াই সে আপনার সাইট ত্যাগ করে চলে যেতে পারে।
অতিরিক্ত অ্যাড দেখিয়ে কাস্টমারদের বিরক্ত করছেন না তো?
একই কাস্টমার একই ধরনের অ্যাড বারবার দেখে বিরক্ত বোধ করতে পারে। ফেসবুক পরিচালনা করার সময় আপনি কতবার একজন কাস্টমারকে অ্যাডটি দেখাতে চান তা নির্ধারণ করতে পারবেন।
সাধারণত, একজন কাস্টমার চার বারের বেশি একটা এড তার ফেইসবুক ফিডে দেখতে পেলে সে বিরক্ত হয়।
আপনার অ্যাড এর ফ্রিকোয়েন্সির চেয়ে কল টু অ্যাকশন এ ক্লিক করার পরিমাণ যদি অনেক কমে যায় তাহলে বুঝতে হবে এখন সময় এসেছে এটি অপ্টিমাইজড করার।
পরিশেষে,
ফেসবুকের অ্যাড টুলস দারুণ জনপ্রিয় এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি সাথে সাথে সঠিক ROI নিয়ে আসতে দুর্দান্ত।
কিন্তু সেজন্য তাড়াহুড়া করলে চলবে না। শান্ত মাথায় ভেবে দেখুন ফেইসবুক অ্যাডভার্টাইজিং টুলস আপনার অ্যাডটির পারফরম্যান্স কে আরও বাড়িয়ে তুলতে কী কী ফিচার অফার করছে একই সাথে ওপরের আলোচিত প্রশ্ন গুলো নিজেকে করুন।
যখন দেখবেন আপনার অ্যাড ভালোভাবে পারফরম্যান্স করতে সক্ষম হচ্ছে না তখনই বুঝতে হবে আপনার এই অ্যাডটির কম্বিনেশন পরিবর্তন প্রয়োজন।
প্রতিবার সবগুলো প্যারামিটার পরিবর্তন কখনোই করবেন না। একটি নির্দিষ্ট প্যারামিটার পরিবর্তন করে অ্যাডের কার্যকারিতার পরিবর্তন লক্ষ্য করতে চেষ্টা করবেন।
এভাবে সবগুলো প্যারামিটার প্রতিবার পরিবর্তন করে পরীক্ষা করবেন আসলে কোন প্যারামিটার পরিবর্তনের ফলে আপনার অ্যাডের পারফরম্যান্স বেড়ে যাচ্ছে।
যদি আপনার ফেসবুক এডভার্টাইজিং টুলের প্যারামিটার গুলোর সঠিক কম্বিনেশন খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়ে যান তবে নিশ্চিত ভাবে আপনি ইতিবাচক বার বার আপনার ফেসবুক অ্যাড থেকে কাঙ্খিত ফলাফল পাবেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন
আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন