অংশীদারি ব্যবসায় কি? এর সুবিধা-অসুবিধা ও কিভাবে শুরু করবেন? (চুক্তিপত্রসহ)

অংশীদারি ব্যবসায় কি? এর সুবিধা-অসুবিধা ও কিভাবে শুরু করবেন? (চুক্তিপত্রসহ)
শেয়ার করুন

নিজের ব্যবসা শুরু করতে চান, কিন্তু একা ঝুঁকি নিতে ভয় পাচ্ছেন? তাহলে অংশীদারি ব্যবসা (Partnership Business) হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ সমাধান! এটি এমন এক ব্যবসায়িক মডেল যেখানে একাধিক ব্যক্তি মিলে বিনিয়োগ, দক্ষতা ও দায়িত্ব ভাগ করে নেয়, ফলে ব্যবসার সফলতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

কিন্তু এই মডেল কি আসলেই সবার জন্য উপযুক্ত? অংশীদারি ব্যবসার যেমন কিছু সুবিধা রয়েছে, তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জও আছে, যা না জানলে ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে পারেন। 

তাই এই ব্লগ পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো অংশীদারি ব্যবসার সংজ্ঞা, এর সুবিধা-অসুবিধা এবং কিভাবে একটি সফল অংশীদারি ব্যবসা শুরু করা যায় তা নিয়ে। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক! 

অংশীদারিত্ব কি?

অংশীদারিত্ব হলো দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি চুক্তিভিত্তিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক, যেখানে সবাই মুনাফা ও ক্ষতির নির্দিষ্ট অংশ ভাগ করে নেয়। এটি সাধারণত পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং ব্যবসার দায়বদ্ধতা, মূলধন বিনিয়োগ ও পরিচালনার দায়িত্ব অংশীদারদের মধ্যে বিভক্ত থাকে।

অংশীদারি ব্যবসায় কাকে বলে?

অংশীদারি ব্যবসায় কাকে বলে?

অংশীদারি ব্যবসায় হলো এমন একটি ব্যবসায়িক কাঠামো যেখানে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং লাভ-ক্ষতি ভাগ করে নেন। একক মালিকানার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে বড় পরিসরের ব্যবসা পরিচালনার জন্য এই ধরনের ব্যবসায়িক সংগঠন গড়ে ওঠে। 

১৯৩২ সালের ভারতীয় অংশীদারি আইন অনুযায়ী—

“সকল ব্যক্তির দ্বারা বা সকলের পক্ষে একজন দ্বারা পরিচালিত ব্যবসায়ের মুনাফা নিজেদের মধ্যে বণ্টনের নিমিত্তে কতিপয় ব্যক্তিবর্গের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কই হলো অংশীদারি ব্যবসায়।”

বাংলাদেশেও এই আইন অনুসারেই অংশীদারি ব্যবসা পরিচালিত হয়। এই ধরনের ব্যবসায়িক কাঠামোতে প্রত্যেক অংশীদার নির্দিষ্ট শর্ত অনুযায়ী ব্যবসার পরিচালনা, মূলধন বিনিয়োগ এবং দায়বদ্ধতার দায় গ্রহণ করে। শুরুতে একক মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসা পরিচালিত হলেও সময়ের সাথে সাথে বড় পরিসরের বিনিয়োগ ও ব্যবসার সম্প্রসারণের জন্য একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে অংশীদারি ব্যবসার ধারণা বিকশিত হয়। 

অংশীদারি ব্যবসায়ের প্রকারভেদ

ব্যবসার কাঠামো, উদ্দেশ্য, দায়িত্ব ও আইনি সীমাবদ্ধতার ওপর নির্ভর করে, অংশীদারি ব্যবসা বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। সাধারণত অংশীদারি ব্যবসাকে নিম্নলিখিত প্রধান চারটি প্রকারভেদে ভাগ করা হয়ঃ 

১. সাধারণ অংশীদারি (General Partnership): এই ধরনের অংশীদারি ব্যবসায়, সকল অংশীদার ব্যবসার লাভ-ক্ষতি এবং দায়বদ্ধতা সমানভাবে ভাগ করে নেন। প্রতিটি অংশীদার ব্যবসার পরিচালনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এই কাঠামোতে ব্যবসার দায় মেটানোর জন্য অংশীদারদের ব্যক্তিগত সম্পত্তিও ব্যবহার করা যেতে পারে।

২. সীমিত অংশীদারি (Limited Partnership): এতে দু’ধরনের অংশীদার থাকে- সাধারণ অংশীদার (General Partner) এবং সীমিত অংশীদার (Limited Partner)। সাধারণ অংশীদাররা ব্যবসার দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং সম্পূর্ণ দায়বদ্ধ থাকেন, অন্যদিকে সীমিত অংশীদার কেবল বিনিয়োগ করেন এবং তাদের দায়বদ্ধতা বিনিয়োগের পরিমাণের মধ্যে সীমিত থাকে।

৩. লিমিটেড লায়াবিলিটি পার্টনারশিপ (LLP): এটি একটি আধুনিক অংশীদারি ব্যবসার কাঠামো, যেখানে সকল অংশীদারের দায়বদ্ধতা সীমিত থাকে। এটি সাধারণত পেশাদার পরিষেবা যেমন আইনজীবী, ডাক্তার ও অ্যাকাউন্ট্যান্টদের ব্যবসার জন্য জনপ্রিয়।

৪.যৌথ উদ্যোগ (Joint Venture): এই ধরনের অংশীদারি ব্যবসায় কাঠামোতে দুটি বা তার বেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য একত্রে কাজ করে। এটি মূলত একটি অস্থায়ী অংশীদারি ব্যবসার রূপ, যা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বা নির্দিষ্ট প্রকল্প সম্পন্ন করার জন্য গঠিত হয়।

অংশীদারি বা পার্টনারশিপ ব্যবসায়ের গঠন প্রণালী ও বৈশিষ্ট্য

অংশীদারি বা পার্টনারশিপ ব্যবসা গঠনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু ধারাবাহিকতা অনুসরণ করতে হয়, যা ব্যবসার কার্যক্রম ও দায়বদ্ধতাকে সুসংহত করে।

অংশীদারি ব্যবসায়ের গঠন প্রণালী

  • সঠিক অংশীদার নির্বাচন: ব্যবসার উদ্দেশ্য ও পরিচালনার জন্য উপযুক্ত এবং বিশ্বস্ত অংশীদার নির্বাচন করে একত্রিত হতে হবে। 
  • পার্টনারশিপ চুক্তি প্রস্তুত: এটি মৌখিক বা লিখিত হতে পারে, তবে লিখিত চুক্তি বেশি নিরাপদ।
  • ব্যবসার নিবন্ধন: যদি আইনগত স্বীকৃতি প্রয়োজন হয়, তাহলে সরকার অনুমোদিত কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধন করতে হবে।
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা: ব্যবসার আর্থিক লেনদেন পরিচালনার জন্য একটি পৃথক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করা উচিত। 
  •  লাইসেন্স ও ট্যাক্স নিবন্ধন: ব্যবসার ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট ও ট্যাক্স সংক্রান্ত অনুমোদন নিতে হবে। 

অংশীদারি ব্যবসার বৈশিষ্ট্য

অংশীদারি ব্যবসায় একাধিক ব্যক্তি চুক্তির মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং লাভ-লোকসান ভাগ করে নেন। এটি একক মালিকানার তুলনায় অধিক সংগঠিত এবং যৌথ দায়িত্বশীল একটি ব্যবসায়িক কাঠামো। 

নিচে অংশীদারি ব্যবসার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো-

অংশীদারের সংখ্যাঃ 

  • এই ব্যবসায় কমপক্ষে ২ জন এবং সর্বোচ্চ ২০ জন অংশীদার থাকতে পারেন।
  • ব্যাংকিং ব্যবসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ জন অংশীদার থাকতে পারেন।

চুক্তি: অংশীদারি ব্যবসা পরিচালনার জন্য অংশীদারদের মধ্যে একটি লিখিত বা মৌখিক চুক্তি থাকা আবশ্যক। 

সহজ গঠন প্রণালি: এই ব্যবসায়িক কাঠামো গঠনের জন্য কোম্পানির মতো জটিল প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয় না। সাধারণ চুক্তির মাধ্যমেই এটি শুরু করা সম্ভব।

দায়িত্ব, লাভ-লোকসান বণ্টন: প্রতিটি অংশীদার পারস্পারিক সিন্ধান্ত অনুযায়ী দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং লাভ-লোকসানও নির্দিষ্ট চুক্তির ভিত্তিতে বণ্টিত হয়। কোনো নির্দিষ্ট শর্ত না থাকলে সকল অংশীদার সমান অংশে লাভ ও ক্ষতির অংশীদার হন।

পরস্পরের প্রতি পরস্পরের আস্থা ও বিশ্বাস: যেহেতু অংশীদারি ব্যবসায় প্রত্যেক অংশীদার পারস্পরিক নির্ভরতার ওপর কাজ করেন, তাই ব্যবসার সফলতার জন্য আস্থা ও বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

নিবন্ধন: অংশীদারি ব্যবসার নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়, তবে আইনি স্বীকৃতি ও নিরাপত্তার জন্য এটি নিবন্ধন করা উত্তম। 

সত্তা: অংশীদারি ব্যবসা কোনো পৃথক আইনি সত্তা নয়। অর্থাৎ ব্যবসার দায় ও দায়িত্ব অংশীদারদের ব্যক্তিগত সম্পদের ওপরেও প্রভাব ফেলতে পারে।

অংশীদারদের যোগ্যতা: অংশীদার হতে হলে ব্যক্তিকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে এবং আইনত ব্যবসা পরিচালনার যোগ্য হতে হবে। মানসিকভাবে অক্ষম বা দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তি সাধারণত অংশীদার হতে পারেন না।

অংশীদারি ব্যবসায়ের হিসাব

অংশীদারি ব্যবসায় সঠিকভাবে হিসাব পরিচালনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে একাধিক অংশীদার জড়িত থাকেন এবং প্রত্যেকের মূলধন, লাভ-ক্ষতি ও দায়বদ্ধতার হিসাব রাখতে হয়। 

অংশীদারি ব্যবসায়ের লাভ-ক্ষতি বণ্টন হিসাব

সাধারণত, চুক্তি অনুযায়ী অংশীদারদের মূলধন বিনিয়োগ, কার্যকর দায়িত্ব বা অন্যান্য নির্ধারিত অনুপাতে লাভ-ক্ষতি বণ্টন করা হয়। যদি চুক্তিতে কোনো বিশেষ শর্ত না থাকে, তবে সকল অংশীদার সমান হারে লাভ-ক্ষতি ভাগ করে নেন। অংশীদারি ব্যবসায়তে  লাভ-ক্ষতি বণ্টন করার হিসাব পদ্ধতি হলোঃ  

১. অংশীদারদের মূলধন অনুযায়ী লাভ/ ক্ষতি বন্টনঃ 

যদি অংশীদারদের মূলধন বিনিয়োগের অনুপাতে লাভ-ক্ষতি ভাগ করা হয়, তাহলে-

  • প্রত্যেক অংশীদারের লাভ/ ক্ষতি =  (প্রত্যেকের মূলধন ÷ মোট মুলধন) × মোট নিট লাভ বা ক্ষতি

২. অংশীদারি ব্যবসায়ের লাভ-ক্ষতি আনুপাতিক হারে বণ্টনঃ

যদি কোনো নির্ধারিত অনুপাতে লাভ-ক্ষতি ভাগ করা হয়, তাহলে-

  • অংশীদারের লাভ/ক্ষতি = (প্রত্যেকের অনুপাত ÷ মোট অনুপাত) × মোট নিট লাভ বা ক্ষতি

৩. বিকল্প পদ্ধতি (সমান হারে বণ্টন): 

যদি সকল অংশীদার সমান হারে লাভ/ক্ষতি ভাগ করেন, তাহলে-

  • প্রত্যেকের লাভ/ ক্ষতি = মোট নিট লাভ​ বা ক্ষতি ÷ অংশীদারদের সংখ্যা

অংশীদারি মূলধন হিসাব

অংশীদারি ব্যবসায় প্রতিটি অংশীদার ব্যবসায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ করেন, যা ব্যবসার পরিচালনা ও সম্প্রসারণে ব্যবহৃত হয়। মূলধন হিসাবের মাধ্যমে অংশীদারদের বিনিয়োগ, অতিরিক্ত মূলধন প্রদান, উত্তোলন (ড্রয়িংস) এবং লাভ-ক্ষতি বণ্টনের সঠিক হিসাব রাখা হয়। অংশীদারি ব্যবসায় মূলধন হিসাব সাধারণত দুইভাবে হিসাবভুক্ত হয়ঃ 

১. নির্দিষ্ট মূলধন পদ্ধতি (Fixed Capital Method):

এই পদ্ধতিতে মূলধন অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন হয় না এবং সাধারণ লেনদেনগুলোর জন্য আলাদা ড্রয়িংস অ্যাকাউন্ট ও লাভ-ক্ষতি অ্যাকাউন্ট ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রেঃ 

  • মোট মূলধন = (প্রাথমিক মূলধন + অতিরিক্ত মূলধন)

২. পরিবর্তনশীল মূলধন পদ্ধতি (Fluctuating Capital Method):

এই পদ্ধতিতে লাভ, ক্ষতি, ড্রয়িংস এবং অন্যান্য লেনদেন সরাসরি মূলধন হিসাবের সাথে যুক্ত হয়, ফলে এই হিসাবে মূলধন অ্যাকাউন্ট পরিবর্তিত হয়। এক্ষেত্রেঃ 

  • মোট মূলধন = (প্রাথমিক মূলধন + অতিরিক্ত মূলধন + লাভ – ক্ষতি – উত্তোলন বা ড্রয়িংস)

অংশীদারি ব্যবসায়ের সুবিধা ও অসুবিধা

অংশীদারি ব্যবসায়ের সুবিধা ও অসুবিধা

অংশীদারি ব্যবসার অনেক সুবিধা থাকলেও কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। নিচের টেবিলে এর মূল সুবিধা ও অসুবিধাগুলো তুলে ধরা হলো- 

সুবিধা অসুবিধা
অংশীদারি ব্যবসায় গঠনে কম জটিলতা থাকে। অংশীদারি ব্যবসায় অংশীদাররা ব্যক্তিগত সম্পদ দিয়েও দেনা পরিশোধে বাধ্য হতে পারেন।
একাধিক অংশীদারের বিনিয়োগ ব্যবসার মূলধন বৃদ্ধি করতে সহায়ক। অংশীদারদের মধ্যে মতবিরোধ অথবা সিদ্ধান্ত গ্রহণে মতের অমিল ব্যবসার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ব্যবসার বিভিন্ন কার্যক্রম একাধিক অংশীদার পরিচালনা করায় চাপ কম থাকে। ব্যবসার লাভ সকল অংশীদারের মধ্যে ভাগ হয়।
বিভিন্ন অংশীদারের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ব্যবসার প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক। একজন অংশীদার ব্যবসা ছাড়লে বা মারা গেলে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হতে পারে।
কোম্পানির তুলনায় অংশীদারি ব্যবসায় করের হার কম হয়ে থাকে। অংশীদারি ব্যবসায় সাধারণত বাইরের বিনিয়োগকারীরা সহজে বিনিয়োগ করতে পারেন না।

অংশীদারি ব্যবসার সুবিধাগুলো বিবেচনা করে যদি সঠিক পরিকল্পনা ও চুক্তি করা হয়, তবে এটি আপনার জন্য একটি লাভজনক ও সফল ব্যবসায়িক মডেল হতে পারে।

অংশীদারি ব্যবসায়ের আইন

অংশীদারি ব্যবসা বাংলাদেশে একটি প্রচলিত ব্যবসায়িক কাঠামো, যা মূলত অংশীদারি আইন, ১৯৩২ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই আইন অংশীদারিত্বের সংজ্ঞা, অংশীদারদের অধিকার, দায়িত্ব এবং ব্যবসার কার্যক্রম সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নির্ধারণ করে। অংশীদারি ব্যবসায় আইন, ১৯৩২ এর মূল বিষয়বস্তু নিচে উল্লেখ করা হলোঃ 

১. অংশীদারি ব্যবসার সংজ্ঞা (ধারা ৪)

এই আইনের অধীনে অংশীদারি ব্যবসাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যে এটি দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে একটি চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক, যার মাধ্যমে তারা যৌথভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং লাভ-ক্ষতি ভাগ করে নেন​।

অংশীদারি ব্যবসায়ের আইন

২. অংশীদারদের পারস্পরিক সম্পর্ক (ধারা ৯-১০)

এই আইনে অংশীদারদের পারস্পরিক দায়বদ্ধতা ও অধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। অংশীদারদের একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা, ব্যবসার স্বার্থ সংরক্ষণ করা এবং চুক্তি অনুযায়ী কাজ করা বাধ্যতামূলক​।

৩. তৃতীয় পক্ষের সাথে অংশীদারদের সম্পর্ক (ধারা ২৫-৩০)

অংশীদারি চুক্তিতে ভিন্ন কোনো শর্ত উল্লেখ না থাকলে, কোনো অংশীদার ব্যবসার নামে তৃতীয় পক্ষের সাথে চুক্তি করলে, সেই চুক্তির জন্য সকল অংশীদার দায়বদ্ধ থাকবেন।

৪. অংশীদারি ব্যবসার বিলোপসাধন (ধারা ৩৯-৪৪)

এই ধারাতে ব্যবসার বিলোপসাধনের কারণ ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে। অংশীদারদের পারস্পরিক সম্মতি, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া, অংশীদারের মৃত্যু বা দেউলিয়াত্ব ইত্যাদি কারণ বিলোপসাধনের জন্য যথেষ্ট বলে ধরা হয়​।

৫. অংশীদারদের দায়বদ্ধতা (ধারা ১১-১৮)

সাধারণত, প্রতিটি অংশীদার ব্যবসার দেনা ও আইনি দায়বদ্ধতার জন্য সমানভাবে দায়ী থাকেন। তবে সীমিত অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে এই দায়বদ্ধতা বিনিয়োগের সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে​।

৬. অংশীদারি ব্যবসার নিবন্ধন (ধারা ৫৬-৫৮)

যদিও অংশীদারি ব্যবসার নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়, তবে নিবন্ধিত ব্যবসায় আইনগত সুরক্ষা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বেশি থাকে। এছাড়াও এই ধারায়, অংশীদারি ব্যবসার নিবন্ধন পদ্ধতি ও এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে​।

পার্টনারশিপ ব্যবসার নিয়ম

পার্টনারশিপ ব্যবসা পরিচালনার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও শর্ত মেনে চলতে হয়। এগুলো মূলত  অংশীদারি আইন, ১৯৩২ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সঠিকভাবে গঠিত ও পরিচালিত অংশীদারি ব্যবসা দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক ও সুরক্ষিত। নিচে পার্টনারশিপ ব্যবসার মূল নিয়মগুলো তুলে ধরা হলোঃ 

  • পার্টনারশিপ ব্যবসা শুরু করতে হলে অংশীদারদের মধ্যে একটি লিখিত বা মৌখিক চুক্তি থাকতে হবে।
  • সাধারণ ব্যবসায় ন্যূনতম ২ জন ও সর্বাধিক ২০ জন থাকতে পারে, তবে ব্যাংকিং ব্যবসার ক্ষেত্রে সর্বাধিক ১০ জন অনুমোদিত।
  • সাধারণ অংশীদারদের ব্যবসার সব দেনা ও আইনি দায় এককভাবে বহন করতে হয়, তবে সীমিত অংশীদারি (Limited Partnership) থাকলে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে দায়বদ্ধতা নির্ধারিত থাকে।
  • প্রতিটি অংশীদার ব্যবসার ব্যবস্থাপনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করতে পারেন, যদি না চুক্তিতে ভিন্ন কিছু উল্লেখ থাকে।
  • পার্টনারশিপ চুক্তিতে নির্দিষ্ট শর্ত না থাকলে, অংশীদাররা সমান হারে লাভ ও ক্ষতি ভাগ করে নেন।
  • কোনো অংশীদার ব্যবসা থেকে সরে যেতে চাইলে বা নতুন অংশীদার যুক্ত হলে অন্যান্য অংশীদারদের সম্মতি প্রয়োজন।
  • অংশীদারদের সম্মতিতে, নির্দিষ্ট সময়সীমা শেষ হলে, অংশীদারের মৃত্যু হলে, বা দেউলিয়াত্বের কারণে ব্যবসা বন্ধ হতে পারে।
  • আইনি স্বীকৃতি ও সুবিধা পাওয়ার জন্য Joint Stock Companies and Firms (RJSC) কর্তৃপক্ষে নিবন্ধন করা উত্তম।

অংশীদারি ব্যবসায় নিবন্ধন করবেন কিভাবে?

বাংলাদেশে অংশীদারি ব্যবসায় নিবন্ধন করতে হলে Registrar of Joint Stock Companies and Firms (RJSC)-এর নির্দিষ্ট কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়। অংশীদারি আইন, ১৯৩২ অনুযায়ী নিবন্ধন বাধ্যতামূলক না হলেও, এটি আইনি সুরক্ষা, কর সুবিধা এবং ব্যবসার বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। অংশীদারি ব্যবসায় নিবন্ধনের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া নিচে দেওয়া হলোঃ 

১. ব্যবসার নাম নির্বাচন

প্রথম ধাপে অংশীদারি ব্যবসার জন্য একটি অনন্য নাম নির্বাচন করতে হবে। নামটি RJSC থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়, যাতে এটি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে না মিলে।

২. পার্টনারশিপ চুক্তি প্রস্তুত

অংশীদারদের মধ্যে একটি পার্টনারশিপ চুক্তি (Partnership Deed) তৈরি করতে হবে। চুক্তিটি স্ট্যাম্প পেপারে লিখে নোটারি পাবলিক দ্বারা সত্যায়িত করিয়ে নিতে হবে।

৩. RJSC-তে আবেদন জমা

নিবন্ধনের জন্য যে এলেকায় ব্যবসায়ের কার্যক্রম রয়েছে সেখানের আঞ্চলিক RJSC অফিস-এ আবেদন করতে হয়। আবেদনপত্রের সাথে নিম্নলিখিত কাগজপত্র জমা দিতে হবে- 

  • অনুমোদিত ব্যবসার নাম
  • ব্যবসার প্রধান অফিস বা শাখা অফিসের ঠিকানা
  • ব্যবসায় পরিচালনার স্থান
  • ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য
  • ব্যবসায়ের শুরুর কার্যকাল
  • অংশীদারি চুক্তির সত্যায়িত কপি
  • অংশীদারদের, নাম, স্থায়ী ঠিকানা ও পেশা
  • অংশীদারদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট কপি
  • অংশীদার হিসেবে ব্যবসায় যোগদানের তারিখ
  • ব্যবসায়ের মেয়াদ (যদি থাকে)
  • প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স

৪. নিবন্ধন ফি প্রদান

RJSC-তে আবেদনপত্র জমার পর নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি পরিশোধ করতে হয়। ফি-এর পরিমানঃ 

  • নিবন্ধন ফিঃ ৫০০০ টাকা।
  • নিবন্ধন ফাইলিং ফিঃ ৫০০ টাকা।
  • ডিজিটাল সার্টিফিকেট সরবরাহ ফিঃ শূন্য।

৫. RJSC কর্তৃক যাচাই ও অনুমোদন

RJSC কর্তৃপক্ষ জমাকৃত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে এবং যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তবে ব্যবসাকে নিবন্ধিত ঘোষণা করা হয়।

৬. নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ

নিবন্ধন অনুমোদিত হলে RJSC থেকে একটি নিবন্ধন সনদ (Registration Certificate) ইস্যু করা হয়। এটি ব্যবসার আইনি স্বীকৃতি প্রদান করে।

অংশীদারি ব্যবসায় চুক্তি

অংশীদারি ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি লিখিত চুক্তি থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ব্যবসার কাঠামো, অংশীদারদের অধিকার ও দায়িত্ব এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার নিয়ম নির্ধারণ করে। সঠিকভাবে প্রস্তুতকৃত চুক্তি ভবিষ্যতে কোনো বিরোধ এড়াতে অত্যন্ত সহায়ক। 

একটি অংশীদারি ব্যবসায় চুক্তিপত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো থাকা প্রয়োজনঃ 

  • ব্যবসার নাম ও প্রকৃতি
  • অংশীদারগনের মূলধনের পরিমান 
  • লাভ ও ক্ষতির বণ্টন পদ্ধতি
  • ব্যবস্থাপনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতি
  • অংশীদারের অধিকার ও দায়িত্ব
  • অংশীদারের বিদায় বা নতুন অংশীদার অন্তর্ভুক্তকরণের পদ্ধতি
  • অংশীদারিত্বের মেয়াদ ও অবসানকাল
  • বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতি

একটি সুস্পষ্ট চুক্তি অংশীদারিত্ব ব্যবসার সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি। ব্যবসা শুরুর আগে আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে এই চুক্তি প্রস্তুত করা সর্বদা ভালো।

অংশীদারিত্ব/যৌথ/পার্টনারশিপ ব্যবসার চুক্তিপত্র নমুনা

নিচে একটি অংশীদারি ব্যবসায় চুক্তি পত্রের নমুনা প্রদান করা হলো। এটি কাস্টমাইজ করে নির্দিষ্ট ব্যবসায়িক চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তন করা যেতে পারে।

অংশীদারিত্ব চুক্তিপত্র

[ব্যবসার নাম]
[ব্যবসার ঠিকানা]

এই চুক্তি [তারিখ] তারিখে [স্থান] এ স্বাক্ষরিত হলো, যেখানে নিম্নোক্ত পক্ষরা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবসা পরিচালনার জন্য একমত হয়েছেন।

১. অংশীদারদের বিবরণ

এই ব্যবসার অংশীদারগণ হলেনঃ 

  • [প্রথম অংশীদারের নাম], পিতা: [পিতার নাম], ঠিকানা: [সম্পূর্ণ ঠিকানা]
  • [দ্বিতীয় অংশীদারের নাম], পিতা: [পিতার নাম], ঠিকানা: [সম্পূর্ণ ঠিকানা]

 (প্রয়োজন অনুযায়ী আরও অংশীদার যুক্ত করা যেতে পারে)

২. ব্যবসার নাম ও প্রকৃতি

এই চুক্তির অধীনে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসার নাম হবে [ব্যবসার নাম], এবং এটি [ব্যবসার ধরণ, যেমন ট্রেডিং, ম্যানুফ্যাকচারিং, সার্ভিস ইত্যাদি] সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

৩. ব্যবসার মূলধন ও বিনিয়োগ

প্রত্যেক অংশীদার নিম্নোক্ত পরিমাণ মূলধন ব্যবসায় বিনিয়োগ করবেনঃ 

  • [প্রথম অংশীদারের নাম][পরিমাণ] টাকা
  • [দ্বিতীয় অংশীদারের নাম][পরিমাণ] টাকা

(প্রয়োজন অনুযায়ী মূলধন বিনিয়োগের বিবরণ যোগ করা যেতে পারে)

৪. লাভ ও ক্ষতির বণ্টন

ব্যবসার যে কোনো লাভ ও ক্ষতি অংশীদারদের মধ্যে নিম্নলিখিত অনুপাতে ভাগ করা হবেঃ 

  • [প্রথম অংশীদার][লাভ/ক্ষতির শতকরা হার]
  • [দ্বিতীয় অংশীদার][লাভ/ক্ষতির শতকরা হার]

৫. ব্যবস্থাপনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ

ব্যবসার দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সমস্ত অংশীদার সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অংশীদারদের সর্বসম্মতি থাকতে হবে।

৬. অংশীদার পরিবর্তন ও নতুন অংশীদার সংযোজন

কোনো অংশীদার যদি ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়াতে চান, তবে তাকে কমপক্ষে [সময়সীমা, যেমন ৩০ দিন] আগে লিখিত নোটিশ প্রদান করতে হবে। নতুন অংশীদার অন্তর্ভুক্তির জন্য সকল বিদ্যমান অংশীদারের সম্মতি প্রয়োজন।

৭. ব্যবসার মেয়াদ ও অবসান

এই অংশীদারিত্ব ব্যবসার মেয়াদ [মেয়াদের তথ্য, যেমন অনির্দিষ্টকালের জন্য] নির্ধারণ করা হলো। যদি কোনো কারণে ব্যবসা বন্ধ করতে হয়, তাহলে সকল অংশীদারের সম্মতির ভিত্তিতে অবসান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

৮. বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতি

অংশীদারদের মধ্যে যদি কোনো মতবিরোধ সৃষ্টি হয়, তবে সেটি প্রথমে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। যদি সমাধান না হয়, তবে সালিশি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি করা হবে।

৯. আইনগত বাধ্যবাধকতা

এই চুক্তি বাংলাদেশের অংশীদারি আইন, ১৯৩২ অনুসারে পরিচালিত হবে এবং আইনগতভাবে কার্যকর থাকবে।

১০. স্বাক্ষর

এই চুক্তির সকল শর্ত ও বিধি-বিধান মেনে নিচের অংশীদারগণ স্বাক্ষর করলেনঃ 

অংশীদারের নাম স্বাক্ষর তারিখ
[প্রথম অংশীদার] __________ __________
[দ্বিতীয় অংশীদার] __________ __________
(প্রয়োজনে আরও অংশীদারদের নাম ও স্বাক্ষর যোগ করা যেতে পারে)

এই কাঠামোটি অংশীদারি চুক্তি পত্রের নমুনা মাত্র। নির্দিষ্ট ব্যবসার চাহিদা অনুযায়ী এটি আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে পরিবর্তন করে নিতে হবে।

যৌথ মূলধনী কোম্পানির বৈশিষ্ট্য

যৌথ মূলধনী কোম্পানি একটি স্বতন্ত্র আইনগত সত্তা, যেখানে একাধিক ব্যক্তি বা সংস্থা মালিকানা ভাগ করে নেয়। নিচে যৌথ মূলধনী কোম্পানির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলোঃ 

স্বতন্ত্র আইনগত সত্তাঃ যৌথ মূলধনী কোম্পানি একটি স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে কাজ করে, যা এর মালিকদের থেকে আলাদা। এটি নিজস্ব নামে সম্পদ অর্জন, চুক্তি স্বাক্ষর এবং মামলা দায়ের করতে পারে।

সীমিত দায়বদ্ধতাঃ কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা শুধুমাত্র তাদের বিনিয়োগকৃত মূলধনের পরিমাণ পর্যন্ত দায়বদ্ধ থাকেন। কোম্পানির ঋণ পরিশোধের জন্য ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয় না।

শেয়ার দ্বারা মালিকানা বণ্টনঃ যৌথ মূলধনী কোম্পানির মালিকানা শেয়ারের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির মুনাফার অংশীদার হন এবং তাদের শেয়ারের অনুপাতে লভ্যাংশ পান।

নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রমঃ একটি যৌথ মূলধনী কোম্পানির অস্তিত্ব মালিক বা শেয়ারহোল্ডারদের জীবনকালের ওপর নির্ভর করে না। মালিক পরিবর্তন হলেও কোম্পানি তার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।

পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে পরিচালনাঃ কোম্পানির মালিকানা শেয়ারহোল্ডারদের হাতে থাকলেও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা তার পরিচালনা পর্ষদ (Board of Directors) দ্বারা পরিচালিত হয়। পর্ষদ কোম্পানির নীতিনির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব পালন করে।

আইনগত বাধ্যবাধকতা ও নিবন্ধনঃ যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠনের জন্য নিবন্ধন বাধ্যতামূলক এবং এটি সরকার অনুমোদিত সংস্থা Registrar of Joint Stock Companies and Firms (RJSC) এর মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। কোম্পানির কার্যক্রম কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ অনুযায়ী পরিচালিত হয়।

পুঁজি সংগ্রহের সুবিধাঃ যৌথ মূলধনী কোম্পানি সাধারণত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা শেয়ারবাজারের মাধ্যমে সহজেই বড় পরিমাণে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে।

লাভ ও ক্ষতির বণ্টনঃ কোম্পানির আয় থেকে পরিচালন ব্যয় বাদ দিয়ে মুনাফা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করা হয়। যদি কোম্পানির ক্ষতি হয়, তাহলে শেয়ারহোল্ডাররা কেবল তাদের বিনিয়োগের সীমার মধ্যেই ক্ষতির সম্মুখীন হন।

কঠোর নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থাঃ যৌথ মূলধনী কোম্পানিগুলোর জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম ও বিধিনিষেধ রয়েছে। এগুলো কর পরিশোধ, বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিল এবং নিরীক্ষার আওতায় থাকে।

দ্বৈত কর ব্যবস্থাঃ যৌথ মূলধনী কোম্পানির আয় করযোগ্য এবং এরপর শেয়ারহোল্ডারদের প্রদত্ত লভ্যাংশের ওপর পুনরায় কর আরোপ করা হয়, যা দ্বৈত করের (Double Taxation) সৃষ্টি করে।

বারবার বার জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি

অংশীদারি কারবার কি?

দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা সংস্থা একত্রে ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি আইনি চুক্তির মাধ্যমে অংশীদারিত্ব গঠন করলে তাকে অংশীদারি কারবার বলা হয়।

অংশীদারি ব্যবসায়ের হিসাব প্রারম্ভিক মূলধন নির্ণয় করবেন কিভাবে?

প্রত্যেক অংশীদারের বিনিয়োগকৃত অর্থ, সম্পদ ও অন্যান্য অবদান যোগ করে প্রারম্ভিক মূলধন নির্ধারণ করা হয়।

অংশীদারি চুক্তিপত্র কি?

অংশীদারি চুক্তিপত্র হলো একটি লিখিত দলিল যেখানে ব্যবসার কাঠামো, লাভ-ক্ষতি বণ্টন, দায়বদ্ধতা ও অন্যান্য নিয়মাবলি উল্লেখ থাকে।

অংশীদারি ব্যবসায় চুক্তি কত প্রকার?

অংশীদারি ব্যবসায় চুক্তি মূলত দুই প্রকার, লিখিত ও মৌখিক চুক্তি। তবে আইনি নিরাপত্তার জন্য লিখিত চুক্তি করা ভালো।

চুক্তিই কি অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি?

হ্যাঁ, চুক্তিই অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি। এটি অংশীদারদের অধিকার, দায়িত্ব ও শর্তাবলি নির্ধারণ করে।

নামমাত্র অংশীদার কাকে বলে?

নামমাত্র অংশীদার হলেন সেই অংশীদার, যিনি শুধুমাত্র নামের জন্য অংশীদারিত্বে অন্তর্ভুক্ত থাকেন কিন্তু ব্যবসার মূলধনে কোনো বিনিয়োগ করেন না এবং ব্যবসার পরিচালনায় কোনো সক্রিয় ভূমিকা রাখেন না।

মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসায় কত প্রকার?

মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসায় মূলত তিন প্রকার, একক মালিকানা, অংশীদারি ব্যবসা ও যৌথ মূলধনী কোম্পানি।

নিজের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করুন মাত্র ৫ মিনিটে

ব্যবহারে সহজ

কোডিং এর ঝামেলা নেই

খরচ সাধ্যের মধ্যে

সাইন আপ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

আপনার মূল্যবান মতামত দিন

মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। আবশ্যক ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত *

আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন

সবার আগে মন্তব্য করুন