ফেসবুকের অ্যাড অপশন গুলো সম্পর্কে যদি আপনি না জেনে থাকেন তবে চিন্তার কারন নেই। অনেক মানুষই এ সম্পর্কে পুরোপুরি ভাবে জানেন না।
আপনার মতই তারাও ফেসবুক বিজ্ঞাপন কিভাবে শুরু করবেন সেটি নিয়ে চিন্তিত।
আপনার বোঝার সুবিধার্থে তিনটি ভাগে ফেইসবুক বিজ্ঞাপন নিয়ে কথা বলব।
কোন ক্যাম্পেইন কখন করবেন, আপনার অডিয়েন্সদের কাছে পৌঁছাতে কোথায় কোথায় অ্যাড প্লেসমেন্ট করবেন এবং কোন ধরনের ছবি বা মিডিয়া আপনার অবজেকটিভের সাথে উপযুক্ত।
১। ক্যাম্পেইনের অবজেক্টিভ নির্ধারণ করুন
প্রথমে নির্ধারণ করুন আপনি অ্যাড থেকে কি অর্জন করতে চান। আপনি কি ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করতে চান? নাকি ফেসবুক পেইজে লাইক শেয়ার বা মেসেজ চান। অথবা আপনি চান কাস্টমার আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করুক।
আপনার অ্যাডের লক্ষ্য অর্জন করতে ফেইসবুক বিভিন্ন ধরনের অ্যাড অবজেক্টিভ সুবিধা প্রদান করে।
অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন
যদি চান আপনার বিজনেস এবং প্রোডাক্ট সম্পর্কে মানুষ জানুক তবে ফেইসবুক এর দুই ধরনের অ্যাড ক্যাম্পেইন রয়েছে।
সেখান থেকে আপনার পছন্দেরটি বেছে নিতে পারেন।
ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস
এই অবজেক্টিভ নির্ধারণ করলে ফেইসবুক আপনার টার্গেট অডিয়েন্সদের কাছে বিভিন্ন উপায়ে কৌশলগতভাবে আপনার অ্যাড টি প্রদর্শন করবে। অডিয়েন্স একটি অ্যাড যত বেশি দেখবে, ততবেশি সেই ব্র্যান্ডকে সে মনে রাখবে।
এবং তার প্রয়োজনমতো সময়ে সেই পেইজ বা ব্র্যান্ড এর সাথে যোগাযোগ করবে।
রিচ ক্যাম্পেইন
ফেসবুকের অ্যাড এই অবজেক্টিভ আপনার অ্যাড যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
আপনার ব্র্যান্ড এবং প্রোডাক্ট সম্পর্কে যত বেশি মানুষ জানবে ততবেশি আদর্শ কাস্টমার পাবার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
রিচ ক্যাম্পেইনের সফলতা নির্ভর করে এ ক্যাম্পেইনটি কত বেশি দিন চলছে তার ওপরে।
যত বেশি সময় রিচ ক্যাম্পেইন চালানো হবে যত বেশি পরিমাণ অডিয়েন্স দের কাছে পৌছানো সম্ভব হবে।
ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস এর দ্বিতীয় ধাপ কনসিডারেশন ক্যাম্পেইন
ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস এবং রিচ ক্যাম্পেইন চালানোর পরপরই যে ক্যাম্পেইন অবজেক্টিভ আপনার জন্য উপযুক্ত সেটি হচ্ছে কনসিডারেশন ক্যাম্পেইন।
এই ধাপে একজন কাস্টমার কে সরাসরি আপনার ওয়েবসাইটে অথবা ফেইসবুকের কোন স্পেসিফিক পোস্টে বা মূল পেইজে নিয়ে আসা যায়।
ট্রাফিক
ট্রাফিক ক্যাম্পেইন টার্গেট অডিয়েন্সদেরকে আপনার ওয়েবসাইটে নিয়ে আসতে সাহায্য করে।
আপনি যদি ব্লগপোস্ট অথবা ফেইসবুক পেইজের কোন কনটেন্ট প্রমোট করতে চান তবে এই ক্যাম্পেইন আপনার জন্য উপযুক্ত।
এঙ্গেজমেন্ট
এই ক্যাম্পেইন আপনার ফেসবুক পেইজ অথবা ওয়েবসাইটের পোস্টে কাস্টমারদের ইন্টারেকশন করতে ব্যবহার করা হয়।
যদি চান আপনার ফেসবুক পোস্টে টার্গেট অডিয়েন্স লাইক শেয়ার বা কমেন্ট করুক বা ওয়েবসাইটের কোন ব্লগপোস্টে অথবা প্রডাক্ট এর সাথে কাস্টমার যুক্ত হোক তাহলে এই ক্যাম্পেইন চালাতে হবে।
অ্যাপ ইনস্টল
আপনার ইকমার্স ওয়েবসাইটটির যদি মোবাইল অ্যাপ থাকে তবে সেই অ্যাপটি কাস্টমারদের ইনস্টল করতে উৎসাহিত করার জন্য অ্যাপ ইনস্টল ক্যাম্পেইন ব্যবহার করতে পারেন।
ভিডিও ভিউ
আপনি যদি ফেইসবুক লাইভ ব্যবহার করে প্রোডাক্ট সেল করেন অথবা প্রডাক্ট রিভিউ ভিডিও তৈরি করেন তবে এই ক্যাম্পেইন আপনার জন্য আদর্শ।বড় অডিয়েন্স গ্রুপের কাছে আপনার ভিডিওটি পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে আপনার পেইজের বা ওয়েবসাইটের সাথে কাস্টমার এনগেজ হয়।
এই ক্যাম্পেইন চালানোর জন্য অ্যাড অবজেকটিভের এনগেজমেন্ট ক্যাম্পেইনের অবজেক্টিভস ভিডিও ভিউ অবজেক্টিভ সিলেক্ট করে দিতে হবে। পারফরম্যান্স নির্ধারণ করা হয় একজন অডিয়েন্স ৩ সেকেন্ড বা তারও বেশি যদি ভিডিওটি দেখে তার ওপরে।
লিড জেনারেশন
কাস্টমারদের তথ্য যেমন ফোন নাম্বার নাম ইমেইল পেতে হলে লিড জেনারেশন ক্যাম্পেইন চালাতে হয়। এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে একজন কাস্টমার আপনার ফেইসবুক পেইজের মেসেঞ্জারে অথবা ওয়েবসাইটের লিড জেনারেশন ফর্ম পূরণ করার মাধ্যমে যুক্ত হয়।
মেসেজ
টার্গেট অডিয়েন্স সরাসরি আপনার সাথে মেসেঞ্জারে যুক্ত হোক চাইলে মেসেজ এড ক্যাম্পেইন চালাতে পারেন।
অনেক সময় প্রোডাক্টের বিস্তারিত জানতে বিজনেস সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে জানতে অথবা সেলারের সাথে সরাসরি কথা বলতে এ ক্যাম্পেইন অবজেক্টিভ ব্যবহার করা হয়।
কনভার্শন ক্যাম্পেইন
ফেসবুকের অ্যাড ক্যাম্পেইনের উপযোগিতা এবং যথার্থতা নির্ধারণ করতে এই অ্যাড অবজেক্টিভ ব্যবহার করা হয়।
এজন্য আপনার ফেইসবুক পিক্সেল যুক্ত থাকা প্রয়োজন। ফেইসবুক পিক্সেল যুক্ত করতে হলে অবশ্যই আপনার একটি ওয়েবসাইট থাকতে হবে।
কনভার্শন
একটি অ্যাড চালানোর পরে ঠিক কি পরিমাণ টার্গেট অডিয়েন্স আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করছে সেটি জানা সম্ভব।
এর মাধ্যমে রিটার্ন অফ ইনভেস্টমেন্ট বের করা সম্ভব । তবে আপনাকে খেয়াল করতে হবে আপনার ইকমার্স ওয়েবসাইট টি অবশ্যই যেন ফেইসবুক পিক্সেল ব্যবহার করার উপযোগী হয়।
ক্যাটালগ সেল
এই অ্যাড অবজেক্টিভ এর মাধ্যমে সরাসরি একজন অডিয়েন্সকে নির্দিষ্ট একটি ছবি বা প্রডাক্ট ক্যাটালগে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আগ্রহের উপর ভিত্তি করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার প্রডাক্ট আগ্রহী দর্শকদের দেখাবে।
কারা কারা আপনার ক্যাটালগ এর প্রতি আগ্রহী সেটি ফেসবুক বের করে আপনার পেইজে যুক্ত থাকা পিক্সেল এর মাধ্যমে।
স্টোর ভিজিট
এই অ্যাড অবজেক্টিভ এর মাধ্যমে ফেসবুক আপনার শোরুম বা দোকানের অবস্থান কাস্টমারদের সামনে উপস্থাপন করে এবং তাকে আপনার শোরুমে বা দোকানে যেতে জন্য লোকেশন টেকনোলজির মাধ্যমে গাইড করে।
২। আপনার অডিয়েন্স কোথায় রয়েছে সেটি বিবেচনা করুন
ফেসবুক একটি অ্যাড ভিন্ন ভিন্ন স্থানে প্রদর্শন করে। অ্যাড অবজেক্টিভ এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক একটি অ্যাড সর্বোচ্চ ১২টি অবস্থানে দেখাতে পারে।
এখানে অবস্থানগুলো হতে পারে নিউজফিড, হতে পারে মেসেঞ্জার, ডান সাইডের কলাম ইত্যাদি।
ফেসবুকের অ্যাড এর অবস্থানের ভিন্নতা অনুযায়ী এর প্রদর্শন বিভিন্ন রকম হতে পারে।
বর্তমান সময়ে মানুষ ফেসবুকের পাশাপাশি ইনস্টাগ্রাম ও মেসেঞ্জারে বেশি পরিমাণে একটিভ থাকে।
আপনি যদি জানেন আপনার বিজনেসের জন্য টার্গেট অডিয়েন্স কারা এবং তারা কোথায় বেশি সময় ব্যয় করে তবে সেই স্থানে আপনার একটি প্রদর্শন করলে সেটি সফল হবে।
নিউ অডিয়েন্স
যখন আপনি একটি অ্যাড পরিচালনা করছেন তখন সেই অ্যাড আপনি কি বর্তমান অডিয়েন্সদের দেখাতে চান? নাকি নতুন অডিয়েন্স দের দেখাতে চান?
ফেসবুকের অডিয়েন্স অপশন আপনাকে ভিন্ন ভিন্ন অডিয়েন্স গ্রুপের কাছে অ্যাড আছে দেওয়ার সুবিধা প্রদান করে।
চাইলে শুধুমাত্র নতুন কাস্টমারদের অ্যাড দেখাতে পারবেন।আবার শুধুমাত্র আপনার পেইজের সাথে যুক্ত দর্শকদের অ্যাড দেখাতে পারবেন।
আবার একসাথে নতুন এবং বর্তমান দর্শকদেরও একসাথে অ্যাড দেখানো সম্ভব।
মনে রাখা ভাল, একটি অ্যাডের কার্যকারিতা নির্ভর করে উঁচুমানের ছবি বা ভিজুয়াল এর উপরে। তাই সব সময় চেষ্টা করবেন হাই কোয়ালিটি ছবি ও ভিজুয়াল ব্যবহার করতে। এটি একটি অ্যাডের পারফর্মেন্স ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশ বাড়িয়ে তোলে।
রিটার্নিং ভিজিটর
নতুন কাস্টমারদের টার্গেট করার থেকে রিটার্নিং কাস্টমারদের টার্গেট করা অনেক সহজ এবং এতে অ্যাড খরচ কম হয়।
ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকা পিক্সেল একটি অ্যাডের সমস্ত ধরনের অডিয়েন্স ইন্টারেকশন ৩০ দিন পর্যন্ত রেকর্ড রাখে।
পরবর্তী সময়ে আপনি চাইলে নির্দিষ্ট একটি অ্যাড এর সাথে ইন্টারআক্ট করা দর্শকদের আপনি পুনরায় নতুন একটি এড সফলভাবে দেখাতে পারবেন।
অনেক সময় এমন হয়, একজন অডিয়েন্স ফেইসবুক এ কম সময় দেয় কিন্তু ইনস্টাগ্রামে বেশি সময় ব্যয় করে।
এই অ্যাড ক্যাম্পেইন একজন দর্শককে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে অ্যাড দেখানোর মাধ্যমে এঙ্গেজ করে।
৩। এমন একটি এড তৈরি করুন যা প্রতিক্রিয়াশীল
একটি সফল ফেসবুক অ্যাড এর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে প্রতিক্রিয়াশীল অ্যাড।
আপনি কি ধরনের এড কপি তৈরি করছেন তার ওপর নির্ভর করে যদি অ্যাড ক্যাম্পেইন টাইপ সিলেক্ট করেন তাতে কাস্টমারদের এনগেজমেন্ট বেশি হয়।
ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন টাইপ ফরমেট রয়েছে। সেগুলো কখন ব্যবহার করতে হয়?
কখন ছবি ব্যবহার করবেন
সিঙ্গেল ইমেজ টাইপ অ্যাড ফরমেট ব্যবহার করতে পারেন যদি আপনি শুধু ছবি পোস্ট করেন।
আপনি একসাথে দুটি অথবা তিনটির বেশি ছবি গ্রুপ আকারে পোস্ট করতে পারেন। ফেইসবুক স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবথেকে বেশি পারফরম্যান্স করা ছবিটি সর্বপ্রথমে প্রদর্শন করবে।
ক্যারোজেল অ্যাড
যদি একটি সিঙ্গেল এডে অনেকগুলো ছবি ব্যবহার করতে চান, তবে ক্যারোজেল অ্যাড ব্যবহার করতে পারেন।
অনেক সময় একটি প্রোডাক্টের একটি মাত্র ছবি দিয়ে প্রোডাক্ট বর্ণনা করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে একাধিক ছবির প্রয়োজন পড়ে। এ ধরনের এড চালানোর জন্য এই ফরম্যাট উপযুক্ত।
কখন ভিডিও ব্যবহার করবেন
প্রোডাক্ট রিভিউ, ইন্ট্রু ভিডিও, প্রোডাক্ট এক্সপ্লেইন ভিডিও প্রমোট করতে চাইলে ভিডিও ব্যবহার করুন। সমসাময়িক সময়ে ফেসবুক ভিডিও অ্যাড তৈরি ও প্রমোট করাকে বেশি উৎসাহিত করছে।
অফার অ্যাড কখন তৈরি করবেন
কল টু অ্যাকশন এর জন্য অফার অ্যাড দারুন।
কোন নির্দিষ্ট প্রোডাক্টে ছাড় দিচ্ছেন, কাস্টমারদের কুপন দিচ্ছেন, অথবা ডিসকাউন্ট প্রদান করছেন এইসব ক্ষেত্রে অফার অ্যাড ব্যবহার করতে হবে। অফার এড পরিচালনা করতে হলে অবশ্য একটি স্পেশাল মূল্য এবং সময়সীমা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
অফার অ্যাড লম্বা সময়ের জন্য রান করানো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। যত কম সময় অফার অ্যাড চালাবেন সেটার প্রতি মানুষের আগ্রহ ততবেশি তৈরি হবে।
ক্যানভাস অ্যাড
ফেসবুক অ্যাড এর একটি যুগান্তকারী সৃষ্টি ক্যানভাস অ্যাড।
ফুলস্ক্রীন অডিও ভিজুয়ালের সাথে টেক্সট ব্যবহার করে প্রডাক্ট কে চমৎকার ভাবে বর্ণনা করা সম্ভব এবং রয়েছে কল টু অ্যাকশন। এতে সহজেই একজন কাস্টমার কে সরাসরি কেনাকাটা করতে উৎসাহী করা যায়।
কিছু ক্যানভাস অ্যাড এর উদাহরণ দেখুন
পরিশেষে,
পরবর্তী সময়ে যখন আপনি একটি নতুন এড ক্যাম্পেইন চালাতে যাচ্ছেন সে সময় সে সময় নিজেকে তিনটি প্রশ্ন করবেন।
- আমার উদ্দেশ্য কি?
- আমি কাদের কাছে পৌছাতে চায়?
- আমার অ্যাড কি তাদের প্রতিক্রিয়াশীল করে তুলতে সক্ষম?
এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর আপনার পরবর্তী অ্যাড অবজেক্টিভ, ক্যাম্পেইন টাইপ, অডিয়েন্স টার্গেট এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যাড ফরমেট থেকে উপযুক্ত “সেট অফ অ্যাকশন” বেছে নিতে সাহায্য করবে।
অবশ্যই মনে রাখবেন একটি হাই কোয়ালিটি ভিজুয়াল অ্যাড পারফরম্যান্সের আমুল পরিবর্তন করে দিতে সক্ষম।
অ্যাড পরিচালনায় যত বেশি সম্ভব “ক্রিয়েটিভ” এর প্রতি যত্নশীল হোন।
নির্ধারণ করুন আপনার উপযুক্ত অ্যাড অবজেক্টিভ এবং আপনার ফেসবুক অ্যাডকে সফল করে তুলুন। শেয়ার করুন আমাদের সাথে আপনার ফেইসবুক অ্যাড এর অভিজ্ঞতা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন
আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন