ব্যবসার জন্য ফেসবুক পেজ নাকি ই-কমার্স ওয়েবসাইট – কোনটা ভালো?

ব্যবসার জন্য ফেসবুক পেজ নাকি ই-কমার্স ওয়েবসাইট – কোনটা ভালো?
শেয়ার করুন

কামাল একজন ফেসবুক সেলার – ফেসবুক এর মাধ্যমে তিনি ফ্যাশন আইটেম বিক্রি করেন।  ইদানিং ব্যবসা নিয়ে কামাল বেশ দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন। ফেসবুকে তার একটি ভালো কাস্টমার বেজ আছে, বিক্রিও বেশ ভালোই হয়।

কিন্তু আজকাল ফেসবুক হুটহাট করে পলিসি, অ্যালগরিদম বদলে ফেলে – মাঝে মাঝে পেজ রেস্ট্রিক্ট করার ওয়ার্নিংও দেয়। যদি পেজে কোন একটা ঝামেলা হয়, তাহলে তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ফেসবুকের উপর ইদানিং আগের মত আর ভরসা করতে পারছেন না কামাল। 

এই সমস্যা সমাধানে কামাল ফেসবুক সেলারদের মধ্যে জনপ্রিয় কিছু গ্রুপ এ পোস্ট দিলেন । তার মতো যারা ফেইসবুক কেন্দ্রিক ব্যবসা করেন তাদের সাথে কথাবার্তা বললেন। সবারই এক কথা – “ভাই, নিজের একটা ওয়েবসাইট করতে হবে।একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট থাকলে ব্যবসার উপর নিয়ন্ত্রণ, সুনাম আর বিক্রি বাড়ে। তবে ওয়েবসাইটে ব্যবসা করতে হলে কিছু সময় এবং টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন।”    

টাকা-পয়সা খরচ করতে বা ওয়েবসাইট নিয়ে সময় দিতে কামালের কোন সমস্যা নেই, কিন্তু নিজস্ব ই-কমার্স ওয়েবসাইট বানালে আসলেই কি তার কোন লাভ হবে? নাকি শুধুমাত্র ফেসবুকের উপর ভরসা করাই সঠিক কৌশল?

শুধু কামাল নন, সারা দুনিয়া জুড়ে লাখ-লাখ ব্যবসা এই দুশ্চিন্তা মধ্যে দিন যাপন করছে। তাই, আজ আমরা ফেসবুক পেজ আর ই-কমার্স ওয়েবসাইটের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করবো। এর সাথে ধরনা দেবার জন্য চেষ্টা করবো – আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে কোন মাধ্যম অধিক লাভজনক ও কার্যকর। 

ই-কমার্স ব্যবসা

শুরুতেই বলে নেই, ই-কমার্স ব্যবসা কি জিনিস? মূলত ইন্টারনেট বা অন্য কোন কম্পিউটার নেটওইয়ার্ক এর মাধ্যমে পণ্য ও সেবার ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি করাকেই ই-কমার্স বলে। ইলেকট্রনিক কমার্সকে, অনেকে আবার ই-বাণিজ্যও বলে। বাংলাদেশ ফেসবুকের উপর ব্যবসায়িরা অধিক নির্ভর করেলও, উন্নত বিশ্বে নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই বেশির ভাগ ই-কমার্স ব্যবসা করা হয়ে থাকে। 

ফেইসবুক পেজ এবং ফেসবুক শপ-স্টোর বা দোকান

ফেইসবুক পেজ নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। দ্রুত ন্যূনতম বা আপাত দৃষ্টিতে বিনা খরচে কাস্টমারদের কাছে  প্রোডাক্ট পৌঁছে দেয়াই এর প্রধান আকর্ষণ।। এটা বললে ভুল হবে না যে, অনেক অভিজ্ঞ ব্যবসাও প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করছে।

ফেসবুক শপ বা কমার্স (Facebook shops, commerce) তুলনামূলকভাবে নতুন। বিক্রেতাদের চাহিদার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ২০২০ সালে ফেসবুক শপস আত্মপ্রকাশ করেছিল। যারা মার্কেটপ্লেসের ইতিমধ্যেই অনেক বড় এবং ফেসবুক ব্যবহারকারী বেসের সুযোগ ব্যবহার করতে চায় – তাদের টার্গেট করে ফেসবুক এই সুবিধাটি নিয়ে আসে।

এটির উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্যিক বিক্রেতাদের বৃহত্তর ভলিউমে মার্চেন্ডাইজিং এবং অর্ডার পরিচালনার জন্য আরও উপযুক্ত চ্যানেলে নিয়ে যাওয়া।

একটি ফেসবুক শপ হল একটি স্টোরফ্রন্ট, যেখানে বিক্রয়ের জন্য আলাদা-আলাদা পণ্য পেজ, সম্পূর্ণ পণ্য ক্যটাগরি পেজ এবং একটি শপিং কার্ট থাকে। কিন্তু এটি শুধুমাত্র Facebook ইকোসিস্টেমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আবার প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং লম্বা। ক্রেতাকে এখনও পণ্য খুঁজে পেতে এবং অর্ডার করার জন্য বেশ কয়েক যায়গায় ঘুরতে হয়। উপরন্তু ক্রেতাদের খুঁজে পেতে আপনাকে ফেসবুকে পণ্যের বিজ্ঞাপন দিতে হবে। বিজ্ঞাপন ছাড়া পণ্যের বিক্রি সম্ভবনা খুবই সীমিত।

Facebook শপ একটি ভাল প্ল্যাটফর্ম এবং আজ, ৫০ মিলিয়নেরও বেশি ছোট এবং মাঝারি ব্যবসার পেজ রয়েছে যারা ব্যবসা চালানোর জন্য Facebook স্টোরের উপর নির্ভর করে।

যাইহোক, যদি আপনি একটি নাম, ব্র্যান্ড তৈরি করতে এবং ব্যবসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চান তবে একটি Facebook স্টোর আপনার ব্যবসার পুরো কৌশল হতে পারে না। মার্কেটিং, বিক্রয় এবং মুনাফা অর্জনের অনেকগুলো উপায়ের মধ্যে, এটি মাত্র একটি।

ফেসবুক শপে অনলাইন ব্যবসার সুবিধা

  1. ব্রড রিচঃ ফেসবুকের বিশাল ইউজার বেস আছে, যা আপনার ব্যবসাকে বিস্তৃত করতে সাহায্য করবে। ফেসবুকের ইউজার বেজই এর মুল আকর্ষণ। যদিও এখন টিকটকের মত নতুন নতুন সোশ্যাল ফেসবুক কে বেশ চেলেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
  2. বিনামুল্যে ব্যবহারঃ ফেসবুক পেজ বিনা মুল্যে সেটআপ ও ব্যবহার করা যায়। ক্ষুদ্র ব্যবসা স্বল্প খরচে চালু করার জন্য এটি একটি ভাল মাধ্যম।
  3. কাস্টমারের সাথের সরাসরি যোগাযোগঃ ক্রেতা-বিক্রেতা ফেসবুকে সরাসরি কথা বলতে পারে। কাস্টমারের জিজ্ঞাসার উত্তর সঠিক ও সময় মত দিতে পারলে বিক্রির সম্ভবনা অঙ্ক বৃদ্ধি পায়।
  4. ফেসবুক ইন্সাইটস ও আন্যালিটিক্সঃ ফেসবুক নিজে থেকেই ফ্রিতে অনেক ইন্সাইটস ও আন্যালিটিক্স দেয়। তাই আপনার থার্ড পার্টি আন্যালিটিক্স টুল ব্যবহার করার প্রয়োজন পরে না।
  5. ফেসবুক-ইন্সটাগ্রামঃ মেটা বিজিনেস সুইট দিয়ে একসাথে দুইটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম ম্যানেজ করা যায়। তাতে ব্যবসা ম্যনেজ করা সহজতর হয় সাথে সাথে সময়ও কম লাগে।
  6. ফেসবুক লাইভঃ ফেসবুক লাইভ করে সেল করা যায়। এখন অনলাইনে বিক্রির জন্য, বিশেষ করে মেয়েদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয়। একজন দক্ষ লাইভ প্রেজেন্টার আপনার বিক্রি বহুগুন বারিয়ে দেবার সম্ভবনা সৃষ্টি করে।
  7. ই-কমার্স ইন্টিগ্রেশনঃ ফেসবুক শপের সাথে দেশীকমার্স (DeshiCommerce)  বা  শপিফাই (Shopify) এর মত সুনামধারী ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো সহজেই ইন্টিগ্রেড করা যায়। আপনি নিজের ওয়েবসাইটে প্রোডাক্ট আপ করলে ফেসবুকে অটোমেটিক আপ হয়ে যাবে।

ফেসবুক স্টোরে অনলাইন ব্যবসার অসুবিধা

  1. ফেসবুক পেজ বন্ধ, অ্যাড একাউন্ট বাতিলঃ ফেসবুকে পেজের মাধ্যেম ব্যবসা সম্পূর্ণ ফেসবুকের মন-মর্জির উপর নির্ভরশীল। ফেসবুক পলিসি পরিবর্তনের কারনে যেকোনো দিন, বিনা কারণে পেজ বন্ধ, অ্যাড একাউন্ট বাতিল হয়ে যেতে পারে।
  2. সীমিত অর্গানিক সেলঃ ফেসবুকে নিয়মিত পেইড অ্যাড ছাড়া বিক্রি করে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা খুবই দুরহ। ডলার খরচে অতিরিক্ত ভ্যাট আর হুটহাঁট  অ্যাড রেস্ত্রিকশনের কারনে অনেক ব্যবসায়ী পেইড অ্যাড করতে পারে না।
  3. নেগেটিভ কমেন্ট-রিভিউঃ ফেসবুকে পেজ থেকে কোন পন্য না কিনেই শত্রুতা বশত, যে কেউই আজে বাজে কমেন্ট অথবা নেগেটিভ রিভিউ দিতে পারে। যা আপনার ব্যবসার জন্য খুবই ক্ষতির কারন হতে পারে।
  4. কম্পিটিশনঃ ফেসবুকে এখন সেলার সংখ্যা অনেক বেশি। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, আপনার পেজে ভিজিটর এসে কোন প্রোডাক্টে ইন্টারেস্ট দেখালে ফেসবুক তাকে আপনার ব্যবসার প্রতিযোগীর পেইড বিজ্ঞাপন দেখিয়ে সেই সেলারের পেজে নিয়ে যায়।
  5. খরচঃ ফেসবুক সেটআপ করতে কোন খরচ না লাগলেও ব্যবসার মার্কেটিং করতে আপনাকে প্রচুর খরচ করতে হবে।
  6. কাস্টমার প্রাইভেসিঃ সত্যি বলতে ফেসবুকে কাস্টমারের কোন প্রাইভেসি নেই। ফেসবুক আপনার কাস্টমারের সকল তথ্য বিক্রি করে। তাই আজকাল অনেক সচেতন কাস্টমার ফেসবুক থেকে কেনা হতে বিরত থাকে।
  7. সীমিত কাস্টমাইজেশনঃ ফেসবুকে কাস্টমাইজেশন করার সুযোগ এবং অন্যদের হতে নিজেকে আলাদা করার সুযোগ নেই বললেই চলে। সব পেজ দেখতে একই রকম তাই ব্রান্ড ইমেজ তৈরি করে ইম্প্রেস করার কোন সুযোগ নেই।
  8. সীমিত সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO): শুধুমাত্র ফেসবুক পেজ দিয়ে ব্যবসা করলে গুগলের মত সার্চ ইঞ্জিন হতে কাস্টমার আসার সম্ভবনা একদম সীমিত। (আসলে নেই)

ফেসবুকের সমন্বয়হীন পলিসি পরিবর্তন সম্পর্কে কিছু বিশেষ দ্রষ্টব্য 

ব্যবহারকারিদের তথ্য বিক্রি, প্রাইভেসি নষ্ট এবং ইউরোপ-আমেরিকান প্রচলিত আইন লঙ্ঘনের কারনে, ২০১৮ সালে ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। বেশ কয়েক বছর মামলা চলার পর, ২০২২ সালে ফেসবুক দোষ স্বীকার করে প্রায় ৭২৫ মিলিয়ন ডলার, যার বর্তমান বাংলাদেশের টাকায় প্রায় ৭.৮৮ হাজার কোটি টাকা জরিমানা দেয়। 

মামলার পর থেকে ফেসবুক তাদের টপ ম্যনেজমেন্টে বিশাল রদবদল আনে। এমনকি কোম্পানি নাম ফেসবুক  পরিবর্তন করে মেটায় (Meta) রুপান্তর হয়। এরপর থেকে ফেসবুক পেজগুলোর উপর নজরদারি অনেকগুন বেড়ে যায়। এই নজরদারি প্রায় পুরোটাই করে কম্পিউটার। কিন্তু কম্পিউটার বাংলাদেশের ভাষা বা সংস্কৃতি বোঝে না। তাই প্রায়ই ভুল করে ভালো-ভালো পেজ এবং অ্যাড আকাউন্ট কে বিনা দোষে রেস্ট্রিক্ট করে ফেলে। 

এই ভুলের বিরুদ্ধে আপিল করার পর মানুষ নয়, আবার সেই কম্পিউটারই রিভিউ করে এবং ফলস্বরূপ আজীবন রেস্ট্রিক্ট (Permanent ban) করা হয়। এরপর একজন ব্যবসায়ীর আর কিছুই করার থাকে না। অনেক চতুর ব্যক্তি এই সময় ব্যবসায়ীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভুল বোঝায় এবং বিভিন্নভাবে আকাউন্ট রেস্ট্রিক্ট ঠিক করার চুক্তি নেয়। তারা বিশাল অঙ্কের টাকাও প্রতারণার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আদায় করে। 

আমরা এত দিনের অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি পার্মানেন্ট রেস্ট্রিক্ট করা আকাউন্ট উদ্ধার করার এখনও পর্যন্ত কোন সাধারন সমাধান নেই। আমেরিকান আদালতে মামলা করে হয়তো আপনি উদ্ধার করতে পারেন।

সত্যি বলতে, অতি বৃহৎ বিজ্ঞপন দাতা, আমেরিকান-ইউরোপিয়ান নাগরিক এবং ক্ষমতাশালী ছাড়া ফেসবুক সরাসরি কাস্টমার সাপোর্ট দেয়ার ঘটনা এখন খুবই বিরল। আসলে আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকলে ফেসবুক কাউকেই এখন আর তাদের প্রতিষ্ঠানের সত্যিকারের মানব কর্মচারী দিয়ে সাপোর্ট দেয় না। 

এখন এমন একটা অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, ফেসবুকের কম্পিউটারের বিন্দুমাত্র সন্দেহ হলে, বিশেষ করে বাংলাদেশি আকাউন্টের ক্ষেত্রে কোন বাছ-বিচার ছাড়াই যে কাউকেই ব্যান অথবা রেস্ট্রিক্ট করে ফেলে। আমেরিকায় এটাকে এখন ক্যান্সেল কালচার (Cancel culture) বলা হয়।

নিজস্ব ওয়েবসাইটে ই-কমার্স ব্যবসা

অনেক ছোট-বড়, মাঝারি ব্যবসা শুধুমাত্র ফেসবুক পেজের উপর নির্ভর না করে নিজস্ব ই-কমার্স ওয়েবসাইট দিয়ে অনলাইন ব্যবসা করে। অর্থাৎ তারা ব্রান্ড ইমেজ, অধিক বিক্রি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ফেসবুক পেজের সাথে সাথে ই-কমার্স ওয়েবসাইট দিয়েও ব্যবসা করেন।

সেই ক্ষেত্রে ফেসবুক পেজ একমাত্র ব্যবসার উপায় হয় না, বরং অনেকগুল মার্কেটিং মিডিয়ার একটিতে রুপান্তরিত হয়। সকল মিডিয়া হতে ভিজিটর ওয়েবসাইটে যায় এবং সেখান থেকে কেনা কাটা সম্পন্ন করে।

ওয়েবসাইট দিয়ে ই-কমার্স ব্যবসার মডেল
নিজস্ব ওয়েবসাইট দিয়ে ই-কমার্স ব্যবসার মডেল

নিজস্ব ই-কমার্স ওয়েবসাইট শপের সুবিধা

  1. সম্পূর্ণ মালিকানাঃ ই-কমার্স ওয়েবসাইটের সম্পূর্ণ মালিকানা উদ্যোগতক্তার। শুধুমাত্র আপনি ছাড়া ওয়েবসাইট কেউ বন্ধ পারবে না।
  2. ব্যবসার নিরাপত্তা এবং নিয়ন্ত্রণ: ব্যবসার নকশা, কার্যকারিতা এবং গ্রাহকের অভিজ্ঞতার উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেয় ই-কমার্স ওয়েবসাইট। ক্রয়-বিক্রয় ছাড়াও ব্যবসার অনন্য কাজে ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
  3. স্থায়ী রেপুটেশন এবং অথোরিটিঃ ই-কমার্স ওয়েবসাইটের রেপুটেশন এবং অথোরিটি একবার তৈরি হয়ে গেলে পেইড মার্কেটিং ছড়াই ভালো বিক্রি হয়। বাংলাদেশের স্টারটেক এবং রায়ান্স কম্পিউটার এর উদাহরণ। রেপুটেড ওয়েবসাইট থাকার কারনে কোন বিজ্ঞাপন ছাড়াই অনলাইন এবং অফলাইনে তাদের প্রচুর পণ্য বিক্রি হয়।
  4. একাধিক কাস্টমার সোর্সঃ ই-কমার্স ওয়েবসাইট ফেসবুক পেজের ইকোসিস্টেমের মত আবদ্ধ নয়। তাই একাধিক সোর্স থেকে কাস্টমার আসে। সোশ্যাল মিডিয়া, সার্চ ইঞ্জিন, ফোরাম, ইউটিইব এবং অ্যাডসহ সব ধরনের মাধ্যম থেকে ভিজিটর ই-কমার্স ওয়েবসাইটে নিয়ে আসা যায়।
  5. কাস্টমাইজেশনঃ ই-কমার্স ওয়েবসাইট একদম নিজের ইচ্ছে মত সাজিয়ে নেয়া যায়। আপনার রুচি, পছন্দ ই-কমার্স ওয়েবসাইটকে কম্পিটিশন থেকে আলাদা করে গ্রাহকদের কাছে তুলে ধরতে পারে।
  6. সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন(SEO) ইকমার্স ওয়েবসাইটগুলি সার্চ ইঞ্জিনের জন্য অপ্টিমাইজ করা যেতে পারে, অর্গানিক ট্র্যাফিক এবং দৃশ্যতা বৃদ্ধি করে।
  7. ব্র্যান্ড ইমেজ এবং সুনাম: একটি ডেডিকেটেড ওয়েবসাইট ব্যবসাগুলিকে তাদের ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি এবং নিয়ন্ত্রণ করতে দেয় কোনো তৃতীয় পক্ষের প্ল্যাটফর্মের সীমাবদ্ধতা ছাড়াই।
  8. গ্রাহক ডেটার মালিকানা: সংগ্রহ করা সমস্ত ডেটা মার্কেটিং কৌশলগুলির জন্য মূল্যবান ইন্সাইট প্রদান করে। এই ডাটা কোন ভাবেই কম্পিটিশনের কাছে যায় না।
  9. ইন্টিগ্রেশন: ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলি ইমেল মার্কেটিং সফ্টওয়্যার, কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট (CRM) সিস্টেম এবং অ্যানালিটিক্স টুলের মতো বিভিন্ন টুল এবং পরিষেবার সাথে ব্যবহার করা যায়।
  10. পেশাদারিত্ব: একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকা একটি ব্যবসায় বিশ্বাসযোগ্যতা এবং পেশাদারিত্ব প্রকাশ করে। কাস্টমারের কাছে গ্রহণযোগ্যতা এবং সুনাম বৃদ্ধি পায়।
  11. কোন প্রত্যক্ষ প্রতিযোগিতা নেই: আপনার ওয়েবসাইটে শুধুমাত্র আপনার পণ্য দেয়া থাকবে এবং কোন প্রতিযোগী পণ্য পাশাপাশি প্রদর্শিত হবে না। তাই কাস্টমার আপনার ওয়েবসাইট থেকে প্রতিযোগীর দোকানে চলে যাবার কোন সম্ভবনা নেই বললেই চলে।

ই-কমার্স ওয়েবসাইট স্টোরে অসুবিধা

  1. প্রাথমিক খরচ: একটি ডেডিকেটেড ই-কমার্স ওয়েবসাইট সেট আপ করা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা ফেসবুক শপগুলির তুলনায় প্রাথমিক দিকে সাধারনত খরচ বেশি হয়।
  2. প্রযুক্তিগত জ্ঞান: ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলির সেটআপ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ফেসবুক শপের চেয়ে বেশি প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রয়োজন। তবে কিছু কিছু SaaS ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম যেমন দেশী কমার্সে টেকনিক্যাল অথবা কোডিং নলেজ ছাড়াই ই-কমার্স ব্যবসা করা যায়।
  3. সময় বিনিয়োগ: একটি ই-কমার্স সাইট চালানো সময়সাপেক্ষ হতে পারে, নিয়মিত আপডেট এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।
  4. কাস্টমার ধরা: একটি নতুন ই-কমার্স সাইটে ট্র্যাফিক ড্রাইভিং প্রায়ই শুরুতে বেশি মার্কেটিং এবং SEO প্রচেষ্টার প্রয়োজন পরে।
  5. ডোমেইন এবং ওয়েব হোস্টিং ম্যানেজ করাঃ ডোমেইন এবং ওয়েব হোস্টিং এর জন্য আপানকে ফি দিতে হয়। তবে দেশীকমার্স (DeshiCommerce) বা শপিফাই (Shopify) এর মত SaaS ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোতে আপনাকে ওয়েব হোস্টিং এর জন্য আলাদা ফি দিতে হয় না এবং হোস্টিং ম্যানেজ করার ঝামেলাও নেই।

কাদের জন্য কখন ফেসবুক অথবা নিজস্ব ই-কমার্স ওয়েবসাইট বেশি ভালো?

উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায় সব প্ল্যাটফর্মেরই ভালো-মন্দ দিক আছে। তাই আপনার অবস্থান আর পরিস্থিতিই নির্ধারন করবে আসলে কোনটি আপনার জন্য বেশি ভালো। আমরা কিছু সাধারন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা এবং সাজেশন দিব।

যখন ফেসবুক পেজে শপ বা স্টোরে অনলাইন ব্যবসা করা ভালো

  1. মার্কেট টেস্ট এবং ব্যবসা শুরু করার জন্যঃ বলতে গেলে বিনা খরচে প্রাথমিক পর্যায়ে ফেসবুকে সেল করা যায়। তাই মার্কেট টেস্টিং এবং ব্যবসা শুরু করার জন্য এটি একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম।
  2. ক্ষুদ্র লোকাল ব্যবসাঃ আপনার ব্যবসা যদি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়। যেমন স্থানীয় রেস্টুরেন্ট, বিউটি পার্লার, ছোট ফ্যাশন বুটিক হাউস তাহলে ফেসবুক পেজই আপনার ব্যবসার জন্য উপযুক্ত মাধ্যম।
  3. সীমিত বাজেটঃ আপনা ব্যবসার বাজেট যদি সীমিত হয় তাহলে ফেসবুকে থাকাই উত্তম।
  4. সাইড অথবা সখের ব্যবসাঃ ব্যবসা যদি আপনার মুল আয়ের সোর্স না হয় তাহলে ফেসবুক পেজই ভালো। কারন আপনি যেকোনো সময় ব্যবসা বন্ধ করে দিতে পারেন।
  5. সিজনাল ব্যবসাঃ আপনার ব্যবসা যদি সিজনাল হয়, যেমন গ্রীষ্মকালে আম বিক্রি। তাহলে সারা বছর ই-কমার্স ওয়েবসাইট পরিচালানা আপনার জন্য সঠিক কৌশল নয়।

যখন নিজস্ব ওয়েবসাইটে ই-কমার্স শপ বা স্টোরে অনলাইন ব্যবসা করা ভালো

  1. পেশাদার ব্যবসায়ী আপনি যদি ব্যবসার ব্যপারে সিরিয়াস হন এবং ব্যবসা আপনার আয় রোজগারের প্রধান সোর্স হয়। তখন ই-কমার্স নিজস্ব ওয়েবসাইটে ই-কমার্স শপ বা স্টোর খুলে অনলাইন ব্যবসা করা আপনার জন্য ভালো। 
  2.  ব্র্যান্ড ইমেজ এবং সুনাম তৈরিঃ যদি নিজের ব্যবসার ব্র্যান্ড তৈরি করা আপনার লক্ষ হয়ে থাকে, তাহলে আপনাকে ই-কমার্স ওয়েবসাইটে ব্যবসা করতেই হবে। কোন ফেসবুক পেজ সেলারকে ক্রেতারা ব্র্যান্ড মনে করে না। 
  3. ব্যবসাকে বড় করাঃ ব্যবসাকে বড় করার সুযোগ রাখতে হলে ই-কমার্স ওয়েবসাইট ভালো। কারন এতে অপারেশন অটোমেশন করে স্কেল আপ করার সুযোগ থাকে। যেটা আপনি ফেসবুকে কখনই পাড়বেন না।
  4. দীর্ঘস্থায়ী ব্যবসাঃ ব্যবসাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে ই-কমার্স ওয়েবসাইটে ব্যবসা করা ভালো। কারন এতে ব্যবসার উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রন এবং নিরাপত্তা স্থাপিত হয়।
  5. কাস্টমাইজেশনঃ আপনার যদি কাস্টমাইজ করে, আকর্ষণীয় স্টোর ডিজাইন দিয়ে কাস্টমারদের ইম্প্রেস করার ইচ্ছে থাকে, তাহলে ওয়েবসাইটই একমাত্র উপায়।
  6. বিশ্বাস যোগ্যতাঃ একটি ফেসবুক সেলার হতে ই-কমার্স ব্যবসার বিশ্বাস যোগ্যতা বেশি। তাই কাস্টমারের আস্থা অর্জন এবং ভালো ইম্প্রেশন তৈরি করতে ওয়েবসাইট আবশ্যক।
  7. অর্গানিক সেলঃ অর্গানিক বিক্রির উদ্দেশ্য থাকলে ই-কমার্স ওয়েবসাইটে ব্যবসা করা উত্তম। কারন এতে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) করে ভালো অর্গানিক সেল করার সুযোগ থাকে।
  8. একাধিক পেইড অ্যাড মিডিয়াঃ শুধু মাত্র ফেসবুক পেইড অ্যাডের অপর ভরসা না করতে চাইলে, ই-কমার্স ওয়েবসাইটে ব্যবসা করতে হবে। তখন আপনি গুগল, ইউটিউব, টিকটক, ফেসবুকসহ সব যায়গায় অ্যাড দিয়ে বিক্রি বাড়াতে পাড়বেন।

পরিশেষ

Facebook স্টোর বা অন্য কোন সোশ্যাল মিডিয়া স্টোর মূলত আপনাকে তাদের প্ল্যাটফর্মে আপনার পণ্য এবং পরিষেবাগুলিকে প্রদর্শন করতে দেয়। এটি বিক্রয় অর্জনের একটি কার্যকর উপায়। কিন্তু, এর সম্পূর্ণ উপযোগিতা বিচারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। 

ফেসবুক পরিচিত প্ল্যাটফর্ম এবং বিনামূল্যে পাওয়া যায় বলে, আমরা একে অতিরিক্ত মূল্যায়ন করার প্রবণতা রাখি। তারা যদি একদিন বন্ধ হয়ে যায়? আপনার অভিযোগ করার অধিকার থাকবে না। মনে রাখবেন, আপনি সেই প্ল্যাটফর্মের একজন ব্যবহারকারী, শেয়ারহোল্ডার বা মালিক নন। তারা আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে, বা ক্ষতির প্রতি দায়বদ্ধ নয়। অবশেষে, আপনি প্রচুর সংখ্যক গ্রাহক হারাবেন এবং রাতারাতি ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।

অনেক সফল ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মতো আপনি আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক পাঠাতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারেন। তারপরে আপনি গ্রাহকদের তালিকা রাখতে পারেন এবং প্রয়োজনে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

অন্য কারো প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা গড়ে তোলার চেয়ে নিজের কিছুতে বিনিয়োগ করা বেশী যুক্তি সংগত। এই কারণেই আমরা প্রত্যেক ব্যবসার মালিককে এমন একটি ওয়েবসাইটে বিনিয়োগ করার জন্য সুপারিশ করি, যা একটি স্থায়ী শক্তিশালী ডিজিটাল উপস্থিতি নিশ্চিত করে, যা অনলাইনে আপনার ব্যবসার ব্র্যান্ডিং ও বিক্রি বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।

দেশী-কমার্সের ই-কমার্স ওয়েবসাইট (e-commerce website) তৈরি, অপারেশন ম্যানেজ এবং মার্কেটিংসহ সকল ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে। আপনি যে কোন প্রয়োজন বা জিজ্ঞাসায় আমাদের যোগাযোগ করতে পারেন +8801766 681318 নম্বরে অথবা [email protected] ই-মেইল ঠিকানায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

একটি প্রফিটেবল ই-কমার্স বিজনেস শুরুর কমপ্লিট গাইডলাইন

একটি প্রফিটেবল ই-কমার্স বিজনেস শুরুর কমপ্লিট গাইডলাইন

শেয়ার করুনআপনি যদি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন বা আপনার বিশেষ কোনো স্কিল থাকে (যেমন – ছবি আঁকা, কাস্টম ড্রেস তৈরী...

ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১ বিশ্লেষণ

ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১ বিশ্লেষণ

শেয়ার করুনবাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রনালয় জাতীয় ডিজিটাল কমার্স(সংশোধিত) নীতিমালা ২০২০ এর পদক্রম অনুসারে ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১’ (Digital Commerce Operation...

ই-কমার্স  কি?

ই-কমার্স কি?

শেয়ার করুনই-কমার্স কি? খুব সংক্ষেপে যদি ই-কমার্স কি প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, একটি ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে , মূলত ইন্টারনেট...

আপনার মূল্যবান মতামত দিন

মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। আবশ্যক ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত *

আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন

সবার আগে মন্তব্য করুন