এফ কমার্স (f commerce) কি? এর সংজ্ঞা, উদাহরন, ব্যবসায়িক মডেল

এফ কমার্স (f commerce) কি? এর সংজ্ঞা, উদাহরন, ব্যবসায়িক মডেল
শেয়ার করুন

বর্তমান ডিজিটাল যুগে ব্যবসায়িক মডেলগুলো দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, আর এরই ধারাবাহিকতায় এফ কমার্স (F-Commerce) ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু এফ কমার্স আসলে কী? সহজ ভাষায়, এটি ফেসবুক-ভিত্তিক একটি ব্যবসায়িক মডেল, যেখানে উদ্যোক্তারা শুধুমাত্র ফেসবুক ব্যবহার করে তাদের ব্যবসায় পরিচালনা করেন।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে হাজারো তরুণ-তরুণী এফ কমার্সকে পুঁজি করে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। কম বিনিয়োগে ব্যবসায় শুরু করা যায় বলে এটি বিশেষ করে ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য একটি দারুণ সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে । 

এই ব্লগ পোস্টে আমরা এফ কমার্সের সংজ্ঞা, কার্যপ্রণালী, সফলতার উদাহরণ এবং কীভাবে এটি ব্যবহার করে স্বাবলম্বী হওয়া যায়- এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

এফ কমার্স আসলে কি?

এফ কমার্স মূলত এমন একটি অনলাইন ব্যবসার মডেল, যেখানে উদ্যোক্তারা ফেসবুকের বিভিন্ন ফিচার, যেমন মেটা এড ক্যাম্পেইন, পোস্ট, লাইভ, ইনবক্স অর্ডার, কমেন্ট সেকশন ইত্যাদি ব্যবহার করে পণ্যের মার্কেটিং ও বিক্রয় করেন। এখানে আলাদা কোনো ওয়েবসাইট বা অ্যাপ প্রয়োজন হয় না, বরং ফেসবুকই মূল মার্কেটিং ও লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। 

এফ কমার্স ব্যবসার উদাহরন

বাংলাদেশে অনেক সফল এফ কমার্স উদ্যোগ রয়েছে, যেমন অনেক উদ্যোক্তা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে জামাকাপড়, জুতা, গয়না এবং অন্যান্য লাইফস্টাইল পণ্য বিক্রি করছেন। উদাহরণ হিসেবে “Believers Sign” বা “Roza Fragrance” এর মতো জনপ্রিয় পেজগুলোকে উল্লেখ করা যায়। আবার বিভিন্ন গ্যাজেট বিক্রির জন্য “BD Shop” অথবা অর্গানিক ফুডের জন্য “Ghorer Bazar-এর মতো অনেক এফ কমার্স উদ্যোগ রয়েছে।

ই কমার্স ও এফ কমার্সের পার্থক্য

আমরা অনেকেই জানি না, ই কমার্স কি এবং এফ কমার্স কি? সাধারণত ইলেকট্রনিক মিডিয়া অর্থাৎ ইন্টারনেট ব্যবহার করে যে ব্যবসায়ের প্রোডাক্ট মার্কেটিং, সেলিং এবং লেনদেনসহ যাবতীয় সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাকে ই-কমার্স ব্যবসায় বলে। মূলত ই-কমার্স হলো একটি পূর্ণাঙ্গ অনলাইন ব্যবসায়িক মডেল, যেখানে ওয়েবসাইট, মার্কেটপ্লেস, সোশ্যাল মিডিয়া, ইত্যাদির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা হয়। অর্থাৎ ই-কমার্স মডেলে ডিজিটাল মার্কেটিং-এর সকল উপকরণগুলো ব্যবহৃত হতে পারে। 

ই কমার্স ও এফ কমার্সের পার্থক্য

অন্যদিকে, এফ-কমার্স বলতে কেবলমাত্র ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসায় পরিচালনা করাকে বুঝায়। এখানে সাধারণত ডিজিটাল মার্কেটিং-এর অন্যকোনো উপকরণ ব্যবহার করা হয় না। শুধুমাত্র ফেসবুক ব্যবহার করেই পণ্য বা সেবার মার্কেটিং ও বিক্রয় করা হয়। 

ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অটোমেটেড পেমেন্ট গেটওয়ে, ক্যাশ অন ডেলিভারি, স্টক রেজাল্ট, প্রোডাক্ট লিস্টিং, মোবাইল ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন লেনদেনের সুবিধা দিতে পারেন, যেখানে এফ-কমার্স প্রধানত সকল লেনদেন ও অন্যান্য বিষয়াদি ম্যানুয়ালি করে থাকে। 

এছাড়াও, ই-কমার্স ব্র্যান্ডিং ও গ্রাহক আকর্ষণে SEM, ইমেইল মার্কেটিং, এবং অন্যান্য ডিজিটাল মার্কেটিং টুল ব্যবহার করতে পারে, যেখানে এফ-কমার্স শুধুমাত্র ফেসবুক পোস্ট ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার সীমাবদ্ধ থাকে। তাই, ই-কমার্স ব্যবসার প্রসার ও আওতা এফ কমার্সের চেয়ে ব্যাপক বিস্তৃত। 

এফ কমার্সের সুবিধা

  • কম বিনিয়োগে ব্যবসায় শুরু করার সুযোগ।
  • ফেসবুকের বিশাল ইউজার বা অডিয়েন্স থেকে সহজে ক্রেতা পাওয়া যায়।
  • মার্কেটিং এর জন্য বিজ্ঞাপন চালানোর সহজ পদ্ধতি। (Facebook Ads)
  • লাইভ ভিডিও ও পোস্টের মাধ্যমে পণ্যের প্রচার করা যায়।
  • ক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি মেসেঞ্জারে যোগাযোগের সুবিধা।
  • ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের বাড়তি খরচ নেই।

এফ কমার্সের অসুবিধা

  • ফেসবুকের নীতিমালার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হতে হয়।
  • ফেসবুক অ্যালগরিদম পরিবর্তন হলে ব্যবসায় প্রভাব পড়তে পারে।
  • বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করা তুলনামূলক কঠিন।
  • স্বতন্ত্র ব্র্যান্ডিংয়ের সুযোগ কম।
  • স্বয়ংক্রিয় পেমেন্ট ও অর্ডার প্রসেসিং সিস্টেমের অভাব।
  • প্রতিযোগিতা বেশি কারন, একই ধরনের পণ্য নিয়ে অসংখ্য পেজ কাজ করে।
  • পেইজ হ্যাক বা একাউন্ট ডিজেবল হলে ব্যবসায় বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

এফ কমার্স ব্যবসায়িক মডেলের ব্যাখ্যা

এফ কমার্স ব্যবসায়িক মডেলের ব্যাখ্যা

উদ্যোক্তাদের ব্যবসার ধরণ ও লক্ষ্য অনুযায়ী এফ কমার্স ব্যবসায় পরিচালনার জন্য বিভিন্ন মডেল অনুসরণ করা হয়। 

সাধারণত, এফ কমার্সের ব্যবসায়িক মডেলগুলো নিম্নরূপঃ 

১. ডিরেক্ট সেলিং মডেল

এই মডেলে উদ্যোক্তারা নিজেরাই পণ্য স্টক করে এবং ফেসবুক পেজ বা গ্রুপের মাধ্যমে সরাসরি বিক্রি করেন। তারা ফেসবুক এড, পোস্ট, লাইভ ভিডিও ও ইনবক্সের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার সংগ্রহ করেন এবং হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা করেন।

২. ড্রপশিপিং মডেল

ড্রপশিপিং মডেলে বিক্রেতারা নিজের কাছে পণ্য স্টক না করে সরাসরি তৃতীয় পক্ষের সরবরাহকারীদের (সাপ্লায়ার) থেকে পণ্য পাঠান। উদ্যোক্তারা ফেসবুক পোস্ট বা এড এর মাধ্যমে অর্ডার সংগ্রহ করে তা সরাসরি সাপ্লায়ারকে পাঠান, এবং সাপ্লায়ার পণ্য ডেলিভারি সম্পন্ন করে। এটি বিনিয়োগ ছাড়া ব্যবসায় শুরু করার একটি ভালো উপায়।

৩. প্রি-অর্ডার মডেল

এই মডেলে ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার সংগ্রহ করেন, তারপর পণ্য স্টক করে নির্দিষ্ট সময়ে তাদের পণ্য সরবরাহ করেন। সাধারণত আমদানি করা পণ্য বা কাস্টমাইজড পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে এই মডেল ব্যবহৃত হয়। 

৪. সার্ভিস বেইজড মডেল

এফ কমার্স শুধুমাত্র পণ্য বিক্রির জন্যই নয়, বিভিন্ন সার্ভিস প্রদান করার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ডিজিটাল টুলস, অনলাইন কোচিং, হোম ডেলিভারি সার্ভিস ইত্যাদি।

৫. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মডেল

এই মডেলে উদ্যোক্তারা সরাসরি পণ্য বিক্রি না করে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য প্রমোট করেন এবং প্রতি বিক্রয়ের উপর কমিশন পান। এক্ষেত্রে কোনো পণ্য স্টক করা বা অর্ডার সাপ্লাইয়ারকে পাঠানোর দরকার পড়ে না। মূল বিক্রেতার সাথে ক্রেতার সরাসরি লেনদেন করার ব্যবস্থা করা হয়। 

এফ কমার্স মডেলে ব্যবসা করে শুরু করে একটি সফল ব্যবসা দাঁড় করিয়ে ফেলা যায় – ফেসবুকে কিভাবে ব্যবসা শুরু করব?

এফ কমার্স মডেলে ব্যবসা করে শুরু করে একটি সফল ব্যবসা দাঁড় করিয়ে ফেলা যায় – ফেসবুকে কিভাবে ব্যবসা শুরু করব?

যেকোনো ব্যবসায় শুরুর আগে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা জরুরি। প্রথমেই নির্ধারণ করতে হবে কী ধরনের পণ্য বা সেবা বিক্রি করবেন, আপনার লক্ষ্য শ্রোতা কারা এবং কীভাবে প্রতিযোগীদের থেকে আলাদা হবেন। 

এফ কমার্স ব্যবসার জন্য প্রথমে একটি ফেসবুক বিজনেস পেইজ তৈরি করতে হবে। পেজের নাম এমন রাখা উচিত যা সহজেই মনে রাখা যায়। পেইজের “About” সেকশনে ব্যবসার ডিটেইল, কন্টাক্ট ইনফরমেশন এবং ঠিকানাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে হবে। এরইসাথে  পেজকে আরও প্রফেশনাল লুক দিতে একটি আকর্ষণীয় লোগো ও কভার ফটো আপলোড করতে হবে। 

এরপর প্রতিটি পণ্যের দাম, বৈশিষ্ট্য, ব্যবহারবিধি এবং ডেলিভারি নীতিমালা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে পণ্যের ছবি ও ভিডিও আপলোড করতে হবে।  ক্রেতাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করতে নিয়মিত পোস্ট, ফেসবুক লাইভ এবং স্টোরির মাধ্যমে পণ্য প্রচার করা যেতে পারে। নিয়মিত আপডেট ও মানসম্মত কনটেন্ট শেয়ার করার মাধ্যমে ব্র্যান্ডের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো সম্ভব।

গ্রাহক কিছু জানতে চাইলে তার সঙ্গে ইনবক্স ও কমেন্টের মাধ্যমে দ্রুত যোগাযোগ করতে হবে এবং অর্ডার দ্রুত প্রসেস করতে হবে। ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে নির্ভরযোগ্য কুরিয়ার সার্ভিস বা নিজস্ব ডেলিভারি সিস্টেমের ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাছাড়া গ্রাহকের সুবিধার্থে ক্যাশ অন ডেলিভারি এবং প্রি-পেমেন্ট অপশন চালু করা যেতে পারে।

গ্রাহকসেবা আরো উন্নত করতে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা যেতে পারে। এখান থেকে একজন ক্রেতা খুব সহজেই পণ্যের মূল্যসহ সকল ডিটেইলস পেয়ে যেতে পারে। দ্রুত ও ঝামেলাহীন অর্ডার এবং অটোমেটেড নিরাপদ পেমেন্টের জন্য একটি ওয়েবসাইটের বিকল্প নেই। 

ফেসবুক পেইড এড মার্কেটিং ব্যবহার করে নির্দিষ্ট টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে সহজেই পণ্যের বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেয়া সম্ভব। বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি, বিভিন্ন অফার, কুপন, ডিসকাউন্ট ক্যাম্পেইন এবং ফেসবুক গ্রুপে প্রচারের মাধ্যমে অর্গানিক গ্রোথ নিশ্চিত করা যেতে পারে। এধরনের মার্কেটিং কৌশল সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে ব্যবসার প্রসার অনেক দ্রুত হবে।

মূলত ফেসবুকে ব্যবসায় করার নিয়ম জেনে সঠিক পরিকল্পনা, মানসম্মত পণ্য, ইফেকটিভ মার্কেটিং স্ট্রাটেজি এবং গ্রাহকসেবার মান বজায় রেখে এফ কমার্স ব্যবসায় শুরু করলে এটি দ্রুতই একটি লাভজনক ও স্বাবলম্বী উদ্যোগে পরিণত হবে। 

এফ কমার্সে সফলতা অর্জনের উপায়

এফ কমার্সে সফলতা অর্জনের জন্য খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। কিছু মৌলিক বিষয়বস্তু ঠিক রেখে এফ কমার্স ব্যবসায় পরিচালনা করলে দ্রুত ও স্থায়ী সফলতা অর্জন সম্ভব। 

এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত টিপসগুলো অনুসরন করা যেতে পারে- 

  • সঠিক গ্রাহক চিহ্নিত করে তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য নির্বাচন করুন।
  • ভালো মানের পণ্য সরবরাহ ও দ্রুত ডেলিভারি নিশ্চিত করুন।
  • আকর্ষণীয় কনটেন্ট, লাইভ সেশন ও পেইড বিজ্ঞাপন ব্যবহার করুন।
  • ক্রেতাদের দ্রুত রেসপন্স, ক্যাশ অন ডেলিভারি ও সহজ রিটার্ন পলিসি রাখুন।
  • প্রতিযোগীদের স্ট্র্যাটেজি বুঝে অন্যদের থেকে নিজের ব্যবসায়কে আলাদা করুন।
  • ক্রেতাদের সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক গড়ে তুলে ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করুন।

এফ কমার্স ব্যবসায় সফলতার উদাহরন

বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই এফ-কমার্স ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। শুরুর দিকে অনেক উদ্যোক্তা শুধুমাত্র ফেসবুক ব্যবহার করেই সফল হয়েছেন। বিশেষ করে ফ্যাশন, কসমেটিকস, গ্যাজেট, এবং হোম ডেকর পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে এফ-কমার্স বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। 

সফল এফ কমার্স ব্যবসায়ের কথা বলতে গেলে প্রথমেই যেসকল ব্যান্ডের নাম আসে তা হলোঃ 

  • Illiyeen: পুরুষের পাঞ্জাবির জন্য বিখ্যাত এই ব্যান্ড এখন সারাদেশে সমাদৃত। 
  • Believers Sign: পুরুষের সকল ধরনের পোষাক ও পারফিউম অয়েলের জন্য বিস্তততা অর্জন করেছে। 
  • Trends By P.R.: মেয়েদের থ্রী পিস, কুর্তীসহ নানান ট্রেন্ডি ড্রেসের জন্য একটি বিস্ততার প্রতীক। 
  • BD Shop: সকল প্রকার গ্যাজেট ও মানসম্মত এক্সেসরিজ এর বিশ্বস্ত ব্যান্ড।  
  • Ghorer Bazar: অর্গানক খাবারের নাম নিলে এই ব্যান্ডের বিকল্প খুব কমই রয়েছে। 
  • Rang Bangladesh: সকল বয়সী নারী-পুরুষ উভয়ের ফ্যাশন ব্যান্ড। 

এই ব্র্যান্ডগুলো ফেসবুক নির্ভর ব্যবসায় থেকে শুরু করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তারা ফেসবুক লাইভ, স্পন্সরড পোস্ট এবং গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের ব্যবসাকে বড় পরিসরে নিয়ে গেছে। 

তবে বর্তমানে এরাসহ অনেক সফল এফ-কমার্স ব্যবসায় নিজেদের আওতা-পরিধি বাড়ানোর জন্য ধীরে ধীরে ই-কমার্সে সম্প্রসারিত করেছে।

এফ-কমার্সের চ্যালেঞ্জ ও সমাধান

এফ-কমার্স ব্যবসায় সহজে শুরু করা গেলেও এর টিকিয়ে রাখা ও বড় পরিসরে সম্প্রসারণ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ফেসবুকের অ্যালগরিদম। এটি অর্গানিক রিচ কমিয়ে দেয়, ফলে কাস্টমারদের কাছে পৌঁছাতে পেইড বিজ্ঞাপনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভর করতে হয়। এছাড়া, নিজস্ব ওয়েবসাইটের না থাকা, সীমিত পেমেন্ট অপশন, নির্ভরযোগ্যতার এবং অটোমেশন সুবিধার অভাব অনেক এফ-কমার্স ব্যবসার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

এই চ্যালেঞ্জগুলোর পাশাপাশি একটি পণ্যের একাধিক প্রতিযোগিতা থাকায় অনেক উদ্যোক্তা ব্যবসায় সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকছেন। কারন, ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসার জন্য নিজস্ব ওয়েবসাইট, SEM, বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ে, এবং কাস্টমার ডাটাবেস তৈরি করা সহজ। এগুলোর মাধ্যমে আপনার ব্যবসায় অন্য প্রতিযোগিদের থেকে পৃথক ব্যান্ড ভ্যালু পাবে। 

তবে জিডিটাল মার্কেটিং এর সকল টুলস ব্যবহার করে ব্যবসায় পরিচালনা করার বিষয়টি সহজ নয়। এই জন্যই অনেক উদ্যোক্তা ই-কমার্স থেকে দূরে রয়েছে। টেকনিক্যাল জ্ঞান না থাকলে আপনার পক্ষে এসব পরিচালনা করা সম্ভব নয় কিংবা অনেক সময় এসব নিয়মিত মেইন্টেইন করা সময়সাপেক্ষ হয়ে পরে। 

ঠিক এই জায়গাতেই দেশী কমার্স একটি কার্যকর সমাধান নিয়ে এসেছে। এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যারা এফ-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ, নির্ভরযোগ্য ও সকল টেকনিক্যাল ই-কমার্স সমাধান দিয়ে থাকে। অর্থাৎ ডিজিটাল সমস্ত টুলস ব্যবহার করে ই-কমার্সের মধ্যমে আপনার ব্যবসায়কে দ্রুত প্রসারিত করতে দেশী কমার্স প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের থেকে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ছাড়াই মাত্র কয়েকটি ক্লিকে তৈরী করুন আপনার ইকমার্স স্টোর

যারা এফ-কমার্স ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ব্যবসার আরও বড় পরিসরে সফলতা চান, তাদের জন্য একটি পরিপূর্ণ ই-কমার্স সিস্টেমের দিকে এগিয়ে যাওয়া এখন সময়ের দাবি।

বাংলাদেশে এফ-কমার্স (ফেসবুক কমার্স) এর বর্তমান বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ: F-commerce in Bangladesh

বাংলাদেশে F-Commerce দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি সহজ ও কম খরচের ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছে। একটা পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশের টোটাল সোশ্যাল মিডিয়া ইউজারদের মধ্যে ৯৩% শতাংশ মানুষ Facebook ব্যবহার করে। শুধু ঢাকাতেই নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২২ মিলিয়ন। 

এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বর্তমানে হাজারো ব্যবসায় শুধুমাত্র ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করছে। ফেসবুকের মার্কেটপ্লেস, লাইভ সেলিং, এবং স্পন্সরড বিজ্ঞাপন ব্যবহারের ফলে অনেক উদ্যোক্তা দ্রুত সফলতা পাচ্ছেন।

তবে, এফ-কমার্সের সীমাবদ্ধতাও স্পষ্ট হচ্ছে। ফেসবুকের অ্যালগরিদম পরিবর্তনের ফলে পেজের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ায় উদ্যোক্তাদের বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। তাছাড়া, কাস্টমার ট্রাস্ট তৈরি করা, পেমেন্ট প্রসেসিং সহজ করা এবং অটোমেশন সুবিধার অভাব অনেক ব্যবসার টিকে থাকা কঠিন করে তুলছে। ভবিষ্যতে, শুধুমাত্র ফেসবুকনির্ভর ব্যবসার ওপর নির্ভর করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

এই বাস্তবতায় অনেক এফ-কমার্স ব্যবসায়ী এখন ই-কমার্সের দিকে ঝুঁকছেন, যেখানে নিজস্ব ওয়েবসাইট, নির্ভরযোগ্য পেমেন্ট সিস্টেম, এবং উন্নত গ্রাহক পরিষেবা তাদের ব্যবসাকে আরও টেকসই করে তুলেছে। সুতরাং, যারা দীর্ঘমেয়াদে সফল হতে চান, তাদের জন্য একটি পরিপূর্ণ ই-কমার্স অবকাঠামো গড়ে তোলাই হবে সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

সবার আগে মন্তব্য করুন

আপনার মূল্যবান মতামত দিন