২০১৩ সালে RetailMeNot “অফার” বিষয়ে একটা সার্ভে পরিচালনা করে, যেখানে ১০,০০৯ জন অংশগ্রহন করেছিলেন। এদের মধ্যে ৫১ % বলে অনলাইন কেনাকাটায় সিদ্ধান্ত গ্রহনে ডিস্কাউন্ট অফার তাদের প্রভাবিত করেছে।
কাস্টমারকে অফার দেবার আগে জানতে হবে কাস্টমার ভ্যালু জার্নি সম্পর্কে। একজন কাস্টোমার তাঁর বায়িং স্টেজের কোন কোন ধাপে কি ধরনের অফার পেলে প্রোডাক্ট কিনবে এবং আপনার লয়াল কাস্টমারে পরিণত হবে।
বাংলাদেশের হাতেগোনা কয়েকটি কর্পোরেট বাদে প্রায় অধিকাংশ ই-কমার্স উদ্যোক্তা কাস্টমার ভ্যালু জার্নি না বুঝেই ডিসকাউন্ট অফার দিয়ে থাকেন।
ফলে তাদের সেলস বাড়ে না উল্টো প্রফিটের পরিমাণ কমে যায়।
উপরের ছবিটি খেয়াল করুন, একজন ফার্স্ট টাইম কাস্টমার একটি ব্র্যান্ডের লয়াল কাস্টমার হওয়া পর্যন্ত যে ধাপগুলোর মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে, তার একটি চিত্র দেওয়া হয়েছে।
প্রতিটি ধাপে কাস্টমারদের প্রত্যাশা এবং চাহিদার মাত্রা ভিন্ন থাকে। তাদের আচরণে ভিন্নতা ও প্রত্যাশা বুঝে অফার দিলে সেটি অধিক কার্যকরী হয়।
কাস্টমারদের এখনই কিনতে উৎসাহিত করতে চাইলে কি ধরনের অফার দিবেন।
(এই অফারগুলো কাস্টমার ভ্যালু জার্নির যে ধাপগুলোকে প্রভাবিত করে )
- Convert- কাস্টমার প্রথমবারের মতো কেনাকাটা করে
- Aware- মনোযোগ আকর্ষণ করে
- Ascend – বর্তমান কাস্টমারও অফারগুলো পছন্দ করে
ট্রিপওয়ার অফার
এই অফারটি ফার্স্ট টাইম কাস্টমারদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে দুর্দান্ত এবং বরাবরই এটি তার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে।
কাস্টমারদের বেশি দামি প্রোডাক্টগুলো কম দামে অফার করা হয়। এতে করে কাস্টমার সেটি কিনতে উৎসাহিত বোধ করে।
সাধারনত এমন ধরনের প্রোডাক্ট অফার করা হয়, যে প্রোডাক্টগুলো সম্পর্কে তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। যেহেতু সে কম দামে প্রোডাক্ট পাচ্ছে তাই কাস্টমার অফারটি হারাতে চায় না।
এখানে এই অফারটি হচ্ছে কাস্টমারদের মনোযোগ আকর্ষণের কৌশল। এই অফারের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে প্রথমবারের জন্য কাস্টমারকে স্টোরে নিয়ে এসে কেনাকাটা করানো।
লোভনীয় অফার প্রদানের মাধ্যমে কাস্টমারের মনোযোগ আকর্ষণ করে কেনাকাটা সম্পন্ন করতে উৎসাহী করানো।
১। শুধুমাত্র শিপিং চার্জ পরিশোধ করার মাধ্যমে ফ্রী প্রোডাক্ট অফার
এই অফারে কাস্টমার শুধুমাত্র শিপিং চার্জ পরিশোধ করে ফ্রী প্রোডাক্ট পায়। ফ্রী প্রোডাক্টটির মূল্যমান এমন হয় যা বিজনেসের প্রমোশনাল ক্যাম্পেইনে জন্য নির্ধারিত বাজেটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থাৎ উদ্যোক্তা একজন কাস্টমারের বিপরীতে সেই অর্থ খরচ করতে সক্ষম।
কাস্টমার এখানে তার বেনিফিট দেখে। সে বিনামূল্যে প্রোডাক্ট পাচ্ছে তাই শিপিং চার্জ পরিশোধ করার জন্য তার দ্বিধা থাকে না।
২। নিত্য প্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট কম মূল্যে অফার
কিছু প্রোডাক্ট রয়েছে যা আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করি এবং সে জন্য অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করি না।
যখন সেই প্রোডাক্টগুলো আমাদের স্বল্পমূল্যে প্রদান করা হয় তখন আমরা সেটি কিনতে আগ্রহী হয়।
এটি মূলত প্রথমবার কাস্টমারকে একটি ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটায় প্রলুব্ধ করে।
৩। “ফ্রী ট্রায়াল” অফার
ডিজিটাল প্রোডাক্টের বিপননের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি জনপ্রিয়। একজন কাস্টমারকে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রথমবার বিনামূল্যে সার্ভিসটি উপভোগের জন্য দেয়া হয় এবং তাকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে পেইড কাস্টমারে কনভার্ট করানো হয়।
৪। কেনাকাটায় ফ্রী গিফট
ফ্রী পেতে কে না ভালবাসে আর এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে মার্কেটিয়ারেরা কাস্টমারদের কেনাকাটায় প্রলুব্ধ করে। আপনি যখন কিছু ফ্রী পাচ্ছেন অর্থাৎ সেটির জন্য মূল্য পরিশোধ করছেন না।
কাস্টমার এটিকে তার বেনিফিট হিসেবে দেখে। যদিও সবাই একই ধরনের প্রোডাক্ট বিক্রি করছে এবং আপনিও একই ধরনের প্রোডাক্ট বিক্রি করছেন পাশাপাশি কাস্টমারদের ফ্রী গিফট দিচ্ছেন।
তখন কাস্টমার আপনাকে সবার থেকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করে।
৫। নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট কিনলে গিফট
ধরুন, আপনি চান নির্দিষ্ট একটি ক্যাটাগরির প্রোডাক্ট সেল করতে। সেক্ষেত্রে সেই প্রোডাক্টগুলো কেনাকাটায় গিফট অফার করুন।
৬। কেনাকাটায় পছন্দের গিফট বেছে নেওয়ার সুযোগ
নিজে পছন্দ করার স্বাধীনতা কাস্টমারকে কেনাকাটায় সাচ্ছন্দ্য দেয়। কাস্টমার যখন আপনার স্টোর থেকে কেনাকাটা করে আপনি তাদের জন্য নির্ধারিত গিফটের অপশনটি খুলে দিন। যেন সে তার পছন্দের গিফটটি বেছে নিতে পারে।
৭। যেকোনো কেনাকাটায় গিফট
আপনি কাস্টমারদের বলুন স্টোরের যেকোনো প্রডাক্টের কিনলে তার জন্য রয়েছে গিফট। এটি আপনাকে প্রতিযোগিদের থেকে এগিয়ে রাখবে।
৮। টু-স্টেপ গিফট
এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক বায়াস। কাস্টমার প্রথমবার কেনাকাটা করলে কম গিফট পাবে, পরেরবার আবার কেনাকাটা করলে তার থেকে আরও বেশি গিফট পাবে।
দ্বিতীয়বার কেনাকাটায় গিফটের পরিমাণ বাড়িয়ে তার প্রথমবার কেনাকাটাকে নিশ্চিত করা যায় এবং দ্বিতীয়বার কেনাকাটায় তাকে আরও বেশি উৎসাহিত করা যায়।
অর্থাৎ আপনি একটি অফার ডিজাইনের মাধ্যমে দ্বিতীয় সেলটি নিশ্চিত করে নিতে পারেন।
ডিসকাউন্ট অফার
ডিসকাউন্ট অফারগুলো বরাবরই কাস্টমারদের মনোযোগ আকর্ষণ করে এসেছে এবং এটি এখনো কার্যকরী ভাবেই ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু কিভাবে ডিসকাউন্ট দিবেন সে প্রক্রিয়াটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
৯। ডিসকাউন্ট কোড
কাস্টমারদের সকল কেনাকাটার উপরে ডিসকাউন্ট কোড দিন। সেই কোডটি এপ্লাই করলে মোট মূল্যের উপর ডিসকাউন্ট পাবে।
১০। পার্সেন্টেজ বেইজড ডিসকাউন্ট
ডিসকাউন্টের পার্সেন্টেজ উল্লেখ করে দিন। এক্ষেত্রে সে যত বেশি বা কম কেনাকাটা করুক, একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে ডিসকাউন্ট পাবে।
১১। উপলক্ষ নিয়ে ডিসকাউন্ট
বিভিন্ন উৎসব ও উপলক্ষে ডিসকাউন্ট দিন। যেমন হলিডে শপিং, ফেষ্টিভেল ডিসকাউন্ট অফার ইত্যাদি। যেহেতু মানুষ বিভিন্ন উপলক্ষে কেনাকাটা করতে পছন্দ করে তাই এই উৎসব ও উপলক্ষে তারা কেনাকাটায় অফার পেলে আপনার স্টোরটি বেছে নিবে।
১২। গ্রুপ ডিসকাউন্ট
একই ধরনের প্রোডাক্ট কেনাকাটায় ডিসকাউন্ট দিন। যেমন ধরুন টয়লেট্রিজ আইটেম বা কিচেন আইটেম । যার টুথপেস্ট প্রয়োজন তার টুথব্রাশও প্রয়োজন হয়। আবার সে মাউথ ওয়াশও ব্যবহার করে।
এই তিনটি প্রোডাক্ট একসাথে করে গ্রুপে ডিসকাউন্ট দিন।
১৩। আগে আসলে আগে পাবেন
কাস্টমারদের মধ্যে কেনাকাটার প্রতিযোগিতা তৈরি করার মানসিকতা তৈরি করতে এই ডিসকাউন্ট কাজ করে।
আপনি প্রথম কাস্টমারের জন্য সর্বোচ্চ ডিসকাউন্ট অফার ঘোষণা করলে বেশি ডিসকাউন্ট পেতে কাস্টমার সবার আগে আপনার স্টোরে কেনাকাটা করতে প্রতিযোগিতা শুরু করে।
১৪। লিমিটেড টাইম ডিসকাউন্ট অফার
“ফিয়ার অফ মিসিং আউট” কৌশলের একটি দুর্দান্ত অফার, লিমিটেড টাইম ডিসকাউন্ট। শেষ হয়ে যাওয়ার ভয় কাস্টমারদের দ্রুত কেনাকাটা করাকে ত্বরান্বিত করে।
FOMO মার্কেটিং কৌশল বিষয়ে আরো পড়ুনঃ
FOMO (Fear of Missing Out) মার্কেটিং স্ট্রাটেজিঃ কীভাবে ই কমার্স সেলস বৃদ্ধি করতে পারেন?
১৫। ফ্রী শিপিং অফার
শপিং কার্ট ত্যাগ করার প্রবণতা কমাতে এই অফার যেখানে কাস্টমার শেষ মুহূর্তে এসে ডিসকাউন্টের মোহে পড়ে এবং কেনাকাটা সম্পন্ন করেন।
১৬। যেকোনো অর্ডারে ফ্রী শিপিং
প্রথম কাস্টমার আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাই যেকোনো কেনাকাটায় তাকে ফ্রী শিপিং অফার করতে পারেন।
১৭। নির্দিষ্ট মূল্যের কেনাকাটায় ফ্রী শিপিং
অনেকে নির্দিষ্ট করে দেয় একটি অ্যামাউন্ট যার উপরের যেকোন কেনাকাটায় শিপিং চার্জ ফ্রি করে দেওয়া হয়। এটি মূলত কাস্টমারদের একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকার কেনাকাটা করাতে ডিজাইন করা।
১৮। নির্দিষ্ট প্রোডাক্টে ফ্রী শিপিং
অনেক সেলার নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট ক্যাটাগরির উপরে ফ্রী শিপিং অফার করে অর্থাৎ তিনি চান সেই প্রোডাক্টগুলোই কাস্টমার বেশি বেশি কেনাকাটা করুক।
১৯। হারিয়ে ফেলার ভয় বাড়াতে করে অফার প্রদান
কাস্টমার তাঁর পছন্দের প্রোডাক্ট হারাতে চায় না। যদি তার অবচেতন মনে এই ধারণার উদ্ভব হয় যে, সে তার চাহিদার জিনিসটি হারিয়ে ফেলতে পারে তবে তার কেনাকাটার গতি তরান্বিত হয়।
ফ্ল্যাশ সেল, লিমিটেড টাইম অফার, লাস্ট স্টক, শেষ সুযোগ ইত্যাদি ধরনের অফার কাস্টমারের মনে হারিয়ে ফেলার প্রবণতাকে বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে কাস্টমার দ্রুততম সময়ে কেনাকাটা সম্পন্ন করে।
এভারেজ অর্ডার ভ্যালু বাড়াতে যে ধরনের অফার দিবেন
(এই অফারগুলো কাস্টমার ভ্যালু জার্নির যে ধাপগুলোকে প্রভাবিত করে )
- Convert – প্রথমবার কেনাকাটার পরিমাণ বাড়াতে
- Excite – পূর্বের কেনাকাটা তুলনায় বেশি কেনাকাটা করাতে
- Aware – মনোযোগ আকর্ষণ করতে
বান্ডেল অফার
একের অধিক প্রোডাক্ট একসাথে মিলিয়ে একটি অফার তৈরি করা হয় যা কাস্টমারের এভারেজ সেলস ভ্যালু বাড়িয়ে তোলে।
একবার আমি শপিংমলে বাজার করতে গিয়ে ঢুকতেই লক্ষ্য করলাম ডানপাশের থরে থরে প্রোডাক্ট সাজানো যার প্রতিটি প্রোডাক্ট অফারের।
কাছে গিয়ে দেখতেই খেয়াল করলাম, তিনটি, চারটি ও পাঁচটির নুডুলস প্যাকেট একসাথে বান্ডেল করে অফার দেওয়া হয়েছে। যত বেশি প্যাকেট এর বান্ডেল ততবেশি সেভিংস।
একটি নুডুলস এর প্যাকেট কিনলে খরচ করত ২৫ টাকা কিন্তু পাঁচটি নুডুলস এর প্যাকেট একসাথে অফার করা হয়েছে ৮৫ টাকা। ৪০ টাকার সেভিংস! আমি অফারটি নিলাম।
পরে ভেবে দেখলাম আমি এক প্যাকেট নুডুলস কিনতে গিয়ে ৫ প্যাকেট কিনে নিয়ে এসেছি। যা আমার এভারেজ এক্সপেন্ডিচার বাড়িয়ে দিয়েছে।
আর বিক্রেতা আমার কাছে একটির জায়গায় ৫ প্যাকেট নুডুলস বিক্রী করে তার এভারেজ সেলস ভ্যালু বাড়িয়েছে।
সাধারণত একই ধরনের প্রোডাক্টের কেনাকাটার পরিমাণ বাড়াতে এ ধরনের অফার ডিজাইন করা হয়।
কনজুমার আইটেমের ক্ষেত্রে এ ধরনের অফার বেশি প্রচলিত।
২১। আপসেল/ ক্রসসেল বান্ডেল অফার
ধরুন, কেউ একজন ব্রন নিরাময়ের লোশন কিনবে তাকে তাকে ফেসওয়াশ অফার করলেন। এটি ক্রস সেল বান্ডেল অফার।
একইভাবে লোশনের ভিন্ন ভিন্ন প্রাইস বা টাইপ একসাথে অফার করতে পারেন এটি আপসেল অফার।
২২। ওকেশনাল বান্ডেল
বিভিন্ন উৎসবে আমাদের গিফট পাওয়া ও দেয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে ওকেশনাল বান্ডল অফার আমাদের এই ঝামেলা থেকে মুক্তি দেয়।
ধরুন হলিডে বান্ডেল অফারে একই ধরনের আইটেম একসাথে কম মূল্য প্রদান করছেন। একজন কাস্টোমার অফারটির মাধ্যমে প্রোডাক্ট কিনলে তার গিফট দেবার খরচ অনেকটাই কমে যায়।
২৩।কোয়ান্টিটি ডিসকাউন্ট
আপনি যত বেশি কেনাকাটা করবেন, তত বেশি ডিসকাউন্ট পাবেন।
২৩। বিভিন্ন স্তরে অফার
কেনাকাটার একটি নির্দিষ্ট গণ্ডি অতিক্রম করলে পাবেন কেনাকাটার পরিমাণ ভেদে ডিস্কাউন্ট।
যেমন, আপনি ১০% ডিসকাউন্ট পাবেন যদি ২০০ টাকার কেনাকাটা করেন, ২০% পাবেন যদি ৪০০ টাকার কেনাকাটা করেন, ৩০% দিস্কাউন্ট পাবেন যদি ৮০০ টাকার কেনাকাটা করেন।
অর্থাৎ আপনাকে ডিসকাউন্ট পাবার পরিমাণ বাড়ার হলে কেনাকাটার পরিমাণ বাড়াতে হবে।
২৪। কেনাকাটার পরিমাণের সাথে ফ্রী গিফট
যদি কেউ একটি আইটেম কেনেন তবে একটি মগ ফ্রী। যদি দুইটি আইটেম কেনে তবে মগের সাথে কম্প্লিমেন্টারি কফি। যদি তিনটি আইটেম কেনে তবে একটি হ্যান্ডব্যাগের সাথে একটি মগ ফ্রী।
এ ধরনের অফার গিফট পাবার আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে কেনাকাটার পরিমাণ কে বাড়িয়ে তোলে।
২৫। কমিউনিটি বেজড ডিসকাউন্ট
এ ধরনের অফার ডিজাইন করা হয় কাস্টমারদের বেশি পরিমাণে কেনাকাটা করাতে।
অফারের ধরন হয় এমন, যদি আপনি ২০টি আইটেম একসাথে কেনেন তবে আপনার দাম পড়বে প্রতি আইটেমের জন্য ১০ টাকা। যদি আপনি ৪০টি আইটেম কেনাকাটা করেন তবে প্রতিটি আইটেমের জন্য আপনার দাম পড়বে ৫ টাকা।
অর্থাৎ পরিমানে যত বেশি কেনাকাটা করবেন প্রোডাক্টের ইউনিট প্রাইস তত কমতে থাকবে। কাস্টমারকে প্রোডাক্টের ইন্ডিভিজুয়াল প্রাইস কম দেখিয়ে কেনাকাটা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়।
২৬। মূল্য এবং ফিচারে অনুপাতে ডিসকাউন্ট
মোবাইল ফোনে এ ধরনের অফার আমরা প্রায়ই দেখে থাকি। ধরুন একটি মোবাইল কোম্পানি একটি হ্যান্ডসেট লঞ্চ করেছে যার মূল্য ১০,০০০ টাকা কিন্তু আপনি যদি ১২০০০ টাকা খরচ করেন তবে তার থেকে বেশি ফিচার সম্বলিত আরেকটি হ্যান্ডসেট পাবেন।
সেক্ষেত্রে আপনাকে আরও ২ হাজার টাকা বেশি খরচ করতে হবে এবং তার বিপরীতে আপনি আরো কি কি অতিরিক্ত ফিচার পাবেন সেটি প্রদর্শন করা হয়।
কাস্টমার লাইফটাইম ভ্যালু বাড়াতে হলে কি ধরনের অফার দিবেন?
(এই অফারগুলো কাস্টমার ভ্যালু জার্নির যে ধাপগুলোকে প্রভাবিত করে )
- Ascend – কাস্টমারদের বারবার কেনাকাটা করতে আগ্রহী করে তুলতে
- Advocate – কাস্টমার রিভিউ পেতে এবং আরো বেশি কেনাকাটা করাতে
- Promote – রেফারেল প্রোগ্রাম সফল করতে এবং আরো বেশি কাস্টমার পেতে
রবিন একটি কফিশপে গিয়েছিল প্রতিদিনের মতোই কফি পান করার জন্য। সে একটি কফি অর্ডার করলো এবং সেটি উপভোগ করলো। বিল দেওয়ার সময় ওয়েটার বিলের সাথে তাকে একটি ভাউচার কার্ড দিয়ে গেল।
রবিন ওয়েটারকে জিজ্ঞেস করল ভাউচার কার্ড কেন? ওয়েটার জবাবে বলল আমাদের কফি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে এর পরের বার যখন আসবেন ভাওচার দেখালে ১৫% ছাড় পাবেন।
এভাবে, রবিন যতবার সেই কফি শপে গিয়েছিল তাকে বিভিন্ন এমাউন্টের কোন ভাউচার দেওয়া হয়েছিল। এবং সে তার কফি খাবার খরচ বাঁচাতে সেই কফি শপকেই বারবার বেছে নিয়েছে।
২৭। সাবস্ক্রাইব এবং সেভ
এ ধরনের অফার এমন হয়, আপনি পুরো টাকা পরিশোধ করে কেনাকাটা করবেন অথবা সেলারের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল লাইক সাবস্ক্রাইব করলে আপনি ডিসকাউন্ট পাবেন।
এটি মূলত করা হয় সেলস চ্যানেলগুলোর সাথে কাস্টমারদের এঙ্গেজ করে রেখে বিভিন্ন অফার ডিসকাউন্ট প্রমোশনাল অ্যাক্টিভিটিজ চালিয়ে তাকে বারবার কেনাকাটা করতে আগ্রহী করে তুলতে।
২৮। লয়ালটি প্রোগ্রাম
কাস্টমারদের দীর্ঘ সময় ধরে ব্র্যান্ডের প্রতি আগ্রহী করে রেখে বারবার কেনাকাটা করাতে লয়ালটি প্রোগ্রামের কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে অফার ডিজাইন করা হয় এমনভাবে যেখানে কাস্টমারদের দীর্ঘমেয়াদি কেনাকাটা করার জন্য সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়।
যেমন ফ্রী ডেলিভারি চার্জ। কাস্টমারদের কেনাকাটায় ডেলিভারি চার্জ লাগবে না, এটি একটি কাস্টমারকে বারবার কেনাকাটা করতে আগ্রহী করে তুলতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
২৯। কাস্টমার অ্যাপ্রিসিয়েশন
এ ধরনের অফারে সাধারণত বলা হয় নতুন কোন অফার আসার সাথে সাথে নির্দিষ্ট কিছু কাস্টমার সবার আগে সেটি গ্রহণ করতে পারবে, তারপরে অন্যরা সে অফারের সুবিধা পাবে।
এখানে কাস্টমারকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায় অফার কালীন সময়েও কাস্টমার বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে। যেমন ফ্লাশ সেল চলাকালীন সময়ে কেনাকাটা করলেও তার জন্য ডেলিভারি চার্জ ফ্রি।
কাস্টমারদের কেনাকাটায় ঝুঁকি কমিয়ে যে সকল অফার দেয়া হয়
(এই অফারগুলো কাস্টমার ভ্যালু জার্নির যে ধাপগুলোকে প্রভাবিত করে )
- Engage – ঝুঁকি কমানো ও নিরাপত্তা প্রদান
- Convert – প্রতিশ্রুতি প্রদান করতে
- Ascend – বিশ্বাস এবং অনুগত তৈরি করতে
একটি কম্পিউটার মনিটর কেনার জন্য একসাথে ৪০,০০০ টাকা খরচ করা সবার জন্য সহজ হয়না। যখন কাস্টমারদের কিস্তি সুবিধা প্রদান করা হয়, তখন সবার জন্য কেনা তুলনামূলকভাবে আরো সহজ হয়ে যায়।
পাশাপাশি যদি মানিব্যাক গ্যারান্টি বা এক্সচেঞ্জ অফারের মত সুযোগ থাকে, তবে কাস্টমারদের কেনাকাটার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
৩০। কিস্তিতে পরিশোধ
অনেক ব্র্যান্ড তাদের কাস্টমারের জন্য কিস্তি সুবিধা অফার করে। এর কারণ হচ্ছে কেনাকাটার কাস্টমারদের পারচেস পেইন কমানো। খরচকে সহজ করে একসাথে বেশি খরচের ঝুঁকিকে কমিয়ে ফেলা।
৩১। মানিব্যাক গ্যারান্টি
এই অফারটিও কাস্টমারদের ঝুঁকির পরিমাণ কমিয়ে দেয়। একটি প্রোডাক্ট কেনার পরে যদি আপনার সেটি কাজে না আসে বা সেটা থেকে কোন উপযোগিতা না পান তবে সেটি ফেরত দিয়ে সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত পাবার প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়।
এটি কেনাকাটায় কাস্টমারের ঝুঁকি নেওয়ার ভয়কে প্রশমিত করে এবং কেনাকাটায় স্বস্তি প্রদান করে।
৩২। ফ্রী এক্সচেঞ্জ
এই অফারটিও কাস্টমারদের কেনাকাটার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। একটি প্রোডাক্ট কেনার পর যদি মনে হয়, সেটি নয় বরং অন্য একটি প্রোডাক্ট আপনার প্রয়োজন ছিল, তবে অনায়াসেই শর্তসাপেক্ষে প্রোডাক্ট পরিবর্তন করে নিতে পারেন।
৩৩। দীর্ঘমেয়াদী গ্যারান্টি এবং ওয়ারেন্টি
টাকা খরচ করে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কিনলাম কিন্তু এর সুফল আমি কতদিন পাব? এ ধরনের চিন্তা থেকে অনেক সময় আমরা কেনাকাটা তে আগ্রহ বোধ করিনা।
কিন্তু যখন একটি ব্র্যান্ড আপনাকে দীর্ঘমেয়াদি গ্যারান্টি এবং ওয়ারেন্টি প্রদান করে, ঠিক সে সময় কাস্টমার সেটি কিনতে সাহসী হয়ে ওঠে। কারণ কাস্টমার সেই প্রোডাক্টের বিপরীতে অর্থের নিরাপত্তা পায়।
আপনার ই-মেইল লিস্ট সমৃদ্ধ করতে হলে যে ধরনের অফার গুলো দিবেন
(এই অফারগুলো কাস্টমার ভ্যালু জার্নির যে ধাপগুলোকে প্রভাবিত করে )
- Subscribe – কাস্টমার অফার পেতে চ্যানেলটি সাবসস্ক্রাইব করে
- Convert – কাস্টমার কেনাকাটা করে এবং অফার পায়
- Ascend – কাস্টমার আপনার ব্র্যান্ডকে ভালবাসে এবং বারবার কেনাকাটা করে
৩৪। ওয়েলকাম ইমেইলে সাইন আপ করলে ডিসকাউন্ট
কাস্টমার যখন আপনার প্রথম ওয়েলকাম ইমেইলটি পাই তখন কমিউনিটি তে যোগ দিলে তাঁর জন্য ডিসকাউন্ট থাকে। এ ধরনের ডিসকাউন্ট অফার আপনার ফ্যান বেজ বা কাস্টমার কমিউনিটিকে বাড়াতে সহায়তা করে।
৩৫। কুইজ বা গেমের মাধ্যমে অফার
অনেক কাস্টমার ইমিডিয়েটলি আপনার স্টোর থেকে কেনাকাটা করবে না বা এখনো করেনি তাদের ফিউচারে কেনাকাটা করাতে আগ্রহী করতে বিভিন্ন কুইজ গেম এর মাধ্যমে বিজয়ীদের ডিসকাউন্ট দিতে পারেন।
এতে তারা যখনই কেনাকাটা করবে আপনাকে বেছে নেয়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি থাকবে।
৩৬। প্রতিযোগিতা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফলোয়ার বা ইমেইল লিস্টে সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা বাড়াতে প্রতিযোগিতা অনন্য ভূমিকা পালন করে।
যেখানে বিজয়ীদের পুরস্কার ঘোষণা করা হয় তবে অবশ্যই সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হলে ব্র্যান্ডটির সামাজিক মাধ্যম বা ইমেইল সাবস্ক্রাইব করতে হবে।
এতে আপনার ব্র্যান্ড এক্সপোজার অনেকাংশে বেড়ে যায়।
রেফারেল প্রোগ্রামকে উন্নত করতে যে ধরনের অফার দেয়া হয়
(এই অফারগুলো কাস্টমার ভ্যালু জার্নির যে ধাপগুলোকে প্রভাবিত করে )
- Advocate – কাস্টমারদের প্রশংসা করে, যা অন্য কাস্টমারদের কেনাকাটার সাহসী করে
- Promote – কাস্টমার তার নিজস্ব নেটওয়ার্কে আপনার বিজনেস প্রমোট করে
- Ascend – কাস্টমার নিয়মিত পরিচিতদের পরামর্শ পায় এবং কেনাকাটায় উৎসাহিত হয়
- Aware – কাস্টমার একটি ব্র্যান্ড নিয়ে তার পরিচিতদের থেকে মতামত, অভিজ্ঞতার পোস্টগুলো দেখতে পায় ও সেই ব্র্যান্ড সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
৩৭। টেস্টিমোনিয়াল অফার
কাস্টমারদের বলা হয় সেই ব্র্যান্ড সম্পর্কে পজিটিভ মতামত প্রদান করতে তাহলে সে অফার বা ডিসকাউন্ট পাবে।
এটি করা হয় কারণ কাস্টমার টেস্টিমনিয়াল সবথেকে পাওয়ারফুল প্রমোশনাল অফার ও কাস্টমারের কাছে সহজে বিশ্বাসযোগ্য।
৩৮। রেফারেল কোড
রেফারেল কোড ব্যবহার করা হয় যখন একজন কাস্টমার সার্ভিসে সন্তুষ্টি পোষণ করে এবং সে চায় তার পরিচিত সকলে এই প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ব্যবহার করুক।
তার রেফারেন্সে অন্য কেউ প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কিনলে বিপরীতেও সে নিজেও লাভবান হয় ।
পরিশেষে,
কাস্টমার ভ্যালু জার্নি সম্পর্কে বোঝা অফার ও ডিসকাউন্ট দেয়ার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ব্র্যান্ডের সাথে কাস্টমারের এঙ্গেজমেন্টের ধরন অনুযায়ী ডিজাইন করা অফার সবচেয়ে কার্যকরী ফলাফল নিয়ে আসে।
আপনি কী অফার দেবার সময় কাস্টমার ভ্যালু জার্নি বিবেচনা করেন? কোন অফারগুলো থেকে আপনি সবচেয়ে ভালো সাড়া পেয়েছিলেন? আপনার অভিজ্ঞতা জানিয়ে কমেন্ট করুন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন
আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন