টেলি মার্কেটিং কি: ধারণা, প্রকারভেদ, সুবিধা, অসুবিধা এবং কার্যকর কৌশল

টেলি মার্কেটিং কি: ধারণা, প্রকারভেদ, সুবিধা, অসুবিধা এবং কার্যকর কৌশল
শেয়ার করুন

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে দ্রুত ও সরাসরি ক্রেতার কাছে মার্কেটিং এর উপায় কোনটা জানেন? টেলিমার্কেটিং, সহজ ভাষায় বললে টেলিফোন বা অন্যান্য অনলাইন কমিউনিকেশন মাধ্যম ব্যবহার করে পটেনশিয়াল ক্রেতার কাছে মার্কেটিং করা। টেলিমার্কেটিং এর মাধ্যমে শুধু যে সেলস কল করা হয় ব্যাপারটা এমন নয়, টেলিমার্কেটিং হলো এমন একটি মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি যার মাধ্যমে পণ্যের বা সার্ভিসের মার্কেটিং এর পাশাপাশি বিক্রয় পরবর্তী গ্রাহক সেবা প্রদানও সম্ভব।

আজকের ব্লগে আমরা টেলি মার্কেটিং এর ধারণা ও সংজ্ঞা থেকে শুরু করে এর বিভিন্ন প্রকারভেদ—যেমন ইনবাউন্ড, আউটবাউন্ড, B2B ও B2C—নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করবো। একই সাথে এর সুযোগ-সুবিধা, অসুবিধাগুলো, আইনী সীমাবদ্ধতা নিয়েও আলোচনা করা হবে।

টেলি মার্কেটিং-এর সংজ্ঞা ও মৌলিক ধারণা

টেলি মার্কেটিং হলো ডাইরেক্ট মার্কেটিং মেথড যেখানে সেলস রিপ্রেজেন্টিভরা পটেনশিয়াল কাস্টমারের সাথে সরাসরি ফোন কল, ইমেইল বা অনলাইনে যোগাযোগ করে পণ্য বা সার্ভিসের মার্কেটিং করে। এই মার্কেটিং হতে পারে পণ্য বিক্রয়ের কিংবা হতে পারে কোনো পণ্য সম্পর্কে তথ্য প্রদান, কাস্টমার ফিডব্যাক নেয়া, লিড জেনারেশন ইত্যাদি। টেলিফোন ও মার্কেটিং দুটো শব্দকে যোগ করে টেলিমার্কেটিং শব্দটি তৈরি হয়েছে।

টেলিমার্কেটিং এর মাধ্যমে যেমন কোনো কোম্পানি সরাসরি গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ করতে পারে তেমনই গ্রাহকের চাহিদা ও প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা পেতেও সাহায্য করে। টেলিমার্কেটিং ধারণা আরেকটু সহজভাবে দিতে হলে বলা যেতে পারে, টেলিমার্কেটিং হলো “ডোর টু ডোর” মার্কেটিং প্রক্রিয়া তবে এটি ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়।

টেলি মার্কেটিং-এর প্রকারভেদ

টেলিমার্কেটিং এর অনেকগুলো প্রকারের মধ্যে প্রধান ৪ টি প্রকার তুলে ধরা হলো-

১.  ইনবাউন্ড টেলিমার্কেটিং (Inbound Telemarketing)

এই ধরণের টেলিমার্কেটিং মূলত  সেসব গ্রাহকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যিনি ইতোমধ্যে কোম্পানি সম্পর্কে ধারণা রাখেন অথবা কোম্পানির কোনো পণ্য বা সার্ভিস ক্রয় করেছেন। এক্ষেত্রে অনেক সময় গ্রাহক নিজেই ফোন কল করে কিংবা অন্যান্য মাধ্যমে যোগাযোগ করে পণ্য বা সার্ভিস সম্পর্কে জানতে চায়। এখানে টেলিমার্কেটারের ভূমিকা হলো গ্রাহককে তার প্রয়োজনীয় সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়া, সমাধান দেয়া কিংবা বিক্রয়ের চেষ্টা করা। উদাহরণ: কাস্টমার কেয়ার হটলাইন, হেল্প ডেস্ক, অর্ডার গ্রহণ কলসেন্টার।

২. আউটবাউন্ড টেলিমার্কেটিং (Outbound Telemarketing)

আউটবাউন্ড টেলিমার্কেটিং মূলত পটেনশিয়াল কাস্টমারদের কাছে পণ্য বা সার্ভিসের প্রচার করেন। এটাকে অনেকটা “কোল্ড কল” ও বলা যেতে পারে। এখানে লিড জেনারেশন, প্রচার বা রিমাইন্ডার অন্যতম। উদাহরণ: ক্রেডিট কার্ড অফার, প্রোমোশনাল অফার, সেলস কল।

৩. লিড জেনারেশন (Lead Generation)

সাধারণত যখন মার্কেটারের কাছে গ্রাহকের আগ্রহ, চাহিদা বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করা থাকে তখন মার্কেটার লিড জেনারেশনের মাধ্যমে টার্গেট কাস্টমারের সাথে যোগাযোগ করে সেলস জেনারেটের চেষ্টা করেন।

৪. সেলস (Sales)

টেলিমার্কেটিং এ সেলস কল তখনই করা হয় যখন লিড জেনারেশনের পর কাস্টমার পণ্য ক্রয়ের ব্যাপারে আগ্রহী হয়। তখন ক্রেতার সাথে কথা বলে সেলস চূড়ান্ত করা হয়।

টেলি মার্কেটিং-এর সুবিধা

টেলিমার্কেটিং আধুনিক মার্কেটিং সেক্টরে অত্যন্ত কার্যকরী একটি মার্কেটিং প্রক্রিয়া যদি তা সঠিক পদ্ধতিতে সঠিক অডিয়েন্সের জন্য করা হয়। 

নিচে টেলিমার্কেটিং এর কিছু সুবিধা আলোচনা করা হলোঃ

১.  ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরী

টেলিমার্কেটিং এর মাধ্যমে যে সুবিধাটা সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় তা হলো ক্রেতার সাথে টেলিমার্কেটারের সরাসরি যোগাযোগ। এতে করে দুজনের মধ্যে তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে প্রয়োজন, চাহিদা, পণ্যের বিস্তারিত সম্পর্কে জানতে ও জানাতে পারেন। এই যোগাযোগের মাধ্যমে সেলস পার্সন ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রির চেষ্টা আরো সহজেই করতে পারেন।

২. অধিক মানুষের সাথে যোগাযোগের সুযোগ

সাধারণ মার্কেটিং এর চেয়ে টেলিমার্কেটিং এ স্বাভাবিকভাবেই সরাসরি অধিক পটেনশিয়াল কাস্টমারের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। 

৩. স্বল্প খরচ

ফোন কল বা ইমেইল করা সাধারণত অন্যান্য মার্কেটিং এর চেয়ে সবচেয়ে কম খরচ এবং গ্রাহকের সাথে সরাসরি যোগাযোগের অন্যতম উপায়।

৪. বিক্রয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা

যেহেতু গ্রাহকের সাথে মার্কেটারের সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ রয়েছে তাই একে অপরের সাথে কথা বলার মাধ্যমে মার্কেটার সহজেই ক্রেতাকে পণ্যের প্রচারের মাধ্যমে বিক্রির প্রক্রিয়াটি সহজ করতে পারেন।

৫. তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া ও ফলাফল

রিয়েল টাইম যোগাযোগের সবচেয়ে ভালো সুবিধা হলো সাথে সাথেই ক্রেতার প্রতিক্রিয়া ও ফিডব্যাক জানা যায়। এতে করে মার্কেটারের জন্যও সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয় কীভাবে উনি উনার লিড জেনারেট করবেন।

টেলিমার্কেটিং-এর অসুবিধা

প্রতিটা জিনিসের যেমন কিছু সুবিধা আছে তেমনই কিছু অসুবিধাও রয়েছে। নীচে টেলিমার্কেটিং এর কিছু অসুবিধা তুলে ধরা হলো-

  • অনাকাঙ্ক্ষিত কল গ্রাহকের বিরক্তি – টেলিমার্কেটিং এর মাধ্যমে যেহেতু ক্রেতা না চাইতেই ফোন করে তার কাছে পণ্যের প্রচার করা হয় তাই অনেকক্ষেত্রেই এটি গ্রাহকের সময় নষ্টের কিংবা বিরক্তির কারণ হয়ে উঠে। এক্ষেত্রে যথাসম্ভব ধৈর্য্য ও পজিটিভ মনোভাবের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
  • টেলিমার্কেটিং এর সীমাবদ্ধতা – অনেক দেশেই Do not Disturb লিস্টে থাকা নাম্বারগুলোতে কল করা আইনত অপরাধ। সাধারণত আমাদের দেশে এই আইন প্রচলিত না হলেও গ্রাহক অনেক সময় বিরক্ত হয় নাম্বার ব্লক করে রাখে নিজ থেকেই যা মার্কেটিং এ এক প্রকার বাঁধা।
  • উচ্চ প্রত্যাখ্যান হার – টেলিমার্কেটিং এ অধিকাংশ কলই শেষ হয় – না দিয়ে। অনেক গ্রাহক সময়ের অভাবে কথা শুনতে চায় না আবার অনেকেই বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দেয়। ফলে প্রচেষ্টার চেয়ে সফলতার হার অনেক কম।
  • মেন্টাল স্ট্রেইন ও মার্কেটারের হতাশা – প্রচুর না শুনতে শুনতে একসময় দেখা যায় মার্কেটার হতাশায় ভুগেন কিংবা কাজ করার স্পৃহা হারিয়ে ফেলেন। কর্মীর টার্ন ওভার রেট এই খাতে বেশী।
  • বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি – এই মার্কেটিং সেক্টরের মাধ্যমে অনেক স্ক্যাম, প্রতারণা হয়ে থাকে ফলে কোনো আসল মার্কেটার কল দিলেও গ্রাহকের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা কম হয়। 
  • সময়নির্ভরতা – কোন সময় কল করাটা কোন গ্রাহকের জন্য ফলপ্রসূ তা অনেক সময়ই ধারণা করা সম্ভব হয়না। ফলে ভুল সময়ে কল দিলে গ্রাহক সহজেই বিরক্ত হয়ে এই কোম্পানির কল আর না ও ধরতে পারেন।

কার্যকর টেলিমার্কেটিং কৌশল

এতসব অসুবিধার কথা সুনে নিশ্চয়ই এবার ভাবছেন তাহলে এই মার্কেটিং এ সফল হওয়ার উপায় কি নেই? অবশ্যই আছে। তবে এক্ষেত্রে কার্যকরী কিছু কৌশল ও পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। শুধু স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করে কল করলেই হবে না, প্রয়োজন ধৈর্য্য, সহনশীলতা, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার।

চলুন তবে জেনে নিই টেলিমার্কেটিং এর কিছু কার্যকরী কৌশল-

১. প্রি-কল রিসার্চ এবং কাস্টমাইজড স্ক্রিপ্ট

প্রতিটা কল করার আগে অবশ্যই ক্রেতার সম্পর্কে কিছুটা রিসার্চ করার চেষ্টা করা উচিত, সে অনুযায়ী কাস্টমাইজড স্ক্রিপ্ট তৈরী করা উচিত। কারণ একেক ক্রেতার একেক চাহিদা থাকে এবং একেক জনের কমিউনিকেশনের ধরণ একেক রকম।

২. পেশাদার ও আত্মবিশ্বাসী টোন

পেশাদারিত্ব মনোভাব ও আত্মবিশ্বাস আপনার এই টেলিমার্কেটিং প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করবে। কথায় কোনো জড়তা বা দ্বিধা না রেখে স্পষ্ট ভাষায় কথা বললে গ্রাহক পছন্দ করেন।

৩.  শ্রবণ দক্ষতা (Active Listening)

মার্কেটিং এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো গুরুত্ব সহকারে অপরপক্ষের কথা শোনা। শুধু নিজে বলে যাওয়ার মধ্যে কোনো সফলতা থাকে না, আপনি নিজের বক্তব্য উপস্থাপনের পর গ্রাহককে মত প্রকাশের সুযোগ দিবেন এবং তিনি কি বলছেন বা জানতে চাচ্ছেন তা গুরুত্ব সহকারে শোনার এবং সে অনুযায়ী রেসপন্স করার চেষ্টা করবেন। 

৪. ডেটা-ড্রিভেন কলিং ও CRM সফটওয়্যার ব্যবহার

Customer Relationship Management (CRM) সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে কাস্টমারের সকল তথ্যের আপডেট রাখা যায়। এক্ষেত্রে আপনি যদি দেশিকমার্সের মাধ্যমে ওয়েবসাইট তৈরী করে থাকেন তবে সহজেই আপনার সকল গ্রাহকের ডেটা পেয়ে যাবেন যা আপনার টেলিমার্কেটিং কে আরো সহজ ও সফল করবে।

৫.  সময়জ্ঞান ও কৌশলী ফলো-আপ

কলের সময় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ, যদি সঠিক সময়ে কল না করেন তবে আপনার সব স্ট্র্যাটেজিই বিফলে যাবে। সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা, বিকাল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা সাধারণত কল করার সবচেয়ে কার্যকরী সময়। আবার একেক গ্রাহকের ক্ষেত্রে এই সময়টা পরিবর্তন হতে পারে। 

তাই কাস্টমারের সাথে এক বার কল করে সরাসরি জেনে নিলেও ভালো হয় উনি কখন ফ্রি কিংবা সময় দিতে পারবেন। একই সাথে মাঝে মাঝে ফলো-আপ করাও জরুরী।

৬. প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার: ব্যবহৃত টেলিযোগাযোগ ডিভাইস ও টুলস

টেলিমার্কেটিং এ কার্যকর পদ্ধতির পাশাপাশি পটেলিযোগাযোগ ডিভাইসের সঠিক ব্যবহার জানাও অত্যন্ত জরুরী।

যেমন –

  • টেলিফোন/স্মার্টফোন – সরাসরি গ্রাহকের সাথে যোগাযোগের অন্যতম একটি মাধ্যম হলো টেলিফোন বা স্মার্টফোন। কলের সময় কল রেকর্ডিং, কল ট্র্যাকিং, স্ক্রিপ্ট রেডিং এপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • হেডসেট ও মাইক্রোফোন – সাউন্ড কোয়ালিটি যাতে ভালো হয় এবং গ্রাহকের কথা যাতে স্পষ্টভাবে শোনা যায় তাই ভালো হেডসেট ও মাইক্রোফোন এক্ষেত্রে অত্যাবশ্যক। 
  • কম্পিউটার ও টেলিমার্কেটিং সফটওয়্যার – কম্পিউটারের মাধ্যমে ডেটাবেস এক্সেস, স্ক্রিপ্ট রিডিং, কল লগ মেইনটেইন করা যায়। অনেক সময় auto-dialer সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয় যাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনেক গ্রাহককে কল করা যায়।

বাংলাদেশে টেলিমার্কেটিং বিষয়ক আইনকানুন

বাংলাদেশে আলাদাভাবে টেলিমার্কেটিং এর কোনো আইন নেই তবে টেলিযোগাযোগের কিছু আইন ও বিধিমালা রয়েছে, যা টেলিযোগাযোগ খাতকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে।  নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন, ২০০১

বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাত নিয়ন্ত্রণের জন্য মূল আইন হলো বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন, ২০০১। এই আইনের আওতায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC) গঠিত হয়, যা দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করে। 

এই আইন অনুযায়ী:

  • লাইসেন্স ব্যতীত টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদান করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
  • সরকার প্রয়োজনে নির্দিষ্ট টেলিযোগাযোগ সেবা বা যন্ত্রপাতি ব্যবহার বা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে।

২. টেলিমার্কেটিং ও গ্রাহক সুরক্ষা

বর্তমানে বাংলাদেশে টেলিমার্কেটিং এর জন্য আলাদা কোনো আইন নেই যা গ্রাহকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। ফলে গ্রাহকদের অনাকাঙ্খিত কল বা মেসেজের জন্য প্রায়ই বিরক্তিকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। 

৩. বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন, ২০২৪ (প্রস্তাবিত)

২০২৪ সালে প্রস্তাবিত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন খসড়ায় কিছু নতুন বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লাইসেন্স ব্যতীত টেলিযোগাযোগ সেবা পরিচালনায় ১০ বছর কারাদন্ড বা ৩০০ কোটি টাকার অর্থদন্ড বিধান রাখা হয়েছে।

৪. টেলিযোগাযোগ মূল্য সংযোজন সেবা (TVAS) নিবন্ধন

যেসব প্রতিষ্ঠান টেলিমার্কেটিং,কল সেন্টার বা অন্যান্য টেলিযোগাযোগ মূল্য সংযোজন সেবা প্রদান করে, তাদের BTRC-এর নিবন্ধন নিতে হয়। 

বাংলাদেশী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য টেলিমার্কেটিং কতটুকু কার্যকরী হতে পারে?

বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যবসাক্ষেত্রে দ্রুততার সাথে প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে। মার্কেটিং খাতে নজর দিচ্ছে আগের চেয়ে বেশি, এসময়ে টেলিমার্কেটিং হতে পারে অন্যতম একটি মার্কেটিং প্রক্রিয়া। এটি শুধু বড় প্রতিষ্ঠান নয় বরং মাঝারি ও ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও কার্যকরী একটি মার্কেটিং হতে পারে। যা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্যও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।

  • স্বল্প খরচে মার্কেটিং – অন্যান্য মার্কেটিং এর মতো টেলিমার্কেটিং এ খরচের হার তূলনামূলকভাবে অনেক কম। এক বা দুইজন সেলস পার্সন দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক গ্রাহকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব।
  • সরাসরি গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ – টেলিমার্কেটিং এর সবচেয়ে ভালো দিকই হচ্ছে স্বল্প সময়ে ও স্বল্প খরচে সরাসরি গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ করা যায় যা গ্রাহকের চাহিদা বুঝে সমাধান দিতে বিশেষভাবে কার্যকরী। বিশেষ করে যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশী এক্টিভ না তাদের জন্য টেলিমার্কেটিং একটি কার্যকরী মার্কেটিং।
  • বিক্রয় বৃদ্ধি ও দ্রুত ফলাফল – অনেক সময় গ্রাহক অনলাইনে থাকে না বা নতুন পণ্য সম্পর্কে জানতে পারে না এক্ষেত্রে টেলিমার্কেটিং এর মাধ্যমে সহজেই নতুন পণ্য বা অফার সম্পর্কে জানানো সম্ভব। গ্রাহক ধরে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হলো টেলিমার্কেটিং কারণ এতে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব। কাস্টমার রিটেনশন হার যেমন বাড়ে তেমনই গ্রাহকের ফিডব্যাকও পাওয়া যায় সহজেই।

টেলিমার্কেটিং বর্তমান অবস্থা, সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ

বর্তমানে বাংলাদেশে টেলিমার্কেটিং স্বল্প পরিসরে ব্যবহার হলেও ধীরে ধীরে এর ব্যবহার বাড়ছে, বিশেষ করে ব্যাংক, ই-কমার্স ও টেলিকম খাতে। তবে সঠিক প্রশিক্ষণ ও যথাযথ কাস্টমার ডেটার অভাবে প্রায়ই টেলিমার্কেটিং এর প্রচেষ্টা বিফলে যায়। তাই এক্ষেত্রে কাস্টমার ডেটাগুলো সংরক্ষণ করে সেগুলোর উপর ভিত্তি করে মার্কেটিং করা হলে তা ভালো ফলাফল দিতে পারে। 

ভবিষ্যতে এআই-চালিত অটোমেশন, ভয়েস বট, এবং উন্নত ডেটা অ্যানালিটিক্সের সহায়তায় টেলিমার্কেটিং আরও কার্যকর ও গ্রাহকবান্ধব হতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন সুস্পষ্ট নীতিমালা, গ্রাহক সম্মতি ও দক্ষ টেলিমার্কেটার। যদি এসব কিছু নিশ্চিত করা যায় তবে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও টেলিমার্কেটিং একটি সফল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি হিসেবে গণ্য হবে।

নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

আপনার মূল্যবান মতামত দিন

মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। আবশ্যক ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত *

আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন

সবার আগে মন্তব্য করুন