পহেলা ফাল্গুন বা ভ্যালেনটাইন’স ডে তে (বিশেষ করে ঢাকা শহরে) গলি বা মহল্লার দোকানগুলো তে কোন পরিবর্তন খেয়াল করেছেন কি?
সম্ভবত ধরতে পেরেছেন কি বলতে চাচ্ছি! হ্যা, প্রায় সবাই ফুল বিক্রি করে!
কেন এমন হয়? কারণ এই সময় ফুলের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়।
এমন অনেক ধরণের প্রোডাক্ট আছে যেগুলোর চাহিদা একটি বিশেষ সিজনে বেড়ে যায়।
যেমন: পহেলা বৈশাখে গামছা, মাটির তৈজসপত্র বা তাঁতের শাড়ি বেশি বিক্রি হয়।
আপনি যদি একটু কৌশলী হন তাহলে সিজন ভেদে বিভিন্ন প্রোডাক্টের (বা আপনার প্রোডাক্টের) চাহিদার এই তারতম্যের সুবিধা নিতে পারেন।
যেমন: ২০১৭ সালে ঈদুল ফিতরে বিকাশ বাংলাদেশের ২৮ টি ই কমার্স কোম্পানির ক্যাশব্যাক অফারের পার্টনার হয়েছিলো, সেই বছরে ই কমার্স কেনাকাটা ৩০০ কোটি ছাড়িয়ে যায় যা অন্য সময়ের চেয়ে ৩০% বেশি।
সিজিওনাল মার্কেটিং সম্পূর্ণ ভাবে কাস্টমারদের কেনাকাটার আচরণের উপর নির্ভর করে।
সিজিওনাল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন ধরাবাঁধা নিয়মকে ফলো করে না।
আপনি আপনার নিজস্ব সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে দারুন সব অফার তৈরি করে কাস্টমারদের কাছাকাছি যেতে পারেন।
এই মার্কেটিং ক্যাম্পেইনকে তিন প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়:
1.সময় অনুসারে – যেমন ফাটাফাটি ফ্রাইডে, এটি সাপ্তাহিক বা বাৎসরিক হতে পারে।
2.দিবস অনুসারে – রমজান, ঈদ, পহেলা ফাল্গুন, পহেলা বৈশাখ, নিউ ইয়ার ,পহেলা বৈশাখ
3.ট্রেন্ড অনুসারে – সমসাময়িক ঘটনা অনুসারে
প্রথমে যেটি করতে হবে:
আপনি কোন কোন সিজিওনাল মার্কেটিং ক্যাম্পেইনগুলো পরিচালনা করতে চান সেটির একটি তালিকা তৈরি করে ফেলুন। সেটি অবশ্যই আপনার প্রোডাক্ট এর নির্ভর করে তৈরি করবেন।
যেমন: আমাদের দেশে মোটরসাইকেল শোরুম গুলো ধান কাটার সময়কে টার্গেট করে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন চালায়। কারণ এই সময়ে ধানের ব্যবসা যারা করেন তাদের হাতে টাকা থাকে। তারা মোটরসাইকেল কিনতে আগ্রহী হয়।
আপনার প্রোডাক্ট যদি হয় ব্রাইডাল আইটেম, তবে সেটির জন্য বেছে নিতে পারেন শীতের প্রথম সময়। এই সময়ে বিয়ের উৎসব বেশি লক্ষ্য করা যায়।
প্রোডাক্ট যদি হয় ফ্যাশান আইটেম, তবে ঈদ বা দুর্গাপূজা ভালো সময়। আবার যদি গিফট আইটেম হয় তবে ভ্যালেন্টাইন ডে।
এছাড়াও বছরের প্রায় সকল সময়ে বিভিন্ন নামে বিক্রির সুযোগ থাকে। তাই বিক্রি আরও বেশি করতে প্রতিটি সিজনকে কাজে লাগাতে পারেন।
তবে এই সিজনাল ক্যাম্পেইন প্ল্যান করার সময় অবশ্যই আপনার কাস্টমারদের বায়িং বিহেভিওর পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্ল্যান করতে হবে ।
সিজিওনাল কাস্টমার লিস্ট তৈরি
দারাজ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ই কমার্স প্লাটফর্ম। তারা নিয়মিত ভাবে তাদের অনলাইন সেল অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়ে কাস্টমার সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে।
ফাটাফাটি ফ্রাইডে নামে তারা প্রতি বছর নভেম্বর ১৭ থেকে ২৭ পর্যন্ত একটি অফার চালু রাখে।
প্রায় সব ধরনের প্রোডাক্টে তারা অফার প্রদান করে এবং প্রোডাক্ট ভেদে ৮০% পর্যন্ত ডিস্কাউন্ট দিয়ে থাকে।
বিভিন্ন ব্র্যান্ড শপগুলোকে একসাথে নিয়ে তারা অফার টি পরিচালনা করে
এই রকম অফারে যারা কেনাকাটা করতে চাইবে তাদের থেকে ফোন ও ইমেল চান।
প্রোডাক্ট অনুসারে সেগমেন্ট আকারে কাস্টমার লিস্ট তৈরিতে মনযোগী হবেন।
কাস্টমারদের কেনাবেচার ধরন ও আচরণ অনুসারে তাদের কোন কোন সিজিনে অফার দিতে চান সেটি ভাগ করে ফেলুন।
আপনি জেনে গেলেন, কারা সিজওনাল অফার পেয়ে কেনাকাটা করেছে। এরপর, তাদের কাছে নিয়মিত ভাবে সিজনাল মার্কেটিং করে প্রোডাক্ট সেল করতে পারবেন।
সিজনাল প্রোডাক্ট গাইড
কাস্টমারদের সঠিক প্রোডাক্টটি খুঁজে পেতে সাহায্য করতে গাইড করুন।
ভিন্ন ভিন্ন সিজন অনুসারে কাস্টমারদের জন্য উপযুক্ত প্রোডাক্ট বেছে নিতে পরামর্শ দিন।
চালডাল তার কাস্টমারদের রমজান মাসের বাজার করাকে সহজ করতে রামাদান নামে একটি আলাদা ক্যাটাগরি করে।
সেখানে সেই মাসের সকল প্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট সাজিয়ে রেখেছে।
কাস্টমার অনেক সময় বুঝে উঠে না একটি সিজনে তার কি কি ধরনের প্রোডাক্ট প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু তার সামনে সবগুলো সিজনাল প্রোডাক্ট তুলে ধরলে বেছে নিতে সুবিধা হয়।
আপনি আপনার ই কমার্স সাইটের সিজন অনুসারে সকল প্রয়োজনীয় প্রোডাক্টের পরামর্শ দিয়ে অ্যাড দিতে পারেন।
সিজনাল প্রোডাক্ট ক্যাটাগরি
সিজন ভেদে মানুষ ভিন্ন ভিন্ন পোশাক পরতে পছন্দ করে। আবার কিছু সময়ে আমরা নিজের জন্য কেনার পাশাপাশি অন্যের জন্য কেনাকাটা করি।
আড়ং তাদের পহেলা বৈশাখের সকল ড্রেস কালেকশান Boishakh/1427 নামে একটি আলাদা ক্যাটাগরিতে রেখেছিল। এতে করে কাস্টমার সহজে তার প্রোডাক্ট খুঁজে পায় এবংস্বাচ্ছন্দ্যের সাথে কেনাকাটা করেন।
এতে করে এই উৎসবে কাস্টমার কি ধরনের প্রোডাক্ট পরবে সেটি বেছে নেয়। আবার উপহার হিসেবে অন্যদের জন্য কেনাকাটা করা তার জন্য সহজ হয়। কারণ এই সিজিনে মানুষ এই ধরনের পোশাক পরতেই পছন্দ করে।
বিয়ের সিজনে মার্কেটিং করতে Wedding Wear নামে একটি ক্যাটাগরি দারাজে রয়েছে তারা সকল Wedding Gowns & Wedding Dresses এই ক্যাটাগরিতে রেখেছে। ফলে একজন কাস্টমারকে এই সিজনে অফার পেয়ে এসে অনেকগুলো কালেকশন থেকে তার পছন্দের টি কিনতে পারে। তাকে সার্চ করে Wedding Wea খুঁজে নেবার কষ্ট করতে হয় না।
ই কমার্স সাইটে সিজন ভেদে আলাদা আলাদা প্রোডাক্ট ক্যাটাগরি তৈরি করতে পারেন।তারপর সেগমেন্ট করা টার্গেট কাস্টমারদের কাছে তার কেনাকাটার আচরণের ধরন বুঝে মার্কেটিং করতে পারেন।
সিজনাল মার্কেটিং এ কাউন্ট ডাউন টাইমার
নির্দিষ্ট সময়ে সবাই বাড়তি কেনাকাটা করে।প্রতিটি সিজনের একটি সময়কাল রয়েছে।কাস্টমারকে সেই সিজনের শেষ সময় মনে করিয়ে দিতে আপনি কাউন্ট ডাউন টাইমার ব্যবহারের মাধ্যমে কাস্টমারদের মধ্যে দ্রুত কেনাকাটার হাইপ তৈরি করতে পারেন।
ঈদ উপলক্ষে ফ্ল্যাশ সেল দিচ্ছেন। তার সাথে সময়টি জুড়ে দিন। কাস্টমার আরও বেশি ভালো ভাবে জানতে পারবে তার হাতে কত সময় বাকি আছে অফারের প্রোডাক্ট কেনাকাটা করার।
কাস্টমারদের মনে হারিয়ে ফেলার ভয়কে জাগিয়ে তুলে FOMO মার্কেটিং কৌশল ও সিজিওনাল মার্কেটিং কৌশলকে একীভূত করে বেশি বেশি বেচাকেনা করতে পারেন।
সাপ্তাহিক অফার
সপ্তাহের শেষ কেনাকাটার জন্য কাস্টমারদের কাছে পছন্দের সময়।
এই সময়ে কাস্টমারদের দিনের একটি নির্ধারিত সময়ে কেনাকাটার জন্য বরাদ্দ করে দিতে পারেন, যে সময়ে তারা কিনলে বেশি ছাড় পাবে।
ভ্যালেন্টাইন ডে, ঈদ, পূজা, নিউ ইয়ার, পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন এই উৎসবগুলোর আগে সবাই উদযাপন করার প্রস্তুতি নিতে থাকে।
আপনি এই সকল সিজনে কিছুদিন আগে থেকে হ্যাপিআওয়ার ক্যাম্পেইন চালু করতে পারেন।
যেখানে কাস্টমার উৎসবের আগে প্রতি দিন বা প্রতি সপ্তাহে এই সময়ে সর্বোচ্চ ছাড়ে কেনাকাটা করতে পারবে।
আবার প্রতি সপ্তাহে একটি নির্ধারিত দিনে এই সময় বরাদ্দ করতে পারেন যেমনটি দারাজ করেছে।
সিজনাল প্রোডাক্ট মার্কেটিং
বছরের একটি সময়ে নির্দিষ্ট কিছু প্রোডাক্টের চাহিদা সব সময় থাকে।
যেমন, বছরের প্রথমে ব্যাগ, পেন্সিল, জুতা ইত্যাদি আইটেমের চাহিদা বেড়ে যায় কারণ বাচ্চারা এসময় নতুন শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়। ।
দারাজ Back to School Campaign ক্যাম্পেইনে এই সকল ষ্টেশনারী প্রোডাক্টে ছাড় দিয়ে সেই সকল সিজনাল কাস্টমারদের কাছে প্রোডাক্ট সেল করেছে।
আবার বর্ষাকালে ছাতা ও রেইনকোটের জন্য করতে পারেন রেইনি ডে ক্যাম্পেইন।
এতে, কেনাকাটা বেড়ে যাবে কারণ এই সময়ে এই সকল প্রোডাক্টের চাহিদা অনেক বেশি থাকে।
পরিশেষে,
সিজনাল মার্কেটিং করতে আপনাকে আপনার বিজনেসের সিজনাল ট্রেন্ড এনালাইসিস করতে হবে । বিজনেসের সিজনাল কাস্টমারদের খুঁজে বের করে তাদের কাছে সেই সময়ে প্রয়োজন এমন প্রোডাক্টের উপর বিভিন্ন অফার দিতে হবে ।
উপরে আলোচিত উদাহরণগুলো থেকে অনুপ্রানিত হয়ে আপনার বিজনেসে অনুরূপ আইডিয়া কাজে লাগাতে পারেন।
বিভিন্ন সিজনে আপনার ইকমার্স বিজনেসের সেল বাড়াতে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন শেয়ার করুন আমাদের সাথে ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন
আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন