বিশ্ব সেরা ই-কমার্স এক্সপার্টদের কৌশল অনুসরণে আপনার ই-কমার্স বিজনেসটিকে সফল করে তুলতে হলে জানতে হবে, সেই সকল গোপন রহস্য যা তাদের বিজনেসে সফল হতে সাহায্য করেছে।
ই-কমার্সের দুনিয়ায় একটি বিজনেসকে বড় করে তোলার অনেক রকম কৌশল রয়েছে।
কেউ মনে করেন প্রোডাক্টের উচ্চমূল্য মানুষের মনে এর কোয়ালিটি সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দেয় এবং প্রচুর পরিমাণে প্রফিট অর্জন করা যায়।
আবার অনেকে মনে করেন মার্কেটে যেসব প্রোডাক্টের চাহিদা সবচেয়ে বেশি সেসকল প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যবসা করলে সফল হওয়া যায়।
এক্ষেত্রে কে সঠিক বা কে ভুল করছেন – সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ না।
যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে, কোন কৌশলে আপনি আপনার ই-কমার্স বিজনেসটিকে সফল করছেন।
বিশ্ব সেরা ই-কমার্স বিজনেস উদ্যোক্তাগন শেয়ার করেছেন সেই সকল কৌশল যা তাদের বিজনেসকে সফল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ।
চিন্তা করুন কাস্টমারের দৃষ্টিকোণ থেকে
কেটি মেলিসা ঘড়ি এবং সানগ্লাস জাতীয় প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছেন। তিনি এই পর্যন্ত অনেকগুলো প্রডাক্ট ড্রপশিপ করেছেন। তিনি সবসময় ভালো ডিজাইনকে গুরুত্ব দেন।
কেটি মেলিসা মনে করেন, নিজেকে সেই ভাবে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে, যেন আমি একজন কাস্টমারের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করতে পারি।
দিনশেষে, একজন কাস্টমারের পছন্দই শেষ কথা। আপনি একজন বিক্রেতা হিসেবে কি পছন্দ করছেন আর কি করছেন না, সেটি কাস্টমারদের কাছে গুরুত্ব রাখে না।
পাশাপাশি তিনি এও বলেন, আপনাকে অবশ্যই আপনার স্টক ম্যানেজমেন্ট এর প্রতি নজর দিতে হবে।
ব্যবসা যখন দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলছে ঠিক সেই মুহূর্তে প্রোডাক্ট স্টক শেষ হয়ে যাওয়া কিংবা কাস্টমারদের অর্ডার করা প্রোডাক্ট সঠিকভাবে ডেলিভারি না হওয়া মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়।
দেশি কমার্স, কেটি মেলিসার সাথে সম্পূর্ণ একমত। আমরা মনে করি, কাস্টমার সন্তুষ্টি সবার প্রথমে।
ইমেইল এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় হতে হবে সক্রিয়
ফ্রাংক হ্যাচেট, তিনি অনলাইন ডাইমস নামে একটি রিসোর্সফুল অনলাইন বিজনেস কোর্স পোর্টাল পরিচালনা করেন।
এই বিজনেস কোর্সে শেখানো হয় কিভাবে একজন উদ্যোক্তা তার ই-কমার্স বিজনেসটি বাড়িয়ে তুলতে পারেন।
এছাড়াও তার রয়েছে অনলাইন সামুরাই নামে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষের একটি ফেইসবুক গ্রুপ।
যেখানে মার্কেটিং এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
তিনি বলেন, একজন ই-কমার্স বিজনেস উদ্যোক্তাকে ফেসবুক এবং ইমেইল এর দ্বারা ক্রস টার্গেটিং কৌশল ব্যবহার করা জানতে হবে।
তিনি বিশ্বাস করেন, একটি ই-কমার্স বিজনেসে সর্বোচ্চ কনভার্শন রেট অর্জন করা যায় ইমেইল এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কৌশলগত টার্গেটিং ব্যবহার দ্বারা।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন আপনার টার্গেট কাস্টমারকে ইমেইল করছেন একই সময়ে তাদের ইমেইল এড্রেসগুলো ব্যবহার করে ফেসবুকে কাস্টম অডিয়েন্স তৈরি করে অ্যাড দিলে ফেইসবুক সেই কাস্টমারের তথ্য থেকে ধারণা নিয়ে একই ধরনের নতুন কাস্টমারদের খুঁজে বের করে।
অনুশীলনের মাধ্যমে শেখা
রিচার্ড লাজজ্জেরা শপিফাই (shopify.com) টিমের একজন প্রাক্তন সদস্য। তিনি বর্তমানে আ বেটার লেমোনেড স্ট্যান্ড নামে একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ই-কমার্স ওয়েবসাইট ডেভলপিং প্লাটফর্ম পরিচালনা করছেন।
তিনি তার এডুকেশনাল “ব্লগ বিল্ড লঞ্চ গ্রো” এর মাধ্যমে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।
তিনি মনে করেন অনুশীলনের মাধ্যমে দিয়ে শেখা সবচেয়ে কার্যকরী। অনেক ইকমার্স উদ্যোক্তা ব্যবসা শুরুর আগেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন।
তারা ভয় পান ও সন্দিহান থাকেন বিজনেস এর সফলতা অর্জন নিয়ে।
কিন্তু আপনি যখন শুরু করবেন তখন কিছু বিষয় সঠিক হবে, কিছু ভুল হবে। কখনো সফলতা আসবে, কখনও ব্যর্থতা আসবে।
কিন্তু দিনশেষে আপনার ভুলগুলোকে সঠিক সিদ্ধান্ত দ্বারা প্রতিস্থাপিত করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে সফলতার অভিমুখে এগিয়ে যেতে হবে।
দেশি কমার্স সলিউশন কাস্টমারদের একেবারে প্রথম থেকে ফিজিক্যালি এবং ভার্চুয়ালি সহযোগিতা করে থাকে।
এতে করে বিজনেস পরিচালনায় আপনি যেখন থমকে যাবেন, সেখান থেকে উত্তরণের জন্য সম্ভাব্য বিষয়গুলো নিয়ে দেশি কমার্স তাদের কনসালটেন্সি সেবা নিয়ে আপনার পাশে সব সময় রয়েছে।
কাস্টমারদের ক্লাইন্ট হিসেবে পরিণত করতে বাড়াতে হবে ইমেইল এর ব্যবহার
সুজান ব্রাডলি, একজন দক্ষ ইকমার্স উদ্যোক্তা যিনি তার ই-কমার্স স্টোর “উই স্কুইক” এর মাধ্যমে একটি বিজনেসকে বাড়িয়ে তোলার কৌশলগুলো নিয়ে কাজ করেন।
তিনি “দ্য সোশ্যাল সেলস গার্লস” নামে একটি প্রোগ্রাম দ্বারা উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।
ইনফিউশনসফট নামে একটি টুলস রিকমেন্ডেড করেন যার মাধ্যমে একটি ক্ষুদ্র বিজনেসকে সম্পূর্ণ রকমভাবে অটোমোশন করা যায়।
বিঃদ্রঃ দেশি কমার্সের ই-কমার্স ওয়েবসাইট সলিউশন একটি বিজনেস কে বাড়িয়ে তুলতে বিজনেস সম্পর্কে কাস্টমারদের ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ প্রদান করে।
ফানেল অ্যাপ্রচ গুরুত্বপূর্ণ
টেরি আর্সেনালট, Shopidd নামে একটি লিডিং ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি পরিচালনা করেন। পাশাপাশি তাদের নিজের একটি কমার্স স্টোর রয়েছে।
তিনি ফেসবুকে শপিফাই কমার্স গ্রুপ পরিচালনা করেন যেখানে ১০ হাজারেরও অধিক মেম্বার রয়েছে।
টেরি আর্সেনালট মনে করেন, ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের সফলতা পেতে হলে ফানেল অ্যাপ্রচে এগোতে হবে।
ফানেল অ্যাপ্রচে হলো মার্কেটিং এর এমন একটি কৌশল, যেখানে একজন কাস্টমারকে প্রথমে আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে পরিচিত করাতে হয়, তারপরে তাকে এঙ্গেজ করতে হয় এবং এর পরবর্তীতে তার কাছে সেল করতে হয়।
একজন কাস্টমার আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য না পেয়ে কখনো কেনাকাটা করবে না।
এমন খুব কমই হয় যেখানে একজন কাস্টমার প্রথমবারেই একটি ই-কমার্স স্টোর থেকে কেনাকাটা সম্পন্ন করেন।
দেশি কমার্স কাস্টমারদের মার্কেটিং স্ট্রাটেজি নির্ধারণ করার সময় ফানেল এপ্রোচ কে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
কাস্টমার জার্নি ম্যাপ
ক্যাথরিন হাওয়েল, তিনি একটি ফানেল ক্রিয়েশন এজেন্সি পরিচালনা করেন যার নাম “এইট লুপ সোশ্যাল”
তিনি পরামর্শ দেন, প্রথম থেকেই একজন কাস্টমারের জার্নিম্যাপ পর্যবেক্ষণ করতে হয়।
কাস্টমার জার্নিম্যাপ হলো, একজন কাস্টমার কতভাবে আপনার সাথে এঙ্গেজ হতে পারে এবং তারা কোথায় কোথায় অবস্থান করছে এবং একটি বিক্রয় প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে তারা কোন কোন ধাপ অতিক্রম করছে পুরো বিষয়টিকে পর্যবেক্ষণ করা।
ব্যতিক্রমী উপায় সেল করা
আসলে রাইট একজন ই কমার্স উদ্যোক্তা। তিনি বেশ কিছু অনলাইন স্টোর পরিচালনা করেন যার মধ্যে খুব পপুলার একটি ফেসবুক গ্রুপ যার নাম “ফেসবুক অ্যাডস এন্ড শপিফাই স্ট্র্যাটেজি”
তিনি মনে করেন, আপনাকে ব্যতিক্রম হতে হবে, যদি কাস্টমারদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চান।
কাস্টমারের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য অবশ্যই ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আপনার প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসকে দেখার চেষ্টা করতে হবে। এবং সেই মোতাবেক উপস্থাপনা করতে হবে একটি চমৎকার ক্রিয়েটিভ এর মাধ্যমে।
থাকতে হবে সর্বদা আপটুডেট
শাবিস্তান গোমেজ, ড্রপ শিপিং এর জন্য একজন পৃথিবী বিখ্যাত সেরা ই-কমার্স এক্সপার্ট
তার দেওয়া প্রধান টিপস হচ্ছে সর্বদা আপ টু ডেট থাকতে হবে।
একটি অ্যাডভার্টাইজমেন্ট যখন আর ভালো পারফর্ম করছে না, ঠিক সেই সময়ে আপনাকে সে এডভার্টাইজিং টিকে অপটিমাইজ করতে হবে।
খুঁজে বের করতে হবে কোন ধরনের অ্যাডসগুলো আপনাকে সর্বোচ্চ ফলাফল এনে দিচ্ছে।
কাস্টমারদের আচরণ ও চাহিদা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। তাদের এই দ্রুত পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেবার সক্ষমতা বিজনেসে সফলতার রাস্তা সুগম করে দেয়।
ফেসবুকের জন্য ভিডিও অ্যাডস ব্যবহার করতে হবে
লরেন্স আপনতে, যিনি তার কোচিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে অন্যদেরকে অনুপ্রাণিত করে থাকেন।
তার পরামর্শ, একজন উদ্যোক্তাকে প্রথম একটি ভিডিও অ্যাড চালাতে হবে। সেই ভিডিও অ্যাডে যে সকল কাস্টমার এঙ্গেজ হচ্ছে পরবর্তী সময়ে তাদেরকে রি-টার্গেট করে অ্যাড দিতে হবে।
তিনি ভিডিও অ্যাডকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, কারণ ফেইসবুক ভিডিও অ্যাডকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয় এবং ফেসবুকে ভিডিও অ্যাডের পারফরম্যান্স রেট সবচেয়ে বেশি।
উদাহরণস্বরূপ, দেশি কমার্সের এই ভিডিওটি দেখতে পারেন যেখানে ৪৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রায় ২০ হাজার মানুষ দেখেছে এবং এটি ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।
ভিডিওটি ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখতে ক্লিক করুনঃ ই-কমার্স বিজনেস শুরু করা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন কি?
অথবা এখানেই দেখুন,
পরিশেষে,
বিভিন্ন ই-কমার্স এক্সপার্টরা তাদের বিজনেসের জন্য ভিন্ন ভিন্ন রকম কৌশলকে বেছে নিয়েছেন। এবং সময়ের সাথে সাথে তারা সেটি উন্নত করে চলেছেন।
উপরের আলোচনা থেকে খেয়াল করলে দেখবেন, প্রত্যেকেই তার বিজনেসের জন্য যে কৌশলটি আদর্শ সেটিকেই খুঁজে নিয়েছেন এবং তার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করেছেন।
আপনার ইকমার্স বিজনেসের জন্য কোন কৌশল টি আপনার কাছে সবচেয়ে উপযুক্ত মনে হয়?
সবার আগে মন্তব্য করুন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন
মন্তব্য করতে হলে আপনাকে লগ ইন করতে হবে।