একটি সফল ব্যবসা পরিচালনার জন্য বিশ্বাস ও পেশাদারিত্বের পাশাপাশি সঠিক চুক্তিপত্র তৈরি করাও অত্যন্ত জরুরি। ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝি, আইনি জটিলতা কিংবা ভবিষ্যৎ বিরোধ এড়াতে একটি সুস্পষ্ট ও সঠিক চুক্তি অপরিহার্য। কিন্তু অনেক উদ্যোক্তাই জানেন না কীভাবে একটি কার্যকর ও আইনি সুরক্ষিত চুক্তিপত্র তৈরি করতে হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব ব্যবসায়িক চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম, কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত এবং কীভাবে একটি শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য চুক্তি তৈরি করা যায় তা নিয়ে। আপনি যদি আপনার ব্যবসাকে সুরক্ষিত রাখতে চান, তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই!
ব্যবসায়িক চুক্তিনামা কত ধরনের ও কি কি?
একটি ব্যবসায়িক চুক্তিনামা ব্যবসার বিভিন্ন কার্যক্রম ও লেনদেনকে সুরক্ষিত ও সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করে। ব্যবসার ধরন ও প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন ধরনের চুক্তিনামা থাকতে পারে। নিচে বিভিন্ন ধরনের চুক্তিপত্র ও তাদের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো।
- পার্টনারশিপ চুক্তি (Partnership Agreement): যেসব ব্যবসায় একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একত্রে কাজ করে, তাদের জন্য পার্টনারশিপ চুক্তি অপরিহার্য। এতে পার্টনারদের দায়িত্ব, লাভ-লোকসানের বণ্টন, বিনিয়োগের পরিমাণ এবং ব্যবসা বন্ধ করার শর্তাবলী উল্লেখ থাকে।
- ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি (Sales Agreement): ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে নির্দিষ্ট শর্তে পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য এই চুক্তি করা হয়। এতে পণ্যের বিবরণ, মূল্য, ডেলিভারির সময়সীমা, অর্থ পরিশোধের পদ্ধতি এবং ফেরত নীতিমালা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে।
- বিনিয়োগ চুক্তি (Investment Agreement): যে কোনো ব্যবসায় বিনিয়োগ নেওয়ার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তার মধ্যে বিনিয়োগ চুক্তি করা হয়। এতে বিনিয়োগের শর্তাবলী, মুনাফার ভাগ, মালিকানার পরিমাণ এবং বিনিয়োগ ফেরতের নিয়মাবলী অন্তর্ভুক্ত থাকে।
- ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তি (Franchise Agreement): যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের অধীনে ব্যবসা পরিচালনা করতে চায়, তাহলে ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তি করা হয়। এতে ব্র্যান্ড ব্যবহারের নিয়ম, মুনাফার ভাগ এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত থাকে।
- সরবরাহ চুক্তি (Supply Agreement): যে কোনো পণ্য বা কাঁচামাল সরবরাহের জন্য কোম্পানি ও সরবরাহকারীর মধ্যে এই চুক্তি হয়। এতে সরবরাহের সময়, মূল্য, গুণগত মান এবং অন্যান্য শর্তাবলী উল্লেখ থাকে, যা উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে।
- যৌথ উদ্যোগ চুক্তি (Joint Venture Agreement): যদি দুটি বা ততোধিক প্রতিষ্ঠান কোনো নির্দিষ্ট প্রকল্প বা ব্যবসায়িক উদ্যোগে একত্রে কাজ করতে চায়, তাহলে তারা যৌথ উদ্যোগ চুক্তি করে। এতে অংশীদারদের দায়-দায়িত্ব, মুনাফা বণ্টন ও প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারিত থাকে।
- টাকা লেনদেন চুক্তি (Financial Transaction Agreement): যে কোনো ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে বড় অঙ্কের টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে এই ধরনের চুক্তিপত্র তৈরি করা হয়। এতে লেনদেনের পরিমাণ, অর্থ পরিশোধের পদ্ধতি, সময়সীমা এবং শর্তাবলী উল্লেখ করা হয়। যখন ঋণ প্রদান, বিনিয়োগ বা ব্যবসায়িক পার্টনারদের মধ্যে লেনদেন হয় তখন এটি এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
- টাকা ধার দেওয়ার চুক্তি (Loan Agreement): যখন একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অন্য কাউকে নির্দিষ্ট শর্তে টাকা ধার দেয়, তখন এই চুক্তি কার্যকর হয়। এতে ঋণের পরিমাণ, সুদের হার (যদি থাকে), পরিশোধের মেয়াদ এবং অন্যান্য শর্তাবলী স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।
- ব্যবসায়িক এগ্রিমেন্ট (Business Agreement): একটি ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সাধারণ বা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যপূর্ণ বিষয়ে চুক্তি করতে হয়, যা ‘ব্যবসায়িক এগ্রিমেন্ট’ নামে পরিচিত। এটি দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে সম্পাদিত হয় এবং এতে পারস্পরিক চুক্তির শর্ত, দায়িত্ব, ব্যবসায়িক লক্ষ্য সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে।
- ব্যবসায়িক মীমাংসা চুক্তি (Business Settlement Agreement): যদি কোনো ব্যবসায়িক পার্টনারশিপ, বিনিয়োগ বা অন্য কোনো লেনদেনের কারণে মতবিরোধ বা আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়, তাহলে তা নিরসনের জন্য ব্যবসায়িক মীমাংসা চুক্তি করা হয়। এতে সমস্যার সমাধান, ক্ষতিপূরণ, ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং অন্যান্য শর্তাবলী উল্লেখ থাকে। এই চুক্তি ব্যবসায়িক বিবাদ নিরসনে সাহায্য করে এবং আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
- গোপনীয়তা চুক্তি (Non-Disclosure Agreement – NDA): অনেক কোম্পানি তাদের ব্যবসায়িক গোপনীয়তা ও তথ্য নিরাপদ রাখতে NDA চুক্তি ব্যবহার করে। এতে নির্দিষ্ট শর্তাবলীর মাধ্যমে এক পক্ষ অন্য পক্ষের সংবেদনশীল তথ্য তৃতীয় পক্ষের কাছে প্রকাশ না করার নিশ্চয়তা দেয়।
- সেবা প্রদান চুক্তি (Service Agreement): যে কোনো পেশাদার বা কোম্পানি যখন অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্দিষ্ট সেবা প্রদান করে, তখন এই চুক্তি কার্যকর হয়। এতে সেবার ধরন, মেয়াদ, মূল্য এবং অন্যান্য শর্তাবলী উল্লেখ থাকে।
- কর্মসংস্থান চুক্তি (Employment Agreement): একটি কোম্পানি যখন নতুন কর্মী নিয়োগ দেয়, তখন উভয় পক্ষের অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণের জন্য কর্মসংস্থান চুক্তি করা হয়। এতে কর্মীর কাজের পরিধি, বেতন, ছুটির নিয়ম, চাকরিচ্যুতির শর্তাবলী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে।
- ভাড়া চুক্তি (Lease Agreement): যদি কোনো ব্যবসায় অফিস, দোকান বা কারখানা ভাড়া নিয়ে পরিচালিত হয়, তাহলে ভাড়া চুক্তি অপরিহার্য। এতে ভাড়ার পরিমাণ, চুক্তির মেয়াদ, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এবং অন্যান্য শর্তাবলী উল্লেখ করা হয়।
ব্যবসায়িক চুক্তিপত্রের দলিল বা স্ট্যাম্প বা চুক্তিনামা লেখার নিয়ম
সফল ব্যবসা পরিচালনার জন্য সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট চুক্তিপত্র বা চুক্তিনামা তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। এটি ব্যবসায়িক লেনদেনের সুরক্ষা, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং আইনি সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করে। নিচে ব্যবসায়িক চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম সমূহ ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো।
১। চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী সকল পক্ষের পূর্ণ নাম, ঠিকানা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তাদের পেশা বা ব্যবসার বিবরণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
২। চুক্তির মূল বিষয় বা উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি এটি একটি অংশীদারি ব্যবসার চুক্তি হয়, তাহলে ব্যবসার ধরন, নাম, ঠিকানা এবং কার্যক্রমের বিবরণ উল্লেখ করতে হবে।
৩। চুক্তির মূল শর্তাবলী স্পষ্ট ও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
এতে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেঃ
- প্রতিটি অংশীদারের বিনিয়োগের পরিমাণ এবং লাভ-লোকসানের বণ্টন।
- প্রতিটি অংশীদারের নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য।
- ব্যবসার দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া।
৪। চুক্তির মধ্যে সম্ভাব্য বিরোধ বা মতবিরোধের সমাধানের পদ্ধতি উল্লেখ করা উচিত। এটি হতে পারে আলোচনার মাধ্যমে, মধ্যস্থতার মাধ্যমে বা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
৫। চুক্তির কার্যকারিতা কতদিন থাকবে এবং কোন পরিস্থিতিতে এটি সমাপ্ত হবে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
৬। বাংলাদেশে চুক্তিপত্রের আইনি স্বীকৃতির জন্য নির্দিষ্ট মূল্যের স্ট্যাম্পে চুক্তি লিখিত হতে হবে এবং নোটারি পাবলিক বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা সত্যায়িত করতে হবে।
৭। চুক্তির সকল পক্ষের স্বাক্ষর এবং কমপক্ষে দুইজন সাক্ষীর স্বাক্ষর থাকতে হবে। সাক্ষীদের পূর্ণ নাম ও ঠিকানার পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর উল্লেখ করা উচিত।
সঠিকভাবে প্রস্তুতকৃত চুক্তিপত্র ব্যবসায়িক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য জটিলতা এড়াতে সহায়তা করে। তাই, চুক্তিপত্র প্রস্তুত করার সময় উপরে উল্লেখিত নিয়মাবলীর অনুসরনের পাশাপাশি একজন যোগ্যতাসম্পন্ন আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া উচিত।
টাকা লেনদেনের চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম
সর্বাবস্থায় টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে একটি চুক্তিপত্র তৈরি করা উচিত। এটি উভয় পক্ষের জন্য বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করে এবং ভবিষ্যতে কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি বা আইনি জটিলতা এড়াতে সাহায্য করে। একটি কার্যকর ও বৈধ টাকা লেনদেন চুক্তিপত্র তৈরির জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।
১. চুক্তির পক্ষগণের পরিচিতিঃ টাকা লেনদেন চুক্তিপত্রে উভয় পক্ষের (দাতা ও গ্রহীতা) নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। এটি চুক্তির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।
২. লেনদেনের পরিমাণঃ চুক্তিপত্রে লেনদেনের সঠিক পরিমাণ সংখ্যায় ও শব্দে উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। যদি কিস্তিতে টাকা প্রদান করা হয়, তবে প্রতিটি কিস্তির পরিমাণ ও সময়সূচি নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা উচিত।
৩. পরিশোধের সময়সীমা ও পদ্ধতিঃ চুক্তিতে উল্লেখ করতে হবে যে, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কীভাবে এবং কত দিনের মধ্যে ফেরত দিতে হবে। পরিশোধ পদ্ধতি (নগদ, ব্যাংক ট্রান্সফার, চেক, মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদি) স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা উচিত।
৪. সুদের হার (যদি প্রযোজ্য হয়):কোনো সুদের ভিত্তিতে লেনদেন করা হলে, চুক্তিপত্রে সুদের হার, গণনার পদ্ধতি এবং পরিশোধের শর্তাবলী উল্লেখ করতে হবে।
৫. জামিনদার ও সাক্ষীর বিবরণ: ঋনের ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা বা চুক্তিপত্রের এক পক্ষের হয়ে জামিনদারকে দায়িত্ব নিতে হবে। আবার লেনদেনের সত্যতা নিশ্চিত করতে, চুক্তিপত্রে একজন বা একাধিক সাক্ষী থাকতে হবে। যেকোনো প্রয়োজনে জামিনদার এবং সাক্ষীর নামসহ বিস্তারিত তথ্যও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
৬. লেনদেনের উদ্দেশ্যঃ চুক্তিপত্রে কেন এবং কী উদ্দেশ্যে টাকা লেনদেন করা হচ্ছে তা উল্লেখ করতে হবে। এটি পরবর্তী সময়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হলে আইনি ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
৭. জরিমানা বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থাঃ যদি নির্ধারিত সময়ে টাকা ফেরত না দেওয়া হয়, তাহলে কী ধরনের জরিমানা বা আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা চুক্তিপত্রে উল্লেখ করা উচিত।
৮. চুক্তির মেয়াদ ও সমাপ্তির শর্তঃ টাকা ফেরতের সর্বশেষ সময়সীমা, কিস্তিতে পরিশোধের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত পরিশোধের তারিখ এবং অন্য যেকোনো বিশেষ শর্তাবলী চুক্তিতে উল্লেখ করতে হবে।
৯. আইনি বৈধতা ও স্ট্যাম্পঃ বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, টাকা লেনদেন সংক্রান্ত চুক্তিপত্র নির্দিষ্ট মূল্যের স্ট্যাম্পে সম্পাদন করা ভালো। এটি আইনগত স্বীকৃতি প্রদান করে এবং প্রয়োজনে আদালতে উপস্থাপন করা যায়।
১০. স্বাক্ষর ও সত্যায়নঃ চুক্তির দুই পক্ষ, সাক্ষী ও জামিনদারের স্বাক্ষর থাকা বাধ্যতামূলক। প্রয়োজনে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিক দ্বারা চুক্তিপত্র সত্যায়িত করা যেতে পারে।
সঠিকভাবে তৈরি করা টাকা লেনদেনের চুক্তিপত্র উভয় পক্ষের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং ভবিষ্যতে যেকোনো সমস্যা বা দ্বন্দ্ব এড়াতে সাহায্য করে। তাই চুক্তিপত্র তৈরির সময় এই নিয়মগুলো অনুসরণ করা জরুরি।
বিভিন্ন ধরনের চুক্তি পত্রের নমুনা
এখানে বিভিন্ন ধরনের চুক্তিপত্রের নমুনা দেওয়া হলো, যা প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টমাইজ করা যেতে পারে।
যৌথ ব্যবসার চুক্তিপত্র
চুক্তির নাম: যৌথ ব্যবসার চুক্তিপত্র
তারিখ: ………………..
চুক্তিপত্র নম্বর: ………………..
উভয় পক্ষের নাম ও ঠিকানা:
পক্ষের নাম | ঠিকানা | জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর |
পার্টনার ১ঃ………………. | ………………. | ……………….. |
পার্টনার ২ঃ………………. | ………………. | ……………….. |
ব্যবসার বিবরণ:
- ব্যবসার নাম: ………………..
- ব্যবসার ধরণ: ………………..
- অফিসের ঠিকানা: ………………..
মূলধন বিনিয়োগ ও শেয়ারের হার:
পার্টনারের নাম | বিনিয়োগের পরিমাণ | লাভ/ক্ষতির ভাগ |
পার্টনার ১ঃ………………. | ……………….. | ……………….. |
পার্টনার ২ঃ……………… | ……………….. | ……………….. |
দায়িত্ব ও কর্তব্য:
- পার্টনার ১: ………………..
- পার্টনার ২: ………………..
চুক্তির মেয়াদ: ………………..
বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতি: আইনগত ব্যবস্থা / সালিশি বোর্ড
আইনি শর্তাবলী: সমস্ত আইন মেনে এই চুক্তি সম্পাদিত হবে
সাক্ষীদের নাম ও স্বাক্ষর:
সাক্ষীর নাম | ঠিকানা | স্বাক্ষর |
সাক্ষী ১ঃ……………… | ………………. | ………………. |
সাক্ষী ২ঃ……………… | ………………. | ………………. |
ক্রয় বিক্রয় চুক্তিনামা নমুনা
চুক্তির নাম: ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিপত্র
তারিখ: ………………..
চুক্তিপত্র নম্বর: ………………..
ক্রেতা ও বিক্রেতার বিবরণ:
নাম | ঠিকানা |
ক্রেতাঃ………………. | ……………….. |
বিক্রেতাঃ………………. | ……………….. |
পণ্যের বিবরণ:
পণ্যের নাম | পরিমাণ | একক মূল্য | মোট মূল্য |
……………….. | ……………….. | ……………….. | ……………….. |
লেনদেনের শর্তাবলী:
- মূল্য পরিশোধ পদ্ধতি: নগদ / ব্যাংক ট্রান্সফার / চেক / মোবাইল ব্যাংকিং
- ডেলিভারির সময়সীমা: ………………..
- ওয়ারেন্টি/গ্যারান্টি শর্তাবলী: ………………..
- আইনি শর্তাবলী: আইন অনুযায়ী এই চুক্তি সম্পাদিত হবে
সাক্ষীদের নাম ও স্বাক্ষর:
সাক্ষীর নাম | ঠিকানা | স্বাক্ষর |
সাক্ষী ১ঃ…………… | ……………….. | ……………….. |
সাক্ষী ২ঃ…………… | ……………….. | ……………….. |
টাকা লেনদেনের চুক্তিপত্র নমুনা
চুক্তির নাম: টাকা লেনদেন চুক্তিপত্র
তারিখ: ………………..
চুক্তিপত্র নম্বর: ………………..
দাতা ও গ্রহীতার বিবরণ:
পক্ষের নাম | ঠিকানা | জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর |
দাতাঃ……………….. | ……………….. | ……………….. |
গ্রহীতাঃ……………… | ……………….. | ……………….. |
লেনদেনের পরিমাণ: ৳ ………………..
লেনদেনের পরিমাণ (কথায়): ৳ ………………..
পরিশোধের সময়সীমা: ………………..
সুদের হার (যদি থাকে): ………………..
পরিশোধের পদ্ধতি: নগদ / ব্যাংক ট্রান্সফার / মোবাইল ব্যাংকিং
জরিমানা বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা:
যদি নির্ধারিত সময়ে টাকা ফেরত না দেওয়া হয়, তাহলে প্রতি মাসে অতিরিক্ত ……………….. টাকা / % জরিমানা দিতে হবে।
আইনি বৈধতা ও স্ট্যাম্প:
এই চুক্তিপত্রটি বাংলাদেশ আইন অনুযায়ী নির্ধারিত স্ট্যাম্পে সম্পাদিত হলো।
সাক্ষীদের নাম ও স্বাক্ষর:
সাক্ষীর নাম | ঠিকানা | স্বাক্ষর |
সাক্ষী ১ঃ……………….. | ……………….. | ……………….. |
সাক্ষী ২ঃ……………….. | ……………….. | ……………….. |
টাকা ধার দেওয়ার চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম
চুক্তির নাম: টাকা ধার দেওয়ার চুক্তিপত্র
তারিখ: ………………..
চুক্তিপত্র নম্বর: ………………..
দাতা ও গ্রহীতার বিবরণ:
পক্ষের নাম | ঠিকানা | জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর |
দাতাঃ……………….. | ……………….. | ……………….. |
গ্রহীতাঃ……………… | ……………….. | ……………….. |
ধারের পরিমাণ: ৳ ………………..
ধারের পরিমাণ (কথায়): ৳ ………………..
পরিশোধের সময়সীমা: ………………..
ফেরত শর্তাবলী:
- পরিশোধের কিস্তি: ………………..
- জরিমানা শর্ত: যদি নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ না করা হয়, তাহলে ………………..টাকা / % অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হবে।
আইনি বৈধতা ও স্ট্যাম্প:
এই চুক্তিপত্রটি বাংলাদেশ আইন অনুযায়ী নির্ধারিত স্ট্যাম্পে সম্পাদিত হলো।
জামিনদারদের নাম ও পরিচয়:
জামিনদারের নাম | ঠিকানা | স্বাক্ষর | জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর |
জামিনদার ১ঃ…………….. | ……………….. | ……………….. | …………………………………. |
জামিনদার ২ঃ…………….. | ……………….. | ……………….. | …………………………………. |
সাক্ষীদের নাম ও স্বাক্ষর:
সাক্ষীর নাম | ঠিকানা | স্বাক্ষর |
সাক্ষী ১ঃ……………….. | ……………….. | ……………….. |
সাক্ষী ২ঃ……………….. | ……………….. | ……………….. |
ব্যবসায়িক এগ্রিমেন্ট দলিল লেখার নিয়ম
চুক্তির নাম: ব্যবসায়িক এগ্রিমেন্ট দলিল
তারিখ: ………………..
চুক্তিপত্র নম্বর: ………………..
চুক্তির পক্ষগণ:
পক্ষের নাম | ঠিকানা | জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর |
পক্ষ ১ঃ……………….. | ……………….. | ……………….. |
পক্ষ ২ঃ……………….. | ……………….. | ……………….. |
চুক্তির বিষয়বস্তু:
ব্যবসার উদ্দেশ্য, বিনিয়োগ, পরিচালনার নিয়মাবলী, লাভ ও ক্ষতির হিসাব বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করতে হবে।
আইনি বৈধতা:
বাংলাদেশ কোম্পানি আইন অনুসারে এই চুক্তি সম্পাদিত হবে।
সাক্ষীদের নাম ও স্বাক্ষর:
সাক্ষীর নাম | ঠিকানা | স্বাক্ষর |
সাক্ষী ১ঃ……………….. | ……………….. | ……………….. |
সাক্ষী ২ঃ………………. | ……………….. | ……………….. |
৫০/১০০/৩০০ টাকার স্ট্যাম্প লেখার নিয়ম
বাংলাদেশে বিভিন্ন আইনি লেনদেনের জন্য নির্দিষ্ট মূল্যমানের স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হয়। স্ট্যাম্পের মূল্য সাধারণত চুক্তির ধরন ও আর্থিক পরিমাণের উপর নির্ভর করে।
স্ট্যাম্পের মূল্য ও ব্যবহার:
স্ট্যাম্পের মূল্য | ব্যবহারের ধরন |
৫০ টাকা | নকলের কবলা, বন্ড, বণ্টননামা, সার্টিফায়েড কপির দলিল। |
১০০ টাকা | অনুলিপি, খাস-মোক্তারনামা দলিল। |
৩০০ টাকা | চুক্তিনামা দলিল, অঙ্গীকারনামা, বায়নানামার দলিল, মেমোরেন্ডাম অব অ্যাগ্রিমেন্ট, রিডেম্পশন, সোলেনামা বা আপসনামার দলিল। |
চুক্তিপত্র স্ট্যাম্প লেখার নিয়ম:
- চুক্তির শিরোনাম: চুক্তিপত্রের উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
- পক্ষগণের নাম ও পরিচিতি: উভয় পক্ষের সম্পূর্ণ নাম, ঠিকানা ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর লিখতে হবে।
- লেনদেনের বিবরণ: টাকার পরিমাণ, সম্পদের বিবরণ বা চুক্তির শর্তাবলী বিস্তারিতভাবে লিখতে হবে।
- মেয়াদ ও শর্তাবলী: চুক্তির কার্যকারিতা, মেয়াদ ও শর্তাবলী নির্দিষ্ট করতে হবে।
- আইনি স্বীকৃতি: চুক্তিপত্রটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরিত ও নোটারি পাবলিক দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে।
- সাক্ষীদের স্বাক্ষর: অন্তত দুইজন সাক্ষীর স্বাক্ষর থাকতে হবে।
ব্যবসায়িক মীমাংসা পত্র লেখার নিয়ম
উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যবসায়িক বিরোধ মীমাংসার লিখিত চুক্তি বা দলিল প্রস্তুত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নিচের নমুনাটি দেখে ব্যবসায়িক মীমাংসা পত্র লেখার নিয়ম বুঝতে পারবেন।
চুক্তির নাম: ব্যবসায়িক বিরোধ মীমাংসা পত্র
তারিখ: ………………..
চুক্তিপত্র নম্বর: ………………..
পক্ষগণের বিবরণ:
পক্ষের নাম | ঠিকানা | জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর |
পক্ষ ১ঃ……………….. | ……………….. | ……………….. |
পক্ষ ২ঃ……………….. | ……………….. | ……………….. |
মীমাংসার বিষয়বস্তু:
- প্রধান সমস্যা: ………………..
- বিরোধের কারণ: ………………..
- সমাধানের প্রস্তাব: ………………..
মীমাংসার শর্তাবলী:
- উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধান করা হবে।
- যদি উভয় পক্ষের মধ্যে সমাধান সম্ভব না হয়, তবে আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হবে।
- চুক্তিটি আইন অনুযায়ী কার্যকর থাকবে এবং এর কোনো অংশ লঙ্ঘন করা হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাক্ষীদের নাম ও স্বাক্ষর:
সাক্ষীর নাম | ঠিকানা | স্বাক্ষর |
সাক্ষী ১ঃ……………….. | ……………….. | ……………….. |
সাক্ষী ২ঃ………………. | ……………….. | ……………….. |
এই চুক্তিপত্রের নমুনাগুলো বাস্তব ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য এবং এগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন করে ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে কাজে লাগানো যাবে।
সবার আগে মন্তব্য করুন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন
মন্তব্য করতে হলে আপনাকে লগ ইন করতে হবে।