ফেসবুক লাইভ – এনগেজমেন্টের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম

ফেসবুক লাইভ – এনগেজমেন্টের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম
শেয়ার করুন

আপনি কি জানেন? ফেসবুক লাইভ ভিডিও গুলো সাধারণ ভিডিও থেকে তিনগুণ বেশি এনগেজমেন্ট নিয়ে আসতে সক্ষম। 

২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রথম ফেসবুক লাইভ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। এরপরে থেকে ফেসবুক বিজনেস পেজ এবং সেলিব্রেটি পার্সোনাল প্রোফাইলগুলো এই সুবিধা কে অত্যন্ত কার্যকর ভাবে ব্যবহার করে চলেছে।

টকশো, লাইভ নিউজ, লাইভ সেলিব্রেটি এক্টিভিটিস, ব্র্যান্ড প্রমোশনের জন্য ফেসবুক লাইভ সারা বিশ্বে ব্যবহারকারীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়।

যেহেতু অনলাইনে পড়ার থেকে মানুষ দেখতে এবং শুনতে বেশি পছন্দ করে, তাই ভিডিও কনটেন্ট অডিয়েন্সের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

প্রতিটি দেশি বিদেশি ব্র্যান্ড তাদের বিজনেস প্রমোশনের জন্য ভিডিও কনটেন্ট এর উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এক্ষেত্রে ফেসবুক লাইভ তাদের পছন্দের শীর্ষে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফেসবুক পেইজ দ্বারা বিজনেস পরিচালনায় ফেসবুক লাইভ এখন অনন্য মাত্রা যোগ করেছে। 

একজন ক্ষুদ্র মাঝারি উদ্যোক্তা তার প্রোডাক্ট ফেসবুক লাইভে এসে সরাসরি কাস্টমারদের সামনে বর্ণনা করছেন এবং কাস্টমার সরাসরি সেলারদের সাথে কমেন্টের মাধ্যমে যোগাযোগ করছে।

এতে ফেসবুক লাইভ  বিজনেস পরিচালনায় বর্তমান বাংলাদেশের পেজ নির্ভর ব্র্যান্ডগুলো কাছে  অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ফিচারে পরিনিত হয়েছে ।

ফেসবুক লাইভ এর বিস্তার বেড়ে চলার সাথে সাথে এর ব্যবহারকারীদের থেকে প্রায় সময় একটি সমস্যার কথা শোনা যায়।

ফেসবুক লাইভ এর সময় অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট কম হচ্ছে। কিভাবে ফেসবুক লাইভে বেশি পরিমাণ অডিয়েন্স এঙ্গেজ করা যায়?

এ বিষয়ে ফেসবুক কিছু গুরুত্বপূর্ণ গাইডলাইন লাইভ ব্যবহারকারীদের জন্য রিকমেন্ডেড করেছেন।

ফেসবুক লাইভ করার সময় যে বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন?

১। ফেসবুক লাইভ এর সময় অবশ্যই নিশ্চিত করবেন আপনার লাইভ যেন পরিষ্কার, হাই রেজুলেশন এবং নিরবচ্ছিন্ন হয়।

এজন্য শক্তিশালী নেটওয়ার্ক কানেকশন এর সাথে ফেসবুক লাইভ করবেন। শক্তিশালী নেটওয়ার্ক কানেকশন বলতে আমরা বোঝাচ্ছি, নিরবচ্ছিন্ন এবং পাওয়ারফুল নেটওয়ার্ক ফ্রিকুয়েন্সি।

নেটওয়ার্ক ফ্রিকুয়েন্সি যদি দুর্বল হয় তবে আপনার লাইভ টি ঝাপসা হতে পারে অথবা মাঝে মাঝে কানেকশন ব্রেক হতে পারে যা দর্শকদের জন্য বিরক্তির কারণ। 

২। অডিয়েন্সদের সাথে সংযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করবেন। ফেসবুক সেই ধরনের কনটেন্ট গুলোকে অগ্রাধিকার দেয় যে কারণে মানুষ লাইভকারীর সাথে কথোপকথন যুক্ত হয়।

যে ফেসবুক লাইভে হোস্ট তার অডিয়েন্সদের সাথে কমেন্টের মাধ্যমে কথোপকথনে যুক্ত হয় সেই লাইভ টি ফেইসবুক অধিক সংখ্যক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেবার উপযুক্ত মনে করে।

অডিয়েন্স এঙ্গেজ করার কিছু টিপস

  • যখন লাইভ করবেন তখন কমেন্ট কারিদের নাম উচ্চারণ করে তাদের কমেন্টের রিপ্লাই দিবেন।অডিয়েন্স যখন আপনাকে প্রশ্ন করবে তখন আপনি সেই প্রশ্নটি প্রথমে উচ্চারণ করবেন তারপরে উত্তর দিবেন।
  • যে কমেন্ট আপনার লাইফের সাথে সংগতিপূর্ণ এবং সবচেয়ে ভালো সেটিকে পিন করে রাখবেন। তাহলে সেটি কমেন্টের প্রথমেই প্রদর্শিত হবে।
  • ফেসবুক লম্বা লাইভ ভিডিওগুলো বেশি পরিমাণে অগ্রাধিকার দেয়। এক্ষেত্রে একটি লাইভ অবশ্যই তিন মিনিটের বেশি হতে হবে। যত বেশি লম্বা লাইভ চলবে ততবেশি অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট বেশি পাবেন।লাইভ API Encoder ব্যবহার করে আপনি সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত একটানা লাইভ করতে পারবেন।
  • যখনই একটি  লাইভ পরিকল্পনা করবেন তার আগেই একটি পোষ্ট দেবার মাধ্যমে আপনি অডিয়েন্সের জানিয়ে দিতে পারেন কোন সময়ে আপনি লাইভ করতে যাচ্ছেন। এতে করে আগ্রহী দর্শকেরা আপনার লাইভটি দেখার জন্য অপেক্ষা করবে।
  • প্রতিটি লাইভে কিছু নতুনত্ব নিয়ে আসার চেষ্টা করবেন। একঘেয়ে লাইভ হয়ে গেলে মানুষ বিরক্ত হয়ে পড়বে।

ফেসবুক লাইভে নতুনত্ব নিয়ে আসতে ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড, ভিন্ন রকম ক্যামেরা ওরিয়েন্টেশন অথবা লাইভে ডিউরেশন এ কিছু পার্থক্য নিয়ে আসতে পারেন।

ফেসবুক লাইভের এঙ্গেজমেন্ট বাড়াতে আর একটি চমৎকার উপায় হচ্ছে Schedule a live.

এই ফিচারটির মাধ্যমে আপনি কয়েক দিন আগেই আপনার পরবর্তী লাইভের সময় নির্ধারিত করে দিতে পারেন। এতে নির্ধারিত সময়ে লাইভ অটোমেটিক শুরু হয়ে যাবে।

কেন আপনি ফেসবুক লাইভের পূর্ব পরিকল্পনার  করবেন?

এর কারণ, যখন আপনি লাইভের পূর্বপরিকল্পনা বা schedule a live করেন তখন দুইটি পোস্ট অটোমেটিক ভাবে তৈরি হয়।

১। এনাউন্সমেন্ট পোস্টঃ যখন আপনি লাইভের পূর্ব পরিকল্পনা করেন তখন আপনার পেজে একটি এনাউন্সমেন্ট পোস্ট পাবলিশ হয়। সেই পোস্টে গেট রিমাইন্ডার নামে একটি বাটন থাকে। আপনার অডিয়েন্স যদি রিমাইন্ডার বাটনে ক্লিক করে রাখে, তবে লাইভ শুরু করার ঠিক আগের মুহূর্তে ওদের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি নোটিফিকেশন চলে যায়। 

২। ফেসবুক লাইভ টি পূর্বপরিকল্পনা করে রাখার ফলে ঠিক টাইমে লাইভ শুরু হয়ে যায় এবং যারা যারা গেট রিমাইন্ডার বাটনে ক্লিক করে রেখেছিল তাদের নিউজফিডে একটি পুশ নোটিফিকেশন চলে যায়। যার মাধ্যমে দিয়ে সেখানে ক্লিক করে  সরাসরি আপনার লাইভে যুক্ত হতে পারে।

ফেসবুক লাইভ এর আরেকটি চমৎকার ফিচার সম্পর্কে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই

অনেক সময় লাইভ চলাকালীন সময়ে প্রচুর কমেন্ট আসে। কিন্তু আমরা একটি কমেন্ট পড়ে শেষ করার আগেই আরেকটি কমেন্ট দ্রুত চলে যায় এবং আগের কমেন্ট চলে যায়। কিন্তু আপনি চাইলেই এখন কমেন্ট মডারেশন করতে পারেন।

কিভাবে করবেন?

লাইভ চলাকালীন সময়ে আপনি কমেন্ট মডারেশন অপশন দেখতে পাবেন। সেখানে ড্রপডাউন মেনুতে ক্লিক করলে নিচের ছবির মত একটি মেনু আসবে।

  • একজন কমেন্টার কেবল মাত্র ১০ সেকেন্ড পরপর কমেন্ট করতে পারবে। ১০ সেকেন্ডের আগে সে কোনভাবেই দ্বিতীয় কমেন্ট করতে পারবে না।এটা করে তার কমেন্টটি পড়ে ফেলার যথেষ্ট সময় পাবেন।
  • ড্রপডাউন মেনু থেকে ডিসকাশন অপশনটি সিলেক্ট করে দিলে কেবলমাত্র  সর্বনিম্ন ১০০ সংখ্যা সম্বলিত কমেন্ট গুলো প্রদর্শিত হবে। অনেক সময় অডিয়েন্স হাই, হ্যালো এই টাইপের সিঙ্গেল ওয়ার্ডের কমেন্ট করেন। ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আড়ালে চলে যায়। এই অপশনটি দ্বারা আপনি সেই ছোট ছোট কমেন্টগুলো ফিল্টার করে তুলনামূলক বড় কমেন্টগুলো সামনে নিয়ে আসতে সক্ষম হবেন।
  • ড্রপডাউন মেনুতে রেস্ট্রিকটেড নামে একটি অপশন রয়েছে। এটি ব্যবহার করলে যে সকল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট গুলো দুই সপ্তাহের কম সময়ে তৈরি হয়েছে তারা আপনার লাইভে কমেন্ট করতে সক্ষম হবে না। এতে করে অনেক ফেইক একাউন্ট থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত কমেন্ট আসা বন্ধ করা অনেকটাই সম্ভব।
  • প্রটেক্টেড এই অপশনটি ব্যবহার করলে যে সকল দর্শক আপনার লাইভ টি ১৫ মিনিটের অধিক সময় দেখছে তারাই কেবল কমেন্ট করতে সক্ষম হবেন। এটা করে হুটহাট শুরু থেকেই কেউ আজগুবি বা অযাচিত কমেন্ট  করতে পারবে না।

এছাড়া একটি লাইভ শেষ হয়ে যাবার পরে রেকর্ড হয়ে থাকা লাইভটির যে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি আপনি দর্শকদের সামনে প্রদর্শন করতে চান শুধুমাত্র সেই অংশটুকু কেটে নিয়ে দেখাতে পারবেন।

একটি জন্য আপনাকে ফেসবুক এর ক্রিয়েটর স্টুডিওতে গিয়ে কন্টাক্ট লাইব্রেরী থেকে একটি ভিডিও সিলেক্ট করে এডিট করে সেভ করতে হবে। এখান থেকে আপনি চাইলে ভিডিওতে সাবটাইটেল বা ক্যাপশন যোগ করতে পারেন।

পরিশেষে

এরপরে যখনই আপনি পরবর্তী ফেসবুক লাইভ এর জন্য চিন্তা করছেন তখন প্রথমে একটি ফেসবুক লাইভের পরিকল্পনা তৈরি করুন। Schedule a live করুন এবং নির্ধারিত সময়ে লাইভ শুরু করুন। আর বেশি সংখ্যক অডিয়েন্সকে এঙ্গেজ করুন খুব সহজে।

আপনার ফেসবুক লাইভের অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন আমাদের সাথে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

বিজনেসের জন্য ফেসবুক লাইভ (Facebook Live) গাইড:  কি, কেন, কীভাবে?

বিজনেসের জন্য ফেসবুক লাইভ (Facebook Live) গাইড: কি, কেন, কীভাবে?

শেয়ার করুনফেসবুক লাইভ (Facebook Live) কি? ফেসবুক লাইভ ফেসবুকের এমন একটি ফিচার যা একজন ইউজারকে তার বন্ধু, ফলোয়ার এবং পাবলিকদের...

একটি প্রফিটেবল ই-কমার্স বিজনেস শুরুর কমপ্লিট গাইডলাইন

একটি প্রফিটেবল ই-কমার্স বিজনেস শুরুর কমপ্লিট গাইডলাইন

শেয়ার করুনআপনি যদি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন বা আপনার বিশেষ কোনো স্কিল থাকে (যেমন – ছবি আঁকা, কাস্টম ড্রেস তৈরী...

ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১ বিশ্লেষণ

ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১ বিশ্লেষণ

শেয়ার করুনবাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রনালয় জাতীয় ডিজিটাল কমার্স(সংশোধিত) নীতিমালা ২০২০ এর পদক্রম অনুসারে ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১’ (Digital Commerce Operation...

আপনার মূল্যবান মতামত দিন

মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। আবশ্যক ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত *

আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন

সবার আগে মন্তব্য করুন