ই-কমার্স সফটওয়্যার কী? কত প্রকার এবং ব্যবহার

ই-কমার্স সফটওয়্যার কী? কত প্রকার এবং ব্যবহার
শেয়ার করুন

ই-কমার্স সফটওয়্যার সলিউশন মূলত অনেকগুলো সফটওয়্যার অ্যাপের সেট যা আপনাকে অনলাইনে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বেচাকেনায় সাহায্য করে। ওয়েবসাইট তৈরি থেকে কাস্টমারদের কেনাকাটার প্রক্রিয়া প্রতিটি স্টেপ এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে  খুব সহজে ম্যানেজ করা যায়। 

ই-কমার্স সফটওয়্যারের প্রকারভেদ

বিজনেসের ধরন এবং বাজেটের উপর নির্ভর করে মার্কেটে তিন ধরনের ই-কমার্স সলিউশন আমরা দেখতে পাই।যেমন, 

  1. Software-as-a-Service (SaaS)  (সফটওয়্যার-এজ-এ-সার্ভিস)
  2. Platform-as-a-Service (PaaS) (প্ল্যাটফর্ম-এজ-এ-সার্ভিস)
  3. On-premise platform (অন-প্রিমাইস প্ল্যাটফর্ম)

একটি ই-কমার্স সফটওয়্যারের মূল্য অনেকগুলি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন, বিজনেসের ধরন, কি ধরনের সফটওয়্যার আপনি পছন্দ করছেন, কত ট্রাফিক আপনার ওয়েবসাইটে আসতে পারে এবং কি কি ফিচার আপনি চান। 

যত বেশি ফিচার আপনি চাইবেন তার জন্য অতিরিক্ত পয়সা আপনাকে গুনতে হবে। কিন্তু আপনি চাইলে আপনার ই-কমার্স ব্যবসার জন্য শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ফিচারগুলো বেছে নিতে করতে পারেন তাতে আপনার খরচ অনেকটাই কমে আসবে।

সার্ভিস হিসেবে ই-কমার্স সফটওয়্যারঃ Software-as-a-Service (SaaS)

SaaS হলো এমন একটি মডেল যেখানে সফটওয়্যার ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় এবং ব্যবহারকারীকে এটি ইনস্টল বা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয় না। এটি সাধারণত সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক হয়। উদাহরণস্বরূপ shopify, Microsoft 365 বা Google Workspace SaaS এর উদাহরণ। এখানে ব্যবহারকারীরা সফটওয়্যারটিকে সরাসরি ব্রাউজার থেকে অ্যাক্সেস করে এবং কাজ সম্পন্ন করে।

দেশীকমার্সও একটি SaaS  যেখানে আপনাকে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে ই-কমার্স ব্যবসা সফটওয়্যারটি দিয়ে করাতে পারবেন।  

যারা দ্রুততম সময়ে প্রফেশনাল গ্রেডের ই-কমার্স সফটওয়্যার ব্যবহার করতে চান, তাদের জন্য Software-as-a-Service (SaaS)  সলিউশন সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি।  কারণ এখানে ই-কমার্স বিজনেসের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ফিচার এবং সুবিধা নিয়ে রেডিমেড একটা সিস্টেম থাকে।

ই-কমার্স সফটওয়্যার

প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ই-কমার্স সফটওয়্যারঃ Platform-as-a-Service (PaaS)

PaaS হলো এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে ডেভেলপাররা তাদের অ্যাপ্লিকেশন তৈরি এবং পরিচালনা করতে পারেন, কিন্তু তাদের হার্ডওয়্যার, অপারেটিং সিস্টেম, বা অবকাঠামো পরিচালনার দরকার হয় না।

উদাহরণস্বরূপ, Heroku বা Google Cloud App Engine PaaS এর উদাহরণ। ডেভেলপাররা এখানে কোড লিখে সরাসরি ডেপ্লয় করতে পারেন, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সার্ভার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় রিসোর্সগুলি পরিচালনা করে।

যদি আপনার কোড লিখার সক্ষমতা এবং এই  টেকনোলজি বোঝার দক্ষতা থাকে তাহলে চাইলে এই  অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে  প্রয়োজনীয় ই-কমার্স সফটওয়্যার কাস্টমাইজেশন করতে পারেন। Amazon Web Services (AWS এই টেকনোলজির উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

এই টেকনোলজির আপনাকে কোড কাস্টমাইজেশনের স্বাধীনতা প্রদান করে কিন্তু ইনফ্রাস্ট্রেকচরের জন্য থার্ড পার্টি ডিপেন্ডেন্সি রেখে।

নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে ই-কমার্স সফটওয়্যারঃ On-premise platforms

On-premise প্ল্যাটফর্ম হলো এমন একটি সিস্টেম যা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সার্ভার এবং অবকাঠামোর উপর পরিচালিত হয়। এখানে সমস্ত সফটওয়্যার এবং ডেটা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্থানে বা ডেটা সেন্টারে হোস্ট করা হয়। 

উদাহরণস্বরূপ, অনেক বড় কোম্পানি নিজেদের ERP (Enterprise Resource Planning) সিস্টেম যেমন SAP বা Oracle এর মতো সিস্টেমগুলোকে অন-প্রিমাইস প্ল্যাটফর্মে পরিচালনা করে। এই সফটওয়্যার সিস্টেম অত্যন্ত ব্যবহুল শুধুমাত্র বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এগুলো ব্যবহার করে থাকে।

ই-কমার্স সফটওয়্যার কেন প্রয়োজন?

ই-কমার্স সফটওয়্যার মুলত অনলাইন ব্যবসায় সময়, শ্রম এবং টাকা বাচায়। এরই সাথে এটি ক্রেতাদের কেনাকাটার প্রক্রিয়া আরও সহজ ও সমৃদ্ধ করে ব্যবসায় বিক্রয় এবং লাভ বাড়াতে সহায়তা করে।

একজন উদ্যোগতা ই-কমার্স সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা করছেন

ইজি অনলাইন বিজনেস

একটি রেডি ইকমার্স সল্যুশন  ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে আপনি একটি প্রফেশনাল ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করে বিজনেস শুরু করে পারেন। অথবা নিজস্ব টেকনিক্যাল এক্সপার্টিজ থাকলে নিজের চাহিদামাফিক কাস্টম সল্যুশন তৈরি করে নিতে পারেন যা আপনাকে নিয়ন্ত্রিত অনলাইন বিজনেস পরিচালনায় সহায়তা করে।

ব্যবসা পরিচালনার দক্ষতা বৃদ্ধি করে

এটি উদ্যোক্তার ব্যবসার মজুদ, বিক্রি এবং ডেলিভারি ট্র্যাকিং গুলোকে সহজ করে। যা তার ব্যবসায়িক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জন

গ্রাহকরা তাদের অর্ডার সাথে-সাথে সবসময় ট্র্যাক করতে পারে, বিভিন্ন পেমেন্ট মেথড ব্যবহার করে পেমেন্ট করার সুবিধা পায়, যা তাদের ক্রয় অভিজ্ঞতাকে  উন্নত করে।

বড় মার্কেট টার্গেট করার সুবিধা

এটি আপনাকে দেশী-বিদেশি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে, মার্কেট সাইজ বড় হয়, ফলে ব্যবসার বিক্রি বাড়ে।

ব্যবসা পরিচালনার খরচ সাশ্রয়

ইকমার্স বিজনেসে লোকবল কম দরকার হয়, এছাড়াও ফিজিক্যাল স্টোরে অনেকগুলো ফিক্সড এক্সপেন্স থাকে কিন্তু  ইকমার্স সফটওয়্যার পরিচালনায় শুধু ইন্টারনেট ও সফটওয়্যার সাবস্ক্রিপশন (SAAS এর ক্ষেত্রে) এবং মেইনটেনেন্স চার্জ (কাস্টম সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে) ব্যতিত অন্য কোনো খরচ নেই।

বহুমুখী মার্কেটিং সুবিধা

ইকমার্স সফটওয়্যার আপনাকে  ইমেইল মার্কেটিং, এসএমএস মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া, এসইও এবং অন্যান্য টুল ব্যবহার করার সুবিধা দেয়। এতে বিজনেসের প্রচার বাড়ে। কথায় আছে, প্রচারেই প্রসার।

স্কুটিতে চড়ে প্রোডাক্ট ডেলিভারি দিতে যাচ্ছে একজন ডেলিভারিম্যান

একনজরে ই-কমার্স সফটওয়্যারের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি

মার্কেটিং টুল: ইকমার্স ওয়েবসাইট ডিজাইন করা হয় এমন ভাবে যা আপনাকে এর ওয়েবসাইট বিল্ডার, ফর্ম, ল্যান্ডিং পেজ, এ/বি টেস্টিং, এবং ডাইনামিক কন্টেন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে আরও বেশি গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো সাহায্য করে একইসাথে কাস্টমারের ক্রয় অভিজ্ঞতাকে  উন্নত করে।

সেন্ট্রাল  ডাটাবেজ: আপনার ওয়েবসাইটের সকল ডেটার সহজ অ্যাক্সেস প্রদান করে ডেটাগুলোকে সহজবোধ্য উপায়ে উপস্থাপনা করে। এতে বিজনেসের বর্তমান পরিস্থিত অনুযায়ী পরবর্তী সিধান্তগুলো সঠিক ভাবে নেয়া সম্ভবহয়। যেমন: কত ভিজিটর সাইটে আছে, কোন প্রোডাক্টগুলি বেশি সেল হচ্ছে, কতগুলো কাস্টমার রয়েছে, তারা কী পরিমাণ অর্থের কেনাকাট করেছেন ইত্যাদি।

ড্র্যাগ এন্ড ড্রপ ওয়েবসাইট বিল্ডার: SaaS সল্যুশনগুলো আপনাকে নিজের মতো করে ওয়েবসাইটের ফ্রন্টএন্ড ডিজাইন করার সুবিধা প্রদান করে এরজন্য কোন টেকনিক্যাল নলেজের দরকার নেই। এছাড়াও কিছু ওয়েবসাইট বিল্ডিং প্লাটফর্ম রেডি টেমপ্লেট ব্যবহার করে আপনার পছন্দমত  অনলাইন স্টোর তৈরি এবং কাস্টমাইজ করতে দেয়। যেমন: deshicommerce.com একটি ড্র্যাগ এন্ড ড্রপ ওয়েবসাইট বিল্ডার।

অটোমেটিক চেকআউট: গ্রাহকদের জন্য ক্রয় প্রক্রিয়াগুলো সিমপ্লিফাইড হয় আর সেলারদের জন্য কাস্টমারদের অর্ডার ও শিপিং প্রসেসগুলো আরও বেশি ম্যানেজেবল হয়।

ডেটা অ্যানালিটিক্স: কাস্টমার বিহেভিয়ার বুঝতে এবং আপনার অফারগুলি তাদের জন্য  ইফেক্টিভলি অপ্টিমাইজ করতে সহায়তা করে।

একটি মানসম্মত ই-কমার্স সফটওয়্যার ব্যবহারের খরচ

একটি  মানসম্মত ই-কমার্স সফটওয়্যার তৈরির অথবা ব্যবহারের খরচ নির্ভর করে এর ফিচার রিকোয়ারমেন্ট, টেকনোলজি এবং আপনার সাইটের জন্য কী পরিমাণ স্টোরেজ ও ব্যান্ডউইথের প্রয়োজন সেগুলির উপর।

উদাহরণস্বরূপ, নতুন ই-কমার্স ব্যবসার জন্য দেশীকমার্সের মাসিক মাত্র ৫০০ টাকা হতে ৪০০০ টাকার প্যাকেজের ই-কমার্স সফটওয়্যার রয়েছে। আপনার ব্যবসা চাহিদামাফিক প্ল্যান নিতে এবং পরে পরিবর্তনও করতে পারবেন।

ট্যাবে অনলাইন শপ ভিজিট করছে

আপনার বিজনেসের জন্য  সঠিক ই-কমার্স সফটওয়্যার নির্বাচনে করণীয়

কী ধরনের ই-কমার্স সল্যুশন আপনার ব্যবসার জন্য আদর্শ সেটি নির্ভর করে অনেকগুলি বিষয়ের উপরে, তার মধ্যে অন্যতম আপনার বিজনেসের ধরন ও আকার।

যেমন, দেশীকমার্স ই-কমার্স সফটওয়্যারটি সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং ব্যবসা পরিচালনার দক্ষতা বৃদ্ধির করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি ব্যবহার করে আপনি ১ মিনিটের মধ্যে একটি কমপ্লিট অনলাইন স্টোর সেট আপ করে ফেলতে পারবেন।

এটি এমনভাবে ডিজাইন করা যাতে আপনি ব্যবসার চালচিত্র সহজে বুঝতে পারেন ও কোন টেকনিক্যাল চ্যালেঞ্জ নিয়ে চিন্তা না করে প্রোডাক্ট সোর্সিং, মার্কেটিং এবং বিক্রির উপর আরও বেশি মনোনিবেশ করতে পারেন।

আপনি নতুন ব্যবসা শুরু করছেন অথবা আপনার ব্যবসা গ্রোথ স্টেজে রয়েছে? আপনি একটি প্রফেশনাল ইকমার্স সল্যুশন খুঁজছেন? দেশীকমার্স আপনাকে ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি থেকে শুরু করে পণ্য ডেলিভারির ব্যবস্থা করা পর্যন্ত সহায়তা করে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

আপনার মূল্যবান মতামত দিন

মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। আবশ্যক ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত *

আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন

সবার আগে মন্তব্য করুন