কখন ও কিভাবে ফেসবুক অ্যাডের জন্য “রিচ অবজেক্টিভ” ব্যবহার করবেন

কখন ও কিভাবে ফেসবুক অ্যাডের জন্য “রিচ অবজেক্টিভ” ব্যবহার করবেন
শেয়ার করুন

ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজারের অ্যাড অবজেক্টিভগুলোর প্রথমে রয়েছে ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস এবং রিচ অবজেক্টিভ।এটি থেকে অনেকে অনুমান করতে পারেন ফেসবুক মার্কেটিং এর শুরুর দিকে ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস তৈরি বা কাস্টমারদের কাছে প্রোডাক্টগুলো পরিচিত করানোর জন্য এই অবজেক্টিভগুলো ব্যবহার করা হয়। বিষয়টি কি শুধুই তাই?

ফেসবুক অ্যাড অবজেক্টিভগুলোর রয়েছে বহুমাত্রিক ব্যবহার পদ্ধতি। কিভাবে এই অবজেক্টিভগুলো ব্যবহার করবেন সেটি বিজনেসের লক্ষ্য ও কাস্টমারদের আচরণের উপর নির্ভর করে নির্ণয় করতে হয়।  

রিচ অবজেক্টিভ কি?

রিচ অবজেক্টিভ নিশ্চিত করে, একটি বিজ্ঞাপন সর্বাধিক অডিয়েন্সদের কাছে পৌঁছানো ও তারা কতবার সেটি দেখছে। এই অবজেক্টিভের মাধ্যমে আপনি যথাসম্ভব সর্বোচ্চ অডিয়েন্সদের কাছে অ্যাডটি নিয়ে যেতে পারবেন এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কতবার অ্যাডটি দেখবে। 

ধরুন, আপনি চাচ্ছেন আপনার বিজনেসের অ্যাড একটি নির্দিষ্ট এলাকার সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের সামনে নিয়ে যাবেন এবং তাদের বার বার দেখানোর মাধ্যমে সচেতন করে তুলবেন। তাহলে আপনি রিচ অবজেক্টিভ সিলেক্ট করবেন ও ফ্রিকোয়েন্সি নির্দিষ্ট করে দিবেন যে প্রতিজন অডিয়েন্স নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কতবার অ্যাডটি দেখবে।

রিচ অবজেক্টিভ পরিমাপ করা হয় “রিচ এবং ফ্রিকোয়েন্সি” দিয়ে। এই ম্যাট্রিক্স গুলো বুঝতে সাহায্য করে কতজন মানুষ আপনার অ্যাড দেখছে এবং কতবার দেখছে।

এই অবজেক্টিভ আরো পরিমাপ করে প্রতি ১০০০ জন মানুষকে আপনার অ্যাড পৌঁছে দিতে কি পরিমান খরচ হচ্ছে।

রিচ অবজেক্টিভ

ফ্রিকোয়েন্সি ম্যাট্রিক্স আপনাকে বুঝতে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে যে, প্রোডাক্টের ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস তৈরি করতে বা কাস্টমারদের কাছে প্রোডাক্টগুলো পরিচিত করে তুলতে অডিয়েন্সদের কতবার অ্যাডগুলো দেখানো হবে।

রিচ এবং ফ্রিকোয়েন্সি বায়িং

ফেসবুকে অ্যাড দেবার জন্য দুই ধরনের বায়িং স্ট্র্যাটেজি রয়েছে যেমন, অকশন ও ফ্রিকোয়েন্সি বায়িং। বর্তমান আপডেট এর পরে সর্বমোট সাতটি অবজেক্টিভ এর জন্য রিচ এবং ফ্রিকোয়েন্সি বায়িং অ্যাভেলেবল।

এটি ফেসবুক বায়িং পদ্ধতির বিকল্প কৌশল। সাধারণত আমরা অকশন পদ্ধতি ব্যবহার করি। এই পদ্ধতি অনুসারে ফেসবুক অন্যান্য সকল অ্যাডদাতাদের অ্যাডগুলোর সাথে বিড করে এক দেখানোর জন্য মূল্য ও প্লেসমেন্ট নির্ধারণ করে।

অপরদিকে রিচ এবং ফ্রিকোয়েন্সি বায়িং পদ্ধতি আপনাকে আরো নিয়ন্ত্রিত উপায়ে অ্যাড পরিচালনার সুযোগ দেয়। যেখানে আগে থেকেই ফেসবুক আপনাকে অ্যাড রেজাল্টের আনুমানিক ফলাফল সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। একটি অ্যাডের টোটাল রিচ এবং ফ্রিকোয়েন্সি সংখ্যা আপনি নির্ধারণ করে দেবার মাধ্যমে আগে থেকেই ফলাফলকে অপটিমাইজ করতে পারবেন।

রিচ এবং ফ্রিকোয়েন্সি বায়িং

তবে উল্লেখ্য যে রিচ এবং ফ্রিকোয়েন্সি স্ট্রাটেজি বড় সংখ্যক অডিয়েন্স দের জন্য কার্যকর। যেখানে আপনি সর্বোচ্চসংখ্যক অডিয়েন্সকে কম সংখ্যকবার অ্যাড দেখানোর মাধ্যমে রিচ করতে পারবেন। 

কেবল মাত্র তখনই রিচ ক্যাম্পেইনে  সেট করবেন, যদি আপনার মার্কেট শেয়ার কম হয় অথবা আপনার ব্র্যান্ডটি মার্কেটে একেবারেই নতুন হয়। 

 সে ক্ষেত্রে অল্প সময়ের জন্য রিচ অবজেক্টিভ ক্যাম্পেইন চালালে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায়।

কখন রিচ অবজেক্টিভ দিয়ে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করবেন 

রিচ অবজেক্টিভ ব্যবহার করতে হবে বুদ্ধিমত্তার সাথে। লুকালাইক অডিয়েন্সের মত ব্রড অডিয়েন্সের জন্য এই অবজেক্টিভ তেমন কোনো ফলাফল নিয়ে এসে দেয় না।

রিচ অবজেক্টিভ থেকে সেরা ফলাফল পেতে স্মল অডিয়েন্স গ্রুপকে টার্গেট করতে হবে, এটি আপনাকে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে এবং তার জন্য (CPM) সিপিএম কম রাখতে সাহায্য করে।

রিচ অবজেক্টিভ এর আরেকটি উপকারিতা হচ্ছে, এটি একটি বিজ্ঞাপনকে অ্যাড ফ্যাটিক হওয়া থেকে বিরত রাখে। কারণ আপনি ফ্রিকুয়েন্সি ক্যাপ সেট করার মাধ্যমে অডিয়েন্স দের এড দেখার সংখ্যাটিকে বা অডিয়েন্স কতবার এড দেখবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

অন্যান্য অবজেক্টিভ গুলোর মতই রিচ অবজেক্টিভ তিন ধরনের অডিয়েন্স গ্রুপে পরিচালনা করতে পারেন। সেগুলো হচ্ছে কোল্ড, ওয়ার্ম ও হট।

কোল্ড অডিয়েন্স টার্গেটিং

রিচ অবজেক্টিভ সেরা সিদ্ধান্ত যখন আপনি জিওগ্রাফিক্যাল ভাবে অডিয়েন্সকে টার্গেট করছেন বা লোকাল অডিয়েন্সকে টাগেট করছেন।

এক্ষেত্রে অডিয়েন্স সাইজ কম হয় এবং তাদেরকে বারবার অ্যাড দেখানোর মাধ্যমে সচেতন করে তোলা যায়।

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, রেস্টুরেন্ট অথবা লোকাল ব্র্যান্ড শপ এ ধরনের বিজনেসের জন্য আপনি নির্দিষ্ট এলাকার অডিয়েন্স কে টার্গেট করতে রিচ অবজেক্টিভ ব্যবহার করতে পারেন।

কোল্ড অডিয়েন্স টার্গেটিং

ওয়ার্ম অডিয়েন্স টার্গেটিং

ওয়ার্ম অডিয়েন্সে রিচ ক্যাম্পেইন চালাতে কাস্টম অডিয়েন্স থেকে বেছে নিবেন মোস্ট এঙ্গেজিং অডিয়েন্স গ্রুপকে।

ধরুন, আপনার একটি প্রমোশনাল ভিডিও অ্যাড চলেছিল সেই ভিডিওটি যারা ৮০% বা ৯০% ভিউ করেছে আপনি তাদেরকে রিচ করার মাধ্যমে আপনার ব্র্যান্ডটিকে সেই অডিয়েন্স দের টপ অফ দা মাইন্ডে রাখতে চান। 

তাহলে আপনি একটি স্বল্প সময় নির্ধারণ করে তাদের প্রতিদিন অথবা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক বার এড গুলো দেখাতে রিচ ক্যাম্পেইন অবজেক্টিভ ব্যবহার করতে পারেন।

ওয়ার্ম অডিয়েন্স টার্গেটিং

হট অডিয়েন্স টার্গেটিং

একটি বিজনেসের ওয়েবসাইট ভিজিটররা সেই বিজনেসের হট অডিয়েন্স হিসেবে বিবেচিত হয়। 

ওয়েবসাইট ভিজিটরদের সংখ্যা যেকোনো অডিয়েন্স গ্রুপ থেকে কম। এই অডিয়েন্স গ্রুপকে সচেতন রাখতে আপনি রিচ অবজেক্টিভ ক্যাম্পেইন চালাতে পারেন।

সেজন্য আপনাকে শর্ট ডিউরেশন এর ক্যাম্পেইন টাইম নির্ধারণ করতে হবে এবং তাদের জন্য ফ্রিকোয়েন্সি কম রাখতে হবে।

বেশি সময় ধরে এই অডিয়েন্স গ্রুপকে বেশিবার অ্যাড দেখাতে গেলে তারা বিরক্ত হতে পারে। এই এড দেখানোর ধরন অনেকটা রিমাইন্ডার এর মত।

 

 

স্বল্প সময়ের অফার গুলোর জন্য

কিছু বিজনেস অফার রয়েছে যা খুব স্বল্প সময়ের জন্য থাকে যেমন ভ্যালেন্টাইন ডে বা ফ্রাইডে অফার ইত্যাদি। 

এক্ষেত্রে আপনার হট অডিয়েন্স গ্রুপকে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে পুরোপুরি রিচ করতে, রিচ অবজেক্টিভ দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে।

 

 

রিচ অবজেক্টিভ চালানোর ক্ষেত্রে কি ধরনের বাজেট নির্ধারণ করতে হয়

অপরিকল্পিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ এক বাজেট আপনার পুরো অ্যাড কৌশলকে এলোমেলো করে দিতে পারে।

বাজেট নির্ধারণের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি মাথায় রাখবেন, ডেইলি বাজেট যত বেশি হবে আপনি প্রতিদিন ততবেশি অ্যাক্টিভ অডিয়েন্সকে রিচ করতে পারবেন।

যদি অডিয়েন্স সাইজের তুলনায় এন্ড বাজেট বেশি হয়ে যায় সেটি অ্যাড ফ্যাটিক ইস্যু তৈরি করে। এজন্য ফ্রিকোয়েন্সি ক্যাপ ব্যবহার করা জরুরি।

দেখা গেছে রিচ অবজেক্টিভ সবচেয়ে ভালো কাজ করে ছোট অডিয়েন্স গ্রুপে এবং স্বল্প বাজেটে। সবসময়ই এক বাজেট কম থেকে শুরু করবেন এবং ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করবেন।

ছোট অডিয়েন্স গ্রুপে এড চালানোর সময় সর্বনিম্ন তিন থেকে পাঁচ ডলার দিয়ে শুরু করতে পারেন, এরপরে ধীরে ধীরে সেটি প্রয়োজনমাফিক বৃদ্ধি করবেন।

ফেসবুক রিচ অবজেক্টিভ এর জন্য খরচ নির্ধারণ করা হয় CPM (cost per mille)  দ্বারা ।

প্রথমবার রিচ অ্যাড রান করার সময় এর খরচ সম্পর্কে আপনার একটি ধারণা হয়ে যাবে যা পরবর্তী অ্যাড পরিচালনায় বাজেট ক্যালকুলেশনে আপনাকে সাহায্য করবে।

পরিশেষে

সেরা মার্কেটিংয়ের মূল কথা হচ্ছে আপনার ব্র্যান্ড বা প্রোডাক্ট কে কাস্টমারের বায়িং কনসিডারেশন এর মধ্যে নিয়ে আসা। এবং এটি তখনই সফল হয় যদি আপনি কাস্টমারদের টপ অব দ্য মাইন্ডে জায়গা করে নিতে পারেন।

এবং এই কাজটি করতে সবসময় যে আপনাকে এনগেজমেন্ট অ্যাড চালাতে হবে তা নয়, আপনাকে বুঝতে হবে আপনি আপনার টার্গেট অডিয়েন্সদের থেকে কি প্রত্যাশা করছেন এবং সে প্রত্যাশা মাফিক ফলাফল পাওয়ার জন্য আপনি কোন কৌশল ব্যবহার করে তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হচ্ছেন।

আর তাই কাস্টমারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে আপনাকে ফেসবুক এন্ড অবজেকটিভ গুলোর বহুমাত্রিক ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে। তবেই আপনি একটি সফল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন পরিচালনার মাধ্যমে বিজনেসকে প্রফিটেবল করে তুলতে পারবেন।

 

আরো পড়ুনঃ

কমপ্লিট ফেসবুক অ্যাড গাইড ২০২১ঃ কিভাবে ফেসবুকে অ্যাড দিতে হয়

ভুমিকাঃ কমপ্লিট ফেসবুক অ্যাড গাইড ২০২১ঃ ফেসবুক অ্যাড তৈরির প্রাথমিক পর্যায় থেকে অ্যাডভান্স কৌশলের প্রতিটি ধাপ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই গাইডে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

সবার আগে মন্তব্য করুন

আপনার মূল্যবান মতামত দিন