নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা – শুরু থেকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে যা করতে হবে

নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা – শুরু থেকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে যা করতে হবে
শেয়ার করুন

নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা করার সাথে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের একটা বিখ্যাত উক্তিটি বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ।  “If you fail to plan, you are planning to fail.” – বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের এর বহুল প্রচলিত একটি কথা আছে এর অর্থ- আপনি যদি প্ল্যান করতে ভুল করেন তবে আপনি প্ল্যানিংই করছেন ভুলভাবে। যেকোনো কাজের ক্ষেত্রেই প্ল্যান করা অত্যন্ত জরুরী আর যদি সেটা হয় নতুন ব্যবসার পরিকল্পনা তবে প্ল্যান ছাড়া আগানো মানেই বিশাল রিস্ক! 

চেম্বার অব কমার্সের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় প্রতি বছর শুধু মাত্র আমেরিকাতে ৫৯৫,০০০ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায় কিংবা ফেইল করে। তাহলে একবার চিন্তা করে দেখুন, পুরো বিশ্বে এই সংখ্যাটা কত! 

তাই ব্যবসা শুরুর আগেই ব্যবসা নিয়ে সুস্পষ্ট একটি পরিকল্পনা করা ব্যবসা সফলভাবে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক ধাপ হিসেবে বলা যেতে পারে। 

আজকে এই আর্টীকেলে আমরা নতুন ব্যবসা শুরু পূর্বে কোন কোন দিক খেয়াল রাখতে হবে, কোন কোন কারণে একটি ব্যবসা ফেইল করতে পারে এবং কীভাবে সফলভাবে একটি উদ্যোগ শুরু করা যেতে পারে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানবো।

নতুন ব্যবসা শুরুর পূর্বপ্রস্তুতি

নতুন ব্যবসা শুরুর পূর্বপ্রস্তুতি

যেকোনো ব্যবসা শুরুর পূর্বেই কিছু পূর্বপ্রস্তুতি নিতে হয়, যার ফলে ব্যবসাটা কীভাবে আগাতে হবে, কীভাবে ব্যবসার ঝুঁকি মোকাবেলা করা যাবে কিংবা কীভাবে টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছানো যাবে তা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। 

নতুন ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রেও দেখা যায় অনেকেই হুট করে একটা পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করে দেয়, পরবর্তীতে সেই পণ্যের চাহিদা কমে গেলে কিংবা সঠিক পরিকল্পনা ও মার্কেটিং এর অভাবে ব্যবসা আর বেশিদূর আগায় না। 

এখন প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে ব্যবসা শুরুর পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে কী করা যেতে পারে? সেটাই বলছি –

পণ্য নির্বাচন

ব্যবসার পরিকল্পনার প্রথম ধাপ হওয়া উচিত সঠিক পণ্য নির্বাচন। এক্ষেত্রে যে জিনিসের প্রতি আপনার আগ্রহ আছে, দক্ষতা এবং জ্ঞান আছে সেই জিনিস নিয়েই কাজ করা উচিত একই সাথে সেই পণ্যের কাস্টমার ডিমান্ড কেমন সেটাও রিসার্চ করতে ভুলবেন না যেনো! 

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের মতে, প্রতি বছর ৯৫% নতুন প্রোডাক্ট লঞ্চের পরই ফেইল করে। এর মধ্যে গুগল, আমাজনের মতো জায়ান্ট কোম্পানি গুলোও কিন্তু রয়েছে। এখন ভাবতে পারেন যে, এত বড় কোম্পানি যাদের মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করার সামর্থ্য আছে তাদের প্রোডাক্ট কেনো ফেইল করে? কারণ, এদেরমধ্যে বেশীরভাগই কাস্টমারের চাহিদা কি সেটা নিয়ে কোনো রিসার্চ করে না কিংবা কাস্টমারের চাহিদা ধরতে পারে না। 

তাহলে বুঝতেই পারছেন নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে সঠিক পণ্য নির্বাচন কতটা জরুরি?

মার্কেট রিসার্চ/মার্কেট এনালাইসিস

পণ্য সিলেকশন আর মার্কেট রিসার্চ দুটোই একে অপরের সাথে অতোপ্রতোভাবে জড়িত। মার্কেট রিসার্চ ছাড়া যেমন পণ্য নির্বাচন করা সম্ভব না তেমনই একটি ব্যবসা যাতে সার্বিকভাবে সফল হয় সেক্ষেত্রেও মার্কেট রিসার্চের ভূমিকা অনেক। 

মার্কেট রিসার্স

একটি ব্যবসার প্রাথমিক কাজই হলো মানুষ কি চায় তা খুঁজে বের করা। মার্কেট রিসার্চ করে আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের চাহিদা চিহ্নিত করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার কম্পিটিটরকে এনালাইসিস করার মাধ্যমেও কিন্তু আপনি বেশ ভালো ধারণা পেতে পারেন। মার্কেট রিসার্চের ক্ষেত্রে বেশকিছু বিষয় আছে যা মাথায় রাখা জরুরি, যেমন – 

  • সারা পৃথিবীতে আপনার পণ্যটির বা সেবার মার্কেট কেমন
  • আপনি কতটুকু মার্কেট ধরতে পারবেন
  • আপনি কতটুকু মার্কেট দখল করতে চান
  • বর্তমানে কতটুকু আপনার দখলে আছে

ধরুন আপনার মাথায় কোনো বিজনেস আইডিয়া আছে এখন শুরুতেই আপনার উচিত আপনার আইডিয়াটা ভেলিডেশন করা। অর্থাৎ, মার্কেট রিসার্চ করে এটা বের করা যে আপনার বিজনেস আইডিয়াটা আসলেই কার্যকরী হবে কি না। এক্ষেত্রে আইডিয়া ভেলিডেশনের বেশ কিছু পদ্ধতি আছে যার মাধ্যমে সহজেই আপনি বুঝতে পারবেন। এই সব কিছুই কিন্তু আপনার ব্যবসা শুরুর পরিকল্পনারই অংশ, বাদ দিলে কিন্তু আপনারই ক্ষতি।

সম্পর্কিতঃ ই কমার্স বিজনেসের জন্য কিভাবে মার্কেট রিসার্চ করবেন

প্রতিযোগী মূল্যায়ন ও ইউএসপি খুঁজে বের করা

যেকোনো ব্যবসাতেই প্রতিযোগী বা কম্পিটিটর থাকা স্বাভাবিক। কম্পিটিটর থাকার মাধ্যমেই আপনি একটি পণ্য চাহিদাসম্পন্ন কি না তার ধারণা অনেকাংশেই পেয়ে যাবেন। মার্কেট এনালাইসিস এর একটু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো কম্পিটিটরকে এনালাইসিস করা। যদি আপনি ব্যবসার শুরুতেই পরিকল্পনা মাফিক আগান এবং আপনার কম্পিটিটরদের এনালাইসিস করে তাদের দূর্বলতা ও গ্যাপ গুলো ধরতে পারেন, আপনার ব্যবসার কাজ অনেকাংশেই সহজ হয়ে যাবে।

আপনার ব্যবসার প্রতিযোগী মূল্যায়নের কৌশল

  • অনলাইন অথবা অফলাইনে কারা আপনার প্রতিদ্বন্দী তা আগে খুঁজে বের করুন।
  • গুগল সার্চ, সোশ্যাল মিডিয়া রিসার্চ কিংবা অফলাইনে আপনার প্রতিদ্বন্দীকে বিশ্লেষণ করুন।

তাদের মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং কৌশল পর্যালোচনা

  • কোন প্লাটফর্মে তারা বেশী প্রচার করছে
  • কেমন কন্টেন্ট বা বিজ্ঞাপন দিচ্ছে
  • অডিয়েন্সের সাথে তাদের ইন্টারেকশন কেমন
  • অডিয়েন্সের কোন চাহিদাটা পূরণ করতে পারছে না
  • ব্র্যান্ডিং এ কোনো ঘাটতি আছে কি না

এই সব কিছুই আপনার কম্পিটিটরকে এনালাইসিস করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এই পয়েন্টগুলো যদি আপনি ব্যবসা শুরুর পূর্বেই পরিকল্পনা করে বের করতে পারেন তবে আপনার ব্যবসা শুরুর যাত্রাটা আশা করা যায় অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।

এই সম্পর্কিত- একটি সফল ই-কমার্স বিজনেস গড়ে তুলতে ৮ টি ব্র্যান্ডিং স্ট্রাটেজি এবং তার সঠিক ব্যবহার

আপনার USP (Unique Selling Proposition) তৈরি করুন

  • আপনার পণ্য বা সেবা কীভাবে অন্যদের থেকে ভিন্ন তা ঠিক করুন
  • দাম, গুণগত মান, গ্রাহক সেবা, মার্কেটিং, ডেলিভারি টাইম – কোন জিনিসটা আপনাকে এগিয়ে রাখে তা বের করুন

আপনার কম্পিটিটর যদি খাঁটি মধু সেল করে তবে দেখুন মধু সেল করার ক্ষেত্রে তার কোন দিকে কিছুটা গ্যাপ আছে- হতে পারে সেটা মার্কেটিং কিংবা প্যাকেজিং অথবা পণ্য সোর্সিং – চেষ্টা করুন আপনি এক ধাপ এগিয়ে থাকতে, সেই গ্যাপ টা পূরণ করুন।

টার্গেট অডিয়েন্সের চাহিদা বোঝার কৌশল

একটি ব্যবসার প্রাণ হচ্ছে কাস্টমার, যদি আপনি কাস্টমারের চাহিদা এবং তাদের পেইন পয়েন্ট ধরতে পারেন তাহলে আপনি ব্যবসার মূল বিষয়বস্তুই বুঝতে পেরেছেন। নয়তো আরো অনেক ব্যবসার মতোই আপনার ব্যবসাটাও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। মনে রাখবেন, সবাই আপনার কাস্টমার না। 

তাই আপনার অডিয়েন্স কে বা কারা সেটা আগে বুঝতে হবে। ভুল অডিয়েন্সের কাছে বা ভুল উপায়ে মার্কেটিং এর কারণে ব্যবসা সফল না হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

কৌশলসমূহ

১। বাজার গবেষণা করুন – এক্ষেত্রে অনলাইনে সার্ভে করতে পারেন ও ফিডব্যাক সংগ্রহ করুন। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ফোরামে, রিভিউ বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করুন। এক্ষেত্রে আগে যেমন বললাম, আপনার কম্পিটিটরকে যদি ঠিকভাবে এনালাইসিস করতে পারেন তবে আপনার জন্য টার্গেট অডিয়েন্স বের করা অনেকাংশেই সহজে যাবে একই সাথে কাস্টমারের চাহিদাও বুঝতে পারবেন।

২। কাস্টমারের কেনাকাটার প্রবণতা ও ধরণ বোঝার চেষ্টা – আপনার পণ্যের প্রাইসিং নির্ধারণের আগেই চেষ্টা করুন কাস্টমার কেমন দামে পণ্য কিনতে পছন্দ করে সেটা খুঁজে বের করতে। সবচেয়ে জরুরী হলো, তারা কোন সমস্যাটা ফেইস করছেন এবং আপনি কীভাবে সেটার সমাধান করতে পারবেন তা বের করুন। ব্যবসা শুরুর পরিকল্পনায় এই ধাপটি অনেক জরুরী।

৩। সরাসরি যোগাযোগ করুন – টার্গেট অডিয়েন্সের চাহিদা বুঝতে তাদের সাথে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যুক্ত হতে পারেন এবং সেখানে তাদের মতামত নিতে পারেন একই সাথে সরাসরি যদি কাস্টমারের সাথে যোগাযোগের সুযোগ থাকে তবে সেটাও করতে পারেন।

৪। ট্রেন্ড ও বাজার পর্যবেক্ষন – টার্গেট অডিয়েন্সের চাহিদা বুঝতে বর্তমানের ট্রেন্ড ফলো করুন এবং বাজার পর্যবেক্ষন করে বোঝার চেষ্টা করুন সেই পণ্যের চাহিদা বাস্তবে কেমন, পণ্যটি দীর্ঘমেয়াদি ফলপ্রসূ হবে কি না। মাঝে মাঝে দেখা যায় অনেকেই ট্রেন্ডের সাথে গা ভাসিয়ে দেন এবং ব্যবসা শুরু করেন কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই এরপর যখন ট্রেন্ড শেষ হয়ে যায় তখন সেই পণ্যের চাহিদাও শেষ সেই সাথে ব্যবসাও। তাই সবসময় ট্রেন্ডে গা না ভাসিয়ে, বাস্তবতার সাথে পর্যবেক্ষন করুন।

সফল নতুন ব্যবসা পরিকল্পনার জন্য স্ট্র্যাটেজি তৈরি

সফল নতুন ব্যবসা পরিকল্পনার জন্য স্ট্র্যাটেজি তৈরি

US Census Bureau এর ডাটা অনুযায়ী গত ৫ বছরে সবচেয়ে বেশী নতুন বিজনেস শুরু হয়েছে। যা প্রায় ৫৬% বেশী বলা যেতে পারে। ডাটা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৫.৫ মিলিয়ন নতুন ব্যবসা শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সব ব্যবসা ই কি সফল হয়? 

নাহ, হয় না। শুনলে অবাক হবেন, এসব ব্যবসার মধ্যে ৭০% ব্যবসা-ই দুই বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় সঠিক পরিকল্পনার অভাবে। ৫০% বন্ধ হয়ে যায় ৫ বছরের মাথায়, মাত্র ২৫% ব্যবসা টিকে থাকে ১৫ বছর পর্যন্ত ।

এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ব্যবসা শুরুর সংখ্যা অনেক বেশী হলেও বাস্তবে টিকে থাকে খুব সংখ্যকই। তাই ব্যবসার শুরুতে যদি সঠিকভাবে পরিকল্পনা না করা হয় তবে আপনার ব্যবসাও টিকে না থাকার সম্ভাবনা অনেক।

ব্যবসার সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ

একটি ব্যবসা শুরুর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে লক্ষ্য স্থির করা খুব জরুরী। লক্ষ্য ছাড়া যেমন কোনো গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না তেমনই লক্ষ্য ছাড়া ব্যবসাও পরিচালনা করা যায় না। 

    • সংক্ষিপ্তমেয়াদী লক্ষ্য: যেকোনো ব্যবসা সফলভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে শুরুতেই একটা স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ করা জরুরী। যা মূলত ৬ মাস থেকে ১ বছর মেয়াদী হয়ে থাকে। যেমন: ৩ মাসে ১০০ টি পণ্য বিক্রি করা।
    • দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য: ৩-৫ বছরের মধ্যে ব্যবসাকে সম্প্রসারিত করা (নতুন পণ্য সংযোজন, নতুন বাজারে প্রবেশ)। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাভজনক পর্যায়ে পৌঁছানোর লক্ষ্য সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের অন্তর্ভুক্ত। একই সাথে ব্যবসাকে একটি ব্যান্ডে পরিণতও এই সময়ের মধ্যেই করতে হবে।

নতুন ব্যবসা পরিকল্পনায় ঝুঁকি বিশ্লেষণ 

ব্যবসা মানেই ঝুঁকি, যদি ঝুঁকি না থাকে তবে সেটা সুদের পর্যায়ে চলে যাবে। যেকোনো ব্যবসায় কম-বেশী লাভ লস থাকবেই। এই পরিকল্পনা করেই মূলত ব্যবসায় আগানো উচিত। নতুন ব্যবসায় কীভাবে সেই ঝুঁকি বিশ্লেষণ করা যায় এবং ঝুঁকি এড়ানো যায় তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। 

ব্যবসায় যদি আপনি আগেই ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করতে পারেন এবং সেগুলো ব্যবস্থাপনা করতে পারেন তবে নতুন ব্যবসায় ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যায়।

ব্যবসায় সাধারণত বেশ কয়েক ধরণের ঝুঁকি পরিলক্ষিত। এরমধ্যে ৪ টি হলো – আর্থিক ঝুঁকি, বাজার ঝুঁকি, আইনি ঝুঁকি, সরবরাহ ও উৎপাদন ঝুঁকি।

  • আর্থিক ঝুঁকি – ব্যবসায় আর্থিক ঝুঁকি মূলত মূলধন কমে গেলে কিংবা লসের সম্মুখীন হলে দেখা যায়। এছাড়াও অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ঘটনাই আর্থিক ঝুঁকির সাথে সংশ্লিষ্ট। আর্থিক ঝুঁকি এড়াতে ব্যবসা শুরুতেই বাজেট পরিকল্পনা করুন, জরুরি সঞ্চয় কিংবা বিকল্প ফান্ডিং এর ব্যবস্থা রাখুন।
  • বাজার ঝুঁকি – পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া, নতুন প্রতিযোগীর প্রবেশ কিংবা ট্রেন্ড পরিবর্তনের কারণে ব্যবসায় বাজার ঝুঁকি দেখা যায়। এজন্য মার্কেট রিসার্চ করা, ট্রেন্ডের সাথে খাপ খাওয়ানো এবং সব ট্রেন্ডেই গা না ভাসানো উচিত।
  • আইনি ঝুঁকি – ব্যবসায় লাইসেন্স ঠিক না রাখা, ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া কিংবা অন্যান্য আইনি নীতিমালা না মানার কারণে আইনি ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। এমতাবস্থায়, লাইসেন্স ঠিক করা, নিয়মিত কর প্রদান করা এবং অন্যান্য নীতিমালা মেনে চলা উচিত।
  • সরবরাহ ও উৎপাদন ঝুঁকি: কাঁচামালের সংকট, ডেলিভারি লেইট করা অথবা উৎপাদন ব্যহত হলে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়। যা এড়াতে হলে একাধিক সরবরাহকারী রাখা ও পণ্যের স্টক ইনভেন্টরি ঠিক রাখা দরকার।

নতুন ব্যবসার জন্য ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং কৌশল

নতুন ব্যবসার জন্য ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং কৌশল

অনলাইন হোক কিংবা অফলাইন, যেকোনো ক্ষেত্রেই একটি উদ্যোগ সফলভাবে এগিয়ে নিতে ব্র‍্যান্ডিং ও মার্কেটিং কৌশল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মনে প্রশ্ন আসতে পারে ব্র‍্যান্ডিং ও মার্কেটিং এর মধ্যে আসলে পার্থক্য কোথায়? বলছি, আগে একটা উদাহরণ দেখুন। 

আপনি আপনার পরিবারের জন্য জুতা কিনবেন, এখন কোন দোকানে যাবেন বা কোন ব্র‍্যান্ডের নাম আপনার মাথায় আসে? নিশ্চয়ই বাটা কিংবা এপেক্স? বেশীরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই দেখবেন, জুতা কিনতে যাচ্ছে আর বাটা অথবা এপেক্সের নাম মাথায় আসে নি এমন হতেই পারে না। এর কারণ কি কখনো খেয়াল করেছেন?

কারণ ব্র‍্যান্ডিং! জুতার আরো অনেক ব্র‍্যান্ড অথবা দোকান থাকলতেও এই যে আমাদের সাব কনশিয়াস মাইন্ডে বাটার নাম আসে অথবা এপেক্সের কথা ভাবি এটাই হলো ব্র‍্যান্ডিং এর ফলাফল। তারা দীর্ঘমেয়াদী মার্কেটিং এর ফলে অডিয়েন্সের মধ্যে এমন জায়গা করে নিয়ে নিয়েছে এখন মানুষের ওই পণ্যের প্রয়োজন হলেই তাদের কথা মাথায় আসে।

এটাই হলো পাওয়ার অফ মার্কেটিং এবং একেই বলে ব্র‍্যান্ডিং। একটি ব্যবসাকে সফলভাবে ব্র‍্যান্ড তখনই বলা যাবে যখন মেজরিটির মধ্যেই এই আস্থা তৈরী হবে। 

কীভাবে ব্যবসার জন্য সফলভাবে ব্র‍্যান্ডিং ও মার্কেটিং করবেন? চলুন জেনে নিই –

নতুন ব্যবসা পরিকল্পনায় – ব্র‍্যান্ডিং 

আপনার ব্যবসার মিশন, ভিশন, কালার, টোন, কাস্টমারের সাথে যোগাযোগের ধরণ, মার্কেটিং এর ধরণ এই সব কিছুই ব্র‍্যান্ডিং এর অন্তর্ভুক্ত। ব্র‍্যান্ডিং এক দুইদিনের বিষয় না এবং এক দুইদিনে হয় ও না। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, মানসম্মত পণ্য, উন্নতমানের কাস্টমার সেবা। এই সব কিছু নিশ্চিত করতে পারলেই দেখবেন আপনার ব্যবসা শীঘ্রই একটি ব্র‍্যান্ডে পরিণত হচ্ছে। 

নতুন ব্যবসা পরিকল্পনায় – লোগো ডিজাইন

লোগো হচ্ছে আপনার ব্যবসার পরিচায়ক। এই লোগোর মাধ্যমেই আপনি আপনার অডিয়েন্সের কাছে পরিচিত হবেন এবং এই লোগোই আপনাকে অন্যান্য কম্পিটিটর থেকে আলাদাভাবে তুলে ধরবে। তাই লোগো ডিজাইনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আকর্ষণীয় কিন্তু স্মরণীয় করার চেষ্টা করবেন। অবশ্যই আপনার পণ্যের বা সেবার সাথে সম্পৃক্ত এমন লোগোই ডিজাইন করবেন।

নতুন ব্যবসা পরিকল্পনায় – কন্সিসস্টেন্সি

আপনার ব্যবসা যদি অনলাইনেও কার্যক্রম থাকে তবে চেষ্টা করবেন ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, প্যাকেজিং – সবকিছুতে ব্র্যান্ডের একরকম চেহারা বজায় রাখতে।

নতুন ব্যবসা পরিকল্পনায় মার্কেটিং এর ভূমিকা

আপনার ব্যবসার পরিকল্পনা অনুযায়ী আপনার পণ্য রেডি, টার্গেট অডিয়েন্স সিলেক্ট করে ফেলেছেন, ব্র্যান্ডিং এর যাবতীয় বিষয়াদিও তৈরী এবার কী করবেন? মার্কেটিং। কারণ মার্কেটিং ছাড়া আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে আপনার পণ্য পৌঁছানো সম্ভব না। সুতরাং অনলাইন হোক কিংবা অফলাইন মার্কেটিং তো করতেই হবে। তবে কোন মার্কেটিং টা করবেন? ডিজিটাল মার্কেটিং নাকি ট্রেডিশনাল মার্কেটিং?

এটা নির্ভর করবে আপনি আপনার পণ্য কাদের কাছে পৌঁছাতে চাচ্ছেন এবং আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কোথায় সেটার উপর। যেমন ধরুন, আপনি স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের বিভিন্ন স্টেশনারির আইটেম বিক্রি করেন সুতরাং আপনার দোকান অবশ্যই হবে স্কুল-কলেজের আশেপাশে? সেক্ষেত্রে মার্কেটিং টাও হবে সেরকম অর্থ্যাৎ ট্রেডিশনাল। সাধারণত অফলাইন ভিত্তিক ব্যবসায় খুব বেশী মার্কেটিং এর প্রয়োজন হয়না যদি আপনার ব্যবসার স্থান সঠিক নির্বাচন করতে পারেন। 

কিন্তু আপনি যদি চান আপনার ব্যবসাকে অনলাইনেও সম্প্রসারিত করবেন সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনাকে বেছে নিতে হবে ডিজিটাল মার্কেটিং এর পথ। এর আগে বুঝতে হবে আপনার অডিয়েন্স অনলাইনে কোথায় বেশী এক্টিভ? তারা কি ফেসবুকে বেশী সক্রিয় নাকি ইন্সটাগ্রামে? নাকি পিন্টারেস্টে? এখানেও হতে পারে টার্গেট অডিয়েন্স এনালাইসিস। 

এবার যদি আপনার প্লাটফর্ম ও নির্ধারণ করা শেষ হয়ে থাকে এখন কাজ হবে মাঠে নেমে পড়ার, মানে ডিজিটাল মার্কেটিং। ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে কোনো ডিজিটাল প্লাটফর্মে পণ্যের মার্কেটিং করাকে বোঝায়। 

যেহেতু আজকাল প্রায় সবাইই সোশ্যাল মিডিয়াতে এক্টিভ তাই দেখা যাচ্ছে অফলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও এখন অনলাইন মার্কেটিং এর দিকে নজর দিচ্ছে। কারণ এতে করে অধিক অডিয়েন্সের কাছে খুব অল্প সময়ে পৌঁছানো যায় খুব সহজেই। আপনিও নিশ্চয়ই এই সুযোগটি হাত ছাড়া করবেন না?

সঠিক মূল্যে পণ্য নির্ধারণ করা

সঠিক মূল্যে পণ্য নির্ধারণ করা

অনেক নতুন ব্যবসায়ীরা ঠিক এই জায়গাতে এসেই সবচেয়ে বেশী ভুল টা করে। যেমন, কেউ যদি কোনো পণ্য ১০০ টাকায় বিক্রি করে নতুন একজন ব্যবসায়ী এসে অধিক সেল ও কাস্টমার পাওয়ার আশায় বিক্রি করে ৫০ টাকায়। 

এতে কি হয় জানেন? মার্কেট নষ্ট হয় একই সাথে একটা সময় পরে খরচের সাথে তাল মিলিয়ে উঠতে না পারার কারণে ব্যবসা বিশাল লসের সম্মুখীন হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। 

এখন আপনি বলতে পারেন আমি যদি পরে দাম বাড়িয়ে ফেলি তাহলে? এক্ষেত্রে সমস্যা হলো, তখন আপনি আপনার কাস্টোমারের বিশ্বাস হারাবেন, কারণ কেউ যখন একই জিনিস আপনার থেকে সবসময় ৫০ টাকায় কিনছে তখন আপনি হুট করেই ১০০ টাকা দাম করে ফেললে তারা একটা ধাক্কা খাবে এবং আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা হারাবে। 

এছাড়া আপনি ৫০ টাকায় বিক্রি করে যে কাস্টোমার বেইজ তৈরী করেছেন তাদের মধ্যে সবাই কিন্তু স্থায়ী না। কারণ তারাও কিন্তু ১০০ টাকায় যিনি বিক্রি করতো তাকে ছেড়ে আপনার দ্বারস্থ হয়েছে সুতরাং ভবিষ্যতে আপনি দাম বাড়ালে তারা যেখানে কমে পাবে সেখানেই মুভ করবে এটাই স্বাভাবিক। 

তাই পণ্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা ব্যবসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। এক্ষেত্রে আপনি মার্কেট রিসার্চ করবেন, একই পণ্যের দাম বাজারে কেমন সেটা খেয়াল করবেন, আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের চাহিদা কেমন তারা কেমন দামে পণ্যটি চায় তা বোঝার চেষ্টা করবেন এরপর আপনার সকল খরচ যোগ করে প্রফিট হিসাব করবেন।

ব্যবসার আয় বৃদ্ধি ও খরচ ব্যবস্থাপনা

নতুন ব্যবসা শুরুর পর অনেকেই একটা ভুল করেন, আয় ব্যয়ের খরচ ঠিকভাবে রাখেন না। বছরশেষে লাভ-লসের হিসাব থাকে না এদিকে ব্যবসাও যেখানে শুরু করেছিলেন সেখানেই স্থির থাকে। এমনটা কেনো হয়? 

কারণ ব্যবসায় আয় ও ব্যয়ের খরচের সঠিক হিসাব না রাখার ফলে। আপনি প্রতিদিন কত টাকার সেল করছেন, মাসে কতটাকার সেল করেছেন, প্রতিদিন আপনার খরচ কত, মাসে আপনার খরচ কত এইসবকিছুর হিসাব রাখা খুব জরুরী। এক্ষেত্রে হালখাতা কিংবা স্প্রেডশীট ব্যবহার করতে পারেন, ফলে সহজেই মাস শেষে আপনার আয়ের এবং ব্যয়ের একটি সুষ্ঠ হিসাব পাবেন।

অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর কৌশল

অনেকেই ব্যবসায় অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে পারেন না কিংবা কোনটা অপ্রয়োজনীয় খরচ কোনটা সেটাই ধরতে পারেন না। একটি উদাহরণ দেই, ধরুন আপনার নতুন ব্যবসা – মাসে আপনার ১০০ টা সেল হয়। কিন্তু আপনি এরজন্য বিশাল এক অফিস ভাড়া করেছেন, ডেকোরেশনে প্রচুর টাকা খরচ করেছেন, ২ জনের পরিবর্তে ২০ জন কর্মী রেখেছেন। 

আপনার দরকার নেই খুব হাই কনফিগারেশনের পিসি সেটাপ তবুও আপনি লাখ খানেক টাকা খরচ করে পিসি সেটাপ করেছেন, এই সবকিছুই অপ্রয়োজনীয় খরচ।

ব্যবসার ধরণ, অবস্থা বুঝে খরচের খাত নির্ধারণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। একজন লাখ টাকা খরচ করে অফিস ভাড়া করেছে মানেই যে আপনার ও করতে হবে এটা ভুল। নিজের পরিস্থিতি ও ব্যবসার আয়ের উপর নির্ভর করে ব্যয়ের চিন্তা করবেন। তাই ব্যবসার শুরুতেই বাজেট পরিকল্পনা করা জরুরী।

গ্রাহকসেবা ও রিভিউ: নতুন ব্যবসার টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি

গ্রাহকসেবা ও রিভিউ নতুন ব্যবসার টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি

নতুন হোক কিংবা পুরাতন যেকোনো ব্যবসা আসলে কতটুকু ভালো করছে কিংবা কতটুকু সফল তা জানার মাপকাঠি হলো গ্রাহকের সন্তুষ্টি বা রিভিউ। আজকাল অনলাইনে বিভিন্ন পেইজেই দেখবেন রিভিউ সেকশন নামে আলাদা একটি সেকশন আছে যেখানে মানুষ যেই প্রতিষ্ঠানের রিভিউ প্রদান করে। 

আচ্ছা, কেনো এই রিভিউ গুরুত্বপূর্ণ?

কারণ আমরা সাধারণত হুট করে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না যদি না সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকে কিংবা কোনো রিভিউ থাকে। অনলাইনে মানুষ যখন কোনো নতুন পেইজ থেকে কেনাকাটা করার চিন্তা করে শুরুতেই সেই ব্র্যান্ডের রিভিউগুলো চেক করে কিংবা মানুষ থেকে জেনে নেয় এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বস্ত কিনা কিংবা পণ্যের কোয়ালিটি কেমন।

আর যদি সেটা হয় নতুন ব্যবসা তাহলে তো বুঝতেই পারছেন গ্রাহকের সন্তুষ্টি এখানে কতটা ভূমিকা পালন করে? এছাড়াও আপনার ব্যবসাটা আসলে কতটুকু ভালো করছে কিংবা কোনো পরির্তনের প্রয়োজন আছে কি না সেটা জানা যায় এই রিভিউর মাধ্যমেই।

তাই কাস্টমারকে মানসম্মত পণ্যের পাশাপাশি দুর্দান্ত গ্রাহক সেবা দিতে কখনোই কার্পণ্য করবেন না। ব্যবসায় সফলতা তখনই আসে যখন আপনার ব্যবসার পণ্য ও সার্ভিসের প্রতি কাস্টমার সন্তুষ্ট হয়ে অন্যের কাছে রেকমেন্ড করে।

শেষ কথা

পরিশেষে এটাই বলা যায়, একটি উদ্যোগকে সফলভাবে পরিচালনা করতে প্রয়োজন সুষ্ঠ পরিকল্পনা এবং অবশ্যই সেটি হতে হবে দীর্ঘমেয়াদি। একই সাথে ধৈর্য্য ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নতুন ব্যবসাকে সফল করা সম্ভব। 

তবে সফলতা যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি একটি বিষয়, তাই বিচলিত না হয়ে যেকোনো ঝুঁকি মোকাবেলা করে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারাই সফলতার মূল চাবিকাঠি।

নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

আপনার মূল্যবান মতামত দিন

মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। আবশ্যক ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত *

আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন

সবার আগে মন্তব্য করুন