(হট, ওয়ার্ম এবং কোল্ড) ট্রাফিক টার্গেটিং পদ্ধতি কিভাবে কাস্টমার রিলেশনশিপ তৈরী করতে সাহায্য করে? ই-কমার্স ওয়েবসাইটে ট্রাফিক আসা মানেই কি বেচাকেনা হওয়া?
প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইটে আসে কিন্তু সবাই কি আপনার থেকে কেনাকাটা করে। উত্তরঃ না
ই-কমার্স বেচাকেনার মূল চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটের ভিজিটরদের বায়িং স্টেজ সম্পর্কে জানা, সঠিক ভাবে ওয়েব ট্রাফিক টার্গেটিং করা এবং তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করার মাধ্যমে কাস্টমার এ পর্যন্ত করা।
এমন অনেক পটেনশিয়াল কাস্টমার রয়েছে যারা আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের জন্য আদর্শ কিন্তু তারা জানেনা আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসগুলো কি? এগুলো কীভাবে তার সমস্যার সমাধান করবে?
আপনি যত দ্রুত কাস্টমারদের বায়িংস্টেজ সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন তত দ্রুত তাদেরকে কাস্টমারে পরিণত করার জন্য সঠিক পদক্ষেপগুলো নিতে সক্ষম হবেন।
তাই শুরুতেই তাদের কাছে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বেচার কথা না বলে আপনি যা করতে পারেন তা হচ্ছে,
- কাস্টমারদের সামনে আপনার বিজনেসটিকে থেকে তুলে ধরুন
- যে সকল কাস্টমার আপনার প্রোডাক্ট, সার্ভিস বা বিজনেস সম্পর্কে আরও বেশি জানতে আগ্রহী, তাদের তথ্য সংগ্রহ করুন
- এরপর তাদের ক্লায়েন্টে পরিণত করে বেশি বেশি বেচাকেনা করুন
ট্রাফিক টার্গেটিং এর পুরো প্রক্রিয়াটি খুব বেশি জটিল না যদি সঠিকভাবে কাজটি করতে সক্ষম হন। আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের জানাবো কিভাবে আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটের ভিজিটরদের কোল্ড, ওয়ার্ম এবং হট তিন ভাগে ভাগ করে পর্যায়ক্রমে তাদের কাস্টমারে রূপান্তরিত করবেন।
কেন প্রথমেই কাস্টমারদের কাছে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সেল করা যৌক্তিক নয়
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গেছে একজন উদ্যোক্তা তার প্রডাক্ট ও সার্ভিসগুলো বেচার জন্য কাস্টমারদের সামনে শুধুমাত্র সেল পোস্ট করতে থাকেন। এখানে কাস্টমারদের চাহিদা বোঝা অথবা তাদের সমস্যাগুলো সমাধান সম্পর্কে দৃষ্টিপাত করা হয় না।
এর ফলশ্রুতিতে ভিন্ন ভিন্ন স্টেজে থাকা কাস্টমারেরা তার সমস্যার সাথে সেই প্রতিষ্ঠান বা বিজনেসের প্রোডাক্ট ও সার্ভিসের সাথে তার প্রয়োজনের সামঞ্জস্য বিধান করতে পারে না।
এতে করে শুধুমাত্র সেলিং পোস্ট গুলোর সাহায্যে তারা একটা বিজনেসের সাথে লেনদেন করতে আগ্রহী হয় না। তাই শুরুতেই কাস্টমারদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করাটা জরুরী। আপনার বিজনেস, প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস নিয়ে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় তথ্য কাস্টমারদের প্রদান করুন, তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরী করুন এবং এর পরে তাদের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে তাকে ক্লাইন্টে পরিণত করুন।
কাস্টমারের আচরণ বিশ্লেষণ করার টুলস
কাস্টমারদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করার পূর্বে আপনাকে দেখতে হবে আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটের সাথে কাস্টমারদের ইন্টারেকশনের ধরন।
প্রতিবার তারা যখন আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটটি ভিজিট করছে তারা ঠিক কোন কোন পেজগুলো ভিজিট করেছে এবং একটি পেজের কোন কোন অংশে তারা বেশি পরিমাণে ক্লিক করছে সেটি জানতে পারলে দারুন হয়।
তাদের ওয়েবসাইটের সাথে এনগেজ হবার ধরন বিশ্লেষণ করে আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটটিকে নতুনভাবে ডিজাইন করতে হবে। অথবা এমন একটি ই-কমার্স সলিউশন প্রোভাইডার কোম্পানির ই-কমার্স ওয়েবসাইট ব্যবহার করা যৌক্তিক হবে, যারা এই বিষয়গুলো নিয়ে আগে থেকেই গবেষণা করেছে।
একটি ওয়েবসাইটের ভিজিটর কোথায় কোথায় ক্লিক করছে বা কিভাবে এঙ্গেজ হচ্ছে একটু বোঝার জন্য কিছু অনলাইন টুলস রয়েছে যা ওয়েবসাইটের ক্লিক করার অংশগুলোকে হিট ম্যাপ চিত্র আকারে তুলে ধরে। যার মাধ্যমে এটি বুঝতে সুবিধা হয় কাস্টমার কোথায় বেশি পরিমাণে ক্লিক করছে।
নিচের চিত্রে দেখুন, দেশি কমার্স ব্লগে ঠিক কোথায় ভিজিটর ক্লিক করে,
Mocking Fish এমনই ধরনের একটি টুলস।
বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট ট্রাফিক সম্পর্কে জানুন
মার্কেটিং টার্মে ওয়েবসাইটের ভিজিটরদের তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়।
- কোল্ড ভিজিটর
- ওয়ার্ম ভিজিটর এবং
- হট ভিজিটর
এই প্রতিটি ধরনের ট্রাফিক টার্গেটিং এর জন্য প্রথমে এদের আলাদা করতে হবে সেজন্য এদের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দ্বারা তাদেরকে আলাদা করা যায়।
আরো পড়ুনঃ
ফেসবুক মার্কেটিং এর জন্য ফেসবুক সেলস ফানেল: কী, কেন, কীভাবে
কোল্ড ট্রাফিক
এমন কিছু অডিয়েন্স রয়েছে যারা আপনার বিজনেস সম্পর্কে ইতিপূর্বে কখনো শোনেনি। আপনি যখন একটি অ্যাড কপি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করার মাধ্যমে তাদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন তখন তারা কিছুটা আগ্রহী হয়ে এঙ্গেজ হচ্ছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় তার আপনার সম্ভাব্য কাস্টমার হতে চলেছে।
এধরনের অডিয়েন্সদের একটি সাধারণ সমস্যা থাকে এবং সেই সমস্যার সমাধানের জন্য সম্ভাব্য উপায়গুলো খুঁজতে থাকে যতক্ষণ না তারা সেই সমাধান খুঁজে পায় এবং আশ্বস্ত হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তারা সমাধান খোঁজ করে।
তাই এদের জন্য আপনাকে যা করতে হবে,
- তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করুন
- কোল্ড ট্রাফিক গুলোকে ওয়ার্ম ট্রাফিকে পরিণত করতে হবে
- ওয়েবসাইটের সাথে তাদের আচরণের ধরন বিশ্লেষণ করে তাদের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে হবে
- কনভার্শন ট্রাকিং পিক্সেল ব্যবহার করে তাদের আচরণের ওপর নির্ভর করে রেলেভান্ট অ্যাড প্রদান করতে হবে
এ ধরনের ট্রাফিক সাধারণত যে ধরনের কন্টেন্ট দ্বারা আকৃষ্ট হয়,
- ব্লগপোস্ট
- ভিডিও
- সার্ভে
- লিড মেগনেট
- গবেষণাপত্র
- টিউটোরিয়াল
এদেরকে কিভাবে ওয়ার্ম আপ করবেন
এ ধরনের ট্রাফিকে ওয়ার্ম আপ করার সবথেকে ইফেক্টিভ উপায় হচ্ছে লিড মেগনেট অ্যাড চালানো এবং তাদের সেই ফরমটি পূরণ করে ফেরত পাঠাতে উৎসাহিত করা।
যেহেতু এ ধরনের অডিয়েন্স দের কিছু সমস্যা থাকে এবং সমস্যার সমাধানের জন্য তার উপায় খোঁজ করে, তাই তারা এই সমস্যা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিবে এটাই স্বাভাবিক এবং এই থেকে আপনাকে বুঝতে হবে আপনার প্রোডাক্ট ও সার্ভিসের প্রতি তাদের প্রাথমিক পর্যায়ের আগ্রহ রয়েছে।
একবার যখন আপনি তাদের তথ্য গুলো পেয়ে গেছেন তখন নিয়মিত বিরতিতে তথ্যবহুল নিউজলেটার বা এসএমএস মার্কেটিং করে তাদেরকে সে বিষয়ে এডুকেট করে তুলতে হবে।
ডেমোগ্রাফিক এবং ইন্টারেস্ট অনুযায়ী তাদের ভাগ করে সাধারণ অডিয়েন্স এবং এঙ্গেজিং অডিয়েন্সদের পৃথক করতে হবে। পৃথক অডিয়েন্সদের তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা ঠিক কোন ধরনের পোস্ট গুলোতে কি ধরনের আচরণ করছে সেটি জানতে হবে এবং যতটা সম্ভব তাদের পছন্দনীয় পোস্টগুলো নিয়মিত বিরতিতে প্রদান করতে থাকতে হবে।
ওয়ার্ম ট্রাফিক
ওয়ার্ম ট্রাফিক গুলো সাধারণত আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে জানে, ইতিপূর্বে আপনার বিজনেস সম্পর্কে অবহিত আছে। তাই তাদেরকে জন্য বেশি অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন চালানোর প্রয়োজন নেই।
এই ক্যাটাগরির ট্রাফিকদের কাছে বেচাকেনা করা আপনার মূল উদ্দেশ্য থাকবে তাই আপনাকে বুঝতে হবে তাদের আগ্রহের পরিধি সম্পর্কে।
নিয়মিতভাবে তাদেরকে এঙ্গেজ রাখতে হবে এবং প্রোডাক্ট ও সার্ভিসের প্রয়োজনীয় সকল তথ্য যেমনঃ বেনিফিট, টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে।
এ ক্যাটেগরির কাস্টমারদের কনভার্ট করানোর জন্য আপনি তাদেরকে ই-বুক, প্রোডাক্ট ডেমো, ওয়েবিনার, ফ্রী টুলস সার্ভিস ইত্যাদি ধরনের ইভেন্টের আয়োজন করতে পারেন।
হট ট্রাফিক
এ ধরনের ভিজিটর ইতিপূর্বে আপনার থেকে প্রোডাক্ট ও সার্ভিস কিনেছে এবং তারা আপনার বিজনেস সম্পর্কে জানে। ফলে তাদের কাছে সরাসরি সেল করার কথা বলতে পারেন।
এ ধাপে আপনাদের উদ্দেশ্য থাকবে,
- তাদের কাছে আপ-সেল ও ক্রস-সেল করা
- যারা অনেকদিন আপনার থেকে কেনাকাটা করেনি তাদেরকে কেনাকাটা করতে উৎসাহিত করা
তারা যে ধরনের কনটেন্ট ও পেজে এঙ্গেজ হয়
- সেলস পেজ
- প্রোডাক্ট পেজ
- অফার ডিসকাউন্ট
- হোম
- সার্ভিস
- কাস্টমার কেয়ার
ধরুন একজন কাস্টোমার আপনার বিজনেস সম্পর্কে আগে থেকেই জানে এবং সে আপনার থেকে কেনাকাটা করেছে তবে তার জন্য আপনি কি ধরনের পরিকল্পনা করবেন?
যেহেতু কাস্টমার আপনার বিজনেস সম্পর্কে আগে থেকেই জানে এবং ইতিপূর্বে কেনাকাটা করেছে তাই তাকে সরাসরি প্রোডাক্ট শোকেস করুন। এরপর যদি দেখেন সে কেনাকাটা করছে না তবে তাকে অফার প্রদান করুন।
যদি আপনার কাস্টমার প্রাইস সেনসিটিভ হয়ে থাকে তবে সে অফারটি লুফে নিবে। যদি দেখেন তারপরও সে কেনাকাটা করছে না, তবেএই পদ্ধতি তার জন্য না। তার জন্য ভিন্ন কৌশল নিতে হবে।
ই-কমার্স ওয়েবসাইট ভিজিটরদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার পদ্ধতি
কাস্টমার সাইকোলজি বিশ্লেষণ করা জরুরি। একজন কাস্টমার কেনাকাটা সম্পন্ন করার ঠিক আগ মুহূর্তেও কেনাকাটা না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কারণ তার মধ্যে প্রশ্ন জন্মে যে, সে কেন আপনাকে বিশ্বাস করবে। হয়তো সরাসরি আপনার সাথে কথা বলতে সে চাই কিন্তু ফোনে কল দিয়ে কথা বলা অর্থ সে ওয়েবসাইট থেকে বের হয়ে যাওয়া। তাই সে সেটি করতে চায় না। এর উপযুক্ত সমাধান হচ্ছে লাইভ চ্যাট অপশন রাখা।
আপনার ওয়েবসাইটের জন্য লাইভ চ্যাটিং সিস্টেম টি যুক্ত করে রাখুন। কাস্টমার যেন যে কোন সময় চাইলে আপনার সাথে এক ক্লিকে মেসেঞ্জারে যুক্ত হতে পারে এবং তার প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসা করতে পারে।
কোল্ড এবং ওয়ার্ম কাস্টমারদের কাছে সেল করাটা মূল উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের আস্থা জায়গা অর্জন করা। কাস্টমার একবার যখন আপনাকে আস্থার জায়গায় নিতে পারে পরবর্তী সময়ে সে বারবার আপনার থেকে কিনবে।
চ্যাটবট
খেয়াল করলে দেখা যায়, ওয়েবসাইট ভিজিটরের একটি বড় অংশ অনেক রাতে অথবা এমন কোন সময় আপনার সাথে যোগাযোগ করে যখন আপনি অ্যাভেলেবল নেই। সে ক্ষেত্রে ই-কমার্স ওয়েবসাইটে আপনি চ্যাটবট যুক্ত করে রাখুন।
একটি বিজনেসের কমন যে সকল জিজ্ঞাসা রয়েছে একটি চ্যাটবট অনায়াসে সেগুলোর সমাধান দিতে পারে।
এতে করে কাস্টমারকে তার জিজ্ঞাসার সমাধান পেতে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না।
আরো পড়ুনঃ
একটি সফল ই-কমার্স বিজনেস গড়ে তুলতে ৮ টি ব্র্যান্ডিং স্ট্রাটেজি এবং তার সঠিক ব্যবহার
পরিশেষে
আপনি এখন বুঝতে পেরেছেন ওয়েবসাইট ভিজিটরের ধরন গুলো সম্পর্কে। কোল্ড, ওয়ার্ম এবং হট ট্রাফিক আপনার বিজনেসের সাথে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কি আচরণ করে এবং কিভাবে ট্রাফিক টার্গেটিং এর জন্য তাদের আলাদা করবেন।
এটি একবার যখন আপনি ভালো ভাবে বুঝবেন ঠিক সেই মুহুর্তে থেকে আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর গুলোকে সঠিক লান্ডিং পেজে ডাইভার্ট করতে পারবেন।
কাস্টমার যদি তার বায়িংস্টেজ অনুসারে প্রাসঙ্গিক তথ্য পায় তবে সেই বিজনেস এর সাথে তার যুক্ত থাকার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে তারা আপনার বিজনেসের জন্য প্রফিটেবল কাস্টমার গ্রুপে পরিণত হয়।
সবার আগে মন্তব্য করুন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন
মন্তব্য করতে হলে আপনাকে লগ ইন করতে হবে।