ইমেইল কি? প্রফেশনাল ইমেইলে লেখার নিয়ম

ইমেইল কি? প্রফেশনাল ইমেইলে লেখার নিয়ম
শেয়ার করুন

বর্তমান ডিজিটাল যুগে যোগাযোগের অন্যতম প্রফেশনাল পদ্ধতি হলো ইমেইল। অফিসিয়াল ডকুমেন্ট থেকে শুরু করে, জব এপ্লিকেশন্স ক্লায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগ কিংবা বিজনেস ডিল, সব ক্ষেত্রেই ইমেইলের গুরুত্ব অপরিসীম। 

এই ব্লগে আমরা সহজভাবে আলোচনা করবো, ইমেইল আসলে কী, এটি কীভাবে কাজ করে এবং একটি প্রফেশনাল ইমেইল লেখার বিষয়বস্তু সম্পর্কে। আশা করছি ই-মেইলিং এর খুঁটিনাটি জানতে এই আলোচনাটি আপনার জন্য বেশ উপকারী হবে। তাহলে চলুন, শুরু করি।

ই মেইল কি?

ই মেইল (Email) বা ইলেকট্রনিক মেইল হলো একটি ডিজিটাল ইনফরমেশন কমিউনিকেশন সিস্টেম। এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে খুব সহজেই এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির সঙ্গে তথ্য, বার্তা, ছবি বা ডকুমেন্ট আদান-প্রদান করতে পারে। এটি মূলত চিঠি লেখার আধুনিক এক রূপ। তবে ইমেইল হাতে লেখা চিঠির তুলনায় অনেক দ্রুত, এবং সময়সাশ্রয়ী। 

Email শব্দটি এসেছে Electronic Mail থেকে। অর্থাৎ, এটি একটি বৈদ্যুতিক বা ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশন সিস্টেম। এটি প্রথম জনপ্রিয় হয় ১৯9০-এর দশকে। আর আজ এটি অফিস, শিক্ষা, ব্যবসায় ও ব্যক্তিগত যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম।

ইমেইল শব্দের সঠিক বানান

বাংলা ভাষায় ‘Email’ শব্দটি লিখতে গিয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হন বানান নিয়ে। কেউ লেখেন ইমেইল, কেউ ই-মেইল, আবার কেউ ইমেল। তবে সবচেয়ে প্রচলিত ও গ্রহণযোগ্য বানান হলোঃ ইমেইল বা email, তবে ই-মেইল বা E-mail লেখাটিও সঠিক এবং বহুল ব্যবহৃত। 

ইমেইলের ইতিহাস

১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে, যখন কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তি ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছিল তখন ইমেইলের ইতিহাস শুরু হয় । প্রথমদিকে এটি ছিল শুধুই একটি পরীক্ষামূলক যোগাযোগ পদ্ধতি, যা একই কম্পিউটার বা একই সার্ভারে থাকা ইউজারদের মধ্যে বার্তা পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হতো।

১৯৭১ সালে আমেরিকান প্রকৌশলী Ray Tomlinson আধুনিক ইমেইল ব্যবস্থার সূচনা করেন এবং তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে বার্তা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি ইমেইলের প্রাপক ও ডোমেইন আলাদা করতে ‘@’ চিহ্নটি ব্যবহার করেন। এই ‘@’ চিহ্নই পরবর্তীতে ইমেইলের অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠে।

এরপর ১৯৯০-এর দশকে ইন্টারনেটের বিস্তার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে ইমেইল হয়ে ওঠে সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিজিটাল কমিউনিকেশন সিস্টেম। আজকে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন Gmail, Yahoo, Outlook-এর মতো অসংখ্য ইমেইল সার্ভিস ব্যবহার করছেন।

ইমেইল এর ব্যবহার

ইমেইল এর ব্যবহার

ইমেইল আমাদের জীবনের নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যক্তিগত যোগাযোগের পাশাপাশি এটি অফিস, শিক্ষা, ব্যবসায় ও প্রশাসনিক কাজেও বহুল ব্যবহৃত। নিচে ইমেইলের কিছু সাধারণ ও বিশেষ ব্যবহারের দিক তুলে ধরা হলোঃ 

ব্যক্তিগত যোগাযোগেঃ বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিতজনদের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ ও ছবি, ভিডিও বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করতে ইমেইল একটি নিরাপদ মাধ্যম।

অফিসিয়াল ও কর্পোরেট কাজঃ চাকরির আবেদন, রেজুমে পাঠানো, মিটিংয়ের সময়সূচি জানানো, কাজের অগ্রগতি রিপোর্ট করা বা ক্লায়েন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ- সবক্ষেত্রেই প্রফেশনাল ইমেইলের ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি।

শিক্ষাক্ষেত্রেঃ শিক্ষক-শিক্ষার্থী বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ। এছারাও শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়া বা অন্য যেকোনো ডকুমেন্টের কাজেও ইমেইল নিয়মিত ব্যবহৃত হয়।

ব্যবসায়িক কাজেঃ পণ্য বা সেবার প্রচার, ইনভয়েস পাঠানো, অর্ডার কনফার্মেশন, পার্টনারশিপ আলোচনা, মার্কেটিং ক্যাম্পেইন ইত্যাদি ব্যবসায়িক কাজে বর্তমানে ইমেইল অপরিহার্য।

নোটিফিকেশন ও সিকিউরিটিঃ বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্যবহার করার সময় ওটিপি (OTP) ও পাসওয়ার্ড রিসেট লিঙ্ক ইমেইলের মাধ্যমেই পাঠানো হয়। 

প্রফেশনাল ইমেইল লেখার নিয়ম

একটি প্রফেশনাল ইমেইল লেখার সময় কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করা উচিত। নিচে ধারাবাহিকভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লেখার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলোঃ 

১. বিষয় (Subject) লাইন স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত রাখুন

ইমেইলের বিষয় (Subject) লাইনই প্রথমেই চোখে পড়ে। তাই এটিকে সংক্ষেপে স্পষ্টভাবে লিখুন যাতে প্রাপক প্রথমেই বুঝতে পারেন ইমেইলটি কী বিষয়ে। উদাহরণস্বরূপMeeting Request: Marketing Plan Discussion এভাবে লিখবেন,  Hi বা Please read জাতীয় কিছু সাবজেক্টে লিখবেন না। 

২. সম্বোধন করুন

ইমেইলের শুরুতে প্রাপককে সম্মানজনকভাবে সম্বোধন করুন।
যেমন:

  • Dear Sir/Madam,
  • Respected Manager,
  • Hello Mr. Rahman,

৩. ভূমিকা ও মেসেজ স্পষ্ট রাখুন 

যদি নতুন হন, তবে ইমেইলের শুরুতে সংক্ষেপে নিজের পরিচয় দিন। তারপর মূল বিষয় স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করুন। এক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক কথা পরিহার করুন।

৪. বিনয়ের ভাষা ব্যবহার করুন

প্রফেশনাল ইমেইলের ভাষা সবসময় ভদ্র, নম্র এবং বিনয়পূর্ণ হওয়া উচিত। কমান্ডিং টোন ইউজ না করে সহযোগিতামূলক টোন বজায় রাখুন।

যেমন:

  • Could you please confirm…
  • I would appreciate it if…

৫. গঠনবিন্যাস ঠিক রাখুন

ইমেইল কয়েকটি ছোট প্যারাগ্রাফে ভাগ করে লিখুন। প্রতিটি অনুচ্ছেদে একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট উপস্থাপন করলে বুঝতে সুবিধাজনক হবে। 

৬. সমাপ্তি যুক্ত 

ইমেইলের শেষে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করুন এবং প্রফেশনালভাবে বিদায় জানান।

যেমন:

  • Thank you for your time.
  • Best regards,
  • Sincerely,
  • Regards,

এরপর নিজের নাম, পদবি এবং যোগাযোগের তথ্য দিন।

৭. বানান ও ব্যাকরণ যাচাই করুন

ইমেইল পাঠানোর আগে অবশ্যই বানান ও ব্যাকরণ ভালো করে চেক করে নিন। এক্ষত্রে প্রয়োজনে গ্রামার চেকার টুল ব্যবহার করতে পারেন।

বাংলায় ইমেইল লেখার নিয়ম

বাংলায় ইমেইল লেখার ক্ষেত্রে অনেকেই দ্বিধায় পড়েন। কীভাবে শুরু করবেন কিংবা কোন শব্দগুলো প্রফেশনাল মনে হবে তা অনেকেই জানে না। যদিও বাংলা আমাদের ভাষা, তবে প্রফেশনাল ইমেইল লেখার সময় কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা জরুরি। নিচে বাংলায় প্রফেশনাল ইমেইল লেখার কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম তুলে ধরা হলোঃ 

১. সাবজেক্ট লাইন 

আপনার ইমেইলের সাবজেক্ট সবসময় সংক্ষিপ্ত ও অর্থবহ রাখুন যেমনঃ ‘সাক্ষাৎকারের সময়সূচি জানানো’ ‘প্রেজেন্টেশনের স্লাইড জমা সংক্রান্ত’ এভাবে। 

২. শুদ্ধ ও প্রমিত বাংলা ব্যবহার করুন

আঞ্চলিক বা কথ্য বাংলা নয়, বরং প্রমিত এবং শুদ্ধ বানানে লেখা ব্যবহার করুন। যেমনঃ
আপনার সময় পেলে বিষয়টি আলোচনা করতে চাই।

৩. সম্বোধন 

সম্মানজনক সম্মোধন ব্যবহার করুন। যেমনঃ

  • মাননীয় স্যার,
  • প্রিয় মহোদয়/মহোদয়া,
  • শ্রদ্ধেয় শিক্ষক,

৪. সরাসরি বক্তব্য 

অপ্রয়োজনীয় কথা এড়িয়ে সংক্ষেপে আপনার উদ্দেশ্য স্পষ্ট করুন। যেমন: ‘আমি আগামীকাল দুপুর ৩টায় অনলাইনে সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে প্রস্তুত আছি।’

৫. সমাপ্তি 

উপযুক্ত সমাপ্তি দিন। যেমনঃ

  • ধন্যবাদান্তে,
  • সদয় বিবেচনার অনুরোধ রইল,
  • শ্রদ্ধাসহ,
  • আপনার বিশ্বস্ত,
    পরিশেষে নিজের নাম, পদবি (প্রয়োজনে), এবং যোগাযোগের তথ্য লিখুন।

৬. বানান ও ভাষা যাচাই 

ইমেইল পাঠানোর আগে একবার বানান ও ভাষা মিলিয়ে দেখুন। এক্ষেত্রে অনলাইন বাংলা স্পেলচেকার ব্যবহার করতে পারেন।

ইমেইলের সুবিধা

বর্তমানে ইমেইল আধুনিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ব্যক্তিগত, পেশাগত ও শিক্ষাগত – সব ক্ষেত্রেই ইমেইল ব্যবহারের সুবিধা অসংখ্য। নিচে ইমেইলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা তুলে ধরা হলোঃ

  • ইমেইলের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো মুহূর্তের মধ্যেই বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায় পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে। 
  • ইমেইল পাঠাতে আলাদা খরচ লাগে না। শুধু ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই হয়। 
  • CC ও BCC অপশন ব্যবহার করে একটি ইমেইল একসঙ্গে অনেকজনকে পাঠানো যায়। 
  • ইমেইলের মাধ্যমে আপনি টেক্সট, ছবি, পিডিএফ, ভিডিও বা অন্যান্য ফাইল খুব সহজে পাঠাতে পারেন।
  • ইমেইল পাঠানো ও গ্রহণের সময়, তারিখ ও কনটেন্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষিত থাকে। 
  • ইমেইল ব্যবহার করে আপনি একটি আনুষ্ঠানিক ও পেশাদার যোগাযোগ বজায় রাখতে পারেন।  

ইমেইলের অসুবিধা

ইমেইল যেমন আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করেছে, তেমনি এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। নিচে ইমেইলের কিছু সাধারণ সীমাবদ্ধতা তুলে ধরা হলোঃ

  • প্রতিদিন অসংখ্য অবাঞ্ছিত ইমেইল (Spam) ইনবক্সে জমা হয়। অনেক সময় এগুলোর মধ্যে স্ক্যাম বা ক্ষতিকর লিংকও থাকে।
  • ইমেইল ব্যবহার করতে ইন্টারনেট প্রয়োজন। ইন্টারনেট না থাকলে আপনি ইমেইল পাঠাতে বা পড়তে পারবেন না।
  • ইমেইলের মাধ্যমে হ্যাকিং, ফিশিং বা ম্যালওয়্যার আক্রমণের ঝুঁকি থাকে। 
  • অসাবধানতায় সংবেদনশীল তথ্য চলে যেতে পারে সাইবার অপরাধীদের হাতে।
  • ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগে আবেগ বা ব্যক্তিত্ব প্রকাশ অনেক সময় ঠিকভাবে হয় না। সরাসরি কথা বলার আন্তরিকতা এখানে অনেকটা অনুপস্থিত থাকে।
  • একজন কর্মজীবী ব্যক্তি প্রতিদিন শতাধিক ইমেইল পেতে পারেন। সব ইমেইলের জবাব দেওয়া অনেক সময় কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে।

ইমেইল ব্যবহারের নিয়মাবলী

ইমেইল ব্যবহার করতে জানাটা এখন ডিজিটাল যুগের মৌলিক দক্ষতার অংশ। অনেকেই শুধুমাত্র ইমেইল খুলেই থেমে যান, কিন্তু সঠিকভাবে ব্যবহার না জানার কারণে অনেক সুযোগ হাতছাড়া হয়। নিচে সহজ ভাষায় ইমেইল ব্যবহারের কিছু নিয়মাবলী তুলে ধরা হলোঃ

ইমেইল চেক করার নিয়ম

প্রতিদিন ইমেইল চেক করা একটি ভালো অভ্যাস। ইমেইল চেক করতে হলেঃ 

১. মোবাইল অ্যাপ (যেমন: Gmail, Outlook, Yahoo Mail) বা ওয়েব ব্রাউজারে গিয়ে ইমেইল প্রভাইডারের হোম পেইজ যেমন গুগলের ক্ষেত্রে mail.google.com-এ প্রবেশ করুন।

২. আপনার ইমেইল আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

৩. Inbox-এ আপনার পাওয়া সব ইমেইল দেখতে পাবেন।

৪. নতুন ইমেইল থাকলে “Unread” হিসেবে চিহ্নিত থাকবে, এবং ওপরে নীল বা মোটা অক্ষর দেখাবে।

ইমেইলে ছবি দেখার নিয়ম

ইমেইলে কেউ ছবি পাঠালে তা দেখতেঃ 

১. সংশ্লিষ্ট ইমেইলটি ওপেন করুন

২. যদি ছবি লোড না হয়, তাহলে “Show pictures” অপশনটিতে ক্লিক করুন।

৩. ছবি ইনলাইন হিসেবে ইমেইলের মধ্যে দেখাবে, অথবা আলাদা অ্যাটাচমেন্ট (Attachment) আকারেও থাকতে পারে।

ইমেইল আইডি ডিলিট করার নিয়ম

আপনি যদি আপনার Gmail আইডি চিরতরে ডিলিট করতে চান, তাহলেঃ 

১. ব্রাউজারে গিয়ে https://myaccount.google.com এ যান।

২. Data & Privacy অপশন এ ক্লিক করুন।

৩. নিচে স্ক্রল করে “Delete a Google service” বা “Delete your Google Account” অপশনটি খুঁজে বের করুন।

৪. এরপর Gmail-এর পাশে থাকা ডিলিট আইকনে ক্লিক করে নির্দেশনা অনুসরণ করুন।

৫. কনফার্মেশনের জন্য আপনার পাসওয়ার্ড ও ব্যাকআপ ইমেইল/ফোনে পাঠানো কোড লাগবে।

ইমেইল পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে কী করব

আপনার ইমেইল পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে চিন্তার কিছু নেই। নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করে পাসওয়ার্ড পুনরুদ্ধার করতে পারবেনঃ 

১. ইমেইল লগইন পেজে গিয়ে “Forgot password?” বা “পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?” অপশনটি ক্লিক করুন।

২. আপনার ইমেইল আইডি লিখে “Next” ক্লিক করুন।

৩. এরপর বিকল্প ফোন নম্বর, ব্যাকআপ ইমেইলে পাঠানো কোড দিয়ে বা সিকিউরিটি কোশ্চেনের মাধ্যমে পরিচয় যাচাই করুন।

৪. আপনার আইডেন্টিটি কনফার্ম হলে নতুন পাসওয়ার্ড সেট করার অপশন পাবেন।

ইমেইল এড্রেস লেখার নিয়ম

একটি ইমেইল এড্রেস (Email Address) লেখা সহজ মনে হলেও, এটি লিখতে সামান্য ভুল হলেও ইমেইল পাঠানো যাবে না। 

  • ইমেইল এড্রেস সবসময় ইংরেজি ছোট হাতের (lowercase) বর্ণে লিখতে হবে। যেমন: [email protected]
  • ফাঁকা জায়গা (space), কমা (,), প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না।
  • নতুন ইমেইল এড্রেস বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনি সংখ্যা, ডট (.), আন্ডারস্কোর (_) ব্যবহার করতে পারেন, তবে অতিরিক্ত ব্যবহার করা উচিত নয়।

একটি ইমেইল এড্রেস সাধারণত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিতঃ 

একটি ইমেইল এড্রেস সাধারণত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত

১. Local Part (ব্যক্তিগত অংশ): এটি @ চিহ্নের আগের অংশ। যেমন – deshicommerce।
এখানে আপনার নাম, প্রতিষ্ঠানের নাম বা অন্য যেকোনো ব্যবহারকারী আইডি থাকতে পারে।

২. @ চিহ্ন (At Symbol): ইমেইল ঠিকানার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন এটি। ‘@’ চিহ্ন লোকাল পার্ট ও ডোমেইনের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে।

৩. Domain Part (ডোমেইন অংশ): এটি @ চিহ্নের পরের অংশ। যেমন – gmail.com। এখানে ইমেইল সার্ভিসের নাম থাকে, যেমন Gmail, Yahoo, Outlook ইত্যাদি।

একটি ইমেইল পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়া 

ইমেইল পাঠানো এখনকার দিনে অত্যন্ত সহজ। নিচে ধারাবাহিকভাবে পুরো প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করা হলোঃ 

১। প্রথমেই mail.google.com, outlook.com বা আপনার ব্যবহার করা ইমেইল সার্ভিস সাইটে যান।

২। আপনার ইমেইল ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

৩। Gmail বা অন্য যেকোনো ইমেইল সার্ভিসে “Compose”, “New Mail” বা “লিখুন” নামে একটি অপশন থাকে।

৪। সেখানে ক্লিক করলে একটি নতুন ইমেইল লেখার খালি ফর্ম খুলে যাবে।

৫। To ঘরে আপনি যার কাছে ইমেইল পাঠাতে চান, তার সঠিক ইমেইল অ্যাড্রেস টাইপ করুন।

৬। একইসঙ্গে আরও কাউকে কপি (CC) বা ব্লাইন্ড কপি (BCC) পাঠাতে চাইলে সেই ঘরগুলোতেও ইমেইল অ্যাড্রেস দিতে পারেন।
৭। Subject ঘরে সংক্ষিপ্তভাবে ইমেইলটি কোন বিষয়ে, তা লিখুন। যেমন: চাকরির আবেদন, মিটিংয়ের সময়সূচি, রিপোর্ট জমা সংক্রান্ত, ইত্যাদি। 

৮। এবার নিচের বড় অংশে আপনার মূল মেসেজটি টাইপ করুন।

৯। যদি কোনো ছবি, সিভি, পিডিএফ বা অন্যান্য ফাইল পাঠাতে চান, তাহলে Attach আইকনে ক্লিক করুন।

১০। ফাইল সিলেক্ট করে আপলোড করুন।

১১। সবকিছু ঠিকভাবে লেখা হলে নিচে বা পাশে থাকা “Send” বা “পাঠান” বাটনে ক্লিক করুন।

আপনার ইমেইলটি সাথে সাথেই প্রাপকের ইনবক্সে পৌঁছে যাবে। ইমেইল পাঠানোর পর আপনি “Sent” ফোল্ডারে গিয়ে আপনার পাঠানো মেইলগুলো দেখতে পারবেন।

বিভিন্ন ধরনের ইমেইল পরিষেবার তালিকা

বর্তমানে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ বিভিন্ন ইমেইল পরিষেবা (Email Service) ব্যবহার করে যোগাযোগ, ডকুমেন্ট শেয়ারিং ও তথ্য আদান-প্রদান করছে। ইমেইল সেবাগুলো মূলত দুটি ক্যাটাগরিতে বিভক্তঃ 

১. ওয়েব-ভিত্তিক (Web-based)

২. ডোমেইন/অফিশিয়াল ইমেইল সার্ভিস (Custom/Business Email)

ওয়েব-ভিত্তিক (Free Public Email Services)

  • Gmail 
  • Yahoo Mail 
  • Outlook 
  • ProtonMail 
  • Zoho Mail

প্রফেশনাল বা ডোমেইন-ভিত্তিক ইমেইল সেবা

  • Google Workspace (Gmail for Business) 
  • Microsoft 365 
  • Outlook 
  • Zoho Workplace 
  • Business FastMail

ই মেইল কিভাবে কাজ করে?

আপনি যখন একটি ইমেইল লিখে “Send” বাটনে ক্লিক করেন, তখন সেই ডেটা মেসেজটি প্রথমে আপনার ইমেইল সার্ভারে পৌঁছায়। এই সার্ভার SMTP (Simple Mail Transfer Protocol) নামক একটি প্রোটোকলের সাহায্যে প্রাপকের সার্ভারে মেইল পাঠিয়ে দেয়। এখানে মেইলটি কোথায় যাবে তা নির্ধারণ করতে DNS (Domain Name System) ব্যবহার করে প্রাপকের ইমেইল ঠিকানার ডোমেইন ডিটেক্ট করা হয়।

এরপর মেইলটি প্রাপকের ইমেইল সার্ভারে পৌঁছায় এবং ইনবক্সে সেইভ হয়। প্রাপক যখন তার ইমেইল অ্যাকাউন্টে লগইন করে, তখন IMAP (Internet Message Access Protocol) অথবা POP3 (Post Office Protocol) বার্তাটি তার ডিভাইসে প্রদর্শিত করে। প্রাপক মেইলটি পড়ে রিপ্লাই দিলে তা আবার একই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রেরকের কাছে ফিরে যায়।

এই পুরো কার্যক্রম খুব অল্প সময়ে ঘটে এবং এর পেছনে কাজ করে বিভিন্ন টেকন্যক্যাল সার্ভার ও প্রোটোকল। 

ই মেইল মার্কেটিং কি?

ইমেইল মার্কেটিং হল এমন একটি অনলাইন মার্কেটিং স্ট্রাটেজি, যার মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ইমেইলের মাধ্যমে তাদের পণ্য, সেবা, অফার বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেয়। 

উদাহরণস্বরূপ, ধরুন একটি অনলাইন শপে আপনি একবার কেনাকাটা করেছেন। এরপর সেই দোকানটি যদি নতুন অফার দেয় বা নতুন পণ্য নিয়ে আসে, তবে তারা আপনাকে ইমেইলের মাধ্যমে সে বিষয়টি জানাবে- এটিই ইমেইল মার্কেটিং। আবার অনেক সময় গ্রাহকের আগ্রহ ধরে রাখতে নিউজলেটার, টিপস, বা স্পেশাল ডিসকাউন্টের ইমেইলও পাঠানো হয়।

ইমেইল মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি কম খরচে অনেক বেশি মানুষের কাছে মার্কেটিং করে দিতে পারে। প্রাসঙ্গিক ও আকর্ষণীয় কনটেন্ট পাঠাতে পারলেই এর মাধ্যমে ব্যবসার সেলস বাড়ানো সম্ভব।

ইমেইল আইডি কিভাবে খুলবো?

ইমেইল আইডি খোলার প্রক্রিয়া অনেক সহজ। ইমেইল আইডি খোলার জন্য আপনাকে প্রথমে একটি ইমেইল সার্ভিস প্রদানকারী সার্ভার বাছাই করতে হবে, যেমন Gmail, Yahoo, Outlook ইত্যাদি। নিচে Gmail এ ইমেইল আইডি খোলার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলোঃ 

১। প্রথমে আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজারে www.gmail.com অথবা অন্য যেকোনো ইমেইল সার্ভিস প্রদানকারীর ওয়েবসাইটে যান। 

২। তারপর, “Create account” বা “Sign Up” অপশনে ক্লিক করুন। 

৩। ইমেইলটি পার্সোনাল ইউজের জন্য হলে “for my personal use” অথবে বিজনেজ বা প্রফেশনাল ইউজের জন্য হলে “for my business or word” সিলেক্ট করুন। 

৪। আপনার ফাস্ট নেম এবং লাস্ট নেম দিন। 

৫। আপনার জন্ম তারিখ, মাস, বছর ও জেন্ডার সিলেক্ট করুন। 

৬। আপনার পছন্দ অনুযায়ী ইউজার নেম দিন, তবে কিছু ক্ষেত্রে আপনার দেয়া ইউজার নেম আগে থেকেই অন্যে কারো হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনাকে অন্য নাম নির্বাচন করতে হবে।

৭। এরপর আপনি মনে রাখতে পারবেন এমন একটি জটিল পাসওয়ার্ড দিন। নিচের “Confirm Password” ঘরেও একই পাসওয়ার্ড দিন।  

৮। একাউন্ট পুনরুদ্ধারের জন্য একটি Recovery Email এড্রেস চাইতে পারে। আপনার এটি না থাকলে skip করতে পারেন।
৯। এরপর Next এ ক্লিক করে “I agree” তে ক্লিক করুন।
১০। এরপর আপনি mail.google.com ভিজিট করে আপনার ইনবক্সে যেতে পারবেন এবং কাউকে ইমেইলও পাঠাতে পারবে। 

ইমেইল টেমপ্লেট কি?

ইমেইল টেমপ্লেট হলো একটি প্রস্তুত করা ডিজাইন বা কাঠামো যা আপনি যে কোনো ইমেইল মেসেজ পাঠানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন। এটি সাধারণত একটি স্ট্যান্ডার্ড ফর্ম্যাটে হয়ে থাকে, যা একজন ইউজারকে নির্দিষ্ট তথ্য সহ সহজেই ইমেইল লেখার সুযোগ করে দেয়। 

আপনি যে বিষয়ে ইমেইল চান, অনলাইনে তার বেশ টেমপ্লেট পেয়ে যাবেন। শুধু নিজের মতো কাস্টমাইজ করে নিলেই হলো। নিচে একটি সাধারণ ইমেইল টেমপ্লেট দেয়া হলোঃ 

ইমেইল টেমপ্লেট (English Language)

Subject: [Subject of the email]

[Recipient’s Name],

I hope you are well.

I am writing to [purpose of the email]. 

[Provide any necessary details here].

If you need any additional information or have any questions, feel free to reach out to me. I look forward to hearing from you soon.

Best regards,

[Your Name]
[Your Position]
[Your Company] (if applicable)
[Your Contact Information]

ইমেইল টেমপ্লেট (Bangla Language)

বিষয়: [ইমেইলের বিষয় লিখুন]

[প্রাপকের নাম],

আশা করি আপনি ভালো আছেন।

আমি আপনাকে এই ইমেইলটি পাঠাচ্ছি কারণ [আপনার ইমেইল লেখার উদ্দেশ্য সংক্ষেপে লিখুন]।

 [প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা এখানে দিন]।

আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি যদি এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন বা মতামত দিতে চান, তবে অনুগ্রহ করে আমাকে জানান।

শুভেচ্ছান্তে,
[আপনার নাম]
[আপনার পদবি / পেশা (যদি থাকে)]
[আপনার ফোন নম্বর বা অন্য যোগাযোগের মাধ্যম]
[প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার নাম]

এই টেমপ্লেটটি যেকোনো ধরনের ইমেইল পাঠানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। শুধু আপনি সাবজেক্ট এবং উদ্দেশ্য অনুযায়ী মেইলটি কাস্টমাইজ করে নিবেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

সবার আগে মন্তব্য করুন

আপনার মূল্যবান মতামত দিন