ডোমেইন নেম কি? সংজ্ঞা, ব্যবহার এবং উদাহরণ

ডোমেইন নেম কি? সংজ্ঞা, ব্যবহার এবং উদাহরণ

নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ
শেয়ার করুন

অনলাইনে ব্যবসা করতে হলে ( যে ধরণের বিজনেসই হোক) সবার প্রথমে আপনার যে জিনিসটি দরকার হবে সেটা হলো ‘ডোমেইন’ বা ডোমেইনের নাম। অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে জানতে গিয়ে নিশ্চয় আপনার মনে  – ডোমেইন নেম কি? ডোমেইন নাম কেন প্রয়োজন অথবা এর দাম কত? – এই ধরনের প্রশ্নের উদয় হয়েছে। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনার এই সব প্রশ্নের সহজবোধ্য উত্তর দিতে চেষ্টা করবো।

ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেম কি?

মনে করুন, ঢাকা শহরের একেক টা দোকান হল একেক টা ওয়েবসাইট। ঢাকায় প্রতিটি এলাকার পোস্টাল কোড, রাস্তার নাম্বার এবং দোকানের হোল্ডিং নাম্বার দিয়ে দোকানগুলো কে চিহ্নিত করা আছে। এভাবে প্রতিটা দোকানের (ওয়েবসাইট) একটা ঠিকানা আছে, কিন্তু সেগুলো কতগুলো সংখ্যার সমষ্টি (যেমন ১৯২.০.০.১) দিয়ে তৈরি। 

এখন প্রত্যেকবার দোকানে (ওয়েবসাইট) যেতে হলে আপনাকে সংখ্যার গুলো মনে করে সঠিকভাবে রিকশাওয়ালা (ব্রাউজার) কে বলতে হবে। তবেই আপনি সেই দোকানে (ওয়েবসাইট) যেতে পারবেন।

আপনার কাছের এবং আশেপাশের একটি দুটি দোকানের সংখ্যার ঠিকানা আপনার হয়ত মনে থাকবে। কিন্তু প্রতি দিন বা মার্কেটে গেলে আপানি অসংখ্য দোকানে যেতে চান। এতগুলো দোকানের সংখ্যা দিয়ে তৈরি ঠিকানা কি মনে রাখা সম্ভব!

এই সমস্যার সমাধানেই ডোমেইন নামের জন্ম। ডোমেইন নাম হলো সহজে মনে রাখা যায় এমন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ (যেমন google.com) । যখন আপনি কোন ওয়েবসাইটে ঢুকতে চান, তখন ব্রাউজারের ঠিকানা বারে এই ডোমেইন নামটাই লিখে কিবোর্ডের এন্টার চাপলে আপনি ওয়েবসাইটে পৌঁছে যান।

পর্দার আড়ালে একটা জিনিস (DNS) কাজ করে। এটি আপনার লিখা ডোমেইন নামকে (যেমন deshicommerce.com) সেই কঠিন সংখ্যার ঠিকানায় (যেমন ১৯২.০.০.১) বদলে দিয়ে এবং আপনাকে ঠিক ওয়েবসাইটে পৌঁছে দেয়। সুতরাং, ডোমেইন নাম মনে রাখলেই আপনি যেকোনো ওয়েবসাইটে ঢুঁকতে পারবেন!

ডোমেইন নেম দেখতে কেমন?

একটি ডোমেইন সাধারণত দুটি বা তিনটি শব্দ নিয়ে গঠিত যা ডট দ্বারা পৃথক থাকে। যেমন: আমদের ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেম হল www.deshicommerce.com

ডোমেইন হলো আপনার ওয়েবসাইট বা ব্র্যান্ড এর নাম। ইন্টারনেটে আপনার ওয়েবসাইট খুজে প্রবেশ করতে এটির প্রয়োজন হয় । ইন্টারনেট ব্রাউজারের এড্রেস বার এ ডোমেইন নাম লিখে আমরা একটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারি।

ব্রাইজার এড্রেস বারে ডোমেইন নেম লেখা

ব্রাউজারের এড্রেস বারে ওয়েবসাইটের ডোমেইন নাম লেখা www.thisisyourdomain.com

ধরুন: একটি ওয়েবসাইট www.thisisyourdomainname.com। এই ওয়েবসাইটের নামের ৩টি অংশ আছে। যথাঃ

  1. www – সাব ডোমেইন (ওয়েবসাইট সার্ভার বুঝাতে এটা ব্যবহার করা হয়) 
  2. thisisyourdomain – ব্র্যান্ড নেম বা আপনার ওয়েবসাইটের নাম
  3. .com – টপ লেভেল ডোমেইন (Top level Domain)

ডোমেইন নামের কিছু উদাহরণ

ডোমেইন নামের একটি উদাহরণ হলো facebook.com। এটি একটি সেকেন্ড-লেভেল ডোমেইন (“facebook”) এবং একটি টপ-লেভেল ডোমেইন (“.com”) নিয়ে গঠিত। আরও কিছু জনপ্রিয় ডোমেইন নামের উদাহরণ হলো: 

এই রকম কোটি কোটি ডোমেইন নাম আছে।

ডোমেইন নাম কী কাজে ব্যবহৃত হয়?

ডোমেইনগুলি আপনার ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া সহজ করার জন্য ব্যবহার করা হয়, তবে এটির কাজ এতটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। নিচে ডোমেইন ব্যবহারের আরও কিছু কারণ তুলে ধরা হলো।

অনলাইন শপিং স্টোর

১. নিজের ব্যবসার নামের মালিকানা অর্জন

ডোমেইন নিবন্ধন করা মানে ইন্টারনেটের আপনার ব্যবসার নাম ডিজিটাল ট্রেডমার্ক করা। একবার নাম নিবন্ধন করলে, অন্য কেউ এই ডোমেইন নামের মালিকানা দাবি করতে পারবে না, যতক্ষণ না আপনি এই ডোমেইনের নিবন্ধিত নাম নিজে বাতিল করেন।

২. আপনার ব্র্যান্ডকে নামকে আরও পরিচিত এবং প্রতিষ্ঠিত করা

একটি ডোমেইন নাম অনলাইনে ব্র্যান্ডের পরিচয়কে প্রতিষ্ঠা করে। উদাহরণস্বরূপ – একজন ভিজিটর আমাদের দেশীকমার্স ওয়েবসাইটের হোমপেজ থেকে ব্লগ বা টিউটোরিয়ালে গেলে তিনি দেখবেন যে মূল ডোমেইন নামটি একই থাকছে। এটির রঙের স্কিম, লোগো এবং অন্যান্য ব্র্যান্ড উপাদান ভিজিটরের মনে ব্যবসাকে স্মরণীয় করে তোলে। 

৩. দেশীকমার্সের সাথে কাস্টম ডোমেইন সংযোগ 

আপনার ব্র্যান্ডের কাস্টম ডোমেইনকে বিনামূল্যে আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটের সাথে সংযুক্ত করে গ্রাহকের আস্থা এবং ব্র্যান্ডের পরিচিতি বাড়াতে পারবেন।

  • কাস্টম ডোমেইন সংযোগ করুন বিনামূল্যে।  
  • আপনার ব্র্যান্ডকে সব সোশ্যাল মিডিয়াসহ সব চ্যানেলে এক সুত্রে গেথে রাখুন। 
  • গ্রাহকদের অনলাইনে আপনাকে খুঁজে পাওয়ার সুযোগ দিন।  
  • আরও অনেক কিছু!

অনলাইন শপ তৈরি করুন

৪. বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন এবং সহজে স্মরণীয় করে তোলা

আপনার কোম্পানির নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ডোমেইন নাম আপনার ওয়েবসাইটকে ব্যবহারকারীদের কাছে আরও বৈধ এবং পেশাদার করে তোলে। এটি ভিজিটরদের মধ্যে আস্থা তৈরি করে যাতে তারা ওয়েব পেজে সার্ভে বা ফর্ম জমা দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

প্রো টিপ: আপনি দেশীকমার্স ব্যবহার করে কোনো কোডিং দক্ষতা ছাড়াই একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। এর সাথে কোনো অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই কাস্টম ডোমেইন সংযোগও করতে পারবেন। একবার ভাবুন তো – নিজের ব্র্যান্ড নামে একদম নিজের ই-কমার্স ওয়েবসাইট! 

৫. প্রতিষ্ঠানের নাম সহজে মনে রাখা

আপনার ডোমেইনকে স্মরণীয় করে তুলুন যাতে ভিজিটররা সহজেই এটি সার্চ বারে টাইপ করতে পারে ফলে সরাসরি ট্রাফিক বৃদ্ধি পায়।

উদাহরণস্বরূপ, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন্স লিমিটেড -এর একটি সংক্ষিপ্ত ও সুন্দর ডোমেইন নাম রয়েছে: banglalink.net । এই ডোমেইন নামটি সহজেই মনে রাখা যায় যা banglalinkdigitalcommunicationsltd.com -এর মতো একটি বিকল্পের চেয়ে অনেক সহজ।

৬. প্রতিযোগীদের মধ্যে আলাদা করে তোলা

একটি সহজ এবং আকর্ষণীয় ডোমেইন নাম আপনার ওয়েবসাইটকে প্রতিযোগী সাইট থেকে আলাদা করে। নিজের ডোমেইন দিয়ে ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করলে আপনার প্রতিযোগী ফেসবুক পেজ ব্যবসায়ীদের থেকে আপনি হবেন সম্পুর্ন আলাদা। যা আপনাকে অধিক বিক্রিতে সহায়তা করবে।

মোবাইলে গুগল সার্চ ইঙ্গিন ফলাফল পেজ

৭. সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং এবং অর্গানিক ওয়েব ট্রাফিক

সাধারণত একটি ডোমেইন যত পুরোনো হয়, তার গুরুত্ব তত বেশি হয়, যা সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফল পৃষ্ঠায় (SERP) ভালো র‍্যাংকিং ও অর্গানিক সার্চ ট্রাফিক পেতে সাহায্য করে। এর কারণ হলো এটি গুণগত কন্টেন্ট, ইন্টারনাল লিঙ্ক এবং ব্যাকলিঙ্ক পেতে সময় পায়। তাই ডোমেইন নাম আগে নিবন্ধন করার আরও একটি কারণ হলো এর গুরুত্ব বৃদ্ধির সুযোগ।

ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রেশন বা কিনতে কত টাকা লাগে?

ডোমেইন নামের দাম কত এটা নিয়ে অনেকই সংশয়ে থাকেন। খুশির সংবাদ হল – আপনি খুব কম বাৎসরিক খরচেই একটি ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রেশন বা কিনতে পারবেন। আগে রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি এমন একটি সাধারন ডোমেইনের নামের মূল্য ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা হয়। তবে ডলারের চলতি দাম এবং ডোমেইন নেম বিক্রেতার উপর এই দামের কিছুটা হেরফেরও হতে পারে। পাশাপাশি আপনি কী ধরণের TLD (.com বা .net বা .biz বা .xyz ইত্যাদি)  ব্যবহার করতে চান তার উপরও মূল্য নির্ভর করে। 

আপনি ডোমেইন নেম কিনতে চাইলে দেশীকমার্সের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা আপনার ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড থাকলে godaddy.com, namecheap.com এর মত প্রতিষ্ঠান থেকেও সহজেই কিনতে পারবেন।

পরিশেষ

বর্তমান যুগে অনলাইনে নিজের ব্র্যান্ডকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে ডোমেইন নেম এর কোন বিকল্প নেই। এটি আপনাকে গতানুগতিক ব্যবসা থেকে আলাদা করে তোলে এবং ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এর উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমায়। 

যেহেতু এটি আপনি নিজের টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন তাই ডোমেইন নেম একমাত্র আপনি ছাড়া অন্য কেউ বন্ধ বা রেস্ট্রিক্ট করতে পারবে না। আবার আপনার ব্যবসার নাম কপি করে আরেকজন ডোমেইন নেম কিনে ব্যবসা করতে পারবে না। অর্থাৎ আপনার ব্যবসার নামের উপর ইন্টারনেটে আপনার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয় ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

আপনার মূল্যবান মতামত দিন

মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। আবশ্যক ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত *

আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন

সবার আগে মন্তব্য করুন