অনলাইনে ব্যবসা করতে হলে ( যে ধরণের বিজনেসই হোক) সবার প্রথমে আপনার যে জিনিসটি দরকার হবে সেটা হলো ‘ডোমেইন’ বা ডোমেইনের নাম। অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে জানতে গিয়ে নিশ্চয় আপনার মনে – ডোমেইন নেম কি? ডোমেইন নাম কেন প্রয়োজন অথবা এর দাম কত? – এই ধরনের প্রশ্নের উদয় হয়েছে। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনার এই সব প্রশ্নের সহজবোধ্য উত্তর দিতে চেষ্টা করবো।
ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেম কি?
মনে করুন, ঢাকা শহরের একেক টা দোকান হল একেক টা ওয়েবসাইট। ঢাকায় প্রতিটি এলাকার পোস্টাল কোড, রাস্তার নাম্বার এবং দোকানের হোল্ডিং নাম্বার দিয়ে দোকানগুলো কে চিহ্নিত করা আছে। এভাবে প্রতিটা দোকানের (ওয়েবসাইট) একটা ঠিকানা আছে, কিন্তু সেগুলো কতগুলো সংখ্যার সমষ্টি (যেমন ১৯২.০.০.১) দিয়ে তৈরি।
এখন প্রত্যেকবার দোকানে (ওয়েবসাইট) যেতে হলে আপনাকে সংখ্যার গুলো মনে করে সঠিকভাবে রিকশাওয়ালা (ব্রাউজার) কে বলতে হবে। তবেই আপনি সেই দোকানে (ওয়েবসাইট) যেতে পারবেন।
আপনার কাছের এবং আশেপাশের একটি দুটি দোকানের সংখ্যার ঠিকানা আপনার হয়ত মনে থাকবে। কিন্তু প্রতি দিন বা মার্কেটে গেলে আপানি অসংখ্য দোকানে যেতে চান। এতগুলো দোকানের সংখ্যা দিয়ে তৈরি ঠিকানা কি মনে রাখা সম্ভব!
এই সমস্যার সমাধানেই ডোমেইন নামের জন্ম। ডোমেইন নাম হলো সহজে মনে রাখা যায় এমন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ (যেমন google.com) । যখন আপনি কোন ওয়েবসাইটে ঢুকতে চান, তখন ব্রাউজারের ঠিকানা বারে এই ডোমেইন নামটাই লিখে কিবোর্ডের এন্টার চাপলে আপনি ওয়েবসাইটে পৌঁছে যান।
পর্দার আড়ালে একটা জিনিস (DNS) কাজ করে। এটি আপনার লিখা ডোমেইন নামকে (যেমন deshicommerce.com) সেই কঠিন সংখ্যার ঠিকানায় (যেমন ১৯২.০.০.১) বদলে দিয়ে এবং আপনাকে ঠিক ওয়েবসাইটে পৌঁছে দেয়। সুতরাং, ডোমেইন নাম মনে রাখলেই আপনি যেকোনো ওয়েবসাইটে ঢুঁকতে পারবেন!
ডোমেইন নেমের ইতিহাস
ডোমেইন নেম (Domain Name) এর ইতিহাস শুরু হয় ১৯৮০ সালে। ইন্টারনেটের প্রথম পর্যায়ে, কম্পিউটারগুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত হতে আইপি ঠিকানা ((IP Address) ব্যবহার করত। তবে, IP ঠিকানা মনে রাখা কঠিন ছিল, তাই ১৯৮৩ সালে পল মকিন্স এবং স্টিভ কফম্যান ডোমেইন নেম সিস্টেম (DNS) প্রবর্তন করেন, যা আলফানিউমেরিক নামের মাধ্যমে ইন্টারনেট ঠিকানাগুলোকে সহজে চিনতে সহায়ক হয়।
DNS ব্যবহার শুরু হলে, সাইটগুলো তাদের IP ঠিকানার পরিবর্তে একটি সহজ নাম গ্রহণ করতে পারে, যেমন www.example.com। প্রথম ডোমেইন নামটি ছিল symbolics.com, যা ১৯৮৫ সালে নিবন্ধিত হয়। এরপর, ডোমেইন নামের বাজার বেড়ে গিয়ে, ইন্টারনেটের বাণিজ্যিক ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। ১৯৯০ এর দশকে ডোমেইন নাম বিক্রি এবং নিবন্ধনের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হয়, এবং .com, .org, .net এর মতো সাধারণ টপ-লেভেল ডোমেইন (TLD) জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ডোমেইন নেম দেখতে কেমন?
একটি ডোমেইন সাধারণত দুটি বা তিনটি শব্দ নিয়ে গঠিত যা ডট দ্বারা পৃথক থাকে। যেমন: আমদের ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেম হল www.deshicommerce.com
ডোমেইন হলো আপনার ওয়েবসাইট বা ব্র্যান্ড এর নাম। ইন্টারনেটে আপনার ওয়েবসাইট খুজে প্রবেশ করতে এটির প্রয়োজন হয় । ইন্টারনেট ব্রাউজারের এড্রেস বার এ ডোমেইন নাম লিখে আমরা একটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারি।
ব্রাউজারের এড্রেস বারে ওয়েবসাইটের ডোমেইন নাম লেখা www.thisisyourdomain.com
ধরুন: একটি ওয়েবসাইট www.thisisyourdomainname.com। এই ওয়েবসাইটের নামের ৩টি অংশ আছে। যথাঃ
- www – সাব ডোমেইন (ওয়েবসাইট সার্ভার বুঝাতে এটা ব্যবহার করা হয়)
- thisisyourdomain – ব্র্যান্ড নেম বা আপনার ওয়েবসাইটের নাম
- .com – টপ লেভেল ডোমেইন (Top level Domain)
ডোমেইন নামের কিছু উদাহরণ
ডোমেইন নামের একটি উদাহরণ হলো facebook.com। এটি একটি সেকেন্ড-লেভেল ডোমেইন (“facebook”) এবং একটি টপ-লেভেল ডোমেইন (“.com”) নিয়ে গঠিত। আরও কিছু জনপ্রিয় ডোমেইন নামের উদাহরণ হলো:
- youtube.com – জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম
- bangladesh.gov.bd বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইট
- iba-du.edu আই বি এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডোমেইন নাম
- worldbank.org আন্তর্জাতিক অর্থ সহায়তা প্রতিষ্ঠানের ডোমেইন নাম
- daraz.com.bd জনপ্রিয় ই-কমার্স ওয়েবসাইট ডোমেইন নেম
এই রকম কোটি কোটি ডোমেইন নাম আছে।
ডোমেইন নাম কী কাজে ব্যবহৃত হয়?
ডোমেইনগুলি আপনার ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া সহজ করার জন্য ব্যবহার করা হয়, তবে এটির কাজ এতটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। নিচে ডোমেইন ব্যবহারের আরও কিছু কারণ তুলে ধরা হলো।
১. নিজের ব্যবসার নামের মালিকানা অর্জন
ডোমেইন নিবন্ধন করা মানে ইন্টারনেটের আপনার ব্যবসার নাম ডিজিটাল ট্রেডমার্ক করা। একবার নাম নিবন্ধন করলে, অন্য কেউ এই ডোমেইন নামের মালিকানা দাবি করতে পারবে না, যতক্ষণ না আপনি এই ডোমেইনের নিবন্ধিত নাম নিজে বাতিল করেন।
২. আপনার ব্র্যান্ডকে নামকে আরও পরিচিত এবং প্রতিষ্ঠিত করা
একটি ডোমেইন নাম অনলাইনে ব্র্যান্ডের পরিচয়কে প্রতিষ্ঠা করে। উদাহরণস্বরূপ – একজন ভিজিটর আমাদের দেশীকমার্স ওয়েবসাইটের হোমপেজ থেকে ব্লগ বা টিউটোরিয়ালে গেলে তিনি দেখবেন যে মূল ডোমেইন নামটি একই থাকছে। এটির রঙের স্কিম, লোগো এবং অন্যান্য ব্র্যান্ড উপাদান ভিজিটরের মনে ব্যবসাকে স্মরণীয় করে তোলে।
৩. দেশীকমার্সের সাথে কাস্টম ডোমেইন সংযোগ
আপনার ব্র্যান্ডের কাস্টম ডোমেইনকে বিনামূল্যে আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটের সাথে সংযুক্ত করে গ্রাহকের আস্থা এবং ব্র্যান্ডের পরিচিতি বাড়াতে পারবেন।
- কাস্টম ডোমেইন সংযোগ করুন বিনামূল্যে।
- আপনার ব্র্যান্ডকে সব সোশ্যাল মিডিয়াসহ সব চ্যানেলে এক সুত্রে গেথে রাখুন।
- গ্রাহকদের অনলাইনে আপনাকে খুঁজে পাওয়ার সুযোগ দিন।
- আরও অনেক কিছু!
৪. বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন এবং সহজে স্মরণীয় করে তোলা
আপনার কোম্পানির নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ডোমেইন নাম আপনার ওয়েবসাইটকে ব্যবহারকারীদের কাছে আরও বৈধ এবং পেশাদার করে তোলে। এটি ভিজিটরদের মধ্যে আস্থা তৈরি করে যাতে তারা ওয়েব পেজে সার্ভে বা ফর্ম জমা দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
প্রো টিপ: আপনি দেশীকমার্স ব্যবহার করে কোনো কোডিং দক্ষতা ছাড়াই একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। এর সাথে কোনো অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই কাস্টম ডোমেইন সংযোগও করতে পারবেন। একবার ভাবুন তো – নিজের ব্র্যান্ড নামে একদম নিজের ই-কমার্স ওয়েবসাইট!
৫. প্রতিষ্ঠানের নাম সহজে মনে রাখা
আপনার ডোমেইনকে স্মরণীয় করে তুলুন যাতে ভিজিটররা সহজেই এটি সার্চ বারে টাইপ করতে পারে ফলে সরাসরি ট্রাফিক বৃদ্ধি পায়।
উদাহরণস্বরূপ, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন্স লিমিটেড -এর একটি সংক্ষিপ্ত ও সুন্দর ডোমেইন নাম রয়েছে: banglalink.net । এই ডোমেইন নামটি সহজেই মনে রাখা যায় যা banglalinkdigitalcommunicationsltd.com -এর মতো একটি বিকল্পের চেয়ে অনেক সহজ।
৬. প্রতিযোগীদের মধ্যে আলাদা করে তোলা
একটি সহজ এবং আকর্ষণীয় ডোমেইন নাম আপনার ওয়েবসাইটকে প্রতিযোগী সাইট থেকে আলাদা করে। নিজের ডোমেইন দিয়ে ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করলে আপনার প্রতিযোগী ফেসবুক পেজ ব্যবসায়ীদের থেকে আপনি হবেন সম্পুর্ন আলাদা। যা আপনাকে অধিক বিক্রিতে সহায়তা করবে।
৭. সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং এবং অর্গানিক ওয়েব ট্রাফিক
সাধারণত একটি ডোমেইন যত পুরোনো হয়, তার গুরুত্ব তত বেশি হয়, যা সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফল পৃষ্ঠায় (SERP) ভালো র্যাংকিং ও অর্গানিক সার্চ ট্রাফিক পেতে সাহায্য করে। এর কারণ হলো এটি গুণগত কন্টেন্ট, ইন্টারনাল লিঙ্ক এবং ব্যাকলিঙ্ক পেতে সময় পায়। তাই ডোমেইন নাম আগে নিবন্ধন করার আরও একটি কারণ হলো এর গুরুত্ব বৃদ্ধির সুযোগ।
ডোমেইন এবং সাবডোমেইন এর মধ্যে পার্থক্য কি?
সাবডোমেইন হলো আপনার মূল ডোমেইনের একটি অংশ, যা নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু বা পরিষেবা আলাদা করতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, shop.example.com হলো অন্য একটি সাবডোমেইন যা মূল ডোমেইন example.com এর নামের সাথে যুক্ত কিন্তু একটি সম্পূর্ন আলাদা ঠিকানা। গুগল বা অন্য সার্চ ইঞ্জিন সাবডোমেইনকে আলাদা ওয়েবসাইট হিসেবে তাদে ইন্ডেক্সে যুক্ত করে।
ডোমেইন রেজিস্ট্রার কি? কে এই ডোমেইন নেম সিস্টেম নিয়ন্ত্রন করে?
সহজ ভাষায়, ডোমেইন রেজিস্ট্রার হলো এমন একটি কোম্পানি যারা আপনাকে ডোমেইন নাম কিনতে এবং নিবন্ধন করতে সাহায্য করে। জনপ্রিয় রেজিস্ট্রার: Namecheap, GoDaddy, Google Domains কিছু জনপ্রিয় ডোমেইন রেজিস্ট্রারের উদাহরণ।
কে ডোমেইন নেম সিস্টেম (DNS) নিয়ন্ত্রণ করে?
ইন্টারনেট কর্পোরেশন ফর অ্যাসাইন্ড নেমস অ্যান্ড নাম্বারস (ICANN) হলো একটি অলাভজনক সংস্থা যা DNS নিয়ন্ত্রণ করে।
কিভাবে একটি ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রার ও রিন্যু করতে হয়?
ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রেশনের ধাপসমূহ-
১. ডোমেইন নেম নির্বাচন: প্রথমে আপনার পছন্দের ডোমেইন নেমটি নির্বাচন করুন। * .com, .net, .org এর মতো জনপ্রিয় extension গুলো সাধারণত বেশি ব্যবহৃত হয়।
* আপনার ব্যবসা বা ওয়েবসাইটের উদ্দেশ্য অনুসারে extension নির্বাচন করুন।
২. ডোমেইন নেম সার্চ: আপনার পছন্দের ডোমেইন নেমটি এভেইলেবল কিনা তা যাচাই করার জন্য কোন ডোমেইন রেজিস্ট্রারের ওয়েবসাইটে সার্চ করুন (যেমন: GoDaddy, Namecheap)।
দেশী কমার্স থেকেও নিতে পারেন। এখানে ক্লিক করে আমাদের প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করুন।
৩. রেজিস্ট্রার নির্বাচন: আপনার পছন্দের রেজিস্ট্রার নির্বাচন করুন। রেজিস্ট্রার নির্বাচনের সময় মূল্য, সেবা, এবং সমর্থন বিবেচনা করুন।
৪. রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন: রেজিস্ট্রারের ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন। এর জন্য আপনাকে কিছু ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে হবে এবং রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদান করতে হবে।
কিভাবে ডোমেইন নেম রিন্যু করবেন?
১. রিনিউয়াল নোটিশ: আপনার ডোমেইন নেমের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে রেজিস্ট্রার আপনাকে রিনিউয়াল নোটিশ পাঠাবে।
২. রিনিউয়াল প্রক্রিয়া: নোটিশে উল্লেখিত নির্দেশাবলী অনুসরণ করে আপনার ডোমেইন নেম রিনিউ করুন। এর জন্য আপনাকে রিনিউয়াল ফি প্রদান করতে হবে।
ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রেশন বা কিনতে কত টাকা লাগে?
ডোমেইন নামের দাম কত এটা নিয়ে অনেকই সংশয়ে থাকেন। খুশির সংবাদ হল – আপনি খুব কম বাৎসরিক খরচেই একটি ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রেশন বা কিনতে পারবেন। আগে রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি এমন একটি সাধারন ডোমেইনের নামের মূল্য ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা হয়। তবে ডলারের চলতি দাম এবং ডোমেইন নেম বিক্রেতার উপর এই দামের কিছুটা হেরফেরও হতে পারে। পাশাপাশি আপনি কী ধরণের TLD (.com বা .net বা .biz বা .xyz ইত্যাদি) ব্যবহার করতে চান তার উপরও মূল্য নির্ভর করে।
আপনি ডোমেইন নেম কিনতে চাইলে দেশীকমার্সের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা আপনার ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড থাকলে godaddy.com, namecheap.com এর মত প্রতিষ্ঠান থেকেও সহজেই কিনতে পারবেন।
ডোমেইন নেমের নিরাপত্তা: আপনার ডোমেইন সুরক্ষিত রাখবেন যেভাবে
আপনার অনলাইন পরিচয়ের জন্য ডোমেইন নেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার ওয়েবসাইটের ঠিকানা এবং আপনার ব্র্যান্ডের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই ডোমেইন নেমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
আপনার ডোমেইন সুরক্ষিত রাখার জন্য কিছু নিম্নে প্রদত্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বিবেচনা করতে পারেন-
১. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার:
- আপনার ডোমেইন রেজিস্ট্রার অ্যাকাউন্টের জন্য একটি শক্তিশালী এবং অনন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
- পাসওয়ার্ডে বড় হাতের এবং ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্ন ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।
২. টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন সক্রিয় করুন:
- আপনার ডোমেইন রেজিস্ট্রার অ্যাকাউন্টে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) সক্রিয় করুন।
- 2FA একটি অতিরিক্ত নিরাপত্তা স্তর প্রদান করে যা আপনার অ্যাকাউন্টে অননুমোদিত অ্যাক্সেস প্রতিরোধ করে।
৩. ডোমেইন লক সক্রিয় করুন:
- আপনার ডোমেইন রেজিস্ট্রার “ডোমেইন লক” বৈশিষ্ট্যটি সক্রিয় করুন।
- এটি আপনার ডোমেইন নেম অননুমোদিত ভাবে স্থানান্তর বা মুছে ফেলা থেকে প্রতিরোধ করবে।
৪. WHOIS প্রাইভেসি সুরক্ষা ব্যবহার করুন:
- WHOIS প্রাইভেসি সুরক্ষা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য (নাম, ঠিকানা, ইমেইল ইত্যাদি) WHOIS ডেটাবেসে প্রকাশ থেকে প্রতিরোধ করে।
- এটি আপনাকে স্প্যাম, ফিশিং এবং পরিচয় চুরির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
৫. নির্ভরযোগ্য রেজিস্ট্রার ব্যবহার করুন:
- সুনামধন্য এবং নিরাপত্তা সচেতন ডোমেইন রেজিস্ট্রার থেকে আপনার ডোমেইন নেম রেজিস্টার করুন।
- তারা আপনার ডোমেইন নেমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
৬. নিয়মিত আপনার ডোমেইন নেমের রেকর্ড পরীক্ষা করুন:
- নিয়মিত আপনার ডোমেইন নেমের রেকর্ড (DNS রেকর্ড, WHOIS তথ্য ইত্যাদি) পরীক্ষা করুন যাতে কোন অস্বাভাবিক পরিবর্তন হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে পারেন।
৭. আপনার ইমেইল এবং ওয়েবসাইট সুরক্ষিত রাখুন:
- আপনার ডোমেইন নেমের সাথে সংযুক্ত ইমেইল এবং ওয়েবসাইট সুরক্ষিত রাখুন।
- শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করুন এবং নিরাপত্তা প্রোটোকল (SSL/TLS) ব্যবহার করুন।
৮. সতর্কতা অবলম্বন করুন:
- ফিশিং ইমেইল বা ওয়েবসাইট থেকে সাবধান থাকুন যা আপনার ডোমেইন নেমের তথ্য চুরি করার চেষ্টা করতে পারে।
- সন্দেহজনক লিঙ্ক বা সংযুক্তিতে ক্লিক করবেন না।
এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করে আপনি আপনার ডোমেইন নেমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অনলাইন হুমকি থেকে আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডকে রক্ষা করতে পারবেন।
সমাপ্তিঃ ডোমেইন কি?
বর্তমান যুগে অনলাইনে নিজের ব্র্যান্ডকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে ডোমেইন নেম এর কোন বিকল্প নেই। এটি আপনাকে গতানুগতিক ব্যবসা থেকে আলাদা করে তোলে এবং ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এর উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমায়।
যেহেতু এটি আপনি নিজের টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন তাই ডোমেইন নেম একমাত্র আপনি ছাড়া অন্য কেউ বন্ধ বা রেস্ট্রিক্ট করতে পারবে না। আবার আপনার ব্যবসার নাম কপি করে আরেকজন ডোমেইন নেম কিনে ব্যবসা করতে পারবে না। অর্থাৎ আপনার ব্যবসার নামের উপর ইন্টারনেটে আপনার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয় ।
বারবার জিজ্ঞাসিত প্রশ্নসমূহ
-
আপনার কাছে একটি ডোমেইনের মালিকানা কতদিন থাকে?
একটি ডোমেইনের মালিকানা সাধারণত ১ থেকে ১০ বছরের জন্য থাকে। তবে, মালিকানা মেয়াদ শেষে নবায়ন করা যায়। তাই বলা যায় আপনি যতদিন নবায়ন করবেন ততদিন ডোমেইনের মালিক থাকতে পারবেন।
-
ডোমেইন নেম নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম কি?
ডোমেইন নেম নিয়ন্ত্রণকারী প্রধান প্রতিষ্ঠানটি হল ICANN (Internet Corporation for Assigned Names and Numbers)। এটি বিশ্বব্যাপী ডোমেইন নাম সিস্টেম (DNS) এবং আইপি ঠিকানার বরাদ্দের দায়িত্ব পালন করে।
-
টপ লেভেল ডোমেইন কাকে বলে?
টপ-লেভেল ডোমেইন (TLD) হল ডোমেইনের শেষে থাকা অংশ, যেমন .com, .org, .net, .gov ইত্যাদি।
-
ডোমেইন নেম এ www থাকে কেন?
www (World Wide Web) হলো ওয়েবসাইটের সাবডোমেইন, যা ঐতিহ্যগতভাবে ওয়েবসাইটের শুরুতে ব্যবহৃত হয়, যদিও এখন অনেক ওয়েবসাইট সরাসরি ডোমেইন নাম দিয়ে এক্সেস করা যায়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন
আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন