ই-কমার্স ব্যবসার জন্য রমযান এবং ঈদে মার্কেটিং এর ৯ টি সেরা কৌশল

ই-কমার্স ব্যবসার জন্য রমযান এবং ঈদে মার্কেটিং এর ৯ টি সেরা কৌশল

রমযান বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র মাস। রমযানের পরই আসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ঈদ উল ফিতর আর তার দুই মাস পর ঈদ উল আযহা । এই তিন মাসে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বছরের সিংহভাগ আয় উপার্জন করে থাকেন।

তাই পণ্য এবং পরিষেবার প্রচারের জন্য আপনাকে পবিত্র উত্সবের মনোভাবের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মার্কেটিং কৌশল গ্রহন করতে হবে। এখানে, আমরা বিপণন কৌশলগুলি নিয়ে আলোচনা করব, যা ঈদ এবং রমজানের সময় গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে করতে পারে।

ঈদ ও রমজানের তাৎপর্য

মার্কেটিং কৌশলগুলিতে যাওয়ার আগে, ঈদ এবং রমজানের তাৎপর্য বোঝা অপরিহার্য। রমযান মুসলমানদের জন্য সংযম এবং আধ্যাত্মিক প্রতিফলনের মাস। এই সময়ে যখন মুসলমানরা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকে এবং সাধ্য অনুযায়ী দান খয়রাৎ এর চেষ্টা করে।

অন্যদিকে, ঈদ হল সেই উদযাপন যা পবিত্র রমযান মাসের শেষকে চিহ্নিত করে। এটি মুসলমানদের একত্রিত হওয়ার, ভাল খাবার উপভোগ করার এবং তাদের প্রিয়জনের সাথে উপহার বিনিময় করার সময়।

রমযান এবং ঈদের জন্য মার্কেটিং কৌশল

রমযান এবং ঈদ এমন একটি সময় যখন প্রিয়জনের জন্য উপহার কেনার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং সবাই খাবার ও জামা-কাপড়ের জন্যও বেশি খরচ করে। এখানে কিছু বিপণন কৌশল রয়েছে যা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে বিক্রি বাড়াতে পারে।

১। অফার ডিসকাউন্ট এবং বিশেষ ডিল

রমযান মাসে বাংলাদেশের ক্রেতাদের চাহিদা বৃদ্ধি এবং প্রচুর অর্থ ব্যয় করার প্রবণতা রয়েছে, তাই ডিসকাউন্ট এবং বিশেষ ডিলগুলি গ্রাহকদের আকর্ষণ করার একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, রেস্তোরাঁগুলি বিশেষ সেহেরী, ইফতার ডিল অফার করতে পারে। ই-কমার্সের মাধ্যমে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে দিতে পারেন হোম ডেলিভারি। এই সময় খেজুর ও অন্যান্য ড্রাই ফ্রুটস খুব জনপ্রিয়। আপনার অর্ডারের সাথে অতিরিক্ত টোকেন উপহার হিসেবে ড্রাই ফ্রুটস পেলে আপনার কাস্টমার অত্যন্ত খুশী হবেন।

২। উৎসব-থিমযুক্ত ক্যাম্পেইন তৈরি করুন৷

রমজানের সময়, আপনি এমন ক্যাম্পেইন তৈরি করতে পারে যা রমজানের চেতনাকে ধারন করে৷ উদাহরণস্বরূপ, একটি রেস্তোরাঁ একটি ইফতার প্রচারাভিযান তৈরি করতে পারে যাতে লোকেদের রোজা ভঙ্গ করা, ভাল খাবার উপভোগ করা এবং তাদের প্রিয়জনের সাথে সময় কাটানোর ছবি দেখানো হয়। আপনার ব্যবসা যদি জামা কাপড়ের হয়ে থাকে তাহলে, ইদের নতুন জামায় হাসি-খুশি পরিবারের ভিডিও অথবা ছবি দেখাতে পারেন।

৩। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন

সোশ্যাল মিডিয়া রমজানে ব্যবসার জন্য তাদের পণ্য এবং পরিষেবার প্রচারের জন্য একটি কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে। ব্যবসাগুলি রমযান-সম্পর্কিত সামগ্রী যেমন রেসিপি, উপহারের ধারণা এবং ইদে সাজসজ্জার টিপস শেয়ার করতে Instagram, Facebook এবং Twitter এর মতো সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহার করতে পারে।

৪। সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুএন্সার সাথে অংশীদার

ইনফ্লুএন্সার সাথে অংশীদারিত্ব ব্যবসার জন্য রমযান মাসে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। তাদের সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল এবং ব্লগের মাধ্যমে একটি ব্র্যান্ড বা পণ্যের প্রচার করতে সাহায্য করতে পারে এবং তারা এমন সামগ্রীও তৈরি করতে পারে যা ঈদের সাথে উপযোগী।

তবে মনে রাখা দরকার সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুএন্সাররা অনেকেই পেশাদার নয়। তাই যেকোনো ধরনের পার্টনারশিপ এ যাবার আগে আপনি তার কাছ থেকে কি কি চাচ্ছেন এবং তার বিনিময়ে কি দিবেন (টার্মস এবং কন্ডিশন) সেটা পরিষ্কার করে রাখবেন। প্রয়োজনে একটি দলিলে লিখে উভয় পক্ষ সই করে নিবেন।

৫। রমযান ও ঈদের লাইভ মার্কেটিং করুন

ক্রেতাদের মাঝে এখন কমার্শিয়াল বিজ্ঞপনের চেয়ে সত্যিকারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের দেয়া তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। সেই জন্যই লাইভ শপিং এখন অনেক জনপ্রিয়। লাইভ করলে আপনি সরাসরি হাজারো মানুষের কাছে আপনার পণ্য সরাসরি দেখানোর সুযোগ পাবেন।Ramadan Quote elegant

লাইভের ভিডিও রেকর্ড করে আপলোড করতে ভুলবেন না, তাহলে যারা লাইভ দেখতে মিস করেছে তাড়াও পরে ভিডিও দেখে কিনতে উদ্ভুধ্য হবে।

৬। ক্রেতাদের কনটেন্ট তৈরি করা

আপনাদের পণ্য ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়াতে হ্যাশট্যাগ দিয়ে পোস্ট দিতে উৎসাহ দিন। সরাসরি ক্রেতাদের পোস্ট আপনার বিসজনেজ পেজ এ শেয়ার করুন। তবে অনুমতি ছাড়া পোস্ট শেয়ার করলে হিতে বিপরীত হয়ে যাবার সম্ভবনা থাকে। তাই শেয়ার করার আগে অবশ্যই অন্তত মৌখিক অনুমতি নিয়ে নেবেন।

 

৭। ঈদ উপহার কার্ড এবং ভাউচার অফার

উপহার কার্ড এবং ভাউচার অফার করা ঈদের সময় গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। গিফট কার্ড এবং ভাউচার গ্রাহকদের জন্য তাদের প্রিয়জনদের জন্য উপহার ক্রয় করা সহজ করে তোলে এবং তারা উৎসবের মরসুমে তাদের বিক্রয় বৃদ্ধিতেও সাহায্য করতে পারে।

৮। প্রতিযোগিতা এবং উপহার চালান

ঈদের সময় গ্রাহকদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা এবং উপহার দেওয়া একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ব্যবসা একটি সামাজিক মিডিয়া প্রতিযোগিতা চালাতে পারে যা গ্রাহকদের তাদের প্রিয় ঈদের স্মৃতি শেয়ার করতে বলে এবং বিজয়ী একটি পুরস্কার পেতে পারে।

৯। এস এম এস(SMS) মার্কেটিং ব্যবহার করুন

এস এম এস(SMS) মার্কেটিং হতে পারে ঈদের সময় তাদের পণ্য ও সেবা প্রচারের জন্য ব্যবসার জন্য একটি কার্যকরী হাতিয়ার। আপনাদের ক্রেতাদের রমযান এবং ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা দিতে ভুলবেন না। সাথে পাঠাতে পারেন বিশেষ অফার, উপহারের ধারণা এবং উত্সব-থিমযুক্ত সামগ্রী  পণ্যের খবরা খবর।

পরিশেষ

ঈদ এবং রমযান হল বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি অনুষ্ঠান, এবং ব্যবসাগুলো মুসলিম ভোক্তাদের আকৃষ্ট করার জন্য উৎসবের চেতনাকে পুঁজি করতে পারে। ডিসকাউন্ট এবং বিশেষ ডিল অফার করে, উত্সব-থিমযুক্ত প্রচারাভিযান তৈরি করে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে, প্রভাবশালীদের সাথে অংশীদারিত্ব করে, উপহার কার্ড এবং ভাউচার অফার করে, উত্সব-থিমযুক্ত পণ্য তৈরি করে, প্রতিযোগিতা এবং উপহার প্রদান করে।

বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে? 

বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে? 

তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের ধরণে এসেছে আমূল পরিবর্তন। গতানুগতিক ব্যবসাগুলোর পাশাপাশি এখন সফলভাবে জায়গা করে নিচ্ছে একের পর এক ই-কমার্স বিজনেস। বিশেষ করে করোনা মহামারীর সময় থেকে ই-কমার্স হয়ে উঠেছে গোটা বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক বিজনেস মডেলগুলোর একটি। সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশেও বাড়ছে সাকসেসফুল ই-কমার্স বিজনেসের সংখ্যা। এই ই-কমার্স সেক্টর সত্যিকার অর্থে কতটুকু সম্ভাবনাময় সে বিষয়ে অনেকেই জানতে চান। তাদের জন্য আজকের লেখায় থাকছে বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। 

ই-কমার্স ব্যবসা কি? 

চলুন লেখার শুরুতে ই-কমার্স ব্যবসা নিয়ে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক। ই-কমার্স বলতে অনলাইনে অর্থাৎ ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজের ব্যবসার পণ্য সেল করাকে বোঝানো হয়। ই-কমার্স প্রক্রিয়া এবং প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন এখানে

সাধারণত ই-কমার্স ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এই ব্যবসাটি পরিচালনা করা হয়। ই-কমার্সের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ১৯৮২ সালে দ্যা বোস্টন কম্পিউটার এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ই-কমার্স বিজনেসের পথচলা শুরু হয়। সেই থেকে জনপ্রিয়তা পেতে পেতে ই-কমার্স এখন পরিণত হয়েছে একটি মাল্টি বিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রিতে। 

বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স ব্যবসার এত জনপ্রিয়তার কারণ হলো এটি এমন একটি বিজনেস মডেল যেটি পরিচালনা করার জন্য আপনাকে বাড়তি দোকান ভাড়া দিতে হবেনা। পাশাপাশি যেহেতু এটি অনলাইনে করা হয় এবং ইন্টারনেট ইউজারদের সংখ্যা অনেক, তাই এখানে টার্গেটেড কাস্টমারদের রিচ করাও তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ। এসব কারণে অনেকেই এখন ই-কমার্স বিজনেস শুরু করছেন এবং সাকসেসফুলও হচ্ছেন। 

বাংলাদেশে ই-কমার্সের সূচনা কেমন ছিলো?

বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানার আগে চলুন ই-কমার্সের শুরুর দিক সম্পর্কে একটু জেনে আসা যাক। বেশিরভাগের মতে, মুনশিজি ছিলো বাংলাদেশের একদম প্রথম ই-কমার্স সাইট। ১৯৯৯ সালে এটির যাত্রা শুরু হয়। এই ব্যবসার মূল পণ্য ছিলো সিল্ক, হ্যান্ডিক্রাফটস, চা, পাট ও চামড়ার তৈরি পণ্য ইত্যাদি। এই ই-কমার্স সাইটটি তৈরি করা হয়েছিলো পণ্য দেশের বাইরে রপ্তানি করার উদ্দেশ্যে। তারপর ২০০৫ ও ২০০৬ সালে চালু করা হয় ক্লিক বিডি ডট কম ও সেলবাজার নামে আরো দু’টো ই-কমার্স সাইট। 

এক্ষেত্রে জেনে রাখা ভালো, বাংলাদেশে জোরেশোরে ই-কমার্সের যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সাল থেকে। ২০১১ তে এখনি ডট কম নামের ই-কমার্স সাইটটি লঞ্চ করা হয়। পরে যদিও এটির নাম বদলে বাগডুম ডট কম রাখা হয়। ২০১১ তেই আজকের ডিল নামে আরো একটি ই-কমার্স বিজনেস লঞ্চ করা হয়। তারপর ২০১২ তে যখন রকমারি, বিক্রয় ডট কম এবং ২০১৩ সালে চাল ডাল ডট কম ও দারাজের পথচলা শুরু হয়, তখন থেকেই বাড়তে শুরু করে ই-কমার্স বিজনেসের সংখ্যা। বর্তমান সময়ের আরো কিছু সফল কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হলো অথবা, সাজগোজ, প্রিয়শপ, সিন্দাবাদ ইত্যাদি। 

বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার বর্তমান অবস্থা  

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর ২০২১ সালে প্রকাশিত হওয়া একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশের ই-কমার্স বিজনেসগুলো নিজেদের প্রচারণা ব্যাপকভাবে বাড়াতে শুরু করে এবং ২০২০ থেকে তারা পুরোদস্তুর ব্যবসা শুরু করে। 

E-commerce business prospect in Bangladesh

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি ই-কমার্স বিজনেস রয়েছে, যেগুলোর ১ শতাংশ বড় পরিসরে, ৪ শতাংশ মাঝারি পরিসরে এবং বাকি ৯৫ শতাংশ ছোট পরিসরে পরিচালিত হচ্ছে। ই-কমার্সের পাশাপাশি বাংলাদেশে প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি এফ কমার্স পেইজ সক্রিয়ভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে। 

আমি জানি, আপনারা হয়তো এখন জানতে চাইবেন যে দেশে ই-কমার্স ব্যবসা সম্পর্কিত কোনো লিখিত নীতিমালা রয়েছে কিনা। এ প্রশ্নের উত্তর হলো হ্যাঁ, রয়েছে! দেশে প্রতিটি ই-কমার্স ব্যবসা সঠিকভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে এবং একইসাথে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ করতে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল কমার্স পলিসি প্রণয়ন করেছে, যেখানে ই-কমার্স ব্যবসার বিভিন্ন সমস্যা যেমন: হ্যাকিং, কপিরাইট কিংবা প্রোডাক্টের মূল্যজনিত সমস্যাগুলো সমাধানের দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়েছে। একইসাথে ২০২১ সালের জুনে বাংলাদেশ ব্যাংক পেমেন্ট গেটাওয়ে এসক্রো সার্ভিস চালু করেছে, যা ই-কমার্সকে করে তুলেছে আরো নিরাপদ।

বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা 

ই-কমার্সের দিক থেকে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭ তম। একেবারে শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করা এই ব্যবসা যে দারুণ সম্ভাবনাময় তা অস্বীকার করার কোনো অবকাশই নেই। 

ইউএনবি এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশের ই-কমার্স মার্কেট সাইজ ছিলো প্রায় ৫৬৮.৭০ বিলিয়ন টাকার, যা ২০২২ এ প্রায় ৬৬০ বিলিয়ন টাকায় পৌঁছোবে বলে ধারণা করা হয়েছিলো। শুধু তাই নয়, আশা করা হচ্ছে ২০২৬ সালের মধ্যে দেশের ই-কমার্স মার্কেট সাইজ প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন টাকায় পৌঁছোবে।  এটুকু জানার পর এখন আপনারা ধারণা করতে পারছেন আমাদের দেশের ই-কমার্স সেক্টরের ভবিষ্যৎ কতটুকু সম্ভাবনাময় হতে পারে।

E-commerce Bangladesh Market size forecast
বাংলাদেশের ই-কমার্স মার্কেট গতিপ্রকৃতি

যদি এবার আমরা একটু পেছনে ফিরে তাকাই, তাহলে দেখতে পাবো ই-কমার্স সেক্টরে ইনভেস্টমেন্টের পরিমাণও আগের চাইতে অনেক বেড়েছে। যেমন: দ্যা নিউজ এইজ পত্রিকা থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ই-কমার্সের জন্য ইনভেস্টমেন্ট ছিলো প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে ১০ মিলিয়ন ডলার ছিলো ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট। 

এরপর যত সময় গেছে, এই সেক্টরে ইনভেস্টমেন্ট বেড়েছে। যেমন: প্রথম আলোর ভাষ্যমতে, ২০১৮ সালে ই-কমার্স জায়েন্ট আলিবাবা দারাজকে অধিগ্রহণ করার পর বাংলাদেশে ১২৫ মিলিয়ন ডলার ফরেন ইনভেস্টমেন্ট এসেছিলো (২০২০ এর হিসাব অনুযায়ী)। তাই বলা যেতে পারে, ইনভেস্টমেন্ট বাড়ার কারণে ধীরে ধীরে ই-কমার্স হয়ে উঠছে শক্তিশালী ও লাভজনক একটি ক্ষেত্র। 

বাংলাদেশের ইন্টারনেট এবং ই-কমার্স গ্রাহক সংখ্যা

বাংলাদেশের ই-কমার্স ব্যবসার ভবিষ্যৎ আরো উজ্জ্বল হওয়ার আরেকটি কারণ হলো আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন এমন মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (BTRC) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিলো ৬৬.৬ মিলিয়ন, যা ২০১৯ এ দাঁড়ায় ৯৬.১৯ মিলিয়নে। 

বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ ও টেলিনর ধারণা করছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশের ৩২ শতাংশ পরিবারে অন্তত একটি হলেও ইন্টারনেট সংযোগ থাকবে। আমরা সবাই জানি ই-কমার্স ব্যবসার মূল ভিত্তিই ইন্টারনেট, তাই দেশে ইন্টারনেট ইউজারদের সংখ্যা যত বাড়ছে, ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ তত বেশি উজ্জ্বল হচ্ছে। 

 

ই-কমার্স গ্রাহক বৃদ্ধির কারন

তারপর আমরা যদি দেশের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো, এখন দৈনন্দিন জীবনে মানুষের ব্যস্ততা অনেক বেড়েছে। দেখা যায় বেশিরভাগ মানুষই প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিজেদের অফিস কিংবা ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন। এরপর একটু সময় বের করে যে মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা করবেন, সে সময় বা এনার্জি তাদের কাছে থাকেনা। তার ওপর বাইরে বেরোলে ট্রাফিক জ্যাম তো আছেই। এসব কারণে মানুষ এখন বাড়িতে বসে ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটা করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। যেহেতু এই ওয়েবসাইটগুলোতে পেমেন্ট গেটাওয়ে সংযুক্ত করা থাকে, তাই তারা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কিংবা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পেমেন্টও করতে পারছেন। 

অর্থাৎ ই-কমার্স মানুষের কেনাকাটার কাজটিকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। যার ফলস্বরূপ প্রতিনিয়তই ই-কমার্স সাইট থেকে কেনাকাটা করেন এমন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং নিশ্চিতভাবেই এ সংখ্যা সামনে আরো বাড়বে। 

পরিশেষে

বর্তমানে বাংলাদেশে যে কয়েকটি সম্ভাবনাময় ব্যবসার খাত রয়েছে ই-কমার্স সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশের জিডিপির হার বাড়িয়ে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন আনতে ই-কমার্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যদি ই-কমার্স সেক্টরে থাকা বর্তমান সমস্যাগুলোকে মোকাবেলা করা সম্ভব হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে নিশ্চিতভাবে এটি হয়ে উঠবে বাংলাদেশের অন্যতম সফল ও শক্তিশালী খাত।

ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করুন
দেশী কমার্স দিয়ে সহজে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করুন।

ই-কমার্স কি?

ই-কমার্স  কি?

ই-কমার্স কি?

খুব সংক্ষেপে যদি ই-কমার্স কি প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, একটি ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে , মূলত ইন্টারনেট বা অন্য কোন কম্পিউটার নেটওইয়ার্ক এর মাধ্যমে পণ্য ও সেবার ক্রয়-বিক্রয়, অথবা তহবিল বা ডেটা প্রেরণ ইত্যাদি করাকেই  ই-কমার্স বলে। ই কমার্স এর পূর্ণরূপ হল, ইলেকট্রনিক কমার্স, অনেকে একে ই-বাণিজ্যও বলে।  

সাধারণত এই সেবাগুলি ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অনলাইনে দেয়া হয়। এছাড়াও ইলেকট্রনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পন্ন করা যেকোনো লেনদেনও ই-কমার্সের অন্তর্ভুক্ত, যেমন অনলাইনে টাকার লেনদেন। এটি একটি আধুনিক ব্যবসা পদ্ধতি।

তাই বলা যায়, ই-কমার্সের আদর্শ সংজ্ঞা হল ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে সম্পন্ন যে কোনো প্রকার বাণিজ্যিক লেনদেন। ই-কমার্স এবং ই-বিজনেস শব্দ দুটি অনেক সময়ে একই অর্থে  ব্যবহার করা হলেও দুটি এক নয়।ই-বিজনেস বা ই- ব্যবসার  একটি অংশ ই-কমার্স।

ই-কমার্স ব্যবসা কি মডেলে কাজ করে?

লেনদেনের সাথে জড়িত পক্ষগুলি বিবেচনা করে ইলেকট্রনিক কমার্সকে চারটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। চারটি মৌলিক ইলেকট্রনিক কমার্স মডেলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপ:

৪ ধরনের ই-কমার্স ব্যবসা মডেল। B2B, B2C, C2B, C2C
ই-কমার্স ব্যবসার মডেল

১। ব্যবসা থেকে ব্যবসা ই-কমার্স (B2B e-Commerce)

B2B  বা ব্যবসা-থেকে-ব্যবসা ই-কমার্সের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পণ্য, সেবা বা তথ্য লেনদেন করা হয় ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে। চূড়ান্ত ভোক্তা এর সাথে জড়িত থাকে না। শুধুমাত্র প্রস্তুতকারকগণ, পাইকারী বিক্রেতা, খুচরা বিক্রেতারা B2B অনলাইন লেনদেনে জড়িত থাকে ।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় অনলাইন ডিরেক্টরি এবং পণ্য ও  সরবরাহ বিনিময় ওয়েবসাইট যেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসুমূহ  পণ্য, সেবা এবং তথ্য অনুসন্ধান করে  এবং ই-প্রকিউরমেন্ট ইন্টারফেসের মাধ্যমে লেনদেন করে। Salesforce একটি  শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসা-থেকে-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। Salesforce হল একটি সমন্বিত CRM প্ল্যাটফর্ম যাতে প্রতিটি গ্রাহকদের বিপণন, বিক্রয়, বাণিজ্য, ও  সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকে।

ব্যবসা-থেকে-ভোক্তা  ই-কমার্স (B2C e-Commerce)

B2C বা ব্যবসা-থেকে-ভোক্তা  হল ই-কমার্সের খুচরা ব্যবসার অংশ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পণ্য, সেবা বা তথ্য বিক্রি করে থাকে  B2C ই-কমার্সের মাধ্যমে।ভোক্তা তাদের ই-কমার্স ওয়েবসাইট ব্রাউজ করতে এবং পণ্য, ছবি দেখতে, পর্যালোচনা পড়তে পারেন। তারপর ভোক্তারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী অর্ডার দেয় এবং কোম্পানি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমূহ  সরাসরি চূড়ান্ত ভোক্তার  কাছে পণ্য পাঠায়।

 ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে B2C শব্দটি  জনপ্রিয়তা পায়। বর্তমানে, ইন্টারনেটে অসংখ্য ভার্চুয়াল স্টোর এবং মল রয়েছে যা সকল ধরণের ভোগ্যপণ্য বিক্রি করে। এই সাইটগুলির মধ্যে আমাজন সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এটি B2C বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে রয়েছে । বাংলাদেশে দারাজ, চালডাল  এবং আজকের ডিল শীর্ষ স্থানীয়  B2C ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান। ই-ব্যাংকিং ও B2C ব্যাবস্থার অন্তর্ভুক্ত।

৩।ভোক্তা থেকে ভোক্তা  ই-কমার্স (C2C e-Commerce)

C2C বা ভোক্তা থেকে ভোক্তা এক ধরনের ই-কমার্স যেখানে ভোক্তারা অনলাইনে একে অপরের সাথে পণ্য, সেবা এবং তথ্য লেনদেন করে। এই লেনদেনগুলি সাধারণত তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।যেখানে তারা ভোক্তাদের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম  ও মার্কেটপ্লেস প্রদান করে। সেখানে ভোক্তারা একে ওপরের সাথে লেনদেন করে। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে  ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সংযোগ ঘটে এবং  প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়। ভোক্তারা সাধারণত কোনো জিনিসের ভাল দাম খুঁজে পেতে এবং অবাঞ্ছিত আইটেম থেকে অর্থ উপার্জন করতে C2C বাজার ব্যবহার করে। সাধারণত মার্কেটপ্লেস সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানগুলি বিক্রেতাদের কাছ থেকে একটি লেনদেন ফি আদায় করে অর্থ উপার্জন করে। দুটি জনপ্রিয় C2C মার্কেটপ্লেস প্লাটফর্ম হল eBay এবং Craigslist। C2C মার্কেটপ্লেসের অন্যান্য উদাহরণের মধ্যে রয়েছে Airbnb, Fiverr এবং Etsy। বাংলাদেশে C2C মার্কেটপ্লেস প্লাটফর্ম এর মধ্যে  bikroy.com এবং clickbd.com অন্যতম।

৪। ভোক্তা থেকে ব্যবসা  ই-কমার্স (C2B e-Commerce)

C2B হল এক ধরনের ই-কমার্স যেখানে কোম্পানিগুলি অনলাইনে নিলামের মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছ থেকে তাদের পণ্য এবং সেবাসমূহ ক্রয় করে। এটি B2C এর ঐতিহ্যবাহী কমার্স এর বিপরীত।

C2B প্ল্যাটফর্মের একটি জনপ্রিয় উদাহরণ হল  iStock। এটি এমন একটি বাজার ব্যবস্থা যেখানে রয়্যালটি-মুক্ত ফটোগ্রাফ, ছবি, মিডিয়া এবং ডিজাইন উপাদান বিক্রয় করা হয়। আরেকটি উদাহরণ হল  চাকরি বোর্ড এবং আইটি ফ্রিল্যান্সার।

এই ৪ প্রকারের ই-বাণিজ্য ছাড়াও আরও বেশ কিছু ব্যবসার মডেল প্রচলিত আছে। সেগুলো সম্পর্কে নিচে সংক্ষিপ্ত ধারনা দেয়া হল।

ব্যবসা থেকে প্রশাসন ই-বাণিজ্য (B2A)

কোম্পানি এবং জনপ্রশাসন বা সরকারী সংস্থার মধ্যে অনলাইনে পরিচালিত লেনদেন বোঝায়। সরকারের অনেক শাখাই বিভিন্ন ধরনের ই-সেবা বা পণ্যের উপর নির্ভরশীল। এই পণ্য এবং সেবা গুলো প্রায়ই আইনি নথি, রেজিস্টার, সামাজিক নিরাপত্তা, আর্থিক তথ্য এবং কর্মসংস্থানের সাথে সম্পর্কিত। ব্যবসা ইলেকট্রনিকভাবে এই সেবাসমূহ সরবরাহ করতে পারে।  সরকারের ই-গভর্নমেন্ট সক্ষমতায় বিনিয়োগের কারণে  বাংলাদেশে B2A সেবাগুলি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভোক্তা থেকে প্রশাসন ই-বাণিজ্য (C2A)

ভোক্তা এবং জনপ্রশাসন বা সরকারী সংস্থার মধ্যে অনলাইনে পরিচালিত লেনদেন বোঝায়। সরকার খুব কমই ব্যক্তিদের কাছ থেকে পণ্য বা সেবা  ক্রয় করে, তবে ব্যক্তিরা প্রায়শই নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক উপায় ব্যবহার করে:

  • সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত  তথ্য বিতরণ এবং অর্থ প্রদান করা।
  • করের ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করা এবং অর্থ প্রদান করা।
  • স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা,পরীক্ষার ফলাফল এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে তথ্য প্রদান এবং স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা।

মোবাইল ই-কমার্স (M-Commerce )

মোবাইল ডিভাইস, যেমন স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট ব্যবহার করে অনলাইন বিক্রয় লেনদেন বোঝায়। এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল কেনাকাটা, ব্যাংকিং এবং পেমেন্ট। ভোক্তারা ভয়েস বা টেক্সট কথোপকথনের মাধ্যমে লেনদেন করে থাকে।

ই-কমার্স ব্যবসায় প্রডাক্ট বিক্রির জনপ্রিয় ৫ টি পদ্ধতি

আপনার ব্যবসার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ই কমার্স মডেল নির্ধারণ এরপর আপনাকে প্রডাক্ট বিক্রির পদ্ধতি ঠিক করতে হবে। এর জন্য আপনার পুঁজি, প্রডাক্ট সাপ্লাইয়ার, নিজস্ব দোকান, প্রডাক্ট রাখার উপযুক্ত গুদাম, কর্মচারী সংখ্যা, এবং ডিজিটাল টেকনোলোজি ব্যবহারের দক্ষতা বিবেচনায় আনতে হবে। সহজ কথায় আপনার কেপাসিটি আপনাকে বুঝতে হবে। যে ভাবে ই-কমার্স বিজনেস করলে আপনি সহজে অধিক লাভ করতে পারবেন সেভাবেই করুন।

১। খুচরা ই কমার্স ব্যবসা

খুচরা ই-কমার্স প্রক্রিয়ায় ব্যবসা করা কার্যক্রম শুরু হয় বিক্রির জন্য নিজে পণ্য বানানো, অথবা পাইকারি দরে প্রোডাক্ট কেনার মাধ্যেম। অথবা কোন প্রোডাক্ট সরবরাহ কারির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে। বাংলাদেশে ইউনিলিভার, রেকিট, এর মত ছোট-বড় ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গুলো খুচরা ই কমার্স ব্যবসায়ীদের কাছে পন্য সরবারাহ করে থাকে। তাদের বিক্রয় প্রতিনিধি অথবা এস আর দের সাথে যোগাযোগ করলে আপনাকেও তারা পণ্য সরবরাহ করবে। সরবরাহকৃত পণ্য আপনাকে কিনে নিজের গুদামে স্টক করে রাখতে হবে।

খুচরা ই-কমার্স শপ বাজারের সাধারণ অন্যান্য দোকানের মতো একই নীতিতে কাজ করে। গ্রাহকরা আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটে এসে, পণ্য ব্রাউজ করে পছন্দ এবং অর্ডার করে। তারপর আপনাকে নিজ দায়িত্বে অর্ডার করা পণ্য কাস্টমারের কাছে ডেলিভারি দিতে এবং টাকা আদায় করতে হবে।

বাজারের দোকানের সাথে ই-কমার্সের বড় পার্থক্য হল, এর সম্ভাব্য গ্রাহকরা একটি নির্দিষ্ট এলাকা বা অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আপনি এবং কাস্টমার ঘরে বসে বা পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে।

২। ড্রপ শিপিং

ড্রপ শিপিং ব্যবসার পণ্য স্টক, প্যাকেজ এবং ডেলিভারি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে হয়। অর্থাৎ আপনাকে প্রাডাক্ট ক্রয় করে স্টক করতে হবে না। আপনি শুধু ওয়েবসাইটে অর্ডার নিবেন এবং মুল সরবরাহকারী পণ্য স্টক, ডেলিভারি, টাকা সংগ্রহসহ বাকি সব কিছু করবে। আপনি তাকে কাস্টমার এনে দেবার বদলে কমিশন পাবেন। এই প্রক্রিয়ায় ই-কমার্স ব্যবসা করাকে ড্রপ শিপিং বলা হয়। পুঁজি এবং নিজে অর্ডার ডেলিভারি পূরণের সক্ষমতা কম হলে এই পদ্ধতিতে যাওয়া ভাল। আপনার মূল দায়িত্ব হবে মার্কেটিং করা।

ড্রপ শিপিং ই কমার্স ব্যবসার সবচেয়ে দুর্বলতা হল যে, প্রোডাক্ট সাপ্লাই চেইনের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। যদি তৃতীয় পক্ষ কাস্টমারের কাছে ভুল, খারাপ, কম অথবা দেরীতে প্রোডাক্ট ডেলিভারি হয়, তাহলে আপনার ব্যবসার সুনাম নষ্ট হবে।

৩। সাবস্ক্রিপশন মডেল

ই কমার্স সাবস্ক্রিপশন মডেলে আপনি নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রডাক্ট অথবা সেবা প্রদানের জন্য কাস্টমারে সাথে চুক্তিবদ্ধ হবেন। অনেক ধরণের সাবস্ক্রিপশন ইকমার্স ব্যবসা রয়েছে, যেমন ইন্টারনেট সেবা, আকাশ ডিশ, নেটফ্লিক্স সার্ভিস অথবা দৈনিক-সাপ্তাহিক  দুধ, চাল ডাল সরবারহ ইত্যাদি। ইন্টারনেট এর মাধ্যমে সাবস্ক্রিপশন চুক্তি এবং টাকা আদায় করা হয়। উন্নত বিশ্বে ই কমার্স সাবস্ক্রিপশন মডেলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৪। ডিজিটাল পাইকারি ব্যবসা

ডিজিটাল পাইকারি ব্যবসায় আপনাকে সরাসরি পণ্য উৎপাদক বা সরবরাহকারী থেকে ক্রয় করে করে গুদামজাতকরণ, এবং শিপিং করতে হবে। আপনি উৎপাদন বাদে সমস্ত অংশ পরিচালনা করবেন। মূল পার্থক্য হবে আপনার কাস্টমার তারা শেষ ভোক্তা না হয়ে হবে খুচরা ব্যবসায়ীগণ। অর্থাৎ অনলাইনে আপনার থেকে পণ্য কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা ভোক্তার কাছে বিক্রি করবে। ডিজিটাল পাইকারি ব্যবসা সাধারণত B2B ই-কমার্স মডেল অনুসরন করে।

৫। সাদা বা হোয়াইট লেবেল

হোয়াইট লেবেলিং ব্যবস্থায়, একটি ব্যবসা তার নিজের ব্র্যান্ড নাম এবং ব্র্যান্ড লোগোর অধীনে পণ্য বিক্রি করে, তবে পণ্য আসলে তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে উৎপাদন অথবা কেনা হয়। আপনি শুধু মাত্র রেডি প্রোডাক্টের উপর আপনার নিজের ব্র্যান্ড লাগিয়ে বিক্রি করবেন।

ছোট বড় পোশাক, ইলেক্ট্রনিকস, মোবাইল, কস্মেটিক্স ইত্যাদি কোম্পানিগুলো হোয়াইট লেবেলিং করে অনলাইনে বিক্রি করে। বাংলাদেশে অনেকেই চীন থেকে কেনা পন্য নিজের ব্র্যান্ড নাম লাগিয়ে বিক্রি করে।

হোয়াইট লেবেলিং এর মাধ্যমে তুলানামুলক কম খরচে আপনার ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারবেন। যেহেতু নিজের কারখানা লাগবে না তাই ব্যবসার ঝুঁকি কম।

ই-কমার্স প্রক্রিয়া

ই-কমার্স হল ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য এবং সেবা বিক্রি করার প্রক্রিয়া। গ্রাহকরা ওয়েবসাইট বা অনলাইন মার্কেটপ্লেসে আসেন এবং ইলেকট্রনিক পেমেন্ট ব্যবহার করে পণ্য ক্রয় করেন। টাকা পাওয়ার পর, বিক্রেতা পণ্য পাঠান  বা সেবা প্রদান করেন।

একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট পরিচালনা করার সময় গ্রাহক বা ক্রেতা একই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান। প্রক্রিয়াটি সংক্ষিপ্ত রূপ নিম্নরূপ:

ই-কমার্স-প্রক্রিয়া

  1. অর্ডার গ্রহণ: প্রথমে ক্রেতা তার পছন্দ অনুযায়ী বিক্রেতার ওয়েবসাইট বা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে একটি অর্ডার দেয়। অর্ডারের নোটিশটি বিক্রেতাকে জানানো হয়।
  2. অর্ডার প্রক্রিয়াকরণ: এর পরে,  ক্রেতা বিক্রয়মূল্য বা অর্থপ্রদান করেন। তখন বিক্রয়টি লিপিবদ্ধ করা হয় এবং অর্ডারটি সম্পূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। লেনদেন সাধারণত পেমেন্ট গেটওয়ে এর মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়।
  3. অর্ডার পাঠান: ই-কমার্স প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ হল অর্ডারকৃত পণ্য বা সেবা ক্রেতা বা গ্রাহককে সরবরাহ করা।

ই-কমার্স লেনদেনগুলি মূলত খুচরা লেনদেনের মতোই যেখানে গ্রাহকরা দোকানে এসে, পণ্যের কেনাকাটা করে এবং নগদে মূল্য পরিশোধ করে। পার্থক্য হল এটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে করা হয় এবং বিক্রেতাদের গ্রাহকদের কাছে পণ্যগুলি পাঠাতে হয়।

 

ই-কমার্স ব্যবসার ইতিহাস

ই-কমার্স ব্যবসা এখন মুলত ইন্টারনেট ভিত্তিক হলে এর শুরু হয়েছিল ইন্টারনেট এর বহু আগেই। ১৯৬০ সালের দিকে EDI ইলেক্ট্রনিক ডাটা ইন্টারচেন্জ সিস্টেম চালু হয়। এর ফলে প্রথমবারের মত ব্যবসার তথ্য একটি  স্ট্যান্ডার্ড ইলেকট্রনিক ফরম্যাটে রাখা এবং শেয়ার করার সুযোগ হয়। অর্থাৎ ই-কমার্স ব্যবসার কাঠামোগত ভিত্তি সৃষ্টি হয়। তখন ফোন কলের মাধ্যমে পণ্যের অর্ডার নেয়া এবং ডাক যোগে ডেলিভারি দেয়া শুরু হয়।

আজকে আমরা ই কমার্স বলতে যেটা বুঝি সেটা মুলত ১৯৯০ সালের ডট কম বাবলের যুগে amazon.com আর ebay.com মাধ্যমে শুরু হয়।

প্রথম ই-কমার্স বই অর্ডারঃFLUID CONCEPTS AND CREATIVE ANALOGIES

একটি বই এর অর্ডার নেয়ার মাধ্যমে amazon.com এর যাত্রা হয়। ডগ্লাস হফস্টেডার Fluid Concepts and Creative Analogies নামে বই অর্ডার করেন। তিনি ছিলেন আমাযন এর প্রথম উন্মুক্ত বেটা টেস্টার।

বাংলাদেশে ডিজিটাল কমার্স ব্যবসার নীতিমালা ও আইন

বাংলাদেশে ই-কমার্স একটি নতুন খাত। এই খাতকে সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রনালয় জাতীয় ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১ প্রনয়ন করেছে। ক্রেতা-বিক্রেতার সুরক্ষা প্রদানের জন্যই এই গাইডলাইন। বাংলাদেশের সকল ই-কমার্স ব্যবসাকে এই নিতিমালা অনুসরণ করে ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়। তাই ব্যবসা শুরু করার আগে ই-কমার্স ব্যবসার নীতিমালাটির বিশ্লেষণ ভালো বুঝে নেয়া উত্তম। তাহলে অযাচিত ঝুট ঝামেলার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।

পরিশেষ

ব্যাবসার দিক বিবেচনায়, ই-কমার্স ব্যবসায় সাধারণত অর্থ সাশ্রয় হয়, অধিক সংখ্যক গ্রাহকদের কাছে পৌছানো যায়  এবং সহজেই বিক্রয় হিসাব ও বিশ্লেষণ করা গেলেও এতে ঝুঁকিও রয়েছে অনেক। অর্থপ্রদান এবং ডেটা জালিয়াতি, তীব্র প্রতিযোগিতা, এবং ডিসকাউন্ট-সন্ধানী ভোক্তারা ই-কমার্স ব্যবসার চলমান বাঁধা।

ইলেকট্রনিক কমার্স এর মাধ্যমে ব্যাবসায়ী ও গ্রাহকরা সহজে ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেন করতে পারে, তাই সাড়া বিশ্বের মতো বাংলাদেশও ই-কমার্স প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরীতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের ই-কমার্স বাজারের আকার ছিল প্রায় ৫৬৮.৭০ বিলিয়ন টাকা এবং ২০২৬ সালের মধ্যে এর আকার দাঁড়াবে প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন টাকা। (তথ্যসূত্র :দি ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ডিসেম্বর ১৫,২০২২)

 

ফেসবুক পিক্সেল ও কনভার্সন এপিআই এর কাজ কী এবং কিভাবে সেটআপ করে?

ফেসবুক পিক্সেল ও কনভার্সন এপিআই এর কাজ কী এবং কিভাবে সেটআপ করে?

ফেসবুক পিক্সেল কী

ফেসবুক পিক্সেল হচ্ছে জাভাস্ক্রিপ্ট দিয়ে তৈরি একটি কোড বা স্নিপেট। এর মাধ্যমে ফেসবুক ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপনার ওয়েবসাইট অথবা মোবাইল অ্যাপ এর ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এটি সঠিকভাবে কানেক্ট করা থাকলে ফেসবুক বুঝতে পারে কোন বিজ্ঞাপনে দেখে কাস্টমার ওয়েবসাইটে যেয়ে আপনার পণ্য ক্রয় করল। এই তথ্য ব্যবহার করে ফেসবুক অ্যাড আরও অপ্টিমাইজ করা যায়। যাতে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিঙে কম খরচে আরও বেশি বিক্রয় করতে পারেন।

ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে পিক্সেল দিয়ে যে সকল ইভেন্ট ট্র্যাক করতে পারে সেগুলো হলঃ

  1. Payment Info
  2. Add to Cart
  3. Added to Wishlist
  4. Complete Registration
  5. Contact
  6. Customize Product
  7. Donate
  8. Find Location
  9. Initiate Checkout
  10. Lead
  11. Purchase
  12. Schedule
  13. Search
  14. Start Trial
  15. Submit Application
  16. Subscribe
  17. View Content
  18. Other

ফেসবুক ব্রাউজার পিক্সেল এবং কনভার্সন এ পি আই  সার্ভার সাইড ট্র্যাকিং

ফেসবুক পিক্সেল মূলত দুইটি পদ্ধতিতে সেটআপ যায়। নিচে সংক্ষিপ্ত ভাবে ধারণা দেয়া হলঃ-

ফেসবুক ব্রাউজার পিক্সেল

পিক্সেল দিয়ে ওয়েব ব্রাউজারের থেকে ডাটা সংগ্রহ করার জন্য। এই পদ্ধতিতে ওয়েবসাইটের ভিজিটরের ব্রাউজার থেকে ফেসবুক তথ্য সংগ্রহ করবে। কিন্তু যদি কোন এড ব্লকার লাগানো থাকে বা ব্রাউজারের প্রাইভেসি সেটিংস্‌ দেয়া থাকে তাহলে ফেসবুক সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হবে। তবে এই পদ্ধতিতে খুব সহজেই পিক্সেল সেটআপ করা যায় এবং বাংলাদেশের ছোট-মাঝারি অনলাইন ব্যবসায়ীদের জন্য ফেসবুক ব্রাউজার পিক্সেলই যথেষ্ট।

ফেসবুক কনভার্সন এপিআই এর মাধ্যমে সার্ভার সাইড ট্র্যাকিং

ভিজিটরের ব্রাউজারের প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে সরাসরি আপনার ওয়েবসাইট থেকে ফেসবুকের কাছে তথ্য পাঠানো হয় ফেসবুক কনভার্সন এ পি আই এর মাধ্যমে সার্ভার সাইড ট্র্যাকিং করে। অর্থাৎ কোন এড ব্লকার লাগানো থাকলে বা ব্রাউজারের প্রাইভেসি সেটিংস্‌ দেয়া থাকলেও ফেসবুক সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। এই পদ্ধতিতে পিক্সেল সেটআপ করা কিছুটা খরচ সাপেক্ষ কারন এর জন্য আপনাকে একটি ক্লাউড সার্ভারের সেবা নিতে হয়। আমরা এই নিবন্ধে কিভাবে ফ্রিতে ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটে প্লাগিন ব্যবহার করে পিক্সেল সেটআপ করা যায় সেই ব্যপারে আলোচনা করবো।

ফেসবুক পিক্সেল সেটআপ করার পদ্ধতি

সেটআপ করার করার পূর্বে তিনটি বিষয় আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে,

  • প্রথমত, আপনার একটি বিজনেস ওয়েবসাইট থাকতে হবে।
  • দ্বিতীয়তঃআপনার একটি অ্যাড আকাউন্ট থাকতে হবে।
  • তৃতীয়তঃ সেই ওয়েবসাইটে পিক্সেল কোডটি আপডেট করার সক্ষমতা থাকতে হবে।

    ফেসবুক পিক্সেল কানেকশন উইন্ডো প্যানেল
    ওয়েবসাইট পিক্সেল কানেকশন সেটআপ

পিক্সেল অ্যাড করার পদ্ধতিঃ 

  1. মেটা বিজনেস সুইট ওপেন করুন।
  2. যেই ফেসবুক এড একাউন্টে দিয়ে কানেক্ট করতে চান সেটি সিলেক্ট করুন।
  3. ইভেন্ট ম্যানেজার/ইভেন্ট(Event) অপশনে যেয়ে ফেসবুক পিক্সেল ট্যাব ওপেন করুন। 
  4. এরপর সতর্কতার সাথে পড়ুন কিভাবে পিক্সেল কাজ করে। 
  5. পিক্সেল এর একটি নাম দিতে হবে। যদি মাল্টিপল পিক্সেল ব্যবহার করতে চান সে ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন নাম দিবেন।
  6. আপনার ওয়েবসাইটের লিংক যুক্ত করতে হবে। 
  7. এরপর কন্টিনিউ বাটনে ক্লিক করবেন। 

 

কন্টনিউ বাটনে ক্লিক করার পর নিচের ছবির মত দেখতে অপশন আসবে

ফেসবুক পিক্সেল ইন্সটল করার তিনটি পদ্ধতি
ফেসবুক পিক্সেল ইন্সটল পদ্ধতি

যখন ট্র্যাকিং কোড ক্রিয়েট হয়ে যাবে তখন সেই কোডটি ওয়েবসাইটে বসানোর জন্য তৈরি হয়ে গেছে। এখন তিনটি উপায়ে আপনি এই কোড ওয়েবসাইটে ইনপুট করতে পারবেন। 

ফেসবুক পিক্সেল ট্র্যাকিং কোড ইন্টারফেস
ফেসবুক পিক্সেল ট্র্যাকিং কোড
  1. ম্যানুয়ালি কোড ওয়েবসাইটে কপি পেস্ট করতে পারবেন <head> </head> সেকশনে
  2. ইমেইলের মাধ্যমে আপনার ডেভেলপারকে ইনস্ট্রাকশন দিয়ে ইন্সটল করুন
  3. পার্টনার ইন্ট্রিগেশন ব্যবহার করুন 

আপনি আপনার সুবিধা জনক উপায়ে পিক্সেল কোটি ওয়েবসাইটে ইন্সটল করে নিবেন।

 

ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন দিয়ে ফ্রিতে ফেসবুক কনভার্সন এপিআই এর মাধ্যমে সার্ভার সাইড ট্র্যাকিং সেটআপ

প্রথমেই আপনাকে নিজের ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের এডমিন প্যানেলে লগইন করতে হবে। এরপর ইন্সটল নিউ প্লাগিন যেয়ে “PixelYourSite” নামের প্লাগিনটি সার্চ করে ইন্সটল এবং একটিভেট করুন। তখন প্লাগিনের ড্যাশবোর্ডে গেলে নিচের মত একটি ইন্টারফেস স্ক্রীন দেখতে পাবেন।

pixelyoursite প্লাগিন ড্যাশবোর্ড ইন্টারফেস

এরপর ইন্টারফেস ফেসবুক বাটনে ক্লিক করে ভিতরে যান। এখানে আপনাকে পিক্সেল আই ডি এবং কনভার্সন এপিআই এক্সেস টোকেন দিতে হবে। এই দুইটি দিয়ে সেভ করলেই সার্ভার সাইড ট্র্যাকিং সেটআপ সম্পন্ন হয়ে যাবে।

পিক্সেল ইয়োর সাইট ফেসবুক ইন্টারফেস

এবার আসুন দেখে নেই কথা থেকে আপনার পিক্সেল আই ডি এবং কনভার্সন এপিআই এক্সেস টোকেন সংগ্রহ করতে হবে। এরজন্য আপনাকে মেটা বিজনেস সুইটের ইভেন্ট ম্যানেজার/ইভেন্ট(Event) অপশনে যেয়ে নির্ধারিত পিক্সেলের সেটিংস্‌ ট্যাব ওপেন করুন। স্ক্রল করে এই ট্যাবের কনভার্সন এপিআই সেকশনে যান। সেখানের থেকে “Generate access token” লিংকে ক্লিক করুন। এরপর এক্সেস টোকেন তৈরি হয়ে যাবে। নিচের ছবিতে চিহ্নিত করা দুটি অংশই হচ্ছে এক্সেস টোকেন এবং পিক্সেল আইডি। এগুলো কপি করেই আপনাকে আগের দেখানো “PixelYourSite” প্লাগিনের ফেসবুক ট্র্যাকিং ইন্তারফেসে পেস্ট করতে হবে।

ফেসবুক পিক্সেল সেটিংস ট্যাব ইন্টারফেস, এক্সেস টোকেন ও আইডি

ফেসবুক পিক্সেল বেস্ট প্রাক্টিস

এটি শুধু ব্যবহার করলেই হয় না আপনাকে জানতে হবে এর কার্যকারিতা এবং পরিচালনা পদ্ধতি। 

  • সব ইভেন্ট ট্র্যাক না করে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ইভেন্টে ট্র্যাকি করুন।
  • অতিমাত্রায় পিক্সেল ব্যবহার করলে এটি আপনার ওয়েবসাইটের ক্ষতি করতে পারে।  
  • অতিমাত্রায় ব্যবহার ওয়েবসাইটের লোডিং টাইম বাড়িয়ে দিতে পারে। ভিজিটর আপনার পেজ লোড করতে দেরি হলে চলে যেতে পারে। 
  • তাই পিক্সেল ব্যবহার করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সেলস ফানেলের গুরুত্বপূর্ণ পেইজগুলোকে টার্গেট করবেন। যেমনঃ ল্যান্ডিং পেজ, প্রোডাক্ট পেজ, পারচেস পেজ ইত্যাদি। 
  • আপনার মাথায় রাখতে হবে টার্গেট ক্যাম্পেইন বিষয়ে। ডেমোগ্রাফিক ইন্টারেস্ট টার্গেট করার জন্য পিক্সেল ব্যবহার করা  অহেতুক। 
  • কাস্টোমারদের প্রাইভেসি কে সম্মান করতে হবে। পিক্সেল এর ব্যবহার যেন অনিয়ন্ত্রিত না হয় যা আপনার ইউজারদের ব্যক্তিগত ডেটাকে অনিরাপদ করে ফেলে। 

পরিশেষ

ফেসবুক পিক্সেলের গুগল ভার্শন হচ্ছে গুগল ট্যাগ ম্যানেজার। আপনি যদি গুগল অ্যাড অথবা আনাল্যটিক্স ব্যবহার করে থাকেন তাহলে গুগল ট্যাগ ম্যানেজার ব্যবহার উত্তম। আপনার যদি পিক্সেল বিষয়ে কোন মন্তব্য না প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে লিখুন। আমরা যথাসম্ভব দ্রুত আপনাকে উত্তর দিতে চেষ্টা করবো।

ফেসবুক লাইভ – এনগেজমেন্টের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম

ফেসবুক লাইভ – এনগেজমেন্টের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম

আপনি কি জানেন? ফেসবুক লাইভ ভিডিও গুলো সাধারণ ভিডিও থেকে তিনগুণ বেশি এনগেজমেন্ট নিয়ে আসতে সক্ষম। 

২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রথম ফেসবুক লাইভ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। এরপরে থেকে ফেসবুক বিজনেস পেজ এবং সেলিব্রেটি পার্সোনাল প্রোফাইলগুলো এই সুবিধা কে অত্যন্ত কার্যকর ভাবে ব্যবহার করে চলেছে।

টকশো, লাইভ নিউজ, লাইভ সেলিব্রেটি এক্টিভিটিস, ব্র্যান্ড প্রমোশনের জন্য ফেসবুক লাইভ সারা বিশ্বে ব্যবহারকারীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়।

যেহেতু অনলাইনে পড়ার থেকে মানুষ দেখতে এবং শুনতে বেশি পছন্দ করে, তাই ভিডিও কনটেন্ট অডিয়েন্সের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

প্রতিটি দেশি বিদেশি ব্র্যান্ড তাদের বিজনেস প্রমোশনের জন্য ভিডিও কনটেন্ট এর উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এক্ষেত্রে ফেসবুক লাইভ তাদের পছন্দের শীর্ষে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফেসবুক পেইজ দ্বারা বিজনেস পরিচালনায় ফেসবুক লাইভ এখন অনন্য মাত্রা যোগ করেছে। 

একজন ক্ষুদ্র মাঝারি উদ্যোক্তা তার প্রোডাক্ট ফেসবুক লাইভে এসে সরাসরি কাস্টমারদের সামনে বর্ণনা করছেন এবং কাস্টমার সরাসরি সেলারদের সাথে কমেন্টের মাধ্যমে যোগাযোগ করছে।

এতে ফেসবুক লাইভ  বিজনেস পরিচালনায় বর্তমান বাংলাদেশের পেজ নির্ভর ব্র্যান্ডগুলো কাছে  অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ফিচারে পরিনিত হয়েছে ।

ফেসবুক লাইভ এর বিস্তার বেড়ে চলার সাথে সাথে এর ব্যবহারকারীদের থেকে প্রায় সময় একটি সমস্যার কথা শোনা যায়।

ফেসবুক লাইভ এর সময় অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট কম হচ্ছে। কিভাবে ফেসবুক লাইভে বেশি পরিমাণ অডিয়েন্স এঙ্গেজ করা যায়?

এ বিষয়ে ফেসবুক কিছু গুরুত্বপূর্ণ গাইডলাইন লাইভ ব্যবহারকারীদের জন্য রিকমেন্ডেড করেছেন।

ফেসবুক লাইভ করার সময় যে বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন?

১। ফেসবুক লাইভ এর সময় অবশ্যই নিশ্চিত করবেন আপনার লাইভ যেন পরিষ্কার, হাই রেজুলেশন এবং নিরবচ্ছিন্ন হয়।

এজন্য শক্তিশালী নেটওয়ার্ক কানেকশন এর সাথে ফেসবুক লাইভ করবেন। শক্তিশালী নেটওয়ার্ক কানেকশন বলতে আমরা বোঝাচ্ছি, নিরবচ্ছিন্ন এবং পাওয়ারফুল নেটওয়ার্ক ফ্রিকুয়েন্সি।

নেটওয়ার্ক ফ্রিকুয়েন্সি যদি দুর্বল হয় তবে আপনার লাইভ টি ঝাপসা হতে পারে অথবা মাঝে মাঝে কানেকশন ব্রেক হতে পারে যা দর্শকদের জন্য বিরক্তির কারণ। 

২। অডিয়েন্সদের সাথে সংযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করবেন। ফেসবুক সেই ধরনের কনটেন্ট গুলোকে অগ্রাধিকার দেয় যে কারণে মানুষ লাইভকারীর সাথে কথোপকথন যুক্ত হয়।

যে ফেসবুক লাইভে হোস্ট তার অডিয়েন্সদের সাথে কমেন্টের মাধ্যমে কথোপকথনে যুক্ত হয় সেই লাইভ টি ফেইসবুক অধিক সংখ্যক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেবার উপযুক্ত মনে করে।

অডিয়েন্স এঙ্গেজ করার কিছু টিপস

  • যখন লাইভ করবেন তখন কমেন্ট কারিদের নাম উচ্চারণ করে তাদের কমেন্টের রিপ্লাই দিবেন।অডিয়েন্স যখন আপনাকে প্রশ্ন করবে তখন আপনি সেই প্রশ্নটি প্রথমে উচ্চারণ করবেন তারপরে উত্তর দিবেন।
  • যে কমেন্ট আপনার লাইফের সাথে সংগতিপূর্ণ এবং সবচেয়ে ভালো সেটিকে পিন করে রাখবেন। তাহলে সেটি কমেন্টের প্রথমেই প্রদর্শিত হবে।
  • ফেসবুক লম্বা লাইভ ভিডিওগুলো বেশি পরিমাণে অগ্রাধিকার দেয়। এক্ষেত্রে একটি লাইভ অবশ্যই তিন মিনিটের বেশি হতে হবে। যত বেশি লম্বা লাইভ চলবে ততবেশি অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট বেশি পাবেন।লাইভ API Encoder ব্যবহার করে আপনি সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত একটানা লাইভ করতে পারবেন।
  • যখনই একটি  লাইভ পরিকল্পনা করবেন তার আগেই একটি পোষ্ট দেবার মাধ্যমে আপনি অডিয়েন্সের জানিয়ে দিতে পারেন কোন সময়ে আপনি লাইভ করতে যাচ্ছেন। এতে করে আগ্রহী দর্শকেরা আপনার লাইভটি দেখার জন্য অপেক্ষা করবে।
  • প্রতিটি লাইভে কিছু নতুনত্ব নিয়ে আসার চেষ্টা করবেন। একঘেয়ে লাইভ হয়ে গেলে মানুষ বিরক্ত হয়ে পড়বে।

ফেসবুক লাইভে নতুনত্ব নিয়ে আসতে ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড, ভিন্ন রকম ক্যামেরা ওরিয়েন্টেশন অথবা লাইভে ডিউরেশন এ কিছু পার্থক্য নিয়ে আসতে পারেন।

ফেসবুক লাইভের এঙ্গেজমেন্ট বাড়াতে আর একটি চমৎকার উপায় হচ্ছে Schedule a live.

এই ফিচারটির মাধ্যমে আপনি কয়েক দিন আগেই আপনার পরবর্তী লাইভের সময় নির্ধারিত করে দিতে পারেন। এতে নির্ধারিত সময়ে লাইভ অটোমেটিক শুরু হয়ে যাবে।

কেন আপনি ফেসবুক লাইভের পূর্ব পরিকল্পনার  করবেন?

এর কারণ, যখন আপনি লাইভের পূর্বপরিকল্পনা বা schedule a live করেন তখন দুইটি পোস্ট অটোমেটিক ভাবে তৈরি হয়।

১। এনাউন্সমেন্ট পোস্টঃ যখন আপনি লাইভের পূর্ব পরিকল্পনা করেন তখন আপনার পেজে একটি এনাউন্সমেন্ট পোস্ট পাবলিশ হয়। সেই পোস্টে গেট রিমাইন্ডার নামে একটি বাটন থাকে। আপনার অডিয়েন্স যদি রিমাইন্ডার বাটনে ক্লিক করে রাখে, তবে লাইভ শুরু করার ঠিক আগের মুহূর্তে ওদের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি নোটিফিকেশন চলে যায়। 

২। ফেসবুক লাইভ টি পূর্বপরিকল্পনা করে রাখার ফলে ঠিক টাইমে লাইভ শুরু হয়ে যায় এবং যারা যারা গেট রিমাইন্ডার বাটনে ক্লিক করে রেখেছিল তাদের নিউজফিডে একটি পুশ নোটিফিকেশন চলে যায়। যার মাধ্যমে দিয়ে সেখানে ক্লিক করে  সরাসরি আপনার লাইভে যুক্ত হতে পারে।

ফেসবুক লাইভ এর আরেকটি চমৎকার ফিচার সম্পর্কে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই

অনেক সময় লাইভ চলাকালীন সময়ে প্রচুর কমেন্ট আসে। কিন্তু আমরা একটি কমেন্ট পড়ে শেষ করার আগেই আরেকটি কমেন্ট দ্রুত চলে যায় এবং আগের কমেন্ট চলে যায়। কিন্তু আপনি চাইলেই এখন কমেন্ট মডারেশন করতে পারেন।

 

 

কিভাবে করবেন?

লাইভ চলাকালীন সময়ে আপনি কমেন্ট মডারেশন অপশন দেখতে পাবেন। সেখানে ড্রপডাউন মেনুতে ক্লিক করলে নিচের ছবির মত একটি মেনু আসবে।

  • একজন কমেন্টার কেবল মাত্র ১০ সেকেন্ড পরপর কমেন্ট করতে পারবে। ১০ সেকেন্ডের আগে সে কোনভাবেই দ্বিতীয় কমেন্ট করতে পারবে না।এটা করে তার কমেন্টটি পড়ে ফেলার যথেষ্ট সময় পাবেন।
  • ড্রপডাউন মেনু থেকে ডিসকাশন অপশনটি সিলেক্ট করে দিলে কেবলমাত্র  সর্বনিম্ন ১০০ সংখ্যা সম্বলিত কমেন্ট গুলো প্রদর্শিত হবে। অনেক সময় অডিয়েন্স হাই, হ্যালো এই টাইপের সিঙ্গেল ওয়ার্ডের কমেন্ট করেন। ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আড়ালে চলে যায়। এই অপশনটি দ্বারা আপনি সেই ছোট ছোট কমেন্টগুলো ফিল্টার করে তুলনামূলক বড় কমেন্টগুলো সামনে নিয়ে আসতে সক্ষম হবেন।
  • ড্রপডাউন মেনুতে রেস্ট্রিকটেড নামে একটি অপশন রয়েছে। এটি ব্যবহার করলে যে সকল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট গুলো দুই সপ্তাহের কম সময়ে তৈরি হয়েছে তারা আপনার লাইভে কমেন্ট করতে সক্ষম হবে না। এতে করে অনেক ফেইক একাউন্ট থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত কমেন্ট আসা বন্ধ করা অনেকটাই সম্ভব।
  • প্রটেক্টেড এই অপশনটি ব্যবহার করলে যে সকল দর্শক আপনার লাইভ টি ১৫ মিনিটের অধিক সময় দেখছে তারাই কেবল কমেন্ট করতে সক্ষম হবেন। এটা করে হুটহাট শুরু থেকেই কেউ আজগুবি বা অযাচিত কমেন্ট  করতে পারবে না।

এছাড়া একটি লাইভ শেষ হয়ে যাবার পরে রেকর্ড হয়ে থাকা লাইভটির যে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি আপনি দর্শকদের সামনে প্রদর্শন করতে চান শুধুমাত্র সেই অংশটুকু কেটে নিয়ে দেখাতে পারবেন।

একটি জন্য আপনাকে ফেসবুক এর ক্রিয়েটর স্টুডিওতে গিয়ে কন্টাক্ট লাইব্রেরী থেকে একটি ভিডিও সিলেক্ট করে এডিট করে সেভ করতে হবে। এখান থেকে আপনি চাইলে ভিডিওতে সাবটাইটেল বা ক্যাপশন যোগ করতে পারেন।

পরিশেষে

এরপরে যখনই আপনি পরবর্তী ফেসবুক লাইভ এর জন্য চিন্তা করছেন তখন প্রথমে একটি ফেসবুক লাইভের পরিকল্পনা তৈরি করুন। Schedule a live করুন এবং নির্ধারিত সময়ে লাইভ শুরু করুন। আর বেশি সংখ্যক অডিয়েন্সকে এঙ্গেজ করুন খুব সহজে।

আপনার ফেসবুক লাইভের অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন আমাদের সাথে।

ই-কমার্স বিজনেস ১০১: ই-কমার্স ওয়েবসাইটের আদ্যোপান্ত

ই-কমার্স বিজনেস ১০১: ই-কমার্স ওয়েবসাইটের আদ্যোপান্ত

আধুনিক ই-কমার্স বিজনেস উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন, অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও কৌশল নির্ভর। অ্যামাজন ১৯৯৫ সালে প্রথম ই কমার্স ওয়েবসাইট দিয়ে বেচাকেনা শুরু করেন এবং প্রথম ৭ বছর তারা কোন প্রকার প্রফিট করেননি। ২০০৩ সালে অ্যামাজন ই কমার্স বিজনেসে প্রথম প্রফিট করে। এর পরে শুধুই এগিয়ে চলা।

সকল সেলার দ্বারা বিক্রিত পণ্যের পরিমান ও ডলার মূল্যের ভিক্তিতে (Gross merchandise volume) ২০১৭ সালে ইউনাইটেড স্টেটে অ্যামাজনের অনলাইন রিটেল মার্কেট শেয়ার ছিল ৩৭ শতাংশ যা ২০২১ সালে ৫০ শতাংশে পৌঁছাবে বলে তারা ধারণা করছেন।

বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন শপ akhoni.com যার বর্তমান নাম bagdoom.com। ২০১১ সালে শুরু হওয়া এই কম্পানি ২০১৬ সালে ৩ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। ২০১৭ সালে যেটি ৭ কোটিতে পরিনিত হয়।

দৈনিক ডেইলি স্টারে প্রকাশিত TECH TRAILBLAZERS HONOURED শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে বাগডুমের অর্ডার সংখ্যা ছিল ১৯,০০০ এবং ২০১৭ সাল জুড়ে অর্ডারের পরিমান ছিল ২৭,০০০ পরের বছর ২০১৮ সালের প্রথম নয় মাসে ৫৭,০০০ অর্ডার পেয়েছিল, অর্থাৎ ২০১৮ সালে তারা আগের বছরের তুলনায় ৩০,০০০ অর্ডার বেশি পায়।

এটি প্রমান করে বাংলাদেশের কাস্টমারদের অনলাইন কেনাকাটায় আস্থার জায়গা ধীরে ধীরে বাড়ছে, বাড়ছে কেনাকাটার পরিমান সাথে সাথে ই কমার্স বিজনেসের বাজার বাড়ছে। সৈয়দা কামরুন আহমেদ bagdoom.com এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, তাদের ধারণামতে বাংলাদেশের ই কমার্স বাজারের পরিমান এখন ৩০০ কোটি। তার মতে ই কমার্স বিজনেসে বর্তমানে প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সঠিক সময়ের মধ্যে কোয়ালিটি সার্ভিস প্রদান এরপরে তিনি ক্যাশ অন ডেলিভারিকে স্থান দেন। এর কারণ মার্কেটে বর্তমানে অনেক প্রতিযোগী তার বাজারে টিকে থাকতে হলে সার্ভিসের মান নিশ্চিত জরুরী।

দ্বিতীয় কারণ ক্যাশ অন ডেলিভারি সম্পর্কে তার মত, অনেকে তার প্রোডাক্টের মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে খুচরা টাকার সমস্যায় পড়েন। আবার, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা লেনদেনে ছিনতাই হবার সম্ভবনা থাকে তাই ই কমার্স বিজনেসে অনলাইন পেমেন্ট নিশ্চিত করাটা খুব জরুরী।

একটি জরিপ মতে বাংলাদেশে এখনো ই কমার্স ওয়েবসাইটে ৭৫% কেনাকাটা ক্যাশ অন ডেলিভারিতে হচ্ছে।

ই কমার্স বিজনেসে এগিয়ে যেতে সামনের দিনগুলোতে তাদের লক্ষ্য সময়মতো সার্ভিস কোয়ালিটি নিশ্চিতকরন ও অনলাইনে পেমেন্ট করতে কাস্টমারদের অনুপ্রানিত করা। Chaldal বাংলাদেশের অনলাইন গ্রোসারি শোপের সম্ভবনার দুয়ার খুলে দেয়। ২০১৩ সালে ওয়াসিম আলিম, জিয়া আশরাফ এবং তেজাস বিশ্বনাথ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি ছিল বাংলাদেশের ইকমার্সের ইতিহাসে প্রথম দিন যখন ঢাকার মানুষ অনলাইনে মুদি দোকানের জিনিস কিনতে শুরু করে। এটি অসাধারণ একটি মুহূর্ত।

বাংলাদেশের বাজারকে শিক্ষিত করতে চালডালের কিছুটা সময় লেগেছে। ২০১৩ সালের বিজনেস শুরুর প্রথমদিকে তারা দিনে মাত্র ৫ টি অর্ডার সরবরাহ করছিল। আজ সেটি বেড়ে প্রতিদিন ২০০০ টিরও বেশি অর্ডার সরবরাহ করে।

২০১৩ সালে পাঁচ জনের একটি ক্ষুদ্র দল থেকে এটি পরিনিত হয়েছে ৬০০ জনেরও বেশি সদস্যের একটি প্রতিষ্ঠানে। আজকের সময়ে চালডালের বার্ষিক আয় ১০০ কোটি টাকার উপরে অনুমান করা হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ অর্থায়নে পরিচালিত একটি স্টার্টআপ যেখানে বিনিয়োগকারী হিসেবে আছে Y Combinator, IFC, এবং IDLC মতো নামকরা প্রতিষ্ঠান।

ইকমার্স ওয়েবসাইট থাকার সুবিধা কি?

  • তার ব্র্যান্ডটিকে বড় করে তুলতে
  • বেশি বেশি বেচাকেনা করতে
  • ক্রমবর্ধমান সামাজিক মাধ্যমগুলো ও সার্চ ইঞ্জিনগুলোর মাধ্যমে মার্কেটিং করতে,3ah
  • যদি চায় সুযোগ ও সুবিধা মতো অন্য কাজের পাশাপাশি বিজনেস পরিচালনা করতে,
  • বিজনেস পরিচালনার খরচ কম করতে,
  • অনলাইনে কাস্টমারদের প্রভাবিত করতে,

তবে তার বিজনেসে একটি আধুনিক ই-কমার্স ওয়েবসাইট থাকতেই হবে।

ই কমার্স ওয়েবসাইটের মুল দুটি অংশ

অনেকের ধারনা কাস্টমার অনলাইনে প্রোডাক্ট অর্ডার করতে সক্ষম হলেই সেটি ই কমার্স ওয়েবসাইট। আংশিকভাবে এটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের অংশ হলেও কিন্তু একটি ই কমার্স ওয়েবসাইট আরও বেশি কিছু।

Front-end features

Front-end features বা কাস্টমার অংশ। এই অংশে যা যা থাকে,

Product listing page: এখানে সকল প্রোডাক্টের ক্যাটাগরি লিস্ট ও ফিল্টারিং অপশন থাকে।

Individual product page: এখানে একটি প্রোডাক্টের বিস্তারিত সকল তথ্য থাকে ও কাস্টমারদের কেনাকাটার সুবিধা প্রদান করে।

Shopping cart o checklist process: এই অংশে কাস্টমার কেনাকাটার জন্য পছন্দ করা সকল প্রোডাক্ট দেখার ও চূড়ান্ত ভাবে কেনাকাটা সম্পন্ন করার সুযোগ পায়।

User account: কাস্টমারদের দেয়া তথ্য জমা থাকে।

Product recommendation: কাস্টমারদের রিলেটেড আরও প্রোডাক্ট এখানো হয়।

Recommendation based on history: অতীত কেনাকাটার তথ্যের উপর নির্ভর করে কাস্টমারদের প্রোডাক্ট দেখানো যা ই কমার্স ওয়েবসাইট স্বয়ংক্রিয় করে।

Back-end features

Back-end features বা পরিচালনা অংশ। এই অংশ বিজনেস পরিচালনাকারী ছাড়া কেউ দেখতে পায় না।

আমারা সকলে Front-end features বা কাস্টমার অংশকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি, কারণ আমাদের ধারনা এটি কাস্টমার দেখে কিন্তু আমাদের প্রয়োজন Back-end features বা পরিচালনা অংশের দিকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করা। কারণ এই অংশ দ্বারা আপনি নির্ধারণ করে দিতে সক্ষম হন যে কাস্টমার কি দেখবে ও কিভাবে দেখবে।

 

 

এই অংশে কি থাকে,

Product information and option: প্রোডাক্টের সকল তথ্য এই অংশে থাকে। আপনি কোন প্রোডাক্টগুলো প্রদর্শন করবেন ও কি ধরনের তথ্য প্রদান করবেন এই ফিচার দ্বারা সেটি সম্পন্ন করা হয়।

Product database: ই-কমার্স ওয়েবসাইটের সকল প্রোডাক্টের তথ্য থাকে।


Payment processing: কাস্টমারদের পেমেন্ট সুবিধা প্রদান করে।

Inventory management: ষ্টকে কোন কোন প্রোডাক্ট কি পরিমানে আছে সেটির ব্যবস্থাপনা।

Privacy policy: বিজনেস পরিচালনা কাস্টমার তথ্য সংরক্ষন ও বিজনেসে কেনাকাটা ও লেনদেন সংক্রান্ত নিয়মাবলী প্রদান করার সুবিধা।


Promotion or coupon code: মার্কেটিং অফার, ডিসকাউন্ট বা কুপন ব্যবস্থাপনা।

আপনার বিজনেসের জন্য কি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের কি সত্যি প্রয়োজন?

প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে মানুষতার দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে নির্ভর করছে প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর। যখন দেখবেন বাজারে আপনার প্রতিযোগীর অথবা আপনার টার্গেট কাস্টমার গ্রুপ অন্যদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সরাসরি কেনাকাটা কেনাকাটা করতে সক্ষম। এর অর্থ আপনার ইন্ডাস্ট্রির কাস্টমার ধীরে ধীরে প্রযুক্তিকে গ্রহন করছে ও স্মার্ট কাস্টমারে পরিনিত হতে যাচ্ছে।

এই সময় আপনার বিজনেসে ই কমার্স ওয়েবসাইট যুক্ত করার আদর্শ সময়।

  • যখন কাস্টমার নিজে থেকে আপনার সেল করা প্রোডাক্টগুলো সম্পর্কে তথ্য জানতে চায়, তারা বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে আপনাকে খুঁজে পায় এবং প্রোডাক্টের দরদাম পছন্দ না করে তার জন্য উপযুক্ত মূল্য পেতে চায় । তখন বুজবেন আপনার বিজনেসে ই কমার্স ওয়েবসাইট প্রয়োজন।
  • কাস্টমার যখন রেডি প্রোডাক্ট কোনো প্রকার কাস্টমাইজেসন ছাড়া যেমনটি আপনি অফার করছেন তেমনি ভাবে কিনছে। তখন বুঝবেন আপনার বিজনেস ই কমার্স নিজনেসের জন্য তৈরি।
  • যদি আপনার বিক্রিত প্রোডাক্টগুলোর রঙ, দাম, সাইজ , ফিচারের বৈচিত্র্য অনেক তখন ই কমার্স ওয়েবসাইট আপনার বিজনেসের জন্য দারুন কার্যকরী। কারণ এই সকল তথ্য সুসজ্জিত উপায়ে উপস্থাপন করার সুযোগ থাকে ।
  • মানুষ যখন ক্যাশ টাকার পাশাপাশি ব্যাংক কার্ড ব্যবহার শুরু করছে তখন বুজবেন আপনার কাস্টমার ই কমার্স বিজনেসের জন্য রেডি।
  • যদি আপনার কাস্টমার বেশির ভাগ সময়ে সন্ধার পড়ে বা অধিক রাতে কেনাকাটা করতে আপনার সাথে যোগাযোগ মাধ্যমগুলো দিয়ে যোগাযোগ করতে চায় তখন আপনার বিজনেসে ই-কমার্স ওয়েবসাইটের প্রয়োজন।
  • যখন আপনার কাস্টমার দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তখন আপনার ই কমার্স ওয়েবসাইট প্রয়োজন।

আপনার কাস্টমার যখন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে ও আপনার ফেসবুক পেজ লাইক করে তখন বুঝবেন তারা ই কমার্স ওয়েবসাইট ব্যবহার করতেও সক্ষম। আপনি তাদের সুযোগ করে দিন।

কখন বুঝবেন আপনার বিজনেসে ই কমার্স ওয়েবসাইট এখন প্রয়োজন নেই?

  • যদি বিক্রিত প্রোডাক্টের মূল্য ফিক্সড না হয়। অথবা একই প্রোডাক্টের পরিবর্তনশীল মূল্যে থাকে।
  • যদি কিছু বিক্রয় করার আগে অত্যাবশ্যকীয় ভাবে ক্রেতার সাথে কথা বলা জরুরী থাকে। তবে ই কমার্স ওয়েবসাইট থাকলেও আপনি এর পুরনাঙ্গ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন না।

আপনার বিজনেসের ধরন অনুযায়ী কেমন হওয়া চায় ই-কমার্স ওয়েবসাইটের ডিজাইন ও ফিচার নিয়ে জানতে যোগাযোগ করুন +88 01766 681 318 অথবা +88 01729 241 499 নম্বরে ইমেল করুন [email protected] এই এড্রেসে।

লাইক-ফলো দিয়ে সাথে থাকুন

ক্যাটাগরি

জনপ্রিয় পোস্ট